Search

Tuesday, October 16, 2018

সম্পাদকদের নজিরবিহীন মানববন্ধন


সাত দফা দাবিতে এক নজিরবিহীন মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন সংবাদপত্রের সম্পাদকরা। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গতকাল এই কর্মসূচি থেকে সংসদের শেষ অধিবেশনেই বাকস্বাধীনতা ও মুক্ত সাংবাদিকতাবিরোধী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সংশোধনীর দাবি জানানো হয়। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সম্পাদকরা একসঙ্গে এ ধরনের কর্মসূচি পালন করলেন।




মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে সম্পাদক পরিষদের দাবিগুলো তুলে ধরেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহ্‌ফুজ আনাম। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে-
১. সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও বাকস্বাধীনতা সুরক্ষার লক্ষ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩ ধারাগুলো অবশ্যই যথাযথভাবে সংশোধন করতে হবে।

২. এসব সংশোধনী বর্তমান সংসদের শেষ অধিবেশনেই আনতে হবে।

৩. পুলিশ বা অন্য কোনো সংস্থার মাধ্যমে কোনো সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে তল্লাশি চালানোর ক্ষেত্রে তাদের শুধু নির্দিষ্ট বিষয়বস্তু আটকে দেয়ার অনুমতি দেয়া যেতে পারে, তবে কোনো কম্পিউটার ব্যবস্থা বন্ধ করার অনুমতি দেয়া যাবে না। শুধু তখনই প্রকাশের বিষয়বস্তু আটকাতে পারবে, যখন সংশ্লিষ্ট সংবাদ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করে কেন ওই বিষয়বস্তু আটকে দেয়া উচিত, সেই বিষয়ে যৌক্তিকতা প্রমাণ করতে পারবে।

৪. কোনো সংবাদমাধ্যমের কোনো কম্পিউটার ব্যবস্থা আটকে দেয়া বা জব্দ করার ক্ষেত্রে অবশ্যই আদালতের আগাম নির্দেশ নিতে হবে।

৫. সংবাদমাধ্যমের পেশাজীবীদের সাংবাদিকতা দায়িত্বের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অপরাধের ক্ষেত্রে প্রথমেই আদালতে হাজির হওয়ার জন্য তাদের বিরুদ্ধে সমন জারি করতে হবে এবং সংবাদমাধ্যমের পেশাজীবীদের কোনো অবস্থাতেই পরোয়ানা ছাড়া ও যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ ছাড়া আটক বা গ্রেপ্তার করা যাবে না।

৬. সংবাদমাধ্যমের পেশাজীবীর মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধের ক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধেও মামলা দায়েরের গ্রহণযোগ্যতা আছে কি-না, তার প্রাথমিক তদন্ত প্রেস কাউন্সিলের মাধ্যমে করতে হবে। ওই লক্ষ্যে প্রেস কাউন্সিলকে যথাযথভাবে শক্তিশালী করা যেতে পারে।
এবং

৭. এই সরকারের পাস করা তথ্য অধিকার আইন দ্ব্যর্থহীনভাবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ওপর প্রাধান্য দেয়া উচিত। এই আইনে নাগরিক ও সংবাদমাধ্যমের জন্য যেসব স্বাধীনতা ও অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে, সেগুলোর সুরক্ষা অত্যাবশ্যকভাবে করতে হবে।

তিনি বলেন, সম্পাদক পরিষদ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিরোধী নয়। পরিষদ আইনের বিশেষ কতগুলো ধারা সংশোধনের দাবি করছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস হওয়ার আগ থেকেই এ আইনের বিভিন্ন ধারা নিয়ে সম্পাদক পরিষদের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হচ্ছিল। তিনি বলেন, আইনটি স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মুক্ত গণমাধ্যমের পরিপন্থি। বর্তমান আইনটি শুধু সাইবার জগৎ নয়, স্বাধীন গণমাধ্যমেরও কণ্ঠরোধ করবে। সম্পাদকরা চান, আগামী সংসদ অধিবেশনেই এই আইন সংশোধনের মাধ্যমে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও স্বাধীন সাংবাদিকতা নিশ্চিত করা হবে। মাহ্‌ফুজ আনাম বলেন, ‘আমরা আশা করব, আমাদের এই দাবি সরকার গ্রহণ করবে।

সংসদের শেষ অধিবেশনে যথাযথ সংশোধনী এনে এই আইনটি সবার জন্য গ্রহণযোগ্য করবে।’ তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন মন্ত্রী বলেছেন- আলোচনার দরজা বন্ধ হয়নি। আমরাও মনে করি না আলোচনার দরজা বন্ধ। আলোচনার নামে প্রহসন যেন না হয়। আমরা আলোচনায় গিয়েছি, আমরা অত্যন্ত বিশ্বাস নিয়ে গিয়েছি। কিন্তু সেই বিশ্বাসের প্রতিফলন এখনো হয়নি। তারা (মন্ত্রীরা) বলেছেন, আলোচনার দরজা খোলা, শুনে আমরা খুশি। আমরা আলোচনা করতে চাই, তবে গ্রহণযোগ্য আলোচনা চাই, যে আলোচনা গ্রহণযোগ্য সমাধানের দিকে নিয়ে যাবে।

শুধু আলোচনার জন্য আলোচনা নয়।’ এরপর সংবাদপত্রের ১৬ জন সম্পাদক ১০ মিনিট মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। মানববন্ধনে সম্পাদকদের মধ্যে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, দৈনিক মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, নিউএজের সম্পাদক নূরুল কবীর, সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক খন্দকার মনিরুজ্জামান, ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম, কালের কণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলম, করতোয়ার সম্পাদক মো. মোজাম্মেল হক, ইনকিলাব সম্পাদক এএমএম বাহাউদ্দীন, ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক শহীদুজ্জামান খান, ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক জাফর সোবহান, সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি, বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ ও ইন্ডিপেনডেন্টের সম্পাদক এম শামসুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিতর্কিত ধারাগুলো নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে গত শনিবার একটি সংবাদ সম্মেলন করে সম্পাদক পরিষদ। সেই সংবাদ সম্মেলন থেকেই এই মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

অবশ্য দুই সপ্তাহ আগে মানববন্ধন কর্মসূচিটি ঘোষণার পর তথ্যমন্ত্রীর অনুরোধে সেটি স্থগিত করেছিলেন সম্পাদক পরিষদ। পরে তিন মন্ত্রীর সঙ্গে সম্পাদক পরিষদের বৈঠক হলেও শেষ পর্যন্ত কোনো ধরনের সংশোধন ছাড়াই আইনটি পাস ও সে আইনে সম্মতি জানিয়ে প্রেসিডেন্ট সই করেন। এরপর ফের স্থগিত কর্মসূচিটি পালনের ঘোষণা দেন সম্পাদক পরিষদ। সম্পাদকরা বলছেন, আইনটির উল্লিখিত ধারাগুলো স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। 

 Courtesy: Manabzamin Oct 16, 2018

No comments:

Post a Comment