Search

Thursday, December 6, 2018

GLOBAL CLIMATE RISK INDEX 2019 - Bangladesh 7th most vulnerable


In a new global index, Bangladesh has been ranked seventh among the countries most affected by extreme weather events in 20 years since 1998.

The Long-Term Climate Risk Index listed Puerto Rico and Sri Lanka as the top two affected countries.

The index is part of a report, Global Climate Risk Index 2019, which was released at the annual climate summit in Poland's Katowice city yesterday. The report was prepared analysing damages caused by the extreme weather events that took place from 1998 to 2017.

According to the annual climate risk index for 2017, Bangladesh stood ninth among the countries most affected last year, up from 13th the previous year. Nepal was ranked fourth and India 14th in the list.

Last year, 407 people died in Bangladesh due to extreme weather related events -- floods, landslide, storms and cyclones. The country also suffered an economic loss of about $2826.68 million, says the report prepared by Germanwatch, a Berlin-based environmental organisation.

The Intergovernmental Panel on Climate Change (IPCC) has already predicted in its scientific report that risks associated with extreme events will continue to increase as the global mean temperature rises.

With four countries in the top of the list, the annual risk index shows that South Asian countries are among the most vulnerable globally to the impacts of climate change.

The global risk index says massive rainfall led to floods across Nepal, Bangladesh and India, which affected more than 40 million people. As many as 200 people lost their lives in these countries and millions were displaced throughout the region, Germanwatch said. The floods spread across the foothills of the Himalayas and brought landslides, destroying tens of thousands of houses, vast areas of farmland and roads. 

According to the report, more than 526,000 people died worldwide and there were losses of $3.47 trillion as a result of more than 11,500 extreme weather events between 1998 and 2017.

Globally, 11,500 people died because of extreme weather events and economic damages totalled some $375 billion, it added.

IMPACT ON POORER COUNTRIES HIGHEST

Germanwatch in its long-term climate risk report says the poorer countries are the most affected as eight of the 10 countries most affected between 1998 and 2017 are developing economies.

The risk index was prepared by using the NatCatSERVICE database of the reinsurance company Munich Re and socioeconomic data of the International Monetary Fund.

It said there was increasing evidence on the link between El Niño events and global warming. The occurrence of El Niño, a warm current in the Pacific Ocean, affects the monsoon in South Asia, which is vital for the summer cropping season.

The occurrence of such events could double in the future due to climate change, the report said.

  • Courtesy: The Daily Star/ Dec 06, 2018

নির্বাচনের পরিবেশ ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু এবং দেশ-বিদেশে গ্রহণযোগ্য করতে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষ ভূমিকা চাইলেন রাজনীতিক, কূটনীতিক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। কানাডিয়ান হাইকমিশন, পর্যবেক্ষক সংস্থা এনডিআই ও আইআইডির যৌথ উদ্যোগে কূটনৈতিক জোনে এক ‘পলিসি ব্রেকফাস্ট’ বৈঠকে গতকাল আসন্ন সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়। রুদ্ধদার ওই বৈঠকের মুখ্য আলোচনার বিষয় ছিল নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে সংশয়ের বিষয়টি। বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য মতে, বিরোধী দলের নেতারা ভোটের পরিবেশ নিয়ে সরকারের প্রতি নানা অভিযোগের আঙুল তুলেন। জবাবে সরকারি দলের প্রতিনিধিরা বলেন, এখন সব বিষয় নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। এখানে সরকারের কিছুই করার নেই। আলোচনায় জাতিসংঘসহ পূর্ব-পশ্চিমের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনার ছাড়াও জ্যেষ্ঠ কূটনীতিকরা অংশ নেন। আলোচনায় ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর দু’জন উপদেষ্টা, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং সরকারি দলের নীতি নির্ধারকরা।

ছিলেন বিএনপির শীর্ষ দুই নেতাও। অন্য রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, নাগরিক সমাজ এবং নির্বাচন পর্যবেক্ষক প্রতিষ্ঠানের কর্তা ব্যক্তিরাও অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

৩ ঘণ্টার ওই আলোচনায় প্রশ্ন আসে নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষতার সঙ্গে তাদের ভূমিকা পালন করতে পারছে কি না? জবাবে দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা কূটনীতিকদের কাছে তাদের নিজ নিজ বক্তব্য তুলে ধরেন। নির্বাচনী পরিবেশ এবং নির্বাচন সংক্রান্ত নানা বিষয়ে রাজনৈতিক দল ছাড়াও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা তাদের মতামত দেন। বিবিসি বাংলা জানিয়েছে- বৈঠক শেষে বদিউল আলম মজুমদার জানিয়েছেন, তিনি নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে কথা বলেছেন। নির্বাচন কমিশন যাতে নিরপেক্ষতার সঙ্গে রেফারির ভূমিকা পালন করে সেটি তুলে ধরেছেন। নাগরিক সমাজের একজন প্রতিনিধিকে উদ্ধৃত করে বিবিসি বাংলা এ সংক্রান্ত তাদের রিপোর্টে জানিয়েছে-বৈঠকে বাংলাদেশ একটি নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে কিনা সেটি ভেবে দেখার কথাও বলা হয়েছে। বিগত কয়েকটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে সেখানে বলা হয়, নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনের কয়েকটি ধাপ রয়েছে। প্রথমত, নির্বাচনের আগে বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার এবং নানা ধরনের মামলার মাধ্যমে ঘরছাড়া করা।

দ্বিতীয়ত ভোটের দিন বিরোধী রাজনৈতিক দলের প্রার্থীর এজেন্ট বের করে দেয়া এবং সর্বশেষ ধাপ হচ্ছে, ভোট কেন্দ্র আংশিক কিংবা পুরোপুরি দখল করা। আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে এ ধরনের পরিস্থিতি ঘটতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন নাগরিক সমাজের একজন প্রতিনিধি। বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী জানিয়েছেন তাদের দল কতটা প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যদিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাচ্ছে। তিনি বিবিসিকে বলেন, এখন তো সরকার আর নির্বাচন কমিশন একাকার হয়ে গেছে। সরকার নির্বাচন কমিশনকে প্রোটেকশন করতেই ব্যস্ত। এখানে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড দূরের কথা, আমরা প্র্যাকটিকালি নিচের দিকে যাচ্ছি। এ বৈঠকে বিএনপির তরফে যেসব অভিযোগ তোলা হয়েছে তার জবাব দিয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রতিনিধিদল। ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে নির্বাচন কমিশন অতীতে নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে এখন মোটামুটি একটি শক্তিশালী অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে। 

আওয়ামী লীগ প্রতিনিধি দলের অন্যতম এবং সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য মেহজাবিন খালেদ পাল্টা অভিযোগ করেছেন, বিএনপি নির্বাচন কমিশনের ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করেছে। তিনি বলেন, তারা (বিএনপি) তাদের প্রার্থীদের নমিনেশন বাতিলের জন্য সরকারকে দায়ী করছে। অথচ এতে সরকারের কোনো দায় বা দায়িত্ব নেই। এটা পুরোপুরি ইলেকশন কমিশনের ব্যাপার। এটা তাদের দায়িত্ব। বিবিসির রিপোর্ট মতে ওই আয়োজনে সরকার, বিরোধী দল এবং অন্যদের বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন কূটনীতিকরা। তারা একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন। আর এতে নির্বাচন কমিশনের শক্তিশালী ভূমিকাও চেয়েছেন তারা। 

বৈঠক শেষে যে যা বললেন: এদিকে বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম সাংবাদিকদের বলেন, একাদশ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সবকিছু করছেন। সুষ্ঠু নির্বাচন প্রশ্নে কিছু সমস্যা আছে, তা সমাধানে আমরা চেষ্টা করছি। সকল রাজনৈতিক দল ও গণমাধ্যম নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করতে হবে। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এখানে মূলত নির্বাচনটি গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য যে প্রয়োজনীয়তা সেটা আমরা বলেছি। বর্তমান যে প্রেক্ষাপট বাংলাদেশের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না হওয়া সত্ত্বেও আমরা নির্বাচনে এসেছি। এখন আমরা নির্বাচনে আসার পর দেখছি আমাদের জার্নি হচ্ছে লং হিল জার্নি, আমরা আরো নিচের দিকে যাচ্ছি। তিনি বলেন, আমরা আশা করি- এটা ক্র্যাশ না করে। আমরা আশা করি নির্বাচনের বাকি যে দিনগুলোতে নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

এই পর্যন্ত জনগণের কোনো আস্থা সৃষ্টি হয়নি। বস্তুতপক্ষে নির্বাচনটি নির্বাচনের আগে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে গেছে বিভিন্ন কারণে। এই প্রশ্নবিদ্ধ হওয়া থেকে যদি বেরিয়ে আসতে চান তাহলে তাদের প্রমাণ করতে হবে তারা একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন চান। নইলে প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন আরো ‘খারাপের’ দিকে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আজকে নির্বাচিত সরকার নেই, নির্বাচিত সংসদ নেই, নির্বাচিত প্রতিনিধি নেই। দেশের মানুষ ভোটের মাধ্যমে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে চায়, একটি নির্বাচিত সরকার ও সংসদ  দেখতে চায়। কিন্তু এখানে সমস্যা হচ্ছে পুরো নিয়ন্ত্রণটা সরকারের হাতে, নির্বাচন কমিশনের হাতে নিয়ন্ত্রণ নেই। তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কীভাবে?  আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপুু মনি বলেন, নির্বাচনটা কীভাবে আরো ভালো করা যায় তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমাদের যে বক্তব্য সেটা হলো গত ১০ বছরে ও তার আগে ২০০৭-০৮ সালেও নির্বাচনী পুরো প্রক্রিয়ায় যে ধরনের সংস্কার করা হয়েছে যা প্রত্যেকটির উদ্যোগ ছিল আওয়ামী লীগের উদ্যোগ। 

ওই সব সংস্কারের মাধ্যমে আজকে একটা সিস্টেম দাঁড়িয়েছে যার মাধ্যমে একটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব। সেই নির্বাচনে যে পক্ষ-প্রতিপক্ষ আছে তাদের অবশ্যই ভূমিকা রয়েছে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো যেন সঠিক ভূমিকা পালন করে। আওয়ামী লীগ সরকারে আছে আমরা দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছি এবং করবো। আমরা সবাইকে নিয়ে যে নির্বাচন করতে চাই, সেটা ভালো নির্বাচন করতে চাই। প্রধানমন্ত্রী যে সংলাপ করেছে তার মধ্য দিয়ে এবং নির্বাচনের পুরো প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আমরা তার প্রমাণ করছি। ডা. দীপু মনি বলেন, সরকারের যেটি উদ্দেশ্য সেটি হচ্ছে নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে নির্বাচন করবে। সরকার তাকে সাংবিধানিক যে দায়িত্ব আছে সেই দায়িত্ব অনুযায়ী সর্বাত্মক সহযোগিতা দেবে এবং সরকার সেটি করে যাচ্ছে। আলোচনা কী হয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে দীপু মনি বলেন, ভেতরে আলোচনার কথা এখানে বলবার কথা না। তবে আমরা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। 

সবাই সেটি আশা করেন এবং অতীতের চাইতে আমরা এখন যে পদ্ধতিগুলো আছে চতুর্দিকে যেভাবে ডিজিটাইলেজশন বলেন, মিডিয়ার ব্যাপকতা বলেন, তাতে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ভালো পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। সেটিকে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।  ব্রতী’র প্রধান নির্বাহী শারমিন মুরশিদ বলেন, এই ধরনের আলোচনা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। যেহেতু এখানে নির্বাচনের সব অংশীদাররা উপস্থিত ছিলেন। সেই জায়গাটা থেকে বলা হয়, সকলেই তাদের জায়গা থেকে তাদের সমস্যাগুলো উত্থাপন করেছেন। সরকারের যারা প্রতিনিধি ছিলেন, তারাও যথেষ্ট খোলাসাভাবে তাদের বোধগুলো পেশ করেছেন। আমরা আশা করি এই ধরনের আলোচনা সবার মধ্যে সম্পর্ক তৈরি করবে, টেনশন ও অস্থিরতা কমাবে। নির্বাচন পর্যবেক্ষক হিসেবে নির্বাচনের পরিবেশ সম্পর্কে বৈঠকে তাদের মতামত সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে শারমিন মুুরশিদ বলেন, আমরা আগামী দিনের দিকে তাকাতে চাই। 

আমরা মনে করি, রাজনৈতিক দলগুলো একটু সহনশীল হয়। নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা গুরুত্বপূর্ণ। সেই ভূমিকাটা শক্ত করার জন্য সরকারি দল কমিশন থেকে দূরত্ব বজায় রাখবে। আমাদের বক্তব্য ছিল নির্বাচন কমিশনের ইন্ডিডেন্স প্রতিষ্ঠিত করার জন্য রাজনৈতিক দলগুলো তার থেকে দূরত্ব রক্ষা করবে। সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এখানে যে জিনিসটা উঠে এসেছে- আগামী নির্বাচন যদি গ্রহণযোগ্য না হয় দেশে-বিদেশে যদি দৃশ্যমান ফ্রি ফেয়ার ইলেকশন না দেখা যায় যেটা এখন কিছু আলামত দেখা যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায়। এগুলো দ্য আর অবজারভিং। এটা হয়তো বাংলাদেশে এই পর্যন্ত যেসব অর্জন আছে, খুব ভালো ভালো অর্জন আছে; সেই অর্জনগুলোকে ম্লান করতে পারে। সেটাই হলো তাদের ধারণা। যেটা আলোচনায় উঠে এসেছে। এটুকুই আমি বুঝতে পেরেছি। 

বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, গওহর রিজভী, আওয়ামী লীগের ডা. দীপু মনি, বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান রিয়াজ রহমান, বিকল্পধারার শমসের মবিন চৌধুরী, সাবেক নির্বাচন কমিশনার সাখাওয়াত হোসেন, নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা ব্রতী’র শারমিন মুরশিদ, সুজনের বদিউল আলম মজুমদারসহ বিভিন্ন নির্বাচনী পর্যবেক্ষক সংস্থা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। 
  • কার্টসিঃ মানবজমিন/০৬ ডিসেম্বর ২০১৮ 

সরকার অনিশ্চয়তায় পড়ে গেছে


জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ায় সরকারের মধ্যে অস্থিরতা শুরু হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন। গতকাল বুধবার বিকালে পুরানা পল্টনে  ফ্রন্টের নতুন কেন্দ্রীয় কার্যালয় উদ্বোধনকালে তিনি এ মন্তব্য করেন। ড. কামাল বলেন, ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির মতো এবারও একটি যেন-তেন নির্বাচন করার পরিকল্পনা ছিল সরকারের। কিন্তু যখনই আমরা নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম তখন তাদের মধ্যে অস্থিরতা শুরু হলো। 

তিনি বলেন, এখন দেশে কোনো সংসদই নেই। যাদের সংসদ সদস্য বলা হচ্ছে তারা সবাই অনির্বাচিত। তারা স্বঘোষিত সংসদ সদস্য। এটাকে কোনো নির্বাচিত সংসদ বলা যায় না।

তিনি আরো বলেন, বর্তমানে দেশের মালিকানা জনগণের হাতে নেই। তাই দেশের মালিকানা পুনরুদ্ধার করতে জনগণকেই মাঠে থাকতে হবে। নির্বাচনের দিন বা তার আগে পরিস্থিতি মোকাবিলায় জনগণকে আরও সক্রিয় থাকতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো অপচেষ্টা চালানো হলে তা মোকাবিলা করতে হবে। জনগণ সক্রিয় থাকলে ৩০শে ডিসেম্বর একটি ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটবে। ভোটকেন্দ্র পাহারা দেয়ার জন্য দেশবাশীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে ড. কামাল বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে গণতন্ত্রহীন অবস্থায় আছি। এই ঘটতি পূরণের জন্য আমরা এবার শত প্রতিকূলতার মধ্যেও নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ১০ বছর পর একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এই জন্য নির্বাচনের দিন দেশবাসীকে একটা দিন ভোটকেন্দ্র পাহারা দিতে হবে।

ভোটের দিন সকাল সকাল কেন্দ্রে গিয়ে লাইনে দাঁড়াতে হবে। আশপাশের সবাইকে নিয়ে ভোট দিতে যেতে হবে। এই নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ যেন তাদের মালিকানা ফিরে পায় সেই ব্যবস্থা করতে হবে। ড. কামাল বলেন, নির্বাচনে গণমাধ্যমের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোথাও কোনো সমস্যা হলে সেটা গণমাধ্যম সবাইকে জানিয়ে দেয়। আপনারা এই নির্বাচনেও সেটা করবেন। পুলিশের ব্যাপারে আপনারা বিশেষভাবে খেয়াল রাখবেন। সাংবাদিকদের পাহারাদারের ভূমিকায় থাকতে হবে। যখনই কোথাও আইন লঙ্ঘন হবে সঙ্গে সঙ্গে আপনারা দেশবাসীকে জানাবেন। তিনি বলেন, এই নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। মানুষ দেশের মালিক। সেই মালিকানাটা প্রতিষ্ঠিত হওয়া উচিত। এ সময় তিনি আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহার ঘোষণা নিয়েও কথা বলেন। তিনি বলেন, আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির কাজ এখনো চলছে। ৮ই ডিসেম্বরের তারিখের মধ্যে এটা প্রকাশ করা হবে। 

বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহার হবে অভিন্ন। আলাদা কোনো ইশতেহার হবে না। কার্যালয় উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, ডাকসু’র সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ, গণফোম সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসিন মন্টু, জেএসডি সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবীবুর রহমান তালুকদার বীরপ্রতীক, বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, প্রেসিডিয়াম সদস্য জগলুল হায়দার আফ্রিক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

  • কার্টসিঃ মানবজমিন/০৬ ডিসেম্বর ২০১৮ 

Wednesday, December 5, 2018

আপিলের শুনানি হতে হবে প্রকাশ্যে

এম সাখাওয়াত হোসেন

বাংলাদেশের নির্বাচনী ইতিহাসে এযাবৎ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং জটিল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে যাচ্ছে ৩০ ডিসেম্বর। এর আগে বাংলাদেশের কোনো সংসদ নির্বাচন ১০ বছর ক্ষমতায় থাকা এমন শক্তিধর দলীয় সরকারের অধীনে পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রিপরিষদ এবং ৩৫০ জন সাংসদ বহাল থাকা অবস্থায় অনুষ্ঠিত হয়নি। এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের প্রাক্–নির্বাচনী এমন জটিল এবং চমকপ্রদ জোটের (সম্ভাব্য) নির্বাচন হয়নি। নির্বাচনী মাঠে রয়েছে একাধিক জোট, যার মধ্যে সরকারি দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপিকে ঘিরে যে জোট গড়ে উঠেছে, তার গঠনপ্রক্রিয়া এবং শরিকদের রাজনৈতিক দর্শন বলতে আলাদা করে দেখার কোনো উপায় নেই।

দুই জোটের এবং দলের মনোনয়নপ্রার্থীদের দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহের সময় যে উন্মাদনা দেখা গেল, তা আগে তেমন ঘটেনি। দুই দলের বা জোটের প্রাথমিক মনোনয়ন দেওয়া নিয়েও যথেষ্ট জটিলতা দেখা দিয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে আগামী নির্বাচন বাংলাদেশ সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। এ ধরনের জটিল পরিস্থিতি এবং চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশের বিগত নির্বাচন কমিশনগুলোর, বিশেষ করে ১৯৯০ সালের পরের কমিশনগুলোর কোনো কমিশনকেই মুখোমুখি হতে হয়নি।

এবারের নির্বাচন কমিশনের সামনে যেসব চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে, সেগুলোর মুখোমুখি হয়ে এবং সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারলে হয়তো মোটামুটি একটি ভালো নির্বাচনের আশা করা যায়। তবে নির্বাচন কমিশনকে সংবিধান এবং আইন দ্বারা যে ক্ষমতা দেওয়া আছে, তার সঠিক ও সময়োপযোগী ব্যবহারের ওপর তা নির্ভর করবে। আমরা দেখেছি যে সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোতে কমিশন তাদের এই ভূমিকা পালন করতে পারেনি। এ প্রসঙ্গে বরিশাল নির্বাচন নিয়ে একজন নির্বাচন কমিশনারের প্রতিবেদনের দৃষ্টান্ত বিবেচনায় নিতে পারি। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ওই প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। সেই নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম এবং নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত প্রশাসনের নিরাপত্তা সদস্যসহ, পক্ষপাতিত্ব বা নির্লিপ্ততা যেভাবে তুলে ধরা হয়েছে, তাতে নির্বাচন কমিশনের প্রতিবেদন থেকে এ বিষয় নিশ্চিত যে নির্বাচন কমিশন তাকে প্রদত্ত ক্ষমতার ব্যবহার করতে পারেনি অথবা কোনো কারণে করতে চায়নি।

বরিশাল সিটি করপোরেশনের নির্বাচনটি যেহেতু কমিশনের সর্বসম্মতিক্রমে স্থগিত করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল (ওই প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে), তাই তাৎক্ষণিক না হলেও পরবর্তী সময়ে নির্বাচন কমিশন তা বাতিল করতে পারত। নির্বাচন কমিশনকে সংবিধানের ১১৯ ধারায় সে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। ওই ধারার আওতায় নির্বাচন কমিশন একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সংবিধান বা প্রচলিত আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়, এমন যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা রাখে।

১৯৭৭ সালে ভারতের লোকসভার (সংসদ) নির্বাচনকালে পাঞ্জাবের ফিরোজপুর সংসদীয় আসনের কয়েকটি কেন্দ্রে ব্যাপক ভোট কারচুপির কারণে নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ সংসদীয় এলাকার নির্বাচন বাতিল করে। এই বাতিলের বিরুদ্ধে একজন প্রার্থী নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলে উচ্চ আদালতে মামলা করেন (মহিন্দর সিং গিল ও অন্যান্য বনাম নির্বাচন কমিশন: এআইআর ১৯৭৮ এসসি ৮৫১)। মামলার আরজিতে বলা হয়, যে কয়েকটি কেন্দ্রে গোলযোগ এবং ভোট কারচুপি হয়েছিল, সেগুলো বন্ধ না করে নির্বাচন কমিশন এখতিয়ারবহির্ভূতভাবে সম্পূর্ণ সংসদীয় এলাকার নির্বাচন বন্ধ করায় প্রার্থীর অধিকার ক্ষুণ্ন হয়েছে। এই মামলার নিষ্পত্তি করে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিয়েছিলেন, সেটি ছিল যুগান্তকারী এবং ভারতীয় সংবিধানের ৩২৪ ধারার আওতায় অবাধ ক্ষমতা দেওয়ার ব্যাখ্যা। ওই ব্যাখ্যায় বলা হয়, নির্বাচন কমিশন অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য তার যেকোনো ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে। ওই ক্ষমতা সংবিধান অথবা আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হলেই হলো। কাজেই নির্বাচন কমিশনের সব ক্ষমতা যে লিখিত আকারে রয়েছে, তেমন নয়। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন যেকোনো পদক্ষেপ নিতে পারে।

ভারতের সংবিধানের অনুরূপ আমাদের সংবিধানের ধারা ১১৯ একই ভাষায় প্রণীত। এ ধারাবলে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনেরও অনুরূপ সীমাহীন ক্ষমতা (প্লেনারি পাওয়ার) দেওয়া রয়েছে। ভারতের অনুরূপ বাংলাদেশের উচ্চ আদালত ২০০৫ সালের একটি মামলার নিষ্পত্তিকালে (আবদুল মোমেন চৌধুরী ও অন্যান্য বনাম বাংলাদেশ ও অন্যান্য: রিট ২৫৬১ আগস্ট ২৪,২০০৫) সংবিধানের ধারা ১১৯ (১)-এর অবাধ ক্ষমতার কথা বলা হয়েছে। কাজেই শুধু নির্বাচন চলাকালে নয়, নির্বাচনের দিনের আগে এবং পরে নির্বাচন কমিশন যদি মনে করে যে কোনো এলাকায় সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়, সে ক্ষেত্রে ওই নির্বাচন বাতিল করার ক্ষমতা রাখে। এর আওতায় বরিশালের নির্বাচনটি বাতিল করা হলে কমিশন জনগণের আস্থা অর্জন ও একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারত, যার সুফল সামনের জাতীয় নির্বাচনেও পাওয়া যেত।

২.কোনো নির্বাচনই অতীত নির্বাচনের মতো ভালো বা খারাপ হবে বা অনুরূপ ব্যবস্থাপনার ছকে হবে, তেমন ভাবার অবকাশ নেই। সম্পূর্ণ নির্বাচন–প্রক্রিয়া নির্বাচন কমিশনের আওতায় রাখতে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনকে যেমন দায়িত্ব নিতে হবে, তেমনি নিয়ন্ত্রণের জন্য অবশ্যই ক্ষুদ্র ব্যবস্থাপনার (মাইক্রো ম্যানেজমেন্ট) দিকে নজর দিতে হবে। এই ব্যবস্থাপনার ছক, তদারকি এবং নিয়ন্ত্রণ নির্বাচন কমিশনের হাতেই রাখতে হবে। তা রিটার্নিং কর্মকর্তার ঘাড়ে চাপালে হবে না। অনেক ক্ষেত্রে রিটার্নিং কর্মকর্তার প্রতিবেদনের অপেক্ষা না করে পত্রপত্রিকার প্রতিবেদনকে আমলে নিয়ে নির্বাচন কমিশন নিজ উদ্যোগে ব্যবস্থা নিতে পারে এবং প্রয়োজনে তা–ই নেওয়া উচিত। অভিযোগ মৌখিক, পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত অথবা দৃশ্যমান—সর্বক্ষেত্রেই আমলে নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে এসব অভিযোগ খণ্ডন অথবা ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এসব সিদ্ধান্ত অবশ্যই জনসমক্ষে উন্মুক্ত করতে হবে। অন্যথায় নির্বাচন কমিশন বিশ্বাসযোগ্যতা হারাবে।

৩.মনোনয়নপত্র বাছাই নিয়ে এবার যা হয়েছে, তা আগে কখনো হয়নি। যেখানে বিএনপির ১৪১ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে, সেখানে আওয়ামী লীগের বাতিল হয়েছে মাত্র তিনজনের। বাতিলের ফলে ছয়টি আসনে বিএনপি প্রার্থীশূন্য হয়ে পড়েছে, যদিও এসব আসনে একাধিক প্রার্থী দিয়েছিল। প্রথম আলোর (৩ ডিসেম্বর, ২০১৮) শিরোনাম ছিল ‘মনোনয়ন বাতিলের রেকর্ড’। তবে এই বাতিলের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে আপিলের সুযোগ রয়েছে এবং তারপরেও রয়েছে উচ্চ আদালতে যাওয়ার সুযোগ। ইতিমধ্যেই অনেক প্রার্থী আপিল করেছেন।

২০০৮ সালে (আমার তথ্য অনুযায়ী) ২ হাজার ৫৪২ জনের মধ্যে বাতিল হয়েছিল ৫৫৭ জনের, যাঁদের মধ্যে ৮৯ স্বতন্ত্রসহ ৩৯৮ জন আপিল করেছিলেন, যার মধ্যে ১২৪ জন বৈধ প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্তভাবে বৈধ হন। এঁদের মধ্যে বেশির ভাগই রিটার্নিং কর্মকর্তাদের আইনের ব্যাখ্যাজনিত কারণে। শুধু একজনের বিরুদ্ধে আমাদের ব্যবস্থা নিতে হয়েছিল। স্মরণযোগ্য যে ওই সময়েই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছিল। ছোটখাটো ত্রুটির জন্য বাতিল না করার নির্দেশ দিয়ে কয়েকটি ত্রুটির কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। তবে ওই সময়ে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বাতিল হয়েছিল আদালত কর্তৃক শাস্তিপ্রাপ্ত, ঋণখেলাপি এবং বিলখেলাপির কারণে। পত্রপত্রিকার খবরে জানা যায়, এবারও ঋণখেলাপিদের সংখ্যাই বেশি। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক ঋণখেলাপি হিসেবে ঘোষিত হতে হবে।

প্রসঙ্গত, ওই সময়ই অর্থাৎ ২০০৮ সালে প্রথম বৈধতার বিরুদ্ধে আপিল গৃহীত হয়েছিল, এ ক্ষেত্রেই ৮৯ জনের আপিল গৃহীত হয়েছিল এবং কয়েকজনের প্রার্থিতা বাতিলও করা হয়েছিল। পরে আরও ১৭ জন প্রার্থী আদালতের রায়ের কারণে এমন সময় মুক্ত হয়েছিলেন, যখন আমাদের প্রায় ২৮ লাখ ব্যালট পেপার পোড়াতে হয়েছিল নতুন ব্যালট পেপার তৈরি করতে। পরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার আদালতের প্রতি পরোক্ষভাবে হতাশা ব্যক্ত করায় উচ্চ আদালত কর্তৃক আপিল শুনানি বন্ধ হয়েছিল। ওই সময় বাতিলের কারণে প্রধান দলগুলোর কোনো আসন প্রার্থীশূন্য হয়নি।

ওই সময়ে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য ইইউসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংগঠন এবং হিউম্যান রাইটস থেকেও অনেকে উপস্থিত ছিলেন। আমরা প্রতিটি আপিল ধৈর্যসহকারে শুনে তাৎক্ষণিকভাবে সিদ্ধান্ত দিয়েছিলাম এবং প্রত্যেককে চাহিদামতো রায়ের কপি দেওয়া হয়েছিল, যাতে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি উচ্চ আদালতে যেতে পারেন।

আমি এই সংক্ষিপ্ত বিবরণ এ কারণে দিলাম, কারণ নির্বাচন কমিশনের কাছেই আপিল আসবে এবং নিষ্পত্তি হতে যাচ্ছে। কাজেই নির্বাচন কমিশনকে নির্মোহভাবে শেষ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। শুনানি হতে হবে প্রকাশ্যে এবং পরিচ্ছন্নভাবে। এ ক্ষেত্রে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কোনো গাফিলতি বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বাতিল হয়ে থাকে, তবে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে।

৪. সন্দেহ নেই যে নির্বাচন কমিশন এক জটিল পরিস্থিতি এবং কঠিন নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে যাচ্ছে। কাজেই বেলা শেষে সব দায়দায়িত্বও নির্বাচন কমিশনের ওপরে বর্তাবে। দৃশ্যত মনে হয়, নির্বাচন কমিশন একটি ভালো নির্বাচনের আশা করে কিন্তু সে আশা বাস্তবে রূপান্তরিত করতে হলে সময় থাকতেই দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে হবে। সবার প্রতি সুবিচারের মধ্য দিয়ে নিষ্পত্তি হোক মনোনয়ন–প্রক্রিয়া। নির্বাচন কমিশনকে মনে রাখতে হবে, তাদের সঠিক ও সাহসী সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ সংকটের সমাধান খুঁজতে হবে। অন্য কেউই তাদের ব্যর্থতার অংশীদার হবে না।
  • ড. এম সাখাওয়াত হোসেন: সাবেক নির্বাচন কমিশনার এবং বর্তমানে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির এসআইপিজির সম্মানিত ফেলো 
  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ ০৫ ডিসেম্বর ২০১৮

শাজাহান খানের স্থাবর সম্পদ ৯৩ গুণ বেড়েছে

  • শাজাহানের স্থাবর সম্পত্তি বেড়ে ৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা
  • স্ত্রীর সম্পত্তির পরিমাণ ২ কোটি ৮৬ লাখ ৯৩ হাজার টাকা
  • শাজাহান খান মূলত একজন প্রভাবশালী শ্রমিকনেতা


এক দশক আগে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের নিজের নামে ঢাকায় কোনো ফ্ল্যাট কিংবা জমি ছিল না। অথচ এখন লালমাটিয়া, বাড্ডা, মেরাদিয়া ও পূর্বাচলে নিজের এবং স্ত্রীর নামে জমি ও ফ্ল্যাট রয়েছে। গত ১০ বছরে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এই মন্ত্রীর স্থাবর সম্পদ ৯৩ গুণ এবং তাঁর স্ত্রীর বেড়েছে ১২ গুণের বেশি। নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শাজাহান খানের দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী শাজাহান খানের স্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ৩ কোটি ৯৪ লাখ ১২ হাজার ৯৩৩ টাকা। তাঁর স্ত্রীর সম্পত্তির পরিমাণ ২ কোটি ৮৬ লাখ ৯৩ হাজার ৪০৪ টাকা। আর যৌথ মালিকানায় শাজাহান খান ২ কোটি ৭৫ লাখ ২১ হাজার ৫৩২ কোটি টাকার সম্পত্তির কথা উল্লেখ করেছেন। সব মিলিয়ে শাজাহানের স্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ৬ কোটি ৬৯ লাখ ৩৪ হাজার ৪৬৫ টাকা। এক দশকে শাজাহান খান এবং তাঁর স্ত্রীর স্থাবর সম্পত্তি বাড়ার হার যথাক্রমে ৯৩ ও ১২ গুণের বেশি।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি শাজাহান খান মূলত একজন প্রভাবশালী শ্রমিকনেতা। প্রায় এক যুগ আগে বাংলাদেশের পরিবহনশ্রমিকদের সবচেয়ে বড় সংগঠনটির বড় পদে আসীন হন তিনি। ২০০৯ সালে মন্ত্রিসভার সদস্য হওয়ার পর তাঁর ওই পদে থাকার অধিকার নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এমনকি সড়ক দুর্ঘটনার জন্য চালকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে সব সময় তাঁদের রক্ষার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন শাজাহান খান। নিরাপদ সড়কের দাবিতে এ বছরের আগস্টে স্কুলছাত্রদের আন্দোলনের সময়ও যথারীতি পরিবহনশ্রমিকদের পক্ষ নেন তিনি।

২০০৮ ও ২০১৪ সালের মতো এবারের নির্বাচনের হলফনামাতেও শাজাহান খান পেশার কথা বলতে গিয়ে রাজনীতি ও ব্যবসার কথা উল্লেখ করেছেন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শাজাহান খানের হলফনামায় দেখা যায়, ব্যবসার পাশাপাশি মন্ত্রী ও সাংসদ হিসেবে পাওয়া ভাতা হচ্ছে তাঁর আয়ের মূল উৎস। এর মধ্যে ব্যবসা থেকে তাঁর বার্ষিক আয় ৩ কোটি ৩৬ লাখ ২ হাজার ২৫০ টাকা। আর মন্ত্রী ও সাংসদের পারিতোষিক ও ভাতা হিসেবে তিনি বছরে আয় করেন ২৪ লাখ ৬৭ হাজার ৫৮০ টাকা। ২০০৮ সালে শাজাহান খানের স্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ৭ লাখ ১৬ হাজার ৯৫৩ টাকা। তাঁর স্ত্রীর সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ২৩ লাখ ৫৭ হাজার টাকা।

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী, শাজাহান খান এবং তাঁর স্ত্রীর অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৫৯ লাখ ১৮ হাজার ৩৪৮ টাকা ও ৩৬ লাখ ৮৭ হাজার ৪৭০ টাকা। আর একাদশ সংসদ নির্বাচনে শাজাহানের হলফনামায় তাঁদের অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ যথাক্রমে ৩ কোটি ৪ লাখ ৭৬ হাজার ৭২৪ টাকা ও ৪৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা। অর্থাৎ গত ১০ বছরে শাজাহান খানের অস্থাবর সম্পত্তি বেড়েছে পাঁচ গুণ।

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় শাজাহান খান তাঁর স্ত্রীর নামে ঢাকার আনন্দনগর ও পূর্বাচলে জমি থাকার প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন। এবারের হলফনামায় শাজাহান খান নিজের নামে লালমাটিয়ায় ফ্ল্যাট ও জমির কথা উল্লেখ করেছেন। নৌপরিবহনমন্ত্রী তাঁর স্ত্রীর নামে পূর্বাচলের পাশাপাশি বাড্ডায় জমি এবং মেরাদিয়ায় ফ্ল্যাট থাকার কথা জানিয়েছেন।

২০০৮ সালের নির্বাচনের সময় দেওয়া হলফনামায় ব্যক্তি ও সংস্থা মিলিয়ে শাজাহান খান ৪৫ লাখ ২৯ হাজার ৯৫৩ টাকা দেনার কথা উল্লেখ করেছিলেন। এবারের হলফনামায় কোনো ঋণের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেননি তিনি।

  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ ০৫ ডিসেম্বর ২০১৮

Find the missing

EDITORIAL

Families in despair as cases of disappearance remain unsolved


We can empathise with Shabnam Zaman's despair at the apparent lack of movement by law enforcers in investigating how her father, former ambassador Maroof Zaman, went missing under dubious circumstances on December 4, 2017. His family members are in the dark as to who picked him up and where he is now. The one common thread that unites the families of the disappeared in our country is their loved ones' hope that they be returned unharmed.

It is difficult to imagine why no law enforcement agency has any clue as to what happened to Mr Zaman. The facts are very clear. The gentleman in question left in his car to pick up his daughter from the airport. Some time later, he called the residence and asked family members to hand over his laptop to someone who'd be going to the house. The footage of these people is there and yet, after a year of knocking on every conceivable door, the family is nowhere near finding the truth as to who took him and why, and whether Mr Zaman is alive or dead.

Human rights organisation Ain o Salish Kendra's data tells us that as many as 544 people have fallen victim to alleged enforced disappearance between 2010 and July 2018. And that over 300 of them are still missing. The calls for forming an empowered independent commission to investigate these disappearances have all but fallen on deaf ears and year after year, families like that of Mr Zaman live with the knowledge of not knowing what happened to their loved ones. Too many of these cases have remained unsolved, which is hardly helpful in increasing faith of the people on the state of law and order in the country. It is time the authorities raised the veil on these unsolved cases and launched vigorous investigations to find the missing people. 

  • Courtesy: The Daily Star/ Dec 05, 2018

US, European nations keen to observe Dec 30 polls

Foreign ministry tells EC


The Ministry of Foreign Affairs informed the Election Commission that several Western countries, along with some reputed regional and international groups, expressed their interest in sending election observers for the December 30 polls.

According to diplomatic sources, the United States, France, Denmark and Norway showed interest in sending election observers.

US-based National Democratic Institute (NDI) and Bangkok-based Asian Network for Free Election (ANFREL) were also willing to send observers, said the sources.

US submitted a list of 65 observers and ANFREL sent a list of 28 to the EC, said sources.

Among the major Asian countries, Japan showed interest to observe the upcoming election.

Two of the biggest Asian countries -- China and India -- had no plan to send any election observer teams to Bangladesh, said the sources.

However, a diplomat of High Commission of India yesterday told The Daily Star that India would consider sending support if Dhaka seeks assistance.

"I think the Bangladesh Election Commission and the Election Commission of India are in direct contact regarding the observer issue," he said.

Around ten foreign embassies in Dhaka already contacted the foreign ministry showing interest in observing the election, said the ministry sources.

Meanwhile, the Election Commission of Bangladesh wrote to the SAARC nations inviting them to send two election observers from each country for the December 30 polls, said EC sources.

Commonwealth headquarters was also requested to send its election observer group to Bangladesh, sources added.

Besides, the EC invited the Association of World Election Bodies (A-WEB) and Association of Asian Election Authorities (AAEA) to send two observers each from their respective organisations, sources said.

Bangladesh is a member of both AWEB and AAEA and regularly pays for subscriptions to the organisations.

The US is expected to have 20 teams, 12 from NDI and eight from the US embassy, along with its agencies like USAID, in Dhaka for observing the polls, foreign ministry officials said.

“I think none is flying in from the USA. NDI team members will mostly come from different Asian countries and the eight US embassy teams will comprise the diplomats and their local members in Bangladesh,” said an official of the foreign ministry.

Each NDI team would comprise two observers to monitor various constituencies across Bangladesh, said a diplomatic source.

Washington has already cleared fund and instructed authorities concerned to send 12 observer teams to monitor the December 30 polls, diplomatic sources added.

An NDI pre-election observer team has already arrived in Dhaka and began its activities, said the diplomatic source.

A five-member delegation of NDI had a meeting with the EC yesterday to discuss its plan of monitoring the polls, EC sources said.

  • Courtesy: The Daily Star/ Dec 05, 2018

‘BCL members’ dismantle CU Khaleda Zia Hall nameplate


Leaders and activists of the Bangladesh Chhatra League allegedly dismantled the nameplate of Deshnetri Begum Khaleda Zia Hall of Chittagong University on Tuesday.

Campus sources said a group of BCL activists removed a signboard that led the way to the dormitory and later dismantled the dormitory nameplate in front of the hall at about 3:00pm.

At that time, they also demanded that the university administration should rename the dormitory after Bir Protik Taramon Bibi.

The BCL leaders and activists claimed that a dormitory of a university could not be named after a person who had misappropriated the money of orphans and masterminded the August 21 grenade attack.

Chittagong University proctor Mohammad Ali Asgar Chowdhury said it was not easy to change the name of the hall. 

‘The university authorities will look into the matter if the BCL submits a written demand in this connection,’ he added.

  • Courtesy: New Age/ Dec 05, 2018

ভোটারের ভাবনা - গাজীপুরে ‘নির্ঘাত কনটেস্ট’ হবে!

ধুর ভাই কিসের ইলেকশনের কথা কন? আমি তো কুনো ভুটের আলাপ পাই না। লোকজন সব দাবড়ানির ভয়ে মরতাছে। আইজ অর বাড়ি পুলিশ যায়, কাইল তার বাড়ি ডিবি যায়। ভুটের মইধ্যে যায়া মরব? আমি গরিব মানুষ। দুকানদারি কইরে খাই, আমার বাড়িও পুলিশ আসে! আমার ভায়রা আবার বিএনপি করে তো! সেই কারণে তারা ভাবে আমিও বিএনপি।’ পান চিবুতে চিবুতে কথাগুলো বলছিলেন গাজীপুরের পঞ্চাশোর্ধ্ব চা–দোকানি হাতেম আলী। লুঙ্গির খুট দিয়ে পানের পিক মুছতে মুছতে এদিক-ওদিক চেয়ে দেখে নিচ্ছিলেন কেউ তাঁর কথাগুলো শুনে ফেলল কি না। আমি তাঁকে জিগ্যেস করেছিলাম, ‘ভোটের ভাব কেমন বোঝেন?’ তখন তিনি ওই কথাগুলো বলছিলেন। কিন্তু যখন তাঁকে নিজের পরিচয় জানালাম, তখন তিনি থমকে গেলেন। তারপর মুহূর্তে ইউটার্ন নিলেন। তখন বললেন উল্টো কথা। তখন তাঁর কথার অর্থ যা দাঁড়ায় তা হলো: খুব সুন্দর ভোটের পরিবেশ আছে। নির্বাচনের আমেজ এখনো নেই বটে, তবে ভোট হচ্ছে বলে সবাই আনন্দে আছে।

সেখানে মানিক নামের এক স্থানীয় বাসিন্দা ছিলেন। তিনি বললেন, ইলেকশন নিয়ে মানুষের মধ্যে চাঞ্চল্য নেই। সবাই একধরনের চাপা আশঙ্কার মধ্যে আছে। গায়েবি মামলা ও ধরপাকড়ে বিরোধী শিবিরের লোকজন চাপে আছে।  

এলাকাটি গাজীপুর–২ আসনের মধ্যে পড়েছে। এখানে আওয়ামী লীগ থেকে টিকিট পেয়েছেন জাহিদ আহসান রাসেল। বিএনপির শিবির থেকে তাঁকে মোকাবিলা করবেন এম মঞ্জুরুল করিম রনি ও সালাহ উদ্দিন সরকার। ‘ভোটে কে পাস করবে বলে মনে হয়?’—এই প্রশ্নের জবাবে হাতেম আলী বললেন, ‘ভুট যুদি শ্যাষ পর্যুন্ত হয় আর দাঙ্গা–ফ্যাসাদ ছাড়া হয়, তাইলে নির্ঘাত কনটেস্ট হবে। এই পুরা গাজীপুরে একচাইটা বইলা কিছু নাই। কড়া ফাইট কইরা পাস করতে হইব।’

গাজীপুর জেলা আইনজীবী সমিতির অফিসে স্থানীয় আইনজীবী ও সাংবাদিক আসাদুল্লাহ বাদল বললেন, গাজীপুর শহর ও তার আশপাশের এলাকায় প্রচুর পোশাক কারখানা ও অন্যান্য শিল্পকারখানা আছে। এসব শিল্পকারখানায় লাখ লাখ শ্রমিক কাজ করেন। এদের একটা বিরাট অংশ স্থানীয় ও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ভোটার। তাঁরা বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী। এখানকার ভোটারদের মধ্যে মতাদর্শগত দিক থেকে একটি মিশ্র ব্যাপার আছে। ফলে একচেটিয়া জনসমর্থন কোনো নেতারই নেই। স্বচ্ছ ভোট হলে এই ভোটারদের রায় একটি নিয়ামক শক্তি হয়ে উঠবে।

বাদল বললেন, প্রতিদিনই এখানে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করা হচ্ছে। সরকারদলীয় প্রার্থীরাই মূলত আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন। এখন এখানে সরব আছেন সরকারপন্থীরা। বিরোধীরা নানা ধরনের আশঙ্কা ও আতঙ্কে নীরব। তাঁদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ আছে। ১৫ ডিসেম্বর সেনাবাহিনী মাঠে নামলে হয়তো বিরোধীদের সরকারপন্থীরা ধাওয়া করতে পারবে না। তখন কিছুটা সমতা আসবে। সে পরিস্থিতি হলে এই নীরব ভোটাররা প্রকাশ্যে আসবেন। তখন নির্বাচনী আমেজ টের পাওয়া যাবে। তবে তিনি মনে করেন, এখন জনমনে থমথমে ভাব আছে। সরকারপন্থী ও বিরোধীরা একটা শীতলযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

গাজীপুর-১ আসনে (কালিয়াকৈর উপজেলা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ১ থেকে ১৮ নম্বর ওয়ার্ডগুলো নিয়ে গঠিত) আওয়ামী লীগের টিকিট নিয়ে লড়বেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে বিএনপির তানভীর আহমেদ সিদ্দিকীর সঙ্গে তাঁর মূল লড়াই হবে। কালিয়াকৈরে সেখানকার ভোটার নজরুল পাশার সঙ্গে কথা হলো। নজরুল বললেন, এখানে এই দুই প্রার্থীই হেভিওয়েট। ভোট স্বচ্ছ হলে তঁাদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। তবে নজরুল মনে করেন, মোজাম্মেল হক এখানকার ভোটার নন বলে স্থানীয় ভোটারদের মধ্যে একধরনের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া আছে।

গাজীপুর-৩ আসনে (শ্রীপুর উপজেলা এবং গাজীপুর সদর উপজেলার মির্জাপুর, ভাওয়ালগর ও পিরুজালী ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত) আওয়ামী লীগের প্রার্থিতায় পরিবর্তন এসেছে। টানা ৩০ বছর এখান থেকে প্রার্থী হয়ে এসেছেন আইনজীবী মো. রহমত আলী। তাঁর অসুস্থতার কারণে এবার তাঁর ছেলে আইনজীবী জামিল হাসান দুর্জয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তবে দল মনোনয়ন দিয়েছে গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও শ্রীপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন সবুজকে। স্থানীয় ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেল, সাধারণ মানুষের কাছে সবুজের জনপ্রিয়তা অনেক। তিনি অনেক আগে থেকেই তৃণমূল পর্যায়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। আমতলী এলাকার বাচ্চু মিয়া বললেন, ‘সবুজ ভাই সবার সাথে কোলাকুলি করে বহুত আগে থাইকা। বিএনপির মধ্যেও সে জনপ্রিয়। তার কুনো ক্ষতি বিএনপির লোকজনও চায় না।’ সবুজের সঙ্গে বিএনপির হয়ে লড়াইয়ে থাকবেন অধ্যাপক ডা. এস এম রফিকুল ইসলাম বাচ্চু।

গাজীপুর-৪ আসনে (কাপাসিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত) তাজউদ্দীনকন্যা সিমিন হোসেন রিমির সঙ্গে লড়বেন প্রয়াত বিএনপি নেতা হান্নান শাহর ছেলে শাহ রিয়াজুল হান্নান।

কাপাসিয়া সদর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আজগর হোসেন খান বলছিলেন, এই দুই প্রার্থীরই পারিবারিক ঐতিহ্য আছে। দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর রক্ত রিমির গায়ে বইছে। অন্যদিকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে যে ফকির আন্দোলন হয়েছিল, সেই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ফকির মজনু শাহর বংশধর হলেন শাহ রিয়াজুল হান্নান। দুজনের বিষয়েই জনমনে অগাধ শ্রদ্ধা আছে। তবে ভোটাররা যদি ব্যক্তি ইমেজকে সরিয়ে দিয়ে নৌকা এবং ধানের শীষ প্রতীককে মাথায় নিয়ে ভোট দেন, তাহলে কী ফল হবে তা নীরব ভোটাররা সরব না হওয়া পর্যন্ত আন্দাজ করা যাচ্ছে না।

গাজীপুর-৫ (কালীগঞ্জ উপজেলা, গাজীপুর সদর উপজেলার বাড়িয়া ইউনিয়ন এবং গাজীপুর সিটি করপোরেশন ৩৯, ৪০, ৪১ ও ৪২ নং ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত) আসনে আওয়ামী লীগের মেহের আফরোজ চুমকি এবং বিএনপির এ কে এম ফজলুল হক মিলন লড়বেন।

আমতলী বাজারের জাকির হোসেন মনে করেন, ভোট সুষ্ঠু হলে তাঁদের মধ্যেও তীব্র লড়াই হবে। কিন্তু লোকজনের সঙ্গে কথা বলে যা বোঝা গেল, তার চুম্বক কথা হলো আপাতত সরকারপন্থী ও সরকারবিরোধীদের মধ্যে একটা শীতল যুদ্ধ চলছে। ভোটে তার চূড়ান্ত প্রতিফলন দেখা যাবে।
  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ ০৫ ডিসেম্বর ২০১৮

জামালপুর-৩ আসন - আচরণবিধি ভেঙে সমাবেশ প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমের

যুব সমাবেশ আয়োজনের নামে জামালপুর-৩ (মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ) আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালানো হয়েছে। নেতা–কর্মীরা বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে মিছিল ও মোটরসাইকেল মহড়া দিয়ে সমাবেশে অংশ নিয়েছেন। যা নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন। গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে প্রধান অতিথি হিসেবে যুব সমাবেশে যোগ দেন বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম। মেলান্দহ উপজেলা যুবলীগের আয়োজনে শহীদ মিনার চত্বরে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনির ৮০তম জন্মদিন উপলক্ষে এই আয়োজন করা হয়। সরেজমিনে বেলা তিনটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত সমাবেশে উপস্থিত থেকে দেখা যায়, বিভিন্ন জায়গা থেকে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নেতা–কর্মীরা যুব সমাবেশে অংশ নিতে থাকেন। মোটরসাইকেল মহড়া দিয়েও একটি পক্ষ সমাবেশে অংশ নেয়। বেলা সাড়ে তিনটার মধ্যেই খোলা মাঠটি মানুষে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। এরপর স্থানীয় নেতা–কর্মীরা বক্তব্য শুরু করেন।

অনুষ্ঠানে বেশির ভাগ বক্তা পাঁচবারের সাংসদ মির্জা আজমকে আমৃত্যু সাংসদ নির্বাচিত করার ঘোষণা দেন। বিশাল ভোটের ব্যবধানে মির্জা আজমকে নির্বাচিত করে শেখ হাসিনাকে আসনটি উপহার দেওয়ার ঘোষণাও দেওয়া হয় সমাবেশ থেকে। প্রায় বক্তাই নির্বাচনী সংশ্লিষ্ট বক্তব্য রাখেন।

নির্বাচনী আচরণবিধির ১২ ধারা অনুযায়ী, কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল বা দলের মনোনীত প্রার্থী বা তাঁর পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি ভোট গ্রহণের জন্য নির্ধারিত দিনের তিন সপ্তাহ সময়ের আগে কোনো প্রকার নির্বাচনী প্রচার শুরু করতে পারবেন না। আচরণবিধির ৮ ধারা মতে, মোটরসাইকেল সহকারে মিছিল বা কোনোরূপ শোডাউন দেওয়া যাবে না।

এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল বিকেলে মির্জা আজমের মুঠোফোনে কল দিলে তিনি ধরেননি। অনুষ্ঠানে উপস্থিত মেলান্দহ উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য একেএম হাবিবুর রহমান বলেন, যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতার জন্মদিন উপলক্ষে রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুমতি নিয়ে কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। সেখানে কোনো প্রচারণা চালানো হয়নি।

রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীর বলেন, রাজনৈতিক সভা ও সমাবেশ নিষেধ নয়। তবে ১০ তারিখের আগে কোনো ধরনের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালানো যাবে না। খোলা মাঠে সমাবেশ এবং নির্বাচনী বক্তৃতা রাখা আচরণবিধি লঙ্ঘন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/০৫ ডিসেম্বর ২০১৮