Search

Sunday, November 18, 2018

৩০ ডিসেম্বর ভোট — বার্ষিক হিসাবায়ন নিয়ে দুর্ভাবনায় ব্যাংকাররা

৩০ ডিসেম্বর দেশের ব্যাংকগুলোর বার্ষিক হিসাবায়ন সমাপ্তের দিন। সারা বিশ্বের বেশির ভাগ ব্যাংকেরই হিসাবায়ন চূড়ান্তের জন্য এ দিনটি নির্ধারিত। লাভ-লোকসানের খতিয়ান চূড়ান্ত করার পর ৩১ ডিসেম্বর ‘ব্যাংক হলিডে’ হিসেবে পালন করেন দেশের ব্যাংকাররা। কোনো ব্যাংক হিসাবায়ন চূড়ান্ত করতে না পারলে এদিন প্রধান কার্যালয়ে বসে সে হিসাব চূড়ান্ত করা হয়। দিনটিতে বন্ধ থাকে দেশের ব্যাংকগুলোর সব ধরনের লেনদেন। কেবল খোলা থাকে প্রধান কার্যালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু শাখা।

ব্যাংকের বার্ষিক হিসাবায়ন চূড়ান্তের দিনই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের তারিখ নির্ধারণ হওয়ায় দুর্ভাবনায় পড়েছেন ব্যাংকাররা। তারা বলছেন, ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ব্যাংকারদের জন্য সবচেয়ে ব্যস্ততম সময়। খেলাপি ঋণ আদায়, লাভ-লোকসানের খতিয়ান তৈরিসহ বার্ষিক হিসাবায়ন চূড়ান্ত করার জন্য এ সময়ে ব্যাংকারদের দিন-রাত কাজ করতে হয়। ৩০ ডিসেম্বর ভোট হলে তার তিন-চারদিন আগে থেকে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা নির্বাচনী প্রশিক্ষণ, ভোটের উপকরণ গ্রহণসহ আনুষঙ্গিক কাজে ব্যস্ত থাকবেন। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের পাশাপাশি বেসরকারি ব্যাংকের অনেক কর্মকর্তা ৩০ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকবেন। তাছাড়া ভোট উপলক্ষে এদিন সাধারণ ছুটিও। এর পরদিন আবার ব্যাংক হলিডে। সব মিলিয়ে বার্ষিক হিসাবায়ন নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন ব্যাংকাররা।

নির্বাচনে ভোটগ্রহণ ও বার্ষিক হিসাবায়ন চূড়ান্তকরণ একই দিনে হওয়ায় দেশের এক ডজনের বেশি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীরা বণিক বার্তার কাছে তাদের দুর্ভাবনার কথা জানান। একই ধরনের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপকরাও। তবে বিষয়টিকে স্পর্শকাতর আখ্যায়িত করে নাম প্রকাশ করতে চাননি ব্যাংকারদের কেউ। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ নীতিনির্ধারক মহলে বিষয়টি এরই মধ্যে জানিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন তারা।

যদিও জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘিরে কোনো সমস্যা দেখছে না নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, দেশে পাঁচ বছর পর পর জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ দেশের মানুষের সবচেয়ে বড় উৎসব হলো জাতীয় নির্বাচনের ভোট। আশা করছি, ব্যাংকের হিসাবায়ন চূড়ান্ত করার দিন এক্ষেত্রে বাধা হবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে সার্কুলার জারি করে হিসাবায়ন চূড়ান্ত করার দিন এগিয়ে আনতে পারে। তিনি বলেন, নির্বাচনে ভোটগ্রহণের জন্য সারা দেশে প্রায় সাত লাখ প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসার নিয়োগ দিতে হবে। দেশের সব উপজেলার ব্যাংকারসহ সরকারি কর্মকর্তারা এক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করবেন। কোনো উপজেলায় সরকারি কর্মকর্তা দিয়ে ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তার পদ পূর্ণ না হলে বেসরকারি কর্মকর্তাদেরও নিয়োগ দেয়া হবে।

ব্যাংকের হিসাবায়ন চূড়ান্ত করার দিন এগিয়ে আনার মধ্যেও সমাধান দেখছেন না ব্যাংকাররা। ২০১৮ সালের দিনপঞ্জিকাও দিচ্ছে একই ধরনের তথ্য। ২২ ডিসেম্বর শনিবার সরকারি ছুটি দিয়ে শুরু হবে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ। ২৩ ও ২৪ ডিসেম্বর কর্মদিবসের পর ২৫ ডিসেম্বর মঙ্গলবার বড়দিন উপলক্ষে সরকারি ছুটি। এরপর ২৬ ও ২৭ তারিখ বুধ ও বৃহস্পতিবার অফিস খোলা থাকবে। তবে নির্বাচনের আগের দিন ২৮ ও ২৯ তারিখ শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটি। ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন হলে ৩১ ডিসেম্বর ‘ব্যাংক হলিডে’ উপলক্ষে ব্যাংকের সব ধরনের লেনদেন বন্ধ থাকবে। এ হিসাবে ব্যাংক কর্মকর্তারা বার্ষিক হিসাবায়ন চূড়ান্ত করার জন্য সময় পাবেন ২৬ কিংবা ২৭ ডিসেম্বর। কিন্তু ওই দুদিন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যাংকাররা ব্যস্ত থাকবেন নির্বাচনী প্রশিক্ষণ গ্রহণ, জেলা প্রশাসক, রিটার্নিং অফিসার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে ছোটাছুটি নিয়ে।

তাহলে ব্যাংকের হিসাবায়ন কীভাবে সম্ভব হবে, এমন প্রশ্ন তুলে রাষ্ট্রায়ত্ত একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বণিক বার্তাকে বলেন, ব্যাংকাররা গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা আদায় ও হিসাবায়নের মাস হিসেবে ডিসেম্বরকে বিবেচনায় রাখেন। বছরের শেষ মাসের শেষ সপ্তাহে ব্যাংকারদের দিন-রাত কাজ করতে হয়। এ অবস্থায় জাতীয় নির্বাচনের জন্য শেষ সপ্তাহ ব্যয় করতে হলে ব্যাংকগুলোর জন্য সমস্যা তৈরি হবে। তাছাড়া হিসাবায়ন চূড়ান্ত করার দিন এগিয়ে কিংবা পিছিয়ে দিয়েও সমস্যার সমাধান দেখছি না। কারণ ব্যাংকের শাখা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সিংহভাগকে পুরো সপ্তাহ নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকতে হবে। ভোটের পরদিন ৩১ ডিসেম্বর পরিস্থিতি কেমন থাকে, তাও বলা যাচ্ছে না।

৩০ ডিসেম্বর থেকে ব্যাংকের হিসাবায়ন এক-দুদিন এগিয়ে আনা সম্ভব নয় কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বলেন, ২৮ ও ২৯ ডিসেম্বর শুক্র ও শনিবার। এ অবস্থায় ২৭ ডিসেম্বর হিসাবায়ন চূড়ান্ত করা যায়। কিন্তু সমস্যা হলো, ২৮ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা চারদিন ব্যাংকিং লেনদেন বন্ধ রাখতে হবে। এছাড়া ২০১৮ সালের সব লেনদেনের হিসাব এ বছরের আর্থিক প্রতিবেদনেই অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী এটিই প্রথা হিসেবে চলে আসছে।

বিষয়টি সমাধানে হিসাবায়নের দিন এগিয়ে আনা যেতে পারে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের ভোট দেশের বৃহৎ কর্মসূচি। এজন্য ব্যাংকারদের ছাড় দেয়ার মানসিকতা নিয়ে প্রস্তুত থাকতে হবে। হিসাবায়নের দিন এগিয়ে আনা যেতে পারে। বিষয়টি নিয়ে অন্য কোনো ভাবনার কথা আমার জানা নেই।

দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করছে বাংলাদেশ ব্যাংকের তফসিলভুক্ত ৫৯টি বাণিজ্যিক ব্যাংক। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রধান চারটি বাণিজ্যিক ব্যাংকে কর্মরত ৪৮ হাজার ৩৩১ জন। সবচেয়ে বেশি ১৮ হাজার ১৬৭ রয়েছেন সোনালী ব্যাংকে। এছাড়া জনতা ব্যাংকে ১১ হাজার ৮৭৬, অগ্রণী ব্যাংকে ১২ হাজার ৭৯৮ ও রূপালী ব্যাংকে ৫ হাজার ৪৯০ জন ব্যাংকার কর্মরত। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সাড়ে ১১ হাজার কর্মকর্তা রয়েছেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডে। অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক মিলিয়ে দেশের ব্যাংকিং খাতে কর্মরত প্রায় দুই লাখ জনবল। আগামী ৩০ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা (প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসার) হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের অফিসার, সিনিয়র অফিসার ও প্রিন্সিপাল অফিসারদের। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দিতে পারবে দেশের বেসরকারি ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তাদেরও। ভোটার হিসেবে অন্য ব্যাংকাররা পাড়ি দেবেন নিজ নিজ এলাকায়।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২-এর ৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তা অর্থাৎ প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসার নিয়োগের জন্য রিটার্নিং অফিসার একটি প্যানেল প্রস্তুত করবেন। রিটার্নিং অফিসার তার অধীন নির্বাচনী এলাকা বা জেলায় স্থাপিত সব সরকারি অথবা বেসরকারি অফিস, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার প্রধানদের কাছে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা-কর্মচারীর লিখিত তালিকা সরবরাহের নির্দেশ দেবেন। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার তালিকা থেকে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে একজন প্রিসাইডিং অফিসার ও প্রতি ভোটকক্ষে একজন সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও দুজন পোলিং অফিসার নিয়োগ দেবেন।

  • কার্টসিঃ বনিকবার্তা/নভেম্বর ১৭,২০১৮ 

Scrutinising election officials

EDITORIAL

Isn't the police acting beyond its writ?


That the police is gathering background information about potential polling officials, who would oversee the forthcoming election, and their families, is surprising. The move is not only an overstretch of responsibility of the police, it has also caused discomfort among these officials.

We understand that the Election Commission has sent no instruction to the police to do so. Yet, the local police in many districts have gone about obtaining the list of probable polling officers and launched inquiry into their personal backgrounds including their political affiliation.

As explained by Rafiqul Islam, one of the election commissioners, to Prothom Alo, it is not the police's responsibility to seek such information. It is the exclusive right and authority of the returning officer to appoint public officials as polling officers.

We wonder why the police is carrying out such unauthorised query. What has prompted the police to do this on a priority basis? The fact that the police in many parts of the country is doing the same job suggests it's being coordinated. We are, therefore, curious about the purpose of this exercise.

Given its obscure nature, such informal investigation must be halted for the sake of a credible election devoid of administrative influence. All actions related to the election should be under the order of the officials appointed by the EC. The EC should instruct the police to refrain from devoting time and resources to something beyond its purview.

  • Courtesy: The Daily Star/ Nov 18, 2018

Polls situation in Bangladesh worrisome — Say US rights activists

US rights activists criticised the current human rights and political situation in Bangladesh and expressed worries about the treatment of religious minority groups and children before the upcoming national election. It came at a discussion styled the “Elections and Human Rights in Bangladesh” held in Washington, DC on Thursday where several panelists from right bodies, political analysts and experts spoke on various critical issues and challenges ahead of the polls.

Taking part in the discussion, John Sifton, Asia advocacy director, Human Rights Watch (HRW), said there was no reason to think that the elections would be conducted in a free or fair atmosphere as many opposition leaders have been jailed amid a slew of politically motivated cases filed against opposition supporters. 

He said the authorities had also violated international standards on freedom of speech and expressed concern about the newly enacted Digital Security Act that could further curtail freedom of expression.

Sifton urged the Congress to communicate its concern on the crackdowns and convey the message that it will have no choice but to impose restrictions on future US-Bangladesh military-to-military ties and assistance, and possibly impose new penalties on the economic front.

Members of Congress should also consider recommending that the State Department report to them about those Bangladesh government security officials implicated in gross human rights abuses and to impose targeted economic sanctions, and travel and banking restrictions, on them.

Waris Husain, South Asia policy analyst at the US Commission on International Religious Freedom, in his speech, highlighted the past attacks on minority groups during election period and stressed the need for additional protection and assurances from political leaders that this would not happen during the 2018 election.

Laura Bramon, Senior Program Manager for Child Protection and Education, International Programs Group, while speaking about the upcoming election, said political violence remains a grave, cyclical danger for Bangladeshi children.

“We have seen great progress in Bangladesh, but there is still work to be done and the US plays a crucial role in leading this work. The US should continue these efforts to provide leadership and coordination around ending violence against children,” he added.

Former US Ambassador Marica Bernicat also attended the programme.

  • Courtesy: The Daily Star/ Nov 18, 2018

‘নির্বাচন কমিশনারের পক্ষে এ ধরনের কথা বলা অত্যন্ত গর্হিত কাজ’


একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাস দেড়েক আগে নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম গতকাল (১৬ নভেম্বর) বলেছেন, ‘পৃথিবীর কোনো দেশে শতভাগ সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না, বাংলাদেশেও হবে না। নির্বাচন কমিশন একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করবে। যেটা সব প্রশ্নের ঊর্ধ্বে থাকবে।’

প্রায় একই রকমের কথা কয়েকমাস আগে বলেছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। অন্য কমিশনাররা তখন এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। এখন আরেক কমিশনার আবার বললেন। নির্বাচন কমিশনার হয়ে একথা তারা বলতে পারেন কিনা বা কেন বলছেন?

এ বিষয়ে আজ দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেছেন দেশের চার জন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, ‘একজন নির্বাচন কমিশনারের পক্ষে এ ধরনের কথা বলা অত্যন্ত গর্হিত কাজ। তারা তো বলবেন যে, আমরা শতভাগ সুষ্ঠু নির্বাচন করার আপ্রাণ চেষ্টা করব। নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না, একথা বলাটা একেবারেই অযাচিত ও অবিবেচনাপ্রসূত।’

পূর্বে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছ থেকেও প্রায় একই ধরনের বক্তব্য আসার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তারা আগে থেকেই অজুহাত তৈরি করে রাখছেন। যাতে নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে বলতে পারেন, আমরা তো আগেই বলেছিলাম। ছেলেমানুষি ব্যাপার হয়ে গেল একদম।’

‘নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না, কোথাও কোনো অনিয়ম হবে না- এমন নিশ্চয়তা নেই, নির্বাচন কমিশনারদের কেউই এসব কথা বলতে পারেন না।’ ভাষ্য হাফিজউদ্দিনের।

নির্বাচন কমিশনের বর্তমান ভূমিকার প্রেক্ষাপটে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন কি না? প্রশ্নের জবাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের অতীত রেকর্ড তো ভালো না। সে কারণে এখনও আস্থাশীল হতে পারছি না। এখন দেখা যাক- নির্বাচন কমিশন তার দায়িত্ব সম্পর্কে কতটুক সচেতন, কীভাবে তারা পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনা করেন।’

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আরেকজন সাবেক উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘আমার মনে হচ্ছে, এটি নির্বাচন কমিশনারদের কিছুটা দায়িত্ব-জ্ঞানহীন আচরণ। এ ধরনের বক্তব্যে দুটি অর্থ থাকে। একটি হচ্ছে ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা- নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অনেক সমস্যা থাকে, শেষ পর্যন্ত শতভাগ সুষ্ঠু হয় কী না। আর একটি হচ্ছে অভিপ্রায়- শতভাগ সুষ্ঠু নির্বাচন করার প্রচেষ্টা। কিন্তু, এই বক্তব্যে এক ধরনের অভিপ্রায়ের ঘাটতি আছে। ওনাদের তো একমাত্র বলা উচিত যে, শতভাগ বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের জন্য আমরা শতভাগ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখব।’

‘একজন বিশ্লেষক বা বাইরের একজন এই কথা বলতে পারেন। কিন্তু সাংবিধানিক পদমর্যাদার একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এ ধরনের বক্তব্য দিতে পারেন না। নির্বাচন কমিশনারদের দায়িত্ব হলো দুই পর্যায়ের। একটি হচ্ছে- তারা সবকিছু পর্যবেক্ষণ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। আর একটি হলো- নির্বাচনকে সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য বিশ্বাস অটুট রাখবেন। কিন্তু, এ ধরনের বক্তব্য এই দুটি পর্যায়কেই সমানভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে’ মন্তব্য করেন তিনি।

এর আগেও, নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকে এ ধরনের বক্তব্য এসেছে উল্লেখ করে হোসেন জিল্লুর বলেন, ‘গতকাল কবিতা খানম যা বলেছেন, তা আমাদের জন্য বিশেষভাবে বিরক্তির কারণ। কারণ- নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব কেবল প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনই নয়। অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য তাদের সক্ষমতাও প্রদর্শন করতে হবে। কিন্তু, তার আগেই তাদের বক্তব্যে যদি একটি বিশেষ অভিপ্রায়ের বহিঃপ্রকাশ দেখা যায়, তাহলে এটি দুর্ভাগ্যজনক। এর জন্য তাদের অনুশোচনাবোধে ভোগা উচিত।’

এতদসত্ত্বেও নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা রাখার ব্যাপারে প্রশ্নের জবাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা বলেন, ‘ইতিমধ্যে একটি আস্থাহীনতার জায়গা থেকে পুরো বিষয়টি এগুচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা যদি নাও থাকে, তারপরেও জন আকাঙ্ক্ষার যে চাপ আছে, সেই প্রেক্ষাপটে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হওয়ার কিছুটা হলেও সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। যেহেতু রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে অংশ নিতে এগিয়ে এসেছে, সেহেতু নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হচ্ছে সবার জন্য সমান সুযোগের ব্যবস্থা করা এবং প্রকাশ্য ঘোষণার মাধ্যমে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন পরিচালনার অভিপ্রায় পুনর্ব্যক্ত করা।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনারের পদে আসীন থেকে তিনি একথা বলতে পারেন না। উনি তো উল্টো বলতে পারতেন যে, শতভাগ সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন অঙ্গীকারবদ্ধ।’

তিনি বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এগিয়ে আসছে। এমন এক ক্রান্তিলগ্নে একজন নির্বাচন কমিশনারের কাছ থেকে এ ধরনের বক্তব্য আসলে তাতে বিভ্রান্তির জন্ম হয়। নির্বাচন কমিশন যদি আগেভাগেই বুঝেতে পারে যে, নির্বাচন শতভাগ সুষ্ঠু হওয়ার সম্ভাবনা নেই; তারপরও তা স্বীকার করাটা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।’

‘কিন্তু নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা ছাড়া নির্বাচন কমিশনের আর কোনো বিকল্প নেই। সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন যেসব বিষয়কে সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করবে, সেসব নিয়ে তারা অভ্যন্তরীণ আলোচনা অব্যাহত রাখতে পারে। এর থেকে উত্তরণে সরকার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, রাজনৈতিক দল এবং সর্বোপরি দেশের জনগণের সহযোগিতা চাইতে পারে। কিন্তু তারা নির্বাচনী কর্মকর্তাদের নির্বাচন পরিচালনা সংক্রান্ত কি কি দিক নির্দেশনা দেবেন, তা কেন প্রকাশ্যে আসবে?’ প্রশ্ন রাখেন মনজুরুল।

‘এখন থেকেই নির্বাচন কমিশনের এসব বিষয়ে নেতিবাচক কথা বলা উচিত নয়। নির্বাচন পরিচালনা সংক্রান্ত দিক নির্দেশনামূলক বৈঠকে গণমাধ্যমকে ডাকা উচিত নয়। কারণ- নির্বাচন কমিশন কোনো “ননসেন্স অর্গানাইজেশন” নয়। নির্বাচন শতভাগ সুষ্ঠু হবে না, নির্বাচনে অনিয়ম ঠেকানোর নিশ্চয়তা দেওয়া যাবে না, এসব বাহানা দেওয়াও ঠিক না’ মন্তব্য করেন তিনি।

অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘যদি বলতেই হয়, নির্বাচন কমিশনারদের বলা উচিত যে, শতভাগ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আমরা দুই শতভাগ প্রস্তুত আছি। তাহলেই নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা থাকবে, অন্যথায় নয়।’

নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘আমার কাছে ব্যাপারটি খুব অদ্ভুত মনে হয়েছে। বাস্তবতার নিরিখে অনেক কিছু করা সবসময় সম্ভব হয় না। কিন্তু আপনি যখন দায়িত্বে থাকবেন, তখন আপনাকে তো শতভাগ চেষ্টা করতে হবে। কিন্তু এটি বলে দেওয়া তো ঠিক না, শতভাগ সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক সংস্থা। তাদের যা দরকার সবই দেওয়া হচ্ছে। নির্বাচনের আগে এ ধরনের কথা বললে তো বিভ্রান্তির সৃষ্টি হবে। এর কারণে মানুষের মধ্যে বড় ধরনের ভুল বোঝাবুঝি ও হতাশার সৃষ্টি হবে।’

‘নির্বাচন কমিশনারদের তো বলা উচিত ছিল, যেকোনো মূল্যে আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন করব। এক্ষেত্রে সবার সহযোগিতা চাই। প্রশাসন, রাজনৈতিক দল, গণমাধ্যম সবার সহযোগিতা চাইবেন তারা। তারা আগে থেকেই হাল ছেড়ে দেবেন কেন?’ প্রশ্ন ড. তোফায়েলের।

এর আগে, গত ৭ আগস্ট পাঁচ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বলেছিলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনে কোথাও কোনো অনিয়ম হবে না, এমন নিশ্চয়তা দেওয়ার সুযোগ তার নেই।’

এ বিষয়ে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘যুদ্ধের আগেই তারা পরাজয় বরণ করছেন কেন? এতে তো নৈতিকতা দুর্বল হয়ে যায়। যারা নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করেন, তারা তো অনেক ঝুঁকি নিয়ে কাজটি পরিচালনা করেন। নির্বাচনী কর্মকর্তাদের সুরক্ষার বিষয়টি তো নিশ্চিত করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। কিন্তু এরকম যদি হয়, একজন নির্বাচনী কর্মকর্তাকে কেউ হুমকি দিল বা লাঞ্ছিত করল, সেক্ষেত্রে আপনি তার সুরক্ষা না দিয়ে বললেন যে এমনটি তো হবেই। তাহলে তো কেউ আর নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে আগ্রহী হবেন না।’

‘আমি সেদিক থেকেই বলতে চাই, নির্বাচন কমিশনের বুঝতে হবে যে সে যুদ্ধে নেমেছে। সাংবিধানিকভাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনার জন্যই নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়। নির্বাচন কমিশনের পাঁচ বছরের মেয়াদে এটিই হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। বাকিগুলো কিন্তু অতিরিক্ত দায়িত্ব। জাতীয় সংসদ নির্বাচন তাদের দায়িত্ব এবং এটিকে সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করাই হলো তাদের জন্য মরণপণ যুদ্ধ। এখানে যদি তারা নির্বাচন শুরু হওয়ার আগেই বলে দেয় যে, সুষ্ঠু হবে না। তাহলে তো নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বে তাদের থাকাই উচিত না। তাদের সবারই পদত্যাগ করা উচিত। যারা অনিয়ম ঠেকাতে পারবে, সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনা করতে পারবে, তাদেরই নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বে থাকা উচিত’ মন্তব্য তোফায়েল আহমেদের।

  • Courtesy: The Daily Star /Bangla online/ Nov 18, 2018

EC must reshuffle administration to make it neutral

EDITORIAL

THE Election Commission’s having no plans to reshuffle the field administration in view of the next general elections, posted for December 30, comes to be worrying. This is because the administration, both civil and police, which has until the announcement of the elections schedule been laid out by the incumbents, especially in the upper rungs, can have partisan influence in the line of the incumbents on the holding of the elections. The incumbents, like the incumbents in the past, this time to have laid out the field administration they way they wanted to get some advantage in the elections over the political parties and alliances that have so far been outside power. People in the field administration have been promoted, given incentives and transferred to their advantage. In a situation like this, only another reshuffle, effected by the Election Commission, can undo, to whatever degree possible, the existing layout of the administration to make elections as much neutral, and fair, as possible. Such a reshuffle is more important in the absence of any election-time, party-neutral government. A move of the Election Commission not to bring about any changes in the field administration is, thus, worrying.

The Election Commission on November 9, a day after it had announced the elections schedule, appointed, as what happens, deputy commissioners of the 64 districts and two divisional commissioners returning officers and all the upazila nirbahi officers assistant returning officers. The deputy commissioners, who work as district magistrates, are appointed more on partisan considerations than on merit, which makes it likely that they will be working along a partisan line during the conduction of the elections. Besides, the government, as records of the public administration ministry show, appointed deputy commissioners to 36 districts between July 31 and October 15. 

The government on November 7 also promoted 235 additional superintendents of police to the rank of the superintendent of police. And when the cabinet is, up to now, meant to work during the elections, the field administrations might well work so that the incumbents get some benefits. It is, therefore, incumbent on the Election Commission to bring about changes in the administration where it needs to undo the layout that might be tilted to favour the incumbents in a partisan manner. The commission, in fact, should bring about the changes in the field administration even if to prove its worth and dispel any confusion that people might have about the commission being partisan.

The Election Commission has, worryingly, so far displayed an attitude that appears to be partisan towards the incumbents. It has not so far taken any step against the incumbents for violating the electoral code of conduct, evidenced in holding marches during nomination paper sales, pasting bills on roadside walls and the announcement of incentives for half a million non-government teachers. Such inaction, as well as unwillingness, of the Election Commission is antithetical to ensuring a level playing field for the political parties and alliances in the electoral fray barring which they may opt out. The commission, in such a situation, must undo how the incumbents have laid out the field administration.

  • Courtesy: New Age /Nov 18, 2018

Reza Kibria to contest polls on JOF ticket

Reza Kibria, son of former finance minister Shah AMS Kibria and former advisory committee member of Awami League, has decided to participate in the forthcoming parliamentary elections on the ticket of newly formed opposition alliance Jatiya Oikya Front. 

The AL’s main arch-rival Bangladesh Nationalist Party is the key ally of JOF that was formed on October 13 to press for holding a free, fair and credible election.

Gonoforum president Dr Kamal Hossain, who was also the chairman in the committee formed after the liberation war to write the country’s constitution, leads JOF. Reza joined Gonoforum on Friday afternoon. 

Contacted on Saturday evening, economist Reza Kibria told New Age that it was confirmed that he was going to contest the polls on the JOF ticket.
Explaining reason for joining a new political alliance leaving the ruling AL, Reza said that he did not agree with the way the AL was ruling the country for nine years and a half. ‘This is the main reason for my joining the AL’s opposition ally,’ he said.

About the death of his father Kibria in a grenade attack during the regime of BNP-Jamaat government, Reza said it was one of his personal grievances that AL could not conduct a proper investigation into the grenade attack in nine years and BNP also failed to do the job in two years when it was in the power.

‘You know, I never mentioned the name of any political party or alliance in the past as the killer of my father. I just wanted that a proper investigation be run into the incident and people involved in the grenade attack be identified,’ he claimed. 

‘The AL-led government failed to identify the attackers even in its two tenures. So, you tell me to whom the blame now goes,’ Reza asked.

Mentioning that bring change in running the government is essential to establish good governance, Reza hoped that fulfilling the expectation would be possible under the leadership of prominent personality like Kamal Hossain. 

Former finance minister Kibria was elected from Habiganj-3 constituency (Sadar-Lakhai upazilas) in 1996 as an AL nominated candidate. 

Reza told New Age that he was interested to contest for the Habiganj-1 constituency (Nabiganj-Bahubal) to work for development of his birthplace. He has born in village Jalalsap at Devpara union under Nabiganj in the district. 
Kibria, his nephew Shah Manzurul Huda and three local AL leaders — Abdur Rahim, Abul Hossain and Siddeq Ali — were killed and more than 50 were injured in a grenade attack on a rally held at Baidyer Bazar under sadar upazila in Habiganj on January 28, 2005.

  • Courtesy: New Age/ Nov 18, 2018

আইনের যথাযথ প্রয়োগ চাই — ঋণখেলাপিদের প্রার্থিতা

সম্পাদকীয়

১৯৭২ সালের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) ঋণখেলাপি ও বিলখেলাপিদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা ছিল, তা সেই সময়ে যতটা না প্রয়োজনীয় ছিল, এখন তার চেয়ে অনেক বেশি জরুরি। এ কারণে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২-এর অনেক কিছু সংশোধন করা হলেও সংশ্লিষ্ট ধারা কেউ বাতিল করতে পারেনি। কিন্তু ঋণখেলাপি ও বিলখেলাপিরা নানা কারসাজি করে আইনটি পুরোপুরি অকেজো করতে পদে পদে বাধা সৃষ্টি করে চলেছেন।  

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর এই মহলটি ফের তৎপর হয়ে উঠেছে। আইনানুযায়ী কেউ নির্বাচনে প্রার্থী হতে চাইলে তঁাকে ব্যাংকঋণ নিয়মিতকরণ করতে হবে, যার শর্ত হলো মোট ঋণের অন্তত ১০ শতাংশ শোধ করা। ১৯৭২ সালের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে বলা হয়েছিল, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার অন্তত সাত দিন আগে ঋণ পুনঃ তফসিল করতে হবে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন সেটি সংশোধন করে ঋণখেলাপিদের কিছুটা ছাড় দিয়েছে। প্রার্থীর ব্যক্তিগত ঋণ ও বিলের ক্ষেত্রে সাত দিনের সময়সীমা ঠিক রাখলেও প্রতিষ্ঠানের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগের দিন পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে রাঘববোয়াল ঋণখেলাপিদের প্রায় সবাই ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ নিয়েছেন।

আইনগত এই ছাড় সত্ত্বেও খেলাপি ঋণগ্রহীতারা ঋণ পরিশোধ না করে ঋণ আদালতে মামলা ঠুকে নির্বাচনী বৈতরণি পার হয়ে যান। অন্য সময় এ নিয়ে দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের সুযোগ থাকলেও তফসিল ঘোষণার পর সেটি থাকে না। ঋণপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো অসহায়। যে উদ্দেশ্যে এই আইন প্রণয়ন করা হয়েছে, তা-ই ভেস্তে যায়। পত্রিকার খবর থেকে জানা যায়, তফসিল ঘোষণার পর অনেক ঋণখেলাপি মনোনয়ন পাওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ ও বিএনপি অফিসে ধরনা দিচ্ছেন, অনেকে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন ও জমা দিয়েছেন। এরপরই নিশ্চয় তাঁরা নিজ নিজ পছন্দের দল থেকে মনোনয়ন বাগিয়ে নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাইবেন।

বাংলাদেশের যেকোনো নাগরিকের অধিকার আছে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার। কিন্তু সেটি কোনোভাবেই ১৯৭২ সালের আরপিওকে অগ্রাহ্য করে নয়। নির্বাচন কমিশন গণপ্রতিনিধিত্ব আইন সংশোধন না করলে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার আগেই হয়তো ঋণখেলাপিরা ঋণ পুনঃ তফসিল করতেন। এরপর তাঁরা মনোনয়ন না পেলেও ঋণের একাংশ শোধ হতো। এখন ওই ঋণখেলাপিরা শেষ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন। একটা কথা বলা হয়, রাজনীতি এখন ব্যবসায়ীরা নিয়ন্ত্রণ করছেন। আইনের সংশোধনী দেখে এ কথা মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে যে তঁাদের হাত নির্বাচন কমিশন পর্যন্ত পৌঁছেছে।

আমাদের উদ্বেগের কারণ হলো তফসিল ঘোষণার পর যাঁরা বিভিন্ন দলের মনোনয়ন পাওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন, তঁাদের মধ্যে হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণগ্রহীতা থেকে শুরু করে জাতীয় সংসদে প্রকাশিত শীর্ষ ১০০ খেলাপির তালিকারও কেউ কেউ আছেন। তাঁরা পুনঃ তফসিলের নামে খেলাপি ঋণের এক–দশমাংশ জমা দিলেও পরবর্তীকালে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে যে ব্যাংকগুলো থেকে আরও অনেক বেশি ঋণ হাতিয়ে নেবেন, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।

দুর্ভাগ্য, নির্বাচনী ইশতেহারে সব দলই আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার গালভরা বুলি আওড়ালেও নির্বাচিত হওয়ার পর রাজনৈতিক দল সেটি বেমালুম ভুলে যায়। এই ভুলে যাওয়ার রাজনৈতিক সংস্কৃতি যত দিন থাকবে, ঋণখেলাপিদের হাতে দেশের অর্থনীতি ও জনগণ তত দিন জিম্মি থাকবে।

এসব হতাশা ও তিক্ত অভিজ্ঞতার পরও আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, কোনো খেলাপি ঋণগ্রহীতা যাতে আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে প্রার্থী হতে না পারেন, সে বিষয়ে কমিশন সজাগ দৃষ্টি রাখবে। বিলখেলাপিদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।

  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ ১৮ নভেম্বর ২০১৮ 

আ.লীগের নেতা ও সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ছেলে ঐক্যফ্রন্টে!


সাবেক অর্থমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ছেলে অর্থনীতিবিদ রেজা কিবরিয়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হতে চান। তিনি হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনে প্রার্থী হতে গণফোরামে যোগ দিয়েছেন। শাহ এ এম এস কিবরিয়া ২০০১ সালে হবিগঞ্জ-৩ (হবিগঞ্জ সদর-লাখাই) আসনের সাংসদ ছিলেন।

আওয়ামী লীগের রাজনীতি ছেড়ে তিনি ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী কেন হলেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে রেজা কিবরিয়া আজ শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগ ১০ বছর ধরে যেভাবে দেশ পরিচালনা করছে, তার সঙ্গে তিনি একমত নন। তাঁর আদর্শের সঙ্গে মিল নেই। তিনি বলেন, ‘আমার বাবা শাহ এ এম এস কিবরিয়া ও আওয়ামী লীগপ্রধান শেখ হাসিনা যে আদর্শ লালন করতেন, আওয়ামী লীগ এখন সেই জায়গায় নেই।’

বাবাকে ২০০৫ সালে হত্যার পর বিএনপির সরকারের সময় এবং পরবর্তীকালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বিচার করা হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকারের ১০ বছরেও এ মামলার সুষ্ঠু তদন্ত বা বিচার করার কোনো উদ্যোগ নেয়নি দলটি।

রেজা কিবরিয়া আরও বলেন, ‘কী কারণে আওয়ামী লীগ সরকার উদ্যোগ নেয়নি, তা দেশের মানুষ আন্দাজ করতে পারছেন। মামলার আংশিক তদন্তকাজ করে তারা আমাদের জোর করে এ তদন্ত মেনে নেওয়ানোর চেষ্টা করে। এমনকি মামলার বাদী সাংসদ আবদুল মজিদ খান আমার মাকে ধমক দিয়ে বলেছিলেন, এ তদন্তই মেনে নিতে হবে। তিনি আমার মাকে এ ধমক দেওয়ার সাহস কোথা থেকে পান?’ রেজা কিবরিয়া দেশবাসীর উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘এবার দেশের মানুষ বলুক, আওয়ামী লীগের প্রতি আমার আনুগত্য থাকা উচিত কি না?’

এই অর্থনীতিবিদ বলেন, গণফোরামের সভাপতি ও ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। তিনি হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনে নির্বাচন করবেন। 

রেজা কিবরিয়া আরও বলেন, ‘আমার বাবার স্বপ্ন ছিল হবিগঞ্জ-১ আসনে নির্বাচন করার। আমি সেই স্বপ্ন এবার বাস্তবায়ন করতে চাই। কারণ, এলাকাটি অবহেলিত একটি জনপদ। এলাকার মানুষের জীবনমানে গুণগত পরিবর্তন আনতে চাই। এখানের মানুষ চায় না রুগ্‌ণ কোনো চেহারা বারবার আসুক।’

রেজা কিবরিয়া বলেন, তিনি ও তাঁর বাবা জাতিসংঘে কাজ করেছেন। তবে দেশের জন্য তাঁদের অন্য রকম ভালোবাসার টানে দেশ ছেড়ে অন্য কোথাও স্থায়ী হননি। তিনি সাংসদ হলে নবীগঞ্জ-বাহুবল এলাকাকে দেশের অন্যতম এলাকা হিসেবে গড়ে তুলবেন বলে জানান।

  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ ১৮ নভেম্বর ২০১৮ 

Saturday, November 17, 2018

একাদশ সংসদ নির্বাচন — পুলিশের ফোনে বিব্রত নির্বাচন কর্মকর্তারা


একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও পোলিং কর্মকর্তাদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করছে পুলিশ। বিশেষ করে তাঁদের বর্তমান ও অতীত রাজনৈতিক অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন।

ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগের নীতিমালা অনুযায়ী, সরকারি ও আধা সরকারি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মকর্তারা প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পেয়ে থাকেন। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে জেলা প্রশাসন থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চিঠি দিয়ে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের তালিকা চাওয়া হয়। সেই তালিকা থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তা চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করেন। কিন্তু পুলিশ এভাবে তথ্য সংগ্রহ করতে পারে না।

পুলিশের এই তৎপরতা সম্পর্কে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, যেদিন তফসিল ঘোষিত হয়েছে, সেদিনই ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি বিশেষ কোনো দলের সঙ্গে জড়িত থাকলে তাঁকে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যাবে না। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার রিটার্নিং কর্মকর্তার। পুলিশের ভূমিকা রাখার কোনো সুযোগ নেই। ইসি নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিদের বিষয়ে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করে না। এ বিষয়ে ইসি থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কোনো ধরনের নির্দেশনা দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।

গতকাল শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত অন্তত চারটি জেলা থেকে পুলিশের পক্ষ থেকে এ ধরনের তথ্য সংগ্রহের খবর পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে প্রথম আলোর সংশ্লিষ্ট এলাকার নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর —  

গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলায় গত দুই সপ্তাহে পুলিশের ফোন পেয়েছেন এমন ১০ জন প্রথম আলোকে জানান, পুলিশ তাঁদের নাম-ঠিকানা, জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, আগে কখনো নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করেছেন কি না—এসব জানতে চেয়েছেন। কারও স্বামী বা পরিবারের অন্য কেউ রাজনীতি করেন কি না, জানতে চেয়েছেন। জানতে চাওয়া হয়েছে নিজেদের বর্তমান ও অতীত দলীয় পরিচয় সম্পর্কেও। এই ১০ জনের বেশির ভাগই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষিকা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশের এমন তৎপরতা তাঁদের জন্য বিব্রতকর। এর ফলে তাঁদের নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের আগ্রহ কমে গেছে। ঘাঘুটিয়া চালা উচ্চবিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বলেন, স্কুলের শিক্ষকদের অনেকেই বলছেন, তাঁদের থানা থেকে ফোন দিয়েছে। রাজনৈতিক পরিচয়সহ অন্যান্য তথ্য জানতে চাওয়ায় সংশয়ে আছেন তাঁরা। ভুলেশ্বর হাফিজ উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বলেন, তাঁদের কাছে থানা থেকে ফোন দেওয়া হয়েছে। তাঁদের বিস্তারিত তথ্যসহ কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তাঁরা জড়িত কি না, জানতে চাওয়া হয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাকে ফোন দিয়ে বারবার জানতে চাইছে, আমি কোন দল করি। আমি কিছু বলিনি। পরে বাধ্য হয়ে ফোন কেটে দিয়েছি।’ একই রকম প্রতিক্রিয়া জানান একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক।

এ ব্যাপারে গাজীপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. তারিফুজ্জামান বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের নির্দিষ্ট ছক অনুযায়ী আমরা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে চিঠি পাঠাই। সে অনুযায়ী তারা তালিকা পাঠায়। তারপর প্যানেল গঠন করে সেখান থেকে আমরা নিয়োগ দিই।’ পুলিশকে এ ধরনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা সম্পূর্ণ রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব। পুলিশকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।

গাজীপুরের পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রিসাইডিং কর্মকর্তা কে হবেন, না হবেন এ ব্যাপারে আমরা কিছুই জানি না। আর এসব বিষয়ে এখনো জেলা প্রশাসন থেকে কোনো নির্দেশনা আসেনি।
গাজীপুরের জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ন কবির বলেন, রাষ্ট্রের প্রয়োজনে যে কারও বিষয়ে গোয়েন্দা কার্যক্রম চালানো যায়। এটা আইনগতভাবে বৈধ। তবে এসব তথ্য সংগ্রহের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের তরফে কাউকে লিখিত আদেশ দেওয়া হয়নি।

ময়মনসিংহ

ময়মনসিংহ-৯ (নান্দাইল) আসনের ১১৫টি ভোটকেন্দ্রে সম্ভাব্য দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাচনী কর্মকর্তাদের তথ্য সংগ্রহ করছে পুলিশ। তাঁদের কয়েকজন প্রথম আলোকে বলেন, আগের নির্বাচনগুলোতে এ ধরনের তথ্য চায়নি পুলিশ। প্রায় এক মাস ধরে এ ধরনের তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে।

এ বিষয়ে নান্দাইল মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম গতকাল বলেন, ‘নির্বাচন অফিস থেকে আমাদের কাছে তালিকা পাঠানো হয়েছে। তালিকায় নির্বাচন কর্মকর্তাদের নাম থাকলেও তাঁদের বাবার নাম ও ঠিকানা অসম্পূর্ণ। পুলিশ সেসব তথ্য জোগাড় করে দিচ্ছে।’

নান্দাইলের সমূর্ত্ত জাহান মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মাহমুদুল হক বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে আমাদের প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের তালিকা নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে পুলিশ ওই তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের সম্পর্কে নানা তথ্য নিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, তিনি ময়মনসিংহ শহরে থাকেন। সেখানে তাঁর বাড়ি। বিগত নির্বাচনে তিনি এ শহরের ঠিকানা ব্যবহার করে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু এবার পুলিশ তাঁর গ্রামের বাড়িসহ নানা ধরনের তথ্য ছক আকারে সংগ্রহ করেছে। এসব তথ্য আগে কেউ চায়নি।

বেতাগৈর ইউনিয়নের বীরকামটখালি জেবি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল হাকিম বলেন, নির্বাচন অফিসে প্রতিষ্ঠানের লোকবলের তালিকা পাঠানো হয়েছে। তালিকা পাঠানোর পর পুলিশও খোঁজ নিয়েছে। তিনি আর কিছু বলতে রাজি হননি। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছয়টি উচ্চবিদ্যালয়ের কয়েকজন সহকারী শিক্ষক বলেন, অতীতে তাঁরা কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, সে সম্পর্কে তথ্য চেয়েছে পুলিশ। তবে এসব তথ্য বিগত নির্বাচনের সময় তাঁদের দিতে হয়নি।

জানতে চাইলে নান্দাইল মডেল থানার এসআই আবদুস ছাত্তার বলেন, পুলিশ অনেক ধরনের তথ্য সংগ্রহ করছে। ভোটকেন্দ্রের অবস্থান, সেখানে পৌঁছানোর জন্য সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা, বিদ্যুৎ, পানি ও শৌচাগারের ব্যবস্থা ইত্যাদি তথ্য জোগাড় করা হচ্ছে।

নোয়াখালী

নোয়াখালীতে সম্ভাব্য নির্বাচনী কর্মকর্তাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করছে থানার পুলিশ ও জেলা পুলিশের বিশেষ শাখা। কয়েক দিন ধরে চলছে এই কার্যক্রম। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মধ্যে উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। 

তবে জেলা পুলিশ সুপার মো. ইলিয়াছ শরীফ প্রথম আলোকে বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাঠপর্যায়ে দায়িত্ব পালনকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের সম্ভাব্য তালিকা ধরে তথ্য যাচাই করা হচ্ছে। এটি শুধু নোয়াখালীতেই নয়, সারা দেশেই চলছে। এ নিয়ে উৎকণ্ঠার কিছু নেই। 

সোনাইমুড়ী উপজেলার আমিশাপাড়ার খলিলুর রহমান ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক আবুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, কয়েক দিন আগে জেলা পুলিশের বিশেষ শাখা থেকে তাঁকে ফোন করে নাম-ঠিকানা, রাজনৈতিক পরিচয় ও আরও কিছু বিষয় জানতে চাওয়া হয়। অতীতে অনেকবার নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করেছেন, কিন্তু কখনো এভাবে পুলিশ তথ্য যাচাই করেনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সদর উপজেলার একটি বেসরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তাঁকে দুটি থানা থেকে ফোন করা হয়েছে। পারিবারিক নানা তথ্যের পাশাপাশি রাজনৈতিক পরিচয় জানতে চাওয়া হয়েছে। এভাবে রাজনৈতিক পরিচয় জানতে চাওয়া কতটুকু সমীচীন, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। 

জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আইনুল হক বলেন, তাঁরা তালিকা ধরে প্রত্যেক নির্বাচন কর্মকর্তার খোঁজখবর নিচ্ছেন। এটা অতীতেও করা হতো। আতঙ্কিত বা উৎকণ্ঠিত হওয়ার কিছু নেই।

মৌলভীবাজার

মৌলভীবাজার ১ (বড়লেখা ও জুড়ী) ও ২ (কুলাউড়া) আসনের নির্বাচন কর্মকর্তাদের তালিকা ধরে তাঁদের সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেছে পুলিশ। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, কারও মাধ্যমে নির্বাচন যাতে প্রভাবিত না হয়, সে কারণে নিরপেক্ষতা যাচাই করতে এটা করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বড়লেখার তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চারজন শিক্ষক, জুড়ীর তিনজন সরকারি কর্মকর্তা এবং কুলাউড়ার সাতজন শিক্ষক ও সরকারি কর্মকর্তা গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট থানা-পুলিশের কর্মকর্তারা মুঠোফোনে তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় কারও নাম-ঠিকানা সঠিক কি না, আবার কারও কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা আছে কি না, জানতে চাওয়া হয়। তাঁরা বলেন, অতীতে বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করেছেন তাঁরা। কিন্তু এভাবে পুলিশ খোঁজখবর নেয়নি। এবার এর ব্যতিক্রম হওয়ায় তাঁরা চিন্তায় পড়েছেন।

কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা থানা-পুলিশের তিনজন কর্মকর্তা বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তাদের সম্পর্কে তাঁরা তদন্ত করছেন। তাঁদের মধ্যে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা হচ্ছে।

কুলাউড়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু ইউছুফ দাবি করেন, ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তাদের সম্পর্কে আগেও তদন্ত হতো। এখনো হচ্ছে। সারা দেশেই তা চলছে। ভোট গ্রহণকারী কোনো কর্মকর্তার মাধ্যমে যাতে নির্বাচন প্রভাবিত না হয়, সে কারণে নিরপেক্ষতা যাচাইয়ের জন্য এটা করা হচ্ছে। 

তবে পুলিশ সদর দপ্তরের গণসংযোগ বিভাগের সহকারী মহাপরিদর্শক মো. সোহেল রানা প্রথম আলোকে বলেন, ‘কারা এটা করছে এ ব্যাপারে অনুসন্ধানের পর বিষয়টি পরিষ্কার করা হবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আসলে নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে কেউ বা তাঁদের পরিবার বিরোধী দলের মতাদর্শের কি না, সেটা জানার জন্যই পুলিশ এই অপতৎপরতা চালাচ্ছে। এ দেশে অতীতেও পুলিশকে অপকাজে ব্যবহার করা হয়েছে, এখনো হচ্ছে।

সূত্র — প্রথম আলো। লিঙ্ক —   https://bit.ly/2DKDO9z

বাংলাদেশের নির্বাচন ও মানবাধিকার নিয়ে মার্কিন কংগ্রেসের প্রতি কতিপয় সুপারিশ

বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের করণীয় নিয়ে বেশ কিছু সুপারিশ উত্থাপন করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের থিংক ট্যাংক টম ল্যান্টোস হিউম্যান রাইটস কমিশনে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের এই সংকটে ভূমিকা আছে কংগ্রেসের। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিষয়ক পরিচালক জন সিফটন কিছু সুপারিশ তুলে ধরেছেন। ১৫ই নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের টম ল্যান্টোস হিউম্যান রাইটস কমিশনে বাংলাদেশের নির্বাচন ও মানবাধিকার নিয়ে এক শুনানি হয়। তাতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের পক্ষে এসব সুপারিশ তুলে ধরেন জন সিফটন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখনও সঙ্কটময়। তাই চিঠির মাধ্যমে হোক, একপক্ষীয় উপায়ে হোক বা অন্য যেকোনো পদ্ধতিতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা উচিত কংগ্রেস সদস্যদের। তাতে বাংলাদেশকে জানানো উচিত, তারা বাংলাদেশে দমনপীড়ন নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।

তার চেয়েও বড় কথা হলো, বাংলাদেশ সরকারকে আরো পরিষ্কার করে বলে দিতে হবে, তারা যদি ব্যাপক আকারে মানবাধিকারের বিরুদ্ধে দমনপীড়ন অব্যাহত রাখে তাহলে কংগ্রেসের আর কোনো বিকল্প সুযোগ থাকবে না। তারা যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের সেনাবাহিনী-সেনাবাহিনীর ভবিষ্যত সম্পর্ক ও সহযোগিতার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও নতুন শাস্তি আরোপ করার আশঙ্কা আছে। বাংলাদেশের নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা যে মানবাধিকার ভয়াবহভাবে লঙ্ঘনের সঙ্গে যুক্ত থাকার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রিপোর্ট দিয়েছে, তা কংগ্রেস সদস্যদের বিবেচনায় নেয়া উচিত। গ্লোবাল ম্যাগনিটস্কি অ্যাক্টের অধীনে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ও অর্থমন্ত্রণালয়কে তাদের কর্তৃত্ব ব্যবহার করে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে টার্গেটেড অর্থনৈতিক অবরোধ (স্যাংশন) আরোপ করার আহ্বান জানান জন সিফটন। তিনি আরো বলেন, এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে ভ্রমণ ও ব্যাংকিং খাতেও বিধিনিষেধ দেয়ার আহ্বান জানাতে হবে। এক্ষেত্রে একই রকম পদক্ষেপ নিতে অন্য দেশগুলো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে তাদের উৎসাহিত করা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি। 



জন সিফটন তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখনও সঙ্কটময়। দেশটির বর্তমান সমস্যা বুঝতে হলে সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা দ্রুততার সঙ্গে পর্যালোচনা করতে হবে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় রয়েছেন ২০০৯ সাল থেকে। সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছে ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে। ওই নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় এসেছেন শেখ হাসিনা। কিন্তু এটা হয়েছে শুধু তখনই, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন বর্জন করার পর। নির্বাচনের আগে বিরোধীরা প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেছে। তারা চেয়েছিল নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। কিন্তু তাদের সেই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন হাসিনা। এর ফলে তারা নির্বাচন বর্জন করে। ফলে জাতীয় সংসদের অর্ধেক আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয় আওয়ামী লীগ। তারপর থেকে দেশটি কার্যত একদলীয় রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। 

আরো একবার এ বছর ৩০শে ডিসেম্বর জাতীয় সংসদম নির্বাচন। আবারো নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের বিরোধীদলীয় দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে সরকার। তবে এবার বিরোধী দলগুলো নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছে। তারা নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকের আহ্বান জানাচ্ছে, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে। তবে সরকার তাতেও রাজি হচ্ছে না। 

নির্বাচন যে অবাধ ও সুষ্ঠু পরিবেশে হবে এমনটা চিন্তাভাবনা করার কোনো কারণ নেই। গত বছরে কর্তৃপক্ষ বিরোধীদলীয় অনেক সিনিয়র নেতাকে আটক করেছে অথবা জেল দেয়া হয়েছে। বিরোধীদলীয় হাজার হাজার নেতাকর্মী, সমর্থকের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা করা হয়েছে। মিডিয়া ও নাগরিক সমাজের বিরুদ্ধে দমনপীড়ন চালিয়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার যে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড আছে তা লঙ্ঘন করা হয়েছে। বিদেশি তহবিল পাওয়ার ক্ষেত্রে যেসব বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে তার পরিপ্রক্ষিতে মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপগুলো রয়েছে চাপে। সরকারের বিরুদ্ধে যেকোনো সমালোচনা থামিয়ে দিতে সাংবাদিকদের হুমকি ও ভীতি প্রদর্শনের খবর পাওয়া গেছে। 

দমনপীড়ন সম্পর্কে জন সিফটন বলেন, বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়া বর্তমানে জেলে। দীর্ঘদিনের দুর্নীতির মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে ফেব্রুয়ারিতে তাকে জেল দিয়েছে সরকার। বিরোধীদলীয় সমর্থকরা মনে করেন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া হলো ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক এজেন্ডা। খালেদা জিয়ার সমর্থকরা যুক্তি দেখান, অনেক বছর আগে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম দুর্নীতির মামলা করেছিল সেনা সমর্থিত সরকার। সেটা ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার আগের ঘটনা। এ ছাড়া বিগত সরকার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেও অভিযোগ এনেছিল। আওয়ামী লীগ যখন ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসে তখন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলাগুলো প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। কিন্তু খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা চলমান থাকে। 

দমনপীড়ন খালেদা জিয়ার আটকের চেয়েও বেশি কিছু। সরকার সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বিরোধী দলীয়  কয়েক হাজার সিনিয়র নেতা ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে বানোয়াট অভিযোগ এনেছে। বিএনপির অভিযোগ, নতুন কমপক্ষে ৫০০০ গ্রেপ্তারের তথ্যপ্রমাণ আছে তাদের কাছে। গ্রেপ্তারের বাইরেও আদালতের ডকুমেন্টে এমন ব্যক্তিদের সংখ্যা এতটাই বেশি, কিছু মিডিয়া দেখতে পেয়েছে ওই তালিকায় এমন সব নাম আছে যারা মৃত অথবা অসুস্থতায় আশঙ্কাজনক অবস্থায় আছেন এবং তারা বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। মোট কত মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তার সঠিক সংখ্যা জানা অসম্ভব। তবে দৃশ্যত তা ব্যাপক। দেশের জেলখানাগুলোতে আসামির সংখ্যা বেড়ে গেছে। সেপ্টেম্বর থেকে নতুন জেলবন্দির সংখ্যা এখন ১৪ হাজারের ওপরে। এর ফলে বলা যায়, বাংলাদেশে রাজনৈতিক দমনপীড়নের কারণে কারাবন্দিদের সংখ্যা এত বেড়ে গেছে। এতে মনে হয়, গত দু-এক মাসে হাজার হাজার মানুষকে ধরা হয়েছে রাজনৈতিক কারণে। 

তবে সব কারাবন্দিকেই সরকারি জেলখানায় নাও রাখা হতে পারে। বিরোধীদলীয় বহু সংখ্যক সমর্থককে সপ্তাহের পর সপ্তাহ, মাসের পর মাস আটক রাখা হয়েছে। আটক রাখা হয়েছে অজ্ঞাত স্থানে। বহু মানুষ নিখোঁজ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে জামায়াতে ইসলামির দু’জন নেতার ছেলে আহমাদ বিন কাসেম ও আবদুল্লাহি আজমান আজমী। এ ছাড়া সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিএনপির ১৯ জন সমর্থকের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি প্রামাণ্য হিসেবে উপস্থাপন করছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। যারা এর প্রত্যক্ষদর্শী তারা বলেছেন, এসব মানুষকে আটক করেছে বাংলাদেশের নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা। এ ছাড়া আরো বাড়তি ঘটনা থাকতে পারে। 

জন সিফটন আতঙ্কের পরিবেশ অংশে লিখেছেন, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে বর্ণনা করতে গিয়ে বেশির ভাগ মানুষই যে শব্দটি ব্যবহার করেন তা হলো আতঙ্কজনক। বিরোধীদলীয় একজন নেতা বলেছেন, হাজার হাজার মানুষ নিখোঁজ হয়েছেন। তারা কোথায় আমরা জানি না। একটি পত্রিকার সম্পাদক তার অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে। তিনি বলেছেন, সকালে ঘুম থেকে উঠেই তিনি আতঙ্ক, সংশয়, উত্তেজনা ও হুমকির অভিজ্ঞতা অনুধাবন করেন। আরেকজন সম্পাদক ‘আমাদের বলেছেন আতঙ্কের সংস্কৃতি ও আতঙ্কের পরিবেশ’ বিষয়ে। তিনি আরো স্বীকার করেছেন সেলফ সেন্সরশিফ চর্চার কথা। হাতে থাকা সব রিপোর্টই কি প্রকাশ করা উচিত কিনা এ বিষয়ে তার ভাষায় ‘একজন সম্পাদক হিসেবে আমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। ভীতি প্রদর্শন থেকে আমার প্রতিবেদকদের বাঁচাতে পারবো না আমি।’ 

জন সিফটন আরো বলেন, নাগরিক সমাজের মধ্যেও আপনি আতঙ্ক দেখতে পাবেন। একজন বলেছেন, তারা অনেক কট্টর (এক্সট্রিম) হয়ে উঠেছে। তারা আমার বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। আমার বন্ধু ও পরিবার আতঙ্কে আছে যে, আরো হামলা হতে পারে। আরেকজন বলেছেন, আমরা একটি পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছি। তিনি আরো বলেছেন, এখানে কোনো মানবাধিকার নেই। গণতান্ত্রিক জায়গা নেই। 

অনেক মানুষ পূর্বাভাস করেছেন আসন্ন নির্বাচন নিয়ে। তারা বলেছেন, ডিসেম্বরের এই নির্বাচন হতে পারে জালিয়াতির। তাতে সুবিধা পেতে পারে আওয়ামী লীগ। বিএনপির প্রতিবাদ বিক্ষোভের ফলে দেখা দিতে পারে ব্যাপক সহিংসতা। 

জন সিফটন বলেন, রাজনৈতিক কোনো গ্রুপের দ্বারা যেকোনো এবং সব রকমের সহিংসতার নিন্দা জানাই আমরা। প্রতিবাদ বিক্ষোভকালে বিরোধী সব রাজনৈতিক দলের প্রতি আমরা আহ্বান জানাই সহিংস আচরণে যুক্ত না হতে। তবে নিরাপত্তা রক্ষাকারী ও আওয়ামী লীগ পন্থি গ্রুপগুলোর অতিমাত্রায় সহিংসতার বিষয়ে আমাদের বড় রকমের উদ্বেগ আছে। 

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের হাতে ‘এক্সট্রাঅর্ডিনারি’ নৃশংসতার বহু ঘটনা প্রামাণ্য আকারে উপস্থাপন করেছে হিউম্যান রাইট ওয়াচ। এ বছর জুলাইয়ে ঢাকায় দু’জন শিক্ষার্থী সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার পর হাজার হাজার স্কুলগামী শিক্ষার্থী নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাজপথে বিক্ষোভ করে। এ সময় তাদের ওপর যে দমনপীড়ন হয়েছে সে সময়কার নৃশংসতা আমরা দেখেছি বলে মন্তব্য করেন জন সিফটন। তারা ক্রমাগত জনসমর্থন পাচ্ছে এবং তাদের সমর্থন দিচ্ছে বিরোধীরা এমন আশঙ্কায় আওয়ামী লীগের যুব শাখা ওই বিক্ষোভকারীদের ওপর চাপাতি ও লাঠিসহ আক্রমণ চালায়। 
প্রত্যক্ষদর্শী ও সাংবাদিকরা রিপোর্ট করেছেন, স্কুল শিক্ষার্থীদের ওপর যখন আওয়ামী লীগের সমর্থকরা হামলা চালায়। তখন অনেক স্থানেই পুলিশ ছিল দাঁড়িয়ে। হামলাকারীদের অনেকে ছিলেন হেলমেট পরা। পরিচয় লুকানোর জন্য তারা এসব পরেছিলেন। হামলার এ দৃশ্য ক্যামেরায় ধারণ করা হয়েছে। তাতে অনেককে চিহ্নিত করা গেছে। এ হামলা ও শিক্ষার্থীদের ওপর দমনপীড়নের বিষয় যারা প্রামাণ্য আকারে ধারণ করেছিলেন এবং সমালোচনা করেছিলেন তার মধ্যে রয়েছেন সাংবাদিক শহিদুল আলম। তার এ কাজে দৃশ্যত ক্ষুব্ধ হয়েছে সরকার। সরকারের কর্মকাণ্ডেড় বিষয়ে তিনি আল জাজিরাকে সাক্ষাৎকার দেয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে নিন্দার ঝড় ওঠে। তবে সরকার তাকে মুক্তি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে যায়। আদালতে শহিদুল আলম বলেছেন, তাকে নিরাপত্তা হেফাজতে নিয়ে প্রহার করা হয়েছে। ওই বিক্ষোভ প্রতিবাদ কভার করছিলেন এমন আরো অনেক সাংবাদিকের ওপর হামলা হয়েছে। 

জন সিফটন মত প্রকাশের স্বাধীনতা সম্পর্কে বলেন, নির্বাচন যত ঘনিয়ে এসেছে সরকার মানবাধিকারবিষয়ক গ্রুপগুলোর বিরুদ্ধে দমনপীড়ন তত কড়া করেছে। বিদেশি উৎস থেকে অর্থায়ন বন্ধ হয়ে গেছে অধিকার-এর। আরেকটি অধিকারবিষয়ক গ্রুপ সুজনও সম্প্রতি হয়রান ও তদন্তের শিকার হয়েছে। মিডিয়ার ক্ষেত্রে সরকারের আরো একটি নতুন আইন নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। এ আইনে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা মারাত্মক খর্ব হতে পারে। সেপ্টেম্বরে সরকার এই আইন পাস করে। এর নাম দেয়া হয় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। এর উদ্দেশ্যই হলো সব ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াকে মনিটর করা। মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে অপরাধের আওতায় নেয়ার মতো আইসিটি আইনের মতো একই রকম বিধান আছে এতে। সামাজিক যোগাযোগ মিডিয়ায় মন্তব্যের জন্য এরই মধ্যে আইসিটি আইনের অধীনে কয়েক শ মানুষ অভিযোগের মুখোমুখি। রোহিঙ্গা ইস্যুতে জন সিফটন বলেছেন, বাংলাদেশে অবস্থানরত মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের পরিণতি নিয়ে আমরা ভীষণ উদ্বিগ্ন। এরই মধ্যে বাংলাদেশ কয়েক শ রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেয়। সম্ভবত এটা প্রদর্শন করা হচ্ছে নির্বাচনকে সামনে রেখে। মিয়ানমারের সার্বিক পরিস্থিতি রোহিঙ্গাদের জন্য অনিরাপদ। তারা সবাই তাদের বাড়িতে যেতে পারবেন না। তাদের যেতে হবে ট্রানজিট ক্যাম্পে, যা বেড়া দিয়ে ঘেরা। সেখানে তারা চলাচলের কোনো স্বাধীনতা পাবেন না। পাবেন না সামাজিক ও অর্থনৈতিক কোনো সুযোগ। 

  • সূত্র — মানবজমিন। লিঙ্ক — https://bit.ly/2Pw3Nb3