বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ১ হাজার ৫৮৬টি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান সংস্কার কাজ চলতি বছরের জানুয়ারিতে শুরু করে সরকার। পাঠদান উপযোগী করতে সরকারি অর্থ দিয়ে পরিচালিত এ সংস্কার কাজে ব্যয় ধরা হয় ৫৫ কোটি ৫৬ লাখ ২২ হাজার টাকা। গত বছর এ সহায়তা চেয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি চাহিদা নোট পাঠায় অর্থ মন্ত্রণালয়ে।
বরাদ্দ পাওয়ার পর চলতি বছরের জুন মাসের আগেই সারাদেশে এ সংস্কার কাজ শেষ করেছে বলে দাবি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের।
কিন্তু সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে গেল বছরের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলগুলোর সংস্কার কাজের তথ্য দিতে পারেনি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরই।
অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান মোহাম্মদ হানজালা বলেছেন, ‘সারাদেশে দেড় হাজারের অধিক শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের সংস্কার কাজ শেষ হয়েছে।’
কিন্তু তার কাছে কাজের বিস্তারিত তালিকা এবং কাজের বিবরণ চাইলে তিনি তা দিতে পারেননি।
এ বিষয়ে প্রকল্প তত্ত্বাবধানের কাজে নিয়োজিত অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী (ডেস্ক-১) ইঞ্জিনিয়ার মো. আবুল হাসেম সরদারের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে এই মুহূর্তে এর কোনো তথ্য নেই। তবে নিতে চাইলে মাঠ থেকে নিয়ে আপনাদের জানাতে হবে।’
এমন সংস্কার কাজ হলে সব ধরনের তথ্য প্রকৌশল অধিদফতরে থাকার কথা উল্লেখ করে প্রশ্ন করা হলে তিনি কৌশলের আশ্রয় নিয়ে বলেন, ‘দেখুন, আমাদের তথ্য দেওয়ার জন্য আলাদা অফিসার আছেন, আপনি বরং তার সঙ্গে যোগাযোগ করুন।’
পরে এ বিষয়ে প্রধান প্রকৌশলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের তথ্য দেওয়ার জন্য ইঞ্জিনিয়ার মো. আবুল হাসেম সরদারকে নির্দেশনা দেন। পরে ইঞ্জিনিয়ার সরদারের সঙ্গে আবারো যোগাযোগ করা হলে তিনি ‘এ তথ্যের জন্য অনেক সময় দরকার’ বলে সাফ জানিয়ে দেন।
এদিকে, ওই প্রকল্পে রাজশাহী বিভাগে ২১২টি স্কুলের সংস্কার কাজের ক্ষতিপূরণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬১ লাখ টাকা। স্কুলগুলোর কাজের অগ্রগতি জানতে চেয়ে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর রাজশাহী জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দেন, ‘আমাদের এখানে এমন কোনো ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান ছিলও না, আমরা এর জন্য কোনো বরাদ্দ পাইনি।’
প্রকৌশলী মিজানুর রহমানের দেওয়া বক্তব্য অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান মোহাম্মদ হানজালার কাছে তুলে ধরলে তিনি বিব্রতবোধ করেন। তিনি বলেন, ‘আমি জানি না তিনি কেন এটা বলেছেন যে, তারা কোনো বরাদ্দ পাননি।’
‘তবে আপনারা যা কিছুই পত্রিকায় প্রকাশ করেন সে বিষয়ে আমরা তদন্ত করব। যতি কোনো গড়মিল থাকে তাহলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব,’ যোগ করেন মোহাম্মদ হানজালা।
একই প্রকল্পে ঢাকা বিভাগে ৪৪৩টি স্কুলের ক্ষতিপূরণ বাবদ বরাদ্দ ছিল ১৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। এ বিষয়ে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের মাদারীপুর জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রায়হান বাদশার কাছে জানতে চাইলে তার কাছে এ ধরনের কোনো তথ্য নেই বলে জানান।
পরে অধিদফতরের একই জোনের সহকারী প্রকৌশলী এসএম হাবিবুর রহমানকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা এমন ১৮টি প্রতিষ্ঠানের তালিকাসহ একটি ইস্টিমেট পাঠিয়েছিলাম, কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো বরাদ্দ পাইনি।’
জানা গেছে, বেশ কিছু ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান ছিল নেত্রকোনা জেলার খালিয়াজুরী উপজেলায়। সেখানে কিছু শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, তাদের যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তা দিয়ে উল্লেখযোগ্য মেরামতের কাজ করা যায়নি। ভবনের দেয়ালে রং করা এবং স্কুলের উঠানে বাগান সংস্কার ছাড়া তেমন কিছু হয়নি।
এ বিষয়ে নেত্রকোনা জেলার খালিয়াজুরী উপজেলার পূর্ব জগন্নাথপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. দেলোয়ার হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি যা হয়েছে তার বলতে গেলে কিছুই সংস্কার করা হয়নি। এ সংস্কার কাজ করা হয়েছে ঠিকাদারদের মাধ্যমে। তারা শুধু ভবনের দরজা, জানালা, দেয়াল ধসে যাওয়াসহ বাগান তৈরির কাজ করেছে।
খালিয়াজুরী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. রফিকুল ইসলাম পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, আমাদের উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত এমন ১০টি প্রতিষ্ঠান ছিল। এর মধ্যে যেসব প্রতিষ্ঠানের মেরামত কাজ হয়েছে তা দেয়াল রং আর কিছু মাটি কাটতেই বরাদ্দ শেষ হয়।
যোগাযোগ করা হলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন কার্যক্রম তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপসচিব সৈয়দা নওয়ারা জাহানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে- এ বিষয়ে কোনো কিছু গণমাধ্যমে বলবেন না বলে- বিষয়টি এড়িয়ে যান।
- কার্টসিঃ পরিবর্তন.কম/ নভেম্বর ১৪, ২০১৮
No comments:
Post a Comment