Search

Sunday, September 9, 2018

কবর ও শ্মশানের জমি দখল করলেন আওয়ামী লীগ নেতা

সম্পাদকীয়

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার সুন্দরপুর-দুর্গাপুর ইউনিয়নের কাদিরকোল গ্রামে চিত্রা নদীর পাড়ে শতবর্ষী একটি শ্মশান দখল করার চেষ্টা চালানোর খবরটি আমাদের আহত করেছে।

গত শুক্রবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, রেজাউল ইসলাম নামের স্থানীয় একজন প্রভাবশালী কাদিরকোল উত্তরপাড়া নামে ওই শ্মশানটি নিজের দখলে নিতে চাইছেন। তিনি শ্মশানের পাশের জমির মালিক। দখলচেষ্টার অংশ হিসেবে তিনি ইতিমধ্যে শ্মশানের জমির সবুজ ঘাস কীটনাশক ছিটিয়ে মেরে ফেলেছেন। আমরা রেজাউলের এ কাজের তীব্র নিন্দা জানাই।

কাদিরকোল উত্তরপাড়া শ্মশানের অবস্থান চিত্রা নদীর পাড়ে খাসজমিতে। শত বছরের বেশি পুরোনো এই শ্মশানটিতে হিন্দুসম্প্রদায়ের মানুষের সমাধি রয়েছে। এ ছাড়া এখানে নিয়মিত দাহকার্য অনুষ্ঠিত হয়। এমন একটি স্থান দখলের চেষ্টাকে কোনোভাবেই সমর্থন করা যায় না। এভাবে শ্মশানের জমি দখল হচ্ছে, অথচ স্থানীয় প্রশাসন নির্বিকার। বিষয়টি দুঃখজনক। কেননা, খাসজমি দেখভালের দায়িত্ব স্থানীয় প্রশাসনেরই। তারা যে তাদের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করছে না, তা তো বোঝাই যাচ্ছে।

তবে শুধু ঝিনাইদহে নয়, দেশের আরও অনেক স্থানে শ্মশান ও কবরস্থানের জায়গা দখলের চেষ্টা হচ্ছে বা দখল হয়েছে। খোদ রাজধানীতেই শ্মশান ও কবরস্থানের জায়গা দখল করে কারখানা ও বিপণিকেন্দ্র নির্মাণ করছেন প্রভাবশালীরা। ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলায় স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে একটি গ্রামের কবর ও শ্মশানের জমি দখল করে বাগান করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বগুড়ার শিবগঞ্জেও এক আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে শ্মশানের জমি দখলচেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ রকম আরও বহু উদাহরণ রয়েছে।

জায়গা-জমির দাম ও চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দেশে একশ্রেণির মানুষের ভূমির প্রতি সীমাহীন লোভ লক্ষ করা যাচ্ছে। তারা খাসজমি থেকে শুরু করে ব্যক্তিমালিকানাধীন এবং বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের জায়গা-জমি জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে নির্দ্বিধায় দখল করে নিচ্ছে। এসব ভূমিদস্যু নদী-নালা, খাল-বিল, মসজিদ-মাদ্রাসা, কবরস্থান, মন্দির-শ্মশান কোনো কিছুই দখলের ক্ষেত্রে বাদ দিচ্ছে না। ভূমি অফিসসহ সরকারের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এসব জমি দখলের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণেই এমনটি ঘটতে পারছে।

শ্মশান-কবরস্থানের জমি নিয়ে দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ এবং ক্রমান্বয়ে বেপরোয়া হয়ে ওঠা ভূমিদস্যুদের প্রতিরোধ করে, তাদের হাত থেকে দখলকৃত জমি মুক্ত করতে সরকারকে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে শ্মশান দখলের ঘটনায় অভিযুক্ত রেজাউল ইসলামের ব্যাপারে প্রশাসন কী পদক্ষেপ নেয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ সেপ্টেম্বর ০৯,২০১৮


No comments:

Post a Comment