Search

Sunday, September 30, 2018

মানব অঙ্গের আন্তর্জাতিক বাজারে পাচার হচ্ছে বাংলাদেশী শিশু

তাসনিম মহসিন 

মানব অঙ্গের জন্য প্রথমে ইউক্রেনে পাচার। ওইসব মানব অঙ্গ সেখান থেকে যাচ্ছে ইসরায়েলে। ইউক্রেন থেকে সরবরাহ করা এসব মানব অঙ্গ ইসরায়েল হয়ে চলে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজারে। মানব অঙ্গ কেনা-বেচার এ আন্তর্জাতিক বাজারে পাচার হচ্ছে বাংলাদেশী শিশুরাও।

বাংলাদেশ থেকে ইউক্রেনে পাচার হওয়া তিন শিশুর বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে এমন ধারণা করছে পোল্যান্ডে বাংলাদেশ দূতাবাস। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও বলছেন, ইউক্রেনে ওই তিন শিশুকে পাচার করা হয়েছে আন্তর্জাতিক বাজারে তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রির উদ্দেশ্যেই।

জানা গেছে, নওগাঁর একডালা ইউনিয়নের ওই তিন শিশুকে দত্তক নিয়েছিলেন ইউক্রেনের নাগরিক ওস্টাপেনকো ওলেকসি। গত বছরের মাঝামাঝি তাদের নিয়ে যাওয়া হয় ইউক্রেনে। এরপর থেকেই খোঁজ নেই ২০০৬ সালে জন্ম নেয়া এ তিন শিশুর। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলছে, ওলেকসির মাধ্যমে ওই তিন শিশুকে ইউক্রেনে পাচার করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রি করা হয়েছে ইসরায়েলের বাজারে।

ঘটনার শুরু ২০১৭ সালের আগস্টে, যখন পোল্যান্ডে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে তিন শিশুর বিষয়ে প্রথম ঢাকায় তথ্য দেয়া হয়। তিনজনের জন্ম নিবন্ধন সনদ যাচাই করে বেশকিছু অসঙ্গতি খুঁজে পায় দূতাবাস। আর এ জন্ম নিবন্ধন সত্যায়িত করে দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

দূতাবাসের দেয়া তথ্যের বিষয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, অবাক করা বিষয় হলো, প্রতিটি শিশুর বাবার নাম উল্লেখ করা হয়েছে ইউক্রেনের নাগরিক ওস্টাপেনকো ওলেকসির। তিন শিশুর মা-ই মৃত। তাদের সবার বাড়িই নওগাঁ জেলার একডালা ইউনিয়নে। প্রত্যেকের জন্ম ২০০৬ সালের জুন মাসে। সবার জন্মসনদও ইস্যু করা হয়েছে একই সময়ে। জন্মসনদগুলো নোটারি করেছেন একই আইনজীবী। এগুলো একই দিনে প্রথমে আইন মন্ত্রণালয়, পরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সত্যায়িত করে দিয়েছে।

তিনজনের মাকেই মৃত দেখানো হয়েছে কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, অপ্রাপ্তবয়স্ক কাউকে বাবার সঙ্গে ইমিগ্রেশন পার হতে মায়ের অনুমতি প্রয়োজন হয়। আবার মায়ের সঙ্গে ইমিগ্রেশন পার হতে প্রয়োজন হয় বাবার অনুমতির। এ কারণেই তিনজনের মাকেই মৃত দেখানো হয়েছে। এতে অনুমতির আর কোনো প্রয়োজন পড়েনি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এ তিন শিশু পাচারের সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ইউক্রেনের নাগরিক মো. ফয়জুল খক। ইউক্রেনের পাসপোর্টধারী (এফবি ৬৯০৯৭০) মো. ফয়জুল খকের জন্ম সিলেটে বলে বাংলাদেশ দূতাবাসকে জানিয়েছে ইউক্রেনের পুলিশ।

পাসপোর্টে উল্লেখিত তথ্য অনুযায়ী, তার জন্ম ১৯৭৫ সালের ২ এপ্রিল। ইউক্রেনের পাসপোর্ট পেতে তিন শিশুর জন্ম নিবন্ধন সনদ দেশটির সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ে জমা দেয় ফয়জুল খকই। যাচাইয়ের জন্য বাংলাদেশ দূতাবাসে জন্মসনদগুলো পাঠালে তখনই এ শিশুদের পাচারের বিষয়টি সামনে আসে।

ইউক্রেনের আইন অনুযায়ী, দেশটিতে পাসপোর্ট তৈরি করতে সশরীরে উপস্থিতি বাধ্যতামূলক। তবে অপ্রাপ্তবয়স্ক হলে তার আইনানুগ অভিভাবক সেটি তৈরি করতে পারেন। এক্ষেত্রে অপ্রাপ্তবয়স্কের উপস্থিতির প্রয়োজন পড়ে না।

কূটনৈতিক কর্মকর্তারা বলছেন, বিশ্বব্যাপী মানব অঙ্গের কেনা-বেচার অবৈধ বাজার হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ইউক্রেন। এসব মানব অঙ্গের সবচেয়ে বড় ক্রেতা ইসরায়েল। ইউক্রেন থেকে সরবরাহ করা মানব অঙ্গ ইসরায়েল থেকে পরবর্তী সময়ে ইউরোপের বাজারে যায়। বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাওয়া ১২ বছর বয়সী ওই শিশুদের শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ দেয়া সম্ভব নয়। গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের জন্যই তাদের পাচার করা হয়েছে।

গত বছরের মার্চে প্রকাশিত গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির ‘ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম অ্যান্ড দ্য ডেভেলপিং ওয়ার্ল্ড’ শীর্ষক প্রতিবেদনেও ইসরায়েলকে মানব অঙ্গ কেনা-বেচার বড় বাজার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, অবৈধ কিডনির সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী ও গ্রহণকারী ইসরায়েল। অবৈধ কিডনির সবচেয়ে বেশি মূল্যও পাওয়া যায় দেশটিতে। ইসরায়েলে প্রতিটি কিডনির খুচরা মূল্য হয়ে থাকে ১ লাখ থেকে ১ লাখ ৭৫ হাজার ডলার পর্যন্ত।

ইউক্রেনে মানব অঙ্গের জন্য বাংলাদেশ থেকে মানব পাচারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কনসুলার ও ওয়েলফেয়ার উইংয়ের মহাপরিচালক নাহিদা রহমান সুমনা। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, এটি একটি ভয়াবহ অপরাধ। যারা এর সঙ্গে জড়িত, তারা সবাই অপরাধী। যে জন্মসনদগুলো তৈরি করা হয়েছে, তার তদন্ত হওয়া জরুরি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, নওগাঁ জেলার একডালা ইউনিয়নে মো. নয়ন আলী, মো. রায়হান আলী এবং মো. লিখন আলীর নামে জন্ম নিবন্ধন সনদে নোটারি এবং সত্যায়িত করেছে আইন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে মো. নয়ন আলীর (জন্মসনদ নং: ২০০৬৬৪১৮৫২১০২৩৫২১, রেজিস্ট্রেশন নং: ০১) নিবন্ধনের তারিখ ২০১৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর, মো. রায়হান আলীর (জন্মসনদ নং: ২০০৬৬৪১৮৫২১০২২৫০২, রেজিস্ট্রেশন নং: ০৫) নিবন্ধনের তারিখ একই বছরের ২৩ ডিসেম্বর এবং মো. লিখন আলীর (জন্মসনদ নং: ২০০৬৬৪১৮৫২১০০৫৫১৫, রেজিস্ট্রেশন নং: ০২) নিবন্ধনের তারিখ ওই বছরের ২৫ ডিসেম্বর।

জন্মসনদে মো. নয়ন আলীর মায়ের নাম উল্লেখ করা হয়েছে মৃত খাতুন বিবি, মো. রায়হান আলীর মৃত মনোয়ারা বেগম ও মো. লিখন আলীর মৃত কদুজান বিবি। জন্মসনদে একডালা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. রেজাউল ইসলাম ও সচিব মো. আবদুল হাকিমের নাম ব্যবহার করা হয়েছে। ২০১৩ সালে মো. আবদুল হাকিম ইউনিয়ন পরিষদের সচিব থাকলেও মো. রেজাউল ইসলাম চেয়ারম্যান ছিলেন না। ২০১৩ সালে একডালার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন মো. মোসারব হোসেন প্রামাণিক। জন্ম নিবন্ধন সনদে সচিব মো. আবদুল হাকিমের যে স্বাক্ষর ব্যবহার করা হয়েছে, তাও জাল। পাচারের জন্য যেসব জন্মসনদ ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলোর নিবন্ধন নম্বর যাচাই করে দেখা গেছে, কোনো কোনোটির ক্ষেত্রে প্রকৃত ব্যক্তির নাম ব্যবহার করা হলেও অন্য সব তথ্য পরিবর্তন করা হয়েছে। আবার কোনোটির ক্ষেত্রে নামসহ সব তথ্যই পরিবর্তন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ পুলিশের ইমিগ্রেশন শাখার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বণিক বার্তাকে বলেন, মো. ফয়জুল খক ইউক্রেনের পাসপোর্ট ব্যবহার করে কখনো বাংলাদেশে প্রবেশ করেননি। এমনকি বাইরেও যাননি। তার ইউক্রেনের পাসপোর্ট বাংলাদেশের কোনো ইমিগ্রেশনে ব্যবহার হয়নি। কারণ ইউক্রেনের পাসপোর্ট ব্যবহার করে বাংলাদেশে প্রবেশ করলে অন-অ্যারাইভাল ভিসায় ৫১ ডলারের ফি প্রদান করতে হয়। এক্ষেত্রে তিনি বাংলাদেশী পাসপোর্ট ব্যবহার করেছেন।

জাল জন্মসনদ তৈরি ও তা সত্যায়িত করার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্টরা সবাই একে অন্যের ওপর দায় চাপান। জন্মসনদ তিনটি সত্যায়িত করতে কে এসেছিল, জানতে চাইলে পররাষ্ট্র বা আইন মন্ত্রণালয়ের কেউ তা বলতে পারেননি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শুধু আইন মন্ত্রণালয়ের যাচাই ও সই সত্যায়িত করে। মন্ত্রণালয়ে আসা কোনো ধরনের সার্টিফিকেটের কনটেন্ট সত্যায়িত করে না। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সত্যায়িতর জন্য যে সিলটি ব্যবহার করে, সেখানে বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, পাসপোর্টের ক্ষেত্রে আমরা যাচাইয়ের জন্য যেভাবে সিস্টেমে প্রবেশ করতে পারি, অন্য সেবাগুলো দেয়ার ক্ষেত্রে সে সুযোগ নেই। ফলে আমাদের অন্য নথিগুলো আসল কিনা, তা যাচাইয়ের সুযোগ নেই। ফলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সত্যায়িতর ওপরই নির্ভর করতে হয় আমাদের।

যিনি নোটারি করেন মূলত তাকে যাচাইয়ের কাজটি আইন মন্ত্রণালয় করে থাকে বলে জানান মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের এক কর্মকর্তা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, যেসব আইনজীবী নোটারি করেন, তাদের নিবন্ধন নিতে হয় আইন মন্ত্রণালয় থেকে। ফলে তারা যখন সত্যায়িত করেন, তখন তাদের সত্যায়িত অনুলিপির ওপর ভিত্তি করেই মন্ত্রণালয় এগুলোকে সত্যায়িত করে। আইন মন্ত্রণালয়ের সিলেও যিনি নোটারি করেছেন, তাকেই সত্যায়িত করার বিষয়টি উল্লেখ থাকে।

তিনটি জন্মসনদের সত্যতা যাচাই করেছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ আজিমুল হক চৌধুরী। ঢাকার কোর্ট হাউজ স্ট্রিটে তার চেম্বারে গিয়ে জানা গেছে, নোটারি করতে আসা কোনো গ্রাহকেরই কোনো রেজিস্টার রাখা হয় না। নোটারি করতে শুধু মূল কাগজ নিয়ে আসতে হয়। সে নথির সত্যতা যাচাইয়ের কোনো ব্যবস্থা তাদের নেই।

নোটারির রেজিস্টার নিয়ে প্রশ্ন করলে অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ আজিমুল হক চৌধুরী বলেন, নোটারি কে করিয়ে গেছে, সে তথ্য সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই আমাদের। তবে নোটারি করতে আমরা শুধু মূল নথিটি নিয়ে আসতে বলি। আর নোটারির সময় সে নথির সত্যতা যাচাইয়ের কোনো সুযোগ আমাদের নেই। কারণ শুধু জন্মসনদ নিয়েই যদি বলি, এখনো সব জন্মসনদ সরকারি ডাটাবেজে সংরক্ষিত নেই।

প্রতিবেদক বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে বিভিন্ন নোটারি পাবলিক অফিসের দপ্তরে নোটারি করার জন্য প্রয়োজনীয় নথি সম্পর্কে খোঁজ নিতে যান। বেশির ভাগ নোটারি পাবলিক অফিসের দপ্তর থেকে প্রথমে বিভিন্ন কাগজ নিয়ে আসার কথা জানানো হয়। পরক্ষণেই কাগজ না থাকলেও কিছু টাকা বেশি খরচ করে নোটারি করার প্রস্তাব এসেছে। এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী বলেন, নিয়ম হচ্ছে সব কাগজ যাচাই করে দেখা। একই সঙ্গে রেজিস্টার রাখা। এসব নিয়ম কিছু আইনজীবী পরিপালন করলেও বেশির ভাগ আইনজীবীই এ ধরনের ঝামেলায় যান না। ফলে হরহামেশাই ভুয়া নথিতে নোটারির সিল পড়ে।

  • ** প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন নওগাঁ প্রতিনিধি এবাদুল হক।
  • কার্টসিঃ বনিক বার্তা / সেপ্টেম্বর ৩০,২০১৮ 

Finalising design of new oil refinery in slow lane

M Azizur Rahman

The government's plan to build a new crude oil refinery is facing a setback as its design could not be finalised over the past three years. The project has remained in the slow lane owing to inadequate funding, bureaucratic bottlenecks and less priority, a senior official of the Ministry of Power, Energy and Mineral Resources told the FE.

French firm Technip had signed a memorandum of understanding (MOU) with state-run Bangladesh Petroleum Corporation (BPC) on November 11, 2015 to build the refinery aiming to treble the country's crude oil refining capacity to 4.5 million tonnes per year from existing 1.5 million tonnes per year, he said.

Technip subsequently sent technical and financial offers to the BPC on December 20, 2015 to implement the project.

Technip initially had offered to arrange US$ 600 million French credit for the project and pledged to help collect the remaining amount to implement the project from other commercial sources, a senior BPC official said.

The estimated project cost of the refinery is Tk 89.49 billion (US$1.15 billion).

The project faced an initial setback in March 2016 when Technip backed out of its initial plan to fund the project.

The French company then intended to get the job as an engineering, procurement and construction (EPC) contractor through a negotiation with the government bypassing the tender process, he added.

It was only the lack of funding, which delayed installation of a new refinery in over a decade, said the official.

To expedite the project work, the BPC on April 19, 2016 assigned Indian consulting firm Engineers India Limited (EIL) as the project management consultant (PMC) to implement the project.

The BPC would have to pay around Tk 1.61 billion to the EIL against the PMC fees, which include US$ 16.54 million plus Tk 82.28 million inclusive of local taxes, within three years.

The corporation on January 18, 2017 assigned Technip to carry out the front end engineering and design (FEED) for the proposed refinery at a cost worth Tk 2.57 billion (US$ 32.10 million), the BPC official said.

But the state-run national oil corporation had not arranged any financier yet to implement the project, he lamented.

As per the contract, Technip submitted a draft of the final FEED over the refinery project in March, 2018.

The BPC along with Indian EIL, has been reviewing the FEED before its finalisation, said the BPC official.

Once implemented, the new refinery could help the country save $220 million every year, BPC officials said.

Currently, Bangladesh imports around 7.50 million tonnes of crude and refined petroleum products combined every year to meet the local demand.

BPC arranged land for the refinery through purchasing from the Ministry of Industries for Taka 2.30 billion.

Officials said the refinery could enable the country to process any kind of crude oil and it might put Bangladesh on the path to becoming a refined petroleum products-exporting country.

Nepal has already shown interest to import refined petroleum products from Bangladesh and agreed to ink an MoU in this regard, he said. The surplus finished petroleum products can be exported to Sri Lanka, Bhutan, Myanmar and the north eastern parts of India as well, the officials said.

A consortium of three French companies led by Technip had installed the first unit of the ERL, which is also the country's sole refinery, having the crude oil refinery capacity of 1.5 million tonnes per year in the port city of Chittagong.

The first unit started commercial operations in 1968 with 30 years of economic life.

The first unit is still in operation having a de-rated capacity of around 1.4 million tonnes a year.

  • Courtesy: The Financial Express /Sep 30, 2018

সম্পাদক পরিষদের ব্যাখ্যা — কেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিরোধিতা করছি

জাতীয় সংসদে সদ্য পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে নিচের মৌলিক ত্রুটিগুলো রয়েছে 


১. ডিজিটাল যন্ত্রের মাধ্যমে অপরাধ সংঘটন প্রতিহত করা এবং ডিজিটাল অঙ্গনে নিরাপত্তা বিধানের লক্ষ্যে একটি আইন প্রণয়নের চেষ্টা করতে গিয়ে এমন একটি আইন করা হয়েছে, যা সংবাদমাধ্যমের কাজের ওপর নজরদারি, বিষয়বস্তুর ওপর নিয়ন্ত্রণ এবং আমাদের সংবিধানপ্রদত্ত সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং নাগরিকদের বাক্‌ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণের সুযোগ সৃষ্টি করবে।

২. এই আইন পুলিশকে বাসাবাড়িতে প্রবেশ, অফিসে তল্লাশি, লোকজনের দেহ তল্লাশি এবং কম্পিউটার, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, সার্ভার ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম-সংক্রান্ত সবকিছু জব্দ করার ক্ষেত্রে সীমাহীন ক্ষমতা দিয়েছে। পুলিশ এ আইনে দেওয়া ক্ষমতাবলে পরোয়ানা ছাড়াই সন্দেহবশত যেকোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে পুলিশের কোনো কর্তৃপক্ষের কোনো ধরনের অনুমোদন নেওয়ার প্রয়োজন নেই।

৩. এই আইনে অস্পষ্টতা আছে এবং এতে এমন অনেক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, যার ভুল ব্যাখ্যা হতে পারে এবং সহজেই সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যেতে পারে।

৪. ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এমন এক আতঙ্ক ও ভীতির পরিবেশ তৈরি করবে, যেখানে সাংবাদিকতা, বিশেষত অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়বে।

৫. এই আইন সংবাদমাধ্যমের কর্মী ছাড়াও কম্পিউটার ও কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ইত্যাদি ব্যবহারকারী সব ব্যক্তির মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করবে।

২০০৬ সালে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইন (আইসিটি অ্যাক্ট) প্রণীত হওয়ার সময় সরকার বলেছিল, সাংবাদিকদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই; কারণ, আইনটি করা হয়েছে সাইবার অপরাধ ঠেকানো ও সাইবার অপরাধীদের শাস্তি দেওয়ার লক্ষ্যে। বাস্তবতা হলো, সাংবাদিকসহ অন্য যাঁরা স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের সাংবিধানিক অধিকার চর্চা করতে গেছেন, তাঁরা তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় কারাভোগ করেছেন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। এখনো একইভাবে বলা হচ্ছে যে সাংবাদিকদের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ ঘটেনি, কিন্তু আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে যে এই আইনেও সাংবাদিকেরা আবার একই ধরনের হয়রানির মুখোমুখি হবেন। আইনটির প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, এ আইনের উদ্দেশ্য ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং ডিজিটাল মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধ শনাক্তকরণ, প্রতিরোধ, দমন, বিচার’ করা। তাই এ আইন নিয়ে আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু সমস্যা হলো, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তার সংজ্ঞায়িত পরিধি অনেক দূর ছাড়িয়ে গিয়ে সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকতার পরিধির মধ্যে ঢুকে পড়েছে। এই আইন স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রকৃতির পরিপন্থী এবং তা অনুশীলনের প্রতিকূল, যে সাংবাদিকতা জনগণের জানার অধিকার সুরক্ষা করে এবং ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতি জনসমক্ষে উন্মোচন করে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কাজ ডিজিটাল প্রযুক্তির জগৎ নিয়ে, যে জগৎ অবিরাম বিকশিত হয়ে চলেছে। ডিজিটাল প্রযুক্তি জীবনের সর্বস্তরে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে পড়েছে। জাতীয় নিরাপত্তা থেকে খাদ্য উৎপাদন, স্বাস্থ্যসেবা, আর্থিক লেনদেন পর্যন্ত সর্বত্রই ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রবেশ ঘটেছে। সংবাদমাধ্যমও এর বাইরে নেই।

অন্য ক্ষেত্রগুলোতে প্রয়োজন ‘নিয়ন্ত্রণ’, কিন্তু সংবাদমাধ্যমের প্রয়োজন ‘স্বাধীনতা’। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কেন্দ্রীয় বিষয় কেবলই ‘নিয়ন্ত্রণ’, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রয়োজনীয়তা এতে পুরোপুরি উপেক্ষা করা হয়েছে। এটা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অন্যতম মৌলিক ত্রুটি, এর ফলে এ আইন সংবাদমাধ্যমের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের একটা ভীতিকর দিক হলো, এতে পুলিশকে এমন অনিয়ন্ত্রিত ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, যার বলে একজন সাংবাদিক ভবিষ্যতে তথাকথিত কোনো অপরাধ করতে পারেন কেবল এই সন্দেহে পুলিশ তাঁকে প্রেপ্তার করতে পারবে। পুলিশকে পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এগুলো জামিন অযোগ্য। এর ফলে সাংবাদিকতা বাস্তবত পুলিশের নিয়ন্ত্রণাধীন হয়ে পড়বে।

উদ্বেগের আরও একটি বিষয় হলো, এ আইনের অপরাধ ও শাস্তি–সংক্রান্ত প্রায় ২০টি ধারার মধ্যে ১৪টি জামিন অযোগ্য, ৫টি জামিনযোগ্য এবং একটি সমঝোতাসাপেক্ষ। ন্যূনতম শাস্তির মেয়াদ করা হয়েছে ১ বছর কারাদণ্ড, সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে শাস্তির মেয়াদ ৪ থেকে ৭ বছর কারাদণ্ড। এর ফলে অনিবার্যভাবে একটা ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি হবে, যেখানে সাংবাদিকতার স্বাভাবিক অনুশীলন অসম্ভব না হলেও হয়ে উঠবে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

আইনটি তার উদ্দেশ্যের সীমানা অনেক দূর পর্যন্ত কেবল লঙ্ঘনই করেনি, এটি অস্পষ্টতায়ও পরিপূর্ণ। অস্পষ্টতার কারণে এ আইন অপব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। দেশ–বিদেশের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, যেসব আইনের শব্দচয়ন সুস্পষ্ট, যেখানে অপরাধগুলো সুনির্দিষ্ট এবং অপরাধের সঙ্গে শাস্তির মাত্রা সামঞ্জস্যপূর্ণ, সেসবের মাধ্যমে ‘আইনের শাসন’ ভালোভাবে অর্জিত হয়। আইনের ভাষাগত অস্পষ্টতা থেকে অপরাধ সম্পর্কে ভুল ব্যাখ্যা এবং আইনের অপব্যবহারের সুযোগ ঘটে থাকে। যখন আইনের অপব্যবহার ঘটে, তখন স্বাধীনতা খর্বিত হয়।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আরেক ত্রুটি হলো ‘অপরাধীদের’ শাস্তির মাত্রা নির্ধারণের বিষয়টি। এ প্রসঙ্গে একই সময়ে পাস করা সড়ক নিরাপত্তা আইনের কথা বলা যায়। এ আইনে দুর্ঘটনায় মানুষ মেরে ফেলার সর্বোচ্চ শাস্তি নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ বছরের কারাদণ্ড। আর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বিধান করা হয়েছে, ঔপনিবেশিক আমলের অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট (১৯২৩) লঙ্ঘনের জন্য সাংবাদিকদের যাবজ্জীবন পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। কোনো সাংবাদিক তাঁর মোবাইল ফোনে অপ্রকাশিত কোনো সরকারি নথির ছবি তুললে অপরাধী বলে গণ্য হবেন, অথচ এটি আজকাল খুবই সাধারণ একটি চর্চা।


বিশদ ব্যাখ্যা

সম্পাদক পরিষদ মনে করে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মুক্ত সংবাদমাধ্যমের পরিপন্থী, বাক্স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিরোধী এবং গণতন্ত্রের সঙ্গে বিরোধাত্মক। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যেসব ধারাকে আমরা সবচেয়ে বিপজ্জনক বলে মনে করছি, নিচে তা হুবহু তুলে ধরলাম। একই সঙ্গে সেসব নিয়ে আমাদের অবস্থানের বিশদ বিশ্লেষণ তুলে ধরলাম।

ধারা ৮

৮। কতিপয় তথ্য-উপাত্ত অপসারণ বা ব্লক করিবার ক্ষমতা।—
(১) মহাপরিচালকের নিজ অধিক্ষেত্রভুক্ত কোনো বিষয়ে ডিজিটাল মাধ্যমে প্রকাশিত বা প্রচারিত কোনো তথ্য-উপাত্ত ডিজিটাল নিরাপত্তার ক্ষেত্রে হুমকি সৃষ্টি করিলে তিনি উক্ত তথ্য-উপাত্ত অপসারণ বা ক্ষেত্রমত, ব্লক করিবার জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে, অতঃপর বিটিআরসি বলিয়া উল্লিখিত, অনুরোধ করিতে পারিবেন।

(২) যদি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিকট প্রতীয়মান হয় যে, ডিজিটাল মাধ্যমে প্রকাশিত বা প্রচারিত কোনো তথ্য-উপাত্ত দেশের বা উহার কোনো অংশের সংহতি, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, ধর্মীয় মূল্যবোধ বা জনশৃঙ্খলা ক্ষুণ্ন করে, বা জাতিগত বিদ্বেষ ও ঘৃণার সঞ্চার করে, তাহা হইলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী উক্ত তথ্য-উপাত্ত অপসারণ বা ব্লক করিবার জন্য মহাপরিচালকের মাধ্যমে, বিটিআরসিকে অনুরোধ করিতে পারিবেন।

(৩) উপ-ধারা (১) ও (২)–এর অধীন কোনো অনুরোধ প্রাপ্ত হইলে বিটিআরসি, উক্ত বিষয়াদি সরকারকে অবহিতক্রমে, তাৎক্ষণিকভাবে উক্ত তথ্য-উপাত্ত অপসারণ বা ক্ষেত্রমতো, ব্লক করিবে।

সম্পাদক পরিষদের মন্তব্য

এখানে দুটি উদ্বেগের বিষয় রয়েছে। একটি মহাপরিচালকের (ডিজি) ক্ষমতা, অন্যটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর ক্ষমতা। প্রকাশের বিষয়বস্তু ব্লক করার ক্ষমতা মুদ্রিত বা অনলাইন যেকোনো প্রকাশনার অন্তরাত্মাকে আঘাত করবে। কোনো সংবাদমাধ্যমের যেকোনো প্রতিবেদন ব্লক করা যাবে, যেকোনো আলোকচিত্র জব্দ করা যাবে—এভাবে সংবাদমাধ্যমটির স্বাভাবিক কাজ বিঘ্নিত হবে।

প্রকাশিত বিষয়বস্তু অপসারণ বা ব্লক করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় যৌক্তিক্তা  আইনটিতে এত অস্পষ্ট যে তা নানা ব্যক্তি নানাভাবে ব্যাখ্যা করতে পারেন। এতে আইনটির অপব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। দৃষ্টান্তস্বরূপ, কোনো প্রকল্পে দুর্নীতির খবর প্রকাশ করার ফলে যদি সেটার অর্থায়নকারী বা কোনো বিনিয়োগকারী অর্থায়ন বন্ধ করে দেন, তাহলে এ আইনের অধীনে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক ‘অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বিঘ্ন সৃষ্টি করা’র দায়ে অভিযুক্ত হতে পারেন এবং তা ওই খবর ব্লক বা অপসারণ পর্যন্ত গড়াতে পারে।


ধারা ২১

২১। মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা, জাতীয় সংগীত বা জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধে কোনো প্রকার প্রোপাগান্ডা বা প্রচারণার দণ্ড।—
(১) যদি কোনো ব্যক্তি ডিজিটাল মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা, জাতীয় সংগীত বা জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধে কোনো প্রকার প্রোপাগান্ডা বা প্রচারণা চালান বা উহাতে মদদ প্রদান করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ।


সম্পাদক পরিষদের মন্তব্য

আমরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মর্যাদা ও সঠিক ইতিহাস সংরক্ষণের প্রতি পরিপূর্ণভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ এবং অতীতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির অপচেষ্টার অভিজ্ঞতা থেকে আমরা উপলব্ধি করি যে এ বিষয়ে কিছু করা প্রয়োজন। তবে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ খুবই অস্পষ্ট একটি শব্দবন্ধ। কী কী করলে তা এই ধারার অধীনে ‘অপরাধ’ বলে গণ্য হবে, তা সুস্পষ্টভাবে নির্দিষ্ট না করায় এবং ‘অপরাধগুলো’কে আরও সংজ্ঞায়িত না করায় এই আইনের গুরুতর অপব্যবহার ও সাংবাদিকদের হয়রানির ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, এর শাস্তি হিসেবে রাখা হয়েছে যাবজ্জীবন পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং/অথবা ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডের বিধান।

আমরা আবারও বলতে চাই, আমরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মহান উত্তরাধিকার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সংক্ষরণ করতে চাই। তবে আইন প্রণয়নের সময় আমাদের তা খুব স্বচ্ছ ও সুনির্দিষ্ট করতে হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এখন যে অবস্থায় আছে, তা শুধু সাংবাদিকদের জন্যই ভোগান্তিমূলক হবে না, ইতিহাসবিদ, গবেষক, এমনকি কথাসাহিত্যিকদের মতো সৃজনশীল লেখকদেরও দুর্ভোগের কারণ হতে পারে। এমনকি ভুল ব্যাখ্যা এবং সম্ভাব্য শাস্তির ভয়ে অনেকে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে বেশি লেখালেখিও করতে চাইবেন না।

ধারা ২৫

২৫। আক্রমণাত্মক, মিথ্যা বা ভীতি প্রদর্শক, তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ, প্রকাশ ইত্যাদি।—(১) যদি কোনো ব্যক্তি ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ডিজিটাল মাধ্যমে।—

(ক) ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে, এমন কোনো তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ করেন, যাহা আক্রমণাত্মক বা ভীতি প্রদর্শক অথবা মিথ্যা বলিয়া জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও কোনো ব্যক্তিকে বিরক্ত, অপমান, অপদস্থ বা হেয় প্রতিপন্ন করিবার অভিযোগে কোনো তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ, প্রকাশ বা প্রচার করেন, বা

(খ) রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি বা সুনাম ক্ষুণ্ন করিবার, বা বিভ্রান্তি ছড়াইবার, বা তদুদ্দেশ্যে অপপ্রচার বা মিথ্যা বলিয়া জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও, কোনো তথ্য সম্পূর্ণ বা আংশিক বিকৃত আকারে প্রকাশ, বা প্রচার করেন বা করিতে সহায়তা করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ।


সম্পাদক পরিষদের মন্তব্য

এই ধারা সংবাদমাধ্যমে সব ধরনের অনুসন্ধানী রিপোর্টিংকে সরাসরি বিরূপভাবে প্রভাবিত করবে। ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম–সংক্রান্ত ঘটনা নিয়েই এ ধরনের প্রতিবেদন করা হয়ে থাকে। দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা সাংবাদিক ও সংবাদপ্রতিষ্ঠানকে ভয় দেখাতে এই আইন ব্যবহার করতে পারেন। তাঁরা এই অজুহাত দেখিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করতে পারেন যে ওই প্রতিবেদনে তাঁদের আক্রমণ করা বা হুমকি দেওয়া হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এ ধরনের সব প্রতিবেদনই উল্লিখিত এক বা একাধিক বিধানের আওতায় পড়ে বলে মন্তব্য করা হতে পারে এবং সংবাদমাধ্যমকে হয়রানির কাজে ব্যবহার করা হতে পারে। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি উন্মোচন করে, এমন যেকোনো অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের জন্য ‘বিরক্তিকর’, ‘বিব্রতকর’ বা ‘অপমানজনক’ হতে পারে। এই বিধান কোনো দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি সম্পর্কে নেতিবাচক প্রতিবেদন প্রকাশ অসম্ভব করে তুলবে।

এটি সংবাদপত্রকে জনসংযোগ প্রতিষ্ঠানে পর্যবসিত করবে। এমনকি সাংবাদিকতার সাধারণ অনুসন্ধানও অসম্ভব হয়ে পড়বে।

দ্বিতীয় ধারায় ‘বিভ্রান্তি ছড়ানো’র কথা বলা হয়েছে। বিভ্রান্তি ছড়ানো বলতে কী বোঝানো হয়েছে, তা সুনির্দিষ্ট করা না হলে এই ধারা সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের হয়রানি করার হাতিয়ারে পরিণত হবে। একজনের কাছে যা বিভ্রান্তিমূলক, আরেকজনের কাছে তা না–ও হতে পারে। সংবাদমাধ্যমকে ভয় দেখানোর জন্য এটি নিশ্চিতভাবেই নতুন একটি পথ তৈরি করবে।

রাষ্ট্রের ‘ভাবমূর্তি ও সুনাম’ ক্ষুণ্ন করা বলতে কী বোঝায়? সম্প্রতি আমরা ব্যাংক খাতে বিভিন্ন বিবেকহীন ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর দুর্নীতির খবর পরিবেশন করেছি। সেসব প্রতিবেদনের মাধ্যমে আমরা জনগণকে জানিয়েছি যে ব্যাংক খাত গুরুতর সংকটে পড়েছে। এতে কি ‘ভাবমূর্তি’ ক্ষুণ্ন হয়েছে? আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে দুর্নীতি নিয়ে আমরা সংবাদ পরিবেশন করেছি। আমরা ‘হেফাজতে মৃত্যু’, ‘গুম’ ও ‘বিচারবহির্ভূত হত্যা’ নিয়ে সংবাদ পরিবেশন করেছি। কেউ যদি ব্যাখ্যা করেন যে এসব প্রতিবেদন রাষ্ট্রের ‘ভাবমূর্তি’ ক্ষুণ্ন করেছে, তাহলে এই আইন এ ধরনের সংবাদ পরিবেশন করায় সাংবাদিক ও সংবাদপত্রগুলোকে শাস্তি দেওয়ার বৈধতা দেয়। কারণ, প্রায় সব সংবাদপত্রেরই নিজস্ব ওয়েবসাইট ও অনলাইন পোর্টাল রয়েছে।

ধারা ২৮

২৮। ওয়েবসাইট বা কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে ধর্মীয় মূল্যবোধ বা অনুভূতিতে আঘাত করে এমন কোনো তথ্য প্রকাশ, সম্প্রচার, ইত্যাদি।—
(১) যদি কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে ধর্মীয় মূল্যবোধ বা অনুভূতিতে আঘাত করিবার বা উসকানি প্রদানের অভিপ্রায়ে ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা প্রচার করেন বা করান, যাহা ধর্মীয় অনুভূতি বা ধর্মীয় মূল্যবোধের উপর আঘাত করে, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ।


সম্পাদক পরিষদের মন্তব্য

‘ধর্মীয় মূল্যবোধ’ একটি অস্পষ্ট পরিভাষা। একজন সাংবাদিক কীভাবে জানবেন কখন ও কীভাবে ধর্মীয় মূল্যবোধ আহত হয়েছে? এই পরিভাষা বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা যায় এবং কোনো সাংবাদিকই এ ধরনের বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরি করতে স্বস্তিবোধ করবেন না। এটি সমাজের বড় একটি অংশে সাংবাদিকতার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নিরীক্ষণ বাধাগ্রস্ত করবে। বহির্বিশ্বে ক্যাথলিক ধর্মযাজকদের যৌন হয়রানির অভিযোগ নিয়ে সাম্প্রতিক প্রতিবেদনগুলো প্রকাশ করা সম্ভব হতো না, যদি ওই সব দেশে ধর্মীয় অনুভূতিতে ‘আঘাত’ করে, এমন সংবাদ প্রকাশ রুখতে আইন থাকত। বেআইনি ফতোয়া ও সম্পত্তিতে নারীর অধিকার নিয়ে আলোচনা করাও ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি আঘাত হিসেবে ব্যাখ্যা করা হতে পারে। এই ধারা সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের হয়রানি করতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতে পারে।

ধারা ২৯

২৯। মানহানিকর তথ্য প্রকাশ, প্রচার, ইত্যাদি।—
(১) যদি কোনো ব্যক্তি ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে Penal Code (Act XLV of 1860)-এর section 499-এ বর্ণিত মানহানিকর তথ্য প্রকাশ বা প্রচার করেন, তজ্জন্য তিনি অনধিক ৩ (তিন) বৎসর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

সম্পাদক পরিষদের মন্তব্য

মানহানির অভিযোগ বিচার করার জন্য ইতিমধ্যেই একটি আইন থাকায় ডিজিটাল মাধ্যমে মানহানি নিয়ে আলাদা কোনো আইন নিষ্প্রয়োজন। উপরন্তু একই অপরাধে পত্রিকার চেয়ে ডিজিটাল সংবাদমাধ্যমে অতিরিক্ত শাস্তির যুক্তি থাকতে পারে না।

ধারা ৩১

৩১। আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানো, ইত্যাদির অপরাধ ও দণ্ড।—
(১) যদি কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইট বা ডিজিটাল বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন বা করান, যাহা সংশ্লিষ্ট শ্রেণি বা সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা বা বিদ্বেষ সৃষ্টি করে বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে বা অস্থিরতা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে অথবা আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটায় বা ঘটিবার উপক্রম হয়, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ।

সম্পাদক পরিষদের মন্তব্য

দলিত বা নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর প্রতি বৈষম্য এবং সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর ওপর কোনো শোষণ সম্পর্কে পরিবেশিত একটি সংবাদ–প্রতিবেদনের এমন ব্যাখ্যা দেওয়া হতে পারে যে সেটি বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের দুঃখকষ্ট তুলে ধরে লেখা প্রতিবেদন এভাবে ব্যাখ্যা করা হতে পারে যে তাতে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি করবে। একইভাবে সম্ভাব্য শ্রমিক অসন্তোষ, আসন্ন হরতাল বা বিক্ষোভ সমাবেশ নিয়ে পরিবেশিত সংবাদ ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিকারী’ প্রতিবেদন হিসেবে গণ্য হতে পারে এবং এই আইনের আওতায় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে। এমন খবর পরিবেশিত হতে পারে যে কোনো বিক্ষোভের সময় এক ব্যক্তি মারা গেছেন, পরে জানা যেতে পারে যে খবরটি সত্য নয়। তাহলে কি সংবাদমাধ্যম ‘গুজব ছড়ানো’র অপরাধ করবে? সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে এ রকম ভুল হয়, কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে ভুলের সংশোধনীও প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, এমনকি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তির সংখ্যায় হেরফের হয়। সরকারি পরিসংখ্যানের সঙ্গে সব সময়ই বেসরকারিভাবে সংগৃহীত তথ্যের অমিল থাকে। এ ধরনের ঘটনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী ‘গুজব ছড়ানোর’ অভিযোগে সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে মামলা করা যাবে। কখনো কখনো আমরা কিছু পূর্বাভাসমূলক খবরও পরিবেশন করতে পারি, যা পরে ঠিক সেভাবেই না–ও ঘটতে পারে। এ ধরনের প্রতিবেদনও ‘গুজব ছড়ানো’ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এভাবে দেখতে পাচ্ছি, এই ধারা স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য গুরুতর ঝুঁকির সৃষ্টি করবে।

ধারা ৩২

৩২। সরকারি গোপনীয়তা ভঙ্গের অপরাধ ও দণ্ড।—
(১) যদি কোনো ব্যক্তি Official Secrets Act, 1923 (Act No. XIX of 1923)-এর আওতাভুক্ত কোনো অপরাধ কম্পিউটার, ডিজিটাল ডিভাইস, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, ডিজিটাল নেটওয়ার্ক বা অন্য কোনো ডিজিটাল মাধ্যমে সংঘটন করেন বা করিতে সহায়তা করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ১৪ (চৌদ্দ) বৎসর কারাদণ্ড, বা অনধিক ২৫ (পঁচিশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

(২) যদি কোনো ব্যক্তি উপধারা (১)–এ উল্লেখিত অপরাধ দ্বিতীয়বার বা পুনঃ পুনঃ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে বা অনধিক ১ (এক) কোটি টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

সম্পাদক পরিষদের মন্তব্য

অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ঔপনিবেশিক আমলের ব্যাপক নিয়ন্ত্রণমূলক আইন, যা ব্রিটিশ প্রশাসনকে সব ধরনের জবাবদিহি থেকে রক্ষা করার জন্য প্রণয়ন করা হয়েছিল। আমরা মর্মাহত হয়ে সেটিকে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে টেনে আনতে দেখলাম। সরকার যা প্রকাশ করে না, তা-ই ‘সরকারি গোপন তথ্য’ বলে বিবেচিত হতে পারে। একটি উদাহরণ দিই। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আমরা ব্যাংক খাতের অনিয়ম সম্পর্কে কয়েক ডজন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছি। বলা হতে পারে, এ ধরনের সব প্রতিবেদনই অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট লঙ্ঘন করেছে। প্রকাশ করা হয়নি, এমন সব সরকারি প্রতিবেদনই অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের আওতায় পড়ে, এমনকি পরিবেশদূষণ বা শিশুপুষ্টি নিয়ে সরকারি প্রতিবেদন ইত্যাদিও। এ ধরনের কোনো তথ্য ছাড়া কি অর্থপূর্ণ সাংবাদিকতা সম্ভব? আর যেখানে তথ্য অধিকার আইনের বলে জনগণের ‘জানার অধিকার’ রয়েছে—বিশেষত যখন এ ধরনের সব প্রতিবেদন তৈরি করা হয় জনগণের অর্থ ব্যয় করে—সেখানে এসব প্রতিবেদন সাংবাদিকতার কাজে ব্যবহার করা কেন ‘অপরাধ’ বলে গণ্য হবে?

বাংলাদেশ ব্যাংক বা সরকারি দপ্তরের অপ্রকাশিত প্রতিবেদন ছাড়া ফারমার্স বা বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বা ব্যাপক অনিয়ম নিয়ে কি আমরা কোনো প্রতিবেদন তৈরি করতে পারতাম? আমাদের প্রতিবেদকের হরহামেশাই মোবাইল ফোনে এ ধরনের দলিলের ছবি তুলতে হয়। কাজেই তাদের সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া যেতে পারে, তাই তো?

এ আইনের প্রবক্তাদের কাছে আমাদের উদাহরণগুলো ‘হাস্যকর’ ঠেকতে পারে। কিন্তু তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা প্রয়োগের বাস্তব নজির সাংবাদিকদের কোনো স্বস্তির কারণ জোগায়নি।

ধারা ৪৩

৪৩। পরোয়ানা ব্যতিরেকে তল্লাশি, জব্দ ও গ্রেপ্তার।—
(১) যদি কোনো পুলিশ অফিসারের এইরূপ বিশ্বাস করিবার কারণ থাকে যে কোনো স্থানে এই আইনের অধীন কোনো অপরাধ সংঘটিত হইয়াছে বা হইতেছে বা হইবার সম্ভাবনা রহিয়াছে বা সাক্ষ্য প্রমাণাদি হারানো, নষ্ট হওয়া, মুছিয়া ফেলা, পরিবর্তন বা অন্য কোনো উপায়ে দুষ্প্রাপ্য হইবার বা করিবার সম্ভাবনা রহিয়াছে, তাহা হইলে তিনি অনুরূপ বিশ্বাসের কারণ লিপিবদ্ধ করিয়া মহাপরিচালকের অনুমোদনক্রমে নিম্নবর্ণিত কার্য সম্পাদন করিতে পারিবেন,—

(ক) উক্ত স্থানে প্রবেশ করিয়া তল্লাশি এবং প্রবেশ বাধাপ্রাপ্ত হইলে ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ;
(খ) উক্ত স্থানে তল্লাশিকালে প্রাপ্ত অপরাধ সংঘটনে ব্যবহার্য কম্পিউটার, কম্পিউটার সিস্টেম, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, তথ্য-উপাত্ত বা অন্যান্য সরঞ্জামাদি এবং অপরাধ প্রমাণে সহায়ক কোনো দলিল জব্দকরণ;
(গ) উক্ত স্থানে উপস্থাপিত যে কোনো ব্যক্তির দেহ তল্লাশি;
(ঘ) উক্ত স্থানে উপস্থিত কোনো ব্যক্তি এই আইনের অধীন কোনো অপরাধ করিয়াছেন বা করিতেছেন বলিয়া সন্দেহ হইলে উক্ত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার।

সম্পাদক পরিষদের মন্তব্য

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সবচেয়ে বিপজ্জনক বিধান এটি।
এতে পুলিশকে যেকোনো জায়গায় প্রবেশ, যেকোনো কম্পিউটার ব্যবস্থায় তল্লাশি চালানো, যেকোনো কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ও সার্ভার জব্দ করা, যেকোনো ব্যক্তির দেহ তল্লাশি এবং শুধু সন্দেহবশত যে কাউকে গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
প্রথমত, পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেপ্তারের হুমকি স্বাভাবিকভাবেই সাংবাদিকদের দায়িত্ব পালনে বাধার সৃষ্টি করবে। পুলিশ যখন স্রেফ সন্দেহবশত ও পরোয়ানা ছাড়াই সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা পাবে, তখন এই আইনের ছায়াতলে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার কবর রচিত হবে। আইনটির ২০টি শাস্তির বিধানের মধ্যে যখন ১৪টিই জামিন অযোগ্য, তখন গ্রেপ্তারের ঝুঁকি প্রত্যেক সাংবাদিকের মাথার ওপর ডেমোক্লেসের খড়্গের মতো সব সময় ঝুলতে থাকবে, মানসিক চাপ সৃষ্টি করে রাখবে। এতে প্রকৃত সাংবাদিকতার সব পন্থা বাধাগ্রস্ত হবে। আমাদের সংবাদমাধ্যম নিছকই জনসংযোগ কর্মকাণ্ড ও প্রচারণা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে।
এমনকি সাংবাদিকদের ওপর এ আইনের প্রয়োগ না হলেও (আইন থাকলে প্রয়োগ হবেই না বা কেন?) ভীতির পরিবেশে তাঁরা পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা অনুভব করবেন। গ্রেপ্তার–আতঙ্ক তাঁদের ‘মানসিক পরিবেশের’ এক প্রাত্যহিক অংশ হয়ে উঠবে। প্রতিবেদন তৈরির কাজে তাঁরা নিয়মিত যেসব সংগত ঝুঁকি নিয়ে থাকেন, এই ভীতির কারণে সেসব ঝুঁকি নিতে তাঁরা আর সাহস পাবেন না। এই বিধানের ফলে সাংবাদিকদের মধ্যে যে মানসিক চাপ সৃষ্টি হবে, তা খাটো করে দেখা ঠিক নয়। খুব সহজেই ধরে নেওয়া যায় যে ক্ষমতাসীন ব্যক্তিরা এ আইনের অপব্যবহার করবেন। ধনী ও ক্ষমতাসীনেরা গোপন রাখতে চান, এমন বিষয়ে যেকোনো সংবাদ প্রতিবেদনের জন্য সংশ্লিষ্ট সাংবাদিককে হুমকি দিতে, এমনকি গ্রেপ্তার করতে তাঁরা আইন প্রয়োগকারীদের প্ররোচিত বা ‘হাত করতে’ পারেন।

এ আইনের আরও বিপজ্জনক দিক হলো, সব সংবাদপত্র ও টেলিভিশন স্টেশনই এখন ডিজিটাল ব্যবস্থায় কাজ করে বলে কম্পিউটার, সার্ভারসহ কম্পিউটার নেটওয়ার্ক জব্দ করার ক্ষমতা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে দেওয়ার মাধ্যমে কার্যত তাদের যেকোনো সংবাদপত্র, টিভি স্টেশন বা অনলাইন নিউজ পোর্টালের কাজ বন্ধ দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কোনো সংবাদপ্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার, কম্পিউটার সিস্টেম, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি জব্দ করলে তার কার্যক্রম থেমে যেতে পারে। এভাবে কোনো সংবাদপ্রতিষ্ঠান আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ না করেই আইনের এই ধারায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর হাতে সংবাদপত্রের প্রকাশনা বা কোনো টিভি স্টেশনের কার্যক্রম রুদ্ধ করে দেওয়ার শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।

ধারা ৫৩

৫৩। অপরাধের আমলযোগ্যতা ও জামিনযোগ্যতা।—এই আইনের—
(ক) ধারা ১৭, ১৯, ২১, ২২, ২৩, ২৪, ২৬, ২৭, ২৮, ৩০, ৩১, ৩২, ৩৩ ও ৩৪-এ উল্লেখিত অপরাধসমূহ আমলযোগ্য ও অ-জামিনযোগ্য হইবে; এবং
(খ) ধারা-১৮-এর উপধারা (১) এর দফা (খ) ২০, ২৫, ২৯ ও ৪৮-এর উপধারা (৩) এ উল্লিখিত অপরাধসমূহ অ-আমলযোগ্য ও জামিনযোগ্য হইবে;

সম্পাদক পরিষদের মন্তব্য

এই আইনের প্রায় ২০টি ধারার ১৪টির ক্ষেত্রেই অপরাধ আমলযোগ্য ও জামিন–অযোগ্য। পুলিশকে নিছক সন্দেহের কারণে এবং পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা দেওয়ায় এবং এতগুলো অপরাধের অভিযোগকে আমলযোগ্য ও জামিন অযোগ্য করায় আইনটি সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতি এক বাস্তব হুমকি।

উপসংহার

১. ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নাগরিকদের বাক্ ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা, যা যুক্তিসংগত বাধানিষেধ সাপেক্ষে আমাদের সংবিধানে নিশ্চিত করা হয়েছে, তা সুস্পষ্টভাবে লঙ্ঘন করে;
২. এ আইন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং যেসব মহান আদর্শ ও মুক্তির জন্য আমাদের শহীদেরা জীবন উৎসর্গ করেছেন, সেসব লঙ্ঘন করে;
৩. গণতন্ত্রের মূলনীতি, গণতান্ত্রিক শাসন এবং পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ও ১৯৭১ সালের পরবর্তী সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে যেসব গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য আমাদের জনগণ বারবার লড়াই করেছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সেসবের পরিপন্থী;
৪. ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নৈতিক ও স্বাধীন সাংবাদিকতার সব মূল্যবোধের পরিপন্থী।
৫. এ আইন তথ্য অধিকার আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কেন আমাদের সংবিধান, মৌলিক অধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক নীতির পরিপন্থী, তা আমরা ওপরে বিভিন্ন ধারা উল্লেখ করে বিশদভাবে বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা করেছি।
এসব কারণে সম্পাদক পরিষদ এই আইন প্রত্যাখ্যান করতে বাধ্য হয়েছে।
এই আইন আমাদের সংবিধানের ৩৯(১) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং ৩৯(২) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ‘যুক্তিসংগত বাধানিষেধ–সাপেক্ষে’ (ক) প্রত্যেক নাগরিকের বাক্‌ ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার, এবং (খ) সংবাদ ক্ষেত্রের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা খর্ব করে।

পরিশেষে আমরা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কিছু কথা উদ্ধৃত করতে চাই। ১৯৫৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি গণপরিষদে সংবিধান প্রণয়ন–সম্পর্কিত এক বিতর্কে তিনি স্পিকারের উদ্দেশে বলেছিলেন:

‘আপনারা বলে থাকেন যে বাক্‌স্বাধীনতা মানেই সংবাদপত্রের স্বাধীনতা।
‘আপনি কি জানেন যে পূর্ববঙ্গে সম্পাদকদের ডেকে বলা হয়, আপনারা এটা ছাপাতে পারবেন না, আপনারা ওটা ছাপাতে পারবেন না। স্যার, তাঁরা সত্য কথা পর্যন্ত লিখে ছাপাতে পারেন না এবং আমি সেটা প্রমাণ করে দিতে পারি।...নির্দেশটা যায় সচিবালয় থেকে...। সরকারের তরফ থেকে একজন ইন্সপেক্টর গিয়ে নির্দেশনা দেন যে, আপনি একটা নির্দিষ্ট বিষয়ে লিখতে পারবেন না।...

‘এটা পরিষ্কারভাবে লিপিবদ্ধ থাকতে হবে যে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা থাকবে, তাঁরা তাঁদের ইচ্ছামতো বক্তব্য লিপিবদ্ধ করতে পারবেন এবং জনমত গড়ে তুলতে পারবেন।’

প্রাপক মার্শা বার্নিকাটের মাধ্যমে ডোনাল্ড ট্রাম্প

— শফিক রেহমান

বুধবার ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮-তে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গিয়েছিলেন জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন বা জেনারেল এসেম্বলিতে। প্রেসিডেন্ট হবার পর এই নিয়ে তিনি দ্বিতীয়বার গেলেন বিশ্বায়ন বা গ্লোবালাইজেশনের সর্বোচ্চ স্থানে। কিন্তু সেখানে নির্ধারিত সময়ের আধা ঘণ্টা পরে উপস্থিত হয়ে ট্রাম্প তার ভাষণে বিশ্বায়নের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করেন এবং বিশ্বায়নের বদলে স্বদেশকে অগ্রাধিকার দেয়ার পক্ষে বলেন। তিনি জানান, “বিশ্বকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য দেয় আমেরিকা কিন্তু খুব কম দেশই আমেরিকাকে প্রতিদান দেয়। আমরা ভবিষ্যতে শুধু সেই সব দেশকেই সাহায্য দেব যারা আমাদের শ্রদ্ধা করে এবং যারা আমাদের বন্ধু।”

এরপর ট্রাম্প আমেরিকার বন্ধু ও শত্রু দেশের একটি লিস্ট দেন। বন্ধু রূপে সবচেয়ে প্রথমে তিনি উত্তর কোরিয়ার সর্বময় স্বৈরাচারী নেতা কিম জং উন-এর নাম করেন। অথচ বর্তমান বিশ্বে কিম জং উন-ই সবচেয়ে বড় স্বৈরাচারী রূপে পরিচিত।

ট্রাম্প বলেন, সৌদি আরব ও ইউনাইটেড আরব এমিরেটস (ইউএই বা সংযুক্ত আরব আমিরাত) দুটি বন্ধু দেশ। উল্লেখ্য, এই দুটি দেশই ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হবার আগে তার সাথে হৃদ্যতার সম্পর্ক স্থাপন করেছিল। এই দুটি দেশ যে এখন ইয়েমেনে নির্বিচারে বোমা ফেলছে সে বিষয়ে ট্রাম্প কিছু বলেননি।

ইউরোপের মাত্র একটি দেশকে তিনি বন্ধু রূপে চিহ্নিত করেন এবং সেটি হচ্ছে পোল্যান্ড। এর একটি প্রধান কারণ হতে পারে এই মাসে পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রে দুদা আমেরিকায় এসে হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে দেখা করেন। তখন তিনি ট্রাম্পকে ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, পোল্যান্ডে যে আমেরিকার সামরিক ঘাঁটি আছে, সেটার নাম “ট্রাম্প ফোর্ট” (ট্রাম্প দুর্গ) তিনি করতে চান।

সবচেয়ে বড় শত্রু দেশ রূপে ট্রাম্প ইরানকে চিহ্নিত করেন। তবে সেই সাথে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানিকে “একজন ভালো ও চমৎকার মানুষ” বলেন।

খুব সম্ভবত জাতিসংঘে উপস্থিত হয়ে ট্রাম্পের মিত্র ও শত্রুদের এই নামকরণ প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের নাম উচ্চারিত হয়নি। হয়তো ট্রাম্প জানেনও না যে আগস্ট ২০০৫-এ আমেরিকার দক্ষিণ উপকূলে যে বিধ্বংসী হারিকেন ক্যাটারিনা ঝড় বয়ে যায় তখন বাংলাদেশও এগিয়ে গিয়েছিল সাহায্যের হাত বাড়িয়ে। হারিকেন ক্যাটারিনার ঝড়ো হাওয়ার বেগ ছিল ঘণ্টা প্রতি ৭৪ মাইল (১১৯ কিলোমিটার ঘণ্টা প্রতি) এবং এর ফলে ১২৫ বিলিয়ন ডলার পরিমাণের সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। লক্ষ লক্ষ মানুষের নিরাপদ আশ্রয়, পানি, খাবার ও চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্য আমেরিকা ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।

সাহায্য করেছিল বিশ্বের বহুদেশ যাদের অন্যতম ছিল বাংলাদেশ।

শুধু তাই নয় সবচেয়ে বেশি সাহায্যকারী দেশগুলোর মধ্যে ষষ্ঠ স্থানে ছিল বাংলাদেশ। বাংলাদেশের এই অবস্থান ছিল জাপানের সরকারি অনুদানের সমান। অবশ্য জাপানের বহু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিগতভাবে অনেকে আরো দান করেছিল।

বাংলাদেশ কেন এবং কিভাবে বিশ্বের ১৯৩টি দেশের মধ্যে ষষ্ঠ হয়েছিল এবং ইনডিয়া, পাকিস্তান ও শ্রীলংকার ওপরে স্থান করেছিল?

সেই প্রশ্নের উত্তরটি জানা থাকলে আমেরিকার বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জাতিসংঘে তার ভাষণে বাংলাদেশের নামটিও উল্লেখ করতেন। হারিকেন ক্যাটরিনা বয়ে গিয়েছিল তের বছর আগে। তখন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাবলিউ বুশ ক্ষমতায় ছিলেন।

দুই মেয়াদে জর্জ বুশ ছিলেন প্রেসিডেন্ট এবং তার আমলে ইরাক যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল আমেরিকা। সেই যুদ্ধে আমেরিকা চেয়েছিল বাংলাদেশ থেকে কিছু সৈন্য। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে সেখানে পাঠাতে রাজি হননি বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। কেন তিনি রাজি হননি? সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ এবং পরে সেটা বলা যাবে। কিন্তু তার সেই সিদ্ধান্তের ফলে আমেরিকার সাথে বাংলাদেশের সুসম্পর্কে একটা গভীর ফাটল ধরেছিল।

ক্যাটরিনার প্রলয়ংকরী ঝড়ের বিবরণ পড়ে এবং বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসে তার সচিত্র রিপোর্ট দেখে আমি বুঝতে পারি সেই ফাটল মেরামত করতে এবং আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক আবার ভালো করার একটা অপ্রত্যাশিত সুযোগ বাংলাদেশের এসেছে।

আমি প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ে (প্রাইম মিনিস্টার্স অফিস, সংক্ষেপে চগঙ বা পিএমও নামে পরিচিত) ফোন করে খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিনা বিলম্বে দেখা করতে চাইলাম। তখন সকাল সাড়ে দশটা।

এগারোটার দিকে পিএমও থেকে ফোন এল এবং আমাকে যতো শিগগির সম্ভব সেখানে যেতে বলা হলো। আমি দ্রুত রেডি হয়ে পিএমওতে পৌঁছে গেলাম। সিকিউরিটি গেট পেরিয়ে প্রধানমন্ত্রীর রুমে যখন ঢুকলাম তখন বেলা প্রায় বারোটা। দেখলাম হালকা বাদামি রংয়ের শিফনের শাড়ি পরা প্রধানমন্ত্রী। সেদিন আমিই ছিলাম তার রুমে প্রথম দর্শনার্থী। তার চোখে মুখে একটু জিজ্ঞাসু চিহ্ন। কোনো প্রশ্ন তিনি করলেন না। বসতে বললেন।



‘একটা ইমারজেন্সি বিষয়ে কথা বলার জন্য আমি এসেছি।’ বললাম।

‘কি হয়েছে?’ তিনি জানতে চাইলেন।

‘আপনি নিশ্চয়ই আমেরিকায় হারিকেন ক্যাটরিনার সংবাদ পড়েছেন এবং টিভিতে ধ্বংসলীলা দেখেছেন, দুর্গতদের করুণ অবস্থা দেখেছেন।’

‘হ্যা। দেখেছি। খুবই খারাপ অবস্থা।’

‘ম্যাডাম, এই সময়ে আমেরিকাকে সাহায্য করা উচিত। বাংলাদেশ ছোট দেশ। গরিব দেশ। কিন্তু বিপদের সময়ে আমাদের সাহায্য করা উচিত বিপদগ্রস্ত অন্য দেশকে।’

‘নিশ্চয়ই। ঠিকই বলেছেন। এখনি কিছু করা উচিত।’ প্রধানমন্ত্রীর চোখে মুখে উদ্বেগ দেখলাম।

‘ধন্যবাদ আপনাকে। আমার প্রয়াত পিতা প্রায়ই কামিনী রায়ের একটি কবিতার শেষ চারটি লাইন বলতেন। তিনি বলতেন, ‘আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে, আসে নাই কেহ অবণী পরে, সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।’ তবে এর পরেই তিনি বিদ্রুপ করে বলতেন, বাংলাদেশের মানুষের চিন্তাধারা অন্যরকম, তারা ভাবে, ‘আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে আসিয়াছি আমি অবণী পরে, প্রত্যেকে আমরা নিজের তরে।’ আপনি যে সেই সাধারণ পথে না গিয়ে আজ একটি অসাধারণ সিদ্ধান্ত নিলেন, এটা বাংলাদেশের জন্য ভবিষ্যতে অনেক সুফল বয়ে আনবে। কারণ, বাংলাদেশ একটি ঘূর্ণিঝড় প্রবণ দেশ এবং ভবিষ্যতে এপৃল ১৯৯১-এর মতো বাংলাদেশে আরো ঘূর্ণিঝড় হবে। তখন আমেরিকা আমাদের সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছিল। চট্টগ্রাম পোর্ট এরিয়াতে তারা বহু কাজ করে চট্টগ্রাম পোর্টকে আবার সচল করতে পেরেছিল। আর হ্যা, আরেকটা স্থায়ী অবদান আমেরিকা রেখে যায়। তখন আমেরিকান সৈন্যরা মিনারেল ওয়াটার খেত। সেই থেকে গোটা বাংলাদেশে মিনারেল ওয়াটার, যেটা আসলে আমাদের দেশে সিদ্ধ পানি, সেটা খাবার অভ্যাস হয়ে গিয়েছে।’

‘এখন বলুন বাংলাদেশের কি করা উচিত।’ প্রধানমন্ত্রী দ্রুত আসল পদক্ষেপ কি হবে সেটা জানতে চাইলেন।

‘বাংলাদেশ দুটি কাজ করতে পারে। প্রথমত, যেহেতু আমাদের সেনাবাহিনী ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট বা দুর্ঘটনায় কাজ করতে অভ্যস্ত সেহেতু এবার আপনি আমাদের সেনাবাহিনীর একটি অংশকে আমেরিকায় পাঠানোর প্রস্তাব দিতে পারেন। ফলে ইরাক যুদ্ধে অসহযোগিতার ফলে আমেরিকার বিরূপ প্রক্রিয়ার কাউন্টার ও পজিটিভ একশনের প্রস্তাব দেয়ার সুযোগটা নিতে পারেন। এতে বাংলাদেশের খুব খরচ হবে না। বাংলাদেশ বিমানে আপনি সেনাবাহিনীকে নিউ ইয়র্ক পাঠিয়ে দিতে পারেন। সেখান থেকে আমেরিকানরা প্রয়োজন মোতাবেক দক্ষিণ উপকূলে তাদের নিয়ে যাবে আমেরিকান প্লেনে।’

‘আমেরিকা রাজি হবে? তাদের সেনাবাহিনীর পাশাপাশি আমাদের সেনাবাহিনীকে রিলিফ কাজ করতে দিবে?’ প্রধানমন্ত্রী মত চাইলেন।
‘খুব সম্ভবত রাজি হবে না। তারা মনে করতে পারে এর ফলে আমেরিকান সেনাবাহিনীর মান একটু ক্ষুণ্ণ হতে পারে। কিন্তু তাতে কি? আমেরিকানরা রাজি হলে তো ভালোই। আর রাজি না হলেও ভালো। ইরাকে সেনা পাঠাননি কারণ সেখানে মানুষের দুর্দশা বাড়তো। কিন্তু এবার আমেরিকা সরকার বুঝবে, মানুষের দুর্দশা কমাতে আপনার সরকার সদা প্রস্তুত।’

‘আপনার যুক্তি সঠিক। বেশ। সেই প্রস্তাব আমরা দেব। আর দ্বিতীয় কোনভাবে আমরা সাহায্য করতে পারি?’ খালেদা জানতে চাইলেন।
‘আমরা তাদের ক্যাশ ডলার দিতে পারি।’

‘হ্যা। সেটা সম্ভব। কিন্তু কতো? আমি সাইফুর রহমান সাহেবকে ফোন করছি।’ তিনি তার ইন্টারকমে নির্দেশ দিলেন অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানকে কানেক্ট করতে।

কিছুক্ষণ পরেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অর্থমন্ত্রীর টেলিফোন যোগাযোগ স্থাপিত হলো। ওদিক থেকে অর্থমন্ত্রী জানালেন বাংলাদেশের ডলার তহবিলের অবস্থা।

‘অর্থমন্ত্রী দশ হাজার ডলার দিতে পারবেন।’ খালেদা ফোন রেখে দিয়ে বললেন।

আমি হেসে ফেললাম। বললাম, ‘দেখুন, যায়যায়দিন একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা মাত্র। তবু, ইনডিয়াতে ভূপাল দুর্ঘটনার সময়ে, জাপানে কোবে ভূমিকম্পের সময়ে, এমন বিভিন্ন সময়ে অন্ততপক্ষে দুশ ডলার সাহায্য আমরা পাঠিয়েছি পত্রিকার পাঠকদের পক্ষ থেকে। সেই তুলনায় বাংলাদেশ সরকারের কি উচিত নয় এই সময়ে যতোটা সম্ভব বেশি দান করা?’

‘নিশ্চয়ই। তাহলে আমরা কতো ডলার সাহায্য দেয়ার প্রস্তাব করবো?’

‘সেটা আপনার সিদ্ধান্ত এবং বাংলাদেশ ব্যাংকে ডলার তহবিলের ওপর নির্ভরশীল। আপনিই বলুন।’

‘তাহলে এক মিলিয়ন ডলার?’ প্রধানমন্ত্রী উৎসুকভাবে বললেন।
‘চমৎকার। আমাদের দেশের সীমিত সামর্থ্যে এক মিলিয়ন ডলার যে অনেক সেটা সবাই বুঝবে।’ আমি খুব খুশি হয়ে সায় দিলাম।

‘তাই হবে। আমি সাইফুর রহমান সাহেবকে এখনি বলে দিচ্ছি।’ এবার খালেদার মুখে গভীর তৃপ্তি দেখা গেল।
‘থ্যাংক ইউ ম্যাডাম।’

আমেরিকার বিপদে বাংলাদেশের এক মিলিয়ন ডলার দানের বিষয়টি আমেরিকার বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ফলাও করে ছাপা হয়েছিল। তারা অবাক হয়েছিল গরিব বাংলাদেশের এই বদান্যতায়।
কিন্তু বাংলাদেশে এ বিষয়টি তেমন প্রচার পায়নি। যেমন প্রচার পায়নি সেই সময়ে বিএনপি সরকারের অনেকগুলো ভালো কাজের কথা।

বাংলাদেশে বসে আমার জানার উপায় ছিল না অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থানটি কি। কয়েক মাস পরে ক্যাটরিনা ঝড়ে বিভিন্ন দেশের সাহায্য প্রসঙ্গে মাসিক রিডার্স ডাইজেস্ট পড়ে আমি জেনেছিলাম বাংলাদেশের অবস্থান ষষ্ঠ। রিডার্স ডাইজেস্টের চার্টে আনন্দিত হয়েছিলাম দেখে যে প্রতিবেশী দেশগুলোর চাইতে বাংলাদেশের অবস্থান ওপরে। হ্যা, বাংলাদেশ পারে যদি নেতৃত্ব সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়। গুগলে সার্চ দিলে বাংলাদেশের এই অতি অসাধারণ কৃতিত্ব বিষয়ে অনেক কিছু পাঠকরা জেনে নিতে পারেন।

কিন্তু এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে, আমেরিকানরা কি জানে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর চরম অমানবিক দুর্দশার কথা? কেউ কি এই বিষয়টি আমেরিকার রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটকে এবং তার মাধ্যমে তার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জানিয়ে দেবেন?

লন্ডন
২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

Family debt lowest in 14 years: Global study

BD lags behind Asian economies, economists

Jasim Uddin Haroon

The country's household debt as percentage of gross domestic product (GDP) has been shrinking over the years from its peak in 2005. The household debt means the purchase of residential property and cars. The household debt, which was 5.1 per cent of the GDP in 2005, fell to 4.1 in 2010. It further decelerated to 3.5 per cent in 2015.

The percentage dipped to 3.3 per cent in 2018, lowest in 14 years, according to data prepared by the Institute of International Finance (IIF), a Washington-based organisation.

This falling trend signifies that people's involvement with the financial sector is decreasing even though Bangladesh's economy is expanding.

Usually household debt grows in line with economic expansion and it is believed that the falling trend is an exception.

The IIF is the global association of the financial industry, with close to 450 members from 70 countries.

In India, this trend is upward while in case of Pakistan the trend is also going down but not the way Bangladesh experiences.

Indonesia is one of the fastest-growing economies of Asia, with the household debt heading upward.

Economists view that this is happening as the depth of Bangladesh's financial sector is low.

They also said the financial sector, which has been struggling with a high volume of non-performing loans, is less focused on the household debts.

"Bangladesh's financial market has not deepened yet adequately to raise the household debt," said Dr Ahsan H Mansur, executive director at the Policy Research Institute of Bangladesh (PRI), a private think tank.

He said the household debt is involved with mortgage and this is yet to develop in the country leading to poor home-related financing.

"To my mind, the government's policy and diversified products are required to boost such debt," he noted.

Dr Zahid Hussain, lead economist at the World Bank's Dhaka office, said Bangladesh's financial market is less-developed than in other Asian economies and this is reflected in this indicator.

"We're falling behind day by day …" he said.

He said since the banking system is now crippled with troubled loans, it cannot think about expanding services.

"How can the banks show courage to invest in the areas?" he said.

Dr Hussain said currently Bangladesh's household loans mostly depend on immovable property as collateral and it is one of the constraints to expanding the loans.

"We've been working with the central bank of Bangladesh to introduce movable property as security to diversify the age-old collateral system," he noted.

On the other hand, people in the banking sector view that the country's financial market is presently urban-based and that's why the debt is falling.

Association of Bankers' Bangladesh Limited Chairman Syed Mahbubur Rahman told the FE: "Actually our market is yet to mature…"

"I believe a few cities -- Dhaka, Chattogram and Sylhet -- have higher household debts but the other cities and towns have remained outside such facilities," Mr Rahman said.

"In my view, only microcredit is the main source of household debts in the rural areas," he added.

According to a study of the Bangladesh Institute of Bank Management (BIBM), more than 80 per cent of the bank finances are concentrated in urban areas.

He, however, said this contraction in percentage is true, but in absolute value this is rising at slow pace compared to the economic expansion.

  • Courtesy: The Financial Express/ Sep 30, 2018

হজে থেকেও আসামি!

কুমিল্লায় গায়েবি মামলা


কুমিল্লার সদর দক্ষিণে গায়েবি ঘটনাস্থল উল্লেখ করে বিশেষ ক্ষমতা আইনে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এ মামলায় পুলিশ ৩ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত ওই আবেদন নামঞ্জুর করেন। এছাড়া মাজাহারুল ইসলাম সফু নামের এক বিএনপি নেতা পবিত্র হজ্বব্রত পালনের জন্য মক্কায় থেকেও মামলা থেকে রেহাই পাননি, তাকেও এ মামলায় আসামি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। 

জানা যায়, জেলার সদর দক্ষিণ মডেল থানার এসআই কোমল কুমার সাহা বাদী হয়ে গত ১৭ই আগস্ট স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ৪৬ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করেন। এ মামলার ৩৯নং আসামি ‘মো. মাজাহারুল ইসলাম প্রকাশ সফু (৪০), পিং- মাস্টার মমতাজুর রহমান, সাং- তুলাগাঁও, থানা- নাঙ্গলকোট’ কুমিল্লা। মামলার প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে (এফআইআর) ঘটনাস্থল উল্লেখ করা হয় সদর দক্ষিণ উপজেলার ‘শাসনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠের কোণা’। জানা গেছে, সদর দক্ষিণ উপজেলায় শাসনপাড়া নামে কোনো গ্রাম নেই, তবে এই নামে লালমাই উপজেলায় একটি গ্রাম রয়েছে এবং ওই গ্রামটিতে কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। এছাড়া এ মামলায় মাজাহারুল ইসলাম সফুকে আসামিভুক্ত করা হলেও তিনি মামলায় উল্লিখিত ঘটনার ৫৮ দিন আগে হজ্বে গেছেন এবং ফিরেছেন মামলায় উল্লিখিত ঘটনার ২৪ দিন পর।

এদিকে ওই মামলার ঘটনাস্থল এবং হজ্বে যাওয়া মাজাহারুল ইসলাম সফুর নাম মামলায় অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি জানাজানি হলে এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে বেশ আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় বইছে। লালমাই উপজেলার পেরুল দক্ষিণ ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ দলীয় চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান এবং শাসনপাড়া গ্রামের লোকজন জানান, ‘শাসনপাড়া গ্রামে সরকারি কিংবা বেসরকারি কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই।’

গ্রেফতারকৃতদের পরিবারের লোকজন জানান, ‘শাসনপাড়া গ্রামে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোনো অস্তিত্ব না থাকলেও এই নামে বিদ্যালয়ের মাঠের কোণে গায়েবী ঘটনাস্থল দেখিয়ে মামলা দায়ের করে হয়রানী করা হচ্ছে।’ মামলার আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবদুল মোতালেব মজুমদার জানান, আমরা সদর দক্ষিণ ও লালমাই উপজেলার সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তালিকা সংশ্লিষ্ট প্রশাসন থেকে সংগ্রহ করে বিজ্ঞ আদালতে দাখিল করেছি। ওই তালিকায় শাসনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। 

তাই মামলায় উল্লিখিত ওই ঘটনাস্থলকে গায়েবী ঘটনাস্থল হিসেবে আদালতকে অবহিত করা হয়েছে। তিনি জানান, নাঙ্গলকোট উপজেলার মক্রবপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মাজাহারুল ইসলাম সফু পবিত্র হজ্ব পালনের জন্য গত ২১শে জুলাই মক্কায় গেছেন, দেশে ফিরেছেন ৯ সেপ্টেম্বর। কিন্তু তাকে এ মামলার ৩৯নং আসামি করা হয়েছে। আদালতে এ সংক্রান্ত তথ্য-প্রমানাদি উপস্থাপন করা হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি মনিরুল হক চৌধুরী বলেন, জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি নেতাকর্মীদের হয়রানীর উদ্দেশ্যে গায়েবি ঘটনা, ঘটনাস্থল ও মিথ্যা অভিযোগে যেভাবে একের পর এক মামলা সৃষ্টি করে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে তা নিন্দনীয়। তিনি বলেন, গত ১৩ই সেপ্টেম্বর আমার পিতার ৩৩তম মৃত্যুবার্ষিকী অনুষ্ঠানে নেতাকর্মীরা আসার পথে ১৯ জনকে ধরে নিয়ে ৪৬ জনের নামে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলা দেয়া হয়েছে। 

এ ধরনের মামলায় গ্রেপ্তার আতংকে নেতাকর্মীরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মানবেতর দিনাতিপাত করছে। হয়রানিমূলক মামলা ও গ্রেপ্তার বন্ধ করার জন্য তিনি সরকারের নিকট দাবি জানান। এ বিষয়ে মামলার বাদী এসআই কোমল কুমার সাহা সাংবাদিকদের বলেন, সংঘটিত ঘটনায় আসামি গ্রেপ্তার ও মামলা হয়েছে এবং বিভিন্ন আলামত জব্দ করা হয়েছে। তবে ঘটনাস্থলের নাম ভুল হয়েছে। এ মামলার কোনো আসামি হজ্বে ছিল কি-না তা জানা নেই। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে দায়ের করা মামলায় দোষীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না।

  • কার্টসিঃ মনবজমিন/ সেপ্টেম্বর ৩০,২০১৮ 

গৃহায়ন কর্তৃপক্ষে গায়েবি বিলের ছড়াছড়ি, ৪০ কোটি টাকার বিল জব্দ

দীন ইসলাম 

জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন প্রকল্পে গায়েবি বিলের খোঁজ মিলেছে। কাজ হয়নি অথচ কোম্পানির প্যাডে স্বাক্ষর করে বিল তুলে নিয়েছেন ঠিকাদাররা। প্রকৌশলীদের সঙ্গে যোগসাজশে এমন অপকর্ম করেছেন তারা। বিল দেয়ার ক্ষেত্রে চূড়ান্ত বিল প্রস্তুতের মাপবহি (এমবি)-তেও  কোনো তথ্য এন্ট্রি নেই। গেল ছয় বছরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিলের তথ্য যাচাই করতে গিয়ে এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে। প্রতিষ্ঠানটির নতুন চেয়ারম্যান মো. রাশেদুল ইসলাম ঠিকাদারি বিলগুলো দেখে রীতিমতো হতবাক। প্রতিষ্ঠানটির সদস্যদের সামনে তিনি বলেছেন, এভাবেও কি সরকারি অর্থ গায়েব করে দেয়া যায়। কাজ হয়নি অথচ কোটি কোটি টাকা খেয়ে ফেলা হয়েছে। 

কার্টসিঃ মানবজমিন/ সেপ্টেম্বর ৩০,২০১৮ 

BNP activists panicked, on run as prosecution, arrest continue

Rashed Ahmed Mitul 

Main opposition Bangladesh Nationalist Party leaders and activists across the country are in panic and on the run as filing of spooky cases, revival of old cases and arrest by police continue ahead of the 11th parliamentary polls. 

Party leaders said that the panic caused many leaders and activists of BNP and its associate bodies to resort to various tactics to avoid arrest and many of them did not dare to attend party programmes while many were on the run. 

BNP secretary general Mirza Fakhrul Islam Alamgir on September 21 said that they doubted if there would be any scope for restoring democracy the way the government filing ‘ghostly’ cases against the opposition, particularly BNP, leaders and activists across the country, making the elections ‘uncertain’.

He said that 3,736 cases were filed against over 3.13 lakhs BNP leaders and activists, over 2.33 lakhs unnamed in the cases and 3,690 were arrested in September 1-18. 

Several thousand leaders and activists joined the human chain in front of National Press Club on September 10 while only 1,500 joined two-hour token hunger strike on the premises of Institution of Engineers, Bangladesh in Dhaka on September 12 demanding immediate release of jailed BNP chairperson Khaleda Zia. BNP leaders blamed the fear of arrest for the poor participation in the hunger strike as over 200 leaders and activists were arrested on the way to and from the human chain.In both the programmes, many leaders and activists started to leave the venues halfway through the programmes apparently fearing arrest, party leaders said.

BNP standing committee members including ailing Tariqul Islam, Mirza Abbas and  Goyeshwar Chandra Roy, vice-chairmen  Khandaker Mahbub Hossain, Nitai Roy Chowdhury and Aminul Hoque, BNP chairperson’s adviser Taimur Alam Khandaker, senior joint secretary general Ruhul Kabir Rizvi and law affairs secretary Sanaullah Mia, among others, were named in ‘ghostly’ cases while joint secretary general  Habib-un-Nabi Khan Sohel,  assistant climate change affairs secretary Mostafizur Rahman Babul and assistant religious affairs secretary John Gomez , among others, were arrested in September, party leaders said. 

The fresh spell of arrest, prosecution and raid began from September 1, the day BNP celebrated its 40th founding anniversary, they said. Dhaka Metropolitan Police deputy commissioner (media) Masudur Rahman said that investigation into old cases usually continued until submission of the police report.

He said that new cases might be filed when any offence was committed.
About BNP’s allegation of filing ‘ghostly’ cases, he said that it was a common allegation. 

New Age correspondents from districts, including Barishal and Tangail, reported that local BNP leaders and activists were on the run in fear of arrest. Barishal south district BNP president Ebadul Hoque Chan said that it was difficult to count but several hundred leaders were named in 50 cases.

Barishal north district unit president Mejbahuddin Farhad said that the leaders and activists were in fear of arrest. Barishal metropolitan police commissioner Mosarraf Hossain said that no separate statistics of cases against and arrest of BNP leaders and activists. He claimed that police arrested only the people named in cases.

Barishal district superintendent of police Saiful Islam claimed that not a single political case was filed and none was arrested without being named in a case.

Tangail district BNP president Shamsul Alam Tofa alleged that a case was filed with Gopalpur police station in September against 300 leaders and activists, naming 36.

Police arrested Tangail district BNP general secretary Farhad Iqbal on September 8.Tangail model police station officer-in-charge Sayedur Rahman said that Iqbal was arrested in a case of sabotage injuring police members filed in July.

BNP-backed Sakhipur upazila parishad vice-chairman Mohammad Sabur Reza said that police detained five leaders, including Sakhipur municipal BNP former general secretary Abdul Gani, municipal Jubadal vice-chairman Sentu Mia and upazila Krishak Dal general secretary Fazlur Rahman, raiding houses of the upazila’s top leaders on September 6. 

Police filed a case on September 7 accusing 16 local BNP leaders and 50–60 unnamed activists of preparing for sabotage, BNP leaders said.

About 500 leaders and activists of Sakhipur and Basail upazilas are on the run, they said.  Tangail superintendent of police Sanjit Kumar Roy said that no false cases were filed against anyone.

  • Courtesy: New Age /Sep 29,2018

Thursday, September 27, 2018

পরিবর্তনের আলামত স্পষ্টতর হচ্ছে

মাসুদ মজুমদার


নির্বাচন কমিশন সমালোচনার ঊর্ধ্বে উঠতে পারছে না। যেখানে অবিতর্কিত নির্বাচন কমিশন বা ইসি এবং সিইসি প্রয়োজন, সেখানে বিতর্ক বাড়ছে। যার ফলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বা সিইসি কিংবা নির্বাচন কমিশন এখনো জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠতে পারছে না। সরকারের মুখপাত্ররা সিইসি ও নির্বাচন কমিশনকে অবিতর্কিত থাকতে দিতে চান না বলেই মনে হয়। কারণ, সিইসি যা বলেন তা ‘সংশোধন’ করে দিতে চেষ্টা করেন বর্তমান সরকারের মুখপাত্ররা।

ইভিএম নিয়ে অতি উৎসাহ এবং সেনা মোতায়েন নিয়ে সিইসি যা বলেন; সরকার যেন তার সে বক্তব্যকে সমর্থন করা দায়িত্ব বলে মনে করে। নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ প্রশ্নেও ইসি কতটা দৃঢ়, তা স্পষ্ট হতে পারেনি। কারণ, সরকারি লোকদের চিন্তা-ভাবনা ইসিকে বিশেষ বিবেচনায় নিতে হচ্ছে বলেই জনসাধারণের ধারণা। জনপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ তথা আরপিও খসড়ার পর্যালোচনা নিয়েও সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে; ঘোষিত রোডম্যাপও অনুসরণ করা সম্ভব হচ্ছে না।

সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন করার ব্যাপারে নেতিবাচক ধারণায় এক ধরনের জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে। সে ক্ষেত্রে ইসি এখনো স্পষ্ট করে কিছু বলেনি। তাই ধারণা করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে, ইসি সম্ভবত নিষ্ঠা নিয়েও মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারছে না; যেমনটি পারা উচিত ছিল। নির্বাচন কমিশন স্থানীয় প্রশাসনের ওপর কতটা নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবে, সে ব্যাপারেও জনমনে সংশয় রয়েছে। তার বাইরে পুলিশ প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণে রেখে ইসির কাজ করার সক্ষমতা নিয়ে আজো জনমনে আস্থা সৃষ্টি হয়নি।

বর্তমান সরকার সারা দেশে বিরাট একটি সুবিধাভোগী শ্রেণী সৃষ্টি করেছে। এটা অস্বীকার করা যাবে, কিন্তু বাস্তবতা এড়ানো যাবে না। এদের দৌরাত্ম্য নির্বাচনকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। এ ক্ষেত্রে ইসির ভূমিকা এখনো কতটা দৃঢ়, সেটা বোঝা কঠিন। ক্ষমতাসীনেরা নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন; অথচ বিরোধী দল ন্যূনতম গণতন্ত্রচর্চার সুযোগও পাচ্ছে না। এ ব্যাপারে ইসির ভূমিকা এখনো অনেকটা দায়হীন।

আইন নির্বাচন কমিশনকে প্রচুর ক্ষমতা দিয়েছে। কিন্তু সেই ক্ষমতা প্রয়োগের সাহস ও সক্ষমতা দেখাতে প্রশাসন, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতা প্রয়োজন। অতীতেও আমরা লক্ষ করেছি, ইসি নিজের ক্ষমতাটুকু স্বাধীনভাবে প্রয়োগ করতে সক্ষম হয় না; বরং প্রশাসনের কাছে জিম্মি হয়ে ইসি প্রচুর অনিয়মকে প্রশ্রয় দিয়েছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের কথা বাদ দিলেও নির্বাচন কেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তা বিধান এবং ভোটারদের নির্বিঘ্নে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেয়া সম্ভব হয় না।

ক্ষমতাহীন সেনা মোতায়েন কার্যত কোনো কাজ দেয় না। তাই সেনা মোতায়েন করতে হবে তাদের পর্যাপ্ত ক্ষমতাসহ। নয়তো জাতিকে যেখানে এনে বর্তমান ক্ষমতাসীনেরা দাঁড় করিয়েছেন, সেখানে একটি গ্রহণযোগ্য ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করা কঠিন।

জাতীয় সংসদের নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, রাজনৈতিক মেরুকরণ ততটা চাঙা হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত রাজধানীর নাট্যমঞ্চের ঐক্যপ্রক্রিয়া নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এই মেরুকরণের ধরন-ধারণের ওপরই জাতীয় নির্বাচন নির্ভর করবে। মিডিয়ায় খবর এসেছে, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কেউ দুর্ভাবনায় রয়েছেন; কেউ আছেন খোশ মেজাজে। বাস্তবে বাংলাদেশের পরিস্থিতি এবং ভোটারদের মনের ওপর নির্বাচন নির্ভর করবে। তবে নির্বাচন কমিশন যতটা সাফল্য ও যোগ্যতার সাথে আম্পায়ারিং করবে- গ্রহণযোগ্য ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে কি না সেটাই ফলাফল মিলিয়ে দেবে। এটা ঠিক, ভোটারেরা পরিবর্তনের প্রত্যাশায় প্রহর গুনছে। জাতীয় নেতাদের মনের অবস্থাও তাই। শেষ পর্যন্ত পরিবেশ পরিস্থিতি এবং ইসির ভূমিকাই মুখ্য হয়ে যাবে।

যেকোনো মানুষের সাথে দেখাসাক্ষাতে সবার প্রশ্ন একটাই- কী হবে? কী হতে যাচ্ছে? নির্বাচন হবে তো? সেই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে কি না, আবার ৫ জানুয়ারি ধরনের কোনো কিছুর আয়োজন চলছে না তো? এর বাইরেও অনেক প্রশ্ন করা হয়, যা উল্লেখ করা যায় না কিংবা উল্লেখ করলে নানা ধরনের প্রশ্ন উঠবে। আর জবাবই বা কী দেয়া সম্ভব? দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি ভালো নেই। রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ-সংস্কৃতি সব ক্ষেত্রে এক ধরনের নৈরাজ্য চলছে। নীতি-নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন না তোলাই ভালো। আইনশৃঙ্খলা নিয়ে কম কথাই সবার জন্য নিরাপদ। দেশে যখন এমন একটি গুমোট ও অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, তখন স্বাভাবিকভাবেই কোনো বিষয়ে মন্তব্য করা যায় না। তা ছাড়া, পুরো দেশটি এক ধরনের ভীতি ও শঙ্কার রাজ্যে পরিণত হয়েছে। কেউ নিজের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে একবাক্যে মন্তব্য করতে পারছেন না। রাজনীতিবিদেরা রাজনীতি সম্পর্কে মন্তব্য করতে নারাজ। অর্থনীতিবিদেরা শুধু বলেন, সামগ্রিক পরিস্থিতি হতাশাজনক।

গণতন্ত্র, আইনের শাসন, মানবাধিকার, পররাষ্ট্রনীতি, দেশের উন্নয়ন, ব্যাংকপাড়ার অবস্থা- কোথাও কেউ সুখবর দিতে পারছেন না। সরকারপ্রধান ও ক্ষমতাসীন দলের লোকদের রাজনীতি আছে, তারা যা খুশি বলতে পারেন, মন্তব্য করতে পারেন, প্রতিপক্ষকে শাসাতে পারেন। ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদ শোনাতে পারেন। কিন্তু পুরো জাতিকে হতাশায় ঘিরে ধরেছে। এ দিকে, নির্বাচনের রোডম্যাপ শেষ পর্যন্ত ঠিক থাকবে কি না, বলা কঠিন।

জাতীয় রাজনীতিতে নানামুখী সঙ্কট রয়েছে। অসংখ্য ইস্যু রয়েছে। আস্থা-অনাস্থার সঙ্কটও কম নেই। তাই সরকার সঙ্কট ঘনীভূত করার ক্ষেত্রে এখনো কোনো ছাড় দেয়নি। আবার বিরোধী দলও একটা সীমা পর্যন্ত ছাড় দেবে, তার বাইরে নির্বাচনকে এড়িয়ে যেতেও পারে। তবে দেশী-বিদেশী প্রভাবক শ্রেণী এবার আমাদের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বেশ উৎসাহী। এই উৎসাহে যাতে ভাটা না পড়ে সে ব্যাপারে সরকার ও বিরোধী জোট সমানভাবে সতর্ক থাকার চেষ্টা করার কথা।

এবার বিচারবহির্ভূত হত্যা, খুন, গুম, জেল-জুলুম বেশি মাত্রায় সামনে এসে যাবে। দলবাজির বিষয়টি জনগণ আমলে নেবে। সবচেয়ে বড় কথা, জনগণ বিগত দিনের দুর্নীতি ও কেলেঙ্কারির সাক্ষী হয়ে আছে। জনগণ প্রত্যক্ষ দেখা এ বিষয়গুলোর সাক্ষ্য দেয়ার জন্য কোর্টে যাবে না। প্রতিবাদ করার সুযোগ পায়নি বলে সাক্ষ্য দিতে যাবে না। তবে ব্যালট হাতে পেলে সেটি বাক্সে ফেলার সুযোগ পেলেই হবে।

খালেদা জিয়ার বিষয়টি জনগণের মনে এত বেশি দাগ কেটেছে যে, সেটাই সরকারকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জে ফেলতে পারে। বিচার-আচার নিয়ে জনগণ উচ্চবাচ্য করেনি। করতেও যাবে না। কিন্তু যে প্রতিক্রিয়া দেখাবে, সেটা ভাবনারও অতীত। তা শাসকেরা এখনো ভাবতে পারছেন না। এখনো শাসকেরা যেদিকে তাকাচ্ছেন, সেদিকেই ‘নিজের লোক’ দেখতে পাচ্ছেন। সবাই কর্তার ইচ্ছায় কীর্তন গাইতে চেষ্টা করছে। এটাই যেকোনো স্বৈরশাসক ও একনায়কের দৃষ্টিভ্রম। ইতিহাসের ছাত্র হিসেবে অতীত যতটা স্মৃতিতে আছে, ততটায় মনে হয়- সব একনায়ক একই ধরনের আচরণ করে থাকেন। একই ধরনের ভাবেন। একই ধরনে সব মানুষকে নিজের লোক ভাবতে চেষ্টা করেন। যতক্ষণ না তখত উল্টে যায়, ততক্ষণ তারা শুধু দুর্বিনীত থাকেন না, এতটা বেপরোয়া থাকেন যে, মনে হয় তারা ছাড়া আর কেউ ক্ষমতার যোগ্য নন। প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। যারা আছে তারা তো দুর্বল। ফুৎকারে উড়ে যাবে।

যদিও আমরা কোনো শাসকের ভাগ্য গুনে বলে দিতে পারি না, কার কী পরিণতি হবে বা কখন হবে। এটা বিধাতা নিজের হাতে রেখে দিয়েছেন। তবে জানিয়ে দিয়েছেন- দুর্বিনীত এবং দুঃশাসক, যারা জনগণের ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ জুলুম করে, তাদের পরিণতি কোনো দিন ভালো হয় না। 

এবার বিশ্বপরিস্থিতি ও জাতীয় প্রেক্ষাপট একসাথে পাল্টে গেছে। আঞ্চলিক রাজনীতিতে বোঝাপড়ার ধরনও পাল্টে যেতে শুরু করেছে। এখন আঞ্চলিক রাজনীতিতে আমরা একক খেলোয়াড় নই। খেলোয়াড়ের সংখ্যা শুধু বাড়েনি, আরো বাড়তি কিছু করার চেষ্টা করে যাবে।

আঞ্চলিক রাজনীতির সাথে বিশ্বরাজনীতির পারঙ্গম অনেক খেলোয়াড় রয়েছেন, যারা তাদের স্থানীয় এজেন্টদের সময়মতো কাজে লাগাবেন এবং ঘুড়ির রশির মতো টানবেন। তাই আগামী জাতীয় নির্বাচন শুধু বাংলাদেশের মাঠের একটা খেলা নয়। এখানে বহু উৎসাহী দর্শক থাকবেন, আম্পায়ার থাকবেন অনেকেই। তা ছাড়া, দেশীয় রাজনীতির অভিজ্ঞ খেলোয়াড়রা বসে থাকবেন না। তারা নতুন করে অঙ্ক কষবেন। তাই জাতীয় নির্বাচন হবে জাতীয় প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের জন্য। এ সত্যটি কেউ মস্তিষ্ক থেকে বাদ দিলে ভুল করবেন।
  • কার্টসিঃ নয়াদিগন্ত/ সেপ্টেম্বর ২৭,২০১৮