Search

Wednesday, September 19, 2018

চেক জালিয়াতি ও বেনামি কোম্পানির নামে অর্থ আত্মসাৎ

বাপেক্স কর্মকর্তাদের দুর্নীতি

ইয়ামিন সাজিদ
গ্যাসকূপ খননকাজে মালপত্র সরবরাহকারী হিসেবে যে প্রতিষ্ঠানকে দেখানো হয়েছে তা ভুয়া। টাকাও উত্তোলন করা হয়েছে ভুয়া ব্যক্তির নাম ব্যবহার করে। এছাড়া বিলের বিপরীতে ইস্যুকৃত চেকের অর্থ জালিয়াতির মাধ্যমে ডিডি, পে-অর্ডারের মাধ্যমে জমা করা হয়েছে মালপত্র সরবরাহকারী ভুয়া প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে। অর্থ আত্মসাতের এ ঘটনা ঘটেছে বাপেক্সেরই কর্মকর্তাদের প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতায়। বাপেক্সের নিজস্ব তদন্তেই প্রতিষ্ঠানটির ছয় কর্মকর্তার দুর্নীতির এ তথ্য উঠে এসেছে। 

অভিযুক্ত ছয় কর্মকর্তা হলেন— মহাব্যবস্থাপক ও প্রকল্প পরিচালক মো. শাহাবউদ্দিন, উপব্যবস্থাপক (হিসাব ও অর্থ) মো. হাদিউজ্জামান, ব্যবস্থাপক (হিসাব ও অর্থ) নুসরাত সিদ্দিক, উপমহাব্যবস্থাপক (খনন) জামাল ও রেজাউল করিম এবং উপব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মনির হোসেন। কোম্পানির ফেঞ্চুগঞ্জ-৪ ও ৫ এবং সালদা-৩ ও ৪ নম্বর গ্যাসক্ষেত্র উন্নয়ন প্রকল্পে এ দুর্নীতি করেছেন তারা।

প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে এ ছয় কর্মকর্তাকে কেন বরখাস্ত করা হবে না, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে তার কারণ দর্শাতে বলা হয়। ১০ কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানো না হলে বরখাস্তের কথাও বলা হয়। যদিও নোটিস পাওয়ার দেড় বছর পরও এখন পর্যন্ত অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। অভিযুক্তদের রক্ষায় বাপেক্সের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ আছে।

জানতে চাইলে বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম রুহুল ইসলাম চৌধুরী বণিক বার্তাকে বলেন, তাদের বিরুদ্ধে বাপেক্সের সর্বোচ্চ অথরিটির মাধ্যমে সর্বশেষ বোর্ডসভায় শাস্তির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কয়েকজনকে বরখাস্ত করা হয়েছে। বাকিদের বাপেক্সের নিয়ম অনুযায়ী বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দেয়া হয়েছে।

জানা যায়, গ্যাস সরবরাহ বাড়াতে ২০১০ সালের জুলাইয়ে বাপেক্সের নিজস্ব দুটি গ্যাসক্ষেত্রে চারটি উন্নয়ন কূপ খনন প্রকল্প নেয়া হয়। ফেঞ্চুগঞ্জ গ্যাসক্ষেত্রের ৪ ও ৫ এবং সালদা গ্যাসক্ষেত্রের ৩ ও ৪ নম্বর কূপ খননে ব্যয় ধরা হয় ৩০৫ কোটি টাকা। এ ব্যয়ের মধ্যে গ্যাস উন্নয়ন তহবিল থেকে অর্থায়ন ২৪০ কোটি টাকা। প্রকল্পটি শেষ হয় ২০১৬ সালের জুনে।

প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ও আর্থিক ব্যয়ের মধ্যে সমন্বয়হীনতা দেখা দেয়ায় তা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করে বাপেক্স কর্তৃপক্ষ। প্রাথমিক তদন্তে ব্যাংক ভাউচার, চেক ও ব্যাংক বিবরণী জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ পায় কমিটি। এছাড়া গ্যাসকূপ খননকাজে ব্যবহূত মালপত্র ক্রয়ে ভুয়া নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে স্থানীয় আরএফকিউ পদ্ধতির মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা তুলে নেয়া হয়। এ অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত ছিলেন প্রকল্পের পরিচালকসহ ছয় কর্মকর্তা। নানা কৌশলে সংঘবদ্ধভাবে প্রকল্পের টাকা তসরুপ করেন তারা।

জানা যায়, একজন কর্মকর্তা চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার পর পেনশন হিসেবে সর্বোচ্চ দেড় কোটি টাকা পেয়ে থাকেন। কেউ কেউ এর কমও পান। তবে এ প্রকল্পের পরিচালক মো. শাহাবউদ্দিন প্রকল্প থাকাকালীন তার বিরুদ্ধে নিজের বেতন-ভাতার বাইরে বেনামি কোম্পানি ও চেক জালিয়াতির মাধ্যমে ৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ মেলে। এর বাইরেও বড় অংকের অর্থ আত্মসাতে শাহাবউদ্দিনের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে বাপেক্সের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে।

শাহাবউদ্দিনের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট করে যে অর্থ আত্মসাতের কথা বলা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ব্যাংক ভাউচার ও ভুয়া নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে ১ কোটি ৮৫ লাখ ২২ হাজার টাকা। এছাড়া ২০১৫ সালের ২৩ জুন পরিশোধিত নগদ ভাউচারের মাধ্যমে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নাম উল্লেখ না করে ৯ লাখ ৯২ হাজার টাকা তুলে ২ লাখ ৮৬ হাজার টাকা আত্মসাৎ। এর বাইরে সালদা গ্যাসক্ষেত্রের ৩ ও ৪ নম্বর কূপ খননে দ্বিতীয় দফায় ফিজিক্যাল ইনভেন্টরি কাজ চলাকালে ৩৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা, অস্থায়ী শ্রমিক মজুরি খাতে ৪৩ লাখ ৩৮ হাজার, কনটেইনার ক্রয়ের ক্ষেত্রে খোলা দরপত্র আহ্বান না করে ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির নাম ব্যবহার করে ব্যাংক থেকে নগদ ৩৯ লাখ ও সালদা গ্যাসক্ষেত্রে জেনারেটর ক্রয়ের নামে ৫ লাখ ৯৮ হাজারসহ ৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা তসরুপেরও প্রমাণ পেয়েছে কমিটি।

অর্থ আত্মসাত্কারী চক্রের আরেক সদস্য বাপেক্সের উপব্যবস্থাপক (হিসাব ও অর্থ) মো. হাদিউজ্জামান। প্রকল্প পরিচালকের সহায়তায় ক্রয়, নির্মাণ ও মেরামতকাজের বিপরীতে উপরোক্ত অর্থের ভাগসহ ৬১ লাখ ৪৪ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন তিনি।

এছাড়া চেকের অর্থ ডিডি ও পে-অর্ডারের মাধ্যমে ব্যবস্থাপক (হিসাব ও অর্থ) নুসরাত সিদ্দিক, উপমহাব্যবস্থাপক (খনন) জামাল ও রেজাউল করিম এবং উপব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মনির হোসেন আরো অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলে তদন্ত কমিটির প্রাথমিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা যায়, এ ঘটনায় জ্বালানি বিভাগ থেকেও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির প্রতিবেদনে আরো বড় অংকের অর্থের অসঙ্গতি পাওয়া গেছে।

  • কার্টসিঃ বনিক বার্তা/ সেপ্টেম্বর ১৯,২০১৮ 

No comments:

Post a Comment