চট্টগ্রাম বন্দর থেকে রীতিমতো গায়েব হয়ে গেছে আমদানি পণ্যভর্তি ২৯৪ কনটেইনার। কাস্টমসের সার্ভারে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে নানা পণ্য নিয়ে আসা এসব কনটেইনারের রেকর্ড থাকলেও এর কোনোটিরই হদিস মিলছে না বন্দরে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, চট্টগ্রাম কাস্টমসের অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে ২৯৪টি আমদানি পণ্যভর্তি কনটেইনারের রেকর্ড রয়েছে, দীর্ঘকাল অতিবাহিত হলেও যেগুলো খালাসের জন্য কোনো আগামপত্র জমা পড়েনি। এসব চালান নিলামে ওঠারও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ফলে বন্দরের ভেতরে পণ্যবাহী কনটেইনারগুলো খুঁজে বের করার উদ্যোগ নেয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। অনুসন্ধান চালিয়ে এসব কনটেইনারের প্রকৃত অবস্থান বা এ-সংক্রান্ত কোনো তথ্য উদ্ঘাটন করতে না পেরে অবশেষে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে অবগত করে কাস্টমস। ওই চিঠি দেয়ার পর প্রায় এক মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত এর কোনো সমাধান দিতে পারেনি বন্দর কর্তৃপক্ষ।
নিয়ম অনুযায়ী বন্দর ব্যবহার করে আমদানি-রফতানি হওয়া সব ধরনের পণ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে পণ্যের পরীক্ষণসহ শুল্কায়নের কাজটি সমাধা করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। কাস্টমস অ্যাক্ট ১৯৬৯-এর ধারা ৭৯(২) অনুযায়ী, দেশে পণ্য পৌঁছার পর ইমপোর্ট জেনারেল ম্যানিফেস্টো (আইজিএম) দাখিলের ৩০ দিনের মধ্যে বন্দর থেকে পণ্য ছাড়করণের উদ্দেশ্যে আমদানিকারকের পক্ষ থেকে আগামপত্র দাখিলের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু এসব কনটেইনারভর্তি পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরে আসার পর সময় পেরিয়েছে প্রায় দুই বছর। এর মধ্যে এসব কনটেইনার নিলামেও ওঠেনি।
বিষয়টি নিয়ে গত বছরের ৬ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে একটি চিঠি দেয় চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল ব্যবস্থাপক বরাবর দেয়া ওই চিঠিতে কাস্টমসের পক্ষ থেকে বলা হয়, ২৯৪ কনটেইনারের বিল অব লেডিংয়ের বিপরীতে কোনো আগামপত্র দাখিল করা হয়নি। এছাড়া নির্ধারিত সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পরও পণ্য চালানগুলো অবস্থান সম্পর্কে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ অবহিত নয়।
চিঠিতে প্রয়োজনীয় দলিলাদিসহ ১০ কার্যদিবসের মধ্যে উল্লিখিত ২৯৪টি কনটেইনারের অবস্থা, অবস্থান ও এগুলোর খালাস প্রক্রিয়া সম্পর্কে বন্দরের পক্ষ থেকে কী ধরনের কার্যক্রম নেয়া হয়েছে, তা জানাতে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু এর পর এক মাস সময় পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেনি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল ব্যবস্থাপক সারোয়ারুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘অতীতেও এ ধরনের পণ্যভর্তি কনটেইনার খুঁজে না পাওয়ার বিষয়ে আমাদেরকে অবহিত করেছিল চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। আমরা তখন শনাক্তও করে দিয়েছিলাম। মূলত কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বন্দর গেট থেকে এন্ট্রি না করায় এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়।’
অন্যদিকে কাস্টমসের তথ্য বলছে, কাগজে কলমে থাকলেও বন্দরের ভেতরে পণ্যভর্তি কনটেইনার খুঁজে না পাওয়ার ঘটনায় একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করেছিল চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘ অনুসন্ধান ও যাচাই-বাছাই শেষে কমিটির পক্ষ থেকে দেয়া প্রতিবেদনে মোট ২৯৪টি কনটেইনার না পাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।
তদন্ত চালিয়ে কমিটি দেখতে পায়, এসব কনটেইনার বন্দর থেকে বের হয়নি, এমনকি নিলামেও যায়নি। এছাড়া সংশ্লিষ্ট পণ্যের চালানগুলোরও কোনো ধরনের শুল্কায়ন হয়নি। এছাড়া বন্দর কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র ও গেট দিয়ে পণ্য সরবরাহ যাচাইয়ের কাজও হয়নি। অর্থাত্ বন্দরে সংশ্লিষ্ট চালানগুলোর দালিলিক কোনো কাজ হয়নি, তার পরও দীর্ঘ সময়ের অনুসন্ধানে এসব কনটেইনারের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে কাস্টমস গঠিত তদন্ত কমিটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, কাস্টমসের পক্ষ থেকে অনুসন্ধান চালিয়ে ২৯৪ কনটেইনারের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। আইজিএম দাখিলের ৩০ দিন অতিক্রান্ত হওয়ার পর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও উল্লিখিত বিল অব লেডিংয়ের বিপরীতে এখনো আমদানিকারকের পক্ষ থেকে কোনো আগামপত্র (বিল অব এন্ট্রি) দাখিল করা হয়নি। পুরো বিষয়টি সুনির্দিষ্টভাবে বন্দর কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে।
- - বনিক বার্তা / জানুয়ারী ৬,২০১৮
No comments:
Post a Comment