সিএনএনে প্রকাশিত লেখার অনুবাদ
একটি বিতর্কিত নতুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অনুমোদন করেছেন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ। বিভিন্ন অধিকার বিষয়ক গ্রুপ আশঙ্কা করছে, এই আইনটি সংবাদ মাধ্যম ও অনলাইনে ভিন্ন মতাবলম্বীদের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে আরো খর্ব করতে ব্যবহার করা হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি সোমবার অনুমোদন করেন প্রেসিডেন্ট। এ আইনটিতে রয়েছে ঔপনিবেশিক আমলের অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্ট। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন নতুন বিষয়। এতে কোনো ওয়ারেন্ট ছাড়াই পুলিশকে দেয়া হয়েছে গ্রেপ্তারের ক্ষমতা।
নতুন এই আইনের বিষয়ে কথা বলেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। তারা এ আইনের বিষয়ে বলেছে, এটা হলো মুক্ত মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি ভয়াবহ এক বিধিনিষেধ আরোপ।
যেসব মানুষ অনলাইনে সরকারকে চ্যালেঞ্জ করে তাদের কণ্ঠকে স্তব্ধ করতে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হতে পারে এই আইন।
এতে বেশ কিছু ধারা অস্পষ্টভাবে রয়েছে বলে সেদিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন সাংবাদিকরা। তারা বলছেন, নতুন এই আইন মুক্ত মত প্রকাশের ক্ষেত্রে হুমকি।
এর মধ্যে রয়েছে সেকশন ২৫(ক)। আক্রমণাত্মক ও ভীতিকর কোনো তথ্য প্রকাশ করলে এ ধারার অধীনে ৩ বছর পর্যন্ত জেলের বিধান রয়েছে। যেসব তথ্য সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে, অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে, বিশংখলা সৃষ্টি করে, বিঘœ ঘটায়, আইন শৃংখলা পরিস্থিতিতে বিঘণ ঘটায় এমন তথ্য প্রকাশ করলে সেকশন ৩১ এর অধীনে ১০ বছর পর্যন্ত জেল দেয়ার বিধান রয়েছে।
এই আইনটি ১৯ শে সেপ্টেম্বরে পাস করে জাতীয় সংসদ। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের (আইসিটি) স্থলে আনা হয়েছে এই আইন। তবে এ আইনেরও কড়া সমালোচনা করেছেন সাংবাদিকরা ও মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপগুলো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের প্রফেসর ও কলামনিস্ট ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, দিন দিন পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। বাংলাদেশে গণতন্ত্রের নামে এটা হলো সবচেয়ে অন্ধকার সময়। অন্যদিকে সমালোচনাকে উড়িয়ে দিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। তিনি যুক্তি দেখিয়েছেন। বলেছেন, ডিজিটাল জগত ও সমাজের জন্য প্রয়োজনীয় সেফগার্ড হলো এই ডিজিটাল আইন। তিনি সিএনএন’কে বলেন, এটা গণমাধ্যম বা গণতন্ত্র বিরোধী আইন নয়।
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের বিশ্ব মুক্ত মিডিয়া বিষয়ক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান হলো ১৪৬তম। এক্ষেত্রে মিয়ানমার, কম্বোডিয়া ও দক্ষিণ সুদান থেকেও পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। ২০০২ সালে যখন এই সূচক প্রণয়ন শুরু হয় তখন বাংলাদেশ ছিল ১১৮তম স্থানে। সেখান থেকে অনেকটা নেমে গেছে।
গত মাসে একটি বিবৃতি দিয়েছেন বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া বার্নিকাট। তিনি বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি মুক্ত মত প্রকাশকে দমিয়ে রাখতে এবং ক্রিমিনালাইজ করতে ব্যবহার করা হতে পারে। এতে বাংলাদেশের গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির ক্ষতি হবে।
জোরপূর্বক গুম
এ বছরের শেষের দিকে নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে তখন বিরোধীদের কন্ঠকে স্তব্ধ করতে চাপ প্রয়োগের অভিযোগ রয়েছে। এমনই এক পরিস্থিতির মধ্যে এলো নতুন আইনটি। এ মাসের শুরুর দিকে ঢাকা ভিত্তিক মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপ অধিকার জোরপূর্বক গুমের বিষয়টি তুলে ধরে। তারা তাতে দেখায় যে, বিরোধী দলীয় নেতাকর্মী, শিক্ষার্থী ও অধিকারকর্মীদেরকে জোর করে গুম করা হচ্ছে। শুধু সেপ্টেম্বরে কোনো ব্যাখ্যা ছাড়া আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো তুলে নিয়েছে ৩০ জনকে। বছরের প্রথম আট মাসে মোট ২৮ জনকে এভাবে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সে তুলনায় এ সংখ্যা অনেক বেশি। সেপ্টেম্বরে যারা নিখোঁজ হয়েছিলেন তাদের মধ্যে ২৬ জনকে গ্রেপ্তার নিশ্চিত করা হয়েছে বিলম্বে।
অধিকার বলছে, তিনজনকে পাওয়া গেছে মৃত অবস্থায়। একজন এখনও নিখোঁজ। অধিকার আরো বলছে, নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের জোরপূর্বক গুমের আতঙ্ক এখন বাস্তব হয়ে উঠছে। দক্ষিণ এশিয়ার এ দেশটিতে নিখোঁজ হলো একটি আতঙ্কের পরিবেশ।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবি জ্যোতির্ময় বড়–য়া বলেছেন, প্রতিটি দিনেই মানুষ নিখোঁজ হচ্ছেন। এমন কি নেতাকর্মীরা একটি শান্তিপূর্ণ র্যালি করতে পারছেন না। সরকার ভিন্ন মতাবলম্বীদের কণ্ঠরোধ করতে চায়। তারা জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে চায়।
আরেকটি রিপোর্টে বিরোধী রাজনৈতিক দলকে সভা সমাবেশ ও প্রতিবাদে বাধা দেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে সরকারের বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগের বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সেক্রেটারি ইসহানুল করিম।
সুপরিচিত ফটোসাংবাদিক শহিদুল আলমের সঙ্গে যে আচরণ করা হচ্ছে তা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে যখন তোলপাড় হচ্ছে, নিন্দা জানানো হচ্ছে তখনই এই রিপোর্ট প্রকাশ করেছে অধিকার। নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে আল জাজিরাকে একটি সাক্ষাতকার দেয়ার পর দুই মাসের বেশি সময় জেলে বন্দি আছেন শহিদুল।
কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সহ ২৫টি মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছে। তাতে অবিলম্বে শহিদুল আলমের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগকে তার মত প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের লঙ্ঘন বলে সমালোচনা করা হয়েছে।
- কার্টসিঃ মানবজমিন/ ০৯ অক্টোবর ২০১৮
No comments:
Post a Comment