Search

Wednesday, November 28, 2018

কাজীর গরু কেতাবে আছে, গোয়ালে নেই

সম্পাদকীয়

সবার জন্য সমান সুযোগ

গত রোববার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা সব প্রার্থীকে সমান সুযোগ দেওয়ার জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রতি যে নির্দেশনা দিয়েছেন, তার গুরুত্ব কেউ অস্বীকার করবে না। তিনি তাঁদের এ কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে নির্বাচনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের যেহেতু তাৎক্ষণিকভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হয়, সেহেতু তাঁদের নির্বাচনী আইনকানুন ও আচরণবিধি, ফৌজদারি কার্যবিধি, দণ্ডবিধি পড়া দরকার। কেননা, কোনো প্রার্থী বা তাঁর অনুসারীরা আইন ভঙ্গ করলে ত্বরিত তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

এর পাশাপাশি নির্বাচন পরিচালনার কাজে নিযুক্ত প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, পোলিং কর্মকর্তা ও পোলিং এজেন্টদের নিরাপত্তা দেওয়াও তাঁদের দায়িত্ব। বিগত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যেভাবে বিরোধীদলীয় প্রার্থীদের পোলিং এজেন্টদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে, আগামী জাতীয় নির্বাচনে তার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।

সিইসি আগের দিন সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে দাবি করেছেন, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আছে। জনপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তারাও তাঁদের অধীনে থেকে কাজ করছেন। সেটাই যদি হবে, তাহলে নির্বাচন কমিশনের অনুমতি ছাড়া পুলিশ বিভাগের কর্মকর্তারা কীভাবে নির্বাচন কর্মকর্তাদের সুলুকসন্ধান করেন। তফসিল ঘোষণার পর স্বতঃপ্রণোদিতভাবে তাঁরা সেটি করতে পারেন না। সিইসি নিজেও তাঁদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নির্বাচন কর্মকর্তাদের সম্পর্কে তত্ত্বতালাশ না করার কথা বলেছেন।

এখানে জরুরি প্রশ্নটি হলো, যে পুলিশ কর্মকর্তারা নির্বাচনের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিদের বিষয়ে অযাচিত খোঁজখবর করছেন, তাঁদের সম্পর্কে কে খোঁজখবর নেবেন? সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তাঁরা যে চরম পক্ষপাতমূলক আচরণ করেছেন, তার কিছু বর্ণনা নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের বক্তব্যে উঠে এসেছে।

লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আছে বলে সিইসি যে অভিমত ব্যক্ত করেছেন, সেটি সত্যিই তাঁর চাওয়া থাকলেও বাস্তবে তার কোনো প্রতিফলন নেই। তাঁর কথা সেই পুরোনো বাংলা প্রবাদ ‘কাজীর গরু কেতাবে আছে, গোয়ালে নেই’–এর কথাই মনে করিয়ে দেয়। সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময়ও নির্বাচন কমিশনাররা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আছে বলে মন্তব্য করেছিলেন, বাস্তবে যার কোনো প্রমাণ মেলেনি।

এর আগে বিএনপির পক্ষ থেকে জনপ্রশাসন ও পুলিশ কর্মকর্তাদের গোপন বৈঠক সম্পর্কে যে অভিযোগ এসেছিল, নির্বাচন কমিশনের সচিব সেটি নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, এ রকম কোনো বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়নি। এই ধরনের অভিযোগ আনার জন্য তিনি বিএনপিকে সতর্কও করে দিয়েছেন। আমরাও মনে করি, তথ্য–প্রমাণ ছাড়া কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনা উচিত নয়। তবে সেই সঙ্গে কমিশনকে এ কথা মনে রাখতে হবে যে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে না-হক অভিযোগ যেমন কাম্য নয়, তেমনি সমস্যাগুলো উপেক্ষা করারও সুযোগ আছে বলে মনে করি না। নির্বাচন কমিশন সচিব যে ত্বরিত গতিতে বিএনপির অভিযোগের জবাব দিলেন, অন্যান্য অভিযোগ সম্পর্কে সেটা প্রত্যাশিত। তফসিল ঘোষণার পরও মনোনয়নপ্রত্যাশীসহ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের যেভাবে গ্রেপ্তার-হয়রানি করা হচ্ছে, সেসব বিষয়ে তিনি নিশ্চুপ কেন?

প্রধান নির্বাচন কমিশনার যেদিন ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রতি সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করার কথা বলেছেন, সেদিনই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেন সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন কমিশনের বিভিন্ন কাজের কঠোর সমালোচনা করেছেন। ক্ষমতাসীন দল বিভিন্ন স্থানে খবরদারি করলেও কমিশন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তিনি সিইসির নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।

রাজনৈতিক দলগুলো প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া শুরু করেছে। ২৮ নভেম্বরের মধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচার শুরু হবে। তখনই সিইসি যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বা সবার জন্য সমান সুযোগের কথা বলেছেন, তার আসল পরীক্ষা শুরু হবে।

  • কার্টসিঃ মানবজমিন/ নভেম্বর ২৮,২০১৭

No comments:

Post a Comment