Search

Tuesday, October 16, 2018

ভাঙনের মুখে বিকল্প ধারা

কাফি কামাল
ভাঙনের মুখে পড়েছে বিকল্পধারা বাংলাদেশ। জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন দলটির নেতারা। শীর্ষ নেতাদের চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়ে নেতাকর্মীরা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সম্প্রতি আত্মপ্রকাশ হওয়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে থাকতে চেয়েছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন দলটির বেশির ভাগ নেতা।



কিন্তু বিএনপিসহ  জাতীয় ঐক্যের নেতাদের ওপর অযথা চাপ প্রয়োগ ও শর্তজুড়ে দেয়ার মাধ্যমে ঐক্য প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করছিল দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। শেষ পর্যন্ত বিকল্পধারার শীর্ষ নেতৃত্ব জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যাপারে নেতিবাচক অবস্থান নেয়ায় প্রকাশ্যে এসেছে সে বিক্ষোভ, বিদ্রোহ। শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে যাওয়ায় বহিষ্কৃত হয়েছেন বিকল্পধারার ভাইস প্রেসিডেন্ট শাহ আহমেদ বাদল ও কৃষি সম্পাদক জানে আলম হাওলাদার। কিন্তু যে অভিযোগে তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে খোদ দলটির অন্দরমহলেই।

বিগত ১৪ বছরে দলের কাউন্সিল না হওয়ায় কাউকে বহিষ্কার করার ক্ষমতা শীর্ষ নেতৃত্বের আছে কি না সেটা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন।
 
পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী শিগগিরই তলবি সভা ডেকে শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি নতুন কমিটি গঠনের কথা জানিয়েছেন একাধিক নেতা। আগামী দুই-একদিনের মধ্যে তারা আলাদা তলবি সভা করে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। সেই সঙ্গে জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতি সম্মান দেখিয়ে তারা দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে একাত্মতা পোষণের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিকল্পধারার নেতারা জানান, ৭১ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটির মধ্যে বর্তমানে সক্রিয় রয়েছেন ২৬-২৭ জন। তাদের মধ্যে ১৭ জনই এখন বিদ্রোহে জড়িয়ে পড়েছেন। যাদের মধ্যে রয়েছেন- সমবায় সম্পাদক আক্তারুজ্জামান বাবুল, যোগাযোগ সম্পাদক খন্দকার জোবায়ের, কৃষকধারার আহ্বায়ক চাষী এনামুল, প্রচার সম্পাদক প্রকৌশলী জুনু প্রমুখ। ওদিকে বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট প্রফেসর বি. চৌধুরীর নিজ জেলা মুন্সিগঞ্জে তিনি এবং তার পুত্র মাহী বি. চৌধুরীর বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা।

সেখানে অত্যন্ত নাজুক হয়ে পড়েছে নিজ দল বিকল্পধারার অবস্থান। এদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আত্মপ্রকাশ ও বিকল্পধারা সে প্রক্রিয়া থেকে সরে দাঁড়ানোই স্থগিত করা হয়েছে যুক্তফ্রন্টের কার্যক্রম। তবে যুক্তফ্রন্টের দুই দল জেএসডি ও নাগরিক ঐক্য জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যুক্ত হওয়ায় যুক্তফ্রন্টের কার্যকারিতাও আর নেই।

বিকল্পধারার সহসভাপতি শাহ আহমেদ বাদল বলেন, বিগত ১৪ বছরে বিকল্পধারার শীর্ষ নেতারা দলটির কোনো সম্মেলন করেননি। বরং বিকল্পধারার কর্ণধার হিসেবে পরিচিত মাহী বি. চৌধুরীর অসাংগঠনিক সিদ্ধান্তে আগেও অনেক গুণীজন দলত্যাগ করেছেন। কাউকে অপমান করে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে, কাউকে করা হয়েছে অকারণে বহিষ্কার। এভাবে রাজনীতি চলতে পারে না। তিনি বলেন, প্রফেসর ডা. বি. চৌধুরী পুত্রস্নেহে অন্ধ। তাই বিকল্পধারা মানেই মাহী বি. চৌধুরীর স্বেচ্ছাচারিতা, একনায়কত্ব ও স্বৈরাচারী আচরণ। সবচেয়ে বড় কথা, সাংগঠনিক কাজে নয় মাহী বি. চৌধুরী বিকল্পধারাকে একটি বাণিজ্যিক সংস্থায় ও বার্গেনিং এজেন্সিতে পরিণত করেছে। আর প্রফেসর বি. চৌধুরী তার ছেলের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করেছেন। মহাসচিব মেজর (অব.) মান্নান বেকায়দায় আছেন মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ভূমিকা ও ব্যাংকঋণের চাপে। আসলে উনাকে মাহী বি. চৌধুরীই চাপে রেখেছেন। মাহী একের পর এক গঠনতন্ত্রবিরোধী কাজ করেছেন, দলের সবাইকে নিয়ন্ত্রণ করতে চান- তাই তার বিরুদ্ধেই আমাদের এই বিদ্রোহ। বাদল বলেন, আমি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বিকল্পধারার রাজনীতি করছি।

দলের প্রচার সম্পাদক থেকে যুগ্ম সম্পাদক ও ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়েছি পর্যায়ক্রমে। কিন্তু আমরা অনেক কথা বলতে পারিনি। দলের একটি কেন্দ্রীয় কার্যালয় নেই। যেটি কেন্দ্রীয় কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হয় সেটি টঙ্গীর কাছাকাছি। এভাবে রাজনীতি করা যায় না। আমরা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে জাতীয় প্রেস ক্লাবে যেতে চেয়েছি। এই জন্যই আমাদের নাকি বহিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু নিজেরা দলের গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে অন্যকে শাস্তি দেয়ার অধিকার রাখে না। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি- দুয়েকদিনের মধ্যে দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তলবি সভা ডেকে বিকল্পধারার বর্তমান সভাপতি-মহাসচিব ও যুগ্ম মহাসচিবের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।
তারপর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে বিকল্পধারার প্রতিনিধিত্ব করবো। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বর্তমানে সক্রিয় ২৬-২৭ জন নেতার মধ্যে বেশিরভাগই আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। নাটোর, লক্ষ্মীপুর, রাজশাহী জেলা দলের যে কমিটি রয়েছে তারাও আমাদের সঙ্গে আছেন। কৃষক ধারা আমাদের সঙ্গে আছেন। অন্য অঙ্গসংগঠনগুলো এখন নিষ্ক্রিয়। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, খোদ মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান থানা কমিটির নেতাকর্মীরাও আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। বাদল বলেন, জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে দেশে একটি জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠায় দল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিকল্প নেই। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গণদাবি অনুযায়ী যে আন্দোলন শুরু হয়েছে সে আন্দোলনের সঙ্গে আমরা একাত্মতা প্রকাশ করব। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যুক্ত হয়ে ৭ দফা ও ১১ লক্ষ্যকে সামনে রেখে দেশের কল্যাণে ভূমিকা রাখবো।
বিএনপির প্রথম মহাসচিব প্রফেসর ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বে বিএনপি ভেঙেই গঠিত হয়েছিল বিকল্পধারা। নানা কারণে দুটি দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে দূরত্বও ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জাতীয় ঐক্যের স্বার্থে সে দূরত্ব ভুলে ঐক্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল বিএনপি। দেশের রাজনৈতিক মহল বিষয়টিকে নিয়েছিল ইতিবাচক এক পদক্ষেপ হিসেবে। ঐক্যফ্রন্টের মাধ্যমে দুটি দল একমঞ্চে আসছে ভেবে স্বস্তিবোধও করছিল অনেকেই। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া ছিল বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নিজ জেলা মুন্সিগঞ্জে। বিকল্পধারা গঠনের পর নেতাদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড ও বক্তব্যের কারণে ক্ষুব্ধ ছিল স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। তার পরও জাতীয় ঐক্যের স্বার্থে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছিল তারা। তবে শেষ পর্যন্ত বিকল্পধারা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংযুক্ত না হওয়া ও তাদের তরফে ষড়যন্ত্রের বক্তব্য আসার পর সে ক্ষোভ এখন তুঙ্গে। মুন্সিগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছেন, বিএনপিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে ২০০২ সালে থেকে এমন কোনো কাজ নেই যা বিকল্পধারার শীর্ষ নেতারা করেননি।

বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী ও জনভিত্তিহীন দলটি যুক্ত না হওয়ায় বরং শাপেবর হয়েছে। স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা এখন ঐক্যবদ্ধ হয়ে ধানের শীষের পক্ষে কাজ করতে পারবে। মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলা বিএনপির বন ও পরিবেশ সম্পাদক মোহাম্মদ সাইদুজ্জামান সিমু বলেন, তৃণমূল নেতাকর্মীরা মনে করেন এখনও বিএনপি ভাঙার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে চৌধুরী পরিবার। বিশেষ করে বিকল্পধারার যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি. চৌধুরীর কার্যকলাপ ও কথাবার্তায় স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকরা দারুণভাবে ক্ষুব্ধ। এছাড়া মুন্সিগঞ্জে বিকল্পধারার কোনো সাংগঠনিক অবস্থান নেই। এলাকায় জনভিত্তি নেই। এলাকায় বিকল্পধারার শীর্ষ নেতাদের আনাগোনাও নেই। দলটির রাজনীতি বেঁচে আছে কেবল রাজধানীতে মিডিয়ার সহায়তায়। সিমু বলেন, ২০০৮ সালে প্রফেসর বি. চৌধুরী যখন নির্বাচন করেছিলেন তখন তিনি ৩০ হাজারের বেশি ভোট পেয়েছিলেন। এখন কুলো মার্কায় এককভাবে নির্বাচন করলে মাহী বি. চৌধুরী ৩-৪ হাজারের বেশি ভোট পাবেন না। কারণ, যারা ২০০৮ সালে প্রফেসর বি. চৌধুরীর নির্বাচন করেছিলেন তারা ইতিমধ্যে বিএনপির রাজনীতিতে ফিরে এসেছেন। পদ-পদবি নিয়ে সক্রিয়ভাবে বিএনপির রাজনীতি করছেন।
বিকল্পধারার বহিষ্কৃত ভাইস প্রেসিডেন্ট শাহ আহমেদ বাদলের অবস্থানের পক্ষে পূর্ণ একাত্মতা প্রকাশ করেন বিকল্পধারার কৃষি সম্পাদক (বহিষ্কৃত) জানে আলম হাওলাদার। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এই দলের রাজনীতি করি। জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার অগ্রগতির অংশ হিসেবে প্রফেসর বি. চৌধুরী ও ড. কামাল হোসেন ১৫ই সেপ্টেম্বর শহীদ মিনারে গিয়ে যে দাবি ও লক্ষ্য ঘোষণার কথা ছিল সেটা শেষ পর্যন্ত হয়েছে জাতীয় প্রেস ক্লাবে। আমরা সেদিন প্রেস ক্লাবে অপেক্ষা করছিলাম। একপর্যায়ে ঘোষণা হলো শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ায় মগবাজার থেকে বি. চৌধুরী ফিরে যাচ্ছেন। এই সময় আমি মহাসচিবকে বলেছিলাম- দেশের মানুষ অপেক্ষা করে আছে। তাই বি. চৌধুরী অসুস্থ হলে মহাসচিবের অন্তত উপস্থিত হওয়া উচিত।
জানে আলম বলেন, আমার সেই ফোন করাটাই অপরাধ বিবেচিত হলো এবং আমাকে ৭ দিনের শোকজ দিয়ে বহিষ্কার করা হলো। কিন্তু সেদিন প্রেস ক্লাবে বিকল্পধারার যিনি প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন তিনি কোনো শাস্তির মুখে পড়েনি। যে নেতারা ১৪ বছরে দলের একটি কাউন্সিল করতে পারেনি তারা কাউকে বহিষ্কারও করতে পারে না।

এদিকে যুক্তফ্রন্টের ব্যাপারে জোটটির অন্যতম শীর্ষ নেতা নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, যে উদ্দেশ্য নিয়ে এই জোট গঠন করা হয়েছিল, সেখান থেকে বিকল্পধারা সরে গেছে। নাগরিক ঐক্য, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি ও সমপ্রতি এই জোটে যুক্ত হওয়া সোনার বাংলা পার্টি এবং বাংলাদেশ জনদল নবগঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দিয়েছে। সুতরাং এককভাবে বিকল্পধারা দিয়ে এই যুক্তফ্রন্টের কার্যকারিতা থাকে না।
বিকল্পধারা নেতারা বলছেন, বিএনপি নেতাদের যে দুটি শর্ত দেয়া হয়েছিল দুটিই বাস্তবতা বিবর্জিত। বিকল্পধারার নেতাকর্মীরা এই দুই শর্তের ব্যাপারে একমত নয়।

  Courtesy: Manabzamin Oct 16, 2018

সম্পাদকদের নজিরবিহীন মানববন্ধন


সাত দফা দাবিতে এক নজিরবিহীন মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন সংবাদপত্রের সম্পাদকরা। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গতকাল এই কর্মসূচি থেকে সংসদের শেষ অধিবেশনেই বাকস্বাধীনতা ও মুক্ত সাংবাদিকতাবিরোধী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সংশোধনীর দাবি জানানো হয়। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সম্পাদকরা একসঙ্গে এ ধরনের কর্মসূচি পালন করলেন।




মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে সম্পাদক পরিষদের দাবিগুলো তুলে ধরেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহ্‌ফুজ আনাম। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে-
১. সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও বাকস্বাধীনতা সুরক্ষার লক্ষ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩ ধারাগুলো অবশ্যই যথাযথভাবে সংশোধন করতে হবে।

২. এসব সংশোধনী বর্তমান সংসদের শেষ অধিবেশনেই আনতে হবে।

৩. পুলিশ বা অন্য কোনো সংস্থার মাধ্যমে কোনো সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে তল্লাশি চালানোর ক্ষেত্রে তাদের শুধু নির্দিষ্ট বিষয়বস্তু আটকে দেয়ার অনুমতি দেয়া যেতে পারে, তবে কোনো কম্পিউটার ব্যবস্থা বন্ধ করার অনুমতি দেয়া যাবে না। শুধু তখনই প্রকাশের বিষয়বস্তু আটকাতে পারবে, যখন সংশ্লিষ্ট সংবাদ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করে কেন ওই বিষয়বস্তু আটকে দেয়া উচিত, সেই বিষয়ে যৌক্তিকতা প্রমাণ করতে পারবে।

৪. কোনো সংবাদমাধ্যমের কোনো কম্পিউটার ব্যবস্থা আটকে দেয়া বা জব্দ করার ক্ষেত্রে অবশ্যই আদালতের আগাম নির্দেশ নিতে হবে।

৫. সংবাদমাধ্যমের পেশাজীবীদের সাংবাদিকতা দায়িত্বের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অপরাধের ক্ষেত্রে প্রথমেই আদালতে হাজির হওয়ার জন্য তাদের বিরুদ্ধে সমন জারি করতে হবে এবং সংবাদমাধ্যমের পেশাজীবীদের কোনো অবস্থাতেই পরোয়ানা ছাড়া ও যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ ছাড়া আটক বা গ্রেপ্তার করা যাবে না।

৬. সংবাদমাধ্যমের পেশাজীবীর মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধের ক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধেও মামলা দায়েরের গ্রহণযোগ্যতা আছে কি-না, তার প্রাথমিক তদন্ত প্রেস কাউন্সিলের মাধ্যমে করতে হবে। ওই লক্ষ্যে প্রেস কাউন্সিলকে যথাযথভাবে শক্তিশালী করা যেতে পারে।
এবং

৭. এই সরকারের পাস করা তথ্য অধিকার আইন দ্ব্যর্থহীনভাবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ওপর প্রাধান্য দেয়া উচিত। এই আইনে নাগরিক ও সংবাদমাধ্যমের জন্য যেসব স্বাধীনতা ও অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে, সেগুলোর সুরক্ষা অত্যাবশ্যকভাবে করতে হবে।

তিনি বলেন, সম্পাদক পরিষদ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিরোধী নয়। পরিষদ আইনের বিশেষ কতগুলো ধারা সংশোধনের দাবি করছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস হওয়ার আগ থেকেই এ আইনের বিভিন্ন ধারা নিয়ে সম্পাদক পরিষদের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হচ্ছিল। তিনি বলেন, আইনটি স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মুক্ত গণমাধ্যমের পরিপন্থি। বর্তমান আইনটি শুধু সাইবার জগৎ নয়, স্বাধীন গণমাধ্যমেরও কণ্ঠরোধ করবে। সম্পাদকরা চান, আগামী সংসদ অধিবেশনেই এই আইন সংশোধনের মাধ্যমে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও স্বাধীন সাংবাদিকতা নিশ্চিত করা হবে। মাহ্‌ফুজ আনাম বলেন, ‘আমরা আশা করব, আমাদের এই দাবি সরকার গ্রহণ করবে।

সংসদের শেষ অধিবেশনে যথাযথ সংশোধনী এনে এই আইনটি সবার জন্য গ্রহণযোগ্য করবে।’ তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন মন্ত্রী বলেছেন- আলোচনার দরজা বন্ধ হয়নি। আমরাও মনে করি না আলোচনার দরজা বন্ধ। আলোচনার নামে প্রহসন যেন না হয়। আমরা আলোচনায় গিয়েছি, আমরা অত্যন্ত বিশ্বাস নিয়ে গিয়েছি। কিন্তু সেই বিশ্বাসের প্রতিফলন এখনো হয়নি। তারা (মন্ত্রীরা) বলেছেন, আলোচনার দরজা খোলা, শুনে আমরা খুশি। আমরা আলোচনা করতে চাই, তবে গ্রহণযোগ্য আলোচনা চাই, যে আলোচনা গ্রহণযোগ্য সমাধানের দিকে নিয়ে যাবে।

শুধু আলোচনার জন্য আলোচনা নয়।’ এরপর সংবাদপত্রের ১৬ জন সম্পাদক ১০ মিনিট মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। মানববন্ধনে সম্পাদকদের মধ্যে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, দৈনিক মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, নিউএজের সম্পাদক নূরুল কবীর, সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক খন্দকার মনিরুজ্জামান, ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম, কালের কণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলম, করতোয়ার সম্পাদক মো. মোজাম্মেল হক, ইনকিলাব সম্পাদক এএমএম বাহাউদ্দীন, ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক শহীদুজ্জামান খান, ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক জাফর সোবহান, সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি, বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ ও ইন্ডিপেনডেন্টের সম্পাদক এম শামসুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিতর্কিত ধারাগুলো নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে গত শনিবার একটি সংবাদ সম্মেলন করে সম্পাদক পরিষদ। সেই সংবাদ সম্মেলন থেকেই এই মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

অবশ্য দুই সপ্তাহ আগে মানববন্ধন কর্মসূচিটি ঘোষণার পর তথ্যমন্ত্রীর অনুরোধে সেটি স্থগিত করেছিলেন সম্পাদক পরিষদ। পরে তিন মন্ত্রীর সঙ্গে সম্পাদক পরিষদের বৈঠক হলেও শেষ পর্যন্ত কোনো ধরনের সংশোধন ছাড়াই আইনটি পাস ও সে আইনে সম্মতি জানিয়ে প্রেসিডেন্ট সই করেন। এরপর ফের স্থগিত কর্মসূচিটি পালনের ঘোষণা দেন সম্পাদক পরিষদ। সম্পাদকরা বলছেন, আইনটির উল্লিখিত ধারাগুলো স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। 

 Courtesy: Manabzamin Oct 16, 2018

জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা

বাসস, ঢাকা
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া সাধারণ ডায়েরিটি (জিডি) রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। এই মামলা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তদন্ত করছে।



একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশো অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধানের বিরুদ্ধে মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে জিডি হয়। গত বৃহস্পতিবার সেনা সদরের পক্ষ থেকে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানায় ওই জিডি করা হয়।
এই জিডিটি রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলে এটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হিসেবে গ্রহণ করে তদন্তের জন্য ডিবি পুলিশকে স্থানান্তর করা হয়। আজ সোমবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মো: আব্দুল বাতেন বাসসকে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) ফজলুর রহমানকে এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিযুক্ত করা হয়েছে।

এদিকে জিডির বিষয়ে জানতে চাইলে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) তাপস কুমার দাস বাসসকে জানান, সেনা সদর দপ্তরের আইনবিষয়ক উইংয়ের মেজর এম রকিবুল আলম বৃহস্পতিবার জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে ক্যান্টনমেন্ট থানায় জিডি করেন।
টেলিভিশনে দেওয়া জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বক্তব্যকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ ও ‘অসত্য’ বলে আখ্যায়িত করে গত শনিবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পক্ষ থেকে বক্তব্য দেওয়া হয়। আইএসপিআর বলেছে, ডা. জাফরুল্লাহর দায়িত্বজ্ঞানহীন অসত্য বক্তব্য কেবল সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে জেনারেল আজিজ আহমেদের সুনাম ও সামাজিক অবস্থানকে ক্ষুণ্ন করেনি, বরং তা সেনাবাহিনীর প্রধানের পদকে চরমভাবে হেয়প্রতিপন্ন করেছে।

পরে সংবাদ সম্মেলন করে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘জেনারেল আজিজকে অসাবধানতাবশত কোনো মনঃকষ্ট দিয়ে থাকলে সে জন্য আমি পুনরায় আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছি। উল্লেখ্য, আমি ইতিমধ্যে বিগত দুদিন কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে আমার বক্তব্যে ভুল শব্দচয়ন ও শব্দবিভ্রাটের বিষয়টি প্রকাশ করে সেনাপ্রধানের নিকট দুঃখ প্রকাশ করেছি।’ তিনি বলেন, সময় টেলিভিশনের বিশেষ অনুরোধে শারীরিক দুর্বলতা নিয়েই আমি ৯ অক্টোবর রাত ১০টায় তাদের একটি টক শোতে অংশ নিই। ওই টক শোতে অপর অতিথিরা ছিলেন সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য নূহ আলম লেলিন। আলোচনাকালে আমি দেশের বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ সম্পর্কে অসাবধানতাবশত একটি ভুল তথ্য উল্লেখ করেছিলাম। জেনারেল আজিজ একজন দক্ষ আর্টিলারি সেনা কর্মকর্তা। তিনি চট্টগ্রাম সেনানিবাসের ‘জিওসি’ ছিলেন না, ‘কমান্ড্যান্ট’ও ছিলেন না। তিনি তাঁর কর্মজীবনের একসময়ে চট্টগ্রাম সেনাছাউনিতে আর্টিলারি প্রশিক্ষক ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে ‘কোর্ট মার্শাল’ হয়নি একবার ‘কোর্ট অব এনকোয়ারি’ হয়েছিল। ভুল বক্তব্য ও শব্দবিভ্রাটের জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত এবং মর্মাহত। সেনাবাহিনী বা জেনারেল আজিজের সম্মানহানি করা আমার উদ্দেশ্য ছিল না এবং এরূপ কোনো অভিপ্রায়ও আমার নেই। আমাদের সেনাবাহিনীর গৌরবে আমি গর্বিত।’
জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘জেনারেল আজিজের সম্মানহানি করার কোনো চিন্তা বা উদ্দেশ্য আমার ছিল না।’

সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ সম্পর্কে ডা. জাফরুল্লাহর বক্তব্য নিয়ে আইএসপিআরের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘বর্তমান সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ সম্পর্কে জনাব ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বক্তব্য ছিল একটি দায়িত্বজ্ঞানহীন অসত্য বক্তব্য। কারণ, বর্তমান সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ চাকরিজীবনে কখনোই চট্টগ্রামের জিওসি বা কমান্ড্যান্ট হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন না। তিনি ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১১ সালের জুন পর্যন্ত কুমিল্লায় ৩৩ আর্টিলারি ব্রিগেডের ব্রিগেড কমান্ডার, ২০১১ সালের জুন থেকে ২০১২ সালের মে পর্যন্ত ঢাকার মিরপুরে ৬ স্বতন্ত্র এডিএ ব্রিগেডের ব্রিগেড কমান্ডার এবং ২০১২ সালের মে থেকে ২০১২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কুমিল্লায় ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের জিএসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্ণিত সময়ে চট্টগ্রাম বা কুমিল্লা সেনানিবাসে কোনো সমরাস্ত্র বা গোলাবারুদ চুরি বা হারানোর কোনো ঘটনা ঘটেনি। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, বর্তমান সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ তাঁর দীর্ঘ, বর্ণাঢ্য সামরিক চাকরিজীবনে কখনোই কোর্ট মার্শালের সম্মুখীন হননি।’

আইএসপিআরের পরিচালক লেফট্যানেন্ট কর্নেল আলমগীর কবিরের স্বাক্ষরিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘চাকরিরত একজন সেনাবাহিনীপ্রধান সম্পর্কে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মতো একজন বিশিষ্ট ব্যক্তির এরূপ দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, যা সেনাবাহিনীপ্রধানসহ সেনাবাহিনীর মতো রাষ্ট্রীয় একটি প্রতিষ্ঠানকে জনসমক্ষে হেয় করার হীন অপচেষ্টা মর্মে স্পষ্টত প্রতীয়মান।’

আইএসপিআরের বক্তব্যে বলা হয়, ‘ডা. জাফরুল্লাহর দায়িত্বজ্ঞানহীন অসত্য বক্তব্য কেবল সেনাবাহিনীপ্রধান হিসেবে জেনারেল আজিজ আহমেদের সুনাম ও সামাজিক অবস্থানকে ক্ষুণ্ন করেনি, বরং তা সেনাবাহিনীপ্রধানের পদকে চরমভাবে হেয়প্রতিপন্ন করেছে, যা প্রকারান্তরে সেনাবাহিনীর চাকরিরত সব সদস্যকে বিভ্রান্ত করেছে এবং তাঁদের মনোবলের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এ ছাড়া এরূপ অপপ্রচার সেনাবাহিনীর মতো সুশৃঙ্খল বাহিনীর সংহতি ও একতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, যা অনাকাঙ্ক্ষিত।’

 Courtesy: Prothom Alo Oct 16, 2018

সাইবার ট্রাইব্যুনাল


এক দিনেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ৭ মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
 
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বিচার চেয়ে সাইবার ট্রাইব্যুনালে আজ ৭টি মামলা হয়েছে। ঢাকায় অবস্থিত সাইবার ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে আজ সোমবার সাত ব্যক্তি পৃথক সাতটি মামলা করেন।
ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আস্‌সামছ জগলুল হোসেন সাতটি মামলার মধ্যে একটি মামলাকে এজাহার হিসেবে গ্রহণ করতে মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দিয়েছেন। দুটি মামলা তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে গেন্ডারিয়া ও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর অপর তিনটি মামলা সরাসরি খারিজ করার আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
সাইবার ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) নজরুল ইসলাম শামীম প্রথম আলোকে বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস হওয়ার পর আজই প্রথম সাইবার ট্রাইব্যুনালে সাতজন ব্যক্তি হাজির হয়ে নালিশি মামলা করেছেন। তিনি বলেন, আইন অনুযায়ী সংক্ষুব্ধ যেকোনো নাগরিক সাইবার ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে মামলা করতে পারবেন।


আজ যে সাতজন ব্যক্তি আদালতে মামলা করেছেন এর মধ্যে তিনজন নারী আর চারজন পুরুষ।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস হওয়ার পর প্রথম মামলাটি করেছে পুলিশের অপরাধ ও তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। মেডিকেলের ভুয়া প্রশ্নপত্র ফাঁস করার অভিযোগে সিআইডি ১০ অক্টোবর পল্টন থানায় এ মামলা করে। পুলিশ ও আদালত সূত্র বলছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাসের পর এখন পর্যন্ত ঢাকায় তিনটি মামলা করেছে পুলিশ। পল্টন ছাড়াও রাজধানীর শাহবাগ ও গুলশান থানায় মামলা হয়েছে।

একটি মামলা এজাহার হিসেবে নিতে নির্দেশ:
একটি মামলার আরজি ও আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক নারীর (৩০) গত বছর পারিবারিকভাবে তাঁর বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাঁর স্বামী ইতালি চলে যান। বিয়ের পর ওই নারীর ফেসবুক পাসওয়ার্ড জেনে নেন তাঁর স্বামী। বিদেশে থাকা অবস্থায় ইমো, ভাইবার, হোয়াটস অ্যাপের মাধ্যমে তাঁদের যোগাযোগ চলতে থাকে। বিয়ের ৯ মাস পর স্বামী বাংলাদেশে চলে আসেন। গত এপ্রিলে ওই নারী তাঁর স্বামীকে ডিভোর্স দেন। এরপর ফেসবুক, মেসেঞ্জার, ভাইবার, ইমোতে ওই নারীর আপত্তিকর ছবি প্রকাশ করেন তাঁর সাবেক স্বামী। এ ঘটনায় মিরপুর থানায় ওই নারী মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা না নেওয়ায় তিনি আদালতে হাজির হয়ে মামলা করেছেন।

ওই নারীর আইনজীবী ইমরুল কায়েস প্রথম আলোকে বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ওই নারী তাঁর সাবেক স্বামীর বিরুদ্ধে আদালতে হাজির হয়ে নালিশি মামলা করেন। আদালত ওই নারীর মামলাটি এজাহার হিসেবে রেকর্ড করতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৩(২), ২৪-ক, ২৫-ক এবং ২৯ (২) ধারায় মামলা করেন ওই নারী।

দুটি মামলা তদন্তের নির্দেশ:
ট্রাইব্যুনালে করা দুটি মামলা তদন্তের জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২৫ বছরের এক নারীর অভিযোগ তিনি যে এলাকায় থাকেন সেই এলাকাতে বাস করেন সোহাগ হোসেন নামের এক ব্যক্তি। তিনি তাঁর সন্তানদের স্কুলে আনা-নেওয়ার পথে সোহাগ নামের এক যুবকের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। এরপর আসামি সোহাগ তাঁর মুঠোফোন নম্বর সংগ্রহ করেন। তিনি (সোহাগ) ফোনে তাঁকে (নারী) প্রেমের প্রস্তাব দেন। সোহাগকে ফোন করতে নিষেধ করার পরও গভীর রাতে ফোন দেন। প্রতিবাদ করায় তাঁর শিশুসন্তানকে অপহরণ করার হুমকি দেন সোহাগ। ওই নারীর অভিযোগ, সোহাগ তাঁর ছবি বিবৃত করে ফেসবুক, ইমোতে প্রকাশ করেন। ওই নারীর এই অভিযোগ তদন্ত করতে গেন্ডারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫, ২৬ ও ২৭ ধারায় মামলা করেন ওই নারী।
আবদুস সালাম নামের এক ব্যক্তি রফিকুল ইসলাম নামের আরেক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৯ ধারায় মামলা করেন। সেখানে বলা হয়, আবদুস সালাম থাকেন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ এলাকায়। আসামি রফিকুল বাদী সালামের নামে বিভিন্ন মিথ্যা তথ্য ফেসবুকে প্রকাশ করেছেন। এ মামলাটি তদন্ত করে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।

অন্য চারটি মামলা:
এক নারী নালিশি মামলায় বলেছেন, গত বছর উত্তরার একটি প্রতিষ্ঠানে তিনি চাকরি করতেন। ওই প্রতিষ্ঠানের পাঁচজন তাঁকে ধর্ষণ করে তা ভিডিও করে। বিয়ের পর আসামিরা ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। আদালত ওই নারীর মামলা খারিজের আদেশ দেন। ওই নারী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫ ধারায় মামলা করেন।
কামাল উদ্দিন আহমেদ নামের একজন মামলায় দাবি করেন, ২০১৬ সালে তিনি ‘একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা’ নামে একটি সংগঠন করেন। আবুল বাশার নামে এক ব্যক্তি কামালকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য ফেসবুকে প্রকাশ করেছেন। কামাল উদ্দিনও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫-ক ধারায় মামলা করেন।

সুজন আহমেদ নামের এক ব্যক্তি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৪ এর (১) ধারায় মামলা করেন। মামলায় সুজন দাবি করেন, তিনি মোটরচালক লীগের সাভার পৌর কমিটির প্রচার সম্পাদক। এই এলাকার কাজী রিপন ফেসবুক আইডি খুলে বিভিন্ন প্রতারণা করে আসছেন। ছাত্রলীগের সাবেক এক সাধারণ সম্পাদকের ছবি বিকৃত করে তা ফেসবুকে প্রচার করেন আসামি রিপন। আদালত এ মামলাটি খারিজ করে দিয়েছেন।

আর আনোয়ার হোসেন আবু নামের এক ব্যক্তি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৯ ধারায় মামলা করেন। মামলায় তিনি বলেছেন, চানখাঁরপুলে তাঁর একটি হোটেল আছে। হোটেলের খাবার নিয়ে রুদ্র সাইফুল নামের এক ব্যক্তি ফেসবুকে আপত্তিকর তথ্য প্রচার করেছেন।

 Courtesy: Prothom Alo Oct 15, 2018

Monday, October 15, 2018

দেশের এক-তৃতীয়াংশ যুবক বেকার!

যুব সম্মেলনে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য


বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার পর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ও এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফরম, বাংলাদেশ-এর আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, দেশের মোট যুবকদের এক-তৃতীয়াংশ বেকার। বেকারত্ব কমিয়ে আনতে  সরকারকে অবশ্যই উদ্যোগ নিতে হবে। যুব সমাজের মতো এত বড় একটি মূল্যবান সম্পদ আমরা কাজে লাগাতে পারছি না, এটি আমাদের একটি বৃহৎ জাতীয় অপচয়।

গতকাল রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তন এসডিজি (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফরম আয়োজিত যুব সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। ‘বাংলাদেশ ও এজেন্ডা ২০৩০: তারুণ্যের প্রত্যাশা’ শীর্ষক এই সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন দেবপ্রিয়। 

সরকারের উদ্দেশে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আমাদের জনসংখ্যার সবচেয়ে মেধাবী অংশ যুব সমাজ। নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির আগে যুব সমাজের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে। তাদের মতের অগ্রাধিকার দিতে হবে। যুবকদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে শিক্ষার হার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বেকারত্বের হারও বাড়ছে। এর মধ্যে যে যত বেশি শিক্ষিত, তার বেকার হওয়ার শঙ্কাও সবচেয়ে বেশি বলেও মন্তব্য করেন তিনি। 

সম্মেলনের প্রারম্ভিক অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী বলেন, আমাদের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এসডিজি অর্জনে আমাদের যুব সমাজ কাজ করছে। তাদের আরো বেশি সম্পৃক্ত করতে পারলে এসডিজি অর্জনে আমরা সফল হবো। কিন্তু এটা করার জন্য যারা এখানে আছেন, আমাদের তরুণ-তরুণী, আমাদের ছেলেমেয়েরা এদের ওপরে একটা বিরাট দায়িত্ব আছে। তিনি বলেন, আমাদের দেশের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করাও একটা চ্যালেঞ্জ। তবে আমাদের এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। 

এ সংকট মোকাবিলায় কর্মসংস্থানকে প্রাধান্য দিয়ে সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর পরামর্শ দেন আলোচকরা।

সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ড. বীরেন শিকদার বলেন, আমরা ১১ লাখ যুবককে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। এর মধ্যে ছয় লাখ যুবক-যুবতী নিজেই নিজের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। তাদের অনেকে চাকরি না করে এখন অন্যদের চাকরি দিচ্ছে। তিনি বলেন, যে পরিমাণ বেকারের কথা বলা হয়, আসলে সে পরিমাণ বেকার নেই। আমরা ডেসোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট (৬০ শতাংশের বেশি জনসংখ্যা কর্মক্ষম) সময় পার করছি। এরা কেউ বসে থাকবে না।

সম্মেলনে দেশের দুর্নীতি প্রবণতার কথা উল্লেখ করে বক্তারা জানান, কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের জন্য দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করার পাশাপাশি রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন। এ ছাড়া দেশের স্বার্থে রাজনীতিবিদদের, দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতি থেকে বের হওয়ার তাগিদ জানানো হয় এই সম্মেলন থেকে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, এই দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতি থেকে আমাদের এই দেশকে মুক্ত করতে হবে। আমরা যেন দুর্নীতিপরায়ণতাকে প্রশ্রয় না দিই। আমরা যেন সত্য প্রকাশ করার স্বাধীনতা অর্জন করতে পারি। আমাদের বাকরুদ্ধ করার স্পর্ধা যেন কেউ দেখাতে না পারে। তিনি বলেন, মানবসম্পদ উন্নয়নে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রয়েছে, যা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে মর্যাদাশীল জাতি হিসেবে সম্মানিত করছে। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, দেশের দায়িত্ব যেন দুর্বৃত্তদের হাতে চলে না যায়। দেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে সাংস্কৃতিক শূন্যতা তৈরি করা যাবে না। সাংস্কৃতিক চর্চার ওপর জোর দেন তিনি। 

জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচিবিষয়ক সংস্থার (ইউএনডিপি) বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর সুদীপ্ত মুখার্জি বলেন, যুবসমাজের সৃজনশীলতাকে কাজে লাগাতে হবে। আর তাদের জন্য কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা করতে হবে। তবেই এসডিজি অর্জন সহজ হবে।

সম্মেলনে গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব হানিফ সংকেত বলেন, যখন বন্যা আসে, বন্যার সঙ্গে অনেক ময়লাও আসে। কিন্তু বন্যা পরবর্তী ময়লা চলে যায় আর থেকে যায় পলি মাটি, আমাদের যুব সমাজ হলো সেই পলি মাটি।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ সরকার ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সীদের যুবসমাজ হিসেবে বিবেচনা করে। আর সরকারি হিসাবে দেশের মোট জনসংখ্যার তিন ভাগের এক ভাগই যুবসমাজ। তাই টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজি অর্জনে বিশাল এই জনশক্তির উন্নয়ন জরুরি। এর জন্য প্রয়োজন কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করা। যুব সম্মেলনে আগামী জাতীয় নির্বাচনে যুবকদের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক দলগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান বক্তারা। 

এ ছাড়া উন্নয়নের সুফল থেকে বাদ পড়া মানুষের জন্যও কাজ করার তাগিদ আসে এই যুব সম্মেলন থেকে। ২০৩০ সাল নাগাদ এই যুবকরাই দেশের নেতৃত্ব দেবে, কর্মোপযোগী থাকবে।

টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) বাস্তবায়নের বিভিন্ন পর্যায়ে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও নাগরিক সমাজের সক্রিয় ভূমিকা রাখা এবং এ প্রক্রিয়ায় জবাবদিহি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফরম, বাংলাদেশ এই উদ্যোগটি গ্রহণ করা হয়েছে। এই প্ল্যাটফরমের প্রায় ১০০টি সহযোগী প্রতিষ্ঠান এসডিজি’র বিভিন্ন অভীষ্ট বাস্তবায়নের বিভিন্ন দিক নিয়ে কাজ করছে। আগামী দিনের নেতৃত্ব ও উন্নয়নের চাবি যুব সমাজের হাতে। ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত এসডিজি অর্জন করতে হলে এর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুব সমাজকে সম্পৃক্ত করা অত্যন্ত জরুরি। মূলত এসডিজি সম্পর্কে যুব সমাজের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় তাদের সম্পৃক্তির ক্ষেত্র তৈরি করার প্রয়াস থেকেই এই সম্মেলনের আয়োজন। 
  • কার্টসিঃ মানবজমিন/১৫ অক্টোবর ২০১৮ 

ভারতের চেয়ে ১১ গুণ বেশি দামে ইভিএম!


  • বাংলাদেশে একটি ইভিএমের দাম ২ লাখ ৩৪ হাজার টাকা
  • ভারতে ব্যবহৃত ইভিএমের দাম ২১ হাজার ২৫০ টাকা
  • ইসির মোট ব্যয় হবে ৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা
  • ইভিএম তৈরির কারিগরি–পরামর্শক কমিটির সুপারিশ পুরোপুরি আমলে নেয়নি ইসি

ভারতের চেয়ে ১১ গুণ বেশি দামে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কিনছে বাংলাদেশ। নির্বাচন কমিশন (ইসি) একটি ইভিএম কিনতে খরচ করবে ২ লাখ ৩৪ হাজার ৩৭৩ টাকা। এর আগে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ইসির জন্য যে ইভিএম তৈরি করেছিল, তার প্রতিটির দাম পড়েছিল ২০-২২ হাজার টাকা। বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে কিছু পার্থক্য থাকলেও দামের বিশাল পার্থক্যকে অস্বাভাবিক বলছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

ভারতের নির্বাচন কমিশন ওই দেশের লোকসভা, রাজ্যসভাসহ বিভিন্ন নির্বাচনে ব্যবহারের জন্য নতুন মডেলের ইভিএমের দাম নির্ধারণ করেছে ১৭ হাজার রুপি। প্রতি রুপি ১ টাকা ২৫ পয়সা হিসেবে ধরে বাংলাদেশি টাকায় ভারতের ইভিএমের দাম পড়ে ২১ হাজার ২৫০ টাকা। সেই হিসাবে ১১ গুণ বেশি খরচ করে ইভিএম কিনছে বাংলাদেশ। তবে ইসি দাবি করছে, গুণগত মান বিবেচনায় বাংলাদেশের ইভিএমের দাম অন্যান্য দেশের চেয়ে তুলনামূলক কম পড়ছে।

এদিকে এই ইভিএম তৈরির ক্ষেত্রে কারিগরি কমিটির সুপারিশও পুরোপুরি আমলে নেয়নি ইসি। ভোটারদের আস্থা ও গ্রহণযোগ্যতার জন্য কমিটি ইভিএমে ভোটার ভ্যারিয়েবল পেপার অডিট ট্রেইল বা ভিভিপিএটি (যন্ত্রে ভোট দেওয়ার পর তা একটি কাগজে ছাপা হয়ে বের হবে) সুবিধা রাখার পরামর্শ দিলেও তা রাখা হয়নি। এতে ভোট পুনর্গণনার বিষয় এলে ইসিকে সমস্যার মুখে পড়তে হতে পারে।

২০১১ সালের পর থেকে বিভিন্ন স্থানীয় নির্বাচনে সীমিত পরিসরে ইভিএম ব্যবহার করা হচ্ছে। জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করার লক্ষ্যে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের প্রস্তাব করেছে ইসি। সংসদে আরপিও সংশোধনী পাস হলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে সীমিত পরিসরে ইভিএম ব্যবহার করতে চায় ইসি।

নতুন ইভিএম কেনার জন্য ইসির ৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গত ১৭ সেপ্টেম্বর পাস করে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। দেড় লাখ ইভিএম কিনতে ওই প্রকল্পে ৩ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা মোট প্রকল্পে ব্যয়ের ৯২ শতাংশ। আগামী ছয় বছরে তিন পর্যায়ে দেড় লাখ ইভিএম কেনার ঘোষণা দেওয়া হলেও প্রকল্পের দলিল বলছে ভিন্ন কথা। শুধু চলতি অর্থবছরেই ১ হাজার ৯৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। অর্ধেকের বেশি টাকা চলতি অর্থবছরে খরচ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রকল্প দলিলে আন্তর্জাতিক বাজারে ইভিএমের দাম ২ থেকে ৩ হাজার ডলার বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

ভারত ও বাংলাদেশের ইভিএম

ইভিএম নির্মাণ করে এমন কয়েকটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, সাধারণত ভোটার ও প্রার্থীসংখ্যা, ভোটার পরিচয় নিশ্চিত করা, ভোট গণনা, সার্ভার-সক্ষমতাসহ বিভিন্ন বিষয়ের স্পেসিফিকেশনের ওপর ইভিএমের দাম নির্ভর করে।

ভারত ও বাংলাদেশের কেন্দ্রপ্রতি ভোটারের সংখ্যা প্রায় একই রকম। ভোটারদের শিক্ষার হার ও সচেতনতা প্রায় একই পর্যায়ের। দামের এত পার্থক্য থাকলেও বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের ইভিএমের পার্থক্য খুব বেশি নয়। বাংলাদেশের ইভিএমে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি বা হাতের আঙুলের ছাপ দিয়ে বা স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে ভোটারের পরিচয় নিশ্চিত করা হয়। ভারতের ইভিএমে এই সুবিধা নেই। তবে ভারতের ইভিএমে ভ্যারিয়েবল পেপার অডিট ট্রেইল (ভিভিপিএটি) সংযুক্ত আছে। কিন্তু বাংলাদেশের ইভিএমে সেই সুবিধা নেই।

বাংলাদেশের ইভিএমে তিনটি অংশ আছে। এগুলো হলো কন্ট্রোল ইউনিট, ব্যালট ইউনিট ও ডিসপ্লে ইউনিট। ভোটারের নিজেদের পরিচয় নিশ্চিত করতে আঙুলের ছাপ দেওয়া সঙ্গে সঙ্গে ডিসপ্লেতে ওই ভোটার ছবিসহ যাবতীয় তথ্য চলে আসবে। ব্যাটারির মাধ্যমে ইভিএম চলবে। চার্জ থাকবে ৪৮ ঘণ্টা। ইভিএমের সঙ্গে বাইরের কোনো ইন্টারনেট বা এ ধরনের কোনো সংযোগ থাকবে না। ফলে এটি হ্যাক করার কোনো সুযোগ নেই। প্রকল্প দলিলে বলা হয়েছে, ইভিএমের ওয়ারেন্টি ১০ বছর নিশ্চিত করতে হবে।

ভারতের নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে জানা গেছে, আগামী নভেম্বর মাস থেকে ১৬ লাখ ইভিএম কেনা শুরু করবে ভারতের নির্বাচন কমিশন। নতুন মডেলের ওই ইভিএমে কন্ট্রোল ইউনিট ও ব্যালট ইউনিট—এই দুটি ইউনিট আছে। সর্বোচ্চ ৩৮৪ জন প্রার্থী থাকলেও এই ইভিএমে ভোট নেওয়া সম্ভব হবে। একটি ইভিএমে সর্বোচ্চ দুই হাজার ভোট নেওয়া যাবে। এই ইভিএম ব্যাটারিতে চলবে। ভারতের ইভিএমে ভোট দেওয়ার কক্ষেই একটি স্বচ্ছ বাক্স থাকে। ভোটার ভোট দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কোন প্রার্থীকে ভোট দিলেন, তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইভিএম থেকে একটি কাগজে ছাপা হয়ে স্বচ্ছ বাক্সে পড়বে। মূলত ভোটাধিকারের দলিল বা ব্যালট হিসেবে এটি কাজ করবে। কেউ চ্যালেঞ্জ করলে প্রমাণ হিসেবে এটি রাখা হয়। ভারতের নির্বাচন কমিশন এর আগে ২০০৬ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে যেসব ইভিএম ব্যবহার করেছিল, সেগুলোর দাম ছিল ৮ হাজার ৬৭০ রুপি করে।

ইভিএম প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত ইসির জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগের মহাপরিচালক মো. সাইদুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, দাম নির্ভর করে যন্ত্রাংশের মান ও ‘কনফিগারেশনের’ ওপর। তাঁরা সবচেয়ে মানসম্পন্ন ইভিএম তৈরি করছেন, যাতে ১০-১৫ বছর ব্যবহার করা যায়। ইভিএমের দাম বেশি পড়ছে না। যুক্তরাষ্ট্রে ইভিএমের দাম প্রায় চার হাজার ডলার। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তাঁরা তুলনা করে দেখেছেন, বাংলাদেশের ইভিএমের দাম তুলনামূলক কম পড়ছে।

বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনকে নতুন ইভিএম সরবরাহ করবে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ)। ইতিমধ্যে চীন ও হংকং থেকে ইভিএমের মূল যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ আনার প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে বিএমটিএফ। সাধারণ ঋণপত্র খুলতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদনের প্রয়োজন হয় না। তবে আমদানির প্রক্রিয়া ভিন্ন বলে ট্রাস্ট ব্যাংকের মাধ্যমে ইভিএম আমদানির জন্য এ ক্ষেত্রে বিশেষ অনুমোদন দিতে হয়েছে।

এর আগে এ টি এম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন বাংলাদেশে প্রথম ইভিএম ব্যবহার করে। ওই ইভিএম তৈরি করেছিল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। বুয়েটের তৈরি ইভিএমে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন পুরোপুরি ইভিএমে হয়েছিল। ওই ইভিএমে বায়োমেট্রিকের মাধ্যমে পরিচয় শনাক্ত করার ব্যবস্থা ছিল না। ভিভিপিএটি সুবিধাও ছিল না।

ওই ইভিএম তৈরির নেতৃত্বে ছিলেন বুয়েটের অধ্যাপক এস এম লুৎফুল কবির। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচন কমিশনের জন্য বুয়েট ১ হাজার ১০০টি ইভিএম তৈরি করেছিল। প্রতিটি ইভিএমের খরচ পড়েছিল ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা। বৃহৎ আকারে উৎপাদনে গেলে খরচ আরও কমে যেত। ফিঙ্গার প্রিন্টের মাধ্যমে ভোটার পরিচয় নিশ্চিত করা, ভিভিপিএটি সুবিধা যুক্ত করে ৪০-৫০ হাজার টাকার মধ্যে ইভিএম তৈরি করা সম্ভব। তিনি বলেন, বৈশিষ্ট্যের কারণে ইভিএমের দামের তুলনা করা কঠিন। কিন্তু প্রতিটি ইভিএমের দাম ২ লাখ ৩৪ হাজার টাকা ধরা হলে তা একটু অস্বাভাবিকই।

কমিটির সুপারিশ মানা হয়নি

ইভিএম কেনার প্রকল্প প্রস্তাবে দাবি করা হয়েছে, ইভিএম তৈরির জন্য বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে কারিগরি ও পরামর্শক কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) নমুনা ইভিএম তৈরি করেছে। তবে ইসির এই বক্তব্য পুরোপুরি সঠিক নয়।

নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, নতুন ইভিএম পর্যালোচনার জন্য অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীকে উপদেষ্টা করে একটি কারিগরি কমিটি গঠন করে ইসি। ২০১৬ সালের ২৮ নভেম্বর তাদের প্রথম বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে নতুন ইভিএমের নমুনা দেখানো হয়। বৈঠকে জানানো হয়, নতুন ইভিএম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুজন অধ্যাপকের পরামর্শে পোল্যান্ডের একদল কারিগরি সদস্যের সহায়তায় তৈরি করা হয়। ওই বৈঠকে নতুন যন্ত্রে ভোটার ভ্যারিয়েবল পেপার অডিট ট্রেইল (ভিভিপিএটি) যুক্ত করার সুপারিশ করা হয়। চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি কমিটির আরেকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে আবারও পেপার ট্রেইলের ব্যবস্থা করার সুপারিশ করা হয়। বৈঠকে বলা হয়, ভোটারদের আস্থা ও গ্রহণযোগ্যতার জন্য ইভিএমের সঙ্গে পেপার অডিট ট্রেইলের ব্যবস্থা করা যায়, যাতে ভোট দেওয়াসংক্রান্ত তথ্যের হার্ড কপি ভোট প্রদান শেষে সংরক্ষণ করা যায়। কিন্তু নতুন যে ইভিএম ব্যবহার করা হচ্ছে, সেগুলোতে এই সুবিধা নেই।

এ বিষয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগের মহাপরিচালক সাইদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, কারিগরি কমিটি পেপার ট্রেইলের সুপারিশ করেছিল। কিন্তু উপকমিটি দেখেছে, পেপার ট্রেইল যুক্ত করে অনেকে ঝামেলায় পড়েছে। ভারতে ১৫-১৮ শতাংশ কেন্দ্রে ভোট বন্ধ করতে হয়েছে পেপার ট্রেইলে সমস্যার কারণে। পেপার ট্রেইল মূলত ভোটারের মানসিক শান্তির জন্য যুক্ত করা হয়। এই ইভিএমে ভোটার যে মার্কায় ভোট দেওয়ার জন্য ঠিক করবেন, সে মার্কা স্ক্রিনজুড়ে বড় হয়ে ভেসে উঠবে। এটি ইলেকট্রনিক্যালি করা হয়েছে পেপারে না যাওয়ার জন্য।

জানতে চাইলে অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, কারিগরি কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ইভিএম প্রস্তুত করা হয়েছে—এই বক্তব্য আংশিক সত্য। তিনি কমিটির দুটি বৈঠকে অংশ নেন। তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেছিলেন, মেশিন ঠিক আছে। কিন্তু মেশিনের সঙ্গে ভিভিপিএটি যুক্ত করতে হবে। ভিভিপিএটি ছাড়া মেশিন গ্রহণযোগ্য হবে না।

জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে কারিগরি কমিটিকে জিজ্ঞাসা না করে ইসি সামনের দিকে এগিয়ে গেছে। একটি সাব-কমিটি বৈঠক করে কারগরি কমিটির ওই সুপারিশ বাদ দিয়েছে। সুতরাং এখানে আমার নাম ব্যবহার করা ইসির ঠিক হচ্ছে না।
  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ ১৫ অক্টোবর ২০১৮


Even dead not spared

Long after their death, 2 local BNP leaders, another sued for vandalism; home boss asks IGP to look into it 










Murad prays by the grave of his father Mansur Ali Master, who died a year back, at the Jurain Graveyard on Thursday. Police named Mansur as an accused in a case filed last month. Photo: Star

They must be turning in their graves.

Jahangir Hossain died one and a half years ago, Mansur Ali a year ago and Zilllur Rahman six months back.

Now all these months and years later, police have charged them with vandalising vehicles and planning subversive activities.

The cases, mostly against BNP leaders and activists, were filed with the capital's Kadamtoli and Genderia police stations in recent weeks.

The Daily Star has the death certificates of all the three, visited the grave of one and spoke with relatives and neighbours who were in their funerals.

Mansur and Zillur were local BNP leaders, while Jahangir had no direct political link. 

Apart from these three, at least five other people, who died long ago as reported in the media, have been made accused in cases filed over the last few months -- one each in the capital's Chwakbazar, Jessore, Keraniganj and two in Habiganj.

The Daily Star could not independently confirm those, but aware of such “ghostly” cases, the police authorities recently ordered the unit chiefs to scrutinise how such cases were being filed in different parts of the country.

Mainly BNP leaders of all levels -- central, district, upazila, thana -- are accused in these cases. 

Contacted by phone on Thursday, Home Minister Asaduzzaman Khan Kamal said he instructed the inspector general of police to find out why cases were being filed against dead men.

“I have spoken with the IGP even today [Thursday] and asked him to find out who did this,” he said. “It will be verified. How can a dead man be an accused in a case?”  

Apart from the dead, many people who have been implicated in similar cases filed over alleged incidents that took place when they were outside the country or at their workplace. Some are hajj pilgrims, others are paralysed and bound to their beds.

Such loopholes are “unprecedented,” a number of top police officials said.

They said the cases are full of such “mistakes and loopholes” as field level police are filing those against leaders, activists and supporters of the BNP and its front organisations on instructions of the police high-ups.

The cases are being filed following the lists of the central, city, thana and ward unit committees of the BNP. Local units of the ruling Awami League are helping police by providing names, the officials added on condition of anonymity.

As the cases have been filed quickly ahead of BNP's founding anniversary (September 1) and any big programmes or rallies, police did not get enough time to verify whether anyone in the committees are dead, according to the police officials.

In some instances, the alleged incidents did not happen at the time or place mentioned in the case statement.

For example, police in the capital filed 38 cases against several thousand leaders and activists of BNP and its front organisations within 12 hours of the BNP rally on September 30 at Suhrawardy Udyan. At the rally, top BNP leaders instructed party activists to prepare simultaneously for movement and the national election.

The Daily Star visited the 10 spots named as “place of occurance” in the cases filed with Hazaribagh, Dhanmondi, Kalabagan, New Market, Kamrangirchar, Motijheel, Paltan, Shahbagh, Ramna and Jatrabari police.

We spoke with more than a dozen roadside vendors, shop owners and their employees and local residents around each of those spots. None of them could recall any incident of attack on police, vandalism and obstruction of police duty as claimed in the case statements.

Several officials of Dhaka Metropolitan Police said there were instructions from the high-ups to file multiple cases against each BNP leaders and workers.

“If all BNP leaders and active workers are accused in cases, we will be able to arrest them even after announcement of the election schedule. The Election Commission will have nothing to say if an accused in a criminal case is arrested,” said an official, asking not to be named. 

In BNP's estimation, 4,135 cases have been filed against 85,604 identified and 274,703 unidentified party leaders and activists from September 1 to October 4 across the country. During the same period, police arrested 4,650 BNP men in those cases.

The BNP claims all of these cases are aimed at keeping the party men on the run so they cannot take part in polls activities.

Fearing arrests, many are coming to the High Court seeking anticipatory bail.

Since October 1, around 1,000 people who were made accused in such cases have been granted bails, said the deputy attorney generals of two High Court benches concerned.

NO ESCAPE FOR THE DEAD

Zillur Rahman, son of Abdur Rahman from Jurain, died on March 26. He was 38.

Doctors at Dhaka Medical College Hospital declared him dead after he was taken there with heart problems, according to his death certificate.

He was buried at Azimpur Graveyard the same day and the receipt of the graveyard bears the serial number of 10342.

However, in the two cases filed with the city's Kadamtoli Police Station on September 11 and 12, Zillur has been charged with vandalising vehicles in two places with iron rods and sticks and throwing brick chips at police. He is listed as accused number 3 and 5 respectively in the cases.

According to the case filed by Sub-inspector Ershad Alam, the dead man was among 108 other accused who vandalised Narayanganj- and Chattogram-bound trucks, buses, CNG-run auto-rickshaws and human hauliers, on the road in front of Shyampur Lal Masjid at Kadamtoli at 2:10pm on September 11. 

In the other case filed the next day, SI Alam Badsha found Zillur among 109 accused vandalising trucks, buses and CNG auto-rickshaws moving on Dhaka-Mawa highway in front of Sangit Cinema Hall at Dholaipar at 3:00pm on September 12.

In both the cases, police named him as only Zillur and his father as only Rahman. His address, however, was rightly mentioned.

Zillur was the joint secretary of ward 53 unit of BNP. He lived in Malaysia and South Korea for around 10 years since 1995, said his father.

“We are not getting respite from police even after Zillur's death,” Abdur Rahman told The Daily Star on Tuesday.

Days after filing the cases, a sub-inspector in civil dress went twice in search of his son at an engineering workshop near their home that Zillur ran. He also owned a cosmetic shop in Chawkbazar.

Abdur Rahman said as police used to hunt for his son, he asked Zillur to leave his own area. So around six years ago, Zillur rented a house in Azimpur where he lived with his wife and five-year-old son.    

Zillur's elder brother Mizanur Rahman said they told the police official about his death, but he initially did not trust them. But later police asked them to submit his death certificate to the police station. 

Jahangir Alam, son of late Rowshan Ali Molla in Gendaria, died on July 1 last year at the age of 65 due to cardio respiratory failure, according his death certificate issued by Asgar Ali Hospital in the locality.

Complainant Syed Abdul Mannan, SI at Gendaria Police Station, in the case filed on October 3 mentioned his name as Jahangir Hossain though the address and the father's name match with his.

The case statement says Jahangir was among 77 named and many unnamed BNP-Jamaat leaders and activists who gathered in front of Jahangirnagar Hospital in Gendaria at 5:15pm that day, blocking a road as part of a sabotage plan. He was mentioned as accused number 41.

Family members and locals said Jahangir, a cloth trader in Sadarghat area, was never actively involved in politics.

Abdul Jalil, officer-in-charge of Kadamtoli Police Station, said he was not aware if any dead man was implicated in the case, but would look into it.

Gendaria Police Station OC Kazi Mizanur Rahman also promised to do the same, saying it was not supposed to happen.

'TAKE AWAY HIS BODY'

Mansur, a former BNP ward 52 unit president, died on October 27 last year at Bangabandhu Sheikh Mujib Medical University due to heart failure. He was 62.

A teacher at Muradpur High School and widely known as Mansur Ali Master, he was charged with vandalising trucks, buses, CNG auto-rickshaws and Leguna in front of Eagle Box at Ali Bahar in Kadamtoli on Dhaka-Narayanganj highway on September 5.

Akhter Hossain, a sub-inspector at Kadamtoli Police Station, lodged the case on September 6, where 195 others are also charged. 

“We told the police that he has died, but police did not believe us until we provided them with his death certificate,” said his wife Shahanur Akhter.

Even then an SI with other policemen is harassing her son Mohammad Murad, asking if he is involved with the BNP politics, she alleged.

Murad claimed he was never into politics.

Angered by what is happening centring on her late husband, Shahanur has made a decision.

“If police come again, I will take them to Jurain Graveyard where my husband lies buried. I will tell them: Take away his body,” she said.

  • Courtesy: The Daily Star/ Oct 13, 2018

First case filed under Digital Security Act

5 sued for selling fake questions; Cyber Police Centre set up


Two days after the president's signing of the Digital Security Bill into a law, the first case under this act was filed against five youths for selling fake MBBS admission test questions on Wednesday.

The five, who are said to have cheated admission seekers by selling fake questions of this year's MBBS admission test, were sued in a case lodged with Paltan Police Station under sections 23, 24 and 26 of the Digital Security Act and Public Examinations (Offences) Act, said Molla Nazrul Islam, special superintendent of Criminal Investigation Department's organised crime unit.

This syndicate used to leak questions of different public universities' entrance exams, said police. 

The five were produced before a Dhaka court with a remand prayer. The court placed each of them on a two-day remand. 

In another development, Bangladesh Police has got a fully-fledged specialised unit with jurisdiction to investigate the cases filed under the Digital Security Act and prevent spread of rumours on social media.

In an order, the home ministry's Public Security Division yesterday approved the unit, which is named “Cyber Police Centre”.

The much-debated Digital Security Bill becomes a law after the president signed it on Monday amid widespread criticism that it curbs freedom of speech and expression and media freedom guaranteed by the constitution.

The law was passed in parliament on September 19, keeping a harsh provision which allows police officials to search or arrest anyone without any warrant.

On several occasions, the Sampadak Parishad (Editors' Council) and media practitioners expressed serious concern over sections 8, 21, 25, 28, 29, 31, 32, and 43 of the act, saying the provisions restrict free-thinking, freedom of speech and freedom of expression. But the law was enacted keeping the provisions intact.

'CYBER POLICE CENTRE'

The specialised unit of CID, “Cyber Police Centre”, will have 342 posts and it will function under the organisational structure of the CID, according to the home ministry's order.

Headed by a deputy inspector general, the specialised unit will have two additional deputy inspector generals, three superintendents of police, six additional SPs, 18 assistant SPs, 45 inspectors, 140 sub-inspectors, 30 assistant sub-inspectors, 75 constables and 22 other support staffers.

CID officer Nazrul told The Daily Star yesterday that they were hopeful of providing special support to prevent rumours and social media crimes as the unit would enhance their capacity.

Sources said the new unit would start using special social media monitoring tools for watching the digital arena when it would have full manpower. They would use the open source intelligence software to check database and information of different social media sites.

Currently, the Dhaka Metropolitan Police has only a 70-member cyber security division dedicated to cyber cases. The detective branch of DMP also investigates cyber-related incidents but on a small scale.

Besides, Police Headquarters has formed a cyber crime “coordination cell”, and the cell has already started their activities from the first week of September to prevent spread of rumours and fake news during the upcoming national election, according to officials.

Around 100 police teams across the country are giving their updates to the cell, and these teams will also check activities of social media platforms during the national election, they added.

  • Courtesy: The Daily Star /Oct 14, 2018

Polarisation over election-time govt almost completed

Editorial

THE government, presided over by the Awami League, appears to have decided and been working, for some time now, towards holding the next general elections, scheduled by the end of the year, under the partisan government framework, with the parliament still remaining fully functional during polling. What ranking government and ruling party leaders and even the people on the Election Commission have been saying for some time also suggests that it is highly likely that electronic voting machines would be used in the next parliamentary elections although 35, out of the 40, political parties registered with the commission in dialogues in 2017 disagreed on the use of voting machines. 

On the other front, where other political parties outside power are shaping up their alliance or on their own centring on their next political course, the Jatiya Oikya Front, or the national unity front, launched at a programme at the National Press Club on Saturday, has come up with demands seeking resignation of the government, dissolution of the parliament and the formation of an election-time party-neutral government for the national elections. The demands that the National Unity Front has come up in a few cases, when they relate to the holding of the national elections. are similar to, if not identical with, those of other alliances or parties.

The Left Democratic Alliance, the platform that the leftist political parties have formed, has the few demands in question in common. The Islami Andolan Bangladesh party, which is reported to be gearing for the elections, has similar demands. Outside such alliances or political parties is the alliance of 20 political parties that the Bangladesh Nationalist Party, the political arch-rival of the ruling Awami League, leads, having similar demands. 

The Bikalpadhara Bangladesh party, which has finally been abandoned by the Unity Front, has similar demands among others of the organisation. They all differ in their thoughts, means and ends, yet they all subscribe to the proposition that the national elections should be held under a party-neutral election-time government, with the parliament remaining dissolved for the elections and electronic voting machines, which could be made vulnerable to fraudulence, should not be used. But for the ruling party and partners in its coalition on the one side, almost all other political parties, on the other side, have on their own reached a consensus on the holding the general elections under a party-neutral government. 

The polarisation is almost completed. The Awami League-led government in 2011 nullified the provision for a non-party, election-time caretaker government based on a court decision, but the judges in the verdict conceded that two elections, in the near term, might still be under the caretaker administration. The situation has stood the Awami League where it should think of heeding the demands of all other contenders for power for the sound growth of a healthy political culture.

The government of the Awami League, under such circumstances, should give a second thought to the provisions for an election-time, party-neutral government, with the parliament being dissolved, which would hold the next general elections and other demands centring on the elections that others have put forth. A confrontation, otherwise, seems imminent.

  • Courtesy: New Age / Oct 15, 2018

DSCC given the short shrift

EDITORIAL

Shouldn't utility service chiefs be accountable?

That most chiefs of utility service-providing organisations choose not to attend coordination meetings called by the Mayor of South City Corporation is just shameful. Not only have they defied a direct order from the Prime Minister's Office, but their repeated refusals to attend the meetings are an insult to the mayor and the public.

The entire purpose of the meetings, as highlighted by the PMO circular, was to bring greater coordination among utility service providers which has been woefully missing to the grave detriment of citizens. The amount of time and resources that has been wasted over the years because of unplanned and uncoordinated construction and repair works, not to mention public money, is simply mindboggling. To take just one example, according to a World Bank report last year, Bangladesh has the highest road construction cost in the world even though its roads were largely substandard. And the main reasons for this, the report said, were poor monitoring by the concerned authorities and the resulting failure to complete projects within the designated timeframes.

In spite of all this, the fact that the chiefs of our utility service-providing organisations have remained so brazenly apathetic is completely unacceptable. What this indicates is that they are, perhaps, more concerned about their own interests, which is why they fail to keep costs down, as cost extensions would make more funds available to go into their own pockets. What else explains their failure to further inform the DSCC about the progress their departments have been making in implementing decisions taken during the meetings?

It is high time to hold the chiefs of these organisations accountable for not attending the meetings, and for any future failures by their organisations to provide high-quality and timely services to people.

  • Courtesy: The Daily Star / Oct 15, 2018