বৈঠক শেষে ঐক্যফ্রন্টের নেতারা
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনে থাকা না-থাকা নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও সরকারের আচরণের ওপর নির্ভর করছে বলে জানিয়েছেন জোটটির নেতারা। গতকাল নির্বাচন ভবনে ইসির সঙ্গে এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তারা।
নির্বাচন পিছিয়ে দেয়াসহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে গতকাল বিকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদা ও অন্য নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠক করেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা। প্রায় ২ ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠকে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে পরস্পরকে সহযোগিতা, নির্বাচন তিন সপ্তাহ পিছিয়ে দেয়া, ইভিএম ব্যবহার না করা, সেনাবাহিনী মোতায়েন, কারাবন্দি নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি, হয়রানিমূলক মামলা ও গায়েবি মামলা প্রত্যাহার এবং নির্বাচনী এজেন্টদের নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন তারা।
বৈঠক শেষে ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আমরা আমাদের কিছু প্রশ্ন ও অভিযোগ কমিশনের কাছে তুলে ধরেছি। কমিশন বিস্তারিতভাবে এসব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে তারা আমাদের সহযোগিতা চেয়েছেন এবং সেই সঙ্গে নিজেরাও সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আমরা আশা করি নির্বাচন চলাকালে আমাদের মধ্যে সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের ঘটনা নিয়েও কথা হয়েছে বলে জানান ড. কামাল হোসেন। আচরণবিধি মানাতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি ইসির চিঠিই পল্টনে পুলিশের উৎসাহী ভূমিকার কারণ কিনা— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে ইসি দুঃখ প্রকাশ করেছে।
এক মাস নির্বাচন পেছানোর দাবি মানা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে ঐক্যফ্রন্টের এ শীর্ষ নেতা বলেন, সিইসি জানিয়েছে, বিবেচনা করবে। আমরা যেসব কথা বলেছি, তারা সেগুলোর নোট নিয়েছেন। অনেক বিষয়ে তারা বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন।
বৈঠকে ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে ইসিতে কোন বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে— এমন প্রশ্নের জবাবে ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা নির্বাচন তিন সপ্তাহ পিছিয়ে দেয়ার জন্য বলেছিলাম। তারা বলেছেন, আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। নির্বাচনে ইভিএম একেবারেই ব্যবহার করা যাবে না, এটি আমাদের দাবি ছিল। কমিশন বলেছে, তারা সব কেন্দ্রে ব্যবহারের কথা চিন্তা করছে না। শুধু সিটি করপোরেশনগুলোয় সীমিতসংখ্যক ইভিএম ব্যবহারের বিষয়টি চিন্তা করছে। কমিশন এও জানিয়েছে, যদি আমরা বোঝাতে পারি, ইভিএম পদ্ধতি পুরোপুরিভাবে নিরাপদ নয়, তাহলে সেটিও তারা বিবেচনা করবেন। সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয়টিও এরই মধ্যে তারা চিন্তা করেছেন, তবে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে।
নির্বাচন কমিশনের কাছে জনপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের রদবদলের দাবি জানিয়েছে ঐক্যফ্রন্ট। কমিশন সেটি কীভাবে করা যেতে পারে, তা বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানান মির্জা ফখরুল।
বৈঠকে আলোচিত অন্য বিষয়গুলো সম্পর্কে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা কারাবন্দি নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি, হয়রানিমূলক মামলা ও গায়েবি মামলা প্রত্যাহারের কথা বলেছি, তারা এ ব্যাপারে আমাদের কাছে তালিকা চেয়েছেন। আমরা তাদের বলেছি, পুলিশ প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে একটি নির্দেশ জারি করতে, যাতে অন্যায়ভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে যেন কাউকে গ্রেফতার করা না হয়। কমিশন এ বিষয়ে খুব ইতিবাচকভাবে চিন্তা করে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমরা নির্বাচনী এজেন্টদের নিরাপত্তা প্রদানের বিষয়ে বলেছি। এ বিষয়ে তারা নিশ্চিত করেছেন। নির্বাচনী পর্যবেক্ষকদের বিষয়ে কমিশনের কোনো বাধা থাকবে না। রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগে রাজনৈতিক পরিচয় বিষয়ে যে অভিযোগ তা ইসি খতিয়ে দেখবে বলে আমাদের জানিয়েছে। গণমাধ্যমের বিষয়ে কমিশন বলেছে, গণমাধ্যম কেন্দ্রের ভেতরে ছবি ধারণ করতে পারবে। কিন্তু সরাসরি সম্প্রচার করতে পারবে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, মোট কথা কমিশন সবই শুনেছে। প্রতিবারই শোনে। কতটুকু করবে, আর কতটুকু করছে এটা জনগণ ও আপনারা বিবেচনা করবেন। আমরা আন্তরিকভাবে মনে করি দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ইসিকে সংবিধান প্রদত্ত যে অধিকার ও দায়িত্ব দেয়া রয়েছে, সে দায়িত্ব পালন করলে এবং নিরপেক্ষভাবে সব রাজনৈতিক দলের ওপর ব্যবহার করলে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে। আর বিরোধী দলের নির্বাচনে টিকে থাকাটা নির্বাচন কমিশনের আচরণের ওপর নির্ভর করছে।
নয়াপল্টনে যা হলো, তাতে নির্বাচনে টিকে থাকার প্রথম ধাপটি কেমন মনে হচ্ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, একেবারেই ভালো নয়। এটি শুভ লক্ষণ নয়। নির্বাচন কমিশন ও বর্তমান নির্বাচনকালীন সরকারের ওপর নির্ভর করছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনে থাকা না-থাকা।
- কার্টসিঃ বনিক বার্তা/ নভেম্বর ১৫, ২০১৮
No comments:
Post a Comment