Search

Monday, October 22, 2018

নাম বিড়ম্বনায় দেশের অন্যতম বৃহৎ প্রকল্প মাতারবাড়ী

জাইকার প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে ‘মাতারবাড়ী বন্দর’। জেলা প্রশাসন চাইছে ‘বঙ্গবন্ধু বন্দর’ নামকরণ করতে। এতে আপত্তি তুলেছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। তার দাবি, বন্দরের নাম হতে হবে ‘ধলঘাট সমুদ্রবন্দর’। এ দাবিতে প্রকল্পের অনাপত্তি সনদও দিচ্ছেন না। অনাপত্তিপত্রের অভাবে সম্পন্ন করা যাচ্ছে না প্রকল্পের পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন (ইআইএ) প্রতিবেদনের কাজ। নাম নিয়ে এ বিড়ম্বনা দেখা দিয়েছে দেশের অন্যতম বৃহৎ প্রকল্প মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দর নিয়ে।

পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, বৃহৎ প্রকল্পের জন্য ইআইএর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এজন্য অনাপত্তি সনদ নিতে হয় স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে। নির্মাণাধীন মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দর প্রকল্পটি কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার ধলঘাট ইউনিয়নের আওতাভুক্ত হওয়ায় অনাপত্তিপত্র নিতে হবে ধলঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছ থেকে।

তবে ধলঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অনাপত্তিপত্র দিচ্ছেন না বলে জানা গেছে। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এখনো যে অনাপত্তি সনদ দেননি, সে ব্যাপারে আমি অবগত নই। তবে তিনি বন্দরটির নামকরণ করতে চাইছেন ধলঘাট সমুদ্রবন্দর। আমরা বঙ্গবন্ধুর নামে বন্দরটির নামকরণের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি।

কক্সবাজারের মহেশখালীতে মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পের আওতায় মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দরের সম্ভাব্যতা সমীক্ষায় রয়েছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)। গত কয়েক বছরে এর কার্যক্রম অনেক দূর এগিয়েছেও। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের অধীনে সাড়ে ১৮ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ার উপযোগী করে নির্মাণ করা এ বন্দর। এখন চলছে প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম।

প্রকল্পটি যাতে দ্রুত শুরু করা যায়, সেজন্য ইআইএ ছাড়পত্র প্রয়োজন। কারণ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, ইআইএ ছাড়া বড় কোনো প্রকল্পের কাজ শুরু করার সুযোগ নেই। পরিবেশ আইন অনুযায়ী ইআইএ প্রতিবেদন জমা দিতে হয় স্থানীয় পরিবেশ অধিদপ্তরে। এ নিয়েই দেখা দিয়েছে জটিলতা। ইআইএ প্রতিবেদনের জন্য বেশ কিছুদিন আগে ধলঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল হাসানের অনাপত্তি চাওয়া হলেও তিনি তা দিচ্ছেন না।

কামরুল হাসানের যুক্তি, পুরো এলাকাটি ভৌগোলিকভাবে মাতারবাড়ী দ্বীপ হিসেবে পরিচিত। আর মাতারবাড়ী দ্বীপে দুটি ইউনিয়ন। একটি মাতারবাড়ী, অন্যটি ধলঘাট। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ধলঘাট ও মাতারবাড়ী উভয় ইউনিয়নেই হচ্ছে। তাই এর নাম মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র হওয়ায় ধলঘাট এলাকার মানুষের তেমন কর্মসংস্থান হচ্ছে না। তবে বন্দরের পুরো জায়গাটি ধলঘাট ইউনিয়নে। তাই এর নামকরণ হতে হবে ‘ধলঘাট বন্দর’।

জানতে চাইলে কামরুল হাসান বণিক বার্তাকে বলেন, ইআইএ প্রতিবেদনের জন্য আমার কাছ থেকে অনাপত্তি সনদ নিতে বলা হয়েছে। স্থানীয় জনসাধারণের জন্য আমাকে কিছু করতে হবে। আমার এলাকার সব জমি দিয়ে দেব, অথচ এলাকার নামে প্রকল্পের নাম হবে না, এ কেমন কথা? এজন্য আমি অনাপত্তি সনদ দিইনি। ধলঘাটের নামে বন্দরের নামকরণ হবে, এমন আশ্বাস পেলেই কেবল অনাপত্তি সনদ দেব। জেলা প্রশাসককেও বিষয়টি আমি জানিয়েছি।

প্রকল্প কর্মকর্তারা বলছেন, এখন পর্যন্ত বন্দরের নামকরণ চূড়ান্ত হয়নি। প্রকল্প শুরুর আগে এটি মাতারবাড়ী বন্দর হিসেবেই পরিচিতি পেয়েছে। পরবর্তী সময়ে গত বছর নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনের সময় একে মাতারবাড়ী বাণিজ্যিক বন্দর হিসেবে উল্লেখ করে।

প্রকল্পটির পরিচালক হিসেবে আছেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) জাফর আলম। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, আমাদের প্রস্তাবিত জায়গাটি পড়েছে মহেশখালীর ধলঘাট মৌজায়। তাই ধলঘাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের দাবি, এ বন্দরের নামকরণ ধলঘাট সমুদ্রবন্দর হতে হবে। সেজন্য তিনি অনাপত্তি সনদ দিতে বিলম্ব করছেন।

অনাপত্তি সনদের অভাবে ইআইএ প্রতিবেদনও পূর্ণাঙ্গ করে পরিবেশ অধিদপ্তরের স্থানীয় কার্যালয়ে জমা দিতে পারছে না প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। প্রতিবেদন না পাওয়ার কথা স্বীকার করেন পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সাইফুল আশ্রাব। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ অনলাইনে ইআইএ জমা দিলেও হার্ড কপি (পূরণকৃত ফরম) এখনো দেয়নি। আর হার্ড কপি ছাড়া তা গ্রহণযোগ্য হবে না।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ ভিড়তে পারে সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের। বে টার্মিনাল হলে সর্বোচ্চ সাড়ে ১১ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ার সুযোগ পাবে। তবে মাতারবাড়ী বন্দরে সাড়ে ১৮ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারবে। ফলে সাগরপথে চলাচলকারী বড় জাহাজ এ বন্দরে ভেড়ার সুযোগ পাবে। এ ধরনের জাহাজ যেসব বন্দরে ভেড়ে, সেগুলোকে গভীর সমুদ্রবন্দর বলা হয়। তবে সরকারের পক্ষ থেকে এটাকে গভীর সমুদ্রবন্দর না বলে বাণিজ্যিক বন্দর বলা হচ্ছে। ২০২৩ সালে এ বন্দর চালু করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।

  • কার্টসিঃ বনিক বার্তা/ ২২ অক্টোবর ২০১৮

No comments:

Post a Comment