Search

Wednesday, October 24, 2018

শ্রমিক অসন্তোষ

সম্পাদকীয়

বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ করুন


বকেয়া বেতন–ভাতার দাবিতে মাঝেমধ্যেই যে বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক অসন্তোষের অনভিপ্রেত ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে থাকে, সে জন্য শ্রমিকদের কোনোভাবে দায়ী করা যায় না। কেননা বেতন–ভাতা বা সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর দাবিতে তাঁরা কাজ বন্ধ করেননি, বরং কাজ করার পরও মজুরি আটকে দিয়ে মালিকপক্ষ শ্রমিকদের রাস্তায় নামতে বাধ্য করেছে। এ ধরনের পুনরাবৃত্তি কাম্য নয়।

প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, গত সোমবার নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী ইপিজেডে বকেয়া বেতনের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভরত পোশাক কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এতে ১২ পুলিশ সদস্যসহ আহত হন অর্ধশতাধিক শ্রমিক। সংঘর্ষের সময় ইপিজেডের সামনে শিমরাইল-নারায়ণগঞ্জ সড়কে ভাঙচুর হয়েছে অর্ধশতাধিক যানবাহন; আগুন দেওয়া হয়েছে একটি কাভার্ড ভ্যানে। পরে মালিকপক্ষের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে শ্রমিকেরা অবরোধ প্রত্যাহার করেন। মালিকপক্ষ ১৫ নভেম্বরের মধ্যে বেতন–ভাতা পরিশোধ করার আশ্বাস দিয়েছে।

অন্যদিকে অন্তিম নিটিং ডাইং অ্যান্ড ফিনিশিং ও অন্তিম নিট কম্পোজিটের বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা মঙ্গলবার সকালে দুই ঘণ্টা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। এতে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে মহাসড়কের ১৬ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। যাত্রীরা চরম ভোগান্তির শিকার হন। প্রতি মাসের ১০ তারিখে মজুরি দেওয়ার কথা থাকলেও ওই কারখানার বেশির ভাগ শ্রমিক গত মাসের মজুরি পাননি। মালিকপক্ষ তাঁদের মজুরি না দিয়ে গত শনিবার ও রোববার কারখানার তিনটি সেকশন বন্ধ ঘোষণা করে।

দুটি স্থানেই মালিকপক্ষের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে শ্রমিকেরা ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছেন। সড়ক যোগাযোগও স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। কিন্তু এই স্বাভাবিক অবস্থা কতটা স্থায়ী হবে, তা নির্ভর করছে মালিকপক্ষের ওপর। তাঁরা ওয়াদা অনুযায়ী শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করে রাখলে কারখানা ঠিকমতো চলবে। ওয়াদা পালন না করলে নতুন করে হাঙ্গামা তৈরি হওয়া অস্বাভাবিক নয়। উল্লেখ করা প্রয়োজন যে তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকেরা এখন পর্যন্ত পুরোনো মজুরিকাঠামো অনুযায়ী মজুরি পাচ্ছেন। সরকার নতুন মজুরিকাঠামো ঘোষণা করলেও শ্রমিকেরা মেনে নেননি। তাঁদের দাবি ছিল ন্যূনতম মাসিক মজুরি ১২ হাজার টাকা করার। বিশেষজ্ঞেরা শ্রমিকদের মজুরি ১০ হাজার টাকা হওয়া উচিত বলে অভিমত প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু মালিকপক্ষ কোনোভাবেই ৮ হাজার টাকার বেশি করতে রাজি হয়নি।

কিন্তু সেই পুরোনো কাঠামোর মজুরি নিয়েই যখন মালিকপক্ষ ধানাইপানাই করছে, তখন নতুন মজুরিকাঠামো বাস্তবায়ন কীভাবে আশা করা যায়? হতে পারে মালিকপক্ষ শ্রমিকদের ঠকানোর জন্যই বেতন–ভাতা বকেয়া রাখছে। কিন্তু এ ধরনের অপকৌশল যে মালিক, শ্রমিক কিংবা শিল্পের জন্য মঙ্গলজনক নয়, সে কথাও তাদের বুঝতে হবে। আমরা আশা করব, শ্রমিকদের বকেয়া বেতন–ভাতা অবিলম্বে পরিশোধ করা হবে এবং নারায়ণগঞ্জ ইপিজেড, রূপগঞ্জসহ সব শিল্পাঞ্চলে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে।

  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ ২৪ অক্টোবর ২০১৮

No comments:

Post a Comment