Search

Thursday, September 20, 2018

বগুড়া আওয়ামী লীগ নেতার এত সম্পদ!

বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম মোহনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদ অর্জনের অভিযোগ করেছেন দলটির স্থানীয় আরেক নেতা। দুর্নীতি দমন কমিশনে করা ১৬টি অভিযোগ থেকে জানা যায়, বগুড়া ও ঢাকায় মোহনের বাড়ি-গাড়ি, জমি ও ব্যাংকে মোটা অঙ্কের সঞ্চয় রয়েছে। বিদেশেও তাঁর বাড়ি রয়েছে।

ক্ষমতাসীন দলের নাম ভাঙিয়ে ‘ক্যাডার বাহিনী’ দিয়ে চাঁদাবাজি, হুমকি দিয়ে টাকা আদায় এবং পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি করে এই বিপুল সম্পদ অর্জনের অভিযোগ করা হয়েছে মোহনের বিরুদ্ধে। 

দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয়, বগুড়ার উপপরিচালক আনোয়ারুল হক অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি কালের কণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম মোহনের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দাখিল হয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনে। তাঁরা অভিযোগের একটি প্রাপ্তি স্বীকারপত্রও দিয়েছেন। এখন তাঁরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছেন।

বগুড়া শহরের বাদুরতলা এলাকার মেসার্স শুকরা এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী আব্দুল মান্নান আকন্দ এই অভিযোগ দাখিল করেছেন। গত ৫ সেপ্টেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশন তাঁকে প্রাপ্তি স্বীকারপত্র দিয়েছে। আব্দুল মান্নান বগুড়া পৌর শাখা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য।

বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি, বগুড়া শাখার সিনিয়র সহসভাপতি মঞ্জুরুল আলম মোহনের বিরুদ্ধে বগুড়া শহরের একাধিক হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ এবং আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ করা’, নকল ও নিম্নমানের বই ছাপিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে থেকে মোটা অঙ্কের উেকাচ গ্রহণের অভিযোগও করা হয়েছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, মোহন ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের মালিকানায় শাহ ফতেহ আলী পরিবহনে এসি/নন এসি  করে। তাঁর নাম ব্যবহার করেও অনেক গাড়ি চলে, যা থেকে তিনি মাসে লাখ লাখ টাকা আয় করেন। তিনি নিজে ল্যান্ড ক্রুজার গাড়ি ব্যবহার করেন। তাঁর বড় ছেলে অর্ক করোলা গাড়ি ব্যবহার করেন। কিন্তু তাঁর এই ছেলের নামে কোনো আয়কর নথি নেই। মোহনের ছোট ছেলে অয়ন সবেমাত্র পড়াশোনা শেষ করেছেন। এই অয়নের নামে কাহালুর সারাই মৌজায় তিন একর জমিসহ বাগানবাড়ি রয়েছে, যার মূল্য প্রায় চার কোটি টাকা। এই জমিতে ৫০ লাখ টাকা খরচ করে তিনি বাংলোবাড়ি করেছেন। সেখানে আরো চারতলা ভবন রয়েছে, যেটি রেস্টহাউস হিসেবে ব্যবহার করা হয়। মোহন তাঁর শ্বশুরবাড়ি এলাকা বরিশালে দুই কোটি টাকা খরচ করে দৃষ্টিনন্দন মসজিদ নির্মাণ করেছেন। বগুড়া শহরের সুবিল এলাকায় সাধারণ বীমা ভবনের পাশে চার কোটি টাকা মূল্যের জমি রয়েছে তাঁর, যা প্রাচীর দেওয়া আছে এবং সামনে দোকান রয়েছে। শহরের কাটনারপাড়া এলাকায় হটু মিয়া লেনে ৯ শতক জমির ওপর আট কোটি টাকায় চার ইউনিটের সাততলা বাড়ি করেছেন মোহন। এ ছাড়া ঢাকার গুলশানে বিটিআই প্রিমিয়ার প্লাজায় তাঁর এক হাজার ৭০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট রয়েছে, যার দাম পাঁচ কোটি টাকা। ফ্ল্যাট নম্বর-৮/এ, প্লট নং-চ-৯০/এ, প্রগতি সরণি। সদর উপজেলার এরুলিয়ায় কাহলা মৌজায় তাঁর স্ত্রী, ছেলে ও মেয়ের নামে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা দামের আট একর জমি রয়েছে। শহরের দত্তবাড়ী তিনমাথার পূর্ব পাশে ৯ শতক জায়গা প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকায় কিনেছেন। সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা চলছে। এর নকশাও অনুমোদন করা হয়েছে। চকসূত্রাপুরে দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে বহুতল বাড়ি নির্মাণ করছেন মোহন। এ ছাড়া দেশের বাইরে ভারতের কলকাতা শহরের মুকুন্দপুর এলাকায় তাঁর দোতলা বাড়ি রয়েছে।

অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়, মঞ্জুরুল আলম মোহনের নামে শহরের ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফাহ্ ব্যাংক, এসআইবিএল, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকে কোটি কোটি টাকা রয়েছে।

অভিযোগকারী আব্দুল মান্নান আকন্দের আরজি, সরকারকে মোটা অঙ্কের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করেছেন বলে মোহনের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য জেলা আওয়ামী লীগ নেতা মঞ্জুরুল আলম মোহনের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন নম্বরে ফোন করে এবং খুদে বার্তা (এসএমএস) পাঠানো হয়। কিন্তু তিনি সাড়া দেননি।

  • কার্টসিঃ কালের কণ্ঠ/ সেপ্টেম্বর ২০,২০১৮ 

No comments:

Post a Comment