Search

Thursday, October 25, 2018

নির্বাচনের আগে প্রকল্প পাসের হিড়িক : ব্যয়ের জবাবদিহিতাও নিশ্চিত হোক

সম্পাদকীয়

নির্বাচনের আগে প্রকল্প পাসের হিড়িক পড়ে যাওয়ার ঘটনা বাংলাদেশে নতুন নয়। কিন্তু সব রেকর্ড ভেঙে এবার দেড় মাসে ১ লাখ কোটি টাকার বেশি মূল্যমানের প্রকল্প পাস করেছে সরকার। বেশির ভাগ প্রকল্পই ভোটারদের খুশি করার নির্বাচনী প্রকল্প বলে অভিযোগ মিলছে। মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো তেমন যাচাই-বাছাই না করেই প্রকল্প পাঠাচ্ছে পরিকল্পনা কমিশনে। আর পরিকল্পনা কমিশনও অতিরিক্ত চাপে যথাযথ যাচাই না করেই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় পাঠাচ্ছে। এতে করে প্রকল্পের মান রক্ষা ও বেশি ব্যয়ের আশঙ্কা বাড়ছে। এছাড়া অনেক প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে, যা কতটা যৌক্তিক তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে। 

বিশেষজ্ঞরা একে ভোটার আকর্ষণে সরকারের কৌশল হিসেবেই দেখছেন। এতে অর্থের অপচয়সহ দুর্নীতি বেড়ে ওঠার আশঙ্কাও রয়েছে। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, নির্বাচনের সময় দ্রুত প্রকল্প পাস করতে গিয়ে মানহীন ও অগুরুত্বপূর্ণ অনেক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়, যা পরবর্তী সময়ে আর বাস্তবায়ন হয় না, শুধু অর্থের অপচয় হয়। ভোটার আকর্ষণে এমন প্রবণতা দেশের অর্থনীতির জন্য তো বটে, জনগণ ও রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর। দেশে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখা প্রয়োজন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে এক্ষেত্রে প্রশ্ন হলো, নতুন অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পগুলোর সঙ্গে দলীয় রাজনীতির অনৈতিক স্বার্থসংশ্লিষ্টতা রয়েছে কিনা। যদি দলীয় সংশ্লিষ্টতা থাকে, সেক্ষেত্রে প্রকল্পের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় থেকে যায়। ঠিকমতো বিচার-বিশ্লেষণ করে প্রকল্প অনুমোদন দেয়া না হলে এর সঠিক মান নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। এতে অপচয় হয় সরকারি অর্থের। অতীতে এমন ঘটনা বহুবার ঘটেছে। কাজেই প্রকল্প অনুমোদন দেয়াই যথেষ্ট নয়, তার যথাযথ মান নিশ্চিত করা এবং নির্দিষ্ট সময় ও স্বল্প ব্যয়ে সম্পন্ন করাই বড় বিষয়।

বাংলাদেশে প্রকল্প বাস্তবায়ন বলতে টাকা ছাড়করণকে বোঝানো হয়। বাস্তবতা হলো টাকা ছাড়করণ নয়, প্রকল্পের মান ঠিক রেখে যথাসময়ে প্রকল্প শেষ করাই হলো বাস্তবায়ন। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, প্রতি বছর বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর অদক্ষতার কারণে এডিপি কাটছাঁট করা হয়। বাস্তবায়ন কম হওয়ার ফলে বৈদেশিক সাহায্যের ছাড়ও কমে যাচ্ছে। এ বাস্তবতায় এডিপির অর্থায়নে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের নেয়া প্রকল্পগুলোয় মাঠপর্যায়ে নিয়মিত নজরদারি প্রয়োজন। দরকার অর্থনৈতিক দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়নে অধিক মনোযোগ দেয়া। দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে এডিপির যথাযথ বাস্তবায়ন অপরিহার্য। অর্থনৈতিক অগ্রগতি অনেকাংশে এডিপি বাস্তবায়নের ওপর নির্ভরশীল। বেসরকারি খাতকে সহযোগিতা করতে এটি সরকারের বিনিয়োগ। তাছাড়া আমাদের অবকাঠামোগত দুর্বলতা চরম। রাজনৈতিক অস্থিরতা আর দুর্বল অবকাঠামোর জন্য আমরা কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ আকর্ষণে ব্যর্থ হচ্ছি।

প্রতিটি প্রকল্পের শুরুতে যে ব্যয় দেখানো হয়, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা বেড়ে যায়। অনেক প্রকল্পই অনুমোদনের ক্ষেত্রে তড়িঘড়ি করা হয়েছে। এছাড়া কঠিন শর্তের ঋণ নিয়েও বড় বড় প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। আমরা এখন ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের দিকে যাচ্ছি। নিয়মানুসারে প্রকল্পে মোট বরাদ্দের ক্ষেত্রে সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন, বৈদেশিক সহায়তা ও সংস্থার অর্থায়ন থেকে বরাদ্দ দেয়া হয়। সব প্রকল্পেই বিদেশী সহায়তা পাওয়া যায় না। তখন দেশীয় অর্থায়ন থেকে এসব ব্যয় মেটানো হয়। বস্তুত ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে হলে সরকারি বিনিয়োগ পরিকল্পনার যথাযথ বাস্তবায়ন একান্ত দরকার। এক্ষেত্রে সার্বিকভাবে সফলতা অর্জনের জন্য দরকার দক্ষতা বৃদ্ধি, সঠিক প্রকল্প নির্বাচন, সুব্যবস্থাপনা, আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতার অবসান। এটি ছাড়া পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়ন করতে হবে। সবাইকে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে কাজ করতে হবে। এমন প্রকল্প নির্বাচন করতে হবে, যাতে কর্মসংস্থান বাড়ে ও জিডিপি প্রবৃদ্ধির সহায়ক হয়। পাশাপাশি দারিদ্র্য ও বৈষম্য হ্রাস পায়। একই সঙ্গে প্রকল্পগুলো পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়াও বাঞ্ছনীয়।

  • কার্টসিঃ বনিক বার্তা/ ২৫ অক্টোবর ২০১৮

No comments:

Post a Comment