Search

Monday, November 12, 2018

গাড়ির চেয়ে সাইকেলের গতি বেশি!

  • পিক আওয়ারে সাইকেলের গতি থাকে ঘণ্টায় সাড়ে ১০ কিলোমিটার।
  • একই সময় গাড়ির গতি থাকে ৭ কিলোমিটারের কম।
  • সাইকেলের মাধ্যমে বছরে জনপ্রতি গড়ে সাশ্রয় ২৪ হাজার টাকা।



দুর্বিষহ হয়ে উঠছে ঢাকার যানজট। অবস্থা এমন হয়েছে যে বাইসাইকেলও চলে গাড়ির আগে। যে কারণে নগরবাসীর অনেকে এখন সাইকেলে ঝুঁকছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীদের করা এক গবেষণা ও বিশ্বব্যাংকের গত বছরের এক প্রতিবেদন থেকে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, ঢাকায় যানবাহনের গড় গতিবেগ ঘণ্টায় সাত কিলোমিটারেরও কম। যানজট নিরসনের উদ্যোগ না নেওয়া হলে সাত বছর পর মানুষও হাঁটবে গাড়ির আগে। আর বুয়েটের শিক্ষার্থীদের গবেষণা অনুযায়ী, ঢাকায় সাইকেলের গড় গতিবেগ ঘণ্টায় ১০ দশমিক ৬৪ কিলোমিটার। ঢাকার ছয়টি প্রধান বাণিজ্যিক এলাকায় অফিসগামী ৩০০ সাইকেল আরোহীর ওপর জরিপ করে এই গতিবেগ পাওয়া গেছে। সাইকেলচালকদের ৩৬ শতাংশ বলছেন, দ্রুত যাওয়া যায় বলে তাঁরা অফিস যাতায়াতে সাইকেল ব্যবহার করছেন। এ ছাড়া আর্থিক, স্বাস্থ্যগত, বাসের অপ্রতুলতা ও নিরাপত্তাও রয়েছে সাইকেল ব্যবহারের পেছনে। গবেষণাটি করেছেন বুয়েটের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষার্থী আহমেদ ইলদেরীম তকী ও শেফা আরাবায়ি শিয়োমা।

ছয় মাস ধরে ঢাকায় সাইকেল চালান ফখরুল ইসলাম। কারওয়ান বাজারে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন তিনি, থাকেন মিরপুরে। ফখরুল বলেন, প্রতিদিন সকালে বাসের জন্য ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হতো। ঠাসাঠাসি করে বাসে উঠতে ও মিরপুর থেকে কারওয়ান বাজারে আসতে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা সময় লাগত। সন্ধ্যায় ফেরার সময়ও একই অবস্থা হতো। দ্রুত যাতায়াতের জন্য তিনি সাইকেল ব্যবহার শুরু করলেন। এখন ৩০ থেকে ৪৫ মিনিটে তিনি যাতায়াত করতে পারেন।

বুয়েটের গবেষক আহমেদ ইলদেরীম তকী প্রথম আলোকে বলেন, গবেষণায় সাইকেলের গড় গতিবেগ নির্ধারণ করা হয়েছে পিক আওয়ারে (অফিস যাতায়াতের সময়)। এ সময় গাড়ির চেয়েও গতি বেশি থাকে সাইকেলে। তিনি বলেন, গবেষণায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে উচ্চ বেতনে চাকরি করেন এমন সাইকেলচালকও ছিলেন। তাঁরা মূলত সময় বাঁচাতে ও স্বাস্থ্যগত কারণে সাইকেল চালান। আর নিম্ন আয়ের লোকজন সাইকেল চালান টাকা বাঁচাতে।

গবেষণায় বলা হয়েছে, অন্য যানবাহনের তুলনায় অফিস যাতায়াতে সাইকেল ব্যবহার করলে বছরে জনপ্রতি গড়ে প্রায় ২৪ হাজার টাকা সাশ্রয় হয়। যাঁরা বেশি আয় করেন ও যাতায়াতের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করেন, তাঁদের ক্ষেত্রে সাশ্রয় আরও বেশি হবে।

গবেষণায় বাইসাইকেল পার্কিংয়ের সমস্যাটি উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, মিরপুর, কারওয়ান বাজার, গুলশান, বনানী, মতিঝিল, মিরপুর, পুরান ঢাকা ও মহাখালী এলাকায় গড়ে মাত্র ২৮ শতাংশ অফিসে সাইকেল পার্কিংয়ের সুবিধা আছে।

ইলদেরীম তকী নিজেও ঢাকায় পাঁচ-ছয় বছর ধরে সাইকেল চালান। তিনি বলেন, পার্কিং সমস্যাটিই প্রধান সমস্যা। তা ছাড়া এ ব্যাপারে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিও খারাপ। তিনি বলেন, কেউ সাইকেল ব্যবহার করলে তাঁকে অনেকেই নিম্নবিত্তের মনে করেন। ফলে পার্কিংয়ের সময় দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা অনেক সময় খারাপ ব্যবহার করেন। এই দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে।

পার্কিং ছাড়াও সাইকেলের জন্য পৃথক লেন না থাকা, অনিরাপদ সড়ক, মোটরযানের মাধ্যমে বায়ু ও শব্দদূষণসহ আরও কিছু সমস্যার কথা জানিয়েছেন সাইকেল ব্যবহারকারীরা।

নগরবাসীর অনেকে এখন সাইকেলে ঝুঁকছেন। তবে পৃথক লেন ও পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকলে সাইকেলের ব্যবহার বাড়বে।

নগর পরিকল্পনাবিদেরা বলছেন, উন্নত দেশগুলোতে হাঁটাপথ (ফুটপাত), সাইকেল লেন ও গণপরিবহন চলার মূল রাস্তা—তিনটিই সমান গুরুত্ব পায়। কিন্তু আমাদের দেশে পরিবেশবান্ধব ও স্বাস্থ্যসম্মত বাহন সাইকেলের বিষয়টি মাথায় না রেখেই সব রাস্তা বানানো হয়েছে। পরিকল্পিতভাবে এই অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে। নতুন যেসব রাস্তা করা হচ্ছে, সেসব রাস্তায় অবশ্যই সাইকেলের জন্য পৃথক লেন রাখতে হবে।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, উত্তর সিটি করপোরেশন গুলশান, বনানী ও মিরপুরের জিল্লুর রহমান ফ্লাইওভার (মিরপুর-এয়ারপোর্ট রোড) থেকে ডিওএইচএস পর্যন্ত সাইকেল লেন করার উদ্যোগ নিয়েছে। উত্তরার একটি পার্কে সাইকেল লেন বানানো হয়েছে, আরও তিনটি পার্কে লেন তৈরির কাজ চলছে। তবে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে এমন কোনো উদ্যোগ নেই।

গবেষক আহমেদ ইলদেরীম তকী বলেন, ২০০৮-০৯ সাল থেকে সাইকেলের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। গবেষণায় তাঁরা পার্কিং সমস্যার সমাধান, পৃথক লেনসহ কিছু সুপারিশ করেছেন। এগুলো বাস্তবায়ন হলে সাইকেলের ব্যবহার আরও বাড়বে।

  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ ১২ নভেম্বর ২০১৮

No comments:

Post a Comment