Search

Monday, October 29, 2018

সম্পাদকীয়

জনগণকে জিম্মি করা যাবে না

পরিবহন ধর্মঘট



বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন রোববার ভোর থেকে সারা দেশে ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট পালন করছে, তা শুধু ব্যবসা-বাণিজ্যেই গুরুতর বিরূপ প্রভাব ফেলছে না, জনজীবনকেও অচল করে দিয়েছে। মানুষ ঘর থেকে বেরিয়েই দেখছে ধর্মঘট। পরিবহনশ্রমিকেরা শুধু নিজেদের যানবাহন বন্ধ রাখেননি; রিকশা, অটোরিকশাচালক এমনকি প্রাইভেট কার চলাচলেও বাধা দিয়েছেন। এটি ধর্মঘটের নামে জনগণকে জিম্মি করা ছাড়া কিছু নয়।


সরকারি দলের নেতারা প্রায়ই অভিযোগ করে থাকেন, বিরোধী দল লাগাতার হরতাল, অবরোধ, ধর্মঘট পালন করে দেশকে অচল করে দিয়েছে, অর্থনীতি ধ্বংস করে দিয়েছে। তাঁদের এই অভিযোগ ভিত্তিহীন না হলেও গত তিন বছরে দেশে হরতাল, অবরোধ, ধর্মঘট ছিল না। দেশবাসী একধরনের স্বস্তি ভোগ করে আসছিল। কিন্তু রোববার ভোর থেকে বাংলাদেশে ফের ‘ধর্মঘটের যুগ’ ফিরে এল। আর বাংলাদেশ সড়ক শ্রমিক ফেডারেশন নামে যে সংগঠনটি এই ধর্মঘট ডেকেছে, সেই সংগঠনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সরকারের একজন মন্ত্রী, শাজাহান খান। তিনি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থাকলেও সড়কের ওপর আধিপত্য ছাড়তে চাইছেন না। এ কারণেই মন্ত্রী হয়েও পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি পদটি তিনি দখল করে আছেন।
সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন যে আট দফা দাবিতে ধর্মঘট ডেকেছে, তা অযৌক্তিক এবং যাত্রীসাধারণের নিরাপত্তার পরিপন্থী। তাঁরা আইনকানুন কিছুই মানতে চাইছেন না। আইনে সড়ক দুর্ঘটনায় চালকের শাস্তি তিন থেকে পাঁচ বছর করা হয়েছে বলে পরিবহনশ্রমিকেরা শোরগোল তুলেছেন। অথচ আইনটি যখন সংসদে পাস হয়, তখন অপরাধের তুলনায় শাস্তি অনেক কম হয়েছে বলেই আইন বিশেষজ্ঞরা অভিমত প্রকাশ করেছিলেন। এই আইনের উদ্দেশ্য লঘু পাপে গুরুদণ্ড দেওয়া নয়, সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে যাত্রী-চালক উভয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। উল্লেখ্য, অনেক ক্ষেত্রে চালকদের বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণেই যে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে, তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কের পাশে অপেক্ষমাণ শিক্ষার্থীদের ওপর চালকের বাস তুলে দেওয়ার ঘটনাটি। এই দুই শিক্ষার্থীকে হত্যার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের মানুষ দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে তোলে। কয়েক দিন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব নেয়, যা অনন্য উদাহরণ হয়ে আছে। একপর্যায়ে সরকার দুর্ঘটনা রোধে আইন কঠোর করার ঘোষণা দেয়।
সড়ক পরিবহনশ্রমিকেরা তাঁদের ভাষায় সেই ‘কঠোর’ আইনকে কোমল করার জন্যই জনগণকে জিম্মি করে পরিবহন ধর্মঘটে নেমেছেন। সরকারের মন্ত্রী হিসেবে শাজাহান খান আইন পাস করলেন, আবার শ্রমিক ফেডারেশনের নেতা হিসেবে তিনি সেই আইন বাতিল বা সংশোধনের দাবিতে ধর্মঘট ডাকলেন। তাঁর এই দ্বৈত ভূমিকা সংবিধানবিরোধী। সরকারের মন্ত্রী হিসেবে তিনি দর-কষাকষির কোনো সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেন না।
শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বলেছেন, শুধু চালকদের কারণে দুর্ঘটনা ঘটে না। আইনের কোথাও বলা হয়নি চালকদের কারণেই দুর্ঘটনা ঘটে। তদন্তে যিনি দোষী সাব্যস্ত হবেন, তিনি শাস্তি পাবেন, নির্দোষ হলে শাস্তি পাবেন না। সড়ক পরিবহন শ্রমিকনেতাদের দাবি শুনে এটা মনে হওয়া স্বাভাবিক যে তাঁরা দুর্ঘটনার তদন্ত হোক সেটাই চান না। এর আগে সামরিক শাসক এরশাদের আমলেও পরিবহনশ্রমিকদের কঠোর শাস্তির বিধান করে যে আইন করা হয়েছিল, পরিবহনশ্রমিকেরা দেশ অচল করে দিয়ে সেই আইন পরিবর্তন করতে সরকারকে বাধ্য করেছিলেন। সেটি ছিল স্বৈরশাসনের আমল। বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের আমলেও তার পুনরাবৃত্তি হবে তা কেউ আশা করে না।
ধর্মঘটের নামে সড়কে সংঘবদ্ধ মাস্তানি বন্ধ হোক।
Ciurtesy: Prothom Alo Oct 29, 2018

No comments:

Post a Comment