অনেক নাটকীয়তার পর সিলেটে সমাবেশের অনুমতি পেয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। অবশ্য এ সমাবেশ করতে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ফ্রন্ট নেতারা। দুপুরে রিট আবেদন করার পর বিকালে পুলিশের পক্ষ থেকে অনুমতি দেয়ার বিষয়টি জানানো হয়। আগামী বুধবার সিলেটে হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত ও সমাবেশের মাধ্যমে মাঠের কর্মসূচি শুরু করবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। সমাবেশের অনুমতি নিয়ে টানাহিঁচড়া চলায় করণীয় ঠিক করতে দফায় দফায় বৈঠক করেন নেতারা। সর্বশেষ বৈঠক থেকে জানানো হয়, অনুমতি না পেলেও সিলেট যাবেন ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। গতকাল বিকালে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের মতিঝিলের চেম্বারে ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের বৈঠক চলাকালে সমাবেশের অনুমতি পাওয়ার খবর আসে।
সন্ধ্যায় সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের তরফ থেকে অনুমতি প্রদানের বিষয়টি টেলিফোনে জানানো হয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক বিএনপি নেতাদের। এরপর নেতারা গিয়ে মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছ থেকে অনুমতি পত্রও গ্রহণ করেন।
ঐক্যফ্রন্টের নেতারা জানান, ২৪শে অক্টোবর সিলেটে তাদের সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছে। অনুমতি পাওয়ার পর সমাবেশের প্রস্তুতি শুরু করেছেন তারা। সমাবেশে বিপুলসংখ্যক লোক সমাগমের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। সমাবেশটি হবে নগরীর রেজিস্ট্রারি মাঠে। তার আগে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা সিলেটে ওলিদের মাজার জিয়ারত করবেন।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পরই সিলেট থেকে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করতে ‘সিলেট সমাবেশ’-এর ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। প্রাথমিক তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল ২৩শে অক্টোবর। একই সঙ্গে রয়েছে ওলিকুল শিরোমণি হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজার জিয়ারতের কর্মসূচিও। কর্মসূচি চূড়ান্ত করার পর গত বুধবার বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদিরের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার গোলাম কিবরিয়ার সঙ্গে দেখা করে লিখিত পত্র দিয়ে আসেন। ওই পত্রে তারা ২৩শে অক্টোবর সিলেটের রেজিস্ট্রারি মাঠে সমাবেশের অনুমতি চান।
ওই পত্র জমা দেয়ার পরপরই সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের তরফ থেকে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হবে না মর্মে জানিয়ে দেয়া হয়। এরপর এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। পরে সিলেটের নেতারা কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনাক্রমে গত শনিবার আবারো যান মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে। সেখানে গিয়ে তারা ২৪শে অক্টোবর সমাবেশের অনুমতি চেয়ে ফের আবেদন করেন। কিন্তু আবেদন দিয়ে আসার পরপরই পুলিশের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেয়া হয়, অনুমতি দেয়া যাবে না। ফলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সিলেট সমাবেশ নিয়ে ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়। সমাবেশের অনুমতি না পাওয়ায় সিলেট বিএনপির শীর্ষ নেতারা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের নিয়ে শুধুমাত্র মাজার জিয়ারতের কর্মসূচি রেখেছিলেন। তবে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অনুমতি পেলে সমাবেশ করতে প্রস্তুত রয়েছেন বলে বিএনপি নেতারা জানিয়ে আসছিলেন।
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের শামীম গতকাল সন্ধ্যায় মানবজমিনকে জানিয়েছেন, অনুমতি প্রদানের বিষয়টি পুলিশের তরফ থেকে তাদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন- আমরা সমাবেশের জন্য প্রস্তুতি আগেই নিয়ে রেখেছি। ২৪শে অক্টোবর বিকেলে সিলেটের ঐতিহাসিক রেজিস্ট্রারি মাঠে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ জানিয়েছেন, ২৪শে অক্টোবর সিলেট থেকেই আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করবে ঐক্যফ্রন্টের মাঠের কর্মসূচি।
ওলিদের মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে শুরু হবে ঐক্যযাত্রা। আর এই যাত্রায় শরিক হচ্ছে সিলেটবাসী। এজন্য আমরা আয়োজনে কোনো ত্রুটি রাখছি না। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার পরিতোষ ঘোষ সমাবেশের অনুমতি দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, এ সম্পর্কে লিখিত পত্রও দেয়া হচ্ছে। এদিকে সমাবেশের বিষয়টির সত্যতা জানতে কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশে সন্ধ্যায় সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে যান বিএনপি নেতা ও সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
এ সময় পুলিশের পক্ষ থেকে তার কাছেও অনুমতি প্রদানের বিষয়টি জানানো হয়। সন্ধ্যায় নিজ বাসায় মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, অনুমতি পাওয়া গেছে। এখন সমাবেশের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। সিলেট বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্টের শরিক দলের নেতারা জানিয়েছেন, সিলেটের সমাবেশে ঢাকা থেকে ঐক্যফ্রন্টের প্রায় সব শীর্ষ নেতাই সিলেটে আসছেন। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে তারা সিলেটে এসে প্রথমে ওলিকুল শিরোমণি হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজার জিয়ারত করবেন। পরে তারা হযরত শাহপরাণ (রহ.) মাজার জিয়ারত করবেন। বিকেলে রেজিস্ট্রারি মাঠে সমাবেশে ভাষণ দেবেন।
সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আজমল বখ্ত সাদেক জানিয়েছেন, সমাবেশের জন্য আমরা পুরোপুরি প্রস্তুতি নিয়েছি। জাতীয় নেতৃবৃন্দ এলে সিলেটের রাজপথে জনতার ঢল নামবে বলে জানান তিনি। বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্টের নেতারা সিলেটে শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
১৪ শর্তে অনুমতি: সিলেটে ১৪ শর্তে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে সমাবেশে অনুমতি দিয়েছে পুলিশ। এসএমপির নগর পুলিশের বিশেষ শাখার উপ-পুলিশ কমিশনার স্বাক্ষরিত ওই অনুমতিপত্রে এ শর্ত দেয়া হয়। শর্তের মধ্যে রয়েছে- ১. অনুষ্ঠানস্থলে পর্যাপ্তসংখ্যক পুরুষ-মহিলা স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করতে হবে, ২. রাষ্ট্রবিরোধী কোনো ধরনের বক্তব্য বা বিবৃতি দেয়া যাবে না, ৩. সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে কিংবা ধর্মীয় অনুভূতি ও মূল্যবোধের উপর আঘাত হানে এ ধরনে বক্তব্য বা বিবৃতি প্রদান বা কোনো ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করা যাবে না, ৪. জনসাধারণের চলাচলের উপর কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না, ৫. নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কর্মসূচি শেষ করতে হবে, ৬. আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে কিংবা মানুষের জানমালের ক্ষতি সাধিত হয় এ ধরনের বক্তব্য প্রদান করা যাবে না, ৭. মাইক ব্যবহারে আশপাশের মানুষের কোনো অসুবিধা করা যাবে না, ৮. ব্যাগ-সিগারেট-দিয়াশলাই, লাইটার নিয়ে সমাবেশে প্রবেশ করা যাবে না, ৯. কোনো ধরনের লাঠিসোটা, ধারালো অস্ত্র কিংবা লাঠি সংবলিত ব্যানার, ফেস্টুন ব্যবহার করা যাবে না, ১০. কোনো ধরনের বৈধ অস্ত্র আনা বা বহন করা যাবে না, ১১. সুরমা পয়েন্ট থেকে তালতলা পর্যন্ত কোনো ধরনের গাড়ি পার্কিং করা যাবে না, ১২. অনুষ্ঠানস্থলে আইনশৃঙ্ক্ষলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে আয়োজনকারী দায়ী থাকবেন, ১৩. উল্লিখিত শর্তাবলীর এক বা একাধিকটি লঙ্ঘন করলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, ১৪. কর্তৃপক্ষ কোনো কারণ দর্শানো ছাড়াই অনুমতি আদেশ বাতিল করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করেন।
- কার্টসিঃ মানবজমিন/ ২২ অক্টোবর ২০১৮
- লিংক - https://goo.gl/XSAuVS
No comments:
Post a Comment