নূর মোহাম্মদ
নির্বাচনের আগে শিক্ষা প্রশাসনে বড় ধরনের নিয়োগ ও পদোন্নতির তোড়জোড় চলছে। ইতিমধ্যে মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ে বড় ধরনের নিয়োগ ও পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। আরো কয়েকটি নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে। নির্বাচনের আগেই এসব নিয়োগ ও পদোন্নতি শেষ করতে চায় সরকার। ক্যাডার থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত এসব নিয়োগ ও পদোন্নতি চলছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের নির্দেশনার পর অপেক্ষমাণ যত পদোন্নতি ও নিয়োগ রয়েছে সব শেষ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে শিক্ষা ক্যাডারে সহযোগী অধ্যাপক থেকে রেকর্ড সংখ্যক ৪০৯ জনকে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। পদ না থাকার পরও ৪০৯ জনকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে।
একইভাবে সহকারী থেকে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেয়ার জন্য আগামী ১৪ই অক্টোবর বিভাগীয় পদোন্নতি কমিটি (ডিপিসি) সভা ডাকা হয়েছে। পদ না থাকার পরও এ পদে হাজারের বেশি পদোন্নতি দেয়ার প্রস্তুতি রয়েছে। এ পদে ২১ ব্যাচের সবাইকে পদোন্নতি দেয়ার প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছে মাউশি’র সংশ্লিষ্ট শাখা। এরপর চলতি মাসেই প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপকে আরো বড় ধরনের পদোন্নতি দেয়ার প্রস্তুতি সেরে রেখেছে মাউশি। এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, অধ্যাপক পদে যাদের পদোন্নতি দেয়া হয়েছে সবাই পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে ২০১৩ সালে। পদের কারণে তাদের পদোন্নতি দেয়া যাচ্ছিল না। একইভাবে সহযোগী ও সহকারী পদে পদোন্নতি দেয়া হবে। তিনি বলেন, পদোন্নতিতে অন্য কোনো উদ্দেশ্য নেই।
এদিকে নির্বাচনের আগে সরকারি বিদ্যালয় থেকে বেসরকারি বিদ্যালয় সব পর্যায়ে নিয়োগ দেয়ার তোড়জোড় চলছে। ইতিমধ্যে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৪২০ জন শিক্ষককে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে ৩৭১ জন সহকারী প্রধান শিক্ষক/শিক্ষিকা এবং ৫২ জন সহকারী মাধ্যমিক জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন। নিয়োগের ২৭ বছর পর পদোন্নতি পেলেন তারা। এই পদোন্নতির মধ্য দিয়ে ওই শিক্ষকরা নবম গ্রেডে অর্থাৎ প্রথম শ্রেণির পদমর্যাদায় উন্নীত হলেন। আর সারা দেশে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নতুন করে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে ১৩৭৮ জন শিক্ষক। প্রথমবারের মতো পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) অধীনে এ নিয়োগ দেয়ার জন্য গত ৯ই সেপ্টেম্বর পিএসসি এ নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। গত ১০ই সেপ্টেম্বর থেকে ৮ই অক্টোবর পর্যন্ত আবেদন চলে। শিগগিরই পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করবে পিএসসি। তারা দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদায় নিয়োগ পাবেন। বিজ্ঞপ্তিতে জানা গেছে, বাংলায় ৩৬৫ জন, ইংরেজিতে ১০৬ জন, গণিতে ২০৫ জন, সামাজিক বিজ্ঞানে ৮৩ জন, ভৌতবিজ্ঞানে ১০ জন, জীববিজ্ঞানে ১১৮ জন, ব্যবসায় শিক্ষায় ৮ জন, ভূগোলে ৫৪ জন, চারুকলায় ৯২ জন, শারীরিক শিক্ষায় ৯৩ জন, ধর্মে ১৭২ জন এবং কৃষি শিক্ষায় ৭২ জন সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে।
অন্যদিকে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে (স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা) ৩৮ হাজার ৮০০টি শিক্ষকের শূন্য পদের বিপরীতে নিয়োগ দিতে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ নিয়োগ নির্বাচনের আগে শেষ করতে চায় সরকার। এজন্য বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) যাচাই বাছাই করে সুপারিশ করেছে। একই সঙ্গে শিক্ষক নিয়োগে নারী কোটা কিছুটা শিথিল করা হচ্ছে। প্রথমবারের মতো সরকারি হাইস্কুলের ৫৫০০ হাজার সহকারী শিক্ষককে ‘সিনিয়র শিক্ষক’ পদে পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে। সরকারি হাইস্কুল শিক্ষকদের নতুন চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী সহকারী শিক্ষকের মোট পদের অর্ধেককে নতুন এ পদে পদোন্নতি দিতে কার্যক্রম শুরু করেছে মাউশি। সহকারী শিক্ষক থেকে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতিপ্রাপ্তদের প্রমার্জন করে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
আর পদোন্নতি তালিকায় আছে শারীরিক শিক্ষার শিক্ষকরা। তৃতীয় শ্রেণি থেকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করার প্রস্তাবে জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতি রয়েছে। এর ফলে শিক্ষকরা দশম গ্রেডে বেতন পাবেন। শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ (টিটিসি), সরকারি আলীয়া মাদরাসাসহ সারা দেশে ৩২৭টি পুরাতন সরকারি কলেজসহ সদ্য সরকারি হওয়া ২৯০টি কলেজ সরকারি কলেজে শারীরিক শিক্ষকদের পদ সংখ্যা ৬০৭টি। দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদায় উন্নীত হলে নতুন সরকারি কলেজে পদ সৃজন হলে সেসব কলেজের শিক্ষকরাও সমমর্যাদা পাবেন। এ ব্যাপারে মাউশির পরিচালক (মাধ্যমিক) প্রফেসর আব্দুল মান্নান মানবজমিনকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সরকারি ও বেসরকারি স্কুলে পদোন্নতি ও নিয়োগ বন্ধ ছিল।
এ জট খোলার উদ্যোগ নিয়েছি। এখানে নির্বাচন কোনো বিষয় না। তিনি বলেন, এসব শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত। শুধু যে গণহারে পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে তাই না, তাদের এসিআর (বার্ষিক গোপন প্রতিবেদন) যাচাই-বাছাই করে জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করেই পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে।
- কার্টসিঃ মানবজমিন/ ১০ অক্টোবর ২০১৮