Search

Sunday, September 9, 2018

সঞ্চয়পত্রে অতিনির্ভরতা মুদ্রানীতি বাস্তবায়নে বড় বাধা

বিআইবিএমের মুদ্রানীতিবিষয়ক কর্মশালায় বক্তারা


বাজেটে ঘোষণা দিয়েও সরকার ব্যাংক থেকে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ঋণ নিচ্ছে না। সঞ্চয়পত্র বিক্রির মাধ্যমেই বেশি ঋণ নিচ্ছে। এতে একদিকে সরকারের ব্যয় বাড়ছে, অন্যদিকে সঞ্চয়পত্রের ওপর সরকারের অতিমাত্রায় নির্ভরতা মুদ্রানীতি বাস্তবায়নে বড় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঘোষিত মুদ্রানীতির (জুলাই-ডিসেম্বর) ওপর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) আয়োজিত এক কর্মশালায় বক্তারা  গতকাল এসব কথা বলেন।

বিআইবিএম মিলনায়তনে আয়োজিত এ কর্মশালায় মুদ্রানীতি বিষয়ে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. ফয়সাল আহমেদ। বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধূরীর সভাপতিত্বে কর্মশালায় সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সূচনা বক্তব্য রাখেন ড. তৌফিক আহমদ চৌধূরী। তিনি ঘোষিত মুদ্রানীতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।

বক্তারা বলেন, প্রবৃদ্ধি শুধু অর্থ সরবরাহের ওপর নির্ভর করে না। কারণ বিনিয়োগকারীরা ঠিকমতো গ্যাস-বিদ্যুৎ পেলে বিনিয়োগ এমনিতেই বাড়ে। সরকার এখন সঞ্চয়পত্র থেকে বেশি অর্থ নিচ্ছে। এত অর্থ নেয়ার ইতিবাচক-নেতিবাচক দিকগুলো পর্যালোচনা করতে হবে।

মূল আলোচক বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. ফয়সাল আহমেদ বলেন, উচ্চপ্রবৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছে। বেসরকারি খাত বিনিয়োগের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ পাবে। তবে উচ্চপ্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগের জন্য মুদ্রানীতির বাইরে আরো কিছু বিষয় রয়েছে, যেগুলো এবারের মুদ্রানীতিতে বিবেচনা করা হয়েছে। তিনি বলেন, বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ, যা বেসরকারি খাতের জন্য উৎসাহব্যঞ্জক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ও বিআইবিএমের চেয়ার প্রফেসর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, সঞ্চয়পত্র থেকে অনেক বেশি অর্থ নেয়ার কারণে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তবে অনেকে এর ওপর নির্ভরশীল, এ বিষয়ও বিবেচনায় রাখতে হবে। এজন্য সঞ্চয়পত্রে সংস্কার আনা প্রয়োজন। গরিব ও মধ্যবিত্তদের জন্য সেভিংস সার্টিফিকেট চালু করতে হবে। এতে সুদহার তুলনামূলক একটু বেশি রাখা যেতে পারে। অন্যদিকে সেভিংস বন্ড হবে ধনীদের জন্য। এর সুদহার হবে ব্যাংকের রেটের মতো।

তিনি আরো বলেন, প্রবৃদ্ধি শুধু অর্থ সরবরাহের ওপর নির্ভর করে না। বিনিয়োগকারীরা গ্যাস-বিদ্যুৎ পেলে আরো বেশি বিনিয়োগ হবে। এক্ষেত্রে মুদ্রানীতির কোনো সম্পৃক্ততা নেই। সরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ স্বাভাবিক নয়। এসব ব্যাংক নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্ষমতা আরো বাড়াতে হবে বলে মত দেন তিনি।

কর্মশালায় আরো বক্তব্য রাখেন বিআইবিএমের মুজাফফর আহমেদ চেয়ার প্রফেসর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলি, বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক ও বিআইবিএমের অনুষদ সদস্য মো. আব্দুল কাইউম।

সঞ্চয়পত্র নিয়ে সরকারের একটি পর্যালোচনা প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত পাঁচ বছরে এ খাত থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের হার ৩৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ৫৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। অথচ একই সময়ে ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নেয়ার হার ৬৬ শতাংশ থেকে ৪৪ শতাংশে নেমে এসেছে।

সঞ্চয়পত্র থেকে বেশি মাত্রায় ঋণ গ্রহণের কারণে এ খাতে সুদ পরিশোধের ব্যয় অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সরকার সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ৪৬ হাজার ৫৩০ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছে। যদিও বছরটিতে এ খাত থেকে ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩০ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র খাতে সরকারের মোট ঋণের পরিমাণ ২ লাখ ৩৭ হাজার ৭৬৬ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে।

সরকার বাজেটে ঘোষণা দিয়েও লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে না। এতে বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষিত মুদ্রানীতিও বাস্তবায়নে ব্যাঘাত ঘটছে।
 বণিক বার্তা /সেপ্টেম্বর ০৭, ২০১৮

No comments:

Post a Comment