যুব সম্মেলনে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার পর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ও এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফরম, বাংলাদেশ-এর আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, দেশের মোট যুবকদের এক-তৃতীয়াংশ বেকার। বেকারত্ব কমিয়ে আনতে সরকারকে অবশ্যই উদ্যোগ নিতে হবে। যুব সমাজের মতো এত বড় একটি মূল্যবান সম্পদ আমরা কাজে লাগাতে পারছি না, এটি আমাদের একটি বৃহৎ জাতীয় অপচয়।
গতকাল রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তন এসডিজি (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফরম আয়োজিত যুব সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। ‘বাংলাদেশ ও এজেন্ডা ২০৩০: তারুণ্যের প্রত্যাশা’ শীর্ষক এই সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন দেবপ্রিয়।
সরকারের উদ্দেশে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আমাদের জনসংখ্যার সবচেয়ে মেধাবী অংশ যুব সমাজ। নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির আগে যুব সমাজের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে। তাদের মতের অগ্রাধিকার দিতে হবে। যুবকদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে শিক্ষার হার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বেকারত্বের হারও বাড়ছে। এর মধ্যে যে যত বেশি শিক্ষিত, তার বেকার হওয়ার শঙ্কাও সবচেয়ে বেশি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সম্মেলনের প্রারম্ভিক অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী বলেন, আমাদের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এসডিজি অর্জনে আমাদের যুব সমাজ কাজ করছে। তাদের আরো বেশি সম্পৃক্ত করতে পারলে এসডিজি অর্জনে আমরা সফল হবো। কিন্তু এটা করার জন্য যারা এখানে আছেন, আমাদের তরুণ-তরুণী, আমাদের ছেলেমেয়েরা এদের ওপরে একটা বিরাট দায়িত্ব আছে। তিনি বলেন, আমাদের দেশের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করাও একটা চ্যালেঞ্জ। তবে আমাদের এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।
এ সংকট মোকাবিলায় কর্মসংস্থানকে প্রাধান্য দিয়ে সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর পরামর্শ দেন আলোচকরা।
সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ড. বীরেন শিকদার বলেন, আমরা ১১ লাখ যুবককে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। এর মধ্যে ছয় লাখ যুবক-যুবতী নিজেই নিজের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। তাদের অনেকে চাকরি না করে এখন অন্যদের চাকরি দিচ্ছে। তিনি বলেন, যে পরিমাণ বেকারের কথা বলা হয়, আসলে সে পরিমাণ বেকার নেই। আমরা ডেসোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট (৬০ শতাংশের বেশি জনসংখ্যা কর্মক্ষম) সময় পার করছি। এরা কেউ বসে থাকবে না।
সম্মেলনে দেশের দুর্নীতি প্রবণতার কথা উল্লেখ করে বক্তারা জানান, কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের জন্য দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করার পাশাপাশি রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন। এ ছাড়া দেশের স্বার্থে রাজনীতিবিদদের, দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতি থেকে বের হওয়ার তাগিদ জানানো হয় এই সম্মেলন থেকে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, এই দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতি থেকে আমাদের এই দেশকে মুক্ত করতে হবে। আমরা যেন দুর্নীতিপরায়ণতাকে প্রশ্রয় না দিই। আমরা যেন সত্য প্রকাশ করার স্বাধীনতা অর্জন করতে পারি। আমাদের বাকরুদ্ধ করার স্পর্ধা যেন কেউ দেখাতে না পারে। তিনি বলেন, মানবসম্পদ উন্নয়নে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রয়েছে, যা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে মর্যাদাশীল জাতি হিসেবে সম্মানিত করছে। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, দেশের দায়িত্ব যেন দুর্বৃত্তদের হাতে চলে না যায়। দেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে সাংস্কৃতিক শূন্যতা তৈরি করা যাবে না। সাংস্কৃতিক চর্চার ওপর জোর দেন তিনি।
জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচিবিষয়ক সংস্থার (ইউএনডিপি) বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর সুদীপ্ত মুখার্জি বলেন, যুবসমাজের সৃজনশীলতাকে কাজে লাগাতে হবে। আর তাদের জন্য কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা করতে হবে। তবেই এসডিজি অর্জন সহজ হবে।
সম্মেলনে গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব হানিফ সংকেত বলেন, যখন বন্যা আসে, বন্যার সঙ্গে অনেক ময়লাও আসে। কিন্তু বন্যা পরবর্তী ময়লা চলে যায় আর থেকে যায় পলি মাটি, আমাদের যুব সমাজ হলো সেই পলি মাটি।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ সরকার ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সীদের যুবসমাজ হিসেবে বিবেচনা করে। আর সরকারি হিসাবে দেশের মোট জনসংখ্যার তিন ভাগের এক ভাগই যুবসমাজ। তাই টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজি অর্জনে বিশাল এই জনশক্তির উন্নয়ন জরুরি। এর জন্য প্রয়োজন কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করা। যুব সম্মেলনে আগামী জাতীয় নির্বাচনে যুবকদের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক দলগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান বক্তারা।
এ ছাড়া উন্নয়নের সুফল থেকে বাদ পড়া মানুষের জন্যও কাজ করার তাগিদ আসে এই যুব সম্মেলন থেকে। ২০৩০ সাল নাগাদ এই যুবকরাই দেশের নেতৃত্ব দেবে, কর্মোপযোগী থাকবে।
টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) বাস্তবায়নের বিভিন্ন পর্যায়ে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও নাগরিক সমাজের সক্রিয় ভূমিকা রাখা এবং এ প্রক্রিয়ায় জবাবদিহি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফরম, বাংলাদেশ এই উদ্যোগটি গ্রহণ করা হয়েছে। এই প্ল্যাটফরমের প্রায় ১০০টি সহযোগী প্রতিষ্ঠান এসডিজি’র বিভিন্ন অভীষ্ট বাস্তবায়নের বিভিন্ন দিক নিয়ে কাজ করছে। আগামী দিনের নেতৃত্ব ও উন্নয়নের চাবি যুব সমাজের হাতে। ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত এসডিজি অর্জন করতে হলে এর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুব সমাজকে সম্পৃক্ত করা অত্যন্ত জরুরি। মূলত এসডিজি সম্পর্কে যুব সমাজের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় তাদের সম্পৃক্তির ক্ষেত্র তৈরি করার প্রয়াস থেকেই এই সম্মেলনের আয়োজন।
- কার্টসিঃ মানবজমিন/১৫ অক্টোবর ২০১৮
No comments:
Post a Comment