এস এম আজাদ
ভর্তুকি সুবিধায় স্বল্পমূল্যে ট্রাকে করে খোলাবাজারে বিক্রির (ওএমএস) জন্য খাদ্যসামগ্রী কালোবাজারে বিক্রির ঘটনা ধামাচাপা দিতে মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছে কালোবাজারি চক্র। নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সরকার ভর্তুকি দিয়ে এসব খাদ্যসামগ্রী সরবরাহ করে ডিলারদের মাধ্যমে। সম্প্রতি র্যাব প্রকাশ্যে অভিযান চালিয়ে যেসব খাদ্যসামগ্রী জব্দ করেছে, সেগুলো আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর রেশনের সামগ্রী বলে প্রমাণ করার পাঁয়তারা চলছে। একই সঙ্গে খাদ্য অধিদপ্তরের তদন্ত কমিটি এবং তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তাদেরও ম্যানেজ করার চেষ্টা চলছে। র্যাবের অভিযানে জব্দ করা ২১৫ টন চাল, গম ও আটার মধ্যে রেশনের কিছু গম আছে বলে দাবি করছে একটি পক্ষ।
এর সূত্রে ধরে অভিযুক্ত ওএমএস ডিলার ও শ্রমিক নেতারা দাবি করছেন, জব্দ করা সব খাদ্যসামগ্রীই বৈধ এবং এর সঙ্গে ডিলারদের সম্পৃক্ততা নেই। গতকাল সোমবার এমন দাবি নিয়ে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয় ঢাকা মহানগর ওএমএস ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে। সেখানে অভিযানের ১৬ দিন পর নতুন দাবির বিষয়ে সাংবাদিকরা বিভিন্ন প্রশ্ন করলেও কোনো জবাব দিতে পারেননি আয়োজকরা।
পুলিশের তদন্তকারী কর্মকর্তারা বলছেন, তিনজন ডিলারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জব্দ করা খাদ্যসামগ্রীর একটি অংশ রেশনের কি না এবং বৈধভাবে বিক্রির জন্য ছিল কি না, তা যাচাই চলছে আদালতের নির্দেশে। র্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, জব্দ করা খাদ্যসামগ্রীর মধ্যে ২০ থেকে ৩০ টন রেশনের হতে পারে। বাকি সবই ওএমএসের, যার সঙ্গে ডিলাররা সরাসরি জড়িত। আসামিরা মামলা থেকে রেহাই পেতে অপকৌশল নিয়েছেন বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
ওএমএসের সামগ্রী পাচার ধরা পড়ার পর থেকে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে খাদ্য অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় খাদ্যগুদামের (সিএসডি) বিষয়ে অনুসন্ধান চালাচ্ছে কালের কণ্ঠ। এতে জানা গেছে, ওএমএসের চাল-আটা কালোবাজারে বিক্রির মাঠপর্যায়ের কাজে নেতৃত্ব দেয় সংশ্লিষ্ট সিবিএ তথা ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের একটি চক্র। ওই সিন্ডিকেটের প্রধান আলমগীর সৈকতই গতকাল সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। আলমগীর কয়েক বছর আগেও সিএসডির ‘কুলি’ ছিলেন। এখন তিনি কোটিপতি। দামি গাড়িতে চড়ে বেড়ান। আছে একাধিক বাড়িও।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সিএসডির তালিকাভুক্ত অনেক ডিলার ঘরে বসেই টাকা পান। কাগজপত্রে বিক্রি দেখানো হলেও বাস্তবে ট্রাকে ভরে সামগ্রী নিয়ে যায় আলমগীরের সিন্ডিকেট। সিএসডির কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করে চলছে এই ‘ওপেন সিক্রেট’ বাণিজ্য। ওএমএসের চাল ও আটা ট্রাকে নেওয়ার সময় পুলিশ বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর রেশনের ডিও দেখায় পাচারকারীরা। এ কারণে পথে তাদের কেউ ধরে না। এই ‘ডিও কৌশল’ নিয়েই তারা কালোবাজারির মামলা থেকে রেহাই পাওয়ার ফন্দি এঁটেছে।
গত ৮ সেপ্টেম্বর রাতে সিএসডি থেকে পাচার হওয়ার সময় আটটি ট্রাকভর্তি ১১৫ টন চাল ও আটা জব্দ করে র্যাব। তাত্ক্ষণিকভাবে সিএসডির ব্যবস্থাপক হুমায়ুন কবির এবং গুদাম ইনচার্জ মনিয়ার হোসেনকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ৯ সেপ্টেম্বর মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয় তাঁদের। ৯ সেপ্টেম্বর ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটে অভিযান চালিয়ে ১১টি আড়ত থেকে ওএমএসের আরো ১০০ টন চাল ও আটা জব্দ করে র্যাব। ওই ঘটনায় খাদ্য অধিদপ্তর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। প্রত্যাহার করা হয়েছে সিএসডি ব্যবস্থাপক হুমায়ুন কবিরকে। ১১ সেপ্টেম্বর ২৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করার পরদিন দুর্নীতি দমন কমিশনেও (দুদক) প্রতিবেদন দিয়েছে র্যাব। ওই মামলায় জামিন পেয়ে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে হাজির হন ১২ নম্বর আসামি আলমগীর সৈকত।
প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি অভিযুক্ত ব্যক্তিরা : ক্র্যাব কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর ওএমএস ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যসচিব হারুন অর রশিদ বলেন, ‘কালোবাজারে বিক্রির জন্য’ গুদাম থেকে বের করার সময় জব্দ করা ওই খাদ্যপণ্যের সঙ্গে ডিলারদের জড়িয়ে তাঁদের ‘সামাজিকভাবে হেনস্তা’ করা হচ্ছে। ওএমএসে প্রত্যেক ডিলারের জন্য প্রতিদিনের বরাদ্দ থাকে এক টন চাল ও দুই টন আটা। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৯টায় সিএসডি থেকে তুলে ওই পণ্য বিকেল ৫টার মধ্যে বিক্রি করতে হয়। তিনি আরো বলেন, “অবিক্রীত মালামাল তাদারকি কর্মকর্তা ‘ব্যালান্স’ হিসেবে দেখিয়ে ডিলারের জিম্মায় দিয়ে দেন। পরদিন ডিলার নিজের খরচে নির্দিষ্ট বিক্রয়কেন্দ্রে তা বিক্রির জন্য নিয়ে যায়। অবিক্রীত মালামাল সিএসডিতে ফিরিয়ে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’’ সারা দেশে আট শতাধিক ডিলার ওএমএসের সামগ্রী বিক্রির সঙ্গে জড়িত এবং ‘অপপ্রচারের কারণে’ তাঁরা সমাজে হেয়প্রতিপন্ন হচ্ছেন বলে মন্তব্য করে এর সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন হারুন।
সংগঠনের আহ্বায়ক আলমগীর সৈকত বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি যে মালামাল জব্দ করা হয়েছে তা বিভিন্ন বাহিনীর রেশনের মালামাল। অথচ আমাদের পাচারকারী অপবাদ দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, আমাদের তিনজন ডিলারের বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়েছে। রেশনের গম হয় না।’ জব্দ করা সব চাল, গম ও আটা রেশনের বলে দাবি করেন তিনি। ১৬ দিন আগে অভিযান হয়েছে, গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, মামলা হয়েছে; এত দিন পর কেন এসব দাবি করছেন—কালের কণ্ঠ প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের জবাবে আলমগীর সৈকত বলেন, ‘আমরা আগে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি।’ তখন উপস্থিত সাংবাদিকরা বলেন, এমন কোনো সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাওয়া যায়নি। চাল ও আটা কিভাবে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে গেল জানতে চাইলে সরাসরি জবাব না দিয়ে আলমগীর বলেন, ‘এটা ডিলারদের না।’ রেশনের পণ্য কিভাবে বিক্রি হয় এবং এর সঙ্গে কারা জড়িত জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একটি গ্রুপ ম্যানেজ করে করে। তবে এটার সঙ্গে ডিলাররা জড়িত না।’
তদন্তকারীর মতে একটি অংশ, তা-ও প্রমাণিত হয়নি : নথিপত্র সূত্রে জানা গেছে, তেজগাঁওয়ের পূর্ব তেজতুরী বাজারের সেলিম এন্টারপ্রাইজের মালিক সেলিম গত ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার আদালতে ১৪ টন চাল ও ১৬ টন গম নিজ জিম্মায় নেওয়ার আবেদন করেন। র্যাব ১-এর প্রত্যয়নপত্রসহ তিনি সেগুলো তুলে নিয়ে যাচ্ছিলেন বলেও দাবি করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানাকে বিষয়টি যাচাই করে আদালতকে অবহিত করতে আদেশ দেন। সে অনুযায়ী গত ২২ সেপ্টেম্বর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) ও কালোবাজারিসংক্রান্ত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামাল উদ্দীন চিঠি দেন র্যাব ১ অধিনায়ককে। মোহাম্মদ কামাল উদ্দীন গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘তিনজন রেশনিংয়ের মাল নিচ্ছিল বলে আসে। একটি প্রমাণসাপেক্ষ বিষয়। সেখানে ৩০ টনের মতো আছে। আদালত বিবেচনা করবেন। আর এই একটি অংশের কারণে ওএমএসের চাল-আটার বিষয়টি ধামাচাপা পড়তে পারে না। ওএমএস-সামগ্রী বাইরে আসা বিশাল ব্যাপার। এখানে অনেক জবাবদিহি লাগে।’ রেশনিংয়ের হলে বাইরে যেতে পারবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা আদালত দেখবেন। প্রমাণ দিতে হবে।’ আসামিদের গ্রেপ্তার না করার কারণ জানতে চাইলে পরিদর্শক কামাল উদ্দীন বলেন, ‘মামলায় আসামিদের পুরো ঠিকানা ছিল না। আমরা খোঁজখবর নিয়ে বের করেছি। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে এসেছে। বাকিদের ব্যাপারে অভিযান চলছে।’
র্যাব বলছে, আসামিদের অপকৌশল : ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাবের আইন কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রকাশ্যে গণমাধ্যমের সামনে আইনগত প্রক্রিয়া মেনে ওই অভিযান চালানো হয়েছিল। এখন আসামিরা রেহাই পেতে অপকৌশল চালাচ্ছে। ট্রাকে কিছু গম পাওয়া যায়, যেটা মামলার এজাহারে এবং জব্দ তালিকায় সেভাবেই দেখানো হয়েছে। সেগুলো সম্পর্কে জানা যায়নি বলে উল্লেখ করা হয়। তা ২৫ থেকে ৩০ টন। আমরা তো ২১৫ টন জব্দ করেছি। মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটে যা পাওয়া গেছে সবই ওএমএস।’ তিনি আরো বলেন, “অভিযানে উদ্ধার হওয়া বস্তায় লেখা ছিল ‘সুলভমূল্যে বিক্রির জন্য’। এটা ওএমএসের বস্তায় লেখা থাকে। ডিলাররা আদালতে নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করুক।”
সারওয়ার আলম বলেন, ‘পুলিশ লেখা গাড়িতে এবং পুলিশের রেশনের ডিও নিয়ে ওরা ওএমএসের চাল-আটা পাচার করে। এ কারণে অনেক সময় কেউ ধরে না। এটা ওদের কৌশল। এখন সেটাই বড় আকারে করছে।’ তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘গত ৮ সেপ্টেম্বর অভিযান হলো। আমরা সংশ্লিষ্টদের কাছে জানতে চাইলাম যে কোনো প্রমাণ থাকলে দেখান। তাঁরা দিতে পারেননি। তিন দিন পরে মামলা হলো। এরপর দুদকে রিপোর্ট দিলাম। এখন এত দিন পর সামান্য কিছু রেশনের বৈধ মাল বলে পুরো ব্যাপারে বলা অপকৌশল ছাড়া কিছু নয়।’
আঙুল ফুলে কলাগাছ আলমগীর সিন্ডিকেট : তেজগাঁও সিএসডির সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মী কালের কণ্ঠকে জানান, বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করে ওএমএসের পণ্য কালোবাজারি ‘ওপেন সিক্রেট’ কারবার। আর এই সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছেন ট্রেড ইউনিয়ন বা সিবিএ নেতারা। সুবিধা পাচ্ছেন সিএসডির অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী। ডিলারদের নিয়ে কালোবাজারির সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন আলমগীর সৈকত। কয়েক বছর আগেও তিনি ছিলেন সিএসডির কুলি। এখন ঢাকায় তাঁর পাঁচটি বাড়ি ও জমি আছে। চড়ে বেড়ান নিজের দুটি গাড়িতে। সিএসডির পাশে ১১টি অবৈধ ঘর আছে আলমগীর সৈকতের, যেগুলো ভাড়া দিয়ে ‘লাখ লাখ টাকা’ হাতিয়ে নিচ্ছেন। এখন ট্রেড ইউনিয়নের উপদেষ্টা এই শ্রমিক নেতা কয়েক বছর আগে হয়েছেন ডিলার। চাল সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রক তিনি। সিএসডিতে মজুরিভিত্তিক শ্রমিকরা আলমগীরের নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। আলমগীরের ঘনিষ্ঠ ডিলার ও সিবিএ নেতা তোতা মিয়াও সিএসডির পাশে ঘর তুলে ভাড়া দিচ্ছেন। আটার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেন নারায়ণগঞ্জের ডিলার সোহাগ।
কয়েকটি সূত্রে জানা যায়, সিবিএ নেতা দুদু মিয়া গত ছয় বছরে দুইবার সভাপতি হয়েছেন। তিনি তেজগাঁওয়ের বেগুনবাড়ী বস্তিতে ছিলেন ২০ বছর। তবে কালোবাজারি সিন্ডিকেটে জড়িয়ে এখন কোটিপতি। বাগানবাড়ীতে সরকারি জায়গা দখল করে দুদুও গড়ে তুলেছেন টিনশেড বাড়ি। আসামি লোকমান বর্তমান সিবিএর সাধারণ সম্পাদক। ওএমএসের চাল-আটা বিক্রির সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা তিনিও। লোকমান ও দুদু মিয়া সরাসরি ঢাকার বাইরে চাল ও আটা পাঠান। দিনে ট্রাকে পণ্য বোঝাই করা হলেও বের করা হয় রাতে।
মামলার আসামি হয়েছেন মোহাম্মদপুরের এমন এক আড়তদার বলেন, ‘ট্রাকের চালকরাই বিক্রি করে। রাতে এসে জানতে চায় লাগবে কি না। রাজি হলে রাতেই নিয়ে আসে।’ কয়েকজন ডিলার জানান, সফি মিয়া, নাসির মিয়া, সারোয়ার মিয়া, মাহবুবুল হক, হাশেম, সাইদুল, মানিক, হানিফ, ফারুক, জামাল ও লোকমান নামে ডিলার ও আড়তদার ওএমএসের চাল-আটা কেনেন। টঙ্গীর সাইফুল সেলিম, কচুক্ষেতের মুসা, মিঠু ও আসাদ এবং শ্যামবাজার ও সোয়ারীঘাটের কয়েকজন আড়তদার ওএমএসের চাল-আটা কিনে প্রকাশ্যে বিক্রি করেন।
তবে কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে আলমগীর সৈকত বলেন, ‘পুরান ঢাকায় পৈতৃক একটি বাড়ি আছে আর একটি গাড়ি আছে। ২০০৮ সাল থেকে ডিলারশিপ আছে আমার।’ তিনি আরো বলেন, ‘সিএসডির পাশে আমার কোনো ঘর বা দোকান নেই। এগুলো মিথ্যা তথ্য।’
ডিলারদের ঘরে বসিয়ে টাকা দেয় ওরা : পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে দুজন ডিলার কালের কণ্ঠকে বলেন, সিএসডি থেকে ওএমএস ও রেশনের সামগ্রী বাইরে যায়, এটা ‘ওপেন সিক্রেট’। যদি সঠিক তদন্ত হয়, তবে দেখা যাবে বেশির ভাগ ডিলারশিপ ঠিক নেই। তাঁরা দাবি করেন, ঢাকায় ৩৪০ জন তালিকাভুক্ত ডিলার আছেন। পর্যায়ক্রমে প্রতিদিন ১৪১ জন ডিলারকে চাল ও আটা বিক্রির জন্য দেওয়া হয়। তবে প্রতিদিন মাত্র ২৫ থেকে ৩০টি ট্রাকে চাল-আটা বিক্রি হয়। বাকিগুলো চলে যায় কালোবাজারে। এ জন্য ঘরে বসেই টাকা পান বাকি ডিলাররা। ট্রাকের চালকরা বিক্রি করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে টাকা দিয়ে দেয়। কোনো প্রকার কাজ না করেই প্রতি টনে পাঁচ হাজার টাকা হিসাবে দেওয়া হয় ডিলারদের। আলমগীর সৈকত এটা নিয়ন্ত্রণ করেন। ডিলাররা জানেনও না কোথায় তাঁদের ট্রাক।
সিএসডির আরেকটি সূত্রের দাবি, ডিলারদের তালিকা ধরে তদন্ত করলেই দেখা যাবে বেশির ভাগই ভুয়া। নামে-বেনামে ডিলারশিপ নিয়েছেন অনেকে। তাঁরা লোকজনের মাধ্যমে ঘরে বসে টাকা পেলেই খুশি থাকে। মূল টাকা আসলে সিন্ডিকেটের পকেটে যায়।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ডিলার নেতা ও সিন্ডিকেটের হোতা আলমগীর সৈকত বলেন, ‘ব্যাপারটা আসলে তেমন নয়। একটা ডিলারি করে অনেকের পোষায় না। তাই অথরাইজ (অনুমোদিত) ব্যক্তি দিয়ে দেয়। তারা বেচাকেনার কাজ করে। আমরা সহায়তা করি।’
- কার্টসিঃ কালের কণ্ঠ/ সেপ্টেম্বর ২৫,২০১৮
No comments:
Post a Comment