Search

Sunday, October 28, 2018

খায়রুল হক রায়ে কী বলেছিলেন


মন্ত্রী-এমপিদের আচরণবিধি: দ্বিমুখী নীতি ইসি’র





সিরাজুস সালেকিন


মন্ত্রী-এমপিদের ভোটে অংশগ্রহণের বিষয়ে দ্বিমুখী নীতি গ্রহণ করেছে নির্বাচন কমিশন। স্থানীয় নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের যে সুযোগ নেই, সংসদ নির্বাচনে তা ভোগ করবেন তারা। স্বপদে বহাল থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবেন সরকারি সুবিধাভোগী এই অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা। তালিকায় আরো রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, বিরোধী দলীয় নেতা, সংসদ উপনেতা, বিরোধী দলীয় উপনেতা, প্রতিমন্ত্রী, হুইপ, উপমন্ত্রী বা তাদের সমমর্যাদার ব্যক্তি এবং সিটি করপোরেশনের মেয়র। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে তাদের প্রচারণায় অংশ নেয়ার সুযোগ নেই। এমনকি তারা সংসদের কোনো শূন্য আসনে উপ-নির্বাচনের সময় প্রচারণায় অংশ নিতে পারেন না। অথচ সংসদের সাধারণ নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিসহ সরকারি সুবিধাভোগীরা স্বপদে বহাল থেকে অংশ নিচ্ছেন।


নির্বাচন কমিশনের বর্তমান আচরণ বিধিমালায় সংসদ ভোটের প্রচারণায় অংশ নিতেও তাদের বাধা নেই।
এ অবস্থায় নির্বাচনের মাঠে অসম পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। যে রায়ের অজুহাত দেখিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করা হয়েছিল- ওই রায়েই বিচারপতি খায়রুল হক নির্বাচনের ৪২ দিন আগে সংসদ বাতিলের নির্দেশনা দিয়েছিলেন। ওই নির্দেশনার মূল চেতনায়   ছিলো যাতে করে নির্বাচনের মাঠে লেভেল ফিল্ড নিশ্চিত হয়। সিটি করপোরেশন নির্বাচন আচরণ বিধিমালায় বলা আছে, ‘সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এবং কোনো সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী নির্বাচন-পূর্ব সময়ে নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণায় বা নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করিতে পারিবেন না। তবে শর্ত থাকে যে, উক্ত রূপ ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ভোটার হইলে তিনি কেবল তাহার ভোট প্রদানের জন্য ভোটকেন্দ্রে যাইতে পারিবেন।’


এছাড়া আচরণবিধিতে আরো বলা হয়েছে, ‘নির্বাচন-পূর্ব সময়ে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বা তাহার পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান নির্বাচনী কাজে সরকারি প্রচারযন্ত্র, সরকারি যানবাহন, অন্য কোনো সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোট এবং সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারীগণকে ব্যবহার করিতে পারিবেন না।’ অপরদিকে সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালায় শুধুমাত্র শূন্য আসনে উপ-নির্বাচনে সরকারি অতি সুবিধাভোগী ব্যক্তিদের প্রচারণায় অংশ নিতে বাধার কথা বলা আছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবেন দশম সংসদের অনেক এমপি। বাস্তবতা হচ্ছে, এমপিরা এলাকায় সর্বোচ্চ প্রভাবশালী ব্যক্তি। একই সঙ্গে মন্ত্রীরা তাদের স্ব-স্ব দপ্তরের প্রধান।


নির্বাচন-পূর্ব সময়ে সরকারি কর্মকর্তাদের তারা ব্যবহার করবেন এমন শঙ্কা থেকে যাচ্ছে। এতে ক্ষমতাসীনদের বাইরে যারা এমপি প্রার্থী হবেন তারা এক প্রকার ভীতির মধ্যে থাকবেন। আবার যেসব এমপি এবার মনোনয়ন পাবেন না তাদের নিয়ে ভীতি থাকবে মনোনয়নপ্রাপ্তদের। এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, সংসদ ভেঙে নির্বাচন করা বেআইনি কিছু না। কারণ, এটা সংবিধানে স্পষ্ট করে বলাই আছে সংসদ ভেঙে নির্বাচন করা যাবে। সরকার বর্তমানে যে ভূমিকা গ্রহণ করছে তাতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত সম্ভব না। ইতিমধ্যে আমরা দেখছি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে জনসভার অনুমতি দেয়া হচ্ছে না।
মন্ত্রী-এমপিরা স্বপদে বহাল থাকলে এরকম ঘটনাই ঘটবে। ইসি সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৩০শে অক্টোবর থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন গণনা শুরু হচ্ছে। ১লা নভেম্বর প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতের পর ৪ঠা নভেম্বর তফসিল ঘোষণার পরিকল্পনা ইসির। আর ভোটগ্রহণ করা হতে পারে ১৮ থেকে ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে। গতবারের মতোই সংসদ বহাল রেখেই এবার সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ফলে এমপিরা স্বপদে বহাল থেকেই নির্বাচনে অংশ নেবেন। নির্বাচনকালীন সময়ে সরকারের মন্ত্রিসভা ছোট না করার ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বর্তমানে মন্ত্রিসভায় পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী আছেন ৩৩ জন, প্রতিমন্ত্রী ১৭ জন এবং উপমন্ত্রী ২ জন। সংসদ বহাল থাকলে বর্তমান মন্ত্রী-এমপি শুধুমাত্র সরকারি সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করতে পারবেন না। কিন্তু কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাবেন সে বিষয়ে কোথাও উল্লেখ নেই।


স্থানীয়ভাবে মন্ত্রী-এমপিরা বিভিন্ন সংগঠন, সংস্থার কমিটিতে পদ ধারণ করেন। আইনশৃঙ্খলা কমিটিসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক ফোরামে তারা নীতি নির্ধারণী কাজ করেন। তাই তফসিলের পর এমপিদের ক্ষমতা খর্ব না করলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত সম্ভব হবে না এমন আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। এ অবস্থায় বিদ্যমান আচরণবিধিতেই তফসিল ঘোষণা করছে নির্বাচন কমিশন। সম্প্রতি ইসির আইন সংস্কার কমিটির প্রধান এবং নির্বাচন কমিশনার বেগম কবিতা খানম জানান, বিদ্যমান আইন ও বিধির মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা নির্বাচনে অংশ নেবেন। তাদের বিধি-নিষেধের বিষয়টি বর্তমান আচরণ বিধিমালায় বলাই আছে। সুতরাং আচরণবিধি মালা সংস্কারের কোনো প্রয়োজন নেই।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আচরণবিধি মালায় সামান্য পরিবর্তন এনেছে ইসি। বিএনপি, যুক্তফ্রন্ট, জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়াসহ সরকারবিরোধী জোটগুলোর পক্ষ থেকে নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেয়ার দাবি উঠেছে। ক্ষমতাসীন দল সে দাবি মানতে নারাজ। তারা সংবিধান অনুযায়ী সংসদ বহাল রেখেই নির্বাচন করার পক্ষে। আগামী নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে তফসিল এবং ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে ভোটগ্রহণের কথা। এ অবস্থায় নির্বাচন কমিশনের একাংশ তফসিল ঘোষণার পর এমপিদের ক্ষমতা খর্বের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই প্রস্তাব টেকেনি। সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন করলে এই সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের কর্মকাণ্ড কেমন হবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন সংশ্লিষ্টরা।


গত এপ্রিলে সাংবাদিকদের এক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার সিইসি কেএম নূরুল হুদা বলেছিলেন, সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন হলে ভোটে দাঁড়ানো এমপিদের ক্ষমতা খর্ব করা প্রয়োজন। এজন্য ইসি আচরণবিধি সংশোধনের কথা ভাববে বলে জানান তিনি। ইসি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৪ সালে সংসদ বহাল রেখেই দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওইসময় বিএনপিসহ বেশকিছু রাজনৈতিক দল নির্বাচন করে। ফলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার জন্য ইসিকে বেগ পেতে হয়নি। কিন্তু এবার যদি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয় তাহলে বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হবে। অতীতে স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে আইন থাকার পরও এমপিদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। এমপিরা এমনিতেই স্থানীয়ভাবে সর্বোচ্চ ক্ষমতা ভোগ করে। সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন হলে এমপিরা প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।


Courtesy: Manabzamin Oct 28, 2018

No comments:

Post a Comment