Search

Sunday, September 9, 2018

মামলাটি বিশ্বাসযোগ্য নয়

সম্পাদকীয়

যাত্রী কল্যাণ সমিতির নেতাকে মুক্তি দিন


সড়ক দুর্ঘটনা ও পরিবহন নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী এখন কারাগারে। শুক্রবার প্রথম আলোর প্রথম পাতায় হাতকড়া পরা অবস্থায় তাঁর ছবিটি যেকোনো বিবেকবান মানুষকে নাড়া দেবে। তিনি কয়েক বছর ধরেই যাত্রী কল্যাণ সমিতির নামে সড়ক দুর্ঘটনার বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছিলেন, কোনো সমস্যা হয়নি। হঠাৎ করে কেন তাঁকে কারাগারে যেতে হলো—এই প্রশ্ন না উঠে পারে না।

প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, যে চাঁদাবাজির মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সেই মামলার বাদী তাঁকে চেনেনই না। অথচ বাদীর কাছ থেকে ২ লাখ টাকা চাঁদা চাওয়া এবং ১০ হাজার টাকা নেওয়ার আজগুবি অভিযোগ আনা হয়েছে মোজাম্মেল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে। মামলার সুলুকসন্ধান করতে প্রথম আলো যেসব তথ্য পেয়েছে, তা রহস্য-উপন্যাসকেও হার মানাবে। মামলার বাদী মো. দুলাল মিয়া বলেছেন, মালিক–শ্রমিক ঐক্য পরিষদ নামের একটি সংগঠনের দুই নেতা তাঁর কাছ থেকে সাদা কাগজে সই নিয়ে থানায় মামলা দিয়েছেন। দুলাল মিয়া যদি মোজাম্মেল হক চৌধুরীকে না-ই চেনেন, তাহলে চাঁদা চাওয়া বা দেওয়ার প্রশ্ন আসে কীভাবে?

যদি ধরেও নিই যে সংশ্লিষ্ট মালিক–শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এই মামলা করিয়েছিলেন, তারপরও থানা-পুলিশ দায় এড়াতে পারে না।

কেউ মামলা দিলেই কি পুলিশ তদন্ত ছাড়াই অভিযুক্তকে হাতকড়া পরিয়ে গ্রেপ্তার করতে এবং জবানবন্দি আদায়ের জন্য রিমান্ডে নেবে? যেখানে একজন সাংবাদিক বাদীকে খুঁজে বের করে ভুয়া মামলার রহস্য ভেদ করতে পারলেন, সেখানে প্রশিক্ষিত পুলিশ কর্মকর্তা চাইলে সেটা পারতেন না, তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের হীন উদ্দেশ্যের কাছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পেশাদারি ভূমিকা পরাস্ত হয়েছে বলেই ধরে নিতে হচ্ছে। মামলাটি এতই অবিশ্বাস্য যে এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন করেও সাংবাদিকেরা সদুত্তর পাননি। তিনি বলেছেন, তদন্ত করে দেখে এ বিষয়ে বলতে পারবেন, তার আগে কিছু বলা সম্ভব নয়।

এখানে উদ্বেগের বিষয় হলো, যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিবের বিরুদ্ধে আনা মামলার রহস্য উন্মোচিত হওয়ার পর নতুন করে কোনো মামলায় তাঁকে ফাঁসানো হয় কি না। কেননা, তাঁর বিরুদ্ধে যাঁরা মামলা করেছেন, তাঁদের হাত অনেক লম্বা। মোজাম্মেল হক চৌধুরী কেন, যে কেউ আইনবিরুদ্ধ কিছু করলে সরকার তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবে, সেটাই স্বাভাবিক। তাই বলে যেখানে চাঁদাবাজির কোনো ঘটনাই ঘটেনি, সেখানে মোজাম্মেল হক চৌধুরীকে গ্রেপ্তার বা রিমান্ডে নেওয়া প্রতিহিংসামূলক আচরণ ছাড়া কিছু নয়।

প্রথম আলোর খবরে আরও যে তথ্য বেরিয়ে এসেছে, তাতে আমরা বিচলিত না হয়ে পারি না। ঈদুল ফিতরের সময়ে দুর্ঘটনায় কত মানুষ মারা গেছে, সে বিষয়ে তথ্য প্রকাশ না করার জন্য নাকি সংশ্লিষ্ট মহল থেকে তাঁকে চাপ দেওয়া হয়েছিল। তিনি সেই চাপ উপেক্ষা করে তথ্য প্রকাশ করার পর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তাঁর দাবি, যাত্রী কল্যাণ সমিতির দেওয়া তথ্য ভুয়া। কেউ ভুয়া তথ্য তুলে ধরলে তার জবাব হচ্ছে সঠিক তথ্য তুলে ধরা, প্রয়োজনে জবাবদিহি চাওয়া। যাত্রী কল্যাণ সমিতির কাছে কৈফিয়ত চাওয়াই হতে পারত যৌক্তিক পথ।

কিন্তু দেখা যাচ্ছে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিবকে এমন একটি অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যা আদৌ বিশ্বাসযোগ্য নয়। এবং প্রথম আলোর অনুসন্ধানে যা বের হয়ে এসেছে, তাতে একে সাজানো মামলা হিসেবেই ধরে নিতে হচ্ছে। একে প্রতিহিংসামূলক আচরণ হিসেবে বিবেচনা করারও যথেষ্ট কারণ রয়েছে। আমরা অবিলম্বে এই মামলা প্রত্যাহার এবং তাঁর মুক্তি দাবি করছি। 

  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ সেপ্টেম্বর ০৯,২০১৮

No comments:

Post a Comment