Search

Monday, October 8, 2018

দেশে এখন নিয়ন্ত্রিত বিচার ব্যবস্থা

  • সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সেমিনার
  • যে দেশে প্রধান বিচারপতি বিচার পান না সে দেশে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ন্যায়বিচার পাবেন না - রব 
  • বিচারকরাই এখন আতঙ্কিত - ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী 
  • সাবেক প্রধান বিচারপতি এখন রিফিউজিতে পরিণত হয়েছে - মাহবুব উদ্দিন খোকন
  • ন্যায়বিচার থাকলে খালেদা জিয়াকে জেলে যেতে হতো না - মান্না



নিয়ন্ত্রিত বিচার ব্যবস্থায় বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও  ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ভিন্নমতের কারও ন্যায়বিচার পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। যে দেশে প্রধান বিচারপতি বিচার পান না সে দেশে খালেদা জিয়া-তারেক রহমান কেউই বিচার পাবেন না। প্রধান বিচারপতি এবং নিম্ন আদালতের আরেক বিচারপতির দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর বিচারকদের মধ্যে এখন আতঙ্ক বিরাজ করছে। 


গতকাল রবিবার, ৭ অক্টোবর, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে ‘গণতন্ত্র, আইনের শাসন এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির উদ্যোগে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেমিনারে ‘গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনত’ শীর্ষক একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অ্যধাপক ড. বোরহান উদ্দীন খান। 

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন এবং পরিচালনা করেন  সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার এএম মাহাবুব উদ্দিন খোকন। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, বাংলাদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধের সময় সাহসের পরিচয় দিয়েছে। দেশে এমন কোনো পরিবার পাওয়া যাবে না, যারা এই সরকারের দ্বারা নিপীড়িত হয়নি। যে ঐক্যের ডাক দেয়া হয়েছে, সেই ঐক্য যেন বাস্তবায়ন হয়। চাওয়া পাওয়া পরে দেখা যাবে। নরম সুরে কথা বললে লাভ হবে না। এই সংকট থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, আওয়ামী লীগ বিগত দিনে সংবিধানকে খন্ড-বিখন্ড করেছিল। আমার ৬৫ বছরের রাজনৈতিক জীবন কখনো দেখিনি ঘটনা ছাড়া মামলা হতে। দেশে বিচারকের স্বাধীনতা নেই, আইনের শাসন নেই। বর্তমান সরকার গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে ফেলেছে। আমরা গণতন্ত্রকে মরতে দিতে পারি না। জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে এই সরকার পরিবর্তন করে গণতন্ত্র পুনঃ প্রতিষ্ঠা করবো।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বলেন, রাষ্ট্রপতি চার বিচারপতিকে ডেকে নিয়ে গেলেন, তাদেরকে শিখিয়ে দিলেন। তারা এসে রাষ্ট্রপতির কথা মত বললেন, তোমার সঙ্গে (সুরেন্দ্র কুমার সিনহা) আমরা বিচারে বসবো না। অভিযোগের মামলা দায়ের অভিযোগের আগেই বিচার হয়ে গেলো। সাবেক প্রধান বিচারপতিকে আইনজীবীদের অনৈক্যের কারণে বেরিয়ে যেতে হয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি আ স ম আব্দুর রব বলেন, বিচারপতি এসকে সিনহাকে বিতাড়িত করায় জাতিকে একটি সঙ্কটে ফেলা হয়েছে। যে দেশে প্রধান বিচারপতি বিচার পায় না সে দেশে বেগম খালেদা জিয়া-তারেক রহমান তো দূরের কথা আমরা কেউ বিচার পাবো না। তিনটি স্তম্ভের একটি প্রশাসন, যেটা এখন পুলিশ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত। এটি এখন পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। বাকি দুটি স্তম্ভ (বিচার ও আইন) অসহায় হয়ে পড়েছে।

নাগরিক ঐক্যর আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা থাকলে তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আজ জেলে যেতে হতো না এবং তারেক রহমানের ওপর এই ধরনের নির্যাতন হতো না। আমাদের লড়াই করতে হবে বিচার বিভাগের পরিপূর্ণ স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান বিনির্মাণের জন্য।

গণতান্ত্রিক আইনজীবী ফোরামের সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেন, বর্তমানে দেশে নিয়ন্ত্রিত বিচার ব্যবস্থা চলছে। ১৬ কোটি মানুষ আজ অবরুদ্ধ। দেশের মানুষ আজ কারাগারে। একদিনের জন্য একটা ভোটের মহড়া হয়। এই সরকার ২০০৮ সালে নির্বাচিত হয়েছিল। এখন এই সরকার একটি অনির্বাচিত ও অবৈধ সরকার। 

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় বিচারের নামে যদি প্রহসন করা হয়, তাহলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি দেশের সকল আইনজীবীকে সঙ্গে নিয়ে শক্তভাবে এর জবাব দেবে। বিচারকদের হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, আমরা কিন্তু পর্যবেক্ষণ করছি, আজকের সেমিনার মহড়া মাত্র। রায় যদি প্রহসনের হয়, তাহলে কালো কোর্টধারীরা বসে থাকবে না। 

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ বলেন, উচ্চ আদালতের রায়ের মাধ্যমে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাক স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে। সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার বিরুদ্ধে ঘুষের মামলা করেছেন ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। দুর্নীতির মামলায় যিনি সাজাপ্রাপ্ত। এই সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি কিভাবে সাবেক প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে মামলা করলেন এমন প্রশ্ন রাখেন তিনি। 

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, দেশে এখন কোনও ন্যায়বিচারের পরিবেশ নেই। বিচারকরাই যেখানে আতঙ্কিত, সেখানে খালেদা জিয়া-তারেক রহমান বা বিরোধী দলের কারও ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার নেই। 

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন,  সাবেক প্রধান বিচারপতি এখন রিফিউজিতে পরিণত হয়েছেন। আরেক বিচারপতি, যিনি তারেক রহমানকে খালাস দিয়েছিলেন, তিনি মালয়য়েশিয়ায় পালিয়ে গিয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।
  • কার্টসিঃ দিনকাল/ ০৮ অক্টোবর ২০১৮

No comments:

Post a Comment