Search

Tuesday, October 9, 2018

যশোরের পাঁচ ‘গায়েবি’ মামলায় ১৬ শিক্ষকসহ ১১২ জনের জামিন



গায়েবি মামলার আসামি হয়ে জামিন নিতে এসেছেন যশোরের এসব স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা শিক্ষকেরা। ছবিটি সোমবার হাইকোর্ট চত্বর থেকে তোলা ছবি: সাজিদ হোসেন

যশোরের বাঘারপাড়ার একটি মাদ্রাসার শিক্ষক শামীম মিঞা (৪৫)। তাঁর দাবি, তিনি কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না। অথচ বাঘারপাড়া থানা-পুলিশ তাঁর নামে গত ৩০ সেপ্টেম্বর নাশকতার মামলা দিয়েছে। যশোর থেকে এসে সোমবার হাইকোর্টে আত্মসমর্পণ করে আগাম জামিন চান আসামি শামীম। বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ তাঁর জামিন মঞ্জুর করেছেন।

মাদ্রাসাশিক্ষক শামীমের মতো যশোরের বাঘারপাড়া ও অভয়নগর থানার পৃথক আরও দুটি নাশকতার মামলায় আরও ১৫ জন শিক্ষক হাইকোর্টে আত্মসমর্পণ করে জামিন নিয়েছেন। এ ছাড়া যশোরের কোতোয়ালি, বাঘারপাড়া ও অভয়নগর থানার পৃথক পাঁচটি নাশকতার মামলায় হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন পেয়েছেন আরও ৯৬ জন।

আসামিদের আইনজীবী আসানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, মিথ্যা মামলায় যশোরের কোতোয়ালি, বাঘারপাড়া ও অভয়নগর থানার পৃথক পাঁচটি মামলায় শিক্ষকসহ ১১২ জনকে হাইকোর্ট আগাম জামিন দিয়েছেন। আদালতকে তিনি বলেছেন, নাশকতার নামে পুলিশ মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই।

গত ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ২ অক্টোবরের মধ্যে পুলিশ বাদী হয়ে যশোরের কোতোয়ালি থানায় দুটি, বাঘারপাড়া থানায় দুটি এবং অভয়নগর থানায় একটি নাশকতার মামলা করে। মামলাগুলো বিশেষ ক্ষমতা আইন ও বিস্ফোরক আইনে করা হয়েছে। ৫টি মামলায় ৩৪০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। যশোর থেকে জামিন নিতে আসা শিক্ষকসহ অন্তত ৩০ জন আসামি হাইকোর্ট এলাকায় প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, কোনো ঘটনাই ঘটেনি। অথচ পুলিশ গায়েবি মামলা দিয়েছে।

তবে বাঘারপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রহিম প্রথম আলোকে বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে মাদ্রাসাশিক্ষকদের নামে আসামি করা হয়েছে। অভয়নগর থানার ওসি আলমগীর হোসেন বলেন, যেসব শিক্ষক নাশকতার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের নামেই মামলা দেওয়া হয়েছে। কোতয়ালি থানার একটি নাশকতার মামলায় জাহাঙ্গীর হোসেন (৩০) নামের একজনকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলার আসামি ও যশোর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাবেরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, জাহাঙ্গীর মারা গেছেন গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর। নাশকতার কোনো ঘটনাই ঘটেনি অথচ পুলিশ গায়েবি মামলা করছে। মৃত মানুষকেও আসামি করেছে।

এ ব্যাপারে কোতোয়ালি থানার ওসি অপূর্ব হাসান প্রথম আলোকে বলেন, এ আসামি মৃত হলে তাঁকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে।

আজ হাইকোর্টে দেখা যায়, সকাল ১০টার পর থেকে যশোর থেকে আসা নাশকতার মামলার আসামি শিক্ষকসহ বিএনপির নেতা-কর্মীরা আদালত চত্বরে জড়ো হন। সেখানে যশোর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাবেরুল হক, বাঘারপাড়া বিএনপির সভাপতি টি এস আয়ুবসহ অন্য বিএনপি নেতাদের দেখা যায়।


গায়েবি মামলার আসামি হয়ে যশোর থেকে জামিন নিতে এসেছেন তাঁরা। ছবি: সাজিদ হোসেন

বিএনপি নেতা টি এস আয়ুব হাইকোর্টের বারান্দায় দাঁড়িয়ে প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ এলাকার নিরীহ শিক্ষক, ক্ষেতমজুর, দিনমজুরসহ বিএনপির নেতা–কর্মীদের নামে গায়েবি মামলা দিয়েছে। এলাকায় থাকতে না পেরে বাধ্য হয়ে শিক্ষকসহ যাঁদের আসামি করা হয়েছে তাঁরা সবাই হাইকোর্টে এসেছেন। টি এস আয়ুব জানান, পাঁচটি মামলায় তিনিসহ ২৩৬ জন আসামি যশোর থেকে আগাম জামিন নেওয়ার জন্য হাইকোর্টে এসেছেন। ১১২ জনের জামিন হয়েছে। আজ অন্যরা আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করবেন।

জামিন পাওয়া শিক্ষক

সোমবার হাইকোর্ট থেকে জামিন পান বাঘারপাড়ার বিভিন্ন মাদ্রাসার শিক্ষক ইউনূস আলী, শামিম মিয়া, আমান উল্লাহ, হাফিজুর রহমান, তবিবার রহমান, বদিয়ার রহমান, সানাউল্লাহ, জিল্লুর রহমান, অলিয়ার রহমান, আমিনুর রহমান, ময়েন উদ্দিন ও বাকি বিল্লাহ। আর অভয়নগরের মামলায় জামিন পাওয়া শিক্ষক হলেন ফিরোজ মাস্টার, আজিজুর রহমান, আজিমুল হক ও মঞ্জু মাস্টার। জামিন নিতে আসা শিক্ষকেরা জানিয়েছেন, প্রতিষ্ঠান থেকে ছুটি নিয়ে তাঁরা হাইকোর্টে এসেছেন।

নাশকতার ৫ মামলা

নাশকতার অভিযোগে যশোরের বাঘারপাড়া থানায় পৃথক দুটি মামলা করেছে পুলিশ। গত ২৯ সেপ্টেম্বরের মামলায় ৫৬ জনের নাম উল্লেখ করা মামলা করা হয়। মামলায় বলা হয়, বাঘারপাড়ার মহিরন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে বিএনপি-জামায়াতের নেতা–কর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে নাশকতা করার জন্য একত্র হয়েছেন। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে দুই থেকে তিনটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আসামিরা পালিয়ে যান। 
আর বাঘারপাড়া থানায় ৩০ সেপ্টেম্বরের করা মামলায় ৫৯ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করা হয়। বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা এ মামলায় বলা হয়, বাঘারপাড়া মডেল কলেজের মাঠে আসামিরা ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটান। সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ড করার জন্য আসামিরা সেদিন একত্র হন।

অন্যদিকে, অভয়নগর থানায় গত ৩০ সেপ্টেম্বর করা মামলায় ১৬৪ জনকে আসামি করা হয়। বিস্ফোরক আইনে এ মামলা করা হয়। অভয়নগর থানার মামলায় বলা হয়, ২১ আগস্ট গ্রেনেড বোমা হামলা মামলার রায় এবং আগামী সংসদ নির্বাচন বানচাল করে দেওয়ার জন্য আসামিরা চেঙ্গুটিয়া বাজারের যুবলীগের অফিসে আগুন লাগিয়ে দেন। অফিসে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়। সেখানে চারটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটান।

যশোরের কোতয়ালি থানার মামলা নম্বর ৯৪ (৯) ১৮। বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় ৩৭ জনের নাম উল্লেখ করে কোতয়ালি থানায় মামলা করে পুলিশ। মামলায় বলা হয়, গত ২২ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে কোতোায়ালি থানার আশ্রম রোডের জনৈক দ্বীন মোহাম্মাদের দোকানের সামনে একত্র হয়ে আসামিরা যান চলাচলে বাধা দেন। পুলিশকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করেন। রেলওয়ে বগিতে হামলা করেন। সেখানে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটান। 

গত ২ অক্টোবর কোতোয়ালি থানায় আরেকটি মামলা করে পুলিশ। বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় ২৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। মামলায় বলা হয়, কোতোয়ালি বড় বাজারের এইচ এম এম রোডে মনসা বস্ত্রালয়ের সামনে আসামিরা জড়ো হন। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে আসামিরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। তবে তিনজন আসামির বাজার করা ব্যাগে চারটি তাজা বোমা পাওয়া যায়। নাশকতার উদ্দেশ্যে আসামিরা একত্র হন।

  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ ০৮ অক্টোবর ২০১৮

Monday, October 8, 2018

Truckers’ strike disrupts goods transportation


Truck owners and workers went for an indefinite strike from Sunday to press home their seven demands, including amendment to some sections of the recently enacted Road Transport Act (RTA) 2018.

The truckers, under the platform of Bangladesh Goods Transport Owners Workers United Association, observed their work abstention, particularly in Dhaka division, for the first day.

Besides, the truck drivers and workers, under different banners, prevented vans, covered vans, mini-trucks and trucks from plying the roads at major exit and entry points of the city, like - Jatrabari, Postogola, Gabtoli and Bosila etc. The strike disrupted the goods transportation. 

The announcement of the strike came from a rally, held at Tejgaon truck-stand in the city on Saturday.

Talking to the FE, convener of the platform Md Mokbul Ahmad said, "We will continue the strike in Dhaka division until the demands are met."
"We haven't yet got any invitation from the government for discussing our demands," he added.

However, he hoped that a solution will come, if the government's representatives sit with the truck owners and workers to discuss the demands.
"We are not demanding abolition of Road Transport Act 2018. We just want amendment of its some sections."

Mr Mokbul, also the president of Bangladesh Covered Van Truck Ponnyo Paribahan Malik Association, said a driver cannot afford paying Tk 0.5 million as fines, if an accident occurs on the highway.

Besides, death penalty for truck drivers is not fair, as they provide necessary services to goods transportation sector.

All types of goods transportation will remain stopped during the strike, he added.

In a visit to Tejgaon truck-stand on the day, the FE correspondent found no transportation-related activities, as the truck drivers and helpers, forming groups here and there, refrained from their usual work.

Abdus Salam, who drives covered van especially on Dhaka-Chittagong Highway, said punishment in the new law is too much for the drivers. They are not killers, and no one wants to kill people intentionally.

"Only the drivers are not responsible for accidents on highways, pedestrians are also sometimes reckless in crossing the roads," he added.

The demands of the truckers include - stopping police harassment and frequent checking on the highways, setting up truck terminals and stands at suitable spots with resting and dining facilities adjacent to the highways, halting overloading of trucks, and returning driving licences to drivers without imposing fines.

They also demand that licence to drive heavy vehicles should be issued to all drivers of heavy vehicles, and they should be allowed to drive trucks with light vehicle driving licence until they get licence to drive heavy vehicles.

Lastly, they demand unconditional release of a driver - Hasmat Ali, a member of Tangail Truck Owners Association, and other transport workers arrested in connection with road accident cases.

RTA 2018 was passed in the parliament on September 19. According to the new law, if anybody commits an accident for reckless driving, and kills or injures someone seriously, the driver will face a maximum five years' imprisonment or a fine of Tk 0.5 million or both.

Besides, if it is proved that a driver has intentionally killed anyone, the incident will fall under either Section 302 (murder) or Section 304 (culpable homicide) of Penal Code.

The maximum punishment under Section 302 is death penalty, while it is life imprisonment under Section 304.

However, road safety activists criticised the act, saying the punishments for deaths caused by reckless driving is not enough.
  • FE Report/8 October 2018

কয়েক জনের অবরোধে ভোগান্তিতে লাখো মানুষ


শুয়ে আছেন জনপাঁচেক লোক। কোটা বহালের দাবি তাদের। গতকাল সকাল ৭টায় শাহবাগ মোড় থেকে ছবিটি তুলেছেন আমাদের আলোকচিত্রী জীবন আহমেদ 

সকাল ৭টা। ব্যস্ত শাহবাগ মোড়ের সড়কে শুয়ে ছিলেন ৫ যুবক। সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহালের দাবিতে তাদের অবস্থান। পাঁচ জনের অবস্থানে চারপাশের সব রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ। সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে ব্যস্ত সড়ক দিয়ে আসা হাজারো যানবাহনকে ডাইভারসন করে দেয় পুলিশ। এতে আশপাশের সড়কে দেখা দেয় যানজট। সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, বারডেম, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসা রোগী এবং তাদের স্বজনদের পড়তে হয় দুর্ভোগে। সকাল ১০টা পর্যন্ত এই পাঁচ যুবক সড়কে ছিলেন।

যানবাহনও চলেনি সড়কে। সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের যানবাহনকে ডাইভারসন করতে দেখা গেলেও যুবকদের সরাতে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। দশটার দিকে অবস্থানকারীরা সরে গেলে যানবাহন চলাচল শুরু করে। বেলা একটার পর আন্দোলনকারীদের ২০ থেকে ২৫ জন ফের সড়কে অবস্থান নিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। কিছুক্ষণ পর তাদের সঙ্গে যোগ দেন আরো ২০ থেকে ২৫ জন। 

এরপর থেকে শাহবাগ মোড় হয়ে আর যানবাহন চলেনি রাত পর্যন্ত। এতে পুরো এলাকায় যানজট দেখা দেয়। ব্যস্ততম এ সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী লাখ লাখ মানুষকে পড়তে হয় দুর্ভোগে। গতকালের অবরোধে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড এর সঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ঐক্য পরিষদও যোগ দেয়। সকাল থেকে সড়ক অবরোধ থাকায় সায়েন্সল্যাব, বাটা সিগন্যাল থেকে আসা যানবাহনগুলো সবই বন্ধ ছিল। তবে মাঝে ১০টা থেকে কিছু সময় যানচলাচল শুরু হলেও দুপুরের দিকে আবারো আন্দোলনকারীরা সড়ক অবরোধ করেন। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পরও রাস্তা না ছাড়ায় ওই সড়কটির কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারেনি। 

অন্যদিকে কাওরান বাজার থেকে গুলিস্তান যাওয়ার সড়কও হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড় থেকে ডাইভারসন করে দেয় পুলিশ। ফলে এদিক থেকে যাওয়া যানবাহনগুলোর দীর্ঘ জটলা সৃষ্টি হয়। শাহবাগের এ রাস্তাটিতে যানবাহন চলাচল করতে না পারায় শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েন। বিশেষ করে সড়কটিতে তিনটি হাসপাতাল থাকায় এখানে দূর-দূরান্ত থেকে চিকিৎসা নিতে এসে বিপাকে পড়েন অনেকে। আবার কাউকে ফার্মগেট পর্যন্ত এসে ফিরে যেতে দেখা গেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পায়ের ব্যথা নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসা জাহানারা বেগম জানান, গাজীপুর থেকে ডাক্তার দেখাতে আসছি। কিন্তু এখন বাসায় যাইতে পারতেসি না। ওইদিক থেকে সব গাড়ি বন্ধ।

ঢাকায়ও থাকার মতো জায়গা নেই। সুব্রত নামের একজন কচুক্ষেত থেকে এসেছেন। তিনি হাঁপানিসহ বেশ কিছু রোগে ভুগছেন। সুব্রত বলেন, সকাল বেলায় অনেক কষ্ট করে আসছি। এদিকে রাস্তা বন্ধ থাকায় তেজগাঁও পর্যন্ত যানজট লেগে যায়। সেখান থেকে কয়েকবার রাস্তা বদল করে হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে আসছি। এখন বাসায় ফিরবো, কিন্তু কোনো যানবাহন নেই। এই শরীর নিয়ে এখানে দাঁড়িয়েও থাকতে পারছি না। অপারেশন শেষে খিলগাঁওয়ে বাসায় স্ত্রীকে নিয়ে ফিরবেন নাজিম উদ্দিন নামের একজন। 

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এটা কেমন কথা! যখন তখন এ দেশে আন্দোলন শুরু হয়ে যায়। মানুষ মরলেও কারও কোনো খবর থাকবে না। আমরা সাধারণ মানুষ কোথায় যাবো? ইব্রাহীম কার্ডিয়াক হাসপাতালে হৃদরোগের চিকিৎসা নিতে এসে বিপাকে পড়েন শামসুজ্জামান নামের আরেক ব্যক্তি। 

তিনি বলেন, আমি হার্টের রোগী। বাসা যাত্রাবাড়ীতে। শরীরের কি অবস্থা যাচ্ছে আমি বুঝছি। কিন্তু কোনো সিএনজি বা বাস পাচ্ছি না এক ঘণ্টা ধরে। এ অবস্থায় কি করবো বুঝতে পারছি না। আমার স্ত্রী সঙ্গে এসেছে। সে অনেক চেষ্টা করছে কিন্তু কোনো কিছু ম্যানেজ করতে পারছে না। শুধু হাসপাতালের রোগী নন, ব্যস্ততম সড়ক হয়ে যাওয়া আসা করেন ঢাকার কর্মজীবী মানুষের একটি বড় অংশ। ঢাকার উত্তর দক্ষিণ ও পূর্ব পশ্চিমের সবচেয়ে বড় সংযোগস্থল শাহবাগ মোড় অবরুদ্ধ থাকায় কর্মজীবী মানুষদেরও ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

আশপাশের সড়কে যানজট তৈরি হওয়ায় তা ক্রমে ছড়িয়ে পড়ে অনেক রাস্তায়। 

এদিকে শনিবার লাগাতার অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার কথা বলা হলেও গতকাল আন্দোলনকারীরা কর্মসূচির পরিবর্তন করেছেন। তারা জানিয়েছেন, আজ থেকে বিকাল তিনটা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত শাহবাগে অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া হবে। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন জানান, আমাদের ছয় দফা দাবি। দাবিগুলো হলো- ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের কটূক্তির বিচার, মুক্তিযোদ্ধা পারিবারিক সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাড়িতে হামলার বিচার, প্রশাসনে রাজাকার ও রাজাকারদের সন্তানদের তালিকা করে বরখাস্ত করা, মুক্তিযোদ্ধাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান। তিনি জানান, যত দিন পর্যন্ত আমাদের দাবি বাস্তবায়ন করা না হবে, তত দিন পর্যন্ত শাহবাগে প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত লাগাতার কর্মসূচি ও সারা বাংলাদেশে একই কর্মসূচি পালিত হবে।

  • কার্টসিঃ মানবজমিন/  ৮ অক্টোবর ২০১৮

তীব্র অর্থ সংকটে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড

ইয়ামিন সাজিদ

তীব্র অর্থ সংকটে পড়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। এ সংকটের কারণে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে কেনা বিদ্যুতের দাম পরিশোধ করতে পারছে না সংস্থাটি। রেন্টাল, কুইক রেন্টাল, ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার (আইপিপি) ও পাবলিক কোম্পানির মালিকানাধীন বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রের দু-তিন মাসের বিল বকেয়া পড়েছে বিপিডিবির কাছে। বকেয়ার এ পরিমাণ সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার বেশি বলে বিপিডিবি ও বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে।

রেন্টাল, কুইক রেন্টাল, আইপিপি ও পাবলিক কোম্পানির মালিকানাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ কেনে বিপিডিবি। জাতীয় সঞ্চালন গ্রিডের মাধ্যমে এ বিদ্যুৎ তারা বিক্রি করে বিভিন্ন বিতরণ কোম্পানির কাছে। উৎপাদন প্রতিষ্ঠানগুলো বিপিডিবির কাছ থেকে বিদ্যুৎ বিক্রি বাবদ বিল নেয়। সাধারণত এক মাসে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ জাতীয় সঞ্চালন গ্রিডের মাধ্যমে বিতরণ কোম্পানিগুলো বিক্রি করে, তার বিল পরের মাসের ১০ তারিখের মধ্যে বিপিডিবিতে দাখিল করে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। ১০ থেকে মাসের শেষ তারিখের মধ্যে সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের হিসাবে বিল পাঠায় বিপিডিবি।

বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সূত্র বলছে, দুই মাস ধরে বিদ্যুৎ দিলেও বিল পাচ্ছে না তারা। জুলাইয়ের বিল এখন পর্যন্ত পরিশোধ হয়নি বলে জানিয়েছে বিভিন্ন কোম্পানি। কিছু কোম্পানিকে বিল দেয়া হলেও অধিকাংশ কোম্পানি এখন পর্যন্ত তাদের বিল পায়নি। জুলাই ও আগস্টের বিদ্যুৎ বিল হিসেবে বিপিডিবির কাছে বিভিন্ন কোম্পানির পাওনা দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার উপরে। বকেয়া টাকা বেড়ে গেলেও বিদ্যুৎ উৎপাদন অব্যাহত রাখতে হচ্ছে কোম্পানিগুলোকে।

জানতে চাইলে বিপিডিবির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী খালেদ মাহমুদ বণিক বার্তাকে বলেন, যে অর্থ সংকট, তা খুব বড় নয়। আমাদের তো বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনে গ্রাহকের কাছে কম দামে বিক্রি করতে হয়। এজন্য প্রতি ইউনিটে দেড় টাকার মতো ঘাটতি থাকে। এ টাকাটা সরকার আমাদের বাজেটারি সাপোর্ট হিসেবে দেবে। সেটা পেলেই কোম্পানিগুলোর বকেয়া পরিশোধ হয়ে যাবে।

এদিকে বিদ্যুৎ বিক্রির অর্থ না পেয়ে বিপাকে পড়েছে বেসরকারি উৎপাদন কেন্দ্রগুলো। বিদ্যুৎ বিক্রি থেকে পাওয়া টাকাই তাদের আয়ের উৎস। এ দিয়েই বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিচালন ব্যয় সংকুলান করে প্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু গত দুই মাসের বিল আটকে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে তারা।

বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কর্মকর্তারা বলছেন, বিপিডিবির তারল্য সংকট যদি ক্রমেই বাড়তে থাকে আর বকেয়ার পরিমাণও বড় হতে থাকে, তাহলে এসব কোম্পানিকে দেউলিয়া হতে হবে। কারণ বিপিডিবি ছাড়া বিদ্যুৎ বিক্রির দ্বিতীয় কোনো গ্রাহক নেই তাদের।

দুই মাসের বিল না পাওয়ার কথা স্বীকার করেন বারাকা পাওয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম রাব্বানী চৌধুরী। আরো একাধিক বেসরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারাও দুই মাস ধরে বিল না পাওয়ার কথা স্বীকার করেন। এমনকি যেসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যাংকঋণ রয়েছে, ঋণের কিস্তি পরিশোধ নিয়ে দুশ্চিন্তার কথাও জানিয়েছে তারা।

বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে উৎপাদনে আছে মোট ১২৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র। এর মধ্যে বিপিডিবির নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ৪১। বাকি ৮২টি রেন্টাল, কুইক রেন্টাল, আইপিপি ও স্মল ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার (এসআইপিপি), যেগুলো থেকে বিদ্যুৎ কিনছে বিপিডিবি। এর মধ্যে রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল ২৭টি এবং আইপিপি ও এসআইপপি ৪৬টি। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৫৪টিই জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করে ফার্নেস ও ডিজেল অয়েল, যা সবচেয়ে ব্যয়বহুল।

এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কিনতে বিপিডিবির গড় ব্যয় ৬ টাকা ২৫ পয়সা। কিন্তু বিতরণ কোম্পানিগুলোর কাছে বিক্রি করতে হচ্ছে ৪ টাকা ৮৪ পয়সায়। ফলে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে বিপিডিবির ঘাটতি থাকছে ১ টাকা ৪১ পয়সা। বিভিন্ন কোম্পানির কাছ থেকে কেনা বিদ্যুতের বিপরীতে প্রতি মাসে এ ঘাটতি দাঁড়ায় ৮০০ থেকে ১ হাজার কোটি টাকা, যা অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া অনুদানে পরিশোধ করে বিপিডিবি।

বিপিডিবির সদস্য (প্রশাসন) ও ভারপ্রাপ্ত সদস্য (অর্থ) জহুরুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যে অনুদান দেয়া হয়, সে টাকাটা আসতে বিলম্ব হওয়ায় একটু সমস্যা হচ্ছে। টাকাটা পেলেই সমস্যা কেটে যাবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণে এ সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বিপিডিবিকে। এসব কেন্দ্র থেকে বেশি বিদ্যুৎ কিনতে গিয়ে তারল্য সংকটের পাশাপাশি লোকসান বাড়ছে সংস্থাটির। কারণ ডিজেলভিত্তিক প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম গড়ে ২৬ টাকা ও ফার্নেস অয়েলভিত্তিক গড়ে ১১-১২ টাকা, যেখানে গ্যাস ও কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় হয় দুই থেকে আড়াই টাকা।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, পিডিবির যে সংকট, তার জন্য দায়ী মূলত তরল জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়ে যাওয়া। নিয়মিত ভর্তুকি না পাওয়াও এর আরো একটি কারণ। এ পরিস্থিতি যদি আরো কয়েক মাস চলে, তাহলে জরিমানাসহ বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কাছে বিপিডিবির দেনা আরো বাড়বে।

জানা গেছে, গত বছর থেকে এ পর্যন্ত তেলভিত্তিক বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদন শুরু করায় এবং এসব কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনায় বিপিডিবির ঘাটতি অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম ক্রমেই বাড়তে থাকায় জ্বালানির মূল্য পরিশোধেও চাপ বাড়ছে বিপিডিবির ওপর। সব মিলিয়ে ঘাটতির পরিমাণও বাড়ছে। এছাড়া যেসব বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে এখন বিদ্যুৎ কেনা হচ্ছে, চুক্তির সময় প্রতিযোগিতাপূর্ণ দরকষাকষি না হওয়ায় ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। উন্মুক্ত পদ্ধতিতে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে যদি চুক্তি করা হতো, তাহলে আরো কম দামে বিপিডিবি বিদ্যুৎ কিনতে পারত। ক্রয়-বিক্রয়ের মধ্যকার যে ঘাটতি, তাও কমে আসত তখন।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. ম তামিম বণিক বার্তাকে বলেন, তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন যখন বেড়ে যায়, তখন এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। যদিও চাহিদা পূরণে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ ছাড়া উপায় ছিল না। তবে এভাবে ছয় মাস চলতে থাকলে অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে তরল জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কমাতে হবে।

উল্লেখ্য, রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল থেকে বিদ্যুৎ কিনে লোকসান গুনছে বিপিডিবি। ব্যক্তিখাতের বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা বৃদ্ধি ও সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে না আসার কারণে সংস্থাটির আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে। প্রতি বছরই গড়ে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা লোকসান দিচ্ছে বিপিডিবি।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিপিডিবিই একমাত্র লোকসানি। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বিপিডিবির লোকসানের পরিমাণ ৮ হাজার কোটি টাকার বেশি। তার আগের অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৪৩৪ কোটি, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩ হাজার ৮৬৬ কোটি ও ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৭ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা। গত ১০ বছরেই বিপিডিবির লোকসান দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা।
  • কার্টসিঃ বনিক বার্তা/ ০৮ অক্টোবর ২০১৮

দেশে এখন নিয়ন্ত্রিত বিচার ব্যবস্থা

  • সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সেমিনার
  • যে দেশে প্রধান বিচারপতি বিচার পান না সে দেশে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ন্যায়বিচার পাবেন না - রব 
  • বিচারকরাই এখন আতঙ্কিত - ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী 
  • সাবেক প্রধান বিচারপতি এখন রিফিউজিতে পরিণত হয়েছে - মাহবুব উদ্দিন খোকন
  • ন্যায়বিচার থাকলে খালেদা জিয়াকে জেলে যেতে হতো না - মান্না



নিয়ন্ত্রিত বিচার ব্যবস্থায় বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও  ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ভিন্নমতের কারও ন্যায়বিচার পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। যে দেশে প্রধান বিচারপতি বিচার পান না সে দেশে খালেদা জিয়া-তারেক রহমান কেউই বিচার পাবেন না। প্রধান বিচারপতি এবং নিম্ন আদালতের আরেক বিচারপতির দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর বিচারকদের মধ্যে এখন আতঙ্ক বিরাজ করছে। 


গতকাল রবিবার, ৭ অক্টোবর, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে ‘গণতন্ত্র, আইনের শাসন এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির উদ্যোগে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেমিনারে ‘গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনত’ শীর্ষক একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অ্যধাপক ড. বোরহান উদ্দীন খান। 

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন এবং পরিচালনা করেন  সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার এএম মাহাবুব উদ্দিন খোকন। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, বাংলাদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধের সময় সাহসের পরিচয় দিয়েছে। দেশে এমন কোনো পরিবার পাওয়া যাবে না, যারা এই সরকারের দ্বারা নিপীড়িত হয়নি। যে ঐক্যের ডাক দেয়া হয়েছে, সেই ঐক্য যেন বাস্তবায়ন হয়। চাওয়া পাওয়া পরে দেখা যাবে। নরম সুরে কথা বললে লাভ হবে না। এই সংকট থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, আওয়ামী লীগ বিগত দিনে সংবিধানকে খন্ড-বিখন্ড করেছিল। আমার ৬৫ বছরের রাজনৈতিক জীবন কখনো দেখিনি ঘটনা ছাড়া মামলা হতে। দেশে বিচারকের স্বাধীনতা নেই, আইনের শাসন নেই। বর্তমান সরকার গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে ফেলেছে। আমরা গণতন্ত্রকে মরতে দিতে পারি না। জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে এই সরকার পরিবর্তন করে গণতন্ত্র পুনঃ প্রতিষ্ঠা করবো।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বলেন, রাষ্ট্রপতি চার বিচারপতিকে ডেকে নিয়ে গেলেন, তাদেরকে শিখিয়ে দিলেন। তারা এসে রাষ্ট্রপতির কথা মত বললেন, তোমার সঙ্গে (সুরেন্দ্র কুমার সিনহা) আমরা বিচারে বসবো না। অভিযোগের মামলা দায়ের অভিযোগের আগেই বিচার হয়ে গেলো। সাবেক প্রধান বিচারপতিকে আইনজীবীদের অনৈক্যের কারণে বেরিয়ে যেতে হয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি আ স ম আব্দুর রব বলেন, বিচারপতি এসকে সিনহাকে বিতাড়িত করায় জাতিকে একটি সঙ্কটে ফেলা হয়েছে। যে দেশে প্রধান বিচারপতি বিচার পায় না সে দেশে বেগম খালেদা জিয়া-তারেক রহমান তো দূরের কথা আমরা কেউ বিচার পাবো না। তিনটি স্তম্ভের একটি প্রশাসন, যেটা এখন পুলিশ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত। এটি এখন পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। বাকি দুটি স্তম্ভ (বিচার ও আইন) অসহায় হয়ে পড়েছে।

নাগরিক ঐক্যর আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা থাকলে তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আজ জেলে যেতে হতো না এবং তারেক রহমানের ওপর এই ধরনের নির্যাতন হতো না। আমাদের লড়াই করতে হবে বিচার বিভাগের পরিপূর্ণ স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান বিনির্মাণের জন্য।

গণতান্ত্রিক আইনজীবী ফোরামের সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেন, বর্তমানে দেশে নিয়ন্ত্রিত বিচার ব্যবস্থা চলছে। ১৬ কোটি মানুষ আজ অবরুদ্ধ। দেশের মানুষ আজ কারাগারে। একদিনের জন্য একটা ভোটের মহড়া হয়। এই সরকার ২০০৮ সালে নির্বাচিত হয়েছিল। এখন এই সরকার একটি অনির্বাচিত ও অবৈধ সরকার। 

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় বিচারের নামে যদি প্রহসন করা হয়, তাহলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি দেশের সকল আইনজীবীকে সঙ্গে নিয়ে শক্তভাবে এর জবাব দেবে। বিচারকদের হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, আমরা কিন্তু পর্যবেক্ষণ করছি, আজকের সেমিনার মহড়া মাত্র। রায় যদি প্রহসনের হয়, তাহলে কালো কোর্টধারীরা বসে থাকবে না। 

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ বলেন, উচ্চ আদালতের রায়ের মাধ্যমে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাক স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে। সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার বিরুদ্ধে ঘুষের মামলা করেছেন ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। দুর্নীতির মামলায় যিনি সাজাপ্রাপ্ত। এই সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি কিভাবে সাবেক প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে মামলা করলেন এমন প্রশ্ন রাখেন তিনি। 

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, দেশে এখন কোনও ন্যায়বিচারের পরিবেশ নেই। বিচারকরাই যেখানে আতঙ্কিত, সেখানে খালেদা জিয়া-তারেক রহমান বা বিরোধী দলের কারও ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার নেই। 

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন,  সাবেক প্রধান বিচারপতি এখন রিফিউজিতে পরিণত হয়েছেন। আরেক বিচারপতি, যিনি তারেক রহমানকে খালাস দিয়েছিলেন, তিনি মালয়য়েশিয়ায় পালিয়ে গিয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।
  • কার্টসিঃ দিনকাল/ ০৮ অক্টোবর ২০১৮

বিএনপির সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে মাঠে নামবে যুক্তফ্রন্ট-ঐক্য প্রক্রিয়া


তফসিলের আগে সংসদ ভেঙে দেওয়া, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ পাঁচ দফা দাবি আদায়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি, যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া। আনুষ্ঠানিকভাবে বৃহত্তর ঐক্যের সূচনা ঘটছে এর মধ্য দিয়ে। দাবি আদায়ে এখন থেকে অভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে দলগুলো।

রোববার রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য খন্দকার মোশাররফের বাসভবনে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

রাত সাড়ে নয়টার দিকে বৈঠকের সিদ্ধান্ত সাংবাদিকদের জানান যুক্তফ্রন্টের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি আ স ম আবদুর রব। তিনি বলেন, ‘যুক্তফ্রন্ট, ঐক্য প্রক্রিয়া ও বিএনপির নেতৃবৃন্দ একসঙ্গে আলোচনা করেছি। উদ্দেশ্য একটাই, বর্তমান স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে এক মঞ্চে দাঁড়ানো। একসঙ্গে আন্দোলন করার ব্যাপারে আজকে (রোববার) নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন থেকে আমরা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করব।’

পাঁচ দফা দাবি প্রসঙ্গে আ স ম রব বলেন, নির্দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন, তফসিলের আগে সংসদ ভেঙে দেওয়া, প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিসভা ভেঙে দেওয়া, ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েন এবং ইভিএম বাতিল করতে হবে।

জামায়াতে ইসলামী প্রসঙ্গে আ স ম রব বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব দলের সঙ্গে ঐক্য হবে। ঐক্য হচ্ছে বিএনপির সঙ্গে, বিএনপির সঙ্গে আলাদাভাবে কারা থাকছে, তা তাদের বিবেচনার বিষয় নয়। খালেদা জিয়ার মুক্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটাও দাবির মধ্যে আছে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনকারী, কোটার দাবিতে আন্দোলনকারী, গায়েবি মামলায় গ্রেপ্তার ও তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দীর মুক্তি দিতে হবে। জামায়াতের বিষয়ে বিকল্পধারার আপত্তির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিকল্পধারার মহাসচিব ছাড়াও যুক্তফ্রন্টের নেতারা বৈঠকে ছিলেন, সবাই মিলেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এরপর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ। তিনি বলেন, দাবি আদায়ে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলা হবে। দাবি আদায় করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে সবাই মিলে আন্দোলন করা হবে। পাঁচ দফার মধ্যেই খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের বিষয় আছে।

এর আগে গত ২২ সেপ্টেম্বর ঐক্য প্রক্রিয়ার নাগরিক সমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন যুক্তফ্রন্ট ও বিএনপির নেতারা। ওই সময় থেকেই বৃহত্তর ঐক্যের বিষয়টি সামনে আসে। এরপর বিভিন্ন সময় নেতাদের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ রোববারের বৈঠকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নেতারা।

বৈঠকে ঐক্য প্রক্রিয়ার আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন ও যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন না। বিএনপির পক্ষ থেকে বৈঠক উপস্থিত ছিলেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং মওদুদ আহমদ ও খন্দকার মোশাররফ হোসেন। যুক্তফ্রন্ট নেতাদের মধ্যে ছিলেন বিকল্পধারার আবদুল মান্নান, জেএসডির আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার মোস্তফা মহসিন মন্টু, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও আ ব ম মোস্তাফা আমীন। এ ছাড়া বৃহত্তর ঐক্য গঠনে শুরু থেকে কাজ করা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লা চৌধুরী বৈঠকে অংশ নেন।

  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ ০৮ অক্টোবর ২০১৮

আবার টাকার মান কমল

  • ডলারের বিনিময়মূল্য ৫ পয়সা বেড়ে ৮৩ টাকা ৮০ পয়সা হয়েছে 
  • আমদানি দায় শোধ করতে এ হার বেঁধে দেওয়া হয়েছে
  • তবে খোলা বাজারে ডলারের দাম ৮৬ টাকায় উঠেছে
  • ভারতে ৩ মাসে ডলারের দাম ৫-৬ রুপি বেড়েছে



তিন মাস আটকে রাখার পর ডলারের বিপরীতে টাকার মান পড়তে দিল বাংলাদেশ ব্যাংক। গত সপ্তাহের শেষ তিন দিনে ৫ পয়সা বেড়েছে প্রতি ডলারের দাম। ফলে প্রতি ডলারের বিনিময়মূল্য ৮৩ টাকা ৭৫ পয়সা থেকে বেড়ে ৮৩ টাকা ৮০ পয়সা হয়েছে। মূলত আমদানি দায় শোধ করতে এ হার বেঁধে দেওয়া হয়েছে। তবে খোলা বাজারে ডলারের দাম ৮৬ টাকায় উঠেছে।

এদিকে প্রতিবেশী দেশ ভারতে গত তিন মাসে ডলারের দাম ভারতীয় মুদ্রায় ৫ থেকে ৬ রুপি বেড়েছে। ভারতে গত জুনে প্রতি ডলারের দাম বিনিময়মূল্য ছিল ৬৮ দশমিক ৮০ রুপি, গত শুক্রবার তা বেড়ে ৭৪ রুপি ছাড়িয়ে যায়। দেশটির মুদ্রানীতিতে নীতিনির্ধারণী সুদ হারের কোনো পরিবর্তন না আসার পরই ব্যাপক হারে রুপির দরপতন হয়। যেটা ভারতের ইতিহাসে রেকর্ড।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, ভারতে যেভাবে রুপির মান হারাচ্ছে, তাতে বাংলাদেশ ডলারের আয় হারাতে পারে। এ জন্য রপ্তানি ও প্রবাসী আয় ধরে রাখতেই টাকার মানে কিছুটা ছাড় দেওয়া হচ্ছে। আরও কয়েক দিন এমন প্রবণতা চলবে।

জানতে চাইলে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, আমদানি ব্যাপক হারে বাড়ছে। অনেক বড় বড় প্রকল্পের কাজ চলছে। তাতে সামনের দিনগুলোতে ডলারের ওপর চাপ আরও বাড়তে পারে। তাই টাকার মান অবনমন করলে অনেক বুঝে করা প্রয়োজন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জুন থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের দাম নির্দিষ্ট করে দেয়। ব্যাংকগুলোকে মৌখিকভাবে জানিয়ে দেয়, ৮৩ টাকা ৭৫ পয়সার বেশি দামে আমদানি দায় শোধ করা যাবে না। এ জন্য ব্যাংকগুলোর কাছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে ডলার বিক্রি করে, তার দামও ছিল ৮৩ টাকা ৭৫ পয়সা।

গত ২৮ জুন থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডলারের দাম এভাবেই আটকে রেখেছিল নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। আর একই সময়ে বাজারের সংকট সামলাতে ব্যাংকগুলোর কাছে ২০ কোটি ডলার বিক্রি করেছে তারা। গত বুধবার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩ হাজার ১৯৭ কোটি ডলার।

জানা গেছে, চলতি বছরের শুরু থেকে বাংলাদেশে ডলারের সংকট শুরু হয়। রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ের তুলনায় আমদানি দায় বেশি হওয়ায় এ সংকটের সূত্রপাত। এখন পর্যন্ত এই সংকটের কোনো সুরাহা হয়নি।

  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ ০৮ অক্টোবর ২০১৮

মানুষকে আবার জিম্মির চেষ্টা

  • নতুন আইনে সর্বোচ্চ সাজা ৫ বছর
  • বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সাজা পর্যাপ্ত নয়
  • সাজা কমানোই এখন বড় দাবি শ্রমিকদের
  • পরিবহনশ্রমিকেরা রাস্তায়
  • ঢাকা বিভাগে পণ্য পরিবহন বন্ধ
  • বিভিন্ন স্থানে যান চলাচলে বাধা
  • ধর্মঘটসহ বৃহত্তর কর্মসূচির হুমকি


সদ্য পাস হওয়া সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবিতে মাঠে নেমেছেন পরিবহনমালিক ও শ্রমিকেরা। ঢাকা বিভাগের ১৭টি জেলায় সব ধরনের পণ্য পরিবহন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছেন পরিবহন শ্রমিকেরা। ১২ অক্টোবরের মধ্যে আইন সংশোধন করা না হলে পরিবহন ধর্মঘটসহ বৃহত্তর কর্মসূচির হুমকি দিয়েছে পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।

গতকাল রোববার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় রাস্তায় নামেন পরিবহনশ্রমিকেরা। যাত্রাবাড়ী ও মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। পশ্চিম দোলাইরপাড় এলাকায় শ্রমিকেরা সড়কে পণ্যবাহী গাড়ি (পিকআপ-ট্রাক) থামিয়ে চালকদের লাইসেন্স পরীক্ষা করেন। লাইসেন্স না থাকলে চালকদের মুখে পোড়া ইঞ্জিন অয়েল মেখে দেওয়া হয়।

এদিকে গাজীপুরে শ্রমিকেরা কিছু গাড়ি ভাঙচুর করেন। এ সময় সাংবাদিকদের মারধর ও পথচারীদের হেনস্তা করা হয়। গাজীপুর সংবাদদাতা জানান, শ্রমিক ইউনিয়নের লোকজন বেলা ১১টার দিকে টঙ্গী আনারকলি সড়কের উল্টো দিকে ট্রাকস্ট্যান্ডে জড়ো হয়ে মালবাহী ট্রাক ও পিকআপের গতিরোধ করে লাইসেন্স নিয়ে যান। কোনো কোনো চালককে মারধরও করা হয়।

গত ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়। সেদিন থেকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। তাদের আন্দোলনের মুখে তড়িঘড়ি করে গত ১৯ সেপ্টেম্বর সংসদে সড়ক পরিবহন বিল পাস করা হয়। তবে রাষ্ট্রপতি এখনো এই বিলে সই করেননি।

নতুন আইনে সড়ক দুর্ঘটনায় অপরাধ প্রমাণ হওয়া সাপেক্ষে দোষী চালকের সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। এ ছাড়া আইনে ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ারও বিধান আছে। সে ক্ষেত্রে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি হত্যাকাণ্ড প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড।

সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করেন এমন ব্যক্তিরা বলেছেন, সড়কে চলা দীর্ঘদিনের নৈরাজ্য বন্ধে আইনে রাখা শাস্তির বিধান পর্যাপ্ত নয়। মন্দের ভালো সেই আইনও মানতে রাজি নন পরিবহনমালিক ও শ্রমিকেরা।

নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) আন্দোলনের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন প্রথম আলোকে বলেন, জনগণকে জিম্মি করে দাবি আদায়ের চেষ্টা পরিবহনমালিক-শ্রমিকদের পুরোনো অভ্যাস। ১৯৮৩ সালের আইনে সড়ক দুর্ঘটনার সাজা ১০ বছর ছিল। শ্রমিকেরা জনগণকে জিম্মি করে ধারাগুলো জামিনযোগ্য ও সর্বোচ্চ সাজা ৩ বছর করতে বাধ্য করেছিলেন।

পরিবহনমালিক ও শ্রমিকদের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান প্রথম আলোকে বলেন, সংসদে একটি আইন পাস হয়েছে। কেউ বললেই সেই আইনে সংশোধনী আনা যায় না। দাবি জানালেই এভাবে দাবি মেনে নেওয়া যাবে না। পরিবহনমালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বিষয়টির সমাধান করবে।

সড়কে শ্রমিকেরা

গতকাল সকাল থেকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী-পোস্তগোলা সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেয় ট্রাক-লরি-কাভার্ড ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন। একপর্যায়ে পণ্যবাহী গাড়ি থামিয়ে চালকদের লাইসেন্স পরীক্ষা করতে শুরু করেন শ্রমিকেরা। পশ্চিম দোলাইরপাড় এলাকায় দেখা যায়, যেসব চালকের লাইসেন্স নেই, তাঁদের নাকেমুখে পোড়া ইঞ্জিন অয়েল মেখে দেওয়া হয়। যাঁদের কাছে বৈধ লাইসেন্স পাওয়া যাচ্ছিল, তাঁদের গাড়ি চালানো বন্ধ করে আন্দোলনে নামতে বলপ্রয়োগ করা হয়। দুপুর পর্যন্ত প্রায় ১০০ ট্রাক ও পিকআপ ভ্যান সেখানে আটকে রাখেন শ্রমিকেরা।

পশ্চিম দোলাইরপাড় এলাকায় শ্রমিকদের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন ট্রাক-লরি-কাভার্ড ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সহসাংগঠনিক সম্পাদক মো. এরশাদ। তিনি বলেন, ‘আইনে মৃত্যুদণ্ড আর পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের বিধান আছে। এই বিধান মাথায় নিয়ে আমরা গাড়ি চালাব কী করে?’

সেখানে দায়িত্বরত পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) দীন ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, কারও মুখে রং লাগানো বা লাইসেন্স চেক করে সেই লাইসেন্স নিজেদের কাছে রাখার আইনি অধিকার শ্রমিকদের নেই।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মোহাম্মদপুর-বছিলা সড়কের তিন রাস্তার মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, পরিবহনশ্রমিকেরা প্রতিটি সড়কে বাঁশ, ইট, কাঠের টুকরা দিয়ে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছেন। বেড়িবাঁধ সড়ক, মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডে যাওয়ার সড়ক এবং বছিলা হয়ে কেরানীগঞ্জে যাওয়ার সড়কে যানবাহন আটকা পড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।

সকাল আটটার দিকে গাবতলী আন্তজেলা বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার বাস ছাড়তে বাধা দেওয়া হয়। ঢাকার ভেতরে চলাচলকারী বাস ছাড়তেও বাধা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। জানতে চাইলে পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদ আহাম্মদ বলেন, একদল শ্রমিক বাস চলাচলে বাধা দিচ্ছিলেন। পুলিশ শ্রমিকদের ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দেয়।

গত শনিবার তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ডে সমাবেশ করে বাংলাদেশ পণ্য পরিবহন শ্রমিক-মালিক ঐক্য পরিষদ। সেখানে নেতারা সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনসহ বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন। দাবি আদায়ের লক্ষ্যে গতকাল রোববার সকাল ছয়টা থেকে ঢাকা বিভাগে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়। ঐক্য পরিষদের অন্য দাবিগুলো হচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনায় ৩০২ ধারায় মামলা নেওয়া যাবে না, ৫ লাখ টাকা জরিমানার বিধান বাতিল করা, জামিনযোগ্য ধারায় মামলা করা, ভারী যানবাহনচালকদের হালকা লাইসেন্স না দিয়ে ভারী যানবাহনের লাইসেন্স দেওয়া ইত্যাদি।

বাংলাদেশ পণ্য পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মুকবুল আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, কিছু উচ্ছৃঙ্খল শ্রমিক সড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিলেন। নেতারা তাঁদের সরিয়ে দিয়েছেন। আইন সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে।

পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকলে তার প্রভাব পড়বে কাঁচাবাজার, তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে। জানতে চাইলে কারওয়ান বাজার ক্ষুদ্র কাঁচামাল আড়ত ব্যবসায়ী বহুমুখী সমিতির সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, কারওয়ান বাজারে প্রতিদিন চার শ থেকে সাড়ে চার শ ট্রাক মালামাল নিয়ে আসে। পরিবহন বন্ধ থাকলে পণ্যের সংকট দেখা দেবে।

গত শনিবার রাজধানীর ফুলবাড়িয়া বিআরটিসি বাস ডিপো প্রাঙ্গণে আলাদা সমাবেশ করে পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। এই পরিষদে রয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি নৌমন্ত্রী শাজাহান খান।

এর আগেও বারবার মানুষকে জিম্মি করে দাবি আদায়ের কৌশল নেয় পরিবহনমালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলো। সড়ক দুর্ঘটনায় চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব তারেক মাসুদ, সাংবাদিক মিশুক মুনীরসহ পাঁচজনের প্রাণহানির মামলায় গত বছর বাসচালক জামির হোসেনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত। এরপর সাভারে ট্রাকচাপায় এক নারীকে হত্যার দায়ে চালকের মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন আদালত। এই দুটি রায়ের প্রতিবাদে ধর্মঘট করেছিলেন পরিবহনমালিক-শ্রমিকেরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবং সেফ রোড অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট অ্যালায়েন্সের আহ্বায়ক হোসেন জিল্লুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, শ্রমিকেরা জনজীবনকে জিম্মি করে দাবি আদায়ের যে চেষ্টা করছেন, তা অগ্রহণযোগ্য। জবাবদিহির ঊর্ধ্বে থাকার জন্য শ্রমিকেরা আইন সংশোধনসহ এসব দাবি করছেন। শ্রমিকদের এমন দাবির প্রতি সরকারের কোনোভাবেই সহানুভূতিশীল হওয়া উচিত হবে না।
  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ ০৮ অক্টোবর ২০১৮

Sunday, October 7, 2018

অর্থনীতিতে ঝুঁকি তৈরি করছে বিপুল সঞ্চয়পত্র

হাছান আদনান

সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাবদ সরকারের ঋণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকার বেশি। ছয় বছর আগেও এ বাবদ ঋণ ছিল মাত্র ৬৪ হাজার কোটি টাকা। বিপুল অংকের এ সঞ্চয়পত্র বিক্রির কারণে ব্যাংকের আমানত প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। বিনিয়োগ মন্দায় ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না দেশের পুঁজিবাজারও। উচ্চসুদের এ বিপুল সঞ্চয়পত্র সরকারের ব্যয়ও বাড়িয়ে দিচ্ছে, যা অদূরভবিষ্যতে অর্থনীতিতে ঝুঁকি তৈরি করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বাজেটের ঘাটতি অর্থায়নে অভ্যন্তরীণ উৎস হিসেবে ব্যাংকঋণ ও সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে সরকার। মূলত জনগণকে সঞ্চয়ী হতে উদ্বুদ্ধ করা, বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিক, নারী, প্রবাসী বাংলাদেশী, শারীরিক প্রতিবন্ধী, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় আনার জন্যই সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে সরকার। যদিও বাংলাদেশে সরকারের ঘাটতি অর্থায়নের প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে এ সঞ্চয়পত্র।

জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান বলছে, ২০১১-১২ অর্থবছর শেষে সঞ্চয়পত্র খাত থেকে সরকারের ঋণ ছিল ৬৩ হাজার ৯১৭ কোটি টাকা। ওই অর্থবছরে নিট ৪৭৯ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল। এরপর ২০১২-১৩ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয় ৭৭২ কোটি টাকার। এর পর থেকেই লাগামহীন গতিতে বেড়েছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়ে ১১ হাজার ৭০৭ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। ওই অর্থবছর শেষে সঞ্চয়পত্র খাতে সরকারের ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৭৬ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা।

২০১৪-১৫ অর্থবছর শেষে সঞ্চয়পত্র খাতে সরকারের ঋণ ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। ওই অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয় ২৮ হাজার ৭৩২ কোটি টাকার। এরপর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩৩ হাজার ৬৮৮ কোটি, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৫২ হাজার ৪১৭ কোটি ও ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৪৬ হাজার ৫৩০ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়। গত অর্থবছর শেষে সঞ্চয়পত্র খাত থেকে সরকারের ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ২ লাখ ৩৭ হাজার ৭৬৬ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের জুলাইয়ে আরো ৫ হাজার ৩৫ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে সরকার। সব মিলিয়ে জুলাই শেষে সঞ্চয়পত্র খাতে সরকারের ঋণের মোট পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৪২ হাজার ৮০২ কোটি টাকা।


সঞ্চয়পত্রে সুদহার না কমালে এর বিক্রি বাড়তেই থাকবে বলে মনে করেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর। তাই সুদহার কমিয়ে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি সীমিত করার পক্ষে মত দেন তিনি। ড. আহসান এইচ মনসুর বণিক বার্তাকে বলেন, সঞ্চয়পত্রের কারণে সরকারের ঋণের ভার বাড়ছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ঋণের ভার সরকার তিন-চার গুণ বেশি বড় করে ফেলেছে। উচ্চহারের সুদে এটি বড় করা হচ্ছে। এর দায়ভার আগামীতে জনগণকেই নিতে হবে। সঞ্চয়পত্রের কারণে ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ব্যাংকে টাকা না গিয়ে সঞ্চয়পত্রে চলে যাচ্ছে। পুঁজিবাজার থেকে বিনিয়োগ তুলে নিয়ে মানুষ সঞ্চয়পত্র কিনছে। এতে পুঁজিবাজারে অস্থিরতা চলছে। ব্যাংকিং খাতে ঋণের সুদহার না কমার পেছনেও সঞ্চয়পত্রের প্রত্যক্ষ ভূমিকা আছে।

বর্তমানে দেশে ১৭ ধরনের সঞ্চয়পত্র ও সরকারি বন্ড বিক্রি করে সরকার। সঞ্চয়পত্রে ১২ শতাংশ পর্যন্ত সুদ পরিশোধ করা হচ্ছে। কিন্তু সরকারের নির্দেশনায় তিন মাস মেয়াদি আমানতের সুদহার ৬ শতাংশে নামিয়ে এনেছে ব্যাংকগুলো। সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানতের সুদহারে বিশাল ঘাটতি মানুষকে ব্যাংকবিমুখ করে তুলছে। ফলে মানুষ ব্যাংক থেকে আমানত তুলে সঞ্চয়পত্র কিনছে। সুদহারের পাশাপাশি সঞ্চয়পত্রের সংখ্যা কমিয়ে এর বিক্রি সীমার মধ্যে রাখার কথা বলছেন ব্যাংকাররা।

ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ব্যাংকের আমানত সঞ্চয়পত্রে চলে গেছে। এ কারণে আমানতের প্রবৃদ্ধিতে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে। ব্যাংকের কাছে আমানত না থাকায় বিনিয়োগ করা যাচ্ছে না। এর প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়েছে ঋণের প্রবৃদ্ধিতে। গত কয়েক মাসে ব্যাংকের ঋণ প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক পরিস্থিতিতে চলে গেছে। সরকারের নির্দেশনার কারণেই আমরা ঋণ ও আমানতের সুদহার কমিয়ে এনেছি। আমানতের সুদহার কমার কারণে মানুষ ব্যাংক থেকে টাকা তুলে সঞ্চয়পত্র কিনছে।

সঞ্চয়পত্রের কাঠামো ও সুদহারে সংস্কার প্রয়োজন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ব্যাংকের আমানত ও বিনিয়োগ বাড়ানো সম্ভব না হলে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্য হোঁচট খাবে। ঋণের প্রবৃদ্ধি বাড়ানো সম্ভব না হলে দেশের প্রবৃদ্ধিতেও ধাক্কা লাগবে। সরকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে ঋণ না বাড়িয়ে ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে সুদ ব্যয় অনেক কমে আসত।

সঞ্চয়পত্রের উচ্চসুদের ধাক্কা সইতে হচ্ছে দেশের পুঁজিবাজারকেও। গুরুত্বপূর্ণ রেফারেন্স রেট হিসেবে সঞ্চয়পত্রের উচ্চসুদ বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশিত রিটার্ন বাড়িয়ে দিচ্ছে। এতে পুঁজিবাজার থেকে মূলধন সংগ্রহে আগ্রহী উদ্যোক্তাদের কস্ট অব ইকুইটি বেড়ে যাচ্ছে। অনেক বিনিয়োগকারীই পুঁজিবাজারের বিভিন্ন সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের পরিবর্তে সঞ্চয়পত্রে লগ্নি করছেন। উদ্যোক্তা শ্রেণীর পাশাপাশি দেশের পুঁজিবাজারের স্টেকহোল্ডাররাও তাই দীর্ঘদিন ধরে সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানোর দাবি জানিয়ে আসছেন।

সঞ্চয়পত্রের সুদহার ও পুঁজিবাজারের সূচকের ঐতিহাসিক সম্পর্ক তুলে ধরে তারা বলেন, সঞ্চয়পত্রের সুদ কমায় ২০০৬-০৭ সালে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগপ্রবাহ অনেক বেড়েছিল। সঞ্চয়পত্রের সুদহার বৃদ্ধির পর তা আবার কমতে থাকে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সূচকেও এর প্রতিফলন দেখা যায়। পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল করা ও উদ্যোক্তা-বিনিয়োগকারী সব মহলের কাছে এর আকর্ষণ বাড়াতে বিশ্লেষক ও বাজারসংশ্লিষ্টরা যেসব পরামর্শ তুলে ধরছেন, সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানো তার মধ্যে অন্যতম।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বণিক বার্তাকে বলেন, সঞ্চয়পত্রের সুদহারের সঙ্গে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ওতপ্রোত সম্পর্ক রয়েছে। সঞ্চয়পত্রের সুদহার বেশি থাকলে স্বাভাবিকভাবেই মানুষ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে আসবে না। তাই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, সেজন্য সঞ্চয়পত্রের সুদহার সামঞ্জস্যপূর্ণ করা প্রয়োজন।

সঞ্চয়পত্রের ওপর সরকারের অতিরিক্ত নির্ভরতাকে দেশের অর্থনীতির জন্য সংকট হিসেবে চিহ্নিত করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও (আইএমএফ)। বাংলাদেশের অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক ও সমস্যা নিয়ে প্রকাশিত চলতি বছরের জুন সংখ্যার প্রতিবেদনে এ পর্যবেক্ষণ দিয়েছে সংস্থাটি। সংকট সমাধানে পাকিস্তানের উদাহরণ তুলে ধরে সংস্থাটি বলেছে, পাকিস্তানে চলতি শতকের শুরুর দিকেও ৩০ ধরনের বেশি সঞ্চয়পত্র ছিল। উচ্চ রিটার্নের জন্য ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, কোম্পানি সব পক্ষই সেখানে বিনিয়োগ করছিল। ২০০০ সালে দেশটির সরকার সঞ্চয়পত্র সংস্কারের পদক্ষেপ নেয়। এ সংস্কার সরকারের সুদব্যয় কমানো, আর্থিক বাজার সুশৃঙ্খল করা, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগপ্রবাহ বাড়ানোর মতো উদ্দেশ্যগুলো অর্জনে সফল হয়।

বাংলাদেশে সঞ্চয়পত্রের বাড়তি সুদহার অর্থনীতির জন্য বাড়তি ঝুঁকি তৈরি করছে বলে মনে করেন অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, সঞ্চয়পত্রের সুদহার কিছুটা কমানো হলেও সরকারি বন্ড বা গ্যারান্টি হিসেবে যেকোনো ব্যাংকের এফডিআরের চেয়ে এটি মানুষের কাছে বেশি লোভনীয় হবে। দেশে নির্ভরশীল মানুষের জন্য তেমন কোনো আর্থিক নিরাপত্তা উপকরণ নেই। এ কারণে মানুষ সঞ্চয়পত্র কিনতে বাধ্য হচ্ছে। অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে উপার্জিত টাকা যখন সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ হয়, তখন এর লক্ষ্য ব্যাহত হয়। এটি মূলত প্রশাসনিক সমস্যা। সঞ্চয়পত্র ক্রেতাদের শর্তগুলো বাস্তবায়ন করা দরকার। কারা এটি কিনছে, তাদের পরিচয় উদ্ঘাটন করা সম্ভব হলে মানুষ ব্যাংকমুখী হবে।

প্রতি বছর বাজেটে রাজস্ব আহরণের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে, তা অর্জিত না হওয়ার কারণে সঞ্চয়পত্র বিক্রির ওপর জোর দিতে হচ্ছে সরকারকে। বাজেটে রাজস্ব আহরণের বড় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও কয়েক বছর ধরেই তা আহরণে ব্যর্থ হয়ে সংশোধনের পথে হাঁটতে হচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর)। সর্বশেষ অর্থবছরে মূল লক্ষ্যমাত্রা থেকে সংশোধন করে ২৫ হাজার কোটি টাকা কমানো হলেও অর্থবছর শেষে সে লক্ষ্যও পূরণ করতে পারেনি সংস্থাটি। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২ লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকার মূল লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সাময়িক হিসাবে এনবিআরের রাজস্ব এসেছে ২ লাখ ৭ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ সর্বশেষ অর্থবছর শুধু এনবিআরের ঘাটতি মূল লক্ষ্যমাত্রার ৪১ হাজার কোটি টাকা; এনবিআর-বহির্ভূত রাজস্ব যোগ করে ঘাটতি হিসাব করলে যার পরিমাণ ৫০ হাজার কোটি ছাড়িয়েছে। এর আগে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হলেও মূল লক্ষ্য থেকে রাজস্ব কম এসেছে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। অর্থবছরটিতে ২ লাখ ১০৩ কোটি টাকার মূল লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব আহরণ হয়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসেও রাজস্ব আহরণে লক্ষ্যমাত্রা থেকে বেশ পিছিয়ে রয়েছে এনবিআর। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম দুই মাস জুলাই-আগস্টে লক্ষ্যমাত্রা থেকে ২০ দশমিক ৪৫ শতাংশ কম রাজস্ব পেয়েছে সংস্থাটি। আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক মিলিয়ে এ দুই মাসে ৩৫ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এনবিআর আহরণ করেছে ২৮ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। এ দুই মাসে রাজস্ব আহরণে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ১ দশমিক ৫৩ শতাংশ। পুরো অর্থবছরে রাজস্ব আহরণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয় প্রায় ৩২ শতাংশ।

  • কার্টসিঃ বনিক বার্তা/ ০৭ অক্টোবর ২০১৮

BD to miss SDG target at present pace of housing

Experts for social housing to address the problem



The overall housing situation of the country is poor compared to the pace of development with 6.0 million housing shortages, according to experts.

They spoke of the government's lack of interest to take realistic measures to formalise and augment the housing supply process. The government's contribution is only 1.0 per cent of the total demand for housing, the experts observed.

Bangladesh will not be able to achieve the sustainable development goals' 11th target of housing for all by 2030 if the current trend continues, they said.

All the ad hoc basis initiatives have been failing due to corruption, lack of monitoring and coordination among ministries, the experts mentioned.They suggested social housing either by public or private or by the both.

Their main objective will be to ensure housing for all through a master plan, not to make a profit.

They made the views at a seminar on 'Housing for All' hosted by the Bangladesh Institute of Planners (BIP) in the capital, marking World Habitat Day 2018.

Urban Development Directorate (UDD) director Khurshid Zabin Toufique was present as the chief guest.

Four presentations were made on various issues of housing at the seminar held in the BIP conference hall.

BIP general secretary Adil Muhammed Khan made a presentation on 'Social Housing Concept and Housing for Low-income People in Bangladesh'.

He said the SDG target 11 stresses access for all to adequate, safe and affordable housing and basic services and upgrade slums by 2030.

About housing deficit in Dhaka city, he spoke of an imbalance between the total number of households and the total housing stock.The floor area per person is as small as 12 square metres, he mentioned.

Mr Khan identified the scarcity of land and high building cost as major constraints for housing development in Dhaka.

High land price also excludes poor from land and home ownership, he added.

Experts said there is neither cost recovery nor cross subsidisation approach here by which housing can be ensured as it is a basic right.

According to the Bangladesh Bureau of Statistics (BBS), there was a housing shortfall of 4.6 million units for 43.43 million people in 2010. The shortage is projected to reach 8.5 million units for 60 million urban people by 2021, it revealed.

In her presentation, Arc planner Salma A Shafi said the total urban population will reach 100 million by 2050.

The government even does not supply 1.0 per cent of the total housing demand, she added. A minimum of 0.1 million housing units should be supplied in the market every year, Ms Shafi said.

The government talks about only 10,000 units supplied by them, she noted.

Ms Shafi said the limited number of pilot projects will not be effective in solving housing crisis. Housing finance is a major part of the issue. She suggested approval of an urban sector policy, an implementable housing policy and redevelopment of old areas like Shahjahanpur and the old town.

Meanwhile, Mr Toufique said the government has a gazette on social housing, but according to the housing policy 2016, it will not provide housing for all. Rather it will work as a facilitator, he mentioned.

Only people from river erosion areas, destitute women left by husbands and the elderly will be eligible for housing, he added.

Housing has been recognised as an industry which means lots of incentives can be provided in the sector, said the noted planner.

About exorbitant land prices, he said the prices of land in Dhaka are close to that of New York or Tokyo which is a bubble.

If this cannot be controlled, Mr Toufique said, people will continue to grab rivers and other water bodies.

Speakers said urban financing cannot be ensured by the government only. It can be make a strategic alliance of public, private and community to solve housing problem.

Housing is a priority issue in all the countries as social instability will be there if housing problem is not resolved.But housing has become a lucrative business for the realtors which provide housing for the better-off.

There is hardly any trend among developers for low-cost housing. It is the government which should engage the developers in doing so, they stated. Rajuk and other agencies undertake housing projects mostly for professional groups and other affluent sections, they observed.

The speakers said privatisation happens in the open economy, but there is no equilibrium in society now. Housing is not a business opportunity rather it should be recognised as a right, the speakers went on.

For that, political will is the main issue, they said.

  • Courtesy: The Financial Express /Oct 07, 2018