Search

Wednesday, October 17, 2018

বাড়ছে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যয়জনিত ঋণগ্রস্ততা - স্বল্প আয়ের মানুষের আর্থিক চাপ বাড়াচ্ছে

সম্পাদকীয়

সব নাগরিকের জন্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের সাংবিধানিক অঙ্গীকার। সে বিবেচনায় এ দুটি খাতে ব্যক্তিব্যয় সবসময় সাধারণ্যের সামর্থ্যের মধ্যে রাখাই সমীচীন। কিন্তু দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, আমাদের দেশে উল্লিখিত দুটি খাতে লক্ষণীয়ভাবে ব্যয় বাড়ছে। আর এ বাড়তি ব্যয় মেটাতে অনেক পরিবারের ঋণগ্রস্ততাও বেড়ে চলেছে। ২০১৬ সালের বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খানা আয়-ব্যয় জরিপের তথ্যেই বিষয়টি স্পষ্ট। আলোচ্য জরিপের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, ঋণ গ্রহণ ও ব্যয় মূলত কৃষি ও ব্যবসা খাতে হওয়ার কথা থাকলেও বস্তুত তা ব্যয় হয়েছে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায়। ২০১০ সালে মোট ঋণের মাত্র ৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ কোনো পরিবারকে যেখানে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় ব্যয় করতে হয়েছিল, ২০১৬ সালে সেখানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৯৬ শতাংশে। সমরূপভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে মোট ঋণ গ্রহণের পরিমাণও। একই মেয়াদে পরিবারপ্রতি ঋণের পরিমাণ ২৮ হাজার ৬২ টাকা থেকে উন্নীত হয়েছে ৩৭ হাজার ৭৪৩ টাকায়। বলা যায়, প্রায় ৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি! কাজেই ঋণ গ্রহণ বেড়ে যাওয়ার পেছনে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ব্যয়ের উল্লম্ফন যে বড় ভূমিকা রাখছে, তা সহজেই অনুমেয়। সন্দেহ নেই, এ অবস্থা প্রলম্বিত হলে স্বল্প আয়ের মানুষের ওপর আর্থিক চাপের বোঝা বাড়বে; দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ঋণ পরিশোধজনিত যন্ত্রণা বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। তাই বিষয়টি হালকাভাবে নেয়ার সুযোগ নেই। আমরা চাইব মানুষের জীবনযাত্রার খরচ বৃদ্ধির বহুমুখী প্রভাব গভীরভাবে আমলে নিয়ে শিক্ষা-স্বাস্থ্য ব্যয় কমাতে সরকার কার্যকর উদ্যোগ নেবে।

লক্ষণীয়, সরকারি বিনিয়োগের বড় দুই খাত হলো শিক্ষা ও স্বাস্থ্য। সেখানে ঘাটতি থাকলে ব্যক্তি খরচ বেড়ে যায়। আর তা মেটাতে অনেক ক্ষেত্রে ব্যক্তিকে ঋণ গ্রহণ করতে হয়। এখন যেমনটি হচ্ছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় সবার নির্বিঘ্ন প্রবেশগম্যতা নিশ্চিতে এ দুটি খাতে অন্তত জিডিপির ৬ শতাংশ বরাদ্দ বৃদ্ধির কথা বলেন বিশেষজ্ঞরা। পার্শ্ববর্তী দেশগুলো এক্ষেত্রে এগিয়ে গেলেও আমাদের দেশে এ বরাদ্দ এখনো ০.৯২ থেকে ২.০৯ শতাংশে আটকে আছে। ফলে অত্যাবশ্যকীয় শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় ব্যয় বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। নিশ্চয়ই মানুষের দুর্ভোগ লাঘবের লক্ষ্যে ব্যয় বৃদ্ধির লাগাম টানতে হলে সরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে। এক্ষেত্রে নীতিনির্ধারণী মহলের সক্রিয়তা জরুরি।

একটি বিষয় পরিষ্কার, চাহিদা থাকলে বেসরকারি খাত বিকশিত হয়। গত দেড় দশকে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় দেশে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা খাতে অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। বর্ধিষ্ণু জনসংখ্যার চাহিদার নিরিখে প্রতিষ্ঠানগুলো অবদান রাখছে। কিন্তু সেসব প্রতিষ্ঠানে ব্যয় অত্যধিক বেশি। দেখা যাচ্ছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সীমিত হওয়ায় স্বল্প আয়ের পরিবারের সন্তানরাও এখন উচ্চশিক্ষার জন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে। ভর্তি হওয়ার পর উচ্চব্যয় বহন অনেকের পক্ষেই কঠিন হয়ে পড়ছে। বাধ্য হয়ে ঋণ করতে হচ্ছে অনেক পরিবারকে। আবার স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোয় মোট ব্যয়ের ৬৭ শতাংশ ব্যক্তির পকেট থেকে যাচ্ছে। ফলে বিপুল স্বাস্থ্যব্যয়ের কারণেও ঋণগ্রস্ত হচ্ছে স্বল্প আয়ের অনেক পরিবার। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে আমাদের অবশ্যই সরকারি বিনিয়োগ বাড়ানো দরকার। শুধু বিনিয়োগ বাড়ালে হবে না, একই সঙ্গে বেসরকারি শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে সরকারের নিয়ন্ত্রণও জরুরি। একদিকে কোচিং ও উচ্চ ফি আরোপ যেমন বন্ধ করতে হবে, তেমনি অহেতুক ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি, রোগীদের অযথা প্রেসক্রিপশন ও রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষাও হ্রাস করতে হবে। বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে সরকার বলিষ্ঠ  পদক্ষেপ নেবে বলে প্রত্যাশা।  

  • কার্টসিঃ বনিকবার্তা/ ১৭ অক্টোবর ২০১৮

No comments:

Post a Comment