ছাত্রী উত্ত্যক্ত করাকে কেন্দ্র করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল ও আলবেরুনী হল ছাত্রলীগের মধ্যে মঙ্গলবার রাতে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষে দুই হলের অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে গুরুতর আহতদের সাভারের এনাম মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে বলে জানান মেডিকেল সেন্টারের টেকনিক্যাল অফিসার মো. জাকারিয়া। সাভার এনাম মেডিকেল হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার রাতে ১২/১৩ জন মুখে, পায়ে ও হাতে আহত হয়ে হাসপাতালে এলেও গুরুতর ৬ জনকে ভর্তি করা হয়েছে।
হাসপাতালে ভর্তিকৃতরা হলেন- অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম (৪৬ ব্যাচ) বিভাগের সোহেল রানা, পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিং (৪৭ ব্যাচ) বিভাগের মিজানুর রহমান, বায়োকেমেস্ট্রি (৪৫) বিভাগের ফারাবি। তারা তিনজনই আলবেরুনী হলের আবাসিক ছাত্র। মীর মশাররফ হোসেন হলের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা (৪৫ ব্যাচ) বিভাগের শিক্ষার্থী আবু হানিফ, একই বিভাগের ৪৩তম ব্যাচের সাকিবসহ তিনজন শিক্ষার্থী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
সূত্রমতে, মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আলবেরুনী হল সংলগ্ন চৌরঙ্গী এলাকায় মীর মশাররফ হোসেন হলের আবু সাইদ (ভূতাত্ত্বিক বিভাগ ৪৫) এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের তৌহিদ সাকিব (পদার্থবিজ্ঞান ৪৫) তাদের বন্ধুসহ গান গাইছিলেন। এ সময় এক ছাত্রী আলবেরুনী হলের ৪৬তম আবর্তনের তার কিছু সহপাঠীকে ডেকে এনে তাদের কাছে ওই চারজনের কিরুদ্ধে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ করে।
অভিযুক্ত চারজনই শাখা ছাত্রলীগের কর্মী। কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে আলবেরুনী হলের ছাত্রলীগ কর্মীরা ওই চারজনকে মারধর করে। মারধরের খবর শুনে মীর মশাররফ হোসেন হলের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আলবেরুনী হল ছাত্রলীগকে ধাওয়া করলে সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। এরপর দুই হলের ছাত্রলীগের মধ্যে সারারাত দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে চৌরঙ্গী, মেডিকেল সেন্টার, আলবেরুনী হল প্রাঙ্গণ, জীববিজ্ঞান অনুষদ এই পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
সংঘর্ষের এক পর্যায়ে মীর মশাররফ হোসেন হলের ছাত্রলীগ কর্মীরা পিস্তল নিয়ে মহড়া দেয়। তারা কয়েক রাউন্ড গুলিও ছুড়ে। পরে আলবেরুনী হলের ছাত্রলীগ কর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে মীর মশাররফ হোসেন হলের ছাত্রলীগ কর্মী খালিদের মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা এবং শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে ৮টি গুলির খোসা পাওয়া যায়।
পরীক্ষা আটকে দিলো ছাত্রলীগ: জাবি ছাত্রলীগের সহসভাপতি আবু সাদাত সায়েমের নেতৃত্বে হামলাকারীদের শাস্তির দাবিতে আলবেরুনী হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা গতকাল সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত জীববিজ্ঞান অনুষদে তালা দিয়ে ভর্তি পরীক্ষা আটকে দেয়। ফলে গতকাল অনুষ্ঠিত ‘ডি’ ইউনিটের সব পরীক্ষার সবক’টি শিফট নির্ধারিত সময় থেকে পিছিয়ে যায়।
পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম, প্রোভিসি নূরুল আলম ও প্রক্টরিয়াল বডি গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। প্রক্টর সিকদার মো. জুলকারনাইন বলেন, “পরীক্ষা চলাকালে এ ধরনের ঘটনা হতাশাজনক। আমরা এর তদন্ত করে শাস্তির ব্যবস্থা নেব।
- কার্টসিঃ মানবজমিন/ ০৪ অক্টোবর ২০১৮
No comments:
Post a Comment