দীন ইসলাম
বাস্তবে অর্থ বরাদ্দ নেই। তবুও গত দুই মাসে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে দুই লাখ কোটি টাকার প্রকল্প ‘কাগুজে অনুমোদন’ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৩০শে অক্টোবর ২৪টি, ৪ঠা নভেম্বর ৩৯টি এবং ৬ই নভেম্বর ৪১টি প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। সব মিলিয়ে শেষ তিন একনেক বৈঠকে রেকর্ড পরিমাণ ১০৪টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। নির্বাচনের আগে এমন গণহারে প্রকল্প অনুমোদন নিয়ে বিভিন্ন মহলে নানা কথাবার্তা চলছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২৫ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে কোনো প্রকল্প নেয়া হলে সেই প্রকল্পের সমীক্ষা করা আবশ্যক। কিন্তু গত দুই মাসে একনেকে অনুমোদন হওয়া প্রকল্পের অর্ধেকেরই সমীক্ষা করা হয়নি। অনেক প্রকল্পই অনুমোদনের ক্ষেত্রে তড়িঘড়ি করা হয়েছে।
এ ছাড়া কঠিন শর্তের ঋণ নিয়েও বড় বড় প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এতে দেশ ঋণগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, এ অর্থবছরের শুরুর দিকে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে ৮-১০টি প্রকল্প অনুমোদন হয়ে আসছিল। তবে নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রকল্প অনুমোদনের সংখ্যা বাড়তে থাকে।
এর মধ্যে গত ২৯শে জুলাই অনুষ্ঠিত বৈঠকে নয়টি প্রকল্প অনুমোদন হয়। ব্যয় ধরা হয় সাত হাজার ৫৩৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ছয় হাজার ৭৫১ কোটি ৬৬ লাখ, বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে ২৫৮ কোটি ৫৭ লাখ এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৫২৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা খরচ করা হবে। ৭ই আগস্টের বৈঠকে উপস্থাপন করা হয় ১১টি প্রকল্প, যার সবগুলো পাসও হয়। ব্যয় ধরা হয় ছয় হাজার ৪৪৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ছয় হাজার ৪১৬ কোটি ১৬ লাখ এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে মাত্র সাত কোটি ৯৮ লাখ টাকা খরচ করা হবে। ১১ই আগস্ট প্রকল্প পাস হয় ১৮টি। ব্যয় ধরা হয় ১৭ হাজার ৭৮৬ কোটি টাকা। গত ২রা সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত বৈঠকে ১৩ হাজার ২১৮ কোটি টাকার ১৫ প্রকল্প অনুমোদন পায়। বৈঠকে ২০টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। ব্যয় ধরা হয় ৩২ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা। এরমধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ১৫ হাজার ৪৯৪ কোটি ৩৭ লাখ, বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে ১১ হাজার ৬৫৬ কোটি ২৭ লাখ এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে পাঁচ হাজার ৩৭৪ কোটি ২৬ লাখ টাকা।
১১ই সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠকে ১৮ প্রকল্প অনুমোদন দেয় একনেক। এগুলো বাস্তবায়নে মোট খরচ ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৭৮৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ১৩ হাজার ৮১৩ কোটি ৪৪ লাখ, বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে ৪২ কোটি ৬২ লাখ এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে তিন হাজার ৯৩০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা খরচ ধরা হয়েছে। ৪ঠা নভেম্বর একনেক সভায় ৩৯টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে ৮৬ হাজার ৬৮৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন করা হবে ৬৬ হাজার ৪৬৬ কোটি ৫১ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন থেকে আসবে ৩১৩ কোটি ২১ লাখ টাকা ও ১৯ হাজার ৯০৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা প্রকল্প সাহায্য হিসেবে পাওয়া যাবে। সর্বশেষ ৬ই নভেম্বর অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠকে সংশোধিত ও নতুন মিলিয়ে ৪১টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। এর মধ্যে নতুন ২৮ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ৩০ হাজার ২৩৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় হবে ২৪ হাজার ৮৫৪ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো নিজেদের তহবিল থেকে ব্যয় করবে ৫৩৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা।
অবশিষ্ট ৪ হাজার ৮৪০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা প্রকল্প সহায়তা হিসেবে বিদেশি উৎস থেকে সংগ্রহ করা হবে। গণহারে এসব প্রকল্প অনুমোদন নিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, প্রকল্প দ্রুত ছেড়ে দেয়ার চাপ রয়েছে। এ জন্য যাচাই বাছাইয়ে যথেষ্ট সময় না পেলেও বাধ্য হয়েই প্রকল্পের কাজ সারতে হয়। অনেক সময় বিভিন্ন বিষয়ে কোয়ারি (তথ্যানুসন্ধান) করা যায়নি। ফলে প্রকল্পের অনুমোদন হলেও বাড়তি ব্যয় বরাদ্দের ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। এদিকে প্রকল্প অনুমোদন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য অর্থ ছাড় করা নিয়ে এখন দৌড়াদৌড়ি চলছে। এ জন্য এখন মেয়র ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্ণধাররা পরিকল্পনা কমিশনে ভিড় করছেন। তবে অর্থ না থাকায় বেশিরভাগ প্রকল্পের বিপরীতে প্রশাসনিক অনুমোদন মিলছে না।
- কার্টসিঃ মানবজমিন/ নভেম্বর ২৮,২০১৭
No comments:
Post a Comment