একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একজনের ভোট অন্য কেউ দিয়ে গেলেও আসল ভোটার তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম। আইনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রিজাইডিং কর্মকর্তা যদি এ ধরনের অভিযোগে আসল ভোটারকে চিহ্নিত করতে পারেন তাহলে ভোটারকে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে দিতে হবে। রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘জাস্ট অ্যালাউ হিম উইদআউট এনি কোয়েশ্চেন’।
গতকাল শনিবার নির্বাচন কমিশন ভবনে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের দুই দিনব্যাপী প্রশিক্ষণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, গণমাধ্যমে অনেক সময় দেখতে পাই ভোটার এসে অভিযোগ করে তার ভোট দেয়া হয়ে গেছে। নির্বাচনী কর্মকর্তারা যদি ঠিকভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করেন তাহলে এরকম হওয়ার কথা নয়। একজনের ভোট আরেকজনে দিতে পারার কথা নয়। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আইনে এরপরও আসল ভোটারের ভোট দেয়ার বিধান আছে।
প্রিজাইডিং কর্মকর্তা যদি সন্তুষ্ট হন যে, সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিই সত্যিকার ভোটার, তার ভোটটা অন্য কেউ দিয়ে গেছে। এক্ষেত্রে তিনি ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। প্রয়োজনে কর্মকর্তারা আইনটাকে ফলো করবেন। তাহলেই আর কেউ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারবে না।
তবে ভোটকেন্দ্রে প্রকাশ্যে কেউ ব্যালটে সিল মারতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন রফিকুল ইসলাম। জনসম্মুখে ভোট দেয়াকে বেআইনি উল্লেখ করে কর্মকর্তাদের এ ধরনের কর্মকাণ্ড গ্রহণ না করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
নির্বাচন কমিশনার জানান, অনেক ভোটার বলতে পারেন আমার ভোট আমি প্রকাশ্যে দিয়েছি এতে অসুবিধা কোথায়? যেহেতু আইনে এটা পারমিট করে না, কর্মকর্তারাও অ্যালাউ করবেন না। প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারদের প্রতিও নির্দেশনা থাকবে, প্লিজ ডোন্ট অ্যালাউ ইট। ভোট দেয়ার এমন প্রক্রিয়া বেআইনি ও এ ধরনের কর্মকাণ্ড নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
মাঠ পর্যায়ে থাকা কর্মকর্তাদের নির্বাচনের আসল কাণ্ডারি উল্লেখ করে রফিকুল ইসলাম বলেন, নির্বাচন করেন আপনারা, ইলেকশনের পরিকল্পনা করে কমিশন ও সচিবালয়। আপনাদের কাছেই আমাদের সবকিছু, মান, সম্মান-ইজ্জত ন্যস্ত। আপনাদের ভূমিকার ওপরই নির্ভর করবে কমিশনের ইমেজ কেমন হবে? নির্বাচনী কর্মকর্তারা ব্যর্থ হলে কমিশনকে বলা হবে অপদার্থ, অথর্ব ও মেরুদণ্ডহীন কমিশন। তিনি বলেন, নির্বাচন মানেই কিন্তু একদিন। সূচিতে ৪৬-৪৫ দিন যাই থাকুক না কেন নির্বাচন মানে একদিন, ভোটের দিন। নির্বাচনের দিন কি হলো তার ওপরই নির্ভর করবে কমিশনের সফলতা-ব্যর্থতা। ভোটের দিন যদি আইনানুগ কাজ না হয়, তাহলে পরে কিন্তু আমরা সবাই প্রশ্নবিদ্ধ হবো।
তিনি আরো বলেন, পত্রিকা খুললেই একটাই কথা, সবার ভেতরেই শঙ্কা ভোট দিতে পারবেন কিনা? ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবেন কিনা? কর্মকর্তারা যদি ব্যালটটাকে ঠিকমতো সংরক্ষণ করেন, কেন্দ্রটাকে ঠিকমতো তৈরি করেন, সঠিকভাবে দায়িত্বপালন করেন তাহলে এরকম ভাবনা হওয়ার কথা নয়। আপনারা যদি কাউকে জোর করে বের করে না দিয়ে এজেন্টদের ঠিকমতো রাখেন তাহলে কোনোভাবেই একজনের ভোট আরেকজন দিতে পারবে না। কোনো ভোটারকে চিহ্নিত না করা পর্যন্ত তাকে ব্যালট পেপার দেয়া যাবে না। এসব নিশ্চিত করতে পারলেই কোনোভাবে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে না। কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারবে কিনা- ভোটারদের এমন শঙ্কা আপনাদের দেখার বিষয় নয়। রফিকুল ইসলাম বলেন, ভোটার কেন্দ্রে আসলে তার ভোট দেয়ার ব্যবস্থা করা আপনাদের কাজ। ভোটারদের নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে আসার পরিবেশ তৈরি করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটরা কাজ করবেন। এরপরও কোনো অঘটন ঘটলে কমিশন সেখানে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবে।
নির্বাচনী সরঞ্জাম ঠিকভাবে বুঝে নিতে এবং ভোটের পর যথাসময়ে ফেরত পাঠাতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রতি নির্দেশ দেন নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম। ব্যালট পেপার ও ব্যালট বাক্স পাবার পর তার দেখভাল করা কর্মকর্তাদেরই দায়িত্ব উল্লেখ করে প্রয়োজনে ভোটের আগের রাতে নিজ সন্তানের মতো এসব পাহারা দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, কেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসারের সিদ্ধান্তই সব।
তিনি ভোটগ্রহণে যে সিদ্ধান্তই নেবেন সবাইকে তা মেনে চলতে হবে। নির্বাচনের আগে যেকোনো ধরনের অনিয়ম ঠেকাতে সারা দেশে নির্বাচনী তদন্ত কর্মকর্তা কমিটি করা হয়েছে। এসব কমিটির সদস্য ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদেরও প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে প্রায় সাত লাখ নির্বাচনী কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন বলেও জানান তিনি। কর্মশালায় আরো বক্তব্য দেন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব মোখলেছুর রহমান ও নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মোস্তফা ফারুক। নয়টি জেলা থেকে আসা প্রায় চারশ’ কর্মকর্তা এই প্রশিক্ষণে অংশ নিচ্ছেন।
- কার্টসিঃ মানবজমিন/ ০২ ডিসেম্বর ২০১৮