মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের নির্বাচনী কাজে সহায়তা দিচ্ছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ব্যক্তিগত স্টাফসহ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারাও তাদের পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করছেন। গতকাল সরজমিন কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এবং তাদের দপ্তরে গিয়ে এমন তথ্যের সত্যতা মিলেছে।
ফেসবুকের মেসেঞ্জার ঘেঁটে দেখা যায়, গত ২৮শে নভেম্বর মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের দিনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত জনসংযোগ কর্মকর্তারা তাদের মন্ত্রী- প্রতিমন্ত্রীর মনোনয়নপত্রের বৈধতার বিষয়ে সাংবাদিকদের জানান। নিজের নামে না পাঠিয়ে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এপিএসের নামে প্রেস রিলিজ সংবাদপত্রে পাঠান। এ ছাড়া কয়েক জন জনসংযোগ কর্মকর্তা নিয়মিত মন্ত্রী- প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে তাদের নির্বাচনী এলাকায় সফর করছেন। নির্বাচনী এলাকায় সফরের সময় মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের সঙ্গে জনসংযোগ কর্মকর্তাদের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেখা গেছে।
জনসংযোগ কর্মকর্তারা স্থানীয় পর্যায়ের সাংবাদিকদের সঙ্গে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর দেখভাল করতে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন। এ ছাড়া মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের একান্ত সচিব (পিএস)’রা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পরিদর্শনের চিঠি নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীর এলাকায় চলে যাচ্ছেন। অংশ নিচ্ছেন বিভিন্ন নির্বাচনী মতবিনিময় সভায়। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন তারা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের বাসায় এখন নিজের নির্বাচনী এলাকার লোকজনের ঠাসাঠাসি। অনেক ব্যক্তিগত স্টাফ মধ্যরাত পর্যন্ত মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর বাসায় রীতিমতো অফিস করেন। এজন্য ওই সময় মন্ত্রীদের বিভিন্ন নির্দেশনা পালন করেন তারা। গতকাল এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার রুমে বসে প্রতিমন্ত্রীর পক্ষে টেলিফোনে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড চালানোর বিষয়টি দেখা যায়।
ওই কর্মকর্তা ব্যাংকিং বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ফোন করে বলেন, মার্কেন্টাইল ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট রয়েছে এমন একজনের (বিএনপি প্রার্থী) ব্যক্তিগত ব্যাংক স্টেটমেন্ট প্রয়োজন। বিষয়টি নিয়ে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের এক পরিচালকের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। কিন্তু এখনো সহায়তা পাইনি। প্রতিমন্ত্রী মহোদয় আমাকে বার বার বিষয়টি নিয়ে বলছেন। তোমরা উপকার করতে পারো কিনা দেখো। ব্যাংকিং নিয়মে ওই ব্যক্তির ব্যক্তিগত ব্যাংক স্টেটমেন্ট প্রয়োজন। এক মন্ত্রীর পিএসের রুমে গিয়ে জানা গেছে, তার মন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকার জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পিএস একই ব্যাচের কর্মকর্তা। তাই যেকোনো বিষয়ে যোগাযোগ করতে সমস্যা পোহাতে হচ্ছে না। ডিসিও তাকে বেশ সহায়তা করছেন। বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, মন্ত্রীর পিএস ছিলেন এখন ডিসি পদে কর্মরত আছেন এমন কর্মকর্তাদের এলাকায় মনোনয়ন বাতিল নিয়ে বেশি ঘটনা ঘটেছে। ওই কর্মকর্তারা আগ বাড়িয়ে মনোনয়ন বাতিল সংক্রান্ত বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এদিকে নির্বাচনের ২৫ দিন বাকি থাকলেও এখনো মন্ত্রীরা তাদের একান্ত সচিব নিয়োগ করছেন। গত ২৫শে নভেম্বর পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর একান্ত সচিব পদে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকারকে নিয়োগ করা হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পিএস নিয়োগ সংক্রান্ত আদেশে বলা হয়েছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী যতদিন এ পদ অলঙ্কৃত করবেন বা এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকারকে ওই পদে বহাল রাখার অভিপ্রায় পোষণ করবেন ততদিন এ নিয়োগ আদেশ কার্যকর থাকবে। এ ছাড়া এক মন্ত্রী গত দুইদিন আগে নিজের একান্ত সচিব নিয়োগ করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন। এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বলে জানা গেছে।
- কার্টসিঃ মানবজমিন/ ০৫ ডিসেম্বর ২০১৮