Search

Tuesday, November 13, 2018

আশ্রয়ণ প্রকল্পে অনিয়ম : দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক

দেশের গৃহহীন মানুষের জন্য সরকার আশ্রয়ণ প্রকল্প গ্রহণ করায় দরিদ্র মানুষ আশা করেছিল, এবার বোধ হয় মাথাগোঁজার ঠাঁই মিলবে। কিন্তু অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে আশানুরূপ সাফল্য দেখেনি প্রকল্পটি। প্রায় প্রতিটি প্রকল্প নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। কোথাও কোথাও অর্থ শেষ হয়ে গেলেও ঘর বুঝে পায়নি আশ্রয়হীনরা। অধিকাংশ প্রকল্পের মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। আমরা আশ্রয়ণ প্রকল্পের নিরপেক্ষ অডিট প্রত্যাশা করেছিলাম। সেটিও করা হয়নি। ঘর বরাদ্দ নিয়েও রয়েছে হাজারো অভিযোগ। রাজনৈতিক বিবেচনায় বরাদ্দ প্রদানের খবরও মিলেছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির একটি গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম এ আশ্রয়ণ প্রকল্প। প্রধানমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এ প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির খবর নিঃসন্দেহে বেদনার। তদারকি ব্যবস্থার দুর্বলতা ও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার ফলেই এটি হয়েছে। পরিস্থিতি উন্নয়নে অর্থাৎ সরকারি বরাদ্দের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার এবং প্রকৃত গৃহহীনরা যেন আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে উপকৃত হতে পারে, তা নিশ্চিত সরকারকেই করতে হবে।

বলার অপেক্ষা রাখে না, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মাধ্যমে দেশে হতদরিদ্র নারী-পুরুষের আর্থসামাজিক সব সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। এমনকি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দরিদ্র এর আওতার বাইরে থেকে যাবে। তবুও সরকারের এ উদ্যোগ প্রশংসনীয়। কিন্তু ধারাবাহিকভাবে এ কর্মসূচি আরো কার্যকর করতে তিনটি বিষয় বিবেচনায় রাখা চাই। এক. উৎপাদনমুখী খাতে সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধা বাড়ানো। দুই. বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে সমন্বয় সাধন। তিন. দুর্নীতি-অনিয়মের ঘটনা কমিয়ে আনা। এটাও দেখতে হবে, বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচির সঙ্গে সরকারি পদক্ষেপ যেন পরিপূরক হয়। এসব কর্মকাণ্ডে প্রশাসনের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তবে তাদের সবার জবাবদিহিতা সঠিক মাত্রায় থাকে না বলে যে অভিযোগ, তা অমূলক নয়। হতদরিদ্রদের জন্য সরকারের বরাদ্দে ভাগ বসানো গুরুতর অন্যায় বলেই বিবেচিত হওয়া উচিত। এ ধরনের অনিয়ম ঘটলে তার সঙ্গে যুক্তদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা চাই। দুর্ভাগ্য, দুর্নীতি-অনিয়মের মাত্রা কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা যাদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত, সেই জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের অনেকের সম্পর্কেও এমন অভিযোগ উঠে থাকে। সরকারকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের মানসম্পন্ন বাস্তবায়ন এবং সঠিকভাবে বরাদ্দ প্রদানের জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের আরো সম্পৃক্ত করা জরুরি। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের অনিয়ম ও দুর্নীতি কমিয়ে আনতে কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের মতো একটি দরিদ্রবান্ধব প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাক, তা কারো কাম্য নয়। প্রধানমন্ত্রীর এ প্রকল্পের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে সম্পৃক্ত করা গেলেও অনিয়ম কমে আসতে পারে। তবে সবকিছুর আগে প্রয়োজন সরকারের সদিচ্ছা।
  • কার্টসিঃ বনিক বার্তা/ নভেম্বর ১৩,২০১৮

No comments:

Post a Comment