Search

Monday, October 22, 2018

অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন উদ্বেগ প্রশমিত করতে পারে

এনডিআই’র রিপোর্ট

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রকাশিত ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউটের (এনডিআই) প্রতিবেদন বলেছে, নির্বাচন যতো ঘনিয়ে আসছে, ততোই বাংলাদেশের মেরূকরণ ঘটছে এবং রাজনৈতিক বিতর্কের জায়গা সংকুচিত হয়ে পড়ছে। বিরোধী দল অভিযোগ করেছে, তাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মামলা দায়ের করা হয়েছে। সিভিল ও রাজনৈতিক অধিকারের   ওপর নানা ধরনের বাধানিষেধ ক্রমশ বাড়ছে। এনডিআই প্রতিনিধিদলটি ঢাকায় থাকতেই প্রেসিডেন্ট ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সই করেছেন। 

একথা উল্লেখ করে সংস্থাটির প্রতিবেদন মন্তব্য করেছে যে, ‘এটা ভয় আরো বাড়িয়েছে। যদিও জাতীয় নিরাপত্তার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এই আইনের অপব্যবহার ঘটতে পারে। আইনের শাসন, বাকস্বাধীনতা এবং ডিউ প্রসেসের ধারণায় প্রতিকূলতা তৈরি করবে।

এই ধরনের আইন প্রণীত হওয়ার কারণে কতিপয় বাংলাদেশি এবং আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের সদস্য উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, এই আইন গণতান্ত্রিক রীতিনীতির প্রতি অবিচল থাকতে দেশটির যে দীর্ঘ ঐতিহ্য আছে, সেটি ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে। এমনকি তা  দেশটিকে একদলীয় আধিপত্যের দিকে নিয়ে যেতে পারে।’ 

লক্ষণীয় যে, এনডিআই ওই মন্তব্যের পরে বলেছে, আসন্ন নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে করার মধ্য দিয়ে এধরনের উদ্বেগ প্রশমিত করতে পারে। এ জন্য গণতন্ত্রের প্রতি সংকল্প এবং রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে প্রতিযোগিতাপূর্ণ করতে হবে। 

এ প্রসঙ্গে তারা আন্তর্জাতিক রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট দ্বারা পরিচালিত একটি সামপ্রতিক জনমত জরিপের বরাতে বলেছে, দুই দলীয় সংলাপকে বাংলাদেশের মানুষ সমর্থন করবে। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি তাদের মতপার্থক্যগুলো দূরে সরিয়ে সমস্যা সমাধানের জন্য একসঙ্গে কাজ করতে সক্ষম, এই ধারণা বাংলাদেশের একটি উল্লেখযোগ্য জনগোষ্ঠীর বিশ্বাসে আছে।

ওই জরিপে অংশগ্রহণকারী ৫৯ শতাংশ উত্তরদাতারা এ বিষয়ে একমত। এনডিআই প্রতিনিধিদল বিশ্বাস করে যে সরকার ও বিরোধী দল সংলাপে বসলে একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণে তারা একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে পারে। প্রতিনিধিদলটি আরো মনে করে,  ‘গত এক দশকে অর্থনীতির উন্নয়ন ও দারিদ্র্যবিমোচনে যে অর্জন বয়ে এনেছে, সেটা তার বিরাজমান রাজনৈতিক উন্নয়ন ধারার সঙ্গে একেবারেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।’ 

এনডিআই তার রিপোর্টে আরো বলেছে, বাংলাদেশের সামপ্রতিককালে যেসব গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করেছে, সেটা এখন যদি একটি বিশ্বাসযোগ্য এবং স্বচ্ছ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে পারে তাহলে তা সম্পূর্ণতা পাবে। এর ফলে বাংলাদেশের নাগরিকদের আস্থা পূরণে সাফল্য আসবে।

উল্লেখ্য, এনডিআই প্রতিনিধিদল এই সুপারিশমালা তৈরি করতে গত ৫ থেকে ১১ই অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তা, রাজনৈতিক দলের  নেতা, নির্বাচন কমিশন, সুশীল সমাজ প্রতিনিধি, নাগরিক নির্বাচন পর্যবেক্ষক গ্রুপের সঙ্গে কথা বলে। তারা নারী সংসদ সদস্য, রাজনৈতিক কর্মী; মিডিয়া প্রতিনিধি, সাবেক সরকারি কর্মকর্তা; ব্যবসায়ী নেতা এবং আন্তর্জাতিক ও কূটনৈতিক সমপ্রদায়ের প্রতিনিধিদের মতামতও নেন। 

বর্তমান এনডিআই বোর্ডের সদস্য এবং মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ এশীয় বিষয়ক সাবেক মার্কিন সহকারী সেক্রেটারি রাষ্ট্রদূত কার্ল ইন্ডারফার্থ দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারত বিষয়ক তিনি একজন বিশেষজ্ঞ। পাকিস্তানি লেখক ও সাবেক সংসদ সদস্য ফারাহ নাজ ইস্পাহানী এবং সিনিয়র সহযোগী ও এনডিআইয়ের এশিয়া প্রোগ্রামের আঞ্চলিক পরিচালক পিটার ম্যানিকাস, এনডিআই নির্বাচন উপদেষ্টা মাইকেল ম্যাকনুলি এবং এনডিআই-এর এশীয় বিষয়ক সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার অ্যাডাম নেলসন ওই প্রতিনিধি দলে আছেন।

এনডিআই রিপোর্ট বলেছে, ‘গত এক দশকে দেশটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রত্যক্ষ করেছে। লাখ লাখ মানুষ দারিদ্র্যের বাইরে এসেছে। যদিও আয় বৈষম্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়েই আছে। ২০১৫ সালে দেশটি বিশ্বব্যাংকের রাঙ্কিং ‘মাঝারি আয় অবস্থায়’ উন্নীত হয়েছিল। এই বছরের শুরুর দিকে জাতিসংঘ স্বীকৃতি দিয়েছে যে বাংলাদেশ সম্ভবত ২০২৪ সালের মধ্যে এলডিসি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার মাপকাঠি পূরণ করবে। উপরন্তু, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার  নেতৃত্বাধীন সরকার বিশেষভাবে প্রশংসার দাবিদার। কারণ ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে মিয়ানমার  থেকে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে বরণ করে নিতে সরকার দেশের সীমান্ত খুলে দিয়েছে।’ 

এনডিআই প্রতিবেদনে আসন্ন নির্বাচনে ভয়ভীতির পরিবেশ এবং সম্ভাব্য সহিংসতার ব্যাপকতার বিষয়ে সতর্ক করেছে। তারা বলেছে, আগামী নির্বাচনে সহিংসতার প্রকোপ বাড়লে তা গোটা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণকে হ্রাস করবে।  

এনডিআই উল্লেখ করেছে যে, বাংলাদেশের গত নির্বাচনগুলো  নির্বাচনী বয়কট, সাধারণ ধর্মঘট (হরতাল), অবরোধ এবং তার পাশাপাশি সহিংসতা ও ভয়ের একটি প্যাটার্ন অনুসরণ করেছে। আর এই ঐতিহাসিক বাস্তবতাই বাংলাদেশের উভয় প্রতিদ্বন্দ্বী দলের কাছে রাজনীতিকে একটি জিরো সাম গেম বা একটি শূন্য-সমষ্টি খেলা হিসেবে চিহ্নিত করেছে।  

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি)  নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের  ফেব্রুয়ারিতে দুর্নীতির দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন। বর্তমানে তিনি পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন। একই ধরনের উদাহরণ আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয়কে গত কয়েক বছরের রাজনীতিতে নিজেদের নেতাদের মধ্যে অবিশ্বাসের সংস্কৃতির বিকাশ ঘটিয়েছে। এবং নির্বাচনে হেরে যাওয়ার বিরূপ প্রতিক্রিয়ার ভয়ে ভীতি অনুভব করছে। 

এনডিআই রিপোর্ট বলছে, বাংলাদেশ সংসদের ৩০০ আসন একক সদস্যের নির্বাচনী এলাকা নিয়ে গঠিত। ৫০ আসন নারীর জন্য সংরক্ষিত। এসব সংরক্ষিত আসন সরাসরি নির্বাচিত হয় না; তা বরাদ্দ করা হয় পার্লামেন্টে দলগুলোর আসনের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ওপর ভিত্তি করে। রাজনৈতিক দলগুলো এখন একক ম্যান্ডেট পেতে নির্বাচনী এলাকার জন্য প্রার্থীদের চিহ্নিত করছে। দলগুলোর মধ্যে মনোনয়ন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ নয়। এমনকি দলগুলোর অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক চর্চায় এর কোনো প্রভাব নেই। পার্টি প্রতিনিধিরা বলেছেন, সাধারণত যারা গুরুত্বপূর্ণ পরিমাণে তহবিল আনতে এবং ভালো কানেকশন  রেখে চলেন, তারাই মনোনয়ন পান। তৃণমূল স্তর থেকে নতুন নারী প্রার্থীর উত্থানও একই কারণে বাধাগ্রস্ত হয়ে থাকে। 

  • কার্টসিঃ মানবজমিন/ ২২ অক্টোবর ২০১৮
  • লিঙ্ক —https://goo.gl/iAyzQn

No comments:

Post a Comment