Search

Thursday, October 25, 2018

ব্যাংক ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলার অবসান হোক

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের পর্ষদের ক্ষমতায় পরিবর্তন


রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক পরিচালনার মূল দর্শন ছিল জনগণের স্বার্থ রক্ষা করা। কিন্তু বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোয় অনেক দিন ধরে অনিয়ম ও দুর্নীতি চলছে। এখন অনিয়ম এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, বারবার ‘কোরামিন’ দিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানকে বাঁচিয়ে রাখতে হচ্ছে। ২০১১ সালে সোনালী ব্যাংকে হলমার্ক কেলেঙ্কারির পর ধারণা করা হয়েছিল কর্তৃপক্ষের বোধোদয় হবে। কিন্তু সেটি যে হয়নি, তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ বেসিক ব্যাংকের অর্থ লুটপাট; জনতা, রূপালী ও কৃষি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি। 

বিভিন্ন সমালোচনার মুখে কয়েকটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে রদবদল আনা হলেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। জনগণের করের টাকায় সরকার বেহাল ব্যাংকগুলোকে অর্থায়ন করলেও লুটপাটের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কার্যকর আইনগত ব্যবস্থা নেয়নি। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক পরিচালনার সঙ্গে যুক্তদের নৈতিকতা নিয়ে প্রায়ই প্রশ্ন উঠছে। দলীয় বিবেচনায় পরিচালনা পর্ষদে নিয়োগ দেয়া ব্যক্তিরা অনেক সময় নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য বিভিন্ন অনৈতিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। নিয়োগ ও বদলির ক্ষেত্রে নিজস্ব লোকদের গুরুত্ব দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। 

ব্যাংকে পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে ২০০৯ সালের ১২ এপ্রিল জারি করা অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়— অর্থনীতিবিদ, সনদপ্রাপ্ত হিসাববিদ, আর্থিক বাজার, মুদ্রানীতি ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তি, সাবেক ব্যাংকার, আইনজ্ঞ, ব্যবসায়ী এবং কমপক্ষে একজন নারী পেশাজীবীকে ব্যাংকের পর্ষদে সদস্য করা হবে। গত ছয় বছরে এ প্রজ্ঞাপন অনুসরণে ব্যত্যয় ঘটেছে। এমনকি সমাজসেবক আখ্যা দিয়ে অনেক রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে পর্ষদ সদস্য বানানো হয়েছে। 

রাজনৈতিক বিবেচনায় পরিচালক নিয়োগের বিতর্কিত পথ থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোয় সুস্থ পরিবেশ সৃষ্টিতে অবদান রাখবে বলে আশা করা হয়েছিল। কিন্তু তাতে সুফল মেলেনি। সার্বিক পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাতে শুধু রাজনৈতিক বিবেচনায় পরিচালক নিয়োগ বন্ধ করলেই চলবে না, অন্যান্য ক্ষেত্রেও সঠিক পথে এগোতে হবে। সুশাসনের জন্য দক্ষ পরিচালক নিয়োগের পাশাপাশি ব্যবস্থাপনায় উন্নতি ঘটাতে হবে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোয় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের কার্যক্রম সুনির্দিষ্টকরণের ব্যবস্থাও নেয়া দরকার। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মালিক দেশের ১৬ কোটি মানুষ। এসব ব্যাংকে আমানত হিসেবে জনগণের যে অর্থ থাকে, তা লুটপাটের কোনো অবকাশ থাকা উচিত নয়। সুব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সব রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সরকারের দায়িত্ব।

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীর নিচের এক স্তর পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে পরিচালনা পর্ষদের ক্ষমতা খর্ব করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে বেসরকারি ব্যাংকের ক্ষেত্রে পর্ষদের ওপরই ন্যস্ত থাকবে সেই ক্ষমতা। আগে দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের ক্ষেত্রেই এ নিয়ম চালু ছিল। ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে প্রধান নির্বাহীরা অনেক সময় নিজের মতো প্রশাসন সাজিয়ে যোগসাজশে অন্যায় কাজ করেছেন বলে অভিযোগ আসার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক এ সার্কুলার জারি করেছে। একে ইতিবাচক হিসেবে দেখতে চাই আমরা। এর মাধ্যমে নিয়োগ ও বদলির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্ষমতা কিছুটা হলেও প্রতিষ্ঠিত হলো। এটি সাময়িক ব্যবস্থা। আমরা চাইব রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের তদারকি ও দেখভালের দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে ন্যস্ত করা হবে। 

এজন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা ব্যাংকিং ডিভিশন বিলুপ্ত করতে হবে। এর মাধ্যমে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে কিছুটা হলেও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হবে বলে প্রত্যাশা করা যায়। একই সঙ্গে ব্যাংকিং কমিশন গঠন করে রাষ্ট্রায়ত্তসহ পুরো ব্যাংকিং খাতের মূল্যায়ন ও ত্রুটি চিহ্নিতপূর্বক সংস্কারের উদ্যোগও নিতে হবে। সর্বোপরি ব্যাংকিং খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কোনো ছাড় দেয়া যাবে না। নিয়োগ, পদোন্নতি, ঋণ প্রদান প্রভৃতি বিষয় বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দিষ্ট গাইডলাইন মেনে চললে দুর্নীতি ও অনিয়মের সংখ্যা কমে আসবে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ক্ষমতার রাশ টেনে ধরার মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক যে শুভ উদ্যোগ নিয়েছে, তার ধারাবাহিকতায় আরো পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে আমাদের প্রত্যাশা। তদারকির মাধ্যমে এর প্রয়োগও নিশ্চিত করতে হবে।
  • কার্টসিঃ বনিক বার্তা/ ২৪ অক্টোবর ২০১৮

No comments:

Post a Comment