আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে কলঙ্কিত হতে চান না বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। গতকাল সোমবার সকালে নির্বাচন কমিশন ভবনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের তিন দিনব্যাপী আচরণবিধি সংক্রান্ত ব্রিফিংয়ের শেষদিনে এমন কথা বলেন তিনি। ব্রিফিংয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, বাকি তিন নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিবসহ আরো কয়েকজন বক্তব্য দেন।
নিজের বক্তব্যের শুরুতেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক যাত্রার কথা উল্লেখ করেন মাহবুব তালুকদার। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য। গণতন্ত্রের মূলভিত্তি হলো নির্বাচন। যারা দেশ পরিচালনা করবেন, নির্বাচনের মাধ্যমে তাদেরকে বেছে নেয়ার প্রক্রিয়ায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা বিশেষ দায়িত্ব পালন করবেন। এই দায়িত্ব অত্যন্ত গৌরবের।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের গণতন্ত্রের অগ্রসৈনিক উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় আপনারা আইনের শাসনকে প্রতিষ্ঠিত করবেন। এই নির্বাচন কমিশনার আরো বলেন, বলা হয়ে থাকে নির্বাচন আইনানুগ হতে হবে। এই কথাটি ব্যাখ্যার অবকাশ রাখে। আইন যদি সবার জন্য সমান না হয়, সবার জন্য সমানের নিশ্চয়তা না দেয় তাহলে সেটি আইন নয়, কালো আইন। আপনারা আইনের প্রতিপালক, কালো আইনের নন।
তিনি আরো বলেন, নির্বাচনে আচরণবিধি দৃঢ়ভাবে কার্যকর, আচরণবিধি লঙ্ঘনকারীদের সাজা দেয়া, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা ও এসব বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা আপনাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। মাহবুব তালুকদার আরো বলেন, এবারের নির্বাচনে দেশব্যাপী সেনাবাহিনী মোতায়েন থাকবে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্দেশনায় সেনাবাহিনী দায়িত্ব পালন করবে। প্রতিটি সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সেনাবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সমন্বয় করে কর্তব্য পালন করতে হবে। যাতে করে ভোটারদের মধ্যে আস্থার পরিবেশ তৈরি হয়। আসছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কমিশনের চাওয়া অত্যন্ত সামান্য বলেও জানান কমিশনার।
তিনি বলেন, একজন ভোটার যেনো নির্বিঘ্নে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ভোটকেন্দ্রে যেতে পারেন, নিজের ইচ্ছামতো যাকে খুশি ভোট দিয়ে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারেন- এটুকুই আমাদের চাওয়া। রাজনৈতিক বাস্তবতায় এ সামান্য চাওয়াটুকুও অসামান্য কর্মযজ্ঞে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য মাহবুব তালুকদারের। তিনি বলেন, সবকিছু সত্ত্বেও ভোটারদের সামান্য চাওয়াটুকু যেকোনো মূল্যে ফিরিয়ে দেয়ার নিশ্চয়তা দিতে হবে। মাহবুব তালুকদার বলেন, এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভিন্নমাত্রা যোগ হয়েছে। সব রাজনৈতিক দল, সবগুলো রাজনৈতিক জোট এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে।
‘কোন বনেগা এমপি’ এখন সর্বোচ্চ আলোচনার বিষয়। দেশব্যাপী ভোটারদের মধ্যে উৎসাহ ও উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে। আমরা চাই উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। নির্বাচন অবশ্যই সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হতে হবে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা সততা ও সাহসিকতার সঙ্গে এই নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবেন। নির্বাচন কমিশন সবসময়ই আপনাদের পাশে আছে।
এবারের নির্বাচন আত্মমর্যাদা সমুন্নত রাখার নির্বাচন উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার আরো বলেন, শুধু দেশবাসী নয়, বিশ্ববাসীও এ নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে। সকল প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বাংলাদেশ একটি সুষ্ঠু, স্বাভাবিক, শুদ্ধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে পারবে না- তা হতেই পারে না। আমরা কোনো প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন করে কলঙ্কিত হতে চাই না। নির্বাচনে যেকোনো দল বা প্রার্থী জয়ী বা পরাজিত হতে পারে। তবে ম্যাজিস্ট্রেটদের খেয়াল রাখতে হবে দেশবাসী যেন পরাজিত না হয়। বক্তব্যের শেষের দিকে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘সত্য যে কঠিন, কঠিনেরে ভালোবাসিলাম। সে কখনো করে না বঞ্চনা।’
- কার্টসিঃ মানবজমিন/ নভেম্বর ২৭, ২০১৮
No comments:
Post a Comment