Search

Sunday, November 18, 2018

তরুণ বেকারের হার ৭ বছরে দ্বিগুণ

  • আইএলওর আঞ্চলিক কর্মসংস্থান নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ
  • দেশে তরুণদের মধ্যে বেকারত্ব ২০১৭ সালে ১২.৮ শতাংশ
  • উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্ব ১০ দশমিক ৭ শতাংশ
  • বাংলাদেশের তরুণদের বড় অংশ নিষ্ক্রিয়



বাংলাদেশে তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার বাড়ছেই। মাত্র সাত বছরে এই হার দ্বিগুণ হয়ে গেছে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, উচ্চশিক্ষা এখন আর কাজ পাওয়ার নিশ্চয়তা দিতে পারছে না। তরুণেরা যত বেশি পড়ালেখা করছেন, তাঁদের তত বেশি বেকার থাকার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। দেশে উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেশি।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) আঞ্চলিক কর্মসংস্থান নিয়ে এক প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে। ‘এশিয়া-প্যাসিফিক এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল আউটলুক-২০১৮’ শীর্ষক এই প্রতিবেদন গত শুক্রবার প্রকাশ করা হয়। এতে ২০০০ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত এই অঞ্চলের ২৮টি দেশের বেকারত্ব, তরুণদের কর্মসংস্থান, নিষ্ক্রিয় তরুণের হার, আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক কর্মসংস্থান, কর্মসন্তুষ্টি ইত্যাদির তুলনামূলক চিত্র উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, বাংলাদেশে তরুণদের মধ্যে বেকারত্ব ২০১০ সালের তুলনায় দ্বিগুণ হয়ে ২০১৭ সালে ১২ দশমিক ৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্ব ১০ দশমিক ৭ শতাংশ, যা এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় ২৮টি দেশের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। বাংলাদেশের ওপরে আছে কেবল পাকিস্তান।

বাংলাদেশের তরুণদের বড় অংশ আবার নিষ্ক্রিয়। তাঁরা কোনো ধরনের শিক্ষায় যুক্ত নন, প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন না, আবার কাজও খুঁজছেন না। দেশে এমন তরুণের হার ২৭ দশমিক ৪ শতাংশ। মেয়েদের মধ্যে এই হার বেশি, ৪৫ শতাংশের কাছাকাছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইএলওর সাবেক বিশেষ উপদেষ্টা রিজওয়ানুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তিনি আইএলওর প্রতিবেদন দেখেননি, তাই সেটা নিয়ে মন্তব্য করবেন না। তবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী শিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্ব কিছুটা বেড়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের যে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, তা বাড়তি হারে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কতটুকু ভূমিকা রাখছে, সেটা নিয়ে প্রশ্ন আছে। আবার তরুণদের যে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে, তা কর্মসংস্থানে কাজে লাগছে কি না, সেটাও প্রশ্নসাপেক্ষ।’

আইএলওর মানদণ্ড অনুযায়ী, সপ্তাহে এক ঘণ্টা কাজ করলেই একজন ব্যক্তি আর বেকারের তালিকায় থাকেন না।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) গত এপ্রিলে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে বেকার ছিল ২৬ লাখ ৭৭ হাজার; যা আগের বছরের চেয়ে ৮৭ হাজার বেশি। ওই সময় কমপক্ষে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে সাড়ে ৪০ হাজার তরুণ-তরুণী বেকার ছিলেন। এ ছাড়া উচ্চমাধ্যমিক পাস করে বেকার ছিলেন ৬ লাখ ৩৮ হাজার। আর দেশে ১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা ৬ কোটি ৩৫ লাখ।

উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের হার বেশি

আইএলওর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে দেড় যুগ আগে ২০০০ সালে সার্বিক বেকারত্বের হার ছিল ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০১০ সালে তা ৩ দশমিক ৪ শতাংশে দাঁড়ায়। ২০১৩, ২০১৬ ও ২০১৭ সালের হিসাবে এই হার একই থাকে (৪ দশমিক ৪ শতাংশ)। বাংলাদেশে পুরুষের ক্ষেত্রে বেকারত্ব ৩ দশমিক ৩ শতাংশ ও নারীর ক্ষেত্রে ১২ দশমিক ৮ শতাংশ।

বাংলাদেশে শিক্ষাগত যোগ্যতার কোন পর্যায়ে বেকারত্বের হার কত, তাও তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে। ২০১৭ সালে বাংলাদেশে শিক্ষার প্রাথমিক স্তর পার হয়নি—এমন মানুষের মধ্যে বেকারত্বের হার সবচেয়ে কম (১ দশমিক ৮ শতাংশ)। প্রাথমিক পর্যায় শেষ করা মানুষের মধ্যে বেকারত্বের হার ৩ দশমিক ৫ শতাংশ। যাঁরা মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষিত, তাঁদের মধ্যে বেকার সাড়ে ৮ শতাংশ। উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকার ১০ দশমিক ৭ শতাংশ।

জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য শামসুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশের উচ্চশিক্ষিতরা যতক্ষণ পর্যন্ত মনমতো চাকরি না পায়, ততক্ষণ নিজেকে কর্মজীবী বলে স্বীকার করে না। কোচিংয়ে পড়ানো, অনলাইনে কাজ করা ইত্যাদিকে তারা কাজ বলে গণ্য করে না। আমার মনে হয়, মোটামুটি ভালো শিক্ষার্থীরা কিছু না কিছু করে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের পুরো শিক্ষাব্যবস্থাকেই বাজারমুখী করতে হবে। শিল্প খাতে যে ধরনের দক্ষতা প্রয়োজন, সে অনুযায়ী জনশক্তি তৈরি করতে হবে।’

বাংলাদেশে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁরাও সন্তুষ্ট নন। আইএলওর প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাজে যুক্ত ৫৪ শতাংশ বাংলাদেশি মনে করেন, তাঁদের যথাযথ হারে বেতন বা মজুরি দেওয়া হয় না। অবশ্য এটা অঞ্চলের সাধারণ চিত্র। এ বিষয়ে আইএলওর প্রতিবেদনের লেখক সারা এলডার বলেন, ‘এই অঞ্চলে ব্যাপক অর্থনৈতিক অগ্রগতি হচ্ছে। তারপরও এটা খুবই হতাশাজনক যে এখনো অনেক শ্রমিক শুধু খেয়ে-পরে বেঁচে থাকে। আহত হওয়া, চাকরি হারানো, দুর্যোগ, ফসলহানি তাদের দারিদ্র্যসীমার নিচে টেনে নেওয়ার ঝুঁকিতে রাখে।’
  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ ১৮ নভেম্বর ২০১৮ 

No comments:

Post a Comment