সম্পাদকীয়
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) পরিচালিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুড়িমারী স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশন এবং মোংলা সমুদ্রবন্দর ও কাস্টম হাউজ উভয় প্রতিষ্ঠানেই পণ্যছাড় ও শুল্কায়নের প্রায় শতভাগ ক্ষেত্রেই নিয়মবহির্ভূত আর্থিক লেনদেন হয়। বন্দরে দুই প্রকার দুর্নীতি হয়। একটি যোগসাজশের দুর্নীতি, অন্যটি বলপূর্বক অর্থ আদায়ের দুর্নীতি; যা ঘুষ আদায়ের মাধ্যমে হয়ে থাকে। এটা এক ধরনের প্রাতিষ্ঠানিকতায় রূপ নিয়েছে এখন। সেখানে যারা অংশীজন, তাদের সবারই এক ধরনের সিন্ডিকেটের মতো যোগসাজশ কাজ করছে। দিন দিন মানুষের উন্নতি হয়, আমাদের হচ্ছে অবনতি। সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের ‘ডুয়িং বিজনেস ২০১৮’ শীর্ষক বৈশ্বিক সূচক অনুযায়ী, বাংলাদেশে ব্যবসা করার পরিবেশ আগের তুলনায় খারাপ হয়েছে। এমনটি হওয়ার অন্যতম কারণ কিন্তু ঘুষ, দুর্নীতি ও বন্দরগুলোর অদক্ষতা। ঘুষ ও দুর্নীতির কারণে ব্যবসার ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে, যার চাপ গিয়ে পড়ছে ভোক্তার ওপর। ব্যবসার ব্যয় বেড়ে গেলে তার প্রভাব অর্থনীতিতেও পড়ে। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায়ও পিছিয়ে পড়তে হয় ব্যবসায়ীদের। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণে বন্দরগুলোয় সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। বন্দরগুলোর দক্ষতা ও সক্ষমতা হ্রাসের পেছনেও ঘুষের প্রভাব রয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত মোংলা বন্দর ব্যবহার করে পণ্য আনা-নেয়া করবে এখন। সেখানে ঘুষ ও দুর্নীতিপূর্ণ একটি অবস্থা থেকে কাঙ্ক্ষিত সুফল মিলবে না।
পৃথিবীর সব দেশেই কমবেশি দুর্নীতি আছে, ঘুষের রেওয়াজ আছে। এ কথাটির আপেক্ষিক সত্যতা মেনে নিয়েও বাংলাদেশের রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থায় দুর্নীতির ব্যাপকতাকে অস্বীকার করার কোনো অজুহাত নেই। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এ দুর্নীতি ব্যবসায়ীদের মনে ব্যাপক হতাশাবোধের জন্ম দিয়েছে। এ হতাশাবোধের মূল কারণ হলো, দেশের রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যকর ভূমিকা থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করতে পারছে না। একটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধীন সমাজ ব্যবস্থার প্রধানতম ভিত্তি হওয়ার কথা এসব প্রতিষ্ঠানের। কিন্তু আমরা কয়েক দশক ধরে এসব প্রতিষ্ঠানকে ক্রমে ধ্বংস বা অকার্যকর করার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে চালিত করছি।
সমাজের প্রতিটি স্তরে ঘুষ, দুর্নীতি ক্যান্সারের মতো ছড়িয়ে পড়েছে। এ ব্যাধি থেকে নিস্তার পাওয়ার পথ হচ্ছে সমাজ ও রাষ্ট্রের বেশকিছু ক্ষেত্রে ব্যাপক সংস্কার সাধন এবং উন্নয়ন ঘটানো। এজন্য আমাদের রাজনীতিক, আমলা আর দেশের মানুষের মানসিকতার পরিবর্তনেরও কোনো বিকল্প নেই। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থানের পাশাপাশি অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। কারণ সেবা খাতের এ দুর্নীতিই সুশাসন প্রতিষ্ঠাকে বাধাগ্রস্ত করে তুলছে। যদি দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ সত্যিকার অর্থে কর্তৃপক্ষ চায়, তাহলে সেটা সম্ভব। শুধু যেটা দরকার, তা হলো সদিচ্ছা। যারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে, যেন এর মধ্য দিয়ে সবার কাছে এ বার্তা পৌঁছে যে অনিয়ম করলে, দুর্নীতি করলে শাস্তি পেতে হয়।
- কার্টসিঃ বনিক বার্তা/ সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৮
No comments:
Post a Comment