Search

Sunday, October 28, 2018

মন্ত্রীর সংগঠনের ডাকে ধর্মঘট!

স্টার অনলাইন রিপোর্ট


রাস্তায় শত শত মানুষ। পরিবহন নেই। জনদুর্ভোগ দেখারও যেনো কেউ নেই। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন সারাদেশে ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। এই সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি নৌমন্ত্রী শাজাহান খান।


মন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন সংগঠনের ডাকে ধর্মঘট, মন্ত্রীর উপস্থিতিতে যে আইন মন্ত্রিসভা পাস করেছে সেই আইনের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনের সঙ্গে আজ (২৮ অক্টোবর) কথা বলেছেন বাংলাদেশের দুই বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব সৈয়দ আবুল মকসুদ ও সুলতানা কামাল।
বিশিষ্ট লেখক, গবেষক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, “কয়েকদিন পর পর এভাবে ধর্মঘটের ডাক নেতাদের দায়িত্বহীন সিদ্ধান্তের চূড়ান্ত রূপ। তাদের দাবি তো সরকারের কাছে। সেক্ষেত্রে সরকারের সঙ্গে বসে এ ব্যাপারে তারা আলোচনা করতে পারতো। তা না করে জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলছে।”


তিনি বলেন, “সবচেয়ে সাংঘাতিক ব্যাপার হলো এই সংগঠনের সভাপতি আবার সরকারেরই লোক। নৌমন্ত্রী শাজাহান খান নিজেকে শ্রমিক নেতা হিসেবেও দাবি করেন। তবে কি তার কাজ সরকারের মধ্যে থেকেই সরকারকে চাপে রাখা?”


“উনি যদি পরিবহন শ্রমিক নেতাদের দাবির সঙ্গে একমত না হন, তাহলে সংগঠন থেকে পদত্যাগ করবেন। আর যদি তিনি মনে করেন পরিবহন শ্রমিকদের দাবি সংগত কিন্তু সরকার মানছে না, সেক্ষেত্রে তিনি মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিতে পারেন। যেকোনো একটা থেকে তাকে পদত্যাগ করতেই হবে। না হলে এই দ্বিচারিতার বিষয়টি অনেক বেশি তামাশার মনে হচ্ছে,” মত দেন মকসুদ।


এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেন, “পরিবহন শ্রমিকরা আমাদের সমাজেরই অংশ। এখানে লক্ষণীয় বিষয়টি হচ্ছে- যে যাকে যেভাবে পারছে ভোগান্তিতে ফেলছে। দেশের সরকার, পেশাজীবী, সেবক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সবাই একই পথে হাঁটছে।”


তিনি বলেন, “এ দেশে মানুষের কাজের পেছনে যুক্তির খুব অভাব রয়েছে। আমি দোষ করবো, কিন্তু আইন মানতে বাধ্য নই। সরকারও যেমন খুশি আইন করে যাচ্ছে। যদিও আইনগুলি খুব কঠোর। কিন্তু এসব ব্যাপারে কারো তেমন একটা মাথা ব্যথা নেই। যেমন নেই সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা।”


এই মানবাধিকারকর্মী বলেন, “রাস্তায় মানুষ পিষে দিয়ে যাবে চালকেরা। সেক্ষেত্রে একটি আইন দরকার। কিন্তু তার আগে দেখতে হবে, আইনটি সব পক্ষকেই সন্তুষ্ট করছে কি না। সবাই মেনে নিচ্ছে কি না। না হলে ভোগান্তির শেষ নেই।”


সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একজন মন্ত্রী কি করে একইসঙ্গে একটি শ্রমিক সংগঠনের দায়িত্বে থাকেন, তা বোধগম্য নয় বলে জানান সুলতানা কামাল। তিনি বলেন, “আসলে ভেবে কি হবে, আমাদের সমাজের প্রতিটি স্তরের অবস্থাই এমন। সেখানে এসব লোকেরাই সব ক্ষমতার কলকাঠি নাড়ছে।”


গতকাল রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। সেখান থেকে সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনসহ ৮ দফা দাবিতে আজ থেকে সারা দেশে ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয় তারা।


পরিবহন শ্রমিকদের দাবির মধ্যে সড়ক পরিবহন আইনের সব ধারা জামিনযোগ্য করা, সড়ক দুর্ঘটনার মামলায় সাজার পরিমাণ কমানো, ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা পঞ্চম শ্রেণি করা ও লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়ম বন্ধ করা অন্যতম।


দাবি আদায় না হলে ৩০ অক্টোবর থেকে লাগাতার ধর্মঘটের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা।


উল্লেখ্য, বেপরোয়া মোটরযান চালানোর কারণে সংঘটিত দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের সাজার বিধান রেখে ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ বিল গত ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে পাস হয়।


Courtesy: The Daily Star Bangla online Oct 28, 2018

No comments:

Post a Comment