Search

Thursday, October 4, 2018

এই অপসংস্কৃতি বন্ধ হোক

সম্পাদকীয়

গায়েবি মামলা

বাংলাদেশ সব সম্ভবের দেশ বলে পরিচিত। তাই বলে যা ঘটেনি, ঘটনার সামান্য আভাসও দেখা যায়নি, সেই কল্পিত কাহিনি সম্বল করে মামলা করার বিরল কৃতিত্ব দেখিয়েছেন আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। আর এর একটি মামলায় আসামি করা হয়েছে বিএনপির মহাসচিবসহ দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের। এটি নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার অপকৌশল ছাড়া কিছু নয়।

সংবাদমাধ্যমের খবর থেকে জানা যায়, গত রোববার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির জনসভার পর ঘরে ফেরার পথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দলটির বেশ কিছু নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে এবং তাঁদের বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়েছে। হাতিরঝিল থানায় দায়ের করা মামলায় বলা হয়, ‘রোববার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা সরকারবিরোধী উসকানিমূলক বক্তব্য দেন এবং তাঁদের এমন বক্তব্যের পর রাত আটটার দিকে হাতিরঝিল থানার মগবাজার রেলগেট এলাকায় বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল ও জামায়াত-শিবিরের ৭০ থেকে ৮০ জন নেতা-কর্মী জড়ো হন। তাঁরা রাস্তায় যানবাহন চলাচলে বাধা দেন। তাঁরা পুলিশকে হত্যার উদ্দেশ্যে ইটপাটকেল ছোড়েন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মারধর করেন, ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটান।’

প্রথম আলোর প্রতিনিধি পরদিন সেখানকার ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে পুলিশের দাবির কোনো সত্যতা পাননি। ওই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেছেন, ‘এ রকম তো কোনো খবর পাইনি।’ মগবাজার এলাকায় বিএনপি ভাঙচুর করেছে, আর সেখানকার মানুষ খবর জানবেন না, এটি কী করে সম্ভব? এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক যা বলেছেন, তা শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা মাত্র। তিনি বলেছেন, বিএনপি আমলে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে ফেরিতে প্লেট চুরির মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছিল। বিএনপি আমলে আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে প্লেট চুরির কাল্পনিক মামলা দেওয়া হলেও বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে এখন গায়েবি মামলা ন্যায্যতা পায় না। দুটিই নিন্দনীয় ও আইনের শাসনের পরিপন্থী।

বিএনপির দাবি, ১৯টি জেলা ও মহানগরে ৫৮টি গায়েবি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে শেরপুর জেলায় আটটি, টাঙ্গাইলে চারটি, দিনাজপুরে ছয়টি, নারায়ণগঞ্জে দুটি, খুলনায় চারটি, খুলনা মহানগরে তিনটি, শরীয়তপুর জেলায় একটি, মাদারীপুরে দুটি, মাগুরায় দুটি, পটুয়াখালীতে দুটি, সিরাজগঞ্জে দুটি, ভোলায় একটি, নেত্রকোনায় দুটি, কুমিল্লায় আটটি, ময়মনসিংহে তিনটি, নরসিংদীতে দুটি, হবিগঞ্জে দুটি এবং রাজশাহী মহানগরে চারটি। আসামি করা হয়েছে ৩ হাজার ৭৪০ জন নেতা-কর্মীকে এবং অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ৫ হাজার ৭০০ জন নেতা-কর্মীকে।

রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের নামে কেউ বিশৃঙ্খলা করলে সরকার তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যেখানে ঘটনাই ঘটেনি, সেখানে প্রধান বিরোধী দলের মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা করা শুধু বেআইনি নয়, উসকানিমূলকও। সম্প্রতি জাতীয় সংসদে পাস করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে সম্পাদক পরিষদসহ সংবাদমাধ্যমের অংশীজনেরা যে আইনের অপপ্রয়োগের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, সেটাই সত্যে পরিণত করলেন পুলিশ বাহিনীর কর্মকর্তারা। তাঁরা যদি ঘটনা না ঘটলেও উসকানির গন্ধ পান, সংবাদমাধ্যমে কিছু প্রকাশ না পেলেও  ষড়যন্ত্র আবিষ্কার করবেন, তাতে সন্দেহ কী। নির্বাচন সামনে রেখে অতি উৎসাহী পুলিশ কর্মকর্তাদের এসব গায়েবি মামলা নির্বাচনের পরিবেশই শুধু ব্যাহত করবে না, সরকারকেও প্রশ্নের মুখে ঠেলে দেবে।

এসব মামলার তদন্ত করতে নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় কমিশন চেয়ে তিনজন আইনজীবী যে রিট করেছেন, তার সুবিচার প্রত্যাশিত।
  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ ০৪ অক্টোবর ২০১৮

লাখো মামলায় বিএনপি আসামি ২৫ লাখেরও বেশি

সেপ্টেম্বরেই চার হাজার মামলায় সাড়ে তিন লাখ আসামি


দশ বছরে বিএনপির প্রায় ২৫ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ৯৫ হাজারেরও বেশি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে পুলিশি কাজে বাধা, নাশকতা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ আনা হয়েছে। এসব মামলাকে ‘রাজনৈতিক হয়রানিমূলক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে বিএনপি। গত সেপ্টেম্বর মাসেই চার হাজার ৯৪টি মামলায় তিন লাখ ৫৭ হাজার ২১০ জন নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এরমধ্যে এজাহারে নাম উল্লেখ করা হয়েছে ৮ হাজার ৪৮০ জনের। বাকিরা অজ্ঞাতনামা। 

বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। বিএনপি বলছে, নির্বাচন ও আন্দোলনকে সামনে রেখেই এসব ‘গায়েবি’ মামলায় নেতা-কর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে। দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়াকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে তাকে ‘মিথ্যা মামলা’য় কারাগারে রাখা হয়েছে। সিনিয়র নেতারা যেন নির্বাচনের প্রস্তুতি বাদ দিয়ে আদালতে ব্যস্ত সময় কাটান, সে জন্য তাদের নামে মামলা দায়ের করা হচ্ছে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগ বলছে, বিএনপি নির্বাচন বর্জন করুক তা আওয়ামী লীগ চায় না। কেউ অপরাধ করলে তার বিরুদ্ধে মামলা হবে। আদালতের মাধ্যমেই মামলার সত্যমিথ্যা প্রমাণ হবে। এখানে আওয়ামী লীগের কিছু করার নেই। জানা যায়, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দফতর শাখা নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা নিয়ে কাজ করছে। পুলিশের সাবেক কর্মকর্তা ও পাবনার সাঁথিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মো. সালাউদ্দিন খান এসব মামলার তথ্য সংগ্রহ করছেন। 

গত ২০০৭ সাল থেকে গতকাল পর্যন্ত বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলার কী অবস্থা তা নিয়ে একটি ডাটাবেজ তৈরির কাজ চলছে। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের তথ্যমতে, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ৩৪টি মামলা হয়েছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নামে আছে ৩৬টি মামলা। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে ১০৬টি, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে ছয়টি, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের বিরুদ্ধে ১১টি, তরিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ২৩টি, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারের বিরুদ্ধে ২০টি, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার বিরুদ্ধে ৫৪টি, মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে ৮৪টি, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে ৬৭টি, ড. মঈন খানের বিরুদ্ধে দুটি, নজরুল ইসলাম খানের বিরুদ্ধে ১২টি, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে ২৩টি মামলা আছে। এ ছাড়া বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের বিরুদ্ধে ১৩টি, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনের বিরুদ্ধে ১৮টি, মেজর (অব.) হাফিজের বিরুদ্ধে ১৪টি, বরকত উল্লাহ বুলুর বিরুদ্ধে ১২৯টি, মো. শাহজাহানের বিরুদ্ধে ৩১টি, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর বিরুদ্ধে ৮৬টি, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনের বিরুদ্ধে ৪৮টি, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের বিরুদ্ধে ১৪৭টি, খায়রুল কবির খোকনের বিরুদ্ধে ৫১টি, হাবিব-উন-নবী খান সোহেলে বিরুদ্ধে ৪৫৩টি, আসলাম চৌধুরী ও হারুন-অর রশীদের বিরুদ্ধে ৬৭টি, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর বিরুদ্ধে ১৮৭টি, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এহছানুল হক মিলনের বিরুদ্ধে ৫৬টি, ঢাকা মহানগর বিএনপির উত্তর শাখার সভাপতি এম এ কাইয়ুমের বিরুদ্ধে ১৩৬টি, সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসানের বিরুদ্ধে ২৭টি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশারের বিরুদ্ধে ৪৭টি, যুবদল সভাপতি সাইফুল আলম নীরবের বিরুদ্ধে ১৫৮টি, সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর বিরুদ্ধে ২২৭টি, ছাত্রদল সভাপতি রাজীব আহসানের বিরুদ্ধে ১০৬টি এবং সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসানের বিরুদ্ধে ১২৭টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ বিএনপি নেতাদের নির্বাচনের বাইরে রাখতেই নিত্যনতুন মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। মিথ্যা মামলায় বেগম জিয়াকে আজ কারাবন্দী করে রাখা হয়েছে। কিন্তু বিএনপি নেতা-কর্মীরা এখন আর ভীত নন। তিনি বলেন, মামলা মোকাবিলা করে আমরা অভ্যস্ত। বেগম জিয়ার নেতৃত্বে আমরা নির্বাচনে যেতে চাই। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এসব মামলা দিয়েও বিএনপির বিজয় ঠেকিয়ে রাখা যাবে না।

বিএনপির এত বিপুল সংখ্যাক নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দেশে এখন খুন, গুম হচ্ছে। বিভিন্ন ঘটনায় ভৌতিক মামলা হচ্ছে। দলের নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের বিরুদ্ধেও রাজনৈতিক মামলা দায়ের করা হচ্ছে। তিনি বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে সারা দেশে ঢালাওভাবে এ ধরনের গায়েবি মামলা করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, বিরোধী নেতা-কর্মীদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করা। আগামী নির্বাচনে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো যাতে মাঠে থাকতে না পারে সেজন্য এসব মামলা করা হয়েছে।

মামলার রিট শুনানির অপেক্ষায় 

গত সেপ্টেম্বর মাসে বিএনপির জ্যেষ্ঠ আইনজীবীসহ সারা দেশে ৩ লাখেরও বেশি নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে দায়ের করা ৪ হাজার মামলা সংক্রান্ত একটি রিট আবেদন শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। ওই রিট আবেদনে এসব মামলাকে ‘গায়েবি’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। 

গত ২৩ সেপ্টেম্বর রিট আবেদনটি দাখিলের পর ২৪ সেপ্টেম্বর শুনানির জন্য বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি আহমদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চে উপস্থাপন করা হয়। তবে অ্যাটর্নি জেনারেলের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওইদিন শুনানি হয়নি। আগামী সপ্তাহে এ রিট আবেদনটি শুনানির জন্য উপস্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী মাসুদ রানা। 

তিনি বলেন, আমরা আবেদনটি শুনানির জন্য উপস্থাপন করেছিলাম। তবে অ্যাটর্নি জেনারেল সুপ্রিম কোর্টের অবকাশের পর শুনানি করতে চেয়েছেন। এখন অবকাশ শেষ হয়েছে। আমরা শুনানির প্রস্তুতি নিচ্ছি। আশা করছি আগামী সপ্তাহে শুনানি হবে।

আগাম জামিনের চেষ্টায় নেতা-কর্মীরা

সারা দেশের বিভিন্ন ঘটনায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় আসামি হয়েছেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরাও। গ্রেফতার এড়াতে আগাম জামিন নিচ্ছেন সুপ্রিম কোর্টের এসব আইনজীবী। পাশাপাশি বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতাও আগাম জামিনের জন্য সুপ্রিম কোর্টে ভিড় জমাচ্ছেন। এর মধ্যে সরকারি কাজ ও পুলিশকে বাধা দেওয়া সংক্রান্ত নাশকতার অভিযোগে রাজধানীর হাতিরঝিলসহ বিভিন্ন থানায় করা মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া গতকাল হাই কোর্ট থেকে আগাম জামিন পেয়েছেন।

এর আগে গত ১৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীর পল্টন ও আদাবর থানায় দায়ের করা আট মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম ও ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনসহ সাতজনের আগাম জামিন মঞ্জুর করেছেন হাই কোর্ট। জামিনপ্রাপ্ত বিএনপির অন্যান্য নেতারা হলেন, অ্যাডভোকেট আবদুর রেজ্জাক খান, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, অ্যাডভোকেট আক্তারুজ্জামান, অ্যাডভোকেট ফেরদৌস ওয়াহিদা ও অ্যাডভোকেট তাহেরুল ইসলাম তৌহিদ। তার আগে গত ১৭ সেপ্টেম্বর খন্দকার মাহবুব হোসেনসহ ছয় আইনজীবী পল্টন, খিলগাঁও, মতিঝিলসহ বিভিন্ন থানায় দায়ের করা নাশকতার মামলায় আগাম জামিন নিয়েছেন।

বন্ধ হচ্ছে না গ্রেফতার

চট্টগ্রাম থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক ফারুক তাহের জানান, চট্টগ্রামে বিএনপি নেতা-কর্মীদের গণগ্রেফতার ও তাদের বিরুদ্ধে ‘গায়েবি’ মামলা অব্যাহত রয়েছে। আতঙ্কে রয়েছেন বিএনপির কর্মী থেকে শীর্ষ নেতারা। গত দুই সপ্তাহে নগরীর ১৫টি থানায় তিন শতাধিক নেতা-কর্মীর নামে মামলা হয়েছে বলে নগর বিএনপি জানিয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে শতাধিক নেতা-কর্মীকে। গ্রেফতারের ভয়ে অনেকে নিজেদের বাসা-বাড়িতে থাকতে পারছেন না বলেও জানা গেছে।

নগরীর চান্দগাঁও থানায় সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার ও নগর বিএনপির সহসভাপতি মাহবুবুল আলমকে ১ নম্বর আসামি করে ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। পাহাড়তলী থানায় গত ১৭ সেপ্টেম্বর ছয়জনকে আসামি করে পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের হয়েছে। এতে আসামি করা হয়েছে নগর বিএনপির সহ যুববিষয়ক সম্পাদক আজাদ বাঙ্গালীকে। একই দিনে খুলশী থানায় মামলা করা হয়েছে বিএনপির ৪৫ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে। হালিশহর থানায় চারজনকে আসামি করে গত ১১ সেপ্টেম্বর একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে নগর বিএনপির সদস্য আজিজুর রহমান বাবুলকে। একই দিনে নগরীর বন্দর থানায় সাতজনকে আসামি করে পুলিশ একটি মামলা দায়ের করেছে। গ্রেফতার করা হয়েছে যুবদল নেতা মো. এরশাদকে। 

১৫ সেপ্টেম্বর পতেঙ্গা থানায় বিএনপি নেতা মোহাম্মদ রফিক ও মোহাম্মদ লোকমানকে আসামি করে অজ্ঞাত ৭৫ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়েছে।  আকবর শাহ থানায় ৫০ জনকে আসামি করে একটি মামলা করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে আকবর শাহ থানা বিএনপির সভাপতি আবদুস ছাত্তার সেলিম, সহসভাপতি শহিদ উল্লাহ ভূইয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া গোলাপ। আসামির তালিকায় রয়েছেন— থানা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি আইয়ুব খান, সাধারণ সম্পাদক মাইনুদ্দীন চৌধুরী মাইনু, থানা বিএনপি নেতা মহসিন তালুকদার, রফিক উদ্দীন, ফরিদুল আলম ও মো. সেলিম উদ্দীন প্রমুখ। নগরীর ডবলমুরিং থানার পুরনো একটি মামলায় গত সপ্তাহে গ্রেফতার হয়েছেন থানা বিএনপি নেতা নুরুল আলম, জাহাঙ্গীর আলম, মাহবুব আলম ও মো. ইদ্রিছ।

  • কার্টসিঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন/২ অক্টোবর, ২০১৮ 

পেট্রোবাংলার কাজ কি অভিযুক্তদের রক্ষা করা?

সম্পাদকীয়

তিতাসে ঘুষ কেলেঙ্কারি

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মীর মশিউর রহমান ও অপর একজন কর্মকর্তাকে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তলব করলেও তাঁরা হাজির হননি অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়ে। কেউ অসুস্থ হলে তিনি সময় নিতে পারেন। কিন্তু অসুস্থ না হয়েও যদি কেউ অসুস্থ হওয়ার ভান করেন, তাহলে মনে করতে হবে ‘ডাল মে কুছ কালা হ্যায়’।

মীর মশিউর রহমান যেদিন দুদকে চিঠি লিখে তিন সপ্তাহ সময় প্রার্থনা করেছেন, সেদিনই তিনি তিতাসের কার্যালয়ে গিয়েছেন দাপ্তরিক দায়িত্ব পালন করতে। তাহলে দুদকে পাঠানো চিঠির ভাষ্য সঠিক নয়? অসুস্থতার প্রমাণ হিসেবে তিনি নিশ্চয়ই চিকিৎসকের সনদও পেশ করেছেন। এর মধ্য দিয়ে তিতাসের এই শীর্ষ কর্মকর্তা একটি মিথ্যা ঢাকতে গিয়ে অনেক মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছেন। তিতাসের এমডির পদাঙ্ক অনুসরণ করে উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) এস এম আবদুল ওয়াদুদও অসুস্থতার কথা জানিয়ে দুদকের কাছে সময় চেয়েছেন। এই অসুস্থতা রহস্যজনক।

দুদক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সময় প্রার্থনার আবেদন নাকচ করে পুনরায় হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এই নির্দেশ তামিল না হলে আশা করি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতি প্রতিষ্ঠানটি আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে। দুদকের তলবে হাজির না হলে তাঁদের বিরুদ্ধে দুদক আইনের ১৯(৩) ধারায় ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে। তিতাসের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে গ্যাসের অবৈধ সংযোগ, সীমার অতিরিক্ত গ্যাস ব্যবহারের সুযোগ দিয়ে ঘুষ গ্রহণসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন তাঁরা। এ ছাড়া তিতাসের আরও কয়েকজন কর্মকর্তা এই অনুসন্ধানের আওতায় রয়েছেন।

সম্প্রতি প্রথম আলোর অনুসন্ধান ও সরকারি সংস্থার তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ অনেক কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট শিল্পপ্রতিষ্ঠানের অসাধু মালিক পরস্পরের যোগসাজশে রাষ্ট্র তথা জনগণের বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। পেট্রোবাংলার এক অনুসন্ধানে একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে ৭৫ কোটি টাকার বেশি গ্যাস নিয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। পেট্রোবাংলা ওই প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের তাগিদ দিলেও এখন পর্যন্ত তা কার্যকর হয়নি। একটি প্রতিষ্ঠান ৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সুযোগ নিলে সব প্রতিষ্ঠান মিলে রাষ্ট্রের তথা জনগণের ক্ষতির পরিমাণটি সহজেই অনুমান করা যায়। বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠান তিতাস কোম্পানির ২০১৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত শিল্পগ্রাহকের সংখ্যা ৪ হাজার ৬১০। তিতাসের গ্যাস-সংযোগ পাওয়া বেশির ভাগ কারখানা গাজীপুর অঞ্চলে।

সপ্তাহ দুই আগে প্রথম আলোয় খবর প্রকাশিত হলেও তিতাস কর্তৃপক্ষ কুম্ভকর্ণের ঘুমে আচ্ছন্ন আছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা কীভাবে অসুস্থতার অজুহাত তুলে দুদকের নির্দেশনাও অগ্রাহ্য করলেন, সেই জবাবদিহি না চাওয়া দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়ার শামিল। তিতাসে উৎকোচের বিনিময়ে মিটার টেম্পারিং নতুন নয়। কিন্তু কেজি মেপে ঘুষ নেওয়ার নজির সম্ভবত এই প্রথম। আর এ ক্ষেত্রে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে শীর্ষ পদাধিকারেরা যে দায়ী, তা-ই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে প্রথম আলো। এত কিছুর পরও যদি সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তিতাসের দুর্নীতি কেবল তিতাসেই সীমিত নয়। নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলাই বা কী করছে।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব বলেছেন, তিতাসে গ্যাস চুরি হয়, এটি সবার জানা। কিন্তু ধরা না পড়ায় ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু এবার তো হাতেনাতে ধরা পড়লেন। এরপরও যদি তাঁরা শাস্তির বাইরে থাকেন, বুঝতে হবে সরষের ভেতরেই ভূত আছে।

  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ ০৪ অক্টোবর ২০১৮

পরীক্ষার হলে তালা দিলো ছাত্রলীগ, জাবিতে ফের অস্ত্রের মহড়া


ছাত্রী উত্ত্যক্ত করাকে কেন্দ্র করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল ও আলবেরুনী হল ছাত্রলীগের মধ্যে মঙ্গলবার রাতে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষে দুই হলের অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে গুরুতর আহতদের সাভারের এনাম মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে বলে জানান মেডিকেল সেন্টারের টেকনিক্যাল অফিসার মো. জাকারিয়া। সাভার এনাম মেডিকেল হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার রাতে ১২/১৩ জন মুখে, পায়ে ও হাতে আহত হয়ে হাসপাতালে এলেও গুরুতর ৬ জনকে ভর্তি করা হয়েছে।

হাসপাতালে ভর্তিকৃতরা হলেন- অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম (৪৬ ব্যাচ) বিভাগের সোহেল রানা, পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিং (৪৭ ব্যাচ) বিভাগের মিজানুর রহমান, বায়োকেমেস্ট্রি (৪৫) বিভাগের ফারাবি। তারা তিনজনই আলবেরুনী হলের আবাসিক ছাত্র। মীর মশাররফ হোসেন হলের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা (৪৫ ব্যাচ) বিভাগের শিক্ষার্থী আবু হানিফ, একই বিভাগের ৪৩তম ব্যাচের সাকিবসহ তিনজন শিক্ষার্থী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। 

সূত্রমতে, মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আলবেরুনী হল সংলগ্ন চৌরঙ্গী এলাকায় মীর মশাররফ হোসেন হলের আবু সাইদ (ভূতাত্ত্বিক বিভাগ ৪৫) এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের তৌহিদ সাকিব (পদার্থবিজ্ঞান ৪৫) তাদের বন্ধুসহ গান গাইছিলেন। এ সময় এক ছাত্রী আলবেরুনী হলের ৪৬তম আবর্তনের তার কিছু সহপাঠীকে ডেকে এনে তাদের কাছে ওই চারজনের কিরুদ্ধে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ করে।

অভিযুক্ত চারজনই শাখা ছাত্রলীগের কর্মী। কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে আলবেরুনী হলের ছাত্রলীগ কর্মীরা ওই চারজনকে মারধর করে। মারধরের খবর শুনে মীর মশাররফ হোসেন হলের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আলবেরুনী হল ছাত্রলীগকে ধাওয়া করলে সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। এরপর দুই হলের ছাত্রলীগের মধ্যে সারারাত দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে চৌরঙ্গী, মেডিকেল সেন্টার, আলবেরুনী হল প্রাঙ্গণ, জীববিজ্ঞান অনুষদ এই পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।

সংঘর্ষের এক পর্যায়ে মীর মশাররফ হোসেন হলের ছাত্রলীগ কর্মীরা পিস্তল নিয়ে মহড়া দেয়। তারা কয়েক রাউন্ড গুলিও ছুড়ে। পরে আলবেরুনী হলের ছাত্রলীগ কর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে মীর মশাররফ হোসেন হলের ছাত্রলীগ কর্মী খালিদের মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা এবং শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে ৮টি গুলির খোসা পাওয়া যায়।

পরীক্ষা আটকে দিলো ছাত্রলীগ: জাবি ছাত্রলীগের সহসভাপতি আবু সাদাত সায়েমের নেতৃত্বে হামলাকারীদের শাস্তির দাবিতে আলবেরুনী হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা গতকাল সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত জীববিজ্ঞান অনুষদে তালা দিয়ে ভর্তি পরীক্ষা আটকে দেয়। ফলে গতকাল অনুষ্ঠিত ‘ডি’ ইউনিটের সব পরীক্ষার সবক’টি শিফট নির্ধারিত সময় থেকে পিছিয়ে যায়। 

পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম, প্রোভিসি নূরুল আলম ও প্রক্টরিয়াল বডি গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। প্রক্টর সিকদার মো. জুলকারনাইন বলেন, “পরীক্ষা চলাকালে এ ধরনের ঘটনা হতাশাজনক। আমরা এর তদন্ত করে শাস্তির ব্যবস্থা নেব। 

  • কার্টসিঃ মানবজমিন/ ০৪ অক্টোবর ২০১৮

মানবেতর জীবন কোটা আন্দোলনের নেতাদের

টিউশনি নেই, থাকার জায়গার সমস্যা


কারো বাবা মৎস্যজীবী, কারো বাবা রিকশা চালক। বাবার উপার্জনের টাকায় কোনোরকম সংসার চলে। নিজের পড়ার খরচ মেটাতে তাই টিউশনিই তাদের একমাত্র ভরসা। সেই টিউশনিও চলে গেছে। থাকার জায়গা নেই। শেষ আশ্রয়স্থল হলের বরাদ্দকৃত রুমটাও বাতিল করা হয়েছে। আজ আত্মীয়ের বাসায় তো কাল বড় ভাইয়ের বাসায়। অর্থ ও আবাসন সংকটে মানবেতর জীবনযাপন করছেন কোটা আন্দোলনের নেতারা।

আগের মতো বাইরে চলাফেরা করতে পারেন না। মামলার কারণে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তারা। এ অবস্থায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা। মানবজমিনের সঙ্গে আলাপকালে নিজেদের মানবেতর জীবনযাপনের বর্ণনা দিয়েছেন কোটা আন্দোলনের সাত নেতা। 

বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান মানবজমিনকে বলেন, আমাদের পড়ালেখার খরচ থেকে শুরু করে পরিবারকে আর্থিক সহায়তা সবই চলে টিউশনির টাকায়। আন্দোলন চলাকালীন সময়ে নানা ধরনের হুমকি ধমকি দিয়ে হল ছাড়া করা হয়। আমাদের জন্য বরাদ্দকৃত রুম থেকে বই খাতাসহ মূল্যবান জিনিসপত্রগুলো হল থেকে বের করে বারান্দায় ফেলে রাখা হয়। এখন আমরা একধরনের গৃহহীন অবস্থায় আছি। এখন অনেকটা যাযাবরের মতো জীবনযাপন করছি। হল ছাড়া হওয়ার কারণে আজকে এক জায়গায় তো কাল অন্য জায়গায়। গৃহহীন থাকা অবস্থায় আমাদের ওপর সরকারের পক্ষ থেকে এক ধরনের হুমকি আসে। ফলে অনেকেই আমাদের টিউশনি দিতে চায় না। 

সাধারণ মানুষ আমাদের টিউশনি দিতে ভয় পায়। অভিভাবকরা আমাদের টিউশনি দিলে সরকার আবার তাদের বিরুদ্ধে কোনো অ্যাকশন নেয় কিনা সেই ভয়ে আমাদের টিউশনি দিতে চায় না। যে কারণে কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে শুরু করে সামনের সারিতে থেকে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের কারোই এখন টিউশনি নেই। তার ওপর প্রাইভেট গাড়িতে চড়ে প্রতি মাসে এক থেকে দুই বার করে মামলায় হাজিরা দিতে আদালতে যেতে হয়। পাবলিক বাসে আমাদের আক্রমণ হওয়ার ভয় থাকে। সব মিলিয়ে আমরা এখন মানবেতর জীবনযাপন করছি। নুর, মশিউর, আতাউল্লা, মামুন, বিন ইয়ামিন, রাতুল, সোহেলসহ কোটা আন্দোলনের শীর্ষ নেতাদের একই অবস্থা।   

কোটা সংস্কার আন্দোলনের আরেক নেতা রাতুল সরকার বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসে আন্দোলনে যোগদানের পর থেকেই আমার হাতে থাকা টিউশনিগুলো এক এক করে চলে যেতে থাকে। আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত আমরা সকলেই মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। প্রত্যেককে নিজের খরচ নিজেই চালাতে হয়। আমার বাবা মো. শামীম আলী পেশায় একজন জেলে। নদীতে মাছ ধরে তা বিক্রি করে সংসার চলে। দুই ভাই বোনের মধ্যে আমি বড়। বাবার পক্ষে আমার পড়ালেখার খরচ চালানো সম্ভব নয়। আন্দোলনকে কেন্দ্র করে জেলে যাওয়ায় আগের সব টিউশনি হাত ছাড়া হয়ে গেছে। বড় ভাইদের দিয়ে নতুন করে টিউশনির খোঁজ নেয়া হলে রাতুল নামটি শোনার পরে অভিভাবকরা বলে পরে জানাবো। আগে যেহেতু পুলিশে ধরে নিয়ে গেছে তাই অভিভাবকদের মনে সংশয় কাজ করে। আবার নতুন করে যদি ঝামেলা হয়। তারা যদি কোনো বিপদে পড়ে। এসব বিষয় মিলিয়ে অভিভাবকরা এখন আর আমাকে ডাকে না।

পড়ালেখা যেহেতু শেষ হয় নি তাই নতুন করে কোনো চাকরির জন্য আবেদন করতে পারছি না। গাজীপুরের ভাওয়াল সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র রাতুল বলেন, আমাদের গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর বাঘা থানায়। আগে যে মেসে থাকতাম সেখানেও থাকতে নিষেধ করে দিয়েছে। স্থায়ীভাবে কোনো ভাড়া বাসায় উঠবো সেই সুযোগও নেই। এখানে ওখানে আত্মীয়ের বাসায় থাকতে হয়। নিরাপত্তার কারণে তারাও এখন আর থাকতে দিতে চায় না।  

কোটা সংস্কার আন্দোলনের আলোচিত নেতা নুরুল হক নুর বলেন, ১৭ই ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া আন্দোলনের নেতাকর্মীদের হাতেগোনা যে দুই একটা টিউশনি আছে তাতে যেতেও ভয় পাচ্ছেন। যদি ছাত্রলীগ আবার তাদের ওপর হামলা করে। ইতিমধ্যে মশিউর, রাতুলসহ একাধিক নেতাকর্মীর ওপর একাধিকবার হামলা হয়েছে। মশিউরের হাতে ককটেল ধরিয়ে মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছে। কাজেই আমাদের সকলের মনে ভয় ও শঙ্কা কাজ করে। টিউশনি শেষে রাতে নিরাপদে বাসায় ফিরতে পারবো তো। এই শঙ্কা থেকে আমাদের স্বাভাবিক ও নিরাপদ জীবন বিপন্ন হয়ে পরেছে। প্রত্যেকটি হল যেহেতু ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে তাই হলেও আমরা নিরাপদ নই। আমাদের আবাসিক রুমগুলো ইতিমধ্যে তারা দখল করে নিয়েছে। একা বাসে ওঠার সাহস পাই না। এই বুঝি ছাত্রলীগ হামলা করে। ঝুঁকি নিয়ে অনেকেই ক্লাসে যায়। এমনকি আমরা পাবলিক বাসে ওঠা বা একা চলাফেরা করাটা ঝুঁকিপূর্ণ মনে করি। কারণ, যে কোনো সময় তারা পেছন থেকে আমাদের ওপর আক্রমণ করতে পারে। 

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা পিএম সুহেল বলেন, আন্দোলনের সময় আমাকে জেলে নিয়ে যাওয়ার পর সব টিউশনি চলে গেছে। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে তাদের সঙ্গে যোগযোগ করা হলে অভিভাবকরা জানায় নতুন টিউটর নিয়েছি। এখন আপনাকে নেয়ার সুযোগ নেই। ফলে নতুন করে টিউশনির খোঁজ করলে তারা বলে এদের পুলিশ ধরে নিয়েছিল। ঝামেলা আছে। টিউশনি দেয়া যাবে না। অথচ তারা একবারও বোঝার চেষ্টা করে না কেন  আমাদের পুলিশ ধরে নিয়েছিল। 

এদিকে বাড়িওয়ালা বলে দিয়েছে বাসা ছাড়তে হবে। রাতের বেলা পুলিশ এসে ধরে নিয়ে যায়। ঝামেলা করে। ডিবি এসে বাড়িওয়ালাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। আমার বাবা নেই। ৪ ভাই ও এক বোনের মধ্যে আমি চতুর্থ। নিজের খরচ নিজে চালাই। ছোট ভাইয়ের পড়া ও মায়ের খরচও আমাকে চালাতে হয়। আমরা ছাত্র মানুষ। টিউশনি করতে না পারলে না খেয়ে থাকতে হয়। এই মুহূর্তে হাতে একটাও টিউশনি নেই। কিভাবে চলছি আল্লাহই ভালো জানে। বড় দুই ভাই অন্যের জমি বরগা চাষ করে কোনোমতে খেয়েপরে আছে। 

কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা মশিউর রহমান বলেন, ছাত্রলীগ হলের সিট বণ্টন করে। আমরা যেহেতু তাদের বিপক্ষে চলে গেছি তাই আমাদের সিটগুলো বাতিল করে দেয়া হয়েছে। আমরা এখন বাস্তুহারা। আজ ভাইয়ের বাসায় কাল বন্ধুর বাসায়, এভাবে থাকতে হচ্ছে। তাও স্থায়ী ভাবে নয়। তার ওপর যে দুই একটা টিউশনি ছিল সেগুলোও চলে গেছে। বাবা গ্রামের বাড়িতে রিকশা চালালেও বর্তমানে বেকার। নিরাপত্তার স্বার্থে অনেক দূরে থাকতে হয়। দুই থেকে তিন ঘণ্টা জার্নি করে ক্লাসে আসতে হয়। তার ওপর অনিরাপত্তার বিষয়টাতো থেকেই যায়। এই বুঝি সরকারের ছাত্র সংগঠন হামলা করে। 

বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতা ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন বলেন, আগে আমি ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। এই আন্দোলনে আমরা যারা লিডিং পজিশন বা নেতৃত্বে ছিলাম তারা কেউ এখন হলে থাকতে পারছি না। হলে আমাদের কারোর কোনো সিট নেই। সবার সিট বাতিল করে দখল করা হয়েছে। দুইদিন বাদেই আমাদের সমাবর্তন। সরকারি দলের ছাত্রনেতারা আমাদের সঙ্গে এই পরিমাণ দুর্ব্যবহার করছে যে হলে এসে বন্ধুদের সঙ্গে দুটি ছবি তুলবো, হলে যাবো এই সুযোগটুকুও আমরা পাচ্ছি না। গত ৫ বছরের শিক্ষা জীবনে এটা কত যে কষ্টকর তা বলে বোঝানো যাবে না।

গতকাল হলে যাওয়ার পর আমাকে হুমকি দেয়া হয়েছে। যেন হলে না আসি। অথচ ৫ বছরের শিক্ষা জীবনে হলের জন্য এত কিছু করলাম আজ হলে আমার স্থান হচ্ছে না। একটি যৌক্তিক আন্দোলন করেছি। যার সফলতা অনেকটা দ্বারপ্রান্তে। কিন্তু আদৌ কি আমরা সরকারি চাকরি পাবো। বাবা মো. ছিদ্দিকুর রহমান একজন প্রাইমারি শিক্ষক। বাবার কষ্ট লাঘব করতে আমাকে কম বেশি টিউশনি করতে হয়। কিন্তু আজ আমরা না পারছি টিউশনি করতে। না পাচ্ছি একটি ভালো চাকরির নিশ্চয়তা। তার ওপর মিথ্যা মামলার খড়গ তো মাথার ওপর ঝুলছে। আমরা সরকারের বিপক্ষে না। আমরা চাই সরকারের পক্ষ থেকে মামলাগুলো প্রত্যাহার করে আমাদের আগের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়া হোক। 

যুগ্ম আহ্বায়ক বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, দীর্ঘ ৭ মাস আন্দোলন করাতে আমাদের অনেক আগেই হল থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। যারা হলে ছিলাম তারা সবাই টিউশনি নির্ভর ছিলাম। এখন আমাদের টিউশনি নেই। আমরা না পারছি নতুন করে টিউশনির ব্যবস্থা করতে না পাচ্ছি কোনো চাকরি। আমরা এখন একটা অনিরাপদ অবস্থায় আছি। আমাদের অনেকেই ক্লাসে যেতে পারছে না। পরীক্ষার হলে বসতে পারছে না। এদিকে আবাসন সংকট দেখা দিয়েছে। 

আত্মীয়স্বজনদের বাসায় ২ থেকে ৩ দিনের বেশি থাকতে পারি না। ব্যক্তিগত নিরাপত্তার স্বার্থে অনেক সময় তারা আমাদের থাকতে দিতে চান না। টিউশনি ও চাকরিতো অনেক পরের কথা। এ অবস্থায় আমাদের ভবিষ্যৎ অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। 
  • কার্টসিঃ মানবজমিন/ ০৪ অক্টোবর ২০১৮

Wednesday, October 3, 2018

শাসক দলের শোচনীয় অবস্থা

বদরুদ্দীন উমর

৩০ সেপ্টেম্বর বিএনপি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক জনসমাবেশ করেছে। এই সমাবেশের রিপোর্টে দৈনিক যুগান্তর বলছে, ‘জনসভা রূপ নেয় জনসমুদ্রে’। অন্যদিকে প্রথম পৃষ্ঠাতেই প্রকাশিত রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এই সমাবেশ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘বিএনপির সমাবেশই প্রমাণ করেছে দলটি ক্রমেই সংকুচিত ও জনবিচ্ছিন্ন হচ্ছে। তাদের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের কারণেই দলটি জনসমর্থন হারিয়ে ফেলেছে’ (যুগান্তর, ০১.১০.২০১৮)।

জনসমাবেশের রিপোর্টে যুগান্তরে যা বলা হয়েছে তা হল, ‘সকাল ১০টার পর থেকেই ঢাকা মহানগর ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী-সমর্থকরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশে আসতে শুরু করে। বেলা ৩টার মধ্যেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কানায় কানায় ভরে ওঠে। খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আয়োজিত জনসভা রূপ নেয় জনসমুদ্রে। উদ্যান পেরিয়ে ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনের মূল ফটকের সামনের অংশ ও মৎস্যভবন থেকে শাহবাগ মোড় পর্যন্ত সড়কটিতেও তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না’ (যুগান্তর, ০১.১০.২০১৮)।




সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে রোববার বিএনপির সমাবেশের একাংশ। ছবি: যুগান্তর

শুধু এই রিপোর্ট নয়, সমাবেশের যে ছবি বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে তার থেকেও এই রিপোর্টে বর্ণিত সমাবেশের অবস্থার সমর্থন পাওয়া যায়। কাজেই কেউ একজন বিএনপির সমর্থক না হলেও এই বাস্তব অবস্থাকে তার স্বীকার করতেই হবে যে, ৩০ সেপ্টেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির জনসভায় অগণিত লোকের সমাবেশ হয়েছিল। তাদের সমাবেশ দেখে এটা মোটেই প্রমাণিত হয় না যে, বিএনপি জনবিচ্ছিন্ন বা বিএনপির অবস্থা ২০১৪ সালের থেকে সংকুচিত হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাদের সাধারণ সম্পাদক এ কথাই বলছেন!

এ থেকে বোঝার কি অসুবিধা আছে, আওয়ামী লীগ নিজেই বাস্তবতা থেকে কতখানি বিচ্ছিন্ন? বোঝার কি অসুবিধা আছে যে, দেশের পরিস্থিতি অনুধাবনের সামান্যতম ক্ষমতাও তাদের এখন নেই?

বোঝার কোনো অসুবিধা নেই যে, তাদের এখন দিশেহারা অবস্থা। তাদের পায়ের তলা থেকে যে মাটি সরে যাচ্ছে বা ইতিমধ্যেই সরে গেছে এই উপলব্ধি তাদের একেবারেই নেই। এ অবস্থায় তাদের ভরসা শুধু নির্বাচন কমিশন ও পুলিশ। 

জনগণ বা ভোটাররা নয়, নির্বাচন কমিশন ও পুলিশের আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি আনুগত্যের হিসাব করেই তারা আগামী নির্বাচনে জয়ের স্বপ্ন দেখছে! এই স্বপ্নের সঙ্গে বাস্তব পরিস্থিতির কোনো সম্পর্ক নেই। নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে এবং আওয়ামী লীগের দুরবস্থা যতই প্রকট হচ্ছে, ততই বেশি করে সরকারি মহলের আবোলতাবোল কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে। এসব কথা তাদের প্রতি জনসমর্থন বৃদ্ধি না করে জনগণের কাছে হাসির ও রঙ্গরসের খোরাক জোগাচ্ছে। এর পরিণতি যে তাদের জন্য ভালো হতে পারে না, এটা বলাই বাহুল্য।

২০০৯ সাল থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনে সব স্তরের জনগণের প্রাণ ওষ্ঠাগত। ২০১৪ সালের অগ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরবর্তী এই পাঁচ বছরে অবস্থা অনেক খারাপ হয়েছে। এখন তাদের ক্ষমতার মেয়াদ শেষ হওয়ার পথে। কিন্তু নির্বাচনের কাছাকাছি মুহূর্তে এসেও তারা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং সড়ক পরিবহন আইনের মতো গণতন্ত্র ও শ্রমিক বিরোধী আইন পাস করতে কোনো দ্বিধাবোধ করেনি। উপরন্তু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে তারা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ছে এই আওয়াজ তুলে মহা-আনন্দে আছে। কিন্তু তাদের এসব গণবিরোধী কাজ এবং অসার কথাবার্তা জনগণের মধ্যে কী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে এটা বোঝার মতো ক্ষমতা তাদের আর নেই। শুধু তাই নয়, তাদের অবস্থা এখন এমনই যে, তারা এসব বোঝাবুঝির পরোয়া পর্যন্ত করে না। যে কোনো ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত দলের পক্ষে এর থেকে করুণ অবস্থা আর কী হতে পারে?

বিএনপির এই জনসমাবেশ ঠেকানোর জন্য সরকার এবং সরকারি দল ও তাদের জোটের শরিকরা সব রকম চেষ্টাই করেছে, তবে এবার জনগণের চাপে সমাবেশের অনুমতি না দিয়ে তারা পারেনি। তাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী এই সমাবেশ সম্পর্কে এক হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, তাদের ঢাকার প্রতিটি অলিগলিতে পর্যন্ত ঠেকানো হবে। কেন ঠেকানো হবে? যে কোনো দলই জনসভা, জনসমাবেশ ডাকতে পারে এবং ডাকার অধিকার তাদের আছে। কাজেই অন্য বিরোধী দল সমাবেশ ডাকলে তাদের লোকজনকে সমাবেশে আসতে বাধা দেয়া হবে কেন? এভাবে বাধা দেয়ার এখতিয়ার তারা কোথায় পেলেন?

তারা নিজেদের সুবিধামতো সব সময় যে সংবিধানের কথা বলেন, সেই সংবিধানের কোথায় এ কথা আছে যে সরকার ছাড়া বিরোধী দলগুলোর মিছিল, সমাবেশ ইত্যাদি করা বেআইনি? কোথায় আছে সরকার ও সরকারি দলের এখতিয়ার এক্ষেত্রে বাধা দেয়ার?

তারা যে ধরনের নির্বাচনই হোক, নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় বসেছেন; কিন্তু তার দ্বারা জনগণ কোনো ব্যক্তিকে বা কোনো দলকে রাজা বা রাজার দল বানাননি। নির্বাচনে জয়ের অর্থ সরকারি ক্ষমতা নিলামে ওঠা নয়। নির্বাচনে জয়ের অর্থ সম্পত্তি নিলামের মাধ্যমে হস্তগত করা নয়। এক কথায় সরকার কারও, কোনো দল বা ব্যক্তির সম্পত্তি নয়। সরকার গঠনের অর্থ দেশের শাসন কাজ একটা নির্দিষ্ট মেয়াদে পরিচালনার জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত হওয়া। এর থেকে বেশি কিছু নয়। নির্বাচনের মাধ্যমে কেউ চিরস্থায়ী জমিদারি কেনে না। কিন্তু বর্তমানে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত সরকারি দলের হাবভাব, কথাবার্তা ও কাজকর্ম এমন যে মনে হয় নির্বাচনের মাধ্যমে নিলামে ওঠা জমিদারি তারা কিনে দেশের মালিক হয়েছেন।

এ কথা সবাই জানে যে, ২০১৪ সালের নির্বাচন করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ প্রমাণ করেছে, কোনো সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক নির্বাচন অনুষ্ঠান তাদের দ্বারা সম্ভব নয়। নির্বাচন কমিশনকে মুঠোর মধ্যে রেখে এবং পুলিশ প্রশাসনকে দলীয়ভাবে ব্যবহার করে তারা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন করেছিল।

এ কারণেই আগামী সাধারণ নির্বাচনে যাতে ২০১৪ সালের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হতে পারে এজন্য বিরোধী দলগুলো এখন পুরোদমে মাঠে নেমেছে। এমনকি ২০১৪ সালে যারা করণীয় হিসেবে নিজেদের সামনে কিছুই দেখেনি, তারাও এখন ঐক্যবদ্ধ হয়ে জোট গঠন করছে এবং মহাজোট গঠন করার উদ্যোগ নিচ্ছে। এই প্রচেষ্টার প্রতি যে জনগণের ব্যাপক সমর্থন আছে সেটা নানাভাবেই দেখা যাচ্ছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করে তারা সংবাদপত্র, টেলিভিশন ইত্যাদি প্রচারমাধ্যম থেকে নিয়ে বিরোধী দল ও ব্যক্তির কণ্ঠরোধের যে প্রচেষ্টা নিয়েছে এটা হল ডুবন্ত অবস্থায় খড়কুটো ধরার মতো ব্যাপার। কিন্তু খড়কুটো ধরে যে কারও পক্ষে রক্ষা পাওয়া সম্ভব নয় এটা জানা কথা। এর দ্বারা আওয়ামী লীগেরও শেষ রক্ষার সম্ভাবনা নেই।

জনগণ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পুলিশি সন্ত্রাস, নির্বাচন কমিশন ব্যবহার ইত্যাদির মাধ্যমে কারচুপির চেষ্টা সর্বতোভাবে করলেও যে পরাজয় ঠেকানো যায় না এর একেবারে সাম্প্রতিক উদাহরণ হল মালদ্বীপের নির্বাচন। এই নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ইয়েমেনি সব রকম দুর্নীতি ও দমননীতির আশ্রয় গ্রহণ করলেও শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়ে ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত হয়েছেন। পরিপূর্ণ জনবিচ্ছিন্নতাই এর কারণ। এবং এই জনবিচ্ছিন্নতা হয়েছে দেশের সম্পদ অবাধে ও বেপরোয়াভাবে লুটপাট এবং তার প্রয়োজনে জনগণের ওপর চরম ফ্যাসিস্ট নির্যাতনের কারণে। এভাবে দুর্নীতি ও নির্যাতন চালিয়ে কিছুদিন ক্ষমতায় থাকা যায়; কিন্তু ক্ষমতা বেশিদিন ধরে রাখা যায় না।

ক্ষমতাসীন থাকা অবস্থায় বেপরোয়া দুর্নীতি ও নির্যাতন করলে তার ফলে শেষ পর্যন্ত শাসক দলের মাথা থেকে বুদ্ধি বিদায় নেয়। বাংলাদেশের শাসক দল এবং তাদের পদলেহী শরিকরা যেভাবে কথাবার্তা বলে আসছেন তার মধ্যে বুদ্ধি ও কাণ্ডজ্ঞানের পরিচয় আর পাওয়া যায় না। ৩০ সেপ্টেম্বর বিএনপির জনসমাবেশ সম্পর্কে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী যে মন্তব্য করেছেন, তার থেকে বোঝা যায় এটা বুদ্ধির কাজ নয়। দৃষ্টিশক্তির পরিচায়কও নয়। বুদ্ধি তাদের মাথা থেকে বিদায় নিয়েছে এবং দৃষ্টিশক্তি রহিত হয়েছে। এর পরিণামে যা হওয়ার তাই হবে।

  • বদরুদ্দীন উমর : সভাপতি, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল
  • কার্টসিঃ যুগান্তর / ০২ অক্টোবর ২০১৮

মৃত, প্যারালাইজড রোগী যখন ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগকারী!

গোলাম মোর্তোজা

প্যারালাইজড রোগী, এমনকি মৃত ব্যক্তি যদি গাড়ি ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করতে পারেন, তবে বিদেশে অবস্থান করেও জনসভায় ‘উসকানিমূলক বক্তব্য’ রাখতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পুলিশ তাকেও মামলার আসামি করতে পারে। অবাক না হয়ে, আসুন গত কয়েকদিনের কয়েকটি পত্রিকার শিরোনাম দেখে নেই।

ঘটনাই ঘটেনি, মামলা করে রেখেছে পুলিশ: প্রথম আলো, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮

কেন এত ‘ভৌতিক মামলা’?: ডয়চে ভেলে, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮

আজগুবি মামলায় ভুতুড়ে আসামি: যুগান্তর, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮

গায়েবি মামলা এবার ফখরুলদের বিরুদ্ধে: প্রথম আলো, ২ অক্টোবর ২০১৮

লাখো মামলার জালে বিএনপি: বাংলাদেশ প্রতিদিন, ৩ অক্টোবর ২০১৮

এমন আরও অনেক শিরোনাম উল্লেখ করা যায়। সেদিকে না গিয়ে ‘যুগান্তর’র প্রতিবেদনটির দিকে দৃষ্টি দেওয়া যাক-

ক. নুরুল ইসলাম মারা গেছেন ২০১৮ সালের ৩১ আগস্ট। সেদিনই আজিমপুর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। মারা যাওয়ার ৫ দিন পর, ৫ সেপ্টেম্বর নুরুল ইসলাম কামরাঙ্গীরচরে গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছেন। সেই অভিযোগে কামরাঙ্গীরচর থানায় ৫ সেপ্টেম্বর তার নামে মামলা হয়েছে।

অগ্নিসংযোগ ও গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে আজিজুল্লাহর নামে চকবাজার থানায় মামলা হয়েছে ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮। আজিজুল্লাহ গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছেন মারা যাওয়ার প্রায় ২ বছর পর। তিনি মারা গেছেন ২০১৬ সালের মে মাসে।

খুলনার যুবদল নেতা ফয়সল গাজী ভারতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান এ বছরের ২৯ আগস্ট। ২ সেপ্টেম্বর দায়ের করা দাকোপ থানার নাশকতার মামলার আসামি ফয়সলও। মারা যাওয়ার তিন দিন পর তিনি নাশকতা করেছেন।

খ. কুমিল্লার মুরাদনগরের আহাদ খলিফা থাকেন বাহরাইনে। দেশে এসেছিলেন ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে। ২০১৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি বাহরাইনে ফিরে গেছেন। ফিরে যাওয়ার প্রায় ৮ মাস পরে মুরাদনগর থানায় ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ তার নামে মামলা হয়েছে।

গ. ১০ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টায় চিকিৎসার জন্যে ছেলেকে নিয়ে সাইয়েদুল আলম সিঙ্গাপুরে গিয়েছেন। তিনি গাজীপুর জেলার বিএনপি নেতা। ওইদিন সকাল ১১টায় বিএনপি একটি মানববন্ধন করে। নেতাকর্মীদের লাঠিপেটা করে পুলিশ। যানবাহন ভাঙচুরের অভিযোগে পুলিশ একটি মামলা করে। সাইয়েদুল আলমও সেই মামলার আসামি। অর্থাৎ তিনি যখন উড়োজাহাজে আকাশে, সিঙ্গাপুরেও পৌঁছাননি সেই সময় তিনি গাজীপুরে যানবাহন ভাঙচুরে অংশ নিয়েছেন।

ঘ. ৮৬ বছরের প্যারালাইজড রোগী আবদুল খালেক সরকার। ৭ সেপ্টেম্বর বগুড়ার ধুনট থানায় পুলিশ একটি নাশকতার মামলা করেছে। সেই মামলার একজন আসামি খালেক সরকার।

ঙ. ৩ সেপ্টেম্বর রাজশাহীর তানোর থানায় পুলিশ একটি নাশকতার মামলা করে। সেই মামলার একজন আসামি জামালউদ্দিন। সেই সময় তিনি হজ পালনের জন্যে সৌদি আরবে অবস্থান করছিলেন।

২.  মৃত ব্যক্তি, বৃদ্ধ প্যারালাইজড রোগী, হজ বা চিকিৎসার জন্যে বিদেশে থাকা ব্যক্তি, প্রবাসীদের নামে নাশকতা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ-পুলিশের উপর আক্রমণ ও পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে মামলা দেওয়া হয়েছে। মামলার আসামির তালিকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষকও আছেন। কোনো মামলায় ৩০ জন কোনো মামলায় ৯০ জনসহ অজ্ঞাতসংখ্যক আসামি। মামলাগুলোর প্রায় সবই বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।

কয়েকদিন আগে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিবের নামে মামলা হয়েছিল। সেই লেখার শিরোনাম করেছিলাম ‘বাদী কিছুই জানেন না, ভূত এসে মামলা করে গেল’!

এবার আর ভূতের ব্যাপার নেই। প্রায় সব মামলা করেছেন পুলিশ কর্তারা নিজেরা বাদী হয়ে।

সারা দেশে এমন মামলার প্রকৃত সংখ্যা এখনও অজানা।

বাংলাদেশ প্রতিদিন’র ৩ অক্টোবরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত দশ বছরে বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে ৯৫ হাজারেরও বেশি মামলা দেওয়া হয়েছে এবং আসামির সংখ্যা ২৫ লাখেরও বেশি।

শুধুমাত্র সেপ্টেম্বর মাসেই মামলা হয়েছে প্রায় ৪ হাজার, আসামির সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ!

গণমাধ্যম এখন পর্যন্ত অল্প কিছু সংখ্যক মামলার বিষয়ে অনুসন্ধান করেছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, যে অভিযোগে মামলা হয়েছে, সেই ঘটনা সেসব এলাকায় ঘটেনি। অথচ মামলা হয়েছে।

৩.  গত ৩০ সেপ্টেম্বর বিএনপি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করেছে। পুলিশ ২২টি শর্ত সাপেক্ষে জনসভার অনুমতি দিয়েছিল। শর্ত মেনেই বিএনপিকে জনসভা করতে দেখা গেছে।

জনসভায় দলীয় কর্মীদের আন্দোলন ও নির্বাচনের প্রস্তুতির আহ্বান জানিয়ে ‘সরকারবিরোধী উসকানিমূলক’ বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। আসামি করা হয়েছে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ,মঈন খান, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়দেরকে।

জনসভায় ‘উস্কানিমূলক বক্তব্য’ দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত ও মামলার আসামী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে আমেরিকায় অবস্থান করছেন। রিজভী আহমেদ দেশে থাকলেও জনসভায় উপস্থিত ছিলেন না। ‘উস্কানিমূলক বক্তব্য’ দেওয়ার অভিযোগের মামলায় পুলিশ তাকেও আসামি করেছে।

‘উস্কানিমূলক বক্তব্যে’ তারা কী বলেছেন, সুনির্দিষ্ট করে তা কোথাও উল্লেখ করা হয়নি।

মামলার বিবরণীতে বলা হয়েছে, রোববার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাত সোয়া ৮টার দিকে মগবাজার এলাকায় বিএনপি সমর্থকরা হাত বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়, হত্যার উদ্দেশে পুলিশের ওপর আক্রমণ চালায়, যানবাহন ভাঙচুর করে এবং পুলিশের কাজে বাধা দেয়। বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের নির্দেশেই এই অপরাধ সংগঠিত হয়েছে বলে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তারকৃত কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পেরেছে পুলিশ। ভাঙচুরের শিকার গাড়িগুলো দ্রুত চলে যাওয়ায় গাড়ির নাম্বার সংগ্রহ করতে পারেনি পুলিশ। আলামত হিসেবে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে পাঁচটি বাঁশের লাঠি, দেড় লিটার পেট্রোল, বিস্ফোরিত ককটেলের অংশবিশেষ জব্দ করেছে।

একাধিক গণমাধ্যমের সংবাদকর্মী ঘটনাস্থলে গিয়ে দোকানদার, পথচারী, ফুটপাতের শরবত বিক্রেতা, স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা কেউ এই এলাকায় সেদিন এমন কোনো ঘটনা ঘটতে দেখেননি। এমন কি স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারাও ককটেল বিস্ফোরণ বা ভাঙচুরের কোনো ঘটনার কথা জানেন না।

গায়েবি মামলার সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। ‘অজ্ঞাতনামা’র তালিকায় যে কাউকে যে কোনো সময় আসামি করার পথ উন্মুক্ত থাকছে।

এখন পর্যন্ত বিএনপি মহাসচিবের নামে মামলার সংখ্যা ১০৬টি। অধিকাংশ নেতার নামে মামলা শতাধিক। কারো কারো নামে দুই’শ। সবার থেকে এগিয়ে আছেন হাবিবুন নবী খান সোহেল। তার নামে মামলার সংখ্যা ৪৫৩টি।

৪. রাজনীতি বা নির্বাচনী রাজনীতিতে বক্তব্য-পাল্টা বক্তব্য, অস্বাভাবিক বিষয় নয়। অস্বাভাবিক নয়, দলগুলোর নেতাকর্মীদের মধ্যে সাংঘর্ষিক পরিবেশ তৈরি হওয়াও। তা নিয়ন্ত্রণের জন্যে জনগণের শেষ ভরসা আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। এমনিতেই পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি জনআস্থায় একটা ঘাটতি আছে। সেরকম অবস্থায়, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি জাতীয় নির্বাচনের চার মাসেরও কম সময় আগে, গায়েবি মামলার প্রেক্ষিতে পুলিশের প্রতি জনআস্থার বিষয়টি কেমন হবে বা হতে পারে? সবার জন্যে সমান সুযোগ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনী পরিবেশ- তা কী শুধু কথা এবং কাগজেই সীমাবদ্ধ থাকবে?
  • কার্টসিঃ The Daily Star/ Oct 3, 2018 

পদ্মা সেতুতে পারাপার কবে!

  • নির্বাচনের আগে পদ্মা সেতু চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার
  • আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে চালু করা প্রায় অসম্ভব 
  • পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে গেছে বহুগুণ 
  • সময় বাড়লে সেতু নির্মাণের ব্যয়ও বেড়ে যাবে





প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আগামী ডিসেম্বরে পদ্মা সেতু দিয়ে পারাপার করা যাবে না। সেতু তৈরির মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হচ্ছে। তবে শেষ পর্যন্ত ২০২১ সালের আগে সম্পূর্ণ কাজ শেষ না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

তবে সব ঠিকাদারই চান, সময় কমপক্ষে আরও দুই বছর বাড়ানো হোক। কিন্তু সরকার রাজনৈতিক বিবেচনায় আপাতত এক বছরের বেশি মেয়াদ বাড়াতে চাইছে না। এমনিতেই দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগের কারণে বিশ্বব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক অর্থায়নকারীদের সঙ্গে সরকারের টানাপোড়েন এই প্রকল্পের রাজনৈতিক গুরুত্ব বাড়িয়ে দেয়। এসব বিবেচনায় নিয়েই সরকার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পদ্মা সেতু চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু এখন বিলম্বের কথা বলতে চাইছে না।

এমনিতেই পদ্মা সেতুর প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে গেছে বহুগুণ। ১০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প হয়ে গেছে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। তারপরও সময়ের মধ্যে হচ্ছে না সেতু নির্মাণের কাজ। এখন সময় বাড়লে সেতু নির্মাণের ব্যয়ও বেড়ে যাবে। কত বাড়বে, সেই হিসাব এখনো করা হয়নি। বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, প্রকল্প শেষ করতে সময় বেশি লাগলে এর ব্যয় যেমন বাড়ে, তেমনি এর অর্থনৈতিক সুবিধাও কমে।

এসব বিবেচনায় সরকার প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বাড়ানোর জন্য পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব পাঠিয়েছে। এ সময় মেনে নিলে পদ্মা সেতুর কাজ শেষ করার সময়সীমা দাঁড়াবে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। তবে ঠিকাদার, এমনকি সেতু বিভাগের কর্মকর্তারাও মনে করছেন, এই সময়ের মধ্যে সেতুর কাজ শেষ হবে না।

মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ পাওয়া চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) সময়সীমা আরও দুই বছর বাড়ানোর পক্ষে। নদীশাসনের কাজ করছে চীনেরই আরেক প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন। তারাও সময় বাড়াতে সরকারকে চিঠি দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ ছাড়া, প্রকল্পের কাজ তদারকিতে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কোরিয়ান এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশন সেতু বিভাগকে ২০ মাস সময় বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে। এসব প্রস্তাব অনুসারে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০২০ সালে।








এখন পর্যন্ত মূল সেতুর ৪১টি পিলারের মধ্যে ১৪টির কাজ শেষ হয়েছে। গত ২৯ সেপ্টেম্বর, শরীয়তপুরের জাজিরা পয়েন্ট।  ছবি: প্রথম আলো

প্রকল্প–সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় সরকার নির্বাচনের আগে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকল্পের সময়সীমা বৃদ্ধির ঘোষণা দিতে চাইছিল না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়েই এক বছর সময় বাড়াচ্ছে। কেননা, গত আগস্ট পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি ৫৭ দশমিক ৫ শতাংশ। ফলে বাকি তিন মাসে বাকি ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ কাজ শেষ করার কোনো সুযোগই নেই। কিন্তু প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি না করলে ঠিকাদারের বিল দেওয়া যাবে না। এই জটিল পরিস্থিতির কারণে সময় বৃদ্ধি বাধ্যতামূলক হয়ে পড়ে।

‘ফাস্ট ট্র্যাক’ বা অগ্রাধিকার প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত পদ্মা সেতু নির্মাণের বিলম্বের কারণ হিসেবে সেতু বিভাগ চারটি কারণের কথা বলেছে। যেমন: নদীর তলদেশের গভীরে নরম মাটির স্তর থাকায় সেতুর পিলার স্থাপনে সমস্যা, ২২টি পিলারের নতুন নকশা প্রণয়ন, নদীশাসনকাজে বিলম্ব এবং নদীভাঙন ও প্রবল স্রোত।

মূল সেতু ও নদীশাসনই হচ্ছে প্রকল্পের সবচেয়ে বড় কাজ। প্রকল্পের অগ্রগতি–সংক্রান্ত নথি অনুসারে, আগস্ট পর্যন্ত মূল সেতুর কাজ হয়েছে ৬৬ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতি মাসে গড় অগ্রগতি ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এই গতিতে এগোলে বাকি কাজ শেষ করতে অন্তত দুই বছর লাগবে। নদীশাসনের কাজের অগ্রগতি ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ। প্রতি মাসে গড় অগ্রগতি ১ শতাংশের কম। এই গতিতে এগোলে কাজ শেষ হতে পাঁচ বছর সময় লেগে যেতে পারে।

সেতু বিভাগের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, এখন পর্যন্ত মূল সেতুর ৪১টি পিলারের মধ্যে ১৪ টির কাজ শেষ। পিলারের ওপর ৫টি স্টিলের কাঠামো (স্প্যান) ইতিমধ্যে বসেছে। এখন সেতুর সাড়ে ৭০০ মিটার দৃশ্যমান। তবে আগামী তিন মাসের মধ্যে আর কোনো স্প্যান বসার সম্ভাবনা নেই। কারণ, পাইলিংয়ের জটিলতার কারণে ৭৫০ মিটারের সঙ্গে সংযোগ করার জন্য প্রয়োজনীয় পিলার বসানো যায়নি। সব মিলিয়ে এখন যে গতিতে কাজ চলছে, তাতে ২০২১ সালের আগে কাজটি শেষ হবে না।

জানতে চাইলে প্রকল্পের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের প্রধান জামিলুর রেজা চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, মূল সেতুর কাজ এক বছর ও নদীশাসনের দুই বছর সময় বেশি লাগতে পারে। সময় বৃদ্ধির ফলে এর প্রভাব ও ব্যয় বৃদ্ধির সম্ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যত দেরিতে সেতু চালু হবে, তত এর ব্যবহারের ফলে যে অর্থনৈতিক সুবিধা পাওয়ার কথা, তা পাওয়া যাবে না। আর জ্বালানি তেল, স্টিল, সিমেন্ট ও বৈদেশিক মুদ্রার মূল্য বৃদ্ধি পেলে ব্যয় বাড়তে পারে বলে তিনি জানান।

বক্তব্য জানার জন্য পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক শফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।

সময় নিয়ে আলোচনা

পদ্মা সেতুর কারিগরি ও সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে আছে ‘প্যানেল অব এক্সপার্ট’। প্রকল্প এলাকায় গত রোববার থেকে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত এই বিশেষজ্ঞ কমিটির বৈঠক হয়েছে। বছরে তিন-চারবার এই বৈঠক হয়ে থাকে। বৈঠকে উপস্থিত সূত্র জানায়, বাড়তি ২২টি পাইল বসানোর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১১টি পাইলের চারপাশে কংক্রিটের বেড়ার মতো দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া রেল ও পরিবহন চলাচলের জন্য যে ডেক বা পথ বসানোর কথা, সেটির কিছু কারিগরি ত্রুটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

বৈঠক সূত্র আরও জানায়, প্রকল্পের অগ্রগতি এবং কবে নাগাদ শেষ হতে পারে, সেটা নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়। বর্তমানে মূল সেতুর কাজের অগ্রগতি প্রতি মাসে গড়ে ২ শতাংশের কম। অথচ শুরুতে আড়াই থেকে ৩ শতাংশ হারে অগ্রগতির পরিকল্পনা করা হয়েছিল। ঠিকাদারেরা এর জন্য নকশায় জটিলতাকে দায়ী করেন। বৈঠকে ২০২০ সালের মধ্যে পদ্মা সেতুর কাজ শেষ করার বিষয়ে তাগিদ দেওয়া হয়।

ব্যয় কেন আরও বাড়বে

সরকারের ক্রয়সংক্রান্ত আইনে বিশেষ কোনো অবস্থার সৃষ্টি না হলে দুবারের বেশি প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন করা যায় না। কিন্তু পরিকল্পনা কমিশন পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য এই আইন শিথিল করার বিষয়ে একমত হয়েছে।

পদ্মা বহুমুখী সেতু বাস্তবায়নে ২০০৭ সালে একনেকে ১০ হাজার ১৬১ কোটি ৭৫ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদিত হয়। এরপর দুই দফা ব্যয় সংশোধন করা হয়। যেমন: ২০১১ সালে ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি ২০ লাখ টাকা এবং ২০১৬ সালে ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। আর এখন জমি অধিগ্রহণের জন্য বাড়তি যুক্ত হয়েছে আরও ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। ফলে এখন পর্যন্ত মোট ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে মূল প্রকল্প প্রস্তাব থেকে ব্যয় বেড়েছে ২০ হাজার ৩১ কোটি ২৫ লাখ টাকা। আর আগস্ট পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১৬ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকা।

সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, সময় বৃদ্ধি ও প্রকল্প বাস্তবায়নের বিভিন্ন পর্যায়ে কাজও বাড়তে পারে—এমন ধারণা কর্মকর্তাদের। এ ক্ষেত্রে ব্যয়ও বাড়তে পারে। সময় বৃদ্ধির ফলে অবধারিত ব্যয় বৃদ্ধি পাবে নির্মাণ-উপকরণ ও ডলারের মূল্য বৃদ্ধির কারণে। ২০১৪ সালে ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি করার সময় ডলারের মূল্য ছিল ৭৮ টাকা। এখন তা ৮৪ টাকা হয়ে গেছে। উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি বাবদ প্রকল্পের মোট ব্যয়ের মধ্যেই ৪০০ কোটি টাকা ধরা আছে। এর বেশি হলে মোট ব্যয়ও বাড়বে। এ ছাড়া অন্যদিকে কাজ বৃদ্ধির জন্যও প্রকল্পে ৪০০ কোটি টাকা রাখা আছে। কিন্তু নদীশাসনের জন্য তোলা বালু ফেলার জায়গা কেনায় ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় বেড়ে গেছে। এই কাজে আরও জমির প্রয়োজন হতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে।

সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, এক বছর সময় বৃদ্ধির সরকারি সিদ্ধান্তে অখুশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কারণ, এর মধ্যে কাজ শেষ করা সম্ভব নয়। আর কাজ শেষ না হলে জরিমানা গুনতে হবে। তবে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ তাদের আশ্বাস দিয়েছে, প্রয়োজনে আরও সময় বাড়ানো হবে। তবে একবারে নয়, সময়-সময়। তাতে খরচও অবশ্য বাড়বে।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক সচিব ও বৃহৎ প্রকল্প বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান প্রথম আলোকে বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লে ব্যয় বাড়বেই। এ ছাড়া মেয়াদ বাড়ার কারণে নির্ধারিত সময়ের সেতুটি ব্যবহার করার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে মানুষ। ফলে বিনিয়োগের বিপরীতে অর্থনৈতিক যে প্রাপ্তি শুরুতে ধরা হয়েছিল, তা কমে যাবে।
  • কার্টসি: প্রথম আলো /০৩ অক্টোবর ২০১৮

ঋণের ফাঁদে পড়বে দেশ!

অর্থনীতিবিদদের মতামত


পদ্মা সেতু প্রকল্পে দেশজ উৎস থেকে ঋণ নেওয়ার ফলে ঋণের ফাঁদে পড়ে যেতে পারে দেশ। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশনের (পিপিআরসি) চেয়ারম্যান ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান এ আশঙ্কার কারণ হিসেবে বলেছেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের অর্থায়ন একটি সূত্রের (বিশ্বব্যাংক থেকে ঋণ) পরিবর্তে অন্য সূত্র থেকে ঋণ নেওয়া হচ্ছে।

তবে দেশের আরেক অর্থনীতিবিদ, বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর পদ্মা সেতুসহ বৃহৎ প্রকল্প ঘিরে অন্য শঙ্কার কথাও বললেন। তিনি বলেছেন, ‘পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে ৪০ হাজার কোটি টাকার রেললাইন বসানোর প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এটা শেষ পর্যন্ত ৫০-৬০ হাজার কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকবে। কিন্তু এত টাকা খরচ করে কী লাভ (রেট অব রিটার্ন) পাওয়া যাবে, তা নিয়ে কোনো পর্যালোচনা হয়নি। কবে এত টাকা উঠে আসবে জানি না। পদ্মা সেতু ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণেও এ ধরনের পর্যালোচনা করা হয়নি।’ তাঁর মতে, বেশির ভাগ বড় প্রকল্প বিদেশি টাকায় করা হচ্ছে। এতে ঋণের সুদ ব্যবস্থাপনা কেমন হবে, তা নিয়ে এখনই ভাবতে হবে।

গতকাল মঙ্গলবার বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে তাদের নিয়মিত প্রতিবেদন ‘ডেভেলপমেন্ট আউটলুক’ প্রকাশ করেছে। এবার প্রতিষ্ঠানটি খানিকটা ভিন্নভাবে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। দুজন অর্থনীতিবিদকে আলোচক হিসেবে রাখা হয়। তাঁরা বাংলাদেশের অর্থনীতির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনের মূল প্রবন্ধ তুলে ধরেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন। বক্তব্য দেন বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর চিমিয়াও ফান।

বিশ্বব্যাংক তাদের প্রতিবেদনে এ সময় অর্থনীতির বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ ও ঝুঁকির কথা উল্লেখ করে বলেছে, সামষ্টিক অর্থনীতিকে চার ধরনের চাপ আছে। এগুলো হলো খাদ্যবহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতির উল্লম্ফন, বিদেশি অর্থায়নের ঘাটতি; তারল্য–সংকট এবং বাজেট ঘাটতি বৃদ্ধি। এ ছাড়া বেসরকারি বিনিয়োগ স্থবির হয়ে আছে।

নির্বাচনের সময়ের অর্থনীতি

জাতীয় নির্বাচন অর্থনীতিতে কী ধরনের প্রভাব ফেলবে—এ নিয়ে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর চিমিয়াও ফান বলেন, সব দেশই নির্বাচন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায়। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। তবে অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত করা এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা।

আহসান এইচ মনসুর এ সময় আশঙ্কা করে বলেন, জাতীয় নির্বাচনের পর রাজনৈতিক সংকট আরও ঘনীভূত হলে টাকা পাচার কমার কোনো কারণ থাকবে না, বরং বাড়তে পারে। তখন টাকা পাচার যদি নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তবে অর্থনীতিতে সমস্যা আরও প্রকট হবে।

সুশাসন প্রসঙ্গে হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, অর্থনৈতিক সংস্কারের সঙ্গে রাজনৈতিক সুশাসনের বিষয়টি আনতে হবে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, খেলাপি ঋণ কি শুধু অর্থনৈতিক ইস্যু, নাকি এর সঙ্গে রাজনৈতিক সুশাসনও জড়িত?

প্রবৃদ্ধি কেবল সংখ্যা নয়

আলোচনায় প্রবৃদ্ধি নিয়ে দুটি উদ্বেগের কথা বলেন হোসেন জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, প্রবৃদ্ধি টেকসই হবে কি না; প্রবৃদ্ধি অন্তর্ভুক্তিমূলক হচ্ছে কি না। প্রবৃদ্ধির আলোচনায় ‘৭ শতাংশ’, ‘৮ শতাংশ’—এগুলোর কোনো মূল্য নেই।

হোসেন জিল্লুর রহমান আরও বলেন, বিশ্বমন্দা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতি টিকে আছে। এখন অর্থনীতিকে আরও গতিশীল করা দরকার। কেননা এখনো ৩ কোটি ৯০ লাখ দরিদ্র লোক আছে। এর মধ্যে ১ কোটি ৯০ লাখ অতিদরিদ্র। প্রবৃদ্ধির সুফল কার কাছে যাচ্ছে, তা নিয়ে আলোচনা করা উচিত। দৃশ্যমান বেকার না থাকলেও এ দেশের যুবকেরা উপযুক্ত কাজ পাচ্ছে না বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এমএ পাস করে পিয়নের কাজ করছে। এ ধরনের কাজ এখন অনেক যুবকের অবধারিত ভাগ্য হয়ে গেছে।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, প্রবৃদ্ধির বিতর্ককে সংখ্যার বাইরে নিয়ে যেতে হবে। বিতর্ক হওয়া উচিত গুণগত মানসম্পন্ন প্রবৃদ্ধি নিয়ে। কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করতে হবে। এ ছাড়া অর্থনৈতিক সংস্কার কার্যক্রমে রাজনৈতিক সুশাসনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে হবে।

বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর চিমিয়াও ফান এ নিয়ে বলেন, ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি খুবই ভালো। কিন্তু এটি সংখ্যা দিয়ে বিবেচনা না করে, মান দিয়ে বিবেচনা করা উচিত।

বিশ্বব্যাংকের মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন প্রবৃদ্ধি নিয়ে বলেন, বিতর্ক হওয়া উচিত যে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে তা মানসম্পত হচ্ছে কি না। সবাই এর সুফল পাচ্ছে কি না। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার ক্ষেত্রে তিনি বলেন, এ দেশে বলা সহজ, করা কঠিন। এখন যে উন্নয়নের প্রক্রিয়া চলছে তাতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাগুলো যেন বিলীন না হয়ে যায়।

অর্থনীতিবিদদের এসব আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য শামসুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশে ঋণ ও সুদ পরিশোধের রেকর্ড খুব ভালো। বিদেশি ও দেশজ উৎস থেকে নেওয়া কোনো ঋণের অর্থ পরিশোধে বকেয়া পড়ে নেই। অর্থনীতির বর্তমান সক্ষমতা বিবেচনায় আগামী দু-তিন বছর ঋণের অর্থ পরিশোধে কোনো সমস্যা হবে না। এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই।

প্রবৃদ্ধি নিয়ে তিনি বলেন, এখন প্রবৃদ্ধি মান দিয়ে বিচার করা হচ্ছে। তবে এটা ঠিক যে কিছু আয়বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। উচ্চ প্রবৃদ্ধির সময় সব দেশেই বৈষম্য একটু বাড়ে। এটা কমাতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান ও কর্মসংস্থানে বেশি নজর দেওয়া উচিত।

সুদের হার ও অন্যান্য

আলোচনায় অংশ নিয়ে বাস্তবতা বিবেচনা না করে শুধু ‘স্টেটমেন্ট’ দিয়ে সুদের হার নির্ধারণ করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, এ কারণেই ‘নয়-ছয়’ সুদের হার কার্যকর হয়নি, হবেও না। সরকার হয়তো নির্বাচনের আগে এ অবস্থান থেকে সরে আসতে পারবে না, নির্বাচনের পর ধীরে ধীরে সরে আসতে হবে। রাজস্ব-জিডিপির অনুপাত ১২ শতাংশ এবং কর-জিডিপির অনুপাত ১০ শতাংশ দিয়ে কোনো দিনও উচ্চমধ্যম আয়ের দেশ বা উচ্চ আয়ের দেশে উন্নীত হওয়া যাবে না। তাই তিনি রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি করে বড় প্রকল্পে দেশজ উৎসের অর্থের অংশ বৃদ্ধির পরামর্শ দেন।

রিজার্ভের মজুত সম্পর্কে উদ্বেগ জানিয়ে আহসান এইচ মনসুর বলেন, গত বছর পর্যন্ত সাত মাসের আমদানি ব্যয়ের সমান রিজার্ভ মজুত ছিল। এখন তা পাঁচ মাসে নেমে এসেছে। এভাবে চলতে থাকলে তা অচিরেই তিন মাসে নেমে আসবে।
  • কার্টসি: প্রথম আলো /০৩ অক্টোবর ২০১৮

ঢাকা ওয়াসায় হচ্ছেটা কী

অমিতোষ পাল

ঢাকা ওয়াসার অর্গানোগ্রামে পরিচালক পদ বলে কিছু নেই। তবুও এই পদে দুই ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে চলতি বছরের প্রথম দিকে। ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান ছুটিতে থাকলে এমডির দায়িত্ব পালন করেন এদের একজন। তাকসিম এ খানের অনুপস্থিতিতে দাপ্তরিক সব ফাইলপত্রেও স্বাক্ষর করেন একজন পরিচালক। এককথায় এমডির যাবতীয় দায়িত্বই থাকে তার। এ নিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ওয়াসাকে একাধিক চিঠিপত্র দিয়ে কারণও জানতে চেয়েছে। কিন্তু ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান কর্ণপাত করেননি। এ নিয়ে ওয়াসা প্রশাসন ও ঢাকা ওয়াসার বোর্ড সদস্যদের মধ্যেও ক্ষোভ বিরাজ করছে বলে সংশ্নিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। 

জানতে চাইলে ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান সমকালকে বলেন, ঢাকা ওয়াসায় যে দু'জন পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, সেখানে বোর্ড অনুমোদন দেয়নি। কারণ ওয়াসার অর্গানোগ্রামে (জনবল কাঠামো) পরিচালকের কোনো পদ নেই। অর্গানোগ্রাম অমান্য করে ওই দু'জনকে পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তাদেরই একজনকে এমডির দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে, যা অবৈধ। 

ঢাকা ওয়াসা সূত্র জানায়, গত ২০ আগস্ট ঢাকা ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান যুক্তরাষ্ট্রে যান। সে সময় তাকসিম এ খান পরিচালক (উন্নয়ন) আবুল কাশেমকে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব দিয়ে যান। সেখানে তিনি বলেন, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত তিনি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করবেন। এ সময় আবুল কাশেম এমডির প্রতিনিধিত্ব করবেন। এ ছাড়া রুটিন কার্যাদি সম্পাদন করবেন। প্রয়োজনে তার সঙ্গেও ই-মেইলে, হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে যোগাযোগ করবেন। ওই এক মাস আবুল কাশেম এমডির দায়িত্ব পালন করেন। গত ১ অক্টোবর তাকসিম এ খান এক সপ্তাহের জন্য আবার ফিলিপাইনে যান। এই সময়ের জন্য আবারও আবুল কাশেমকে এমডির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। 

নেপথ্য কাহিনী :জানা যায়, ২০১৭ সালের প্রথম দিকে ঢাকা ওয়াসার তিনটি উপব্যবস্থাপনা পরিচালকের (ডিএমডি) পদ শূন্য হয়। ওই বছরের ৭ জুলাই ওয়াসা বোর্ড তিনজনকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়। আবেদনকারীদের মধ্যে ঢাকা ওয়াসার সাবেক ডিএমডি ড. লিয়াকত আলী, ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্সের (আইইবি) সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মঞ্জুর মোর্শেদ ও নন্দন কুমার রায় নামের তিনজন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। মন্ত্রণালয় তাদের ডিএমডি পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য চিঠিও ইস্যু করে। কিন্তু এমডির পছন্দের কোনো ব্যক্তি এই তিনজনের মধ্যে না থাকায় এতে আপত্তি দেন। ওই পরীক্ষায় ঢাকা ওয়াসার সাবেক প্রধান প্রকৌশলী অবসরপ্রাপ্ত আবুল কাশেম ও অবসরপ্রাপ্ত একেএম শহিদ উদ্দিনও আবেদন করেন। কিন্তু তারা উন্নীত হতে পারেননি। 

জানা যায়, এ দু'জন ছিলেন এমডির পছন্দের তালিকায়। এমডির আপত্তির কারণে নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে যায়। পরে ২৫২তম বোর্ড সভায় এমডি তাকসিম এ খান প্রস্তাব উত্থাপন করেন যে, তিনজন ডিএমডির পদ শূন্য থাকায় কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আবুল কাশেম ও একেএম শহিদ উদ্দিনকে পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন। বোর্ড এ প্রস্তাব অনুমোদন করেনি। বোর্ড জানায়, ওয়াসার অর্গানোগ্রামে এ ধরনের কোনো পদ নেই। যে কারণে নিয়োগ দেওয়া যাবে না। কিন্তু এরপর একতরফাভাবে আবুল কাশেমকে পরিচালক (উপদেষ্টা) ও একেএম শহিদ উদ্দিনকে পরিচালক (কারিগরি) হিসেবে দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়। এ সময় তারা গাড়ি-জ্বালানি ছাড়াও মাসিক এক লাখ ৫০ হাজার টাকা করে বেতন পাবেন। গত ১৯ মার্চ থেকে তাদের নিয়োগ কার্যকর হয়। এর পর থেকেই তারা অফিসিয়াল ফাইলপত্রে স্বাক্ষর করছেন ও নিয়মিত অফিস করছেন। আর এমডি বিদেশ গেলেই আবুল কাশেম এমডির দায়িত্ব পালন করছেন। 

মন্ত্রণালয়ের বারবার আপত্তি :গত ৯ মে এই নিয়োগের ব্যাপারে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ড. কেএম কামরুজ্জামান সেলিম ওয়াসার এমডিকে চিঠি দেন। চিঠিতে বলা হয়, পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিস্কাশন কর্তৃপক্ষ আইন ১৯৯৬-এ পরিচালক পদ সৃজনের কোনো সুযোগ আছে কি-না, থাকলে সেই ধারার বিবরণ দিয়ে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে হবে। ঢাকা পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিস্কাশন কর্তৃপক্ষ (কর্মকর্তা ও কর্মচারী) চাকরি প্রবিধানমালা ২০১০-এর অর্গানোগ্রামে উক্ত পদ সৃজনের বিধান রয়েছে কি-না, থাকলে বিধানের বর্ণনা দিয়ে মন্ত্রণালয়কে জানাতে হবে। কিন্তু ওয়াসা কোনো উত্তর দেয়নি।

গত ২৫ জুলাই স্থানীয় সরকার বিভাগ আরেকটি চিঠি দিয়ে জানায়, ওয়াসার আইন অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ তার কার্যাবলি সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক জনবল নিয়োগ দিতে পারবে। তবে সাংগঠনিক কাঠামোর বাইরে কোনো জনবল নিয়োগ দিতে হলে আগে সরকারের কাছে পেশ করতে হবে। সরকার অনুমোদন দিলে নিয়োগ দিতে পারবে। অথচ দু'জন পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে সাংগঠনিক কাঠামোতে পরিচালকের পদ সৃষ্টি না করে উক্ত পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নিয়োগ সংক্রান্ত কোনো বিজ্ঞাপন, যোগ্যতা নির্ধারণ ও পরীক্ষা গ্রহণ না করে এবং অন্যান্য কার্যাবলি সম্পাদন না করেই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যা আইন ও সরকারের সাধারণ নীতির পরিপন্থী বলে প্রতীয়মান হয়।

এ ঘটনার পর গত ৫ আগস্ট স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় আবারও ওয়াসার এমডিকে চিঠি দিয়ে জানায়, এই নিয়োগ 'পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিস্কাশন কর্তৃপক্ষ আইন ১৯৯৬ ও পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিস্কাশন কর্তৃপক্ষ (কর্মকর্তা/কর্মচারী) চাকরির প্রবিধানমালা ২০১০-এর সংশ্নিষ্ট ধারার পরিপন্থী। এটি বিধিসম্মত না হওয়ায় ঢাকা ওয়াসার দু'জন পরিচালক পদে নিয়োগ বাতিলের জন্য কেন অনুশাসন প্রদান করা হবে না, সে বিষয়ে ব্যাখ্যাসহ বিস্তারিত প্রতিবেদন স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠাতে বলা হয়। পরিচালক নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত দু'জন পরিচালকের বেতন-ভাতা বন্ধসহ তাদের দাপ্তরিক সব কার্যক্রম থেকে বিরত রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে পত্র মারফত স্থানীয় সরকার বিভাগকে অবহিত করার জন্য বলা হয়। 

এই কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবে ১৯ আগস্ট তাকসিম এ খান মন্ত্রণালয়কে একটি চিঠি দিয়ে জানান, তিনজন ডিএমডির পদ শূন্য। এ অবস্থায় স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার জন্য ২৫২তম বোর্ড সভায় এ নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। ওই সভায় ১৫ জন বোর্ড সদস্যের মধ্যে আটজন উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে পাঁচজন মত দিয়েছেন। কাজেই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের বিষয়টিতে আইনের ব্যত্যয় ঘটেনি। বিধি মোতাবেক হয়েছে। 

তবে এ প্রসঙ্গে বোর্ড চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান সমকালকে জানান, বোর্ড সভায় এমডি বিষয়টি তুলেছিলেন। কিন্তু কেউ নিয়োগের পক্ষে মত দেননি। কাজেই সেটা অনুমোদন হয়নি।

এ অবস্থায় আবার আবুল কাশেমকে এমডির দায়িত্ব দিয়ে গত ১ অক্টোবর ফিলিপাইনে গেছেন এমডি তাকসিম এ খান। এ প্রসঙ্গে তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। 

এ প্রসঙ্গে এমডির দায়িত্ব পালনকারী আবুল কাশেম সমকালকে বলেন, মন্ত্রণালয় তার নিয়োগ নিয়ে কিছু প্রশ্ন করেছিল। কিন্তু সম্প্রতি তিনি আর কিছু শুনছেন না। বেতন-ভাতাও পাচ্ছেন। এমডির অনুপস্থিতিতে তিনি রুটিন ওয়ার্ক করে যাচ্ছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন সমকালকে বলেন, ওয়াসার অর্গানোগ্রামে না থাকলে পরিচালক পদে লোক নিয়োগ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটা কীভাবে হলো, সেটা দেখবেন বলে জানান।

  • Courtesy: Samakal/ Oct 03, 2018