Search

Sunday, January 6, 2019

ধানের শীষে ভোট বেশি পড়ায়, গ্রামটি এখন বিচ্ছিন্ন!

  • রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের একটি গ্রাম কলমা
  • ধানের শীষে ভোট বেশি পড়েছে 
  • তাই বাস ঢুকছে না
  • ডিশ লাইন কেটে দেওয়া হয়েছে


গ্রামটির ভেতরে দিয়ে যাত্রীবাহী বাস চলত। ৩০ ডিসেম্বরের সংসদ নির্বাচনের পর সেই গ্রামে আর বাস ঢুকছে না। বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে টেলিভিশনের স্যাটেলাইট সংযোগ। অটোরিকশার চালকদের গ্রামের বাইরে যেতে বারণ করে দেওয়া হয়েছে। একইভাবে বাইরের গাড়িগুলোও গ্রামের ভেতর দিয়ে যাতায়াত করছে না।

রাজশাহীর তানোরের এই গ্রামটির নাম কলমা। এটি রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের একটি গ্রাম। রাজশাহী শহর থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে এই গ্রামের ভোটাররা কলমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন। এই কেন্দ্রে বিএনপি প্রার্থী আমিনুল হক পেয়েছেন ১ হাজার ২৪৯ ভোট। আর আওয়ামী লীগের প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরী পেয়েছেন ৬৫৩ ভোট। নাম প্রকাশ না করার শর্তে গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, একটা ‘দোষে’ তাঁদের গ্রাম এখন বাইরের জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন। দোষটা হলো, নৌকার চেয়ে ধানের শীষে ভোট বেশি পড়েছে।

গতকাল শুক্রবার সকালে কলমা গ্রামে গিয়ে বিএনপির কোনো নেতাকে পাওয়া না গেলেও সমর্থকেরা ছিলেন। প্রকাশ্যে তাঁরা কিছু বলতে চাননি। তাঁদের ভাষায়, বাস বন্ধ, ডিশ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পাশাপাশি গ্রামের গভীর নলকূপগুলো আওয়ামী লীগের লোকজন দখলে নিয়েছেন। এবার হয়তো তাঁদের সেচের পানিও দেওয়া হবে না। গ্রাম থেকে বের হতে হলে পশ্চিমে বিল্লি গ্রাম এবং পূর্বে দরগাডাঙ্গা গ্রামের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। কিন্তু কোনো দিক দিয়েই গ্রামের লোকজন আর বের হতে পারছে না।

তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম রাব্বানী গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘কলমা গ্রামের বিষয়টি আমিও শুনেছি। কিন্তু আমার কিছু করার নেই।’

এক গ্রামবাসী বলেন, এখন আর দলমত দেখা হচ্ছে না। যাকে পাচ্ছে তাকেই মারছে, হুমকি দিচ্ছে। গত বুধবার গ্রামের আওয়ামী লীগ সমর্থক দুই শিক্ষক একটি মোটরসাইকেলে করে কলেজে যাচ্ছিলেন। পথে তাঁদের মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে দুজনকেই মারধর করা হয়েছে।

গ্রামের এক অটোরিকশাচালক বলেন, আওয়ামী লীগের লোকজন তাঁকে দরগাডাঙ্গা বাজার থেকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। এখন তিনি গাড়ি নিয়ে গ্রামের বাইরে যেতে পারছেন না।

ওই চালক যখন এ কথা বলছিলেন, তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন কলমা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম। তাঁর অভিযোগ, ভোটের আগের দিন কলমা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও তানোর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি লুৎফর হায়দার লোকজন নিয়ে কলমা বাজারে বসে ছিলেন। বিএনপির লোকজন তাঁদের ওপর হামলা চালান। এতে আওয়ামী লীগের পাঁচ নেতা–কর্মী আহত হন। গ্রামের বিএনপি কর্মীরা এ কারণে আওয়ামী লীগের রোষানলে পড়েছেন। তবে কয়েক দিন পর সব ঠিক হয়ে যাবে। আর দুই শিক্ষককে মারার ঘটনাটি ভুল–বোঝাবুঝি।

কলমা বাজারে গিয়ে কয়েকটি মাত্র দোকান খোলা পাওয়া যায়। একটি রেস্তোরাঁও খোলা ছিল। মালিক আবদুল মোত্তালেব বলেন, আগে যত লোক বাজারে আসত, নির্বাচনের পরে তিন ভাগের এক ভাগ লোকও আসছে না। বেচাকেনা একেবারে মন্দা।

পাশের দরগাডাঙ্গা বাজারে কথা হয় একজন ভটভটিচালকের সঙ্গে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের লোকজন তাঁদের কলমা গ্রামের ভেতর দিয়ে যেতে নিষেধ করেছেন।

রাজশাহী থেকে তানোরের বিল্লি সড়কে চলাচলকারী বিসমিল্লাহ পরিবহনের একটি বাসের সুপারভাইজার মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ভোটের পর থেকে কলমা গ্রামের ভেতর দিয়ে বাস চলছে না। কেন চলছে না, জানতে চাইলে তিনি প্রথমে কোনো উত্তর দিতে চাননি। একপর্যায়ে বলেন, ‘ওখানে মারামারি হয়েছে, এ জন্য বাস আর ওদিক দিয়ে যাচ্ছে না।’

এ ব্যাপারে কথা বলার চেষ্টা করা হয় তানোর থানার ওসি রেজাউল ইসলাম ও কলমা ইউপি চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দারের সঙ্গে। তাঁরা ফোন ধরেননি।

তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) চৌধুরী মো. গোলাম রাব্বী প্রথম আলোকে বলেন, তিনি বিষয়টি জানেন না। কেউ তাঁকে এ বিষয়ে কিছু বলেননি। তিনি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন।

  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ জানুয়ারী ৬,২০১৮ 

চট্টগ্রাম বন্দর - পণ্যভর্তি ২৯৪ কনটেইনার গায়েব!


চট্টগ্রাম বন্দর থেকে রীতিমতো গায়েব হয়ে গেছে আমদানি পণ্যভর্তি ২৯৪ কনটেইনার। কাস্টমসের সার্ভারে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে নানা পণ্য নিয়ে আসা এসব কনটেইনারের রেকর্ড থাকলেও এর কোনোটিরই হদিস মিলছে না বন্দরে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, চট্টগ্রাম কাস্টমসের অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে ২৯৪টি আমদানি পণ্যভর্তি কনটেইনারের রেকর্ড রয়েছে, দীর্ঘকাল অতিবাহিত হলেও যেগুলো খালাসের জন্য কোনো আগামপত্র জমা পড়েনি। এসব চালান নিলামে ওঠারও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ফলে বন্দরের ভেতরে পণ্যবাহী কনটেইনারগুলো খুঁজে বের করার উদ্যোগ নেয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। অনুসন্ধান চালিয়ে এসব কনটেইনারের প্রকৃত অবস্থান বা এ-সংক্রান্ত কোনো তথ্য উদ্ঘাটন করতে না পেরে অবশেষে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে অবগত করে কাস্টমস। ওই চিঠি দেয়ার পর প্রায় এক মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত এর কোনো সমাধান দিতে পারেনি বন্দর কর্তৃপক্ষ।

নিয়ম অনুযায়ী বন্দর ব্যবহার করে আমদানি-রফতানি হওয়া সব ধরনের পণ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে পণ্যের পরীক্ষণসহ শুল্কায়নের কাজটি সমাধা করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। কাস্টমস অ্যাক্ট ১৯৬৯-এর ধারা ৭৯(২) অনুযায়ী, দেশে পণ্য পৌঁছার পর ইমপোর্ট জেনারেল ম্যানিফেস্টো (আইজিএম) দাখিলের ৩০ দিনের মধ্যে বন্দর থেকে পণ্য ছাড়করণের উদ্দেশ্যে আমদানিকারকের পক্ষ থেকে আগামপত্র দাখিলের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু এসব কনটেইনারভর্তি পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরে আসার পর সময় পেরিয়েছে প্রায় দুই বছর। এর মধ্যে এসব কনটেইনার নিলামেও ওঠেনি।

বিষয়টি নিয়ে গত বছরের ৬ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে একটি চিঠি দেয় চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল ব্যবস্থাপক বরাবর দেয়া ওই চিঠিতে কাস্টমসের পক্ষ থেকে বলা হয়, ২৯৪ কনটেইনারের বিল অব লেডিংয়ের বিপরীতে কোনো আগামপত্র দাখিল করা হয়নি। এছাড়া নির্ধারিত সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পরও পণ্য চালানগুলো অবস্থান সম্পর্কে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ অবহিত নয়।

চিঠিতে প্রয়োজনীয় দলিলাদিসহ ১০ কার্যদিবসের মধ্যে উল্লিখিত ২৯৪টি কনটেইনারের অবস্থা, অবস্থান ও এগুলোর খালাস প্রক্রিয়া সম্পর্কে বন্দরের পক্ষ থেকে কী ধরনের কার্যক্রম নেয়া হয়েছে, তা জানাতে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু এর পর এক মাস সময় পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেনি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল ব্যবস্থাপক সারোয়ারুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘অতীতেও এ ধরনের পণ্যভর্তি কনটেইনার খুঁজে না পাওয়ার বিষয়ে আমাদেরকে অবহিত করেছিল চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। আমরা তখন শনাক্তও করে দিয়েছিলাম। মূলত কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বন্দর গেট থেকে এন্ট্রি না করায় এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়।’

অন্যদিকে কাস্টমসের তথ্য বলছে, কাগজে কলমে থাকলেও বন্দরের ভেতরে পণ্যভর্তি কনটেইনার খুঁজে না পাওয়ার ঘটনায় একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করেছিল চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘ অনুসন্ধান ও যাচাই-বাছাই শেষে কমিটির পক্ষ থেকে দেয়া প্রতিবেদনে মোট ২৯৪টি কনটেইনার না পাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।

তদন্ত চালিয়ে কমিটি দেখতে পায়, এসব কনটেইনার বন্দর থেকে বের হয়নি, এমনকি নিলামেও যায়নি। এছাড়া সংশ্লিষ্ট পণ্যের চালানগুলোরও কোনো ধরনের শুল্কায়ন হয়নি। এছাড়া বন্দর কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র ও গেট দিয়ে পণ্য সরবরাহ যাচাইয়ের কাজও হয়নি। অর্থাত্ বন্দরে সংশ্লিষ্ট চালানগুলোর দালিলিক কোনো কাজ হয়নি, তার পরও দীর্ঘ সময়ের অনুসন্ধানে এসব কনটেইনারের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে কাস্টমস গঠিত তদন্ত কমিটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, কাস্টমসের পক্ষ থেকে অনুসন্ধান চালিয়ে ২৯৪ কনটেইনারের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। আইজিএম দাখিলের ৩০ দিন অতিক্রান্ত হওয়ার পর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও উল্লিখিত বিল অব লেডিংয়ের বিপরীতে এখনো আমদানিকারকের পক্ষ থেকে কোনো আগামপত্র (বিল অব এন্ট্রি) দাখিল করা হয়নি। পুরো বিষয়টি সুনির্দিষ্টভাবে বন্দর কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে।
  • - বনিক বার্তা / জানুয়ারী ৬,২০১৮ 

হঠাৎ অস্থির চালের বাজার, বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ


কয়েক মাস স্থিতিশীল থাকার পর হঠাৎ চালের দামে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। গত দু-একদিনে চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ৩ থেকে ৫ টাকা। অথচ এখন আমন ধানের মৌসুম চলছে। পাশাপাশি প্যাকেটজাত আটা ও ময়দার দামও কেজিতে ২ টাকা বেড়েছে। ভরা মৌসুমে চালের দাম বৃদ্ধিতে ক্ষুব্ধ ক্রেতারা। অন্যদিকে দাম বৃদ্ধির কারণে বেকায়দায় পড়েছেন নিম্ন-আয়ের মানুষ।  রাজধানীর কয়েকটি বাজারের পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, গত কয়েক দিনে সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। আর মিল মালিকদের দাবি, চালের দাম এত দিন কম ছিল। ফলে কৃষক ধানের ভালো দাম পাচ্ছিলেন না।

গম আমদানিকারক ও আটা বিপণনকারীদের দাবি, বিশ্ববাজারে গমের দাম বেশ বেড়েছে। সে অনুপাতে দেশে আটার দাম বাড়েনি। 

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, কায়েক দিনের ব্যবধানে মিল পর্যায়ে চালের দাম বেড়েছে বস্তায় (৫০ কেজি) ২১০-২৫০ টাকা বা মণপ্রতি ১৫৮-১৮৭ টাকা। মিল পর্যায়ে মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পাইকারিতে পুরোপুরি পড়তে আরো কিছুটা সময় লাগবে। তার পরও এরই মধ্যে পাইকারিতে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা চালের দাম ১২০-১৪৫ বা মণপ্রতি ৯০-১১০ টাকা বেড়েছে। আর খুচরা পর্যায়ে বেড়েছে কেজিতে ৪ টাকা পর্যন্ত। 

ব্যবসায়ীরা জানান, জাতীয় নির্বাচনের আগে থেকে ধানের দাম বেড়েছে। বিশেষ করে সরকারিভাবে চাল ক্রয় করায় বাজারে চালের দাম বাড়ছে। এর ফলে গত তিন দিনে কেজিতে মোটা চাল ৪ টাকা, সরু চাল ৩ টাকা ও সুগন্ধি চাল ৫ টাকা বেড়েছে। বাজারে প্রতি কেজি মোটা চাল স্বর্ণা ৩৮ থেকে ৪০ টাকা, বিআর-২৮ ও লতা ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা, মিনিকেট ৫২ থেকে ৫৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভালো মানের সুগন্ধি চাল ১০০ টাকা ও সাধারণ মানের সুগন্ধি চাল ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া নতুন আমন ৩৭ থেকে বেড়ে ৪০ টাকা হয়েছে। 

পাশাপাশি কেজিতে ২ টাকা বেড়ে ২ কেজির প্রতি প্যাকেটের নতুন মূল্য আটা ৬৮ টাকা ও ময়দা ৯২ টাকা হয়েছে। এক সপ্তাহ আগেও আগের নির্ধারিত দরের চেয়ে কেজিতে ২-৩ টাকা কমে বিক্রি হয়েছে। এ হিসাবে আটা-ময়দার দাম কেজিতে প্রায় ৫ টাকা বেড়েছে বলে দাবি করেছেন দোকানিরা। 

রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোয় মানভেদে প্রতি কেজি উন্নত মানের সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৮-৬২, সাধারণ মানের ৫৪-৫৮, মাঝারি মানের ৪৪-৫২ ও মোটা চাল প্রতি কেজি ৩৮-৪২ টাকায়। কয়েক দিন আগেও এসব চাল কেজিপ্রতি ৩-৪ টাকা কমে বিক্রি হয়েছিল।

কাওরান বাজারের খুচরা দোকানে ভালো মানের সরু মিনিকেট চাল কেজিপ্রতি ৫৫-৫৬ টাকা, মাঝারি বিভিন্ন চাল ৪৪-৪৮ টাকা এবং মোটা গুটি ও স্বর্ণা চাল ৩৭-৩৮ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা যায়। 

কাওরান বাজারের হাজি রাইস এজেন্সির মালিক মানিক বলেন, মিলমালিকরা গত কয়েক দিনে সব ধরনের চালের দাম বস্তায় (৫০ কেজি) ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়েছেন। এ কারণে পাইকারি আড়তে দাম বাড়ছে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে সুগন্ধি চালের দাম। প্রতি বস্তায় ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা। তিনি বলেন, এবার উৎপাদন ভালো থাকায় পর্যাপ্ত চালের মজুদ আছে। এখন যৌক্তিক কারণ ছাড়াই মিলমালিকরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। 

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সপ্তাহের ব্যবধানে বোরো সরু চালের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ৪ টাকা। আর কেজিপ্রতি ২ টাকা বেড়েছে বোরো মাঝারি চালের দাম। গত সপ্তাহে বোরো সরু চাল প্রতি কেজি ৫২ টাকায় বিক্রি হলেও এ সপ্তাহে কিনতে হচ্ছে ৫৬ টাকায়। একইভাবে ৪০ টাকা কেজি দরের বোরো মাঝারি চাল বিক্রি হচ্ছে ৪২ টাকায়। 

মিলমালিকরা দাবি করছেন, সরকারি খাদ্যগুদামে আমন মৌসুমের ধান ও চাল ক্রয় করা শুরু হয়েছে। এর কারণে বাজারে চালের দাম বেড়েছে। তাছাড়া এ বছর কৃষক ও এলাকার মহাজন ব্যবসায়ীরা ধান বিক্রি না করায় বাজারে দাম বেড়ে গেছে। 

বাংলাদেশ অটো-মেজর ও হাসকিং রাইস মিল মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর রশিদ বলেন, চালের দাম অনেক দিন বাড়েনি। এখন আমন মৌসুম হলেও সরকার কৃষকদের ন্যায্যমূল্য দিতে ধান কিনছে। এতে মিল মালিকদের বাড়তি দামে ধান কিনতে হচ্ছে। সে কারণে চালের দামও বেড়েছে। তিনি আশা করেন, কৃষক ও ট্রেডিং ব্যবসায়ীদের হাতে মজুদ ধান ও চাল বাজারে ছাড়লে দাম খুব বেশি বাড়বে না, স্থিতিশীল হবে। 

কাওরান বাজারে বাজার করতে আসা আহসান হাবিব বলেন, যৌক্তিক কোনো কারণ ছাড়াই চালের দাম বাড়ছে। দাম বাড়ার কারণ হিসেবে খুচরা বিক্রেতারা দুষছেন পাইকারি ও মিলমালিকদের। তিনি বলেন, নতুন সরকার দায়িত্ব নেয়ার আগেই সুযোগ নিয়েছেন মিলমালিকরা। এই সময়ে সরকারের সঠিক মনিটরিং না থাকায় আমন মৌসুমে চালের দাম তারা যে যেভাবে পারছেন, বাড়িয়ে দিচ্ছেন। ফলে পাইকারি ও খুচরা বাজারে চালের দাম বৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। 

পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন, নির্বাচনের তিন দিন আগে পরিবহন ব্যবস্থায় কড়াকড়ির কথা বলে চাল সরবরাহ বন্ধ রেখেছিলেন মিলাররা। নির্বাচনের পর চাল সরবরাহ শুরু হলেও মিলগুলো থেকেই প্রতি বস্তায় (৫০ কেজি) দুই ধাপে ১০০ টাকা করে দাম বাড়ানো হয়েছে। 

পুরান ঢাকার বাবুবাজার-বাদামতলীর চালের আড়ত মালিকেরা জানান, প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) চালের দাম ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেড়েছে। মোটা চালের পাইকারি দর উঠেছে কেজিপ্রতি ৩৫ টাকার আশপাশে। অন্যদিকে মাঝারি চাল বিক্রি হচ্ছে মানভেদে কেজিপ্রতি ৩৮-৪২ টাকায়। এ ছাড়া ভালো মানের সরু মিনিকেট চাল কেজিপ্রতি ৫২-৫৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাদামতলীর চালের আড়ত শিল্পী রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী কাওসার রহমান বলেন, ভোটের কয়েক দিন আগে ও পরে মিলিয়ে চালের দামটা কিছুটা বাড়ল। মোটা চাল কেজিপ্রতি ৩২-৩৩ টাকায় নেমে গিয়েছিল যা ২০১৭ সালের শেষ দিকে কেজিপ্রতি ৪৫ টাকার বেশি ছিল।

গত ডিসেম্বর থেকে ৩৬ টাকা কেজি দরে সিদ্ধ চাল সংগ্রহ শুরু করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেবে, এবার আমন চালের উৎপাদন খরচ পড়েছে সাড়ে ৩৪ টাকা। বাজার পরিস্থিতি বিচার-বিশ্লেষণ করে, খোঁজ-খবর নিয়ে মূল্য ৩৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়। 

এর আগে চালের দামের সবচেয়ে অস্বস্তিকর সময় ছিল ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস। ওই সময় খুচরা বাজারে মোটা চালের দর কেজিপ্রতি ৫০ টাকায় উঠেছিল। আর সরু চাল উঠেছিল কেজিপ্রতি ৭০ টাকায়। পরে নতুন ধান ওঠায় চালের দাম কমে আসে। 

  • কার্টসিঃ মানবজমিন/ জানুয়ারী ৬,২০১৮ 


Thursday, January 3, 2019

লক্ষ্মীপুরে পুলিশের ওপর যুবলীগের হামলা, ১০ যুবলীগ নেতা আটক

লক্ষ্মীপুরে আটিয়াতলীতে লাহারকান্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ফজলুর রহমানকে কুপিয়ে আহতের জের ধরে সৃষ্ট ঘটনায় পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ যুবলীগের নেতাকর্মীরা। এতে পুলিশ সদস্য সাংবাদিকসহ ১০ জন আহত হয়েছে। ঘটনায় সংগঠনটির ১০ নেতাকর্মীকে আটক করেছে।

জানা যায়, আজ সকালে পূর্বশত্রুতার জের ধরে দেলোয়ার হোসেন নামে এক যুবক লাহারকান্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ফজলুর রহমানকে কুপিয়ে আহত করে। কিছুক্ষণ পর দেলোয়ার হোসেনকেও পিটিয়ে কুপিয়ে আহত করে পুলিশে খবর দেয় ফজলুর রহমানের লোকজন পরে পুলিশ দুজনকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এদিকে দুপুরে হাসপাতালে ফজলুর রহমানকে দেখতে আসে যুবলীগ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা উত্তেজিত হয়ে দেলোয়ার হোসেনের ওপর হামলা করে। এতে পুলিশ বাধা দিলে পুলিশের ওপর হামলা করে তারা। নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়

এতে সদর থানার এসআই আবদুল আলীম, এএসআই গিয়াস উদ্দিন, পুলিশ সদস্য নয়ন মেহেদী হাসানসহ পুলিশ, সাংবাদিক মীর ফরহাদ হোসেন সুমন, জেলা যুবলীগ সভাপতি সালাহ উদ্দিন টিপু, সদর উপজেলা যুবলীগ নেতা জেলা পরিষদ সদস্য মাহবুবুর রহমানসহ ১০ জন। আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। পরে যুবলীগ নেতা মাহাবুবুর রহমান,রুপম হাওলাদার ইকবাল হোসেন হিমলক্বারীসহ  ১০ যুবলীগ নেতাকে আটক করা হয়েছে।

হাসপাতাল, পুলিশ যুবলীগ সুত্রে জানা যায়, সদর উপজেলার লাহারকান্দি ইউনিয়নের আঠিয়াতলী গ্রামের যুবক দেলোয়ার হোসেন স্থানীয় লাহারকান্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ফজলুর রহমানকে হত্যার চেষ্টা মামলায় মঙ্গলবার কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে এলাকায় ফেরেন। বুধবার সকালে সে একটি ছোরা নিয়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমানের ওপর হামলা চালায় দেলোয়ার হোসেন। পরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ যুবলীগ নেতাকর্মীরা তাকে মারধর করে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ আহত দুজনকে উদ্ধার করে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।

খবর পেয়ে শহরের যুবলীগ নেতা-কর্মীরা হাসপাতালে যান। সময় দেলোয়ারের ওপর হামলার চেষ্টা করেন তারা। পুলিশ তাদের বাধা দিলে এক পর্যায়ে পুলিশের ওপর হামলা দুই পক্ষের সংঘর্ষ বাধে। সময় আহত হন পুলিশ কর্মকর্তা এস আই আব্দুল আলীম, এএসআই গিয়াস উদ্দিন, সদস্য নয়ন, মেহেদী, সাংবাদিক মীর ফরহাদ হোসেন সুমন, জেলা যুবলীগ সভাপতি সালাহ উদ্দিন টিপু, সদর উপজেলা যুবলীগ নেতা জেলা পরিষদ সদস্য মাহবুবুর রহমানসহ ১০ জন।

পরে হাসপাতালে পুলিশ শহরে অভিযান চালিয়ে সদর উপজেলা (পশ্চিম) যুবলীগের যুগ্ম-আহবায়ক জেলা পরিষদের সদস্য মাহাবুবুর রহমান, সদর পূর্ব যুবলীগের যুগ্ম-আহবায়ক রুপম হাওলাদার, পৌর যুবলীগের যুগ্ম-আহবায়ক ইকবাল হোসেন হিমলক্বারী, যুবলীগ নেতা আজগর হোসেন, মিজানুর রহমান মোহাম্মদ উল্যাহসহ ১০ জনকে আটক করে পুলিশ। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ১০ টি মটরসাইকেল জব্দ করে নিয়ে যায়।

এদিকে জেলা যুবলীগের সভাপতি সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম সালাউদ্দিন টিপু হামলার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমিসহ ১০জন নেতাকর্মী আহত হয়। সামান্য ভূল বুঝাবুঝিতে নেতাকর্মীদের আটক করে নিয়ে পুলিশ।

পুলিশ সুপার আসম মাহাতাব উদ্দিন জানান, পূর্বশত্রুতায় আওয়ামী লীগ নেতার ওপর হামলা চালায় প্রতিপক্ষ দেলোয়ার হোসেন। দুজনকে হাসপাতালে ভর্তি নিয়ে সংঘর্ষ হয়। সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনণ করতে গেলে পাল্টা হামলার শিকার হয় পুলিশ। এতে পুলিশ আহত হয়। হাসপাতাল শহরের বিভিন্নস স্থানে অভিযোন চালিয়ে কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে হাসপাতাল শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি 
Courtesy: Manabzamin Jan 02, 2019