হাছান আদনান
চলতি বছর শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপির কাছ থেকে ৪০০ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক। লক্ষ্য অনুযায়ী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত এ ঋণখেলাপিদের কাছ থেকে আদায় করার কথা ছিল ২৬৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। এর বিপরীতে ব্যাংকটি আদায় করতে পেরেছে মাত্র ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এ হিসাবে বছরের আট মাসে লক্ষ্যমাত্রার ১ শতাংশ ঋণ ফেরত দেয়নি ব্যাংকটির শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপি। ৩১ আগস্ট পর্যন্ত শীর্ষ এ খেলাপিদের কাছে অগ্রণী ব্যাংকের পাওনা রয়েছে ১ হাজার ৫১৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।
শুধু শীর্ষ ঋণখেলাপিই নয়, অন্য খেলাপিদের কাছ থেকেও টাকা আদায় করতে পারছে না অগ্রণী ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) অনুযায়ী, চলতি বছর ঋণখেলাপিদের কাছ থেকে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা নগদ আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল ব্যাংকটি। কিন্তু ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ব্যাংকটি খেলাপিদের কাছ থেকে নগদ আদায় করতে পেরেছে মাত্র ১৭০ কোটি ২৯ লাখ টাকা। এ হিসাবে আট মাসে অগ্রণী ব্যাংক খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ২১ দশমিক ২৯ শতাংশ পূরণ করতে পেরেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে প্রতি বছরই এমওইউ স্বাক্ষর করে আসছে অগ্রণী ব্যাংক। ২০১৮ সালের এমওইউ অনুযায়ী আট মাসে ব্যাংকটির অগ্রগতি পর্যালোচনা করে অগ্রণী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। তাতে দেখা যায়, খেলাপি ঋণ থেকে নগদ আদায়, নিয়মিতকরণ ও অবলোপনের মাধ্যমে ব্যাংকটি লক্ষ্যমাত্রার ৩২ দশমিক ৭১ শতাংশ পূরণ করতে পেরেছে।
জানতে চাইলে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. শামস-উল-ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, নিয়ম-আচারের মধ্যে থেকে ঋণখেলাপিদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের সব ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ২০১৬ সালে এমডি পদে দায়িত্ব গ্রহণের পর খেলাপি ঋণ আদায়ে সমন্বিত অভিযান চালিয়েছিলাম। ওই সময় সহজে আদায়যোগ্য খেলাপি ঋণ আদায় হয়ে গেছে। কিন্তু শীর্ষ ঋণখেলাপিদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি বলেন, ঋণখেলাপিরা উচ্চ আদালতে রিটের আশ্রয় নিচ্ছেন। ফলে খেলাপিদের সিআইবি স্থগিত থাকছে। খেলাপি হওয়া সত্ত্বেও তাদের নতুন ঋণ দিতে হচ্ছে। আদালত, আইন মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া খেলাপিদের কাছ থেকে টাকা আদায় সম্ভব নয়।
চলতি বছরের জুন শেষে অগ্রণী ব্যাংকের বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩১ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে ৫ হাজার ৬৭৮ কোটি টাকা। জুন শেষে ব্যাংকটির বিতরণকৃত ঋণের ১৮ দশমিক ১৫ শতাংশ চলে গেছে খেলাপির খাতায়।
অগ্রণী ব্যাংকের আটটি শাখায় শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপির কাছে আটকে গেছে ১ হাজার ৫১৩ কোটি টাকার ঋণ। এর মধ্যে প্রধান শাখায় ১০ শীর্ষ ঋণখেলাপির কাছে ৮৬৫ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ রয়েছে। এ শাখার শীর্ষ খেলাপিরা হলো অ্যারিস্ট্রোক্র্যাট এগ্রো, আর্থ এগ্রো ফার্ম, এমআর সোয়েটার, জুলিয়া সোয়েটার, ফেরদৌস জুট মিল, ফাকা ডেনিম, জিল টেক্সটাইল, ইফতি ফ্যাশন, জয় কম্পোজিট ও মাধবদী ট্রেডিং।
চট্টগ্রামের লালদীঘি পূর্ব করপোরেট শাখায় তিন গ্রাহকের কাছে ২৭২ কোটি, বৈদেশিক বাণিজ্য করপোরেট শাখায় দুই গ্রাহকের কাছে ১৬১ কোটি টাকা আটকে গেছে। অন্য শাখাগুলোর মধ্যে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ করপোরেট শাখার এক গ্রাহকের কাছে ৫১ কোটি, রাজশাহী সাহেব বাজার করপোরেট শাখায় এক গ্রাহকের কাছে ৪৯ কোটি, চট্টগ্রামের বাণিজ্যিক এলাকা করপোরেট শাখায় এক গ্রাহকের কাছে ৪২ কোটি, চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ করপোরেট শাখায় এক গ্রাহকের কাছে ৩৯ কোটি এবং ঢাকার রমনা করপোরেট শাখার এক গ্রাহকের কাছে ৩৪ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ রয়েছে। অগ্রণী ব্যাংকের শীর্ষ অন্য গ্রাহকদের মধ্যে রয়েছে গিভেন্সি স্পিনিং, সুরুজ মিয়া জুট স্পিনিং, কেয়া ইয়ার্ন, সাদাত কম্পোজিট, ম্যাক শিপ বিল্ডার্স, ম্যাক শিপ ব্রেকিং ও আরাফাত স্টিল।
অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বলেন, চলতি বছরের তুলনায় গত বছর আমাদের আদায় ভালো ছিল। তবে এ বছরের বাকি তিন মাসে খেলাপি ঋণ থেকে আদায় বাড়ানোকে আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। পুনঃতফসিল করে আদায় বাড়ানোর চেয়ে নগদ আদায়ের দিকে আমরা বেশি নজর দিচ্ছি। আশা করছি, বছরের বাকি সময়ে খেলাপি ঋণ আদায় বাড়বে। তবে আদালতে রিটের কারণে অনেক ঋণখেলাপির কাছ থেকে টাকা আদায় সম্ভব হচ্ছে না।
- কার্টসিঃ বনিক বার্তা/ সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৮