Search

Tuesday, December 4, 2018

64% polling centres risky!

Dhaka div has highest number of such centres, say police


Sixty-four percent of the polling centres across the country are vulnerable to violence, with the highest number of such centres in Dhaka division, and police have finalised an elaborate security plan giving importance to those.

Out of the 40,273 polling centres for the December 30 national election, police have identified 25,827 as “important”, according to a police assessment.

“As a law enforcement agency, we don't use the word 'vulnerable' because it may send a negative message to the people about our security arrangement. So we have used the term 'important' and prepared our security plan giving importance to those centres,” a top police official said.

Five policemen will be deployed in each risky centre while three in each “normal” centre. Besides, there will be members of other law enforcement agencies, officials said.

Usually during polls, 20 members of the law enforcement agencies and Ansar are deployed in each vulnerable centre and 15 in each normal centre.

The police prepared the security plan and categorised the polling centres after taking opinion from the field level police and intelligence officials across the country.

As per the plan, 1.23 lakh policemen will carry out their duties at the field level while around 50,000 officials will be involved in election-related activities, officials involved in security planning told The Daily Star yesterday.

Besides, there will be 2,226 “mobile teams”, 767 “striking teams” and 356 “standby teams” to ensure peaceful atmosphere for the election.

The Election Commission estimated that around 6 lakh law enforcers would be deployed on election duties.

RISKY CENTRES

Of the 25,827 “important” centres, 24,195 are in plain land and 1,632 in “special” areas (remote and hilly areas and Chittagong Hill Tracts).

In Dhaka division, a total of 5,679 polling stations out of 9,872 are vulnerable and 28,395 police personnel will be deployed there.

Sohel Rana, assistant inspector general of police at the Police Headquarters, yesterday said, “Police have taken necessary preparations for a fair and peaceful election. We have special measures for 'important' polling centres.”

TWO MONITORING BODIES FORMED

As part of its security plan, the police have already formed two monitoring bodies to oversee the security arrangement during the election. The bodies are Law and Order Monitoring and Coordination Cell and Law and Order Monitoring and Coordination Committee.

Under the cell, eight top officials -- ranging from additional inspector general of police to superintendent of police -- will monitor and coordinate law and order, dividing the country into four zones.

On the other hand, the six-member committee, led by IGP Mohammad Javed Patwary, will monitor and coordinate the overall law and order in the country.

DRIVE AGAINST ILLEGAL ARMS ON

Police have already intensified its drive against illegal arms, listed criminals and wanted accused after the announcement of the polls schedule by the Election Commission on November 8, officials said.

The law enforcers didn't give the specific number of listed criminals. However, police statistics of June show that around 2.42 lakh GR warrants (cases filed with police stations), 1.49 lakh CR warrants (cases filed with the court) and 27,485 conviction warrants have been issued by courts.

Talking to The Daily Star yesterday, Chittagong Metropolitan Police Commissioner Mahabubor Rahman said, “Although we conduct drives against illegal arms and wanted accused and criminals round the year, drives have gained momentum after the announcement of polls schedule.”

Humayun Kabir, commissioner of Khulna Metropolitan Police, also made similar comments about their activities.

Besides, 100 police teams, formed in September to monitor social media to prevent rumours and fake news, recently started conducting “cyber patrolling”, a top official at the Police Headquarters said.

“The teams are actually monitoring whether anyone is spreading rumours and misleading information using the social media ahead of the election,” he said wishing anonymity.

A Social Media Monitoring and Cyber Crimes Prevention Committee at the Police Headquarters was closely working with the teams and giving necessary directives to them, the official added.
  • The Daily Star/Dec 04,2018 

বৈদেশিক বাণিজ্যের নথিতে জালিয়াতি : তদারকি আরো জোরদার করুন

সম্পাদকীয়
অর্থ পাচার, শুল্ক ফাঁকিসহ নানা অসদুদ্দেশ্যে বিল অব লেডিং, এয়ারওয়ে বিল, ট্রাক রিসিপ্টের মতো জরুরি নথি বা দলিল জালিয়াতির আশ্রয় নিচ্ছেন একশ্রেণীর ব্যবসায়ী। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ব্যাংকে জমা দেয়া পরিবহন-সংক্রান্ত নথির ২৫ শতাংশের ক্ষেত্রেই মূল কপি ও অনুলিপির মধ্যে অমিল পাওয়া যায়। কার্গো ক্যারিয়ার বা পণ্য পরিবহন সংস্থার পরিচিতি নিয়ে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয় ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে। ৮০ শতাংশ বিল অব লেডিংয়ের যথার্থতা নিয়ে চ্যালেঞ্জের সামনে পড়তে হয় ব্যাংকারদের। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বেড়ে ওঠার পাশাপাশি নানা ধরনের জালিয়াতির ঘটনাও বেড়ে উঠছে। এসব রোধে বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নানা উদ্যোগ নিলেও জালিয়াতির ধরনে পরিবর্তন আসায় এক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত সুফল মিলছে না। অনেক সময় ব্যাংকারও সেসব জালিয়াতি সম্পর্কে অবগত না হওয়ায় প্রতিষ্ঠানও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। রাষ্ট্র বঞ্চিত হচ্ছে প্রত্যাশিত রাজস্ব আহরণ থেকে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে পণ্য পরিবহন ব্যবস্থায় বিশ্বব্যাপী চ্যালেঞ্জ বেড়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকারদের আরো সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বিশেষ করে বিল অব লেডিং, এয়ারওয়ে বিল, ট্রাক রিসিপ্টের ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে। বৈদেশিক বাণিজ্যে জালজালিয়াতি প্রতিরোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, শুল্ক বিভাগ, ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার, শিপিং লাইন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে কমিটি গঠনের পক্ষে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সেটিও আমলে নিতে পারে কর্তৃপক্ষ। বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্রেডিট রিপোর্টের জন্য একটি সেন্ট্রাল তথ্যভাণ্ডার (ডাটাবেজ) তৈরি করতে পারলে ঝুঁকি ও খরচ অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। সেন্ট্রাল ডাটাবেজ থাকলে কোনো ভুয়া ক্রেডিট রিপোর্ট সরবরাহের সুযোগ থাকবে না। এতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ব্যাংক খাতের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে আসবে; কমবে অনিয়ম ও জালিয়াতির ঘটনাও।

বৈদেশিক বাণিজ্য ঘিরে জালিয়াতি ও অর্থ পাচারের প্রবণতা বেড়ে উঠছে দেশে। গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বব্যাপী অর্থ পাচারের ৮৩ শতাংশ হয় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে। ব্যাংক সতর্ক থাকলে কোনো অনিয়ম ঘটার সুযোগ নেই। বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার কতটা বেড়েছে, তা আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট। রেকর্ড বাণিজ্য ঘাটতির পেছনেও অর্থ পাচার দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে। অর্থ পাচারের সম্ভাব্য পথ অনুসন্ধান এবং তা বন্ধে সরকারের আরো সতর্ক হওয়া প্রয়োজন ছিল। কিন্তু এনবিআর ও বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগগুলো প্রত্যাশিত ফল লাভে সফল হয়নি। এর পেছনে অবশ্য নীতিমালার যথাযথ প্রয়োগের অভাবই দায়ী। ব্যাংকগুলোর উচিত বৈদেশিক বাণিজ্যের যাবতীয় নথি পুঙ্খানুপুঙ্খ যাচাই করে দেখা। অধিকাংশ ব্যাংক ক্লায়েন্ট বেজড তথ্য যাচাই-বাছাই করে। ফলে অনেক ব্যবসায়ী মিথ্যা বা ভুয়া তথ্যের আশ্রয় নিয়ে অর্থ পাচার ও শুল্ক ফাঁকি দিচ্ছেন। এমন প্রবণতা বন্ধে ব্যাংকগুলোকে আরো সতর্ক হতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত কেস টু কেস বা পর্যায়ক্রমিকভাবে ব্যাংকের বৈদেশিক বাণিজ্যের নথি পর্যালোচনার প্রতিবেদন খতিয়ে দেখা, কোথাও গরমিল দেখা গেলে অধিক যাচাইয়ের মাধ্যমে ব্যাংকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। প্রকৃত অর্থে বাংলাদেশ ব্যাংক বা ব্যাংকের একার পক্ষে বৈদেশিক বাণিজ্যের নথি ঘিরে জালিয়াতি ও অর্থ পাচার বন্ধ করা সম্ভব নয়। এজন্য সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। বৈদেশিক বাণিজ্যে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার সুযোগও নিয়ে থাকেন একশ্রেণীর ব্যবসায়ী। এক্ষেত্রে বৈদেশিক বাণিজ্যকে আরো মসৃণ করতে প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি ও তদারকি জোরদার করা জরুরি। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো কীভাবে বৈদেশিক বাণিজ্যকে আরো গতিশীল ও স্বচ্ছ করেছে, তা অনুসরণ করতে পারে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআরসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা যেতে পারে। যাদের কাজ হবে বৈদেশিক বাণিজ্যের জালিয়াতির ফাঁকফোকর খুঁজে বের করে তা বন্ধে সুপারিশ করা। তবে এসবের আগে প্রয়োজন সুশাসন নিশ্চিত করা। বৈদেশিক বাণিজ্যে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা গেলে এ ধরনের অপরাধপ্রবণতাও কমে আসবে বৈকি।
  • কার্টসিঃ বণিক বার্তা/  ০৪ ডিসেম্বর ২০১৮

৪৬ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগেও মহাসড়কে যানবাহনের গতি কমছে!

শামীম রাহমান

দেশের সবচেয়ে ভালো মহাসড়কগুলোর একটি ঢাকা-চট্টগ্রাম। পরিবহন মালিক ও ব্যবসায়ীদের হিসাবে ২৬৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটি বর্তমানে অতিক্রম করতে পণ্যবাহী একটি যানবাহনের সময় লাগছে গড়ে ১০ ঘণ্টা। এ হিসাবে প্রতি ঘণ্টায় অতিক্রম করছে ২৬ দশমিক ৬ কিলোমিটার পথ। অথচ আট-দশ বছর আগেও সড়কটি দিয়ে একটি পণ্যবাহী যান ঘণ্টায় ৩৮ থেকে ৪৪ কিলোমিটার গতিতে চলত। চার লেন হওয়ার পরও সড়কটিতে যানবাহনের গতি বাড়েনি, উল্টো কমেছে।

দেশে পণ্য পরিবহনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ রুট ঢাকা-বুড়িমারী। সড়কটিতে পণ্যবোঝাই একটি গাড়ির গড় গতি ঘণ্টায় মাত্র ১৫ কিলোমিটার। একইভাবে ঢাকা-বাংলাবান্ধা রুটে চলাচলরত একটি পণ্যবোঝাই যানবাহনের গড় গতিবেগ ঘণ্টায় মাত্র ১৭ কিলোমিটার। অথচ কয়েক বছর আগেও এসব মহাসড়কে যানবাহনের গড় গতি ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটারের উপরে ছিল।

সড়ক ও পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে হারে যানবাহন বাড়ছে, সে অনুযায়ী সড়ক বাড়ছে না। উন্নত হচ্ছে না সড়ক অবকাঠামোও। এর বাইরে সড়কের পাশে হাটবাজার, টোল প্লাজার কার্যক্রমে ধীরগতি মহাসড়কে যানবাহনের গতি কমিয়ে দিচ্ছে। কেন্দ্রীয় সড়ক গবেষণাগারের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, গত এক যুগে জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে সব ধরনের যানবাহনের গতি কমেছে ঘণ্টায় গড়ে ছয় কিলোমিটার। ২০০৪-০৫ সালে দেশের মহাসড়কে সব ধরনের যানবাহনের গড় গতি ছিল ঘণ্টায় ৩৪ দশমিক ৬৩ কিলোমিটার। ২০১৬-১৭ সালে তা ঘণ্টায় ২৮ দশমিক ৫৪ কিলোমিটারে নেমে এসেছে। যদিও প্রতি বছরই বড় অংকের অর্থ বিনিয়োগ হচ্ছে সড়ক অবকাঠামোর উন্নয়নে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের হিসাব বলছে, গত নয় বছরে নতুন সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণ ও উন্নয়নে বিনিয়োগ হয়েছে ৪৬ হাজার কোটি টাকার বেশি।

বাংলাদেশের জাতীয় মহাসড়কগুলোর নকশা করা হয় ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার গতিতে যানবাহন চলাচলের সক্ষমতা বিবেচনায় রেখে। আঞ্চলিক মহাসড়কের ক্ষেত্রে এ সক্ষমতা ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার। দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও জেলা সড়কগুলোয় জরিপ চালিয়ে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় সড়ক গবেষণাগার। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, মহাসড়কের সক্ষমতার অর্ধেক গতিতে যানবাহন চলছে।

কেন্দ্রীয় সড়ক গবেষণাগারের পর্যবেক্ষণ বলছে, ২০০৪-০৫ সালে দেশে ভারী ও মাঝারি ট্রাকের গড় গতি ছিল ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার। ২০১৬-১৭ সালে তা ৩১ কিলোমিটারে নেমে এসেছে। ভারী ট্রাকের গতি কমেছে ঘণ্টায় নয় কিলোমিটার। ছোট ট্রাকের গতি কমেছে আরো বেশি। ২০০৪-০৫ সালে দেশে ছোট ট্রাকগুলো ঘণ্টায় গড়ে ৪২ কিলোমিটার গতিতে চলেছে, বর্তমানে নেমে এসেছে মাত্র ২৯ কিলোমিটারে।

মহাসড়কে ট্রাকের গতি কমে যাওয়ার বিষয়ে একমত ব্যবসায়ীরাও। তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, যানবাহন বিশেষ করে পণ্যবাহী যানবাহনের গতি কমে যাওয়ার প্রধান কারণ যানজট। এতে আমাদের আমদানি-রফতানি বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ ধরনের অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের টোল প্লাজাগুলোর আধুনিকায়ন করতে হবে। কারণ, মহাসড়কটিতে যানজটের প্রধান কারণ টোল প্লাজা। পাশাপাশি রেল অবকাঠামোর উন্নয়ন করা হলে সড়কে চাপ কমবে। সড়কও এতে গতি পাবে।

সড়কপথে দূরপাল্লায় চলাচলের প্রধান মাধ্যম বড় বাস। এক যুগের ব্যবধানে ঘণ্টায় আট কিলোমিটার গতি কমেছে বড় বাসের। ২০০৪-০৫ সালে দেশে বড় বাসের গড় গতি ছিল ঘণ্টায় ৪৫ কিলোমিটার। বর্তমানে তা ৩৭ কিলোমিটারে নেমে এসেছে। একইভাবে ঘণ্টায় পাঁচ কিলোমিটার গতি কমেছে মিনিবাসের। ২০০৪-০৫ সালে মহাসড়ক দিয়ে ঘণ্টায় গড়ে ৩১ কিলোমিটার গতিতে মিনিবাস চললেও এখন চলছে গড়ে ঘণ্টায় ২৬ কিলোমিটার গতিতে।

বড় বাসের গড় গতি কমে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সোহাগ পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক তালুকদার। গতি কমে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে দেশে যেভাবে যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে, সেভাবে সড়ক-মহাসড়ক বাড়েনি। সড়ক অবকাঠামোও উন্নত হয়নি। সুতরাং এসব গাড়ি চলাচল ও গতিবেগ স্বাভাবিক রাখার জন্য যে ধরনের সড়ক অবকাঠামো দরকার, তা আমাদের নেই।

শুধু ট্রাক কিংবা বাস নয়, সড়ক-মহাসড়কে গতি কমেছে মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কারেরও। তবে সবচেয়ে বেশি কমেছে মাইক্রোবাসের, প্রতি ঘণ্টায় গড়ে ১৩ কিলোমিটার। ২০০৪-০৫ সালে মাইক্রোবাসের গড় গতি ছিল ঘণ্টায় ৪৯ কিলোমিটার। বর্তমানে তা ৩৬ কিলোমিটারে নেমে এসেছে। একইভাবে ২০০৪-০৫ সালে প্রাইভেট কারের গড় গতি ছিল ঘণ্টায় ৩৯ কিলোমিটার। বর্তমানে গড় গতি ঘণ্টায় ৩৩ কিলোমিটারে নেমে এসেছে।

মহাসড়কে যানবাহনের গড় গতি কমে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক গবেষণাগারের পরিচালক ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন বণিক বার্তাকে বলেন, আমাদের দেশে দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। ফলে সড়ক ব্যবহার আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। এর প্রভাবে আমাদের যে রোড নেটওয়ার্কটি আছে, তাতে চাপ পড়ছে। এ বিষয়টি মাথায় রেখেই সড়ক নেটওয়ার্ক বাড়ানো হচ্ছে। এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে, দুই লেনের সড়ককে চার লেন করা হচ্ছে। সরবরাহের চেয়ে চাহিদা বেশি হলে যেমন এক ধরনের সংকট তৈরি হয়, ঠিক এমনটাই হচ্ছে আমাদের সড়ক-মহাসড়কে।

বিভিন্ন সড়কে চলমান নির্মাণ ও উন্নয়নকাজও যানবাহনের গতি কমাতে ভূমিকা রাখছে জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নে অনেকগুলো প্রকল্প চলমান। এগুলো শেষ হতে আরো কয়েক বছর লাগবে। তখন সড়ক-মহাসড়কের চিত্রটি পাল্টে যাবে।

বিশেষজ্ঞ ও খাতসংশ্লিষ্টরা যানবাহনের গতি কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে বলছেন সড়কে যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধিকে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্য বলছে, ২০১০ সালে সারা দেশে নিবন্ধিত যানবাহন ছিল প্রায় ১৫ লাখ। বর্তমানে এ সংখ্যা সাড়ে ৩৬ লাখে উন্নীত হয়েছে। দেশে যানবাহনের সংখ্যা বাড়লেও সে অনুপাতে বাড়েনি সড়কের পরিমাণ, যদিও বছর বছর মোটা টাকা বিনিয়োগ করছে সরকার। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের হিসাব বলছে, গত নয় বছরে নতুন সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণ ও উন্নয়নে ৪৬ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয় হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৭-১৮ অর্থবছরেও ব্যয় হয়েছে ১৪ হাজার ১৪৪ কোটি টাকা। সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ ব্যয় হয়েছে আরো ১ হাজার ৭০৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।

ভাঙাচোরা সড়ককে গতি কমার আরেকটি কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের মহাসড়ক উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের (এইচডিএম) তথ্য বলছে, দেশের ৩ হাজার ৮০০ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়কের ২১ শতাংশের বেশি ভাঙাচোরা দশায় রয়েছে। একইভাবে ৪ হাজার ২০০ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়কের ২৪ শতাংশ ভাঙাচোরা। আর ১৩ হাজার ২৪২ কিলোমিটার জেলা সড়কের মধ্যে ২৯ শতাংশই ভাঙাচোরা। সামগ্রিকভাবে দেশের রোড নেটওয়ার্কের ২৬ দশমিক ৩২ শতাংশই ভাঙাচোরা দশায় আছে বলে এইচডিএমের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

জানতে চাইলে পরিবহন ও ট্রাফিক ব্যবস্থা বিশেষজ্ঞ এবং বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, গত ২০ বছরে দেশে যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে। সে অনুপাতে সড়কের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা না হলে যান চলাচলের গতি কমবে, এটাই স্বাভাবিক। টোল প্লাজাও যানবাহনের গতি কমিয়ে দেয়ার আরেকটি কারণ। বিশেষ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে টোল প্লাজায় একটা বড় সময় চলে যায়। আবার রাস্তা যদি খারাপ থাকে, তাহলে গতি এমনিতেই কমে যাবে। এর বাইরে বিভিন্ন স্থানে কনস্ট্রাকশন কাজ চলার কারণেও গতি কমতে পারে। আমাদের বেশির ভাগ মহাসড়কেই ডিভাইডার নেই। এতে যে গাড়িটি রাস্তার ডান পাশ দিয়ে চলার কথা, সেটি অনেক সময় বাম পাশে চলে আসে। এর প্রভাবে বাম পাশ দিয়ে চলা গাড়িগুলোর গতি কমে আসে। মহাসড়কে বিশৃঙ্খলা এবং চালক ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ট্রাফিক আইন না মানার প্রবণতা মহাসড়কে যানবাহনের গতি কমিয়ে দেয়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ।

  • কার্টসিঃ বণিক বার্তা/  ০৪ ডিসেম্বর ২০১৮

‘দুটি প্রবাদ বাক্যের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে’

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবং বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, মনে হচ্ছে বাংলাদেশের দুটি প্রবাদ বাক্যের মধ্যে এক ধরনের প্রতিযোগিতা চলছে। একটি প্রবাদ বাক্য হচ্ছে ‘ছলে বলে কৌশলে’। এটা হচ্ছে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর। আর বিরোধী গোষ্ঠির প্রবাদ হচ্ছে ‘দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে’। দুটি খুবই প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশি প্রবাদ বাক্য। 

মানবজমিনের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, এই দুটি বাক্য এক অর্থে সার্বিক পরিবেশটাকে চিত্রায়িত করছে। কারণ প্রতিষ্ঠানগুলো পক্ষপাতিত্বমূলকভাবে ছল-বল এবং কৌশল তিনটিই ব্যবহার করার চেষ্টা করছে। সর্বশেষ দেখলাম যে মানিকগঞ্জে একটি প্রশ্নবিদ্ধ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।বলা হচ্ছে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলের স্বাক্ষর মিলছে না। তার স্বাক্ষর কি না সেটা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশের ভিক্তিতে মনোনয়ন বাতিল করে দেয়া হয়েছে। এই ধরনের প্রশ্নবিদ্ধ সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠির একটি প্রয়াস দেখছি। 

পিপিআরসি’র এই নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, আর অন্য পক্ষের যে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে এটাও খুবই স্পষ্ট। তাদের নির্বাচনি ময়দানে টিকে থাকার প্রচেষ্টা চলছে। এভাবে কে কতোদুর আগাতে পারে সেটা দেখার অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে আমাদের। এত কিছুর পরেও নির্বাচনটা আসলে কেমন হবে এটা বলাটা এখন কঠিন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে যেভাবে দেখছি সেখানে অনেক প্রশ্নের বিষয় থেকে যাচ্ছে। কিন্তু আল্টিমেটলি প্রতিযোগীদের টিকে থাকার প্রচেষ্টা চলছে। পক্ষান্তরে ভোটাররা যেটা চায় যে ভয়মুক্ত পরিবেশ। সেটা কেমন হবে এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। কাজেই কেমন নির্বাচন হবে এ বিষয়ে আপাতত আপেক্ষিক উত্তর দেয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। 

জোট-মহাজোটে নির্বাচন হচ্ছে এই নির্বাচন বাংলাদেশের রাজনীতিতে স্থিতি আনবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে স্থিতিটা একভাবে বোঝার চেষ্টা। আমরা চাই যে অংশগ্রহণমূলক একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার ভিক্তিতে সার্বিকভাবে রাজনীতি এবং সুষ্ঠু দেশ শাসন এগুলো নিশ্চিত হবে। এর অন্যতম পূর্বশর্ত হচ্ছে একটি অংশগ্রহণমূলক এবং সুষ্ঠু নির্বাচন। সেটার অপেক্ষায় আমরা আছি। কিন্তু তার পরেও একটি চ্যালেঞ্জ থেকে যায়। জবাবদিহিতামূলক শাসন ব্যবস্থা। সেটা শুধু নির্বাচন করেই নিশ্চিত হবে না। এটার জন্য বাড়তি প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।  

  • কার্টসিঃ মানবজমিন/ ০৪ ডিসেম্বর ২০১৮

রেকর্ড বাতিলকে অস্বাভাবিক বলছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা


জাতীয় নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের রেকর্ড সংখ্যক মনোনয়ন বাতিল হওয়াকে স্বাভাবিক মনে করছেন না নির্বাচন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এভাবে বেশি সংখ্যক প্রার্থিতা বাতিল নির্বাচন কমিশনের পরিকল্পনার অভাব বা অদক্ষতা হতে পারে। আগে থেকে নানা বিষয়ে প্রশ্ন উঠায় বিতর্কে থাকা নির্বাচন কমিশনের মনোনয়নের বিষয়ে আরো সতর্ক থাকা প্রয়োজন ছিল বলেও মনে করেন তারা। সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অব. ড. এম. সাখাওয়াত হোসেন এ বিষয়ে বলেন, স্বাক্ষরের ভুলের জন্য সাধারণত প্রার্থিতা বাতিল হয় না। স্থগিত করা হয়। প্রার্থীকে বলা হয় আপনি এটা ঠিক করেন। তাছাড়া প্রার্থীতো একাধিক মনোনয়নপত্র দেয় যেটা সঠিক সেটা গ্রহণ করা হয়। এখন যদি প্রশ্নই তোলা হয় এটা মির্জা ফখরুলের স্বাক্ষর না ওইটা ওমুকের স্বাক্ষর না। বাতিল করে দিলাম। ক্ষমতা আছে তার মানে এটা আপনি (নির্বাচন কমিশন) করতে পারেন। কিন্তু এতে ক্ষমতার অপব্যবহার হয়। তিনি বলেন, আমাদের সময় একজন রিটার্নিং অফিসারকে তাৎক্ষণিকভাবে বদলি করা হয়েছিল।

অনুসন্ধান করে দেখা গেছে ওই রিটার্নিং অফিসার শুধুমাত্র তার অথরিটি দেখানোর জন্য এটা করেছিল। কথা হলো সবকিছু এখন নির্বাচন কমিশনের কাছে। তিনি বলেন, একটি পত্রিকায় পড়লাম বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নির্বাচন কমিশনকে বলেছেন যে আমার প্রার্থীদের মনোনয়নে আমার স্বাক্ষর রয়েছে। এরপর তো আর কোনো কথা থাকতে পারে না। এই ধরনের বাতিল করাতো ঠিক না। ফলে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিএনপির কোনো প্রার্থীই রইলো না। এটাতো নির্বাচন কমিশনের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই আলামতে যদি নির্বাচন হয় তাহলে এই ধরনের নির্বাচনতো আসলে গ্রহণযোগ্য হবে না। যে সরকারই থাকবে বা আসুক তাদের জন্য টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাবে। 

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, মনোনয়নপত্র বাতিলের বিষয়টি তো প্রমাণের ব্যাপার। তবে অনেক বেশি বাতিল করা হয়েছে। আবার বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থীরটাও বাতিল হয়েছে। এদিক থেকে আপাতদৃষ্টিতে ব্যাপারটা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। জানি না সরকারি দলের সংখ্যাটা কত। এখন দেখতে হবে কি কারণে বাতিল হয়েছে। ঋণখেলাপি অনেক রাঘব বোয়াল রয়েছে যাদের মনোনয়ন বাতিল হয়নি। হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণখেলাপি নিয়েও মনোনয়ন নিশ্চিত করেছেন অনেকে। নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠার পরও নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন আসছে বিভিন্ন মহল থেকে। এ ব্যাপারে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা তো ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ আগেই বলেছি। এখন পর্যন্ত নিরপেক্ষ ভাবার কারণ নেই। 

স্থানীয় সরকার বিশ্লেষক ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন মনোনয়ন বাতিল হওয়ার বিষয়টি নিয়ে বিএনপি একভাবে দেখতে পারে। কিন্তু আমি বলবো ৮ তারিখ পর্যন্ত দেখতে হবে। কারণ এখনো তো আপিল করার সুযোগ আছে। ৮ তারিখের পরই পুরো বিষয়টি পরিষ্কার হবে। দেখা যাক কি হয়। যাদের বাতিল হয়েছে ধরা যাক রেজা কিবরিয়ার বিষয়টি, তার তো সামান্য  টাকার একটি বিলের বিষয়। এটা এমনিই ঠিক হয়ে যাবে। আবার অনেকের স্বাক্ষরের সমস্যা রয়েছে। সেগুলো ঠিক হতে পারে। তাই আপিল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা ইস্যুতে তিনি বলেন, এটা তো পুরনো অভিযোগ। নির্বাচন কমিশনের যে বিচক্ষণতা, সাহসিকতা এবং আইন সম্পর্কে পরিষ্কার হয়ে সিদ্ধান্ত দেয়ায় কিছুটা ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। এটা নিরপেক্ষতার অভাব কিনা বলতে পারবো না তবে অদক্ষতা, অমনোযোগিতা, ভুল পরিকল্পনা হতে পারে। 

  • কার্টসিঃ মানবজমিন/ ০৪ ডিসেম্বর ২০১৮

নির্বাচনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হতে দেয়া যাবে না

নির্বাচন কর্মকর্তারা ব্যর্থ হলে নির্বাচন ব্যর্থ হবে বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। আইনসিদ্ধ না হলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে উল্লেখ করে নির্বাচন কর্মকর্তাদের তিনি বলেছেন, প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন করে আমরা নিজেদের প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাই না। আপনাদের কেউ কলঙ্কের ভাগিদার হতে চাইবেন না জানি। ভোটকেন্দ্রের সকল অনিময় রোধ, শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগের ক্ষমতা আপনাদের দেয়া হয়েছে। এই সর্বোচ্চ শক্তি আপনাদের কতটুকু, তা আপনাদের প্রশিক্ষকদের কাছ থেকে জেনে নেবেন। আপনাদের দায়িত্ব পালনে শিথিলতা কখনো বরদাশত করা হবে না। যুদ্ধক্ষেত্রে সম্মুখ সমরে সাফল্যের কোনো বিকল্প নেই। 

গতকাল আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের উদ্বোধন করে তিনি বলেন, আপনারা নির্ভয়ে, সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন।

আপনারা ব্যর্থ হলে নির্বাচন ব্যর্থ হবে। অন্যদিকে আপনাদের সাফল্যে উদ্ভাসিত হবে সমগ্র জাতি।

তিনি বলেন, দেশের ইতিহাসে কখনো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে, কখনো সেনা সমর্থিত সরকারের অধীনে, আবার কখনো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়েছে। ফলে নির্বাচনী সংস্কৃতিতে কোনো ধারাবাহিকতা গড়ে ওঠেনি। এবার পূর্ণাঙ্গ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে ধারাবাহিকতার ঐতিহ্য সৃষ্টি করতে যাচ্ছি। এই জন্য নির্বাচনকে আমরা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হতে দিতে পারি না। সেই লক্ষ্য পূরণে নির্বাচন কর্মকর্তাদের দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান তিনি। 

মাহবুব তালুকদার বলেন, নির্বাচন সম্পর্কে জনমনে আস্থার ক্ষেত্র তৈরি করবেন। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সকল প্রার্থী যেন আপনাদের দিকে তাকিয়ে নিশ্চিন্ত থাকতে পারে। নির্বাচনী কর্মকর্তাদের কাছে দেশের মানুষের প্রত্যাশা অতি সামান্য। তারা শুধু চান, ভোটের দিন যেন কেন্দ্রে গিয়ে নির্বিঘ্নে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন। তাদের এই সামান্য চাওয়াই রাজনৈতিক বাস্তবতায় বিশাল কর্মযজ্ঞে রূপান্তরিত হয়েছে ভোটের মাঠে।

তিনি বলেন, নির্বাচনের পূর্বশর্ত হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষতা। এই পূর্বশর্ত পালনে আইনানুগভাবে কর্তব্য পালনে আপনারা দৃঢ় ভূমিকা রাখবেন। একটা কথা মনে রাখতে হবে, আইন যদি নিজস্ব গতিতে না চলে তাহলে কোনো কার্যক্রমই আইনানুগ হতে পারে না। সবার জন্য সমভাবে আইনের প্রয়োগ করা না হলে সেই আইন আইন নয়, আইনের অপলাপ মাত্র। 

মাহবুব তালুকদার বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র ২৬ দিন বাকি। নির্বাচনের মূল দায়িত্বপালন করেন প্রিজাইডিং অফিসার। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে একজন করে প্রিজাইডিং অফিসার থাকেন। সার্বিক বিবেচনায় তিনিই সঞ্চালক। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আরো নতুন সঞ্চালক তৈরির আপনারা কারিগর। সব অনিয়ম রোধ, শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগের ক্ষমতা আপনাদেরকে দেয়া হয়েছে। এই সর্বোচ্চ শক্তি সেটা কোনো পুলিশ কর্মকর্তা বা সামরিক কর্মকর্তার থেকে কম নয়।

তিনি বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশনের কমিশনার হিসেবে সংবিধান অনুযায়ী দায়িত্ব পালনের শপথ নিয়েছি। আপনারা আমাদের শপথ গ্রহণের মূল অংশীদার। আপনাদের মাধ্যমেই আমরা নির্বাচন সম্পন্ন করি। এক্ষেত্রে আমাদের শপথ আপনাদের মধ্যে সঞ্চারিত হয় এবং আপনাদের দায়িত্ব পালনের ওপর বর্তায়। আপনারাও মনে মনে শপথগ্রহণ করুন দেশ ও জাতির স্বার্থে নির্বাচনের এই দায়িত্ব পালনে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবেন। সব মিলিয়ে ১০ থেকে ১২ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যুক্ত রয়েছেন জানিয়ে মাহবুব তালুকদার বলেন, আগামী ৩০শে ডিসেম্বর বাংলাদেশের মানুষ ইতিহাসের এক সোনালি অধ্যায় রচনা করবে। সেই সোনালি অধ্যায়ের রূপকার আপনারা। জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে আমরা শুধু দেশবাসী নয়, বিশ্ববাসীর নজরদারির সামনে। আমাদের কার্যকলাপ, প্রতিটি পদক্ষেপ সবাই প্রত্যক্ষভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। সেদিক থেকে এই নির্বাচন আমাদের আত্মমর্যাদা সমুন্নত রাখার নির্বাচন। 

নির্বাচন সামনে রেখে সারা দেশের ২ হাজার ২৬ জন নির্বাচন কর্মকর্তাকে কয়েক ধাপে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। এর অংশ হিসেবে গতকাল সোমবার ও আজ মঙ্গলবার নয় জেলার মোট ৪০৮ কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান ও নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মোস্তফা ফারুক উপস্থিত ছিলেন। 

  • কার্টসিঃ মানবজমিন/ ০৪ ডিসেম্বর ২০১৮

মাহীর মনোনয়ন নিয়ে নানা রহস্য

বিকল্পধারার যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি. চৌধুরীর মনোনয়নের বৈধতা নিয়ে রহস্য তৈরি হয়েছে। একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রায় সোয়া ১ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ না করার অভিযোগ থাকার পরও তার মনোনয়ন বৈধতা পেয়েছে! মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাইকালে মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সামনে সশরীরে উপস্থিত হয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা ঋণ আদায় না হওয়া সংক্রান্ত অভিযোগ তুলে আনুষ্ঠানিক আপত্তি জানিয়েছিলেন। তার আগে বাংলাদেশ ব্যাংককেও লিখিতভাবে তারা তাদের আপত্তির কথা জানান। কিন্তু রহস্যজনক কারণে এসব অভিযোগ-আপত্তি আমলে নেয়া হয়নি। বরং আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির ঋণ ফেরৎ না পাওয়ার অভিযোগ আমলে না নিয়েই মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে বিকল্পধারা তথা যুক্তফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী মাহী বি. চৌধুরীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসার সায়লা ফারজানা মাহীর মনোনয়নপত্র চ্যালেঞ্জ হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। ডিসি বলেন, প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাইকালে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি দাঁড়িয়ে আপত্তি করেছিলেন। কিন্তু তারা ওই প্রার্থীকে কত টাকা ঋণ দিয়েছেন, কত পরিশোধ হয়েছে এবং কত টাকা পাওনা? তাৎক্ষণিক তার কিছুই জানাতে পারেন নি।

উল্লেখ্য, সাবেক প্রেসিডেন্ট ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী তনয় মাহী বি. চৌধুরী শ্রীনগর ও সিরাজদিখান উপজেলা নিয়ে গঠিত মুন্সীগঞ্জ-১ আসন থেকে নির্বাচন করছেন। তিনি এর আগেও মুন্সীগঞ্জে তার পিতার ছেড়ে দেয়া আসনে (উপনির্বাচনে) এমপি হয়েছিলেন। সূত্র মতে, মেসার্স এন্টারটেইনমেন্ট রিপাবলিক নামে একটি প্রতিষ্ঠানের স্বত্ত্বাধিকারী মাহী বি চৌধুরী। ওই প্রতিষ্ঠানের জন্য ২০০৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর আর্থিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএফসি) থেকে তিনি ৩৬ মাস মেয়াদে ৩০ লাখ টাকার ঋণ নেন। কিন্তু সেটি সময়মতো পরিশোধ করতে পারেন নি। 

ঋণ পরিশোধের সময় দেড় বছর বাকি থাকতেই (২০১০ সালের জুনে) ঋণটি পুনঃতফসিলের (রি-শিডিউল) জন্য তিনি প্রতিষ্ঠান বরাবর আবেদন করেন। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে সেই সময়ের পরিচালনা পর্ষদ (বিকল্পধারা মহাসচিব শিল্পপতি মেজর (অব.) আবদুল মান্নানের নেতৃত্বাধীন) ঋণটি পুনঃতফসিলের অনুমোদন দেয়। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে ঋণ আদায়ের স্বাভাবিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে গ্রহীতাকে ৬৫ লাখ ১৪ হাজার ৫শ’ ৬২ টাকা পরিশোধের অনুরোধ জানিয়ে চিঠি পাঠায় বিআইএফসি।

প্রায় তিন মাস পর (২০১৫ সালের ২৯শে মার্চ) ৩০ লাখ টাকা পরিশোধ করেন মাহী। সেই সময়ে তার কাছে ঋণের বকেয়া ছিল ৭৯ লাখ ৯ হাজার ৩শ’ ২০ টাকা। ওই সময়ে বাকি টাকা পরিশোধ না করায় ২০১৫ সালের ৩১শে ডিসেম্বর সিএল ব্যালেন্স দাঁড়ায় ৪৪ লাখ ১৮ হাজার ৮শ’ নব্বই টাকা। ২০১৭ সালের মার্চে ঋণ গ্রহীতাকে বাকি টাকা পরিশোধের অনুরোধ করে ফের চিঠি পাঠায় প্রতিষ্ঠানটি। ওই চিঠির জবাবে মাহী বি. চৌধুরী একটি এনওসি’র কপি প্রেরণ করেন। ওই এনওসি কীভাবে মাহী পেলেন তার কোনো রেকর্ড সংরক্ষিত না থাকায় সেই সময়ের এমডি ইনামুর রহমানকে শোকজ করা হয়। সাবেক ওই ব্যবস্থাপনা পরিচালককে এ নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির তরফে দু’দফা চিঠি দেয়া হলেও তিনি আজ অবধি এর কোনো জবাব দেননি। মাহী বি. চৌধুরীর ওই ঋণটিকে ‘মন্দ ও ক্ষতিজনক’ পর্যায়ে রেখেছে বিআইএফসি। সর্বশেষ হিসাব জানিয়ে (২৫শে নভেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত) বিআইএফসি মাহীর কাছে ১ কোটি ১৪ লাখ ৬০ হাজার ৩৪ টাকা ৬৫ পয়সা পায় বলে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি পাঠিয়েছে। এ সম্পর্কে মাহী বি. চৌধুরী মানবজমিনকে বলেন, এটা সেটেল ম্যাটার। এটা এখন বলা হচ্ছে কেন? 
  • কার্টসিঃ মানবজমিন/ ০৪ ডিসেম্বর ২০১৮ 

EC decisions appear worryingly prejudiced

EDITORIAL

FOR the upcoming national election, 3,056 aspirants of different political parties submitted their nomination papers to the Election Commission. Upon scrutiny, returning officers have cancelled nominations of 786 candidates on varying grounds including defaulted bank loans, unpaid utility bills, forged signatures of voters, absence of valid documents authenticating party affiliation and lack of proof of resignation from the offices of local government. The process to scrutinise nomination papers is crucial to electoral process as it reviews the eligibility of aspirants and screens out applicants who fails to meet the criterions laid out in the Representation of the People Order Bill. Therefore, it was expected of the commission that it will conduct the review in an unbiased manner and without inciting further controversy. The rejection of the nomination papers of 30 dissidents of ruling alliance willing to contest the polls as independent candidates in 27 districts however says otherwise. The cancellation of at least 43 nomination papers of the main opposition, Bangladesh Nationalist Party leaders appears to be a blessing for Awami League led alliance. Therefore, it will not be mistaken to suggest that these decisions were made considering the interest of the ruling coalition.

According to media reports, the rebel candidates of the ruling alliance and candidates of political opposition with higher possibility of winning in the election are particularly subjected to the refusal. In six constituencies, nomination papers of all aspirants of BNP were cancelled by the returning officers. In Manikganj 2, the nomination papers of all BNP candidates were rejected on ground that the signature of the secretary general of the party is not authentic, even though party has publicly confirmed their nominations. A Gano Forum candidate of Hanbiganj 1 with previous history with AL is also faced with rejection as he is unjustly categorised by the commission as loan defaulter. Such irregularities were also exposed in during the nomination submission phase as well. On the last day of nomination submission, returning officers refused to accept application of an opposition party leader seeking nomination for Rangpur 5 constituencies without providing any valid reason. The aspirant in question has to seek redress from the High Court just to get his nomination paper accepted. In what follows, the complaint that the commission was unequal and prejudiced towards the political party in power and its prejudice has influenced the review process seems justifiable.

The Election Commission, as it appears, has created a situation in which dissident candidates of ruling alliance and opposition candidates with higher chances of winning are eliminated at the stage of scrutiny, thereby impeding the possibility of an inclusive election. In other words, the commission is implicitly lending support, as alleged by many, to the ruling quarters ploy to win the election before the actual vote. Another unilateral election undoubtedly will deepen the prevailing political crisis, the ruling quarter has to historically shoulder the burden of this crisis unless they act differently and allow the Election Commission to act independently.

  • Courtesy: The New Age/ Dec 04, 2018

সিইসির দপ্তরে ভাগনে শাহজাদা

একাদশ সংসদ নির্বাচনে পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা-দশমিনা) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এস এম শাহজাদা আজ সোমবার নির্বাচন কমিশন ভবনে গিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এসেছেন। সিইসি হুদা ও শাহজাদা সম্পর্কে মামা-ভাগনে।
শাহজাদা স্থানীয় ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। এবারই প্রথমবারের মতো দলের মনোনয়নে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন তিনি। তাঁর কারণে এবার এই আসনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া থেকে বাদ পড়েছেন সাবেক সাংসদ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন।

গত রোববার মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে শাহজাদার প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির দুই প্রার্থী গোলাম মওলা রনি ও শাহজাহানের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।

আজ নির্বাচন কমিশনে আপিল করেছেন গোলাম মওলা রনি। আর সন্ধ্যায় সিইসির সঙ্গে দপ্তরে দেখা করতে আসনে শাহজাদা।

মামা নুরুল হুদার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বেরিয়ে আসার সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন শাহজাদা। তিনি জানান, ব্যক্তিগত কাজে তিনি সিইসির দপ্তরে এসেছেন।

শাহজাদা জানান, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের মা অসুস্থ। তাঁর ওষুধ কেনার জন্য প্রেসক্রিপশন নিয়ে এসেছেন। এলাকায় এই ওষুধ পাওয়া যায় না। সিইসিকে প্রেসক্রিপশন দিয়েই তিনি চলে যাচ্ছেন। এর বেশি কোনো কাজ ছিল না। তিনি জানান ঢাকায় এসে ব্যবস্থাপত্র দেওয়ার জন্য এই কার্যালয়ে আসা ছাড়া অন্য কোনো উপায় ছিল না। তফসিলের আগেও তিনি দপ্তরে এসেছিলেন বলে জানান।

এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, মামার কাছে কোনো সহযোগিতার জন্য তিনি আসেননি। ভোট করাটা তাঁর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। তিনি বলেন, ‘আমি তো ওনার পরিবারের অংশ না। আমি আত্মীয়, কিন্তু পরিবারের অংশ না।’

জয়ের বিষয়ে শতভাগ আশাবাদী বলেও জানান তিনি।
  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ ০৪ ডিসেম্বর ২০১৮ 

Courtesy: Prothom Alo Dec 04, 2018

ক্ষমতায় থাকলে সম্পদ বাড়ে

সম্পাদকীয়


উচ্চ আদালতের নির্দেশে যেকোনো নির্বাচনে প্রার্থীদের হলফনামায় সম্পদের বিবরণীসহ আটটি তথ্য দেওয়া বাধ্যতামূলক। এই তথ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা, তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত কি না, অতীতে কোনো মামলা ছিল কি না; সেই সঙ্গে পেশা ও আয়ের উৎস, ব্যাংকে বা ব্যক্তিগত পর্যায়ে দায়দেনা আছে কি না, সেসবও প্রার্থীকে জানাতে হয়। সেদিক থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীরা যে হলফনামা দিয়েছেন, তা নতুন কিছু নয়।

প্রার্থীদের হলফনামায় এ কথাও লিখতে হয়ে যে ‘আমি শপথপূর্বক বলিতেছি যে এই হলফনামায় প্রদত্ত তথ্য এতৎসঙ্গে দাখিলকৃত সকল দলিল-দস্তাবেজ আমার জ্ঞান ও বিশ্বাসমতে সম্পূর্ণ সত্য ও নির্ভুল।’ তবে সেই নির্ভুল হলফনামা কতটা নির্ভুল, সে বিষয়েও সন্দেহমুক্ত হওয়া যাচ্ছে না। দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন, যাঁরা হলফনামায় ভুল তথ্য দেবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের আগে প্রার্থীদের হলফনামা পরীক্ষা-নিরীক্ষার কোনো ব্যবস্থা এই প্রতিষ্ঠানের আছে কি না, সেই প্রশ্নও আছে। কোনো কোনো সম্পদের যে দাম উল্লেখ করেছেন, তা অবিশ্বাস্যভাবে কম। তারপরও প্রার্থীদের সম্পদ ও আয়–বৃদ্ধির হারে পাঁচ-দশ গুণ হওয়া স্বাভাবিক বলা যাবে না।

হলফনামার সাধারণ ধারা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সরকারি দলের প্রার্থীদের সম্পদের পরিমাণ অনেক গুণ বেড়ে যায়, আর বিরোধী দলে থাকলে মামলার সংখ্যা। কোনো কোনো প্রার্থীর সম্পদ পাঁচ বছরে পাঁচ গুণ বা দশ গুণ হওয়া মোটেই স্বাভাবিক নয়। এই ঘটনা শুধু বর্তমান সরকারের আমলে ঘটেছে তা-ই নয়, বিএনপির আমলেও এর এন্তার নজির রয়েছে। আবার বিরোধী দলে থাকতে ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা, রাজনৈতিক মামলা দায়ের করার অভিযোগ এনে থাকে, ক্ষমতায় গিয়ে তারাও একই কাজ করে। ক্ষমতায় এসে তাদের প্রথম কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায় রাজনৈতিক মামলা পর্যালোচনার নামে একটি কমিটি করে দলীয় নেতা-কর্মীদের মামলাগুলো দ্রুত তুলে নেওয়া। আওয়ামী লীগ সরকার একটানা ১০ বছর ক্ষমতায় আছে। এ কারণে বিরোধী দলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যাও বহু গুণে বেড়ে গেছে। উদাহরণ হিসেবে বিএনপির চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে ৩০টি ও মহাসচিবের বিরুদ্ধে ৪৬টি মামলার কথা উল্লেখ করা যায়।

আমাদের জনপ্রতিনিধিদের সম্পদ যখন জ্যামিতিক হারে বাড়তে থাকে, তখন সাধারণ মানুষের আয় কতটা ও কী হারে বাড়ছে, সেটাও পরখ করে দেখা প্রয়োজন। সম্প্রতি তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের জন্য যে নতুন মজুরি ঘোষণা করা হয়েছে, তাতে দেখা যায় পাঁচ বছরে তাঁদের মজুরি বেড়েছে মাত্র ৪৩ শতাংশ। বছর হিসাবে ৯ শতাংশেরও কম। মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনায় নিলে শ্রমিকদের প্রকৃত মজুরি এক পয়সাও বাড়েনি। অথচ যাঁরা তাঁদের জনপ্রতিনিধি হবেন, তাঁদের সম্পদ ও আয় বেড়েছে বহু গুণ।

এবারের হলফনামায় আরও যে তথ্য বেরিয়ে এসেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে বিরোধী দলে থেকেও কোনো কোনো সাংসদ শতকোটি টাকারও বেশি সম্পদ করেছেন। উদাহরণ হিসেবে দশম জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ ও তাঁর স্বামী হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কথা উল্লেখ করা যায়। আরও মজার বিষয় হলো, এরশাদের চেয়ে রওশনের সম্পদের পরিমাণ বেশি। এটি আরও অনেক ভিভিআইপি প্রার্থীর ক্ষেত্রে ঘটেছে। 

সম্প্রতি এক সেমিনারে বক্তারা যে রাজনীতিকে বড় লাভজনক ব্যবসা বলে অভিহিত করেছেন, এটি যেন তারই বাস্তব রূপ। জনপ্রতিনিধিরা না খেয়ে জনগণের সেবা করবেন, সেটি কেউ আশা করেন না। কিন্তু তাঁদের আয়-উন্নতি সাধারণ মানুষের আয়ের ধারার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। 

  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ ০৪ ডিসেম্বর ২০১৮