Search

Wednesday, September 26, 2018

নির্মাণকাজের গুণগত মান নিশ্চিত করুন

সড়ক-মহাসড়কের দুর্দশা


গত রোববার সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) আয়োজিত এক সেমিনারে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোর দুরবস্থার কথা উল্লেখ করে সওজের কর্মকর্তাদের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এই অসন্তোষ জন-অসন্তোষেরই প্রতিধ্বনি। সংবাদমাধ্যমে দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোর দুরবস্থা নিয়ে ভুক্তভোগী জনসাধারণের অভিযোগ-অসন্তোষের ব্যাপক প্রতিফলন ঘটে। লক্ষণীয় বিষয় হলো, রোববারের ওই সেমিনারে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অনেক কর্মকর্তা এ বিষয়ে আত্মসমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেছিলেন। কৌতূহল জাগে, মন্ত্রীর অসন্তোষ ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আত্মসমালোচনার কোনো সুফল কি ফলবে?


‘বাংলাদেশে মানসম্পন্ন সড়ক অবকাঠামো নির্মাণ: সমস্যা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে সেসব বিষয়েই আলোচনা হয়েছে, যেগুলো ইতিমধ্যে বহুল আলোচিত। যেমন সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণের পরিকল্পনায় ত্রুটি আছে, সেগুলোর স্থায়িত্ব কম, রাজনৈতিক বিবেচনায় অনেক নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা, যথাসময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ হয় না; সড়ক-মহাসড়কের নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয় তুলনামূলকভাবে বেশি ইত্যাদি। এই সবই বাস্তব সত্য। কিন্তু এসবের দায় কাদের? যাদের দায়, তাদের জবাবদিহির ব্যবস্থা ও চর্চা আছে কি না? এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলো নিয়ে কোনো আলোচনা হয় না। দায়িত্বশীলতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার অনুশীলন না থাকলে কোনো ক্ষেত্রে পরিস্থিতির উন্নতি হয় না।


সোমবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, সওজের গত মে মাসের হিসাব অনুযায়ী ওই সময় পর্যন্ত দেশের প্রায় পৌনে ৫ হাজার কিলোমিটার সড়কের অবস্থা খারাপ। প্রশ্ন হলো, দেশের মোট সড়ক-মহাসড়কের চার ভাগেরও বেশির এই দুরবস্থা কেন হয়েছে। দুরবস্থায় পড়ার আগেই এগুলো মেরামত করা হয়নি কেন। আরও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, যেসব সড়ক-মহাসড়কের স্থানে স্থানে ভেঙেচুরে গিয়ে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে, সেগুলো কত দিন আগে নির্মিত বা মেরামত করা হয়েছিল। প্রতিটি সড়ক-মহাসড়কের স্বাভাবিক স্থায়িত্ব প্রত্যাশিত। কোনো সড়ক ৫ বছর, কোনোটি ১০ বছর টেকসই হওয়ার কথা। কিন্তু দেখা যায়, নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার দুই-এক বছরের মধ্যেই সেগুলো ভেঙেচুরে যায়, খানাখন্দের সৃষ্টি হয়। তারপর সেসব বেহাল সড়ক-মহাসড়কের ভাঙাচোরা জায়গায় বিপুল অর্থ ব্যয় করে মেরামতি চালানো হয়, কিছু সময় পরেই সেগুলো আবার ভেঙেচুরে যায়। এভাবেই অবিরাম চলতে থাকে সড়ক-মহাসড়ক রক্ষণাবেক্ষণ বা সংস্কারের নামে অর্থ ব্যয়, কিন্তু দুর্দশা কোনোভাবেই দূর হয় না।
একটা বহুল উচ্চারিত অভিযোগ, সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের গুণগত মান অত্যন্ত খারাপ। কিন্তু কেন খারাপ? নির্মাণ ও মেরামতের কাজ তদারকির দায়িত্ব যাঁদের, তাঁরা কি সে দায়িত্ব যথাসময়ে ও যথাযথভাবে পালন করেন? যদি করেন, তাহলে নির্মাণ-মেরামতের গুণগত মান খারাপ হয় কীভাবে? জনসাধারণের চোখের সামনেই নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করে সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণ ও মেরামতের কাজ চলে—এ রকম অভিযোগসংবলিত চিঠিপত্র সংবাদপত্রের দপ্তরে আসে, অথচ যাঁদের ওপর এসব কাজের তদারকির দায়িত্ব, তাঁরা এসব দেখতে পান না—এটা হয় না। এ ক্ষেত্রে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তদারকির অভাবে নির্মাণ-মেরামতের গুণগত মান খারাপ হলে এবং সেই কারণে সড়ক-মহাসড়কগুলো অচিরেই ভেঙেচুরে গেলে, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের জবাবদিহি ও শাস্তির অনুশীলন নেই বলে অবাধে অনিয়ম-দুর্নীতি চলছে। কিছু প্রকল্প গ্রহণ করা হয় দুর্নীতির উদ্দেশ্যেই—এমন অভিযোগও পাওয়া যায়। সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণ, উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজে গত ৯ বছরে ৫৭ হাজার ৫২৭ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। জনগণের এই বিপুল অর্থের কত ভাগ দুর্নীতিবাজদের পকেটে গেছে, তা হিসাব করার জন্য একটি তদন্ত হওয়া উচিত।
দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোর চির-দুরবস্থা স্থায়ীভাবে দূর করতে হলে এই খাতে যে অনিয়ম-দুর্নীতি স্থায়ী ব্যবস্থায় পরিণত হয়েছে, তা ভেঙে দিতে হবে।


Courtesy: Prothom Alo সম্পাদকীয়: Sep 26, 2018
 

No comments:

Post a Comment