আবু সালেহ আকন
একের পর এক নৃশংস খুনের ঘটনায় উদ্বিগ্ন মানুষ। এসব ঘটনার বেশির ভাগই থেকে যাচ্ছে কুলেস। কে বা কারা খুন করেছে সে সম্পর্কে তথ্য মিলছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে। গত কয়েক দিনে এই পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। কোনো কোনো এলাকায় উদ্ধার হচ্ছে গুলিবিদ্ধ লাশ। এসব খুনের কোনো কোনোটি নিয়ে পরিবারের অভিযোগ রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি।
পটুয়াখালীর মহিপুরে ষষ্ঠ শ্রেণীর এক ছাত্রীকে ধর্ষণ শেষে হত্যার রেশ না কাটতেই গতকাল কুয়াকাটায় নবম শ্রেণীর এক ছাত্রী নিজ শয়নকক্ষ থেকে নিখোঁজ হয়েছে। ওই ছাত্রীর শোয়ার ঘর থেকে রক্তমাখা দু’টি ছুরি ও তার ব্যবহৃত পায়ের নূপুর এবং দুই টুকরো গোশত উদ্ধার করা হয়েছে। ঘরের বেড়াসহ বিভিন্ন স্থান রক্তে ভেসে গেছে। তবে প্রকৃত ঘটনা কী তা নিয়ে এলাকায় আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। গতকাল ভোরে এ খবর শুনে সবাই হতবাক।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার বেলগাছা ইউনিয়নের নালিয়ারদোলা এলাকার একটি পরিত্যক্ত ভবনের পাশ থেকে গতকাল বুধবার দুই শিার্থীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বেলগাছা ইউনিয়নের পূর্বকল্যাণ গ্রামের সৈয়দ আলীর ছেলে জাহাঙ্গীর (১৬) এবং কুড়িগ্রাম পৌরসভা এলাকার ডাকুয়াপাড়া গ্রামের জবেদ আলীর মেয়ে সেলিনা (১৪)। জাহাঙ্গীর কুড়িগ্রাম টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণীর ছাত্র এবং সেলিনা বেলগাছা ইউনিয়নের আমিন উদ্দিন দাখিল মাদরাসার অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী। স্থানীয়রা বলেছেন, তাদের ধারণা এটি হত্যাকাণ্ড।
টাঙ্গাইলে হেলাল উদ্দিন (৩৫) নামের এক ব্যক্তির দ্বিখণ্ডিত লাশ উদ্ধার হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার খিলপাড়া এলাকা থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘাটাইল থানার ওসি মাকসুদুল আলম পরিবারের বরাত দিয়ে বলেছেন, প্রতিদিনের মতো মঙ্গলবার সকালেও হেলাল গোপালপুরের বাড়ি থেকে ঘাটাইলে তার দোকানে এসে ভাঙ্গরির জিনিসপত্র সংগ্রহে বের হন। বিকেলে বাড়ি না ফেরায় পরিবারের সদস্যরা তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে ফোন বন্ধ পান। পরে খিলপাড়া এলাকার লোকজন ধান েেত একটি ড্রামের ভেতরে লাশ দেখে পুলিশে খবর দেন।
এ দিকে কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নে পূর্ব বিরোধের জেরে সহিদ মিয়া নামে এক সৌদি প্রবাসীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে ইউনিয়নের জোড়ামেহের গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত সহিদ মিয়ার মেয়ে নারগিছ আক্তার বলেছেন, প্রতিবেশী মাহবুব বিভিন্ন সময় তার বাবাকে প্রাণনাশের হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছিল। ওই বিরোধের জেরে মাহবুব ও তার ভাই রিপন তার বাবাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে।
এভাবেই একের পর এক ঘটছে খুনের ঘটনা। কোনো কোনো খুনের কিনারা খুঁজে পাচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। গত শুক্রবার সকালে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকা থেকে তিন যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহতরা হলেন- রাজধানীর মহাখালী এলাকার শহীদুল্লাহর ছেলে মো: সোহাগ (৩২), মুগদা এলাকার মো: আবদুল মান্নানের ছেলে শিমুল (৩১) ও ওই এলাকার আবদুল ওয়াহাব মিয়ার ছেলে নুর হোসেন বাবু (৩০)।
কেন এই খুনের ঘটনা তা এখনো জানে না পুলিশ। পরিবারের অভিযোগ যাত্রীবাহী বাস থেকে তাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্য পরিচয়ে কে বা কারা তুলে নিয়ে যায়। পরে তাদের লাশ পাওয়া যায়।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর বুড়িগঙ্গা নদী থেকে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির গলিত লাশ উদ্ধার হয়েছে। একই দিন কেরানীগঞ্জের তরিকুল্লাহর ডকইয়ার্ড সংলগ্ন বেড়িবাঁধ থেকে আরেক যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এই লাশগুলোর কোনো কিনারা করতে পারেনি পুলিশ।
যশোরের দু’টি থানা এলাকা থেকে ফারুক হোসেন (৫০) ও আজিজুল হক (৪৫) নামের দুই ভাইয়ের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার হয়েছে গত রোববার। তাদেরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে কে বা কারা নিয়ে যায়। পরে যশোরের শার্শা ও কেশবপুর থেকে দুই ভাইয়ের লাশ উদ্ধার হয়।
- কার্টসিঃ নয়াদিগন্ত/ সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৮
No comments:
Post a Comment