Search

Thursday, November 15, 2018

আমানত ফেরত দিতে পারছে না আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো - যথাযথ ব্যবস্থা নিক বাংলাদেশ ব্যাংক

সম্পাদকীয়
দেশের আর্থিক খাতের অবস্থা দিন দিন নাজুক হচ্ছে। ব্যাংকের পাশাপাশি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের (এনবিএফআই) অবস্থাও খারাপের দিকে যাচ্ছে। গতকাল বণিক বার্তায় প্রকাশিত সংশ্লিষ্ট এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে কার্যক্রম পরিচালনাকারী ৩৪টি এনবিএফআইয়ের ১৩টিই ‘রেড জোন’ বা বিপজ্জনক হিসেবে চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আমানত তুলে নিতে প্রতিনিয়ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ধরনা দিচ্ছেন ক্ষুদ্র সঞ্চয়কারীরা। এসব প্রতিষ্ঠানকে আমানত দিয়ে বিপাকে আছে ব্যাংকগুলোও। গ্রাহকরা এসব প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ ফেরত দিচ্ছেন না। আমরা ব্যাংকিং খাতের পরিচালনা পর্ষদের বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনিয়মের কথা জেনেছি অনেক আগেই, ব্যাংকগুলোর অনেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দুদক তত্পরও হয়েছে। নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতিগ্রস্ত পরিচালক ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও দুদক যেন তাদের কার্যক্রম চালু করে। দুর্নীতিগ্রস্ত পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয়ারও প্রস্তাব উঠেছে।

অর্থনীতির বিশ্লেষকরা এরই মধ্যে এ ধরনের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয়ার সুস্পষ্ট পরামর্শ দিয়েছেন। তদন্তসাপেক্ষে এ পরামর্শ মেনে চলাই হবে যুক্তিযুক্ত কাজ। বাংলাদেশ ব্যাংক সন্দেহযুক্ত ও অভিযুক্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম মনিটর করার জন্য পর্যবেক্ষক বসিয়েছে বলে জানা গেছে। পর্যবেক্ষকরা কোনো ধরনের সুবিধায় প্রলুব্ধ হয়ে কিংবা উচ্চ মহলের প্রভাবে যাতে পরিস্থিতির ভিন্ন ব্যাখ্যা দিতে না পারে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে অবশ্যই।

দেশের আর্থিক খাত, বিশেষত ব্যাংকিং সেক্টরে চলছে বিশৃঙ্খলা, অনিয়ম ও দুর্নীতি, যার প্রভাব পড়ছে সামগ্রিক অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে। কাঙ্ক্ষিত অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে এতে। খেলাপি ঋণের সংস্কৃতি ও অনিয়ম-দুর্নীতি রোধ করতে না পারলে তা সংক্রমিত হয়ে আরো বাড়বে, বলাই বাহুল্য। তাই বড় ব্যাংকের বড় ঋণ খেলাপ ও দুর্নীতি তো বটেই, ছোট প্রতিষ্ঠানের ছোট খেলাপ ও দুর্নীতি— কোনোটাকেই ছাড় দেয়া যাবে না। ব্যাংকের মতো এনবিএফআইয়ে কঠোর তদারকি নিশ্চিত করতে হবে। কারণ তাদের কাছে গচ্ছিত জনগণের আমানতের পরিমাণ ক্রমে বেড়ে উঠছে। তাদের কার্যক্রমে আরো স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠায় স্বতন্ত্র অডিটসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সক্ষমতা আরো বাড়াতে হবে। যেসব প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংকের গাইডলাইন মেনে ব্যবসা করছে না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নিতে হবে। রেড জোনে থাকা এনবিএফআইগুলোকে কীভাবে গ্রিন জোনে আনা যায়, তার পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে। যেসব প্রতিষ্ঠানে পরিচালনা পর্ষদ অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িত, তাদেরও শাস্তির আওতায় আনতে হবে। ভুললে চলবে না ব্যাংকের মতো এনবিএফআইগুলোয় অনেক ক্ষুদ্র গ্রাহকের অর্থ সঞ্চিত রয়েছে, যার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারেরও।

  • কার্টসিঃ বনিক বার্তা/ নভেম্বর ১৫, ২০১৮

No comments:

Post a Comment