Search

Tuesday, September 25, 2018

ছাত্রলীগের নির্যাতনের শিকার এহসান দেশ ছেড়েছেন

  •  ৬ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগের মারধরের শিকার হন এহসান 
  •  এহসানের একটি চোখের কর্নিয়া গুরুতর জখম হয় 
  •  ভারতে এহসানের চোখে অস্ত্রোপচার করানো হয় 
  •  এহসান নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিল 
  •  গত মাসে এহসান দেশ ছেড়ে মালয়েশিয়ায় যান 
  •  বহিষ্কৃত ছাত্রলীগের ৫ নেতা-কর্মী হলে থাকছেন


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের নির্যাতনের শিকার এহসান রফিক নিরাপত্তাহীনতার কারণে দেশ ছেড়েছেন। তিনি মালয়েশিয়ায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গেছেন। অথচ ওই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্রলীগের যে সাত নেতা-কর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করেছিল, তাঁদের মধ্যে পাঁচজন হলেই থাকছেন। এমনকি যাঁকে আজীবনের জন্য বহিষ্কারের কথা বলা হয়েছে, তিনিও হলে থাকেন। একই ঘটনায় ছাত্রলীগ থেকেও তিনজনকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। কিন্তু বহিষ্কৃত প্রত্যেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সময় দিচ্ছেন।

সহপাঠীর কাছ থেকে ক্যালকুলেটর ধার নেওয়া নিয়ে গত ৬ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মারধরের শিকার হন এহসান রফিক। তিনি দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তাঁকে হলের একটি কক্ষে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। এতে এহসানের একটি চোখের কর্নিয়া গুরুতর জখম হয়। তাঁর কপাল ও নাক ফেটে যায়।

আহত এহসানকে দেশের একাধিক হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েছেন তাঁর বাবা মো. রফিকুল ইসলাম। এরপর ভারতের শংকর নেত্রালয়ে তাঁর চোখে এক দফা অস্ত্রোপচার করানো হয়। রফিকুল একটি বেসরকারি টেলিভিশনের ঝিনাইদহ প্রতিনিধি।

মো. রফিকুল ইসলাম জানান, গত মাসের শেষ সপ্তাহে এহসান দেশ ছেড়ে মালয়েশিয়ায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গেছেন। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে কী হয়, তা নিয়ে একটু ভীতি কাজ করছিল। কখন আবার কী হয়ে যায়, তা নিয়ে দুশ্চিন্তাও ছিল। এহসান নিজেই চাচ্ছিল না সেখানে যেতে, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিল। তাই শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হওয়ার পর তাঁকে বাইরে পড়তে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এর আগে এহসান আহত হওয়ার পর নিরাপত্তাসংকটের কারণে আবাসিক হলের বরাদ্দ পরিবর্তনের জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মে সেটি সম্ভব নয় বলে তাঁকে জানিয়ে দেওয়া হয়।









২০১৭ সালে ড. িজগাবো কানো জুডো প্রতিযোগিতায় রানার্সআপ হয়েছিলেন এহসান। তাঁর পাশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল। ছবি: সংগৃহীত

হল কর্তৃপক্ষের তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হল শাখা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক ওমর ফারুককে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এ ছাড়া উর্দু বিভাগের মেহেদী হাসান ওরফে হিমেল, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের রুহুল আমিন ব্যাপারী, দর্শন বিভাগের আহসান উল্লাহ, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সামিউল হক, লোকপ্রশাসন বিভাগের ফারদিন আহমেদকে দুই বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়। তাঁরাও প্রত্যেকে হল শাখা ছাত্রলীগের পদধারী নেতা। শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী এবং হল শাখার সহসভাপতি আরিফুল ইসলামকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়।

বহিষ্কৃত ব্যক্তিদের সহপাঠী ও হলের একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বহিষ্কৃত ব্যক্তিদের মধ্যে সামিউল ও ফারদিনকে মাঝেমধ্যে এসএম হলে আসতে দেখা যায়। স্থায়ীভাবে বহিষ্কৃত ওমর ফারুক ও দুই বছরের জন্য বহিষ্কৃত মেহেদী হাসান ১২ নম্বর কক্ষে থাকেন। এই কক্ষটি হলের অনেকগুলো রাজনৈতিক কক্ষের একটি। সামিউলও মাঝেমধ্যে এই কক্ষে অবস্থান করেন। এ ছাড়া আরিফুল ইসলাম ১৫২ নম্বর কক্ষে ও আহসান উল্লাহ ১৭৮ নম্বর কক্ষে থাকেন। রুহুল আমিন থাকেন বারান্দায়। হার্ডবোর্ড দিয়ে সেখানে একটি কক্ষের মতো করে নিয়েছেন।

তাঁরা সবাই হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তাহসান আহমেদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। নতুন করে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি হওয়ার পর তাহসান আহমেদ কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে রাজনীতি করেন। ফেসবুকে গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে এই আরিফুল ও রুহুল আমিনের পৃথক ছবি আছে। তাঁরা নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদককে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়েছিলেন।

হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মাহবুবুল আলম জোয়ার্দার প্রথম আলোকে বলেন, সাময়িক সময়ের জন্য বহিষ্কৃত কেউ হলে থাকতে পারবে কি না সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই। থাকলে তিনি তা মেনে চলবেন। এহসান রফিকের ঘটনায় স্থায়ীভাবে কাউকে বহিষ্কার করা হয়েছে কি না, সে বিষয়ে কাগজপত্র যাচাই না করে তিনি কিছু বলতে পারছেন না বলে জানান।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রাব্বানী প্রথম আলোকে বলেন, যে সময়ের জন্য কোনো শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়, ওই সময়ে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো সুবিধা পাবে না, এটাই নিয়ম।
  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ সেপ্টেম্বর ২৫,২০১৮ 

No comments:

Post a Comment