Search

Monday, November 12, 2018

কে এই জাফরুল্লাহ চৌধুরী

কাফি কামাল 

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। মহান মুক্তিযুদ্ধের কিংবদন্তি যোদ্ধা। রণাঙ্গনে ফিল্ড হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করে প্রাণ বাঁচিয়েছেন অসংখ্য আহত ও অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধার। জাতির যেসব সূর্যসন্তান আজকের এই স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশ গড়ার নেপথ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন এবং রাজনীতির বুদ্ধিবৃত্তিক অঙ্গনে ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন তাদের অন্যতম তিনি। 

স্বাধীন  দেশে তিনি হতে পারতেন দেশসেরা সার্জন। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারতেন চিকিৎসাখাতের প্রধান ব্যবসায়ী। কিন্তু ভিন্নধাতুতে গড়া এক লড়াকু মানুষ ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। স্বাধীন দেশে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন গণমানুষের স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে।

প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নারীদের করেছেন প্রাথমিক স্বাস্থ্যকর্মী। প্রথম উদ্যোগ নিয়েছেন জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের। জনকল্যাণধর্মী চিকিৎসানীতির মাধ্যমে দেশে ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার নীতি প্রণয়ন, জাতীয় শিক্ষা কমিটির সদস্য হিসেবে অগ্রসর শিক্ষা নীতি প্রণয়ন ও নারী উন্নয়নে রেখেছেন যুগান্তকারী ভূমিকা। সরকার ও রাষ্ট্রের, ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর যেকোনো অনিয়মের বিরুদ্ধে তিনি দাঁড়িয়েছেন বুকচিতিয়ে। দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ-পরিস্থিতি যখন উত্তপ্ত, অনিশ্চিত তখনই বিবদমান পক্ষের মাঝখানে সমঝোতার সেতুর ভূমিকা নিয়েছেন। 

রাষ্ট্রক্ষমতার বাইরে থেকে একজন ব্যক্তিমানুষের পক্ষে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য যতটুকু কাজ করা সম্ভব তার সর্বোচ্চটাই করেছেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। সাম্প্রতিক সময়েও তিনি অবস্থান নিয়েছেন কোটাবিরোধী ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্রদের আন্দোলনে। সবমিলিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন ব্যক্তিত্বের শিখরস্পর্শী এক উচ্চতায়। মহান এ ব্যক্তিত্বকে আজ অপমান, মানহানি আর অব্যাহতভাবে তার বিরুদ্ধে দায়ের করা হচ্ছে মামলা।

দেশের মানুষকে কম পয়সায় চিকিৎসা দিতে তিলতিল করে যে হাসপাতালটি তিনি গড়ে তুলেছেন সেটির ওপর দুর্বৃত্তদের হাত পড়ছে। ছাত্রজীবনে চড়তেন দামি গাড়িতে। ছিল পাইলটের লাইসেন্স। লন্ডনে পড়াশোনা অবস্থায় রাজকীয় দর্জি তার বাসায় এসে মাপ নিয়ে স্যুট তৈরি করতেন বলে অতিরিক্ত পরিশোধ করতেন ২০ পাউন্ড। বাস্তবজীবনে সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী এ মহান চিকিৎসক বর্তমানে যাপন করেন সাধারণ জীবন। দেশে-বিদেশে কোথাও তার একটি ফ্ল্যাট পর্যন্ত নেই। বোনকে দান করে দিয়েছেন পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া জমিজমা। মরণোত্তর দেহদান করায় দাফনের জন্যও প্রয়োজন হবে না জমির। অথচ তার বিরুদ্ধেই অভিযোগ তোলা হয়েছে ভূমি দখলের। 

১৯৪১ সালের ২৭শে ডিসেম্বর চট্টগ্রামের রাউজানে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর জন্ম ও পৈত্রিক নিবাস। বড় হয়েছেন ঢাকায়। তার বাবার শিক্ষক ছিলেন বিপ্লবী মাস্টারদা সূর্যসেন। পিতামাতার দশজন সন্তানের মধ্যে তিনি সবার বড়। পড়াশোনা করেছেন বকশীবাজার স্কুল, ঢাকা কলেজ ও ঢাকা মেডিকেলে। ছাত্র ইউনিয়নের মেডিকেল শাখার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ছাত্র অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুর্নীতির বিরুদ্ধে করেছিলেন সংবাদ সম্মেলন। ১৯৬৪ সালে ডিএমসি থেকে এমবিবিএস ও ১৯৬৭ সালে বিলেতের রয়্যাল কলেজ অব সার্জনস থেকে জেনারেল ও ভাস্কুলার সার্জারিতে এফআরসিএস প্রাইমারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। কিন্তু চূড়ান্ত পর্ব শেষ না করে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে দেশে ফিরে আসেন। বৃটেনে প্রথম বাংলাদেশি সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিডিএমএ)’র প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক তিনি। 

মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বাংলাদেশে ফেরার গল্পটি সিনেমার কাহিনীকে হার মানায়। পাকিস্তানি বাহিনীর নির্মমতার প্রতিবাদে লন্ডনের হাইড পার্কে যে কয়েকজন বাঙালি পাসপোর্ট ছিঁড়ে আগুন ধরে রাষ্ট্রবিহীন নাগরিকে পরিণত হয়েছিলেন তাদের একজন ডা. চৌধুরী। তারপর বৃটিশ স্বরাষ্ট্র দপ্তর থেকে ‘রাষ্ট্রবিহীন নাগরিকের’ প্রত্যয়নপত্র নিয়ে সংগ্রহ করেন ভারতীয় ভিসা। শহীদ জননী জাহানারা ইমাম তার কালজয়ী সৃষ্টি ‘একাত্তরের দিনগুলি’র ১৬১-১৬২ পৃষ্ঠায় ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে নিয়ে লিখেছেন- ‘চেনা হয়ে উঠেছে ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ডা. এমএ মোবিন। এরা দুজনে ইংল্যান্ডে এফআরসিএস পড়ছিল। ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করে বিলেতে চার বছর হাড়ভাঙা খাটুনির পর যখন এফআরসিএস পরীক্ষা মাত্র এক সপ্তাহ পরে, তখনই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু। ছেলে দুটি পরীক্ষা বাদ দিয়ে বাংলাদেশ আন্দোলনে অংশ নিলো, পাকিস্তানি নাগরিকত্ব বর্জন করলো, ভারতীয় ট্রাভেল পারমিট যোগাড় করে দিল্লিগামী প্লেনে চড়ে বসলো। উদ্দেশ্য ওখান থেকে কলকাতা হয়ে রণাঙ্গনে যাওয়া। প্লেনটা ছিল সিরিয়ান এয়ারলাইন্স-এর। দামাস্কাসে পাঁচ ঘণ্টা প্লেন লেট, সবযাত্রী নেমেছে। ওরা দুইজন আর প্লেন থেকে নামে না। ভাগ্যিস নামেনি। এয়ারপোর্টে এক পাকিস্তানি কর্নেল উপস্থিত ছিল ওই দুইজন ‘পলাতক পাকিস্তানি নাগরিককে’ গ্রেপ্তার করার জন্য।

প্লেনের মধ্য থেকে কাউকে গ্রেপ্তার করা যায় না, কারণ প্লেন হলো ইন্টারন্যাশনাল জোন। দামাস্কাসে সিরিয়ান এয়ারপোর্ট কর্মকর্তা ওদের দুইজনকে জানিয়েছিল- ওদের জন্যই প্লেন পাঁচ ঘণ্টা লেট। এমনিভাবে ওরা বিপদের ভেতর দিয়ে শেষ পর্যন্ত মে মাসের শেষাশেষি সেক্টর টু রণাঙ্গনে গিয়ে হাজির হয়েছে।’ 

যুদ্ধ যখন বিস্তার লাভ করে যুদ্ধক্ষেত্রে হতাহত যোদ্ধা, উদ্বাস্তু ও নির্যাতনের শিকার অসংখ্য নর-নারীর জরুরি চিকিৎসাসেবায় প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় একটি হাসপাতালের। মুক্তিযুদ্ধের ২ নং সেক্টরের কমান্ডার মেজর খালেদ মোশাররফ ও  ভারতের জিবি হাসপাতালের প্রধান সার্জন ডা. রথিন দত্তের সহযোগিতায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংসদের প্রথম জিএস ডা. এমএ মবিনকে নিয়ে আগরতলার বিশ্রামগঞ্জের মেলাঘরে হাবুল ব্যানার্জির আনারস বাগানে গড়ে তোলেন প্রথম ফিল্ড হাসপাতাল- ‘বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল’। হাসপাতালটির কমান্ডিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করেছিলেন ডা. সিতারা বেগম বীরপ্রতীক। সেসময় প্রশিক্ষিত নার্স না থাকায় নারী স্বেচ্ছাসেবীদের প্রাথমিক চিকিৎসার প্রশিক্ষণ দেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। সে হাসপাতালের দুই স্বেচ্ছাসেবী ছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল ও তার বোন সাঈদা কামাল। মুক্তিযুদ্ধের সময় অসংখ্য মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছে ৪৮০ শয্যাবিশিষ্ট এ হাসপাতাল। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গনি ওসমানীকে বহনকারী যে হেলিকপ্টারটি হামলার শিকার হয়েছিল তাতে অন্যদের মধ্যে ছিলেন- ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। 

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর গ্রামে ফিরে গিয়ে স্বাস্থ্যযুদ্ধ শুরু করেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের ফিল্ড হাসপাতালটি গণস্বাস্থ্যকেন্দ্র নামে গড়ে তুলেন কুমিল্লায়। পরে সেটা স্থানান্তর করেন ঢাকার অদূরে সাভারে। এ ‘গণস্বাস্থ্যকেন্দ্র’ নামটি দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কেন্দ্রের ভবিষ্যৎ কর্মকাণ্ডের জন্য বরাদ্দ দিয়েছিলেন প্রায় ৩১ একর জমি সরকারিভাবে। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর পাইলট প্রজেক্ট গণস্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রাইমারি কেয়ার কনসেপ্ট মাঠে প্রমাণ করে এবং এর ভিত্তিতে হু আর ইউএনও আলমাআতা কনফারেন্সের মাধ্যমে গ্লোবাল ইউনিভার্সাল প্রাইমারি কেয়ার প্রকল্পের ঘোষণা দেয়। গ্লোবাল প্যারামেডিক যে কনসেপ্ট ও ট্রেইন্ড প্যারামেডিক দিয়ে মিনি ল্যাপারোটমির মাধ্যমে লাইগেশন সার্জারির উদ্ভাবক ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। এ সংক্রান্ত তার পেপারটি বিশ্ববিখ্যাত মেডিকেল জার্নাল ল্যানসেট মূল আর্টিকেল হিসেবে ছাপা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের মূল পেডিয়াটিক্স টেক্সট বইয়ের একটা চ্যাপ্টার ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী লিখতেন অনেক বছর ধরে। দেশে-বিদেশে তার লেখা বই ও পেপারের সংখ্যা প্রচুর। প্রাইমারি কেয়ার নিয়ে লেখা তার সম্পাদিত ও প্রকাশিত একটি বই ‘যেখানে ডাক্তার নেই’-একসময় অবশ্য পাঠ্য ছিল বাংলাদেশের ঘরে ঘরে। 

স্বাধীনতা যুদ্ধের পর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ গঠনের লক্ষ্যে প্রথম বৈঠকটিতে সভাপতিত্ব করেছিলেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। পরে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রধান ছিলেন তিনি। ‘সাপ্তাহিক বিচিত্রা’ ছিল এদেশের মধ্যবিত্তের মৌলিক একটি প্রকাশনা। সর্বোচ্চ প্রচারণা ছিল বিচিত্রার প্রধান হাতিয়ার। সত্তর দশকের বিচিত্রায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, মওলানা ভাসানী প্রমুখ ছাড়া হাতেগোনা যে ক’জন বিচিত্রার প্রচ্ছদে স্থান পেয়েছিলেন- ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী তাদের একজন। সোনালী ধানক্ষেতের ব্যাকগ্রাউন্ডে দাঁড়িয়ে আছেন ঝাঁকড়া চুলের তরুণ ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী এমন একটি ছবি প্রচ্ছদ করেছিল বিচিত্রা। ১৯৭৯ সাল থেকেই তিনি জাতীয় শিক্ষা কমিটির ও নারী কমিটির সদস্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন বাংলাদেশে শিক্ষা ও নারীনীতি প্রণয়নে। তবে গণস্বাস্থ্যের পর তার ম্যাগনাম ওপাস হচ্ছে ১৯৮২ সালের জাতীয় ঔষুধ নীতি। স্বাধীনতার পর স্বাস্থ্যখাতে যেটাকে বিবেচনা করা সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হিসেবে। তার প্রচেষ্টায় আমদানি ওষুধের সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ২২৫। বর্তমানে ৯০ শতাংশ ওষুধই দেশে তৈরি হচ্ছে এবং বাংলাদেশ পরিণত হয়েছে একটি ওষুধ রপ্তানিকারক দেশে। অথচ জাতীয় স্বাস্থ্যনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় ১৯৯২ সালে তার সদস্যপদ বাতিল করেছিল বিএমএ। বিনা বিচারে তার ফাঁসি চেয়ে পোস্টারও সাঁটিয়েছিল। তাকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা-বিশ্বাস করেন রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধারা। ফিল্ড হাসপাতালের সহযোগী চিকিৎসক ও গেরিলা যোদ্ধা ডা. মোরশেদ চৌধুরী আমৃত্যু কাজ করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে। ফিল্ড হাসপাতালের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত চিকিৎসক এমএ মুবিন বাংলাদেশে এলে এখনো চিকিৎসা দেন গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে। 

স্বাধীন বাংলাদেশে বিভিন্ন সরকারের সময়ে মন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব পেয়েও ফিরিয়ে দিয়েছেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। কিন্তু অনুপ্রাণিত করেছেন বহু ভালো পদক্ষেপ গ্রহণে। তার পরামর্শে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বাংলাদেশ প্রজাতন্ত্রের পক্ষে পাসপোর্ট ইস্যু করে বিলেতের এক লাখ বাঙালির কাছ থেকে আবু সাইয়িদ চৌধুরীর সংগ্রহ করেছিলেন ১০ লাখ পাউন্ড চাঁদা। বঙ্গবন্ধুকে বহুজাতিক কোম্পানির দুর্নীতির বিষয়ে অবহিত করে সমাজতান্ত্রিক দেশ থেকে ঔষুধ আমদানিতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। বাকশালে যোগ দিতে বঙ্গবন্ধুর অনুরোধ উপেক্ষা করেছিলেন। জিয়াউর রহমান মন্ত্রিত্বের প্রস্তাব দিলে বিএনপিতে স্বাধীনতাবিরোধী থাকায় চার পৃষ্ঠার চিঠির মাধ্যমে সে প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাধ্যমে নাগরিকের পাসপোর্ট পাওয়াকে সহজলভ্য ও নিশ্চিত করেছিলেন। ১৯৮০ সালে জিয়ার গড়া প্রথম জাতীয় মহিলা উন্নয়ন কমিটির দুই পুরুষ সদস্যের একজন হিসেবে প্রাথমিকে ৫০ শতাংশ মহিলা শিক্ষক ও উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ ছাত্রী নেয়ার সুযোগ করেছিলেন, যা কার্যকর হয়েছিল এরশাদ আমলে। জিয়াউর রহমানের আমলে পুলিশে মহিলা নিয়োগ দেয়া শুরু হলে দেশের প্রথম দুই নারী পুলিশ- হিসেবে নিয়োগ পান গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মী হোসনে আরা ও চামেলী বেগম। স্বাস্থ্যমন্ত্রী হতে উপেক্ষা করেছিলেন এরশাদের প্রস্তাব। তার পরামর্শেই এরশাদ আমলে পোস্টার, বিলবোর্ড বাংলায় লেখা ও সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রচলন, উপজেলাব্যবস্থা ও সফল জাতীয় ঔষুধনীতি ও জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি করেছিলেন।  

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যেমন সর্বোচ্চ শ্রদ্ধার আসনে রাখেন, তেমনি কিংবদন্তি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে জিয়াউর রহমানের প্রতিও রয়েছে তার অকুণ্ঠ সম্মান। ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিহত হওয়ার পর সেদিন দুপুরে লন্ডনের হিথ্রো এয়ারপোর্টে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বৃটিশ সাংবাদিকদের বলেছিলেন- ‘তিনি নিজের রক্ত দিয়ে জাতির ঋণ পরিশোধ করে গেলেন।’ 

শারীরিকভাবে খুব একটা সুস্থ নন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। সপ্তাহে তিন দিন ডায়ালাইসিস’র ওপর নির্ভর করে একরকম বেঁচে আছেন। কিন্তু জনগণের অধিকার আদায়ের তাড়না যার হৃদয়ে- তাকে কি আদৌ ডায়ালাইসিস দমাতে পারে? তাকেও পারেনি! শরীরের এমন নাজুক অবস্থার মধ্যেও তিনি ছুটে বেড়াচ্ছেন অফুরন্ত মানসিক শক্তি নিয়ে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের রাজনীতিতে একটি সুস্থ পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে নানাভাবে তৎপরতা চালিয়ে আসছেন। রাজনৈতিক সংস্কারের দাবি জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে খোলা চিঠি দিয়েছেন। বৈঠক করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিও নানা পরামর্শ দিয়েছেন।

বামপন্থি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন প্রথম জীবনে। দেশে-বিদেশে রয়েছে তার ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা। জাতীয় সংকটে নিজের দায়বোধ থেকে তিনি উদ্যোগী হয়েছেন জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলায়। তিনি সুবিধাবাদী সুশীল নয়, একজন বিবেকবান বুদ্ধিজীবী। তিনি কোনো ‘বাঁকা চোখের’ পরোয়া করেননি। সম্প্রতি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সেনাবাহিনী প্রধান সম্পর্কে একটি ভুল তথ্য উপস্থাপন করে একটি বক্তব্য দিয়েছিলেন। সেটা উপলব্ধি করে তিনি পরদিনই সংবাদ সম্মেলন করে এর জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন। ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর চাঁদাবাজি, জমিদখল, পুকুরের মাছ চুরির অভিযোগসহ একের পর এক মামলা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের দুটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যালসের এন্টিবায়োটিকের কাঁচামাল জব্দ ও এন্টিবায়োটিক বিভাগ সিলগালা ও প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করে ১৫ লাখ টাকা। গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ রাখার অভিযোগে হাসপাতালকে আরো ১০ লাখ টাকা জরিমানা করে। অথচ সাধারণ মানুষকে কমদামে ওষুধ সরবরাহ করতে গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। দামি অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলের বদলে ট্যাবলেট তিনি প্যাকেট করার প্রচলন করেন সাধারণ কাগজে। 

২০১৫ সালে বৃটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানের আদালত অবমাননার সাজায় উদ্বেগ জানিয়ে বিশিষ্ট নাগরিকদের বিবৃতি দেয়ার ঘটনায় ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে এক ঘণ্টার কারাদণ্ড দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল। তার প্রতিষ্ঠিত গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে মাত্র এক হাজার ২০০ টাকায় ডায়ালাইসিস করতে পারেন দরিদ্র মানুষ। তার প্রতিষ্ঠিত গণবিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর স্বামী প্রয়াত বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়া। যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থীকে স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস, জেন্ডার ইস্যু, নীতিবিদ্যা ও সমাজ, পরিবেশবিদ্যা, ইংরেজি এবং বাংলা অবশ্যই পড়তে হয়। দরিদ্র ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে সংরক্ষিত আসন। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের দাপ্তরিক কাজ হয় বাংলাভাষা ও বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুসারে। বাংলাদেশের পাবলিক হেলথ সার্ভিসের এই আইকন সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক স্বাধীনতা পদক পান ১৯৭৭ সালে পদকটি প্রবর্তনের বছর। বিকল্প নোবেল খ্যাত র?্যামন ম্যাগসাই পান  ১৯৮৫ সালে। এ ছাড়া ১৯৭৪ সালে সুুইডিশ ইয়ুথ পিস প্রাইজ, স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার, ১৯৯২ সালে সুইডেনের লাইভ লাই হুড পুরস্কার, ২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইন্টারন্যাশনাল পাবলিক হেলথ হিরোজ’ পুরস্কার লাভ করেন। 

  • কার্টসিঃ মানবজমিন/ নভেম্বর ১২,২০১৮ 

পোস্টার দেখলেই তো বোঝা যায় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডটা কোথায়?

মরিয়ম চম্পা 

সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, এমন নির্বাচন হোক যেখানে হয়রানি-ভয়ভীতি থাকবে না। ২০০৮-এর মতো মানুষ ভোট দিতে পারবে। কারণ এর পরে আর মানুষ ভোট দিতে পারেনি। সাউথ এশিয়ান   ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্নেন্স (এসআইপিজি)-এর অনারারি ফেলো অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. এম সাখাওয়াত হোসেন মানবজমিনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন। দেশের রাজনীতি, সংলাপ, সামাজিক সংকটসহ নানা ইস্যুতে খোলামেলা কথা বলেন তিনি।  

ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এত বছরের একটি রাজনৈতিক সংকট দুটি সেটিং বা সংলাপে সমাধান হবে- এটা আশা করা যায় না। এটা আশা করা অনেক বেশি হয়ে যাবে। তবুও বলা যায় যে, দেরিতে হলেও সরকারের তরফ থেকে একটি উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এবং পাশাপাশি যারা অংশ নিয়েছে উভয়কেই স্বাগত জানানো উচিত।

কিন্তু তারপরও বেসিক কিছু প্রশ্ন থেকে যায়। নির্বাচনটা কতটুকু ফেয়ার হবে এবং ভোটাররা কতটুকু স্বাচ্ছন্দ্যে ভোট দিতে পারবে। প্রশ্নগুলো রয়ে গেছে এই কারণে যে, বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হতে যাচ্ছে যেখানে সংসদ রেখে এবং ৩৫০ জন এমপি স্বপদে থেকে নির্বাচন করবেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এমপিরা তৃণমূলে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করেন। গত দশ বছরে পালাক্রমে একধরনের প্রভাব বলয় তারা সৃষ্টি করেছে। সেখানে এমপিরা অকার্যকর থাকবেন এটা ঠিক কথা নয়। সর্বোপরি আসন্ন নির্বাচনে তৃণমূল থেকে শুরু করে ঊর্ধ্বতন পর্যায় পর্যন্ত তাদের প্রভাবটা থেকে যাবে। 

সাধারণ জনগণের ভোটাধিকার ফিরে পাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যদি জাতীয় সংসদ নির্বাচন ভালো হয় এবং একইসঙ্গে ভোটারদের কাছে এবং অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের কাছে যদি গ্রহণযোগ্য হয় ও জেনারেল পারসেপশন যদি ভালো হয় তাহলেই এই পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটানো সম্ভব। কারণ ২০১৪ সালের নির্বাচন ভালো হয় নি বলে পরবর্তী কোনো নির্বাচনই ভালো হয় নি। সব নির্বাচনে একই ধারাবাহিকতা দেখা গেছে। কেন্দ্র দখল, জালভোট সব ঘটনাই ঘটেছে। যেখানে নির্বাচন কমিশনকে অতটা কার্যকর দেখা যায় নি। কাজেই আসন্ন নির্বাচনটা ভালো হলে বাকি নির্বাচনও ভালো হবে। 

নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা প্রসঙ্গে সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, বাংলাদেশে প্রত্যেকটি নির্বাচন কমিশন আস্থার সংকটে থেকে কাজ করেছে। কিছু কিছু নির্বাচন কমিশন সে আস্থার সংকট কাটিয়ে উঠতে পারলেও অনেক কমিশনই আস্থার সংকট কাটিয়ে উঠতে পারে নি। যারা কাটিয়ে উঠতে পেরেছে তারা মোটামুটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে পেরেছে। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন ভালো হয় নি বলে ওটার কনটিনিউটি বজায় রয়েছে। একই সঙ্গে আমাদের দেশের যে সব প্রতিষ্ঠানগুলোর গণতান্ত্রিক ধারা ও জবাবদিহিতা অব্যাহত রাখার কথা সে সমস্ত প্রতিষ্ঠানের কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এখান থেকে যদি আমরা বেরিয়ে আসতে না পারি তাহলে সমস্যা রয়েই যাবে। 

নির্বাচনে সেনা মোতায়েন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রথমত যেকোনো নির্বাচনে নিরাপত্তা সবচেয়ে বড় একটি ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়। অর্থাৎ সিকিউরিটি অব ম্যান অ্যান্ড ম্যাটারিয়ালস। যেহেতু ১ দিনে ৩শ’ আসনে নির্বাচনটা করা হয় এবং প্রতিবছর ভোটার এবং ভোটিং সেন্টার সব মিলিয়ে ৪০ হাজার ভোটকেন্দ্রে পাহারা দেয়ার জন্য যে পরিমাণ ফোর্স দরকার সেই ফোর্স কিন্তু কখনোই পাওয়া যায় না। তখন ফোর্স মাল্টিপ্লায়ার হিসেবে সেনাবাহিনীকে ডাকা হয়। সরকারের আওতায় যেহেতু আর কোনো রিজার্ভ ফোর্স নেই তাই এই সীমিত পরিসরে সেনাবাহিনীকে দিয়ে একদিনের নির্বাচন সম্পন্ন করা হয়। দ্বিতীয় কারণ পুলিশ বাহিনীসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা থাকার কথা থাকলেও প্রতিনিয়ত তারা বিশ্বাস যোগ্যতা হারাচ্ছে। কাজেই সেখানে সামরিক বাহিনীর ওপর মানুষের আস্থা রয়েছে। তাদের কেউ খুব একটা প্রভাবিত করতে পারে না। একইভাবে ম্যাজিস্ট্রেসি অর্ডারের বাইরে তাদের কোনো কার্যকারিতাও থাকে না। 

রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে তোলার বিষয়ে তিনি বলেন, এর জন্য দায়ী আমাদের পলিটিক্যাল সিস্টেম ও কালচার। পলিটিক্যাল সিস্টেম গড়ে তোলার জন্য যে পদ্ধতি এখন পুরো দুনিয়াতে আছে সেগুলোতে আমরা এখনো যাই নি। আমরা সঠিক লোক নির্বাচন করে সঠিক জায়গায় দেই নি। এর কারণ হচ্ছে আমি যাকে দেবো তাকে বা সেই প্রতিষ্ঠানকে আমার মতো চলতে হবে। অন্যথায় তাকে বিতাড়ন, বা চরিত্র হনন করা হবে। এটা যদি হয় তাহলে প্রতিষ্ঠানগুলো কখনোই গড়ে তোলা সম্ভব নয়। প্রতিষ্ঠান মানে এই নয় দালানকোঠা ও বাড়ি-গাড়ি বানালাম, পতাকা দিলাম। এগুলো হচ্ছে অবকাঠামো। আমি অবকাঠামো বানালাম কিন্তু গায়ে রক্ত দিলাম না। ভাবার জন্য ব্রেইন দিলাম না। শোনার জন্য, দেখার জন্য, কথা বলার জন্য প্রয়োজনীয় সব যদি না থাকে তাহলে সুন্দর অবকাঠামো দিয়ে কি হবে? আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোর সুন্দর অফিস আছে কিন্তু গায়ে রক্ত নেই, চিন্তা করার ব্রেইন নেই। 

বিরোধী রাজনৈতিক জোট ঐক্যফ্রন্টের আবির্ভাব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা নতুন কোনো বিষয় নয়। বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনের আগে ছোট ছোট দলগুলো বড় দলের সঙ্গে ভিড়ে যায়। সে হিসেবে ঐক্যফ্রন্টের বিষয়ে বলা যায় যে, এক্ষেত্রে উভয় দিকেই লাভবান হয়েছে। বিএনপির এই মুহূর্তে নেতৃত্ব নেই। সেখানে ড. কামাল হোসেনের মতো ইন্টারন্যাশনাল ফিগারের নেতৃত্ব পাওয়া অনেক বড় একটি বিষয়। তিনিও বহু আগে থেকেই রাজনীতি করতেন। এদেশের স্বাধীনতার সঙ্গে তিনি জড়িত। সবচেয়ে বড় কথা তিনি বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সহচর। তাকে নেতা হিসেবে সামনে রাখা এবং তার সঙ্গে একাত্মতা স্বীকার করা, সেদিক থেকে মনে করি ঐক্যফ্রন্টের একটি প্লাস পয়েন্ট আছে। সম্প্রতি তাদের সংলাপের কারণে রাজনীতিতে যে একটি গুমোট হাওয়া ছিল সেখানে নাড়া পড়েছে। আমরা আশাবাদী যে, তিনবারের প্রধানমন্ত্রী একটানা ১০ বছর ক্ষমতায় থাকার পরে তার অন্যান্য অবদানের মধ্যে এই সংলাপটি যদি সফল করতে পারেন সেটা হবে খুবই ভালো একটি উদ্যোগ। 

সিভিল সোসাইটি সম্পর্কে তিনি বলেন, সিভিল সোসাইটি বলতে আমরা স্বল্প পরিসরে বুঝি ১০ জন লোক টকশোতে কথা বললো তারাই সিভিল সোসাইটি। এমনটা নয়। এটা আইনজীবী থেকে শুরু করে প্রত্যেকেই যাদের কথাবার্তা ও চিন্তাধারা সমাজকে অগ্রগতির দিকে নিয়ে যাবে। সমাজের মানুষের ভালোর জন্য, গণতন্ত্রের ভালোর জন্য সরকার বা তার প্রতিষ্ঠানকে চাপ প্রয়োগ করবে- সেটাই সিভিল সোসাইটি। বাংলাদেশে সিভিল সোসাইটি গড়ে ওঠেনি কখনো। এটা শুনতে যদিও খারাপ শোনা যাবে। বাংলাদেশে যেটা গড়ে উঠেছে সেটা হচ্ছে মোরাললেস চাটুকার সোসাইটি। এবং তারা বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত। আজকে কিছু সংখ্যক লোক আছে যারা নানা ভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছে। কাজেই হয়রানির মধ্যে থেকে সিভিল সোসাইটির মুভমেন্ট হয় না। বাকিরা তো চাটুকার টাইপের। তাদের ভাব অনেকটা এমন যে, আপনি সরদার আর আমি ঝাড়ুদার। ঝাড়ু দিয়ে সব পরিষ্কার করে  দেবো। তারা খুব অল্পতেই তুষ্ট হয়ে যায়। এজন্য দোষারোপ করা যেতে পারে ১৯৭২ থেকে ’৯১-এর পরিস্থিতিকে। বঙ্গবন্ধুর সময়েও সিভিল সোসাইটির বিষয় ততোটা গুরুত্ব পায় নি। সিভিল সোসাইটি বিভিন্ন ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। কারণ হালুয়া-রুটি তাদের সামনে চলে এসেছে। সহজভাবে যদি বলি বাংলাদেশে কোনো সিভিল সোসাইটি দেখি না। অথচ পৃথিবীর বহু দেশে ঐতিহাসিকভাবে সিভিল সোসাইটির কারণে অনেক বিপ্লব এসেছে। 

অবাধ এবং বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রথমত হচ্ছে রাজনৈতিক সদিচ্ছা। তারপর হচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো সেই লক্ষ্যে কাজ করা। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের। পাশাপাশি গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করার দায়িত্ব কিন্তু সরকার এবং সরকারের ইনস্টিটিউশন ও সিভিল সোসাইটির। সেটা যদি না হয় তাহলে গত ৫ বছরের মারামারি-হানাহানি, গুম-খুন ৪০ দিনে ঠিক করা যাবে না। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের কথা বলা হচ্ছে অথচ সেটা আগেই তো ছিল না। এই ৪০ দিনে কি করে হবে? পোস্টার দেখলেই তো বোঝা যায় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডটা কোথায়? এর অন্যতম কারণ হচ্ছে এখন যোগ্যতার ভিত্তিতে নয়, টাকার মাধ্যমে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়। যার টাকা আছে সেই নির্বাচন করে। অথচ দেখা যাবে রাজনীতি বিষয়টা কি সেটাই অনেকে জানে না।
  • কার্টসিঃ মানবজমিন/ নভেম্বর ১২,২০১৮ 

একটি বিয়ে ও নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণের গল্প

আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল চূড়ান্ত করতে একাধিক বৈঠক করেছে নির্বাচন কমিশন। বৈঠকগুলোতে কমিশনারদের তরফে তফসিলসহ ভোটগ্রহণের দিন-তারিখ নিয়ে আলাদা আলাদা প্রস্তাব আসে। প্রস্তাবিত দিন-তারিখ নিয়ে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা-পর্যালোচনাও হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগামী বছরের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে ভোট গ্রহণের প্রস্তাব দেন অন্তত দুইজন কমিশনার। এর মধ্যে একজনের প্রস্তাব ছিল ভোটগ্রহণের দিন নির্ধারণ হোক ৩রা জানুয়ারি বৃহস্পতিবার। এদিকে সরকারের সঙ্গে সংলাপ চলমান থাকায় এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর তফসিল ও নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার দাবি ছিল বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর। অনেক জল্পনা-কল্পনার পর ৮ই নভেম্বর সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণের মাধ্যমে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা। 

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ২৩শে ডিসেম্বর।

ফলে জানুয়ারিতে ভোটগ্রহণের ব্যাপারে দুই কমিশনারের প্রস্তাব নাকচ হয়ে যায়। এদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর দাবির প্রেক্ষিতে নির্বাচন পিছিয়ে জানুয়ারি মাসে ভোটগ্রহণ সম্ভব কিনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছিলেন সিইসি। জবাবে তিনি বলেছিলেন, জানুয়ারি মাসটা অনেক ডিস্টার্বিং। এ সময় বিশ্ব ইজতেমাসহ অনেক বিষয় রয়েছে। যে কারণে জানুয়ারিতে ভোটগ্রহণ সম্ভব না। জানা গেছে, জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে ভোটগ্রহণের ব্যাপারে সরকারের তরফেও আপত্তি ছিল না। কিন্তু একটি বিয়ের কারণে এগিয়ে আনা হয় তফসিলসহ ভোটগ্রহণের দিনক্ষণ। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগামী ৩রা জানুয়ারি নির্ধারিত রয়েছে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরীর মেয়ের বিয়ের দিনক্ষণ। এজন্য শাহাদাত হোসেন চৌধুরীর অনুরোধের প্রেক্ষিতে ডিসেম্বরে ভোটগ্রহণের পরিকল্পনা করে কমিশন। সে অনুযায়ী ২৩শে ডিসেম্বর ভোটগ্রহণের তারিখ চূড়ান্ত হয়।

এদিকে নির্বাচন একমাস পেছানোর দাবি জানিয়ে কমিশনে চিঠি দিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। নির্বাচন এক সপ্তাহ পেছানোর দাবি জানিয়ে চিঠি দিয়েছে প্রফেসর ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টও। রোববার কমিশনে জমাকৃত এসব চিঠির ভিত্তিতে নির্বাচন পেছানো হবে কিনা এ ব্যাপারে আজ সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন। নির্বাচন পেছানোর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে যখন কমিশন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে তখন ব্যক্তিগত সফরে ভারতে অবস্থান করছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী। তার এই বিদেশ সফর নিয়ে প্রধান হিসাবরক্ষক বরাবর একটি চিঠি পাঠিয়েছে ইসি সচিবালয়। ৩০শে অক্টোবর সিনিয়র সহকারী সচিব মো. শাহ আলম স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, আমি নির্দেশক্রমে জানাচ্ছি যে- নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী আগামী ১১ই নভেম্বর থেকে ১৪ই নভেম্বর পর্যন্ত ব্যক্তিগত সফরে ভারতে থাকবেন। চিঠিতে বলা হয়, এ সফরে শাহাদাত হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে তার স্ত্রী সারওয়াত চৌধুরী, মেয়ে চৌধুরী সায়মা তাবাসসুম ও ছেলে সাফায়াত হোসেন চৌধুরী সফরসঙ্গী হবেন। 

সফরের সকল খরচ নির্বাচন কমিশনার নিজেই বহন করবেন। এই সফর একটি ব্যক্তিগত সফর বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন সচিব, অতিরিক্ত আইজিপি, ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার, ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে এই চিঠির ২৫টি অনুলিপি পাঠানো হয়। এদিকে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরীর একান্ত সচিব তকদির আহমেদ জানান, শাহাদাত হোসেন চৌধুরী সপরিবারে রোববার ভারত সফরে গেছেন। সেখানে তিনদিন অবস্থান করবেন তিনি। তকদির আহমেদ আরো জানান, শাহাদাত হোসেন চৌধুরী এখন ব্যস্ত রয়েছেন। কারণ আগামী ৩রা জানুয়ারি তার মেয়ে চৌধুরী সায়মা তাবাসসুমের বিয়ের অনুষ্ঠানের দিনক্ষণ চূড়ান্ত রয়েছে। 

  • কার্টসিঃ মানবজমিন/ নভেম্বর ১২,২০১৮ 

পরীক্ষা না দিয়েই ৩৫৩তম!


বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা তিনি দেননি। তবু প্রকাশিত ফলাফলে তাঁর মেধাস্থান ৩৫৩তম। ভর্তি হতে এসেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। প্রথমে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন। প্রক্টর বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণ দেখালে একপর্যায়ে স্বীকার করেন। পরে পুলিশে সোপর্দ করা হয় রাসিক মারজান নামের ওই শিক্ষার্থীকে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ভর্তি পরীক্ষা না দিলেও রাসিক মারজান ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় ৩৫৩তম হন। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও জানত না। জালিয়াতি করে ওই শিক্ষার্থী ভর্তির মেধাতালিকায় স্থান করে নেওয়ার বিষয়টি প্রথম গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে জানতে পারেন প্রক্টর জহীর উদ্দিন আহমেদ। রোববার মেধাতালিকায় ১ থেকে ৬০০তম অবস্থানে থাকা শিক্ষার্থীদের ‘বি’ ইউনিটে (প্রকৌশল বিষয়গুলোতে) ভর্তির সাক্ষাৎকারের দিন নির্ধারিত ছিল। বিকেলে ৩৫৩তম মেধাস্থানের ক্রমিক এলে ভর্তির জন্য আসেন রাসিক মারজান। তবে তিনি এইচএসসির মূল সনদ নিয়ে আসেননি। নকল সনদ নিয়ে আসেন। প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সদস্যসচিব জহীর উদ্দিন আহমেদ জালিয়াতি করে ভর্তির হওয়ার বিষয়ে রাসিককে প্রশ্ন করলে তিনি অস্বীকার করেন। পরে প্রক্টর তাঁর মূল সনদের কপি দেখালে সেটি তাঁর বলে স্বীকার করেন। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে স্বীকার করেন, তিনি ভর্তি পরীক্ষা দেননি। পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে তিন লাখ টাকা দিয়ে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে জালিয়াতি করে এ মেধাস্থান অর্জন করেন। পরে প্রক্টর তাঁকে সিলেট নগর পুলিশের জালালাবাদ থানা–পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন।

রাসিক মারজান রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার পীরগঞ্জ গ্রামের বাসিন্দা। তিনি রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে চলতি বছর এইচএসসি পাস করেন।

প্রক্টর জহীর উদ্দিন আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ওই শিক্ষার্থী জালিয়াতির বিষয়টি স্বীকার করলে তাঁকে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশে সোপর্দ করা হয়।

মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ মো. হারুনুর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আটক করে ওই শিক্ষার্থীকে আমাদের হেফাজতে দিয়েছে। পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিটে রাসিকের নামে মামলা আছে। সাইবার ক্রাইম ইউনিটের সদস্যরা ঢাকা থেকে আসছেন। তাঁদের হাতে তাঁকে তুলে দেওয়া হবে।’

  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ নভেম্বর ১২,২০১৮ 

গাড়ির চেয়ে সাইকেলের গতি বেশি!

  • পিক আওয়ারে সাইকেলের গতি থাকে ঘণ্টায় সাড়ে ১০ কিলোমিটার।
  • একই সময় গাড়ির গতি থাকে ৭ কিলোমিটারের কম।
  • সাইকেলের মাধ্যমে বছরে জনপ্রতি গড়ে সাশ্রয় ২৪ হাজার টাকা।



দুর্বিষহ হয়ে উঠছে ঢাকার যানজট। অবস্থা এমন হয়েছে যে বাইসাইকেলও চলে গাড়ির আগে। যে কারণে নগরবাসীর অনেকে এখন সাইকেলে ঝুঁকছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীদের করা এক গবেষণা ও বিশ্বব্যাংকের গত বছরের এক প্রতিবেদন থেকে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, ঢাকায় যানবাহনের গড় গতিবেগ ঘণ্টায় সাত কিলোমিটারেরও কম। যানজট নিরসনের উদ্যোগ না নেওয়া হলে সাত বছর পর মানুষও হাঁটবে গাড়ির আগে। আর বুয়েটের শিক্ষার্থীদের গবেষণা অনুযায়ী, ঢাকায় সাইকেলের গড় গতিবেগ ঘণ্টায় ১০ দশমিক ৬৪ কিলোমিটার। ঢাকার ছয়টি প্রধান বাণিজ্যিক এলাকায় অফিসগামী ৩০০ সাইকেল আরোহীর ওপর জরিপ করে এই গতিবেগ পাওয়া গেছে। সাইকেলচালকদের ৩৬ শতাংশ বলছেন, দ্রুত যাওয়া যায় বলে তাঁরা অফিস যাতায়াতে সাইকেল ব্যবহার করছেন। এ ছাড়া আর্থিক, স্বাস্থ্যগত, বাসের অপ্রতুলতা ও নিরাপত্তাও রয়েছে সাইকেল ব্যবহারের পেছনে। গবেষণাটি করেছেন বুয়েটের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষার্থী আহমেদ ইলদেরীম তকী ও শেফা আরাবায়ি শিয়োমা।

ছয় মাস ধরে ঢাকায় সাইকেল চালান ফখরুল ইসলাম। কারওয়ান বাজারে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন তিনি, থাকেন মিরপুরে। ফখরুল বলেন, প্রতিদিন সকালে বাসের জন্য ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হতো। ঠাসাঠাসি করে বাসে উঠতে ও মিরপুর থেকে কারওয়ান বাজারে আসতে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা সময় লাগত। সন্ধ্যায় ফেরার সময়ও একই অবস্থা হতো। দ্রুত যাতায়াতের জন্য তিনি সাইকেল ব্যবহার শুরু করলেন। এখন ৩০ থেকে ৪৫ মিনিটে তিনি যাতায়াত করতে পারেন।

বুয়েটের গবেষক আহমেদ ইলদেরীম তকী প্রথম আলোকে বলেন, গবেষণায় সাইকেলের গড় গতিবেগ নির্ধারণ করা হয়েছে পিক আওয়ারে (অফিস যাতায়াতের সময়)। এ সময় গাড়ির চেয়েও গতি বেশি থাকে সাইকেলে। তিনি বলেন, গবেষণায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে উচ্চ বেতনে চাকরি করেন এমন সাইকেলচালকও ছিলেন। তাঁরা মূলত সময় বাঁচাতে ও স্বাস্থ্যগত কারণে সাইকেল চালান। আর নিম্ন আয়ের লোকজন সাইকেল চালান টাকা বাঁচাতে।

গবেষণায় বলা হয়েছে, অন্য যানবাহনের তুলনায় অফিস যাতায়াতে সাইকেল ব্যবহার করলে বছরে জনপ্রতি গড়ে প্রায় ২৪ হাজার টাকা সাশ্রয় হয়। যাঁরা বেশি আয় করেন ও যাতায়াতের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করেন, তাঁদের ক্ষেত্রে সাশ্রয় আরও বেশি হবে।

গবেষণায় বাইসাইকেল পার্কিংয়ের সমস্যাটি উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, মিরপুর, কারওয়ান বাজার, গুলশান, বনানী, মতিঝিল, মিরপুর, পুরান ঢাকা ও মহাখালী এলাকায় গড়ে মাত্র ২৮ শতাংশ অফিসে সাইকেল পার্কিংয়ের সুবিধা আছে।

ইলদেরীম তকী নিজেও ঢাকায় পাঁচ-ছয় বছর ধরে সাইকেল চালান। তিনি বলেন, পার্কিং সমস্যাটিই প্রধান সমস্যা। তা ছাড়া এ ব্যাপারে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিও খারাপ। তিনি বলেন, কেউ সাইকেল ব্যবহার করলে তাঁকে অনেকেই নিম্নবিত্তের মনে করেন। ফলে পার্কিংয়ের সময় দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা অনেক সময় খারাপ ব্যবহার করেন। এই দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে।

পার্কিং ছাড়াও সাইকেলের জন্য পৃথক লেন না থাকা, অনিরাপদ সড়ক, মোটরযানের মাধ্যমে বায়ু ও শব্দদূষণসহ আরও কিছু সমস্যার কথা জানিয়েছেন সাইকেল ব্যবহারকারীরা।

নগরবাসীর অনেকে এখন সাইকেলে ঝুঁকছেন। তবে পৃথক লেন ও পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকলে সাইকেলের ব্যবহার বাড়বে।

নগর পরিকল্পনাবিদেরা বলছেন, উন্নত দেশগুলোতে হাঁটাপথ (ফুটপাত), সাইকেল লেন ও গণপরিবহন চলার মূল রাস্তা—তিনটিই সমান গুরুত্ব পায়। কিন্তু আমাদের দেশে পরিবেশবান্ধব ও স্বাস্থ্যসম্মত বাহন সাইকেলের বিষয়টি মাথায় না রেখেই সব রাস্তা বানানো হয়েছে। পরিকল্পিতভাবে এই অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে। নতুন যেসব রাস্তা করা হচ্ছে, সেসব রাস্তায় অবশ্যই সাইকেলের জন্য পৃথক লেন রাখতে হবে।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, উত্তর সিটি করপোরেশন গুলশান, বনানী ও মিরপুরের জিল্লুর রহমান ফ্লাইওভার (মিরপুর-এয়ারপোর্ট রোড) থেকে ডিওএইচএস পর্যন্ত সাইকেল লেন করার উদ্যোগ নিয়েছে। উত্তরার একটি পার্কে সাইকেল লেন বানানো হয়েছে, আরও তিনটি পার্কে লেন তৈরির কাজ চলছে। তবে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে এমন কোনো উদ্যোগ নেই।

গবেষক আহমেদ ইলদেরীম তকী বলেন, ২০০৮-০৯ সাল থেকে সাইকেলের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। গবেষণায় তাঁরা পার্কিং সমস্যার সমাধান, পৃথক লেনসহ কিছু সুপারিশ করেছেন। এগুলো বাস্তবায়ন হলে সাইকেলের ব্যবহার আরও বাড়বে।

  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ ১২ নভেম্বর ২০১৮

Sunday, November 11, 2018

Rajuk must cautiously tread Dhaka mixed-use zoning path

EDITORIAL

RAJDHANI Unnayan Kartripakkha, the town planning authorities for the capital Dhaka, has turned, as New Age reported on Saturday, to mixed-use zoning to allow residential, commercial and institutional buildings in the same area. Unlike the detailed area plan for 1995–2015, which, in fact, had come into force in 2010 because of a delayed beginning, the latest plan with a focus on the development of the capital from 2016 to 2035, which is pending an official notification scheduled for January, will allow some areas to have high residential and low commercial use and some other areas to have low residential and high commercial use. 

The commercial district of Motijheel remains deserted beyond office hours and on holidays and becomes insecure as the zone mostly has offices. People living in residential areas such as Banani often need to travel some distance to meet their commercial needs. Mixed-use zoning of city areas increases density, promotes active transport, encourages economic development and creates lively and diverse neighbourhoods. In view of all this, urban planners are reported to have welcomed the idea in that the mixed-use zoning could, in addition, reduce traffic congestion and put in place a better community interaction.

But all this depends on a successful implementation of the development strategy. Mixed-use zoning needs to be implemented based on the population density and the availability of utility services in each of the areas. A mismatch could entail a disaster in a city already burdened with poor utility services and perennial traffic congestion. If Rajuk fails to properly assess the area-wise requirement under political pressure or because of financial clout, the strategy could well only add to public sufferings. Past Rajuk failures in implementing the previous detailed area plan, coupled with Rajuk’s weakness in sorting out the troubling issues and a propensity to legalise, because of political and financial clout of some individuals and entities, constructions after they are illegally erected in areas not meant for development, leave a scope for the city to hurtle to a disaster. Rajuk is not best known for its management of the development of the capital city. In a situation like this, it is of utmost importance to attend to such issues of mismanagement and irregularities for the mixed-use zoning to come to be of any good. Rajuk plans not to apply the strategy to residential areas such as Dhanmondi, Gulshan, Banani, Baridhara and Uttara and to use it in the approval of constructions in Old Town, Badda, Jigatala and some other city areas.

In the adoption of mixed-use zoning in the capital, the authorities concerned would additionally need to weigh a few more issues such as the effect of the strategy on housing affordability.

Housing in mixed-use zones are reported to have been less affordable than housing in the rest of the city in some developed countries. The government, under the circumstances, must be stringent in its assessment of areas where it would be taking up mixed-use zoning strategy for development and must not make an excuse of a good idea to produce bad results.

  • Courtesy: New Age /Nov 11, 2018

AL ignores RPO, its charter

GRASSROOTS' ROLE IN NOMINATION


The ruling Awami League appears to have ignored the electoral law and its own charter in the nomination process for parliamentary candidates in the next national election as the party didn't allow its grassroots leaders to make preliminary selection of contenders.

Section 90B (iv) of the Representation of the People Order (RPO) empowers the grassroots of all registered political parties, including the AL, to play a role in choosing parliamentary candidates.

According to the RPO section, the grassroots will send a list of prospective candidates from each constituency to the party's central parliamentary board, which will finalise the nomination of candidates, taking the list into consideration.

The provision introduced before the 2008 national polls made it mandatory for the parliamentary board of a political party to finalise nomination from the lists.

It was introduced to curb alleged nomination trade and strengthen democratic practice in selecting parliamentary contenders of the political parties.

But the provision was later relaxed through an amendment, leaving the issue of picking candidates from the lists to the discretion of the political parties.   

In line with the RPO section, the AL included a provision in its constitution in 2008, empowering the grassroots to send lists of prospective candidates from each constituency to the central parliamentary board, which will finalise nominations from the lists, according to section 27 of the AL charter.

In fact, inclusion of such provision in the party charter is one of the criteria for getting registered with the Election Commission. Registration of a political party may be cancelled for violating the provision.

The AL largely followed the newly introduced provision in nominating its parliamentary candidates for the 2008 national polls. It had asked its grassroots committees to send lists of a maximum of five possible candidates from each constituency. But this time, the situation is different.

A number of AL grassroots leaders told this newspaper that they were not asked by the party to prepare any lists of parliamentary aspirants in their areas for sending those to the party's parliamentary board.

A day after the ruling AL started selling nomination forms among aspiring candidates, The Daily Star yesterday talked to more than a dozen grassroots leaders of the party in Rajshahi, Dinajpur, Comilla, Khulna, Jessore, and Chattogram.

“In the previous election [in 2008], the party central committee directed us to draw up a list of nomination seekers, so we prepared a list and forwarded it to the central committee," said AL lawmaker from Pabna-5 Golam Faruk Khandaker, also general secretary of the district AL unit.

Advocate Shakhawat Hossain, president of Chatmohor upazila AL unit, Mokhlesur Rahman, secretary of Ishwardi upazila AL unit and Al Mahamud Delwar, president of Santhia upazila AL unit, also confirmed that they didn't get any instruction to prepare lists of prospective candidates.

“We didn't hold any meeting to select possible candidates. We have confidence in the prime minister's decision on selection of our parliamentary candidate,” said Sahinuzzaman Shahin, general secretary of Sujanagar upazila AL unit in Pabna.

Talukder Abdul Khaleq, president of Khulna city AL, and Panchanon Biswas, president of Khulna district AL, also said the party high-ups didn't instruct them to make any list of prospective candidates.

M Salam, general secretary of Chattogram [north] district unit AL, said they had been directed to send a list of prospective candidates in the last local government polls. But they didn't get such an instruction for the next national polls.

Layeb Uddin Lablu, joint general secretary of Rajshahi district unit AL, said, "A few months ago, our party chief told us that she has employed different mechanisms to conduct surveys. She will nominate candidates on the basis of the survey findings."

Talking to this newspaper, former election commissioner Sohul Hussain said the EC should look into whether political parties are following the RPO provision.

Contacted, Rafiqul Islam, an election commissioner, said that if the EC intervenes in this matter, political parties would use different means to show that they have selected their candidates as per the grassroots' recommendations.

“Besides, the Election Commission does not have powers to take action against a political party if it violates the RPO provision,” he claimed.

Asked about the RPO provision, AL Presidium Member Abdul Matin Khashru said party President Sheikh Hasina is the chief of the party's nomination board, and she knows all about the grassroots leaders.

“She knows who have the possibility of winning the election as she keeps all information about the grassroots leaders throughout the year. She has all the details

“The party chief knows better than anyone about who are the party's prospective candidates in the next election ... This is our policy for selecting the prospective candidates,” he mentioned. 

Seeking anonymity, several grassroots leaders said the party high-ups didn't ask them to send lists possibly because it could intensify intra-party conflicts.

Now in each constituency, at least five to six AL leaders are in the race to obtain party nomination for contesting the national polls.

Over the last two days, around 3,200 AL leaders collected the forms, and 460 of them already submitted those to the party's election steering office in the capital's Dhanmondi area. 

The AL parliamentary board sits today to discuss how to scrutinise the forms of a big number of nomination seekers. 

“Tomorrow [today] we will set a modality to scrutinise the nomination forms and select the right candidates. Besides, we will decide whether to take interviews of the prospective candidates individually or group-wise,” AL Joint General Secretary Mahabubul Alam Hanif told this newspaper. 

[Our correspondents in Rajshahi, Pabna, Chittagong and Comilla contributed to this report.]

  • Courtesy: The Daily Star /Nov 11, 2018

প্রধানমন্ত্রী নিজেই সংবিধান লঙ্ঘন করলেন

ডক্টর তুহিন মালিক

পদত্যাগপত্র জমা দেয়া চার টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীকে দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার মিডিয়াকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বলে সংবাদ মাধ্যমে জানা যায়। সকালে পদত্যাগের পরও একজন মন্ত্রী হিসেবেই একটি অনুষ্ঠানে যোগও দিয়েছেন। অথচ গণমাধ্যমে পুরো দেশবাসী দেখেছে চার টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে পদত্যাগ করেছেন।

আমাদের সংবিধানে ৫৮(১) নং অনুচ্ছেদে পরিষ্কার বলা আছে, ‘প্রধানমন্ত্রী ব্যতীত অন্য কোনো মন্ত্রীর পদ শূন্য হইবে, যদি তিনি রাষ্ট্রপতির নিকট পেশ করিবার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নিকট পদত্যাগপত্র প্রদান করেন।’ এখানে সংবিধানের ব্যাখ্যা অত্যন্ত স্পষ্ট। প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র দেয়া মাত্রই মন্ত্রীদের পদ সংবিধান অনুযায়ী শূন্য হয়ে যাবে। সংবিধানের এই অনুচ্ছেদে কোনো ধরনের ব্যাখ্যা বা শর্ত প্রয়োগ করা হয়নি। অন্য কোনো পদ্ধতি অনুসরণের প্রয়োজনের কথাও বলা হয়নি। এই অনুচ্ছেদে কোনো ‘যদি’ বা ‘তবে’ বা কোনো ফর্মালিটির উল্লেখ করা হয়নি। মন্ত্রীরা পদত্যাগপত্র প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা দেবেন। আর প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র পৌঁছামাত্রই তাদের পদ শূন্য হয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শুধু পোস্টবক্স হিসেবে কাজ করবেন।

প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র দেয়ার সাথে সাথে সাংবিধানিকভাবে চার টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীদের সবার পদ শূন্য হয়ে গেছে। এখন তারা আর কোনো ধরনের বেতন-ভাতা, বাংলাদেশের পতাকা ব্যবহার ও অন্যান্য সুবিধার কোনোটারই অধিকার রাখেন না। সংবিধানের ৫৮(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, পদত্যাগ করার পর পদত্যাগী কোনো মন্ত্রীর মন্ত্রিত্ব পেতে হলে তাকে আবার সংবিধানের ১৪৮ অনুচ্ছেদের আওতায় নতুন করে আবার শপথ নিতে হবে ও শপথে স্বাক্ষর দিতে হবে।

আমাদের সংবিধান খুব পরিষ্কারভাবে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ও অন্যান্য মন্ত্রীর পদত্যাগকে সম্পূর্ণ আলাদাভাবে দেখিয়েছে। খেয়াল করার বিষয় হলো- সংবিধানের ৫৭(১)(ক) অনুচ্ছেদ মতে, প্রধানমন্ত্রীর পদ শূন্য হয় রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র প্রদান করলে। অপরপক্ষে মন্ত্রীদের পদ শূন্য হয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র প্রদান করলে।

প্রশ্ন জাগতে পারে- এ দুই ক্ষেত্রে ভিন্নতা কেন? জবাব হলো- সংবিধান মতে, রাষ্ট্রপতি সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়োগ দেন। আর প্রধানমন্ত্রী সংবিধানের ৫৫ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে ও বর্ণিত প্রক্রিয়ায় তিনি যেরূপ স্থির করবেন, সেরূপ মন্ত্রীদের নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করেন। এটা সম্পূর্ণ প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ারাধীন বিষয়। তাই সংবিধান প্রণেতারা প্রধানমন্ত্রীর নিরঙ্কুশ এই ক্ষমতা প্রয়োগের রক্ষাকবচের জন্যই মন্ত্রীদের পদ শূন্যের ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীকেন্দ্রিক বলে রক্ষাকবচ দিয়েছেন। কেননা মন্ত্রীদের পদশূন্যতা যদি রাষ্ট্রপতির মর্জির ওপর শর্তযুক্ত থাকে, তা হলে সংসদীয় সরকারের প্রধানমন্ত্রী একজন ঠুঁটো জগন্নাথে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

আসলে অহরহ সংবিধানের দোহাই দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজেই সংবিধান লঙ্ঘন করলেন। প্রধানমন্ত্রী নাকি বলেছেন, মন্ত্রীরা পদত্যাগ করলেও তারা নিয়মিত বেতনভাতা পাবেন, অফিস করবেন এবং ফাইলেও যথারীতি স্বাক্ষর করবেন। এটা কেমন হুকুম! যেখানে পদত্যাগ করার পর মন্ত্রীদের প্রত্যেকের পদ সংবিধান মতে শূন্য ঘোষিত হলো, সেখানে সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক ও অবৈধভাবে মন্ত্রীরা যদি অফিস করেন এবং ফাইলে স্বাক্ষর দিতে থাকেন, তা হলে প্রধানমন্ত্রী নিজেই সংবিধানের চরম লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত হবেন। কেননা পদত্যাগী মন্ত্রীরা সম্পূর্ণ অবৈধ বিধায় তাদের কেউ আর কোনো বেতনভাতা, বাংলাদেশের পতাকা ব্যবহার, অফিস করা, ফাইলে স্বাক্ষর করা ও অন্যান্য সুবিধার কোনোটাই করার অধিকার রাখেন না। 

সংবিধানের ৮৫ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- সরকারি অর্থের রক্ষণাবেক্ষণ, নিয়ন্ত্রণ সংসদ দ্বারা প্রণীত আইনের মাধ্যমেই নিয়ন্ত্রিত হবে। এটি সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা। সংসদ কোনো আইন প্রণয়ন করে পদত্যাগী মন্ত্রীদের ভরণ-পোষণের কোনো বিধান অদ্যাবধি তৈরি করেনি। তাই পদত্যাগী মন্ত্রীদের দেয়া সব বেতনভাতা ও সুযোগ-সুবিধা অবৈধ। তাদের নীতিনির্ধারণী, ফাইলে স্বাক্ষর ও নোটিংসহ সব কাজকর্ম অবৈধ।

আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ করছি, প্রধানমন্ত্রী এক দিকে সংবিধানের দোহাই দিয়ে রাতকে দিনে রূপান্তরিত করছেন, অন্য দিকে ঠাণ্ডা মাথায় একের পর এক সংবিধান লঙ্ঘন করেই চলেছেন।

  • লেখক : আইনজ্ঞ ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ
  • কার্টসিঃ নয়াদিগন্ত/ ১১ নভেম্বর ২০১৮

Largest wildlife sanctuary under threat

EDITORIAL

Is there no alternative to constructing a road through a government-declared wildlife sanctuary? The very idea of the R&H Department building a road through one of the largest secondary forests in the country—a sanctuary for a variety of flora and fauna—is extremely illogical and incongruous considering the relevant government policy. A good part of more than 900 acres of Hazarikhil Wildlife Sanctuary in Chattogram, which hosts 200 species of birds and animals and shelters 250 different varieties of trees, stands to be completely destroyed if the plan comes to fruition.

We understand that the project to link Fatikchhari Upazila with the main Chattogram Highway has been passed by the ECNEC. But how that could be so when there are clear instructions for obtaining the clearance of the Department of Environment (DoE) and the Forest Department (before such a project can be implemented) is beyond comprehension. As it stands, the project does not have the clearance of the DoE or the forest department, and no environmental impact study has been done either.

We wonder why one of the oldest sanctuaries in the country has to be defiled to build a link road when there is already an existing one. And why can't the existing one be developed further to take on increased volume of traffic? Shorter routes may have long-term consequences, as this project certainly will, if given the green signal; a complete destruction of the forest will be a matter of time only. As it is, forested land in our country is dismally below the ideal ratio, and depleting rapidly. The only rational thing for the government to do is to put down the errant plan firmly.

  • Courtesy: The Daily Star /Nov 11, 2018

এ কেমন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড?

সম্পাদকীয় 

‘বিচ্ছিন্ন’ রাজশাহী

আইনশৃঙ্খলা রক্ষা তথা জনগণের জানমাল হেফাজত করার দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু সেই জানমাল রক্ষার দোহাই দিয়ে তারা কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের চলাচলে বাধা দিতে পারে না। সংবিধান অনুযায়ী, শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ করার অধিকার সবারই আছে। কিন্তু রাজশাহীতে শুক্রবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশকে কেন্দ্র করে সেখানকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যা করেছে, সেটি যেমন আইনবিরুদ্ধ, তেমনি নাগরিক অধিকার হরণের শামিল।

সংবাদমাধ্যমের খবর থেকে জানা যায়, জনসমাবেশে আগত লোকজনকে তারা পদে পদে হয়রানি করেছে, তল্লাশির নামে গন্তব্যে যেতে বাধা দিয়েছে। এ ব্যাপারে পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা যেসব খোঁড়া যুক্তি দিয়েছেন, তা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। এর আগে ঢাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশকে কেন্দ্র করেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একই কাজ করেছে।

তবে রাজশাহীর সমাবেশকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এই বাড়াবাড়ির পাশাপাশি পরিবহনশ্রমিকেরা কথিত ধর্মঘটের নামে দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে রাজশাহীকে দুই দিন প্রায় বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিলেন। এর উদ্দেশ্য ছিল বাইরে থেকে যেন শহরে কেউ আসতে না পারে। প্রথমে তাঁরা নাটোরে এক বাসচালককে মারধর করার অজুহাত দেখিয়েছেন। পরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেখানে মারধর বা লাঞ্ছিত করার কোনো ঘটনাই ঘটেনি। ধর্মঘট নিয়ে পরিবহনশ্রমিক ও মালিকেরা একে অপরের ওপর দায় চাপাচ্ছেন। সব মিলিয়ে রাজশাহী অঞ্চলে এক অরাজক অবস্থা তৈরি হয়। এতে কেবল সমাবেশে আগত লোকজনই বাধাগ্রস্ত হয়নি, বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন।

এত দিন গায়েবি মামলা দিয়ে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের পাইকারি গ্রেপ্তারের ঘটনার কথা আমরা শুনে এসেছি। এবার গায়েবি মারধরের দোহাই দিয়ে পরিবহন ধর্মঘট পালন করা হলো। সরকার–সমর্থক পরিবহনশ্রমিক সংগঠনই ধর্মঘটের নামে রাজশাহীর জনজীবন অচল করে দিয়েছে, যেই সংগঠনের প্রধান হলেন একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী। এর আগে সড়ক নিরাপত্তা আইনের প্রতিবাদে তাঁর নেতৃত্বাধীন পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন সারা দেশে ৪৮ ঘণ্টা ধর্মঘট পালন করেছিল। এত বড় বেআইনি কর্মকাণ্ডের পরও আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল সরকার কারও বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেনি।

আর ধর্মঘটের নামে পরিবহন শ্রমিক সংগঠন এসব বেআইনি ও জবরদস্তি কর্মকাণ্ড এমন সময় ঘটিয়েছে, যখন সংলাপে সরকারের পক্ষ থেকে সুস্পষ্টভাবে বিরোধী দলের সভা-সমাবেশে কোনো ধরনের বাধা না দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, নির্বাচনী প্রচারে সব দল সমান সুযোগ পাবে। এটাই কি সেই সমান সুযোগের নমুনা? সরকারি দলের সাধারণ সম্পাদক তফসিল ঘোষণার পর সমাবেশকে অবৈধ বলে অভিহিত করেছেন। সমাবেশ যদি অবৈধই হয়, তাহলে সরকার সেটি বন্ধের জন্য নির্দেশনা জারি করল না কেন? আর তফসিলের পর এ ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়ার এখতিয়ার একমাত্র নির্বাচন কমিশনের; মন্ত্রী বা সরকারি দলের কোনো নেতার নয়।

যখন সরকার সমাবেশ করার অনুমতিই দিয়েছে, তখন সেই সমাবেশে আগত লোকজনকে বাধা দেওয়া বেআইনি এবং ধর্মঘটের নামে জনজীবন অচল করা সংঘবদ্ধ মাস্তানি ছাড়া কিছু নয়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে পুলিশের বাধা, তথাকথিত শ্রমিক সংগঠনের বল প্রয়োগ ও নানা অপকৌশলের আশ্রয় নেওয়ার পরও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে, তাদের কর্মী ও সমর্থকেরা ট্রেন, ভ্যান, মাইক্রোবাস এমনকি দীর্ঘ পথ হেঁটেও সেখানে এসেছেন।

তাহলে সরকার কেন এই অপকৌশল নিল? কেন বারবার পরিবহন ধর্মঘটের নামে জনগণকে সীমাহীন দুর্ভোগে ফেলা? একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাইলে এমন অপকৌশল থেকে সরকারকে সরে আসতে হবে।
  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/  ১১ নভেম্বর ২০১৮