জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আহ্বায়ক ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, বর্তমান সরকার প্রতারক, মিথ্যুক ও স্বৈরাচার। সরকার ঢালাওভাবে মিথ্যাচার করছে। দেশের জনগণের হাজার হাজার কোটি টাকা চুরি করে লুটপাট করে বিদেশে গাড়ি-বাড়ি করেছে। লুটেরা এ সরকার বিদেশে পালিয়েও রক্ষা পাবে না। জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। জনগণই তাদেরকে খুঁজে বের করে এনে বিচার করবে। তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনকে প্রধানমন্ত্রী ও তার দলের লোকেরা নিয়ম রক্ষার নির্বাচন বলেছিলেন। এবং দ্রুত সকল দলের অংশগ্রহণে আরেকটি নির্বাচন দেয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন। কিন্তু মিথ্যুক সরকার তা বেমালুম ভুলে গেছে। এই অবৈধ সরকারের যারা পতাকা উড়িয়ে অহংকারের সুরে কথা বলেন, তাদের দায়িত্ববোধ এবং কর্তব্যবোধ নেই।
তিনি বলেন, জনগণকে বোকা ও নিরক্ষর মনে করবেন না। পুলিশ দিয়ে ছাত্র পেটাবেন, সাদা পোশাকে লুঙ্গি পরে জনগণকে পিটাবেন, আর অহংকারের সুরে বলবেন আমরা জানি না। এটা হতে পারে না। প্রয়োজনে তদন্ত করেন, দ্যাখেন জনগণকে কারা পিটিয়েছে। আমিও এই তদন্ত দলে যেতে রাজি আছি।
ড. কামাল বর্তমান সংসদ সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদের মধ্যেও কিছু বিবেকবান সৎ ও শিক্ষিত লোক আছেন, আপনারা জনগণের পক্ষ থেকে হিসাব চান, কারণ আপনারা জনগণের প্রতিনিধি। না হলে আপনারা গাড়ি-বাড়ি ব্যবহার করছেন এবং হারাম খাচ্ছেন। স্বৈরাচারী এই সরকারকে হঠাতে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় খুলনা মহানগরীর শহীদ হাদিস পার্কে আইনের শাসন, ন্যায়বিচার, অবাধ, গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে যুক্তফ্রন্টের জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
জেএসডির খুলনা জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট আ ফ ম মহাসিনের সভাপতিত্বে জনসভায় প্রধান বক্তা ছিলেন জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, জেএসডি সাধারণ সম্পাদক ও যুক্তফ্রন্ট নেতা আবদুল মালেক রতন, গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আতাউল করিম ফারুক, বিকল্প ধারার সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার ওমর ফারুক, নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়ছার।
জনসভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন-জেএসডির সহসভাপতি সাবেক এমপি দবির উদ্দিন জোয়ার্দ্দার, কেন্দ্রীয় নেতা তৌহিদ হোসেন, মাগুরার জেএসডি নেতা এমএ আউয়াল, কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুস সালাম, খুলনা জেলা সাধারণ সম্পাদক কাওয়ার আলী সানা, জেএসডি নেতা আব্দুল লতিফ, জিল্লুর রহমান, সুধাংশু সরকার, খুলনা মহানগর জেএসডির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ আব্দুল খালেক প্রমুখ।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে আ স ম আব্দুর রব বলেন, আওয়ামী লীগের এই ৯ বছরের শাসনামলে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে হত্যা করা হয়েছে। জনগণের শান্তি নেই, নিরাপত্তা নেই, আইনের শাসন নেই। গুম, খুন, ডাকাতি, ক্রসফায়ার নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার।
আ স ম আব্দুর রব বলেন, শান্তি, নিরাপত্তা ও আইনের শাসনের জন্য দেশের সকল জনগণ ও দলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এবার যদি নিরপক্ষ ভোট না হয়, তবে জাতি মারাত্মক সংকটে পড়বে। তিনি বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে, পার্লামেন্ট ভেঙে দিতে হবে, মন্ত্রিসভা ভেঙে দিতে হবে, নিরপেক্ষ লোক দিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করতে হবে।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বর্তমান রাষ্ট্র পুলিশি রাষ্ট্র। এখন এই রাষ্ট্রকে কল্যাণমূলক রাষ্ট্র বলা যায় না। মান্না বলেন, আগামী অক্টোবর মাসে বৃহত্তর ঐক্য হবে। এবং জুলুমবাজ, দখলবাজ এই সরকারের হাত হতে দেশ রক্ষার জন্য আবারও খুলনায় আসবো। তিনি বলেন, লাখো জনতা মাঠে নামলে সরকার দাবি মানতে বাধ্য হবে।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, সরকার উন্নয়নের কথা বলে কিন্তু গণতন্ত্র না থাকলে উন্নয়ন হয় না, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা থাকে না। এক টাকার কাজ করে নেতাকর্মীদের ভাগে এক শ’ টাকা জোটে, যা জনগণের টাকা। আমি দেখতে পাচ্ছি নৌকা ডুবতে বসেছে, ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের ঘণ্টা বেজেছে। তাই তিনি সকল জনগণ ও দলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
সরকার জনগণের সেবকমাত্র সেটা জনগণকেই বোঝাতে হবে
স্টাফ রিপোর্টার, যশোর থেকে জানান, দেশে নিজের মালিকানা প্রতিষ্ঠা করতে সকল নাগরিককে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ঐক্য প্রক্রিয়ার আহ্বায়ক ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন।
তিনি বলেন, সরকার জনগণের সেবকমাত্র। তারা যদি সেটা না বোঝে তাহলে নাগরিককে মালিকের ভূমিকায় আসতে হবে এবং সেটা বুঝিয়ে দিতে হবে। একই সঙ্গে জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার নিশ্চিত করতে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।
খুলনায় আয়োজিত জনসভায় অংশ নিতে যাওয়ার পথে গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় যশোর প্রেস ক্লাবে নেতাকর্মী ও সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।
ড. কামাল হোসেন বলেন, দেশব্যাপী বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার জন্য তারা বের হয়েছেন। এটা কোনো দলীয় লক্ষ্য নয়, সংবিধানে দেয়া অধিকারের জন্যই। ফলে দেশের মালিককে তাদের অধিকার রক্ষায় সক্রিয় হতে হবে।
তিনি বলেন, মানবাধিকার রক্ষা, সুশাসন নিশ্চিত ও সংবিধান অনুযায়ী দেশে শাসনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে নাগরিকদের সচেতন হওয়া জরুরি। এজন্য সবাইকে মালিকের ভূমিকায় আসার আহ্বান জানান তিনি।
ড. কামাল বলেন, অসহায় বোধ করার কিছু নেই। সরকারের কাছ থেকে কাজ আদায় করে নিতে হবে। সিংহাসনে যারা আছেন তারা সেবকমাত্র। তারা যদি সেটা না বোঝে তবে তাদের তা বুঝিয়ে দেয়া দরকার। কারণ আমরা জনগণ মালিক তাই আমাদের দায়িত্ববোধও আছে। এটাকে মনে রেখেই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে হবে। যাতে এদেশে শাসন ব্যবস্থা, সমাজ ব্যবস্থা, অর্থনীতি সবকিছু যেন জনস্বার্থে ও জাতীয় স্বার্থে হয়।
মতবিনিময়কালে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের নেতা জেএসডি সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন, গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, বিকল্প ধারার সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার ওমর ফারুক, সোনার বাংলা পার্টির সভাপতি শেখ আব্দুর নূরসহ যশোর জেলা নেতৃবৃন্দ।
- কার্টসিঃ মানবজমিন/ সেপ্টেম্বর ১৯,২০১৮
No comments:
Post a Comment