বিনাভোটের সরকার ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে হিটলারের মতো প্রপাগান্ডা মেশিন ব্যবহার করছে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা।
নিজের বিরুদ্ধে করা শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকারের চলমান দুর্নীতির অভিযোগ এবং মামলা প্রসঙ্গে এমন প্রতিক্রিয়াই ব্যক্ত করেন সাবেক এই প্রধান বিচারপতি।
ভয়েস অব আমেরিকার সঙ্গে দেওয়া এক সাক্ষাতকারের সময় এ মন্তব্য করেন তিনি। সম্প্রতি তার বই এ ‘ব্রোকেন ড্রিম, রুল অব ল, হিউম্যান রাইটস এ্যান্ড ডেমোক্রেসী’ নিয়ে গণমাধ্যমটির সঙ্গে কথা বলেন। ওয়াশিংটন ডিসির জাতীয় প্রেস ক্লাবে সেলিম হোসেন এ সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেন।
বিচারকদের অনাস্থা এবং দুর্নীতির অভিযোগ আনতে বাধ্য করে প্রেসিডেন্ট শপথ ভঙ্গ করেছেন, প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে দুদকের তদন্তের কোনো সুযোগ নেই, শুধু ষোড়ষ সংশোধনী নয় নিম্ন আদালতে সরকারের হস্তক্ষেপ ইস্যুতেও দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয় বলেও সাক্ষাতকারে মন্তব্য করেন সিনহা।
রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী এবং ডিজিএফআইয়ের পুতুল হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছেন মন্তব্য করে সাবেক প্রধান বিচারপতি সিনহা বলেন, রাষ্ট্রপতি নিজে শপথ ভঙ্গ করে, এটা দুর্ভাগ্যজনক। সে (রাষ্ট্রপতি)একটা এক্সিকিউটিভের-প্রধানমন্ত্রী অথবা ডিজিএফআইয়ের একটা হাতের পুতুল হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছেন। উনি সংবিধানকে রক্ষা করবেন, সংবিধানকে পদদলিত করে উনি বিচারকদের বাধ্য করেছেন, রাত্রে দাওয়াত দিয়ে, ডিনার খাইয়ে বলছেন-উনার সঙ্গে বসবেন না। এর চেয়ে দুঃখজনক আর কি হতে পারে? এটা যদি হয়, একটা প্রধান বিচারপতিকে এরকম যেতে হয়, তাহলে দেশে আর কি থাকবে?
সিনহা আরো বলেন, বর্তমান প্রধান বিচারপতি তাদের (সরকার) কথা শুনলো না, সরকার কালকে অন্য বিচারপতিদের ডেকে বললো তার সঙ্গে বসবেনা। এবং তারা রাজি হলো, এ প্রধানবিচারপতিও চলে যাবে। অথবা হাইকোর্টের এক বিচারক একটা রায় দিলেন, যেটা সরকারের বিরুদ্ধে গেলাে। প্রেসিডেন্ট প্রধান বিচারপতিকে বলে দিলেন যে- তাকে তুমি কোনো কনস্টিটিউশন দিওনা, কিছু দিওনা, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে। তো সে চলে যাবে-এটাতো হতে পারেনা। এক্সিকিউটিভের হাতেই যদি সম্পূর্ণকিছু-একজন প্রধান বিচারপতির, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত, সবগুলা সিদ্ধান্ত যদি আগেই দিয়ে দেই, তাহলে আর থাকলো কি? রাষ্ট্রের আর থাকলো কি?
প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে অন্য বিচারপতিদের অনাস্থার বিষয়টি প্রসঙ্গে সিনহা বলেন, বিচারপতিরা অসহযোগিতা করেছে, এটা দুর্ভাগ্য। কিছুদিন আগে তারা রায় দিয়ে বলছে, এরকম কোনো অভিযোগ থাকলে ইনকোয়ারি (তদন্ত) করে দেখবে। তাদের দস্তখত করা তাতে, ১৫-২০ দিন যায়নি তারা নিজেরা এটা বেমালুম ভুলে গেলেন!
বাংলাদেশে তার বিরুদ্ধে উঠা দুর্নীতির অভিযোগ এবং বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমের সংবাদ প্রকাশ হওয়া প্রসঙ্গে সাবেক এই প্রধান বিচারপতি পুরো বিষয়টিকে তার বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীন সরকারের প্রপাগান্ডা বলে মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, আমার বইতে আমি পরিস্কারভাবে উল্লেখ করেছি যে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্রপাগান্ডা যেটা করে, তাদের টাকা আছে, মিডিয়া আছে, পুলিশ আছে, সবদিকই আছে, এটা ওয়াইডস্প্রেড (সুবিস্তৃত)হয়। যেমন- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলার যেরকম প্রপাগান্ডা মেশিন ব্যবহার করেছিলো, ঠিকই একিরকম রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে। এটা ব্যাপক আকারে হয়ে যায়। যে সরকার জনগণের সমর্থন, ভোটাধিকার বা ভোট নিয়া আসে নাই, তারা তাদের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার জন্য এই প্রপাগান্ডাগুলা করে।
ষোড়শ সংশোধনীর রায় দেয়ার জন্য সরকার প্রধান বিচারপিতর উপর চাপ প্রয়োগ করেছিলো উল্লেখ করে সিনহা বলেন, প্রশ্নতো হলো-সরকার কেন একটা জিনিসকে এড়িয়ে যাচ্ছে? ইস্যুটা ছিলো- প্রধান বিচারপতিকে বাধ্য করা হয়েছিলো, বাধ্য করতে চেষ্টা করেছিলো ষোড়শ সংশোধনীর রায় দেয়ার জন্য। এটা আমি রাষ্ট্রপতি সঙ্গে, প্রধানমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে রায়ের আগের দিন এটা আলোচনা হয়েছিলো। এবং আমি না বলে আসছি। এটা কিন্তু সরকার অস্বীকার করছেনা।
তিনি বলেন, রায় প্রচারিত হবার পর আমার আরেকটা দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো- সরকার ফাদার অব দ্য নেশন এবং ফাউন্ডিং ফাদারস এইটার ব্যবধানটা তারা বুঝেনা। ফাউন্ডিং ফাদারস হলো কনস্টিটিউশন (সংবিধান) যারা ফ্রেম (গঠন) করেছে এবং ফাদার অব দ্য নেশন হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এখন বঙ্গবন্ধুকে যদি ফাউন্ডিং ফাদারসে নিয়ে আসে, তারাই, আওয়ামী লীগই কিন্তু না জেনে বঙ্গবন্ধুকে নীচে নামিয়ে আনছে।
সাবেক প্রধান বিচাপতির বিরুদ্ধে গিয়ে অন্য বিচারপতিরা সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন মন্তব্য করে সিনহা বলেন, এই বিচারকরা (প্রধান বিচারপিতর উপর অনাস্থাজ্ঞাপনকারি)সাংঘাতিকভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করেছে, তাদের শপথ ভঙ্গ করেছে, তারা সরকার লোভ-হয়তো প্রধান বিচারপতি করবে, কি লোভ দেবে-এটার উপর ইনফ্লুয়েন্স (প্রভাবিত) হয়ে এটা করেছে। এটা সাংঘাতিক রকমের ন্যাক্কারজনক।
নিজের বিরুদ্ধে সরকারের করা অভিযোগ প্রসঙ্গে সাবেক এই প্রধান বিচারপতি বলেন, সরকার এখন বলছে, উনার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিলো, তাই উনি চলে গিয়েছেন। বিচারকরা আমার সঙ্গে বসতে চাচ্ছেনা। আমার বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ থাকে তাহলে--সংবিধানের তিনটা অঙ্গের মধ্যে একটা অঙ্গের প্রধান, তার বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ থাকে ইনকোয়ারি (তদন্ত) হবে। দুর্নীতি দমন কমিশন এটা হলো সাব অর্ডিনেট আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। আর প্রধান বিচারপতি, বিচারপতিরা, সুপ্রিম কোর্টের বিচারকরা-এরা হলেন কনস্টিটিউশনাল পোস্ট (সাংবিধানিক পদ)। এবং তাদের ব্যাপারে, তারা যদি মিস কন্ডাক্ট (অন্যায়) করে থাকে, তাহলে সংবিধানেই বলা আছে কিরকম ইনকোয়ারি হবে, কন্ডাক্ট হবে এটা। এটা কোনো আমলা, সরকারের মন্ত্রী বা কোনো সেক্রেটারি অথবা দুর্নীতি দমন কমিশনের অধিকারের বাহিরে। এটা আরো স্পষ্ট হলো- ষোড়শ সংবিধানের কোড অফ কন্ডাক্টে। সাত জনের সর্বসম্মত মতের ভিত্তিতে এটা ফ্রেম (গঠন) করা হলো। যদি বিচারকের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকে সেটা ইন হাউজ ইনকোয়ারি (তদন্ত) হবে।এরপর সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল এটা কিভাবে করবে এটা বলা আছে। তারা ইন হাউজ ইনকোয়ারি করে অভিযোগের সত্যতা পেলে প্রেসিডেন্টের কাছে জানাবে।
দুদক প্রধানবিচারপতির বিরুদ্ধে কোনো তদন্ত করতে পারেনা জানিয়ে সিনহা আরো বলেন, দুদক কিভাবে তদন্ত করবে? এটা আমরা পরিষ্কার রায়ে উল্লেখ করেছি। এমনটা ঘটলে সংবিধান মানা হবেনা। উচ্চ আদালতের রায় মানা হবেনা। পরিষ্কার উল্লেখ আছে কোড অফ সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলে, ইনকোয়ারি করা। ইমিডিয়েটলি রাষ্ট্রপতির কর্তব্য ছিলো এটা। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সঙ্গে ইনকোয়ারি করা। আমাদের একটা ট্রেডিশন আছে-যে বিচারকের বিরুদ্ধে ইনকোয়ারি হতো সে বিচারক স্ব-ইচ্ছায় পদত্যাগ করতেন, যদি না হতো তাহলে প্রধান বিচারপতি তাকে কনস্টিটিউশন দিতেন না। আমার বিরুদ্ধে যদি এরকম অভিযােগ থাকতো তাহলে আমি কোর্টে বসতাম না। ইনকোয়ারি হতো।
বিচার বিভাগের সঙ্গে নির্বাহী বিভাগের দ্বন্দ্ব প্রসঙ্গে সাবেক প্রধান বিচারপতি বলেন, প্রকৃতপক্ষে ষোড়ষ সংশোধনীর পূর্বেই সরকারের সঙ্গে আমার টানাপোড়েন চলছিলো। বিষয়টা নিম্ন আদালতের বিচারকদের ডিসিপ্লিনারি রুলস দিয়ে। আমার বিচার বিভাগ আলাদা করেছি কিন্তু মাজদার হোসেন মামলার রায়ে যেসব নির্দেশনাবলী ছিলো, এর মধ্যে একটা ছিলো বিচার বিভাগের ম্যাজিস্ট্রেসিকে আলাদা করা, সুপ্রিম কোর্টের অধীনে আনা। এবং এটা ডিসিপ্লিনারি রুলস করা। গভর্ণমেন্ট বিভিন্ন অজুহাতে কোনোদিনই এটা করে নাই। আমি যখন দেখলাম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিম্ন আদালতের বিচারকদের কোনোমতেই কন্ট্রোল করা যাচ্ছেনা, তখন আমি সরকারকে প্রেসারইজ করলাম-রুলসগুলা তোমরা বদল করো।তারা টালবাহানা করতে করতে শেষপর্যন্ত একটা দিলো সেটা হলো গর্ভমেন্ট সার্ভিস আপিল রুলস-৮৫ ইংরেজির একটা কার্বন কপি। তখন আমি বললাম-না এটাতো হতে পারেনা। আমি বললাম-মাজদার হোসেনে এটা পরিষ্কার করে উল্লেখ করা আছে, যে সিদ্ধান্ত হবে তাতে সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত প্রাধান্য পাবে। এক্সিকিউটিভের যদি প্রাধান্য তাকে তাহলে কোনো ব্যাপারেই অধ:স্তন বিচারকদের কন্ট্রোল করা যাবে না। যদিও আর্টিকেল ১০৯ আছে-হাইকোর্ট বিভাগ সুপারভিশন এবং কন্ট্রোল করবে কিন্তু অন্যদিকে আর্টিকেল ১১৬ লাগিয়ে দিয়ে একটা হ-য-র-ব-ল অবস্থা সৃষ্টি করেছে। এতে করে নিম্ন আদালতের বিচারকদের কন্ট্রোলটা এক্সিকিউটিভদের (নির্বাহী) হাতে চলে যায়। এটা নিয়ে অনেক রশি টানাটানি হয়। প্রধানমন্ত্রীকে আমি বলেছি, রাষ্ট্রপতিকে বলেছি, আইনমন্ত্রীকে বলেছি এবং একটা অনুষ্ঠানে আমি বলেছি। শেষপর্যন্ত অনন্যপ্রায় হয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বলছি-আপনাকে ভুল বুঝানো হচ্ছে। একটা পাবলিক মিটিংয়ে বলছি, জাজেজ কমপ্লেক্স উদ্বোধনের সময়। প্রধানমন্ত্রী খুব নাখোশ হন। আমি বললাম নাখোশ হওয়ার কিচ্ছু নাই, যেটা হাইয়েষ্ট কোর্টের নির্দেশনা অমান্য করবে সরকার, তাহলে আপনার সংবিধানকেই অমান্য করা মতো। সংবিধানকে অমান্য করা মানে আইনের শাসন থাকবেনা। যে সংবিধান আমরা রক্তের বিনিময়ে এনেছি তাকে যদি আমরা পদদলিত করি, আমরা যদি এটাকে অবমাননা করি, তাহলে এই দেশে থাকলো কি? তাই আমি বললাম এটা হতে পারে না।
যেটা সুপ্রিম কোর্টের রায়, সেটা সবার কাছে বাধ্যকর। এটা মানতে হবে। সরকার এটা কোনোরকমেই মানলেন না। নিম্ন আদালতের বিচারকদের সরকার চাচ্ছিলো তাদের কন্ট্রোলে রাখার জন্য। এবং কিছু বিচারক যারা দুর্নীতিপরায়ণ, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, তাদেরকে কী (মূল) পোস্টে বসালো সরকার, তাদের (সরকার) যে ইচ্ছাগুলা, তাদের চাহিদা অনুযায়ী এগুলা বাস্তবায়ন করা, তাদেরকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা। যাতে পলিটিক্যাল অপোজিশন পার্টি (বিরোধী দল) এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদোহিতা মামলা করা, একটা মামলা করে দিবে, জামিন দেবে না। এমনকি এটাও আমি দেখেছি জামিনযোগ্য অপরাধে ম্যাজিস্ট্রেটরা জামিন দিচ্ছেনা। যদিও আইন নাগরিকের অধিকার দিয়েছে, তার অবশ্যই জামিন দিতে হবে। জজের সেখানে ক্ষমতার অপব্যবহারের সুযোগ নেই, কেন জামিন দেবেনা? এটা শুধু উপর থেকে চাপে, আইন মন্ত্রণালয়ের চাপে।
সরকার দ্বারা প্রচারিত নিজের অসুস্থতার প্রসঙ্গটি হেসে উড়িয়ে দিয়ে সিনহা বলেন, অসুস্থতা-এটা একটা সরকারের বাহানা। আমিতো অসুস্থ না, যেটা এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে-আমাকে এখনো ডাক্তারের সঙ্গে কোনো পরামর্শ করতে হয়নি। সরকার আমাকে অসুস্থ বানিয়ে দেশ থেকে বিতাড়িত করতে চেয়েছিলো।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার রায় নিয়ে শেখ হাসিনা অবস্থান বদল প্রসঙ্গে সিনহা বলেন, শেখ হাসিনা নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না বলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাইলেন। আমরা এটা অনেক কিছু করে বাতিল করলাম। দেখা গেলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারে প্রধান বিচারপতিকে রাজনীতিতে টানা হলো, আমরা বললাম যে না প্রধান বিচারপতি হবেননা। তবে দুইটা টার্ম তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকবে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে যাতে নিরপেক্ষ ফল হয়। শেখ হাসিনা যেটা দাবি করেছিলেন উনি একেবারে বেমালুম ভুলে গেলেন আমাদের রায়টা। আবার পুরাতন জায়গায় চলে গেলেন। এরপরে ২০১৪ সালে যে নির্বাচনটা হলো তাতে ১৫৩ জন কোনো কন্টেস্টই করেন নাই। এটা কোনো নির্বাচনই হয়নি, প্রহসন।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কড়া সমালোচনা করে সাবেক প্রধান বিচারপতি বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে যারা কথা বলছে তাদের কন্ঠ রোধ করতেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। এটা সাংঘাতিকভাবে ক্ষতি করবে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সাংবাদিকদের স্বাধীনতা, মত প্রকাশের যদি সুযোগ না থাকে তাহলেতো স্বৈরতন্ত্রই প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে এই দেশে। এটা কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য না।
রোহিঙ্গা সংকট সমাধান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা একটা রাজনৈতিক ইস্যু। রোহিঙ্গা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। সরকারের উচিত আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী, সংগঠগুলোকে চাপ প্রয়োগ করে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেবার ব্যবস্থা করা।
নিজের প্রকাশিত বই প্রসঙ্গে সাবেক প্রধান বিচারপতি বলেন, আমি আমার ওকালতি জীবন, বিচারক জীবন এবং স্ট্রাগল যেটা করেছি, এটা নিয়ে (বই) আমার অনেকদিনের স্বপ্ন ছিলো। প্রকৃত আইনের শাসনটা এদেশে হচ্ছেনা। জীবনের শেষ দিকে, প্রধান বিচারপতির শেষ সময়ে ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে একটা ইস্যু তৈরি করলো সরকার।
তিনি বলেন, আইনের শাসন বলতে কি বুঝায়, বাংলাদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কী অসুবিধা হচ্ছে, আমাদের স্বাধীনতা উত্তর সংবিধান যা বলছে, লক্ষ লক্ষ মানুষ যার জন্য জীবন দিয়েছে, এটা কী প্রতিফলিত হয়েছে কী না? এগুলা লেখার জন্য অনেকদিন চিন্তা করেছিলাম। দুর্ভাগ্যবশত এই নোটগুলো আনতে পারিনি।
- সুত্র — https://bit.ly/2QA42hr